একজন সুন্দরী মেয়ের জীবনের গল্প

একজন সুন্দরী মেয়ের জীবনের গল্প

আজ ভাগ্যটা ভালোই বলতে হবে । পাশের সিটে বসে আছে এক ষোড়শী মেয়ে , দেখতে অসম্ভব সুন্দর । অন্যান্য সময় সঙ্গী হয় আশি বছরের বুড়া না হয় আশি বছরের বুড়ি কিন্তু মেয়েটা তখনই বিপত্তি বাঁধালো যখন খুব অনুনয় করে বলতে লাগলো ।

— ভাই আমাকে কি আপনার সিটটা দেওয়া যায় । আমি অসুস্হ বোধ করছি । জানালার পাশে বসলে হয়তো ভালো লাগতে পারে ।

কি আর করা সাধের সিটটা তাকে ছেড়ে দিতে হলো, সুন্দরী মেয়ে বলে কথা । যাই হোক তাকে যখন একটু সাহায্য করতে পেরেছি কথা বলার একটু সুযোগ তো পাওয়া গেল ।

— আপনার কি শরীর খুবই খারাপ ?
— না তেমন কিছু না । বাসে চড়ার তেমন অভ্যাস নাই তো তাই ।

তারপর আর তেমন কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলাম না । মেয়েটা বাইরে তাকিয়ে আছে মাঝে মাঝে বাতাসে তার এলোমেলো চুল গুলো আমার চেহারায় এসে পড়ছে । আমি বিরক্ত বোধ করছি না । তার চুল গুলো থেকে এক মোহনীয় ঘ্রাণ আমাকে বিমুগ্ধ করে তুলছিল কিন্তু হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম মেয়েটি কাঁদছে । সে এক নিরব কান্না কিন্তু মনে হচ্ছিলো প্রশান্ত মহা সাগরের ঢেউ গুলো তার বুকে আঁচড়ে পড়ছে ।

— এক্সকিউজ মি, যদিও এটা অনধিকার চর্চা তবুও প্লিজ বলবেন কি, আপনি কান্না করছেন কেন ?

মেয়েটি হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ঘুরে তাকিয়েছে ।

— না এমনি, তেমন কিছু না ।
— থাক সমস্যা থাকলে বলতে হবে না ।
— আচ্ছা বাসটা কতদূর পর্যন্ত যাবে বলতে পারেন ।
— নালিতা বাড়ি এর শেষ স্টপিজ । কেন আপনি জানেনা আপনি কোথায় যাবেন ?
— না আমি জানিনা আমি কোথায় যাব, শুধু এতটুকু জানি আমার অদিত্য কে বাঁচাতে হবে ।
— অদিত্য কে ?
— আমার অনাগত সন্তান, যে আমার ভেতর একটি স্বত্বা নিয়ে বড় হচ্ছে ।

জানেন আমার মা বাবা চাইছিলেন না আমার অদিত্য বেঁচে থাকুক । আমিও একসময় রাজি হয়েছিলাম পাপের ফসল কে বাঁচিয়ে কি হবে । আজ হাসপাতালে যাওয়ার তারিখ ছিল, কিন্তু রাত্রে আমি একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম । কি সুন্দর একটি ফুটফুটে শিশু, কিন্তু তার চেহারায় বিষণ্নতা, আমার জড়িয়ে ধরে বলছে ।

— মা আমাকে হত্যা করো না আমি তো কোন অন্যায় করিনি, আমি ভালো ছেলে হয়ে তোমার কাছে থাকব কোন দুষ্টমি করব না তবুও আমাকে হত্যা করো না মা ।
— আমি পারিনি আমার অনাগত সন্তান কে হত্যা করতে । আর তাই তো খুব ভোরেই বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি । উঠে পড়েছি অজানা গন্তব্যের কোন বাসে ।
— কিন্তু আপনার গর্ভে বড় হওয়া সন্তানের পিতা কে ?
— আমার ভালোবাসার মানুষ অরণ্য, আমাদের মাঝে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো ।

দুই পরিবার এতে সম্মতি ছিল কিন্তু বিধাতার হয়তো সম্মতি ছিল না । বিয়ের আগেই হরতালের ভেতর অনাকাঙ্ক্ষিত অস্ত্রের গুলিতে সে মারা যায় । তার মৃত্যুতে দুটি পরিবার যতটুকু না কষ্ট পেয়েছে তার থেকে আমি বেশি কষ্ট পেয়েছি কারণ আমি জানতাম অরণ্যের সন্তান আমার গর্ভে । অরণ্যের স্বপ্ন ছিল বিয়ের পর আমার ছেলে হলে তার নাম রাখবে অদিত্য কিন্তু সেই স্বপ্ন কে চুরমার করে দিয়ে সে হারিয়ে গেছে অজানার পথে । আমার বাবা মা হয়তো আমার ভালোবাসা কে মেনে নিয়েছিল কিন্তু বিয়ে বহির্ভূত সন্তান কে তো তারা মেনে নিতে পারেনি আর মেনেও নিবে না আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ।

কথা শেষ করে মেয়েটি আবার কাঁদছে । সব সহ্য করা যায় কিন্তু মেয়েদের কান্নার দৃশ্য সহ্য করা যায় না । আমি ঠিক কি বলবো বা কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছি না । জীবনটা নাটক হলে হয়তো মেয়েটি কে বিয়ে করে এর দায়িত্ব নিতে পারতাম । কিন্তু জীবন তো নাটক নয়, জীবনটা কঠিন বাস্তবতায় মোড়ানো একটি শক্ত পাথর । এখানে আবেগের কোন মূল নেই, বিবেক দিয়ে সবকিছু মূল্যায়ন করতে হয় । নিঃসন্দেহে মেয়েটি অনেক সুন্দর । যে কোন পুরুষ তাকে বিয়ে করতে চাইবে কিন্তু একটি অবৈধ সন্তানের জননী কে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না ।

— আপনি এখন কোথায় যাবেন কিছু ঠিক করেছেন ?
— না ঠিক জানিনা কোথায় যাব । আমি শিক্ষিতা মেয়ে যেকোনো জায়গায় ছোটখাটো একটি চাকরি নিয়ে নিতে পারব।

এছাড়া আমার কাছে কিছু টাকা আছে সেগুলো দিয়ে আপাতত চলে যাবে ।  আপনি যতটা সহজ ভাবে ব্যাপারটা নিচ্ছেন, জীবনটা ততো সহজ নয় । আপনি পুরুষ মানুষ হলে কোন কথা ছিল না । আপনি একজন সুন্দরী মেয়ে । খেয়াল করলে হয়তো দেখবেন অনেক লোলুপ দৃষ্টি শকুনের মতো আপনার দিকে তাকিয়ে আছে । সুযোগ পেলেই আপনাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে । কিছুদূর পরেই শহরের উপকন্ঠে আমাদের বাড়ি । আমি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছি ।

হয়তো কিছুদিনের ভেতরে একটা চাকরি হয়ে যাবে । না, না ভাববার প্রয়োজন নেই আমি আপনার দায়িত্ব নিব বা বিয়ে করতে চাইছি । সেটা হয়তো আমার মায়ের জন্য সম্ভব হয়ে উঠবে না কারন আমি মায়ের অবাধ্য কখনো হয়নি । আমি আপনার জন্য যেটা করতে পারব সেটা হলো আপনার জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় ঠিক করে দিতে পারব । মা কে বলে হয়তো আপনার জন্য আমাদের বাড়িতে একটি ঘর দেওয়া যাবে সেখানে আপনি নিরাপদে থাকতে পারবে । যাবেন আমাদের বাড়ি ? মেয়েটি কোন কথা বলে না চুপ করে থাকে । আর মনে মনে ভাবে পৃথিবীতে কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতেই হয় । বিশ্বাস ছাড়া তো পৃথিবী চলতে পারে না ।

— এই অদিত্য কে একটু থামাও তো কেমন দুষ্টুমি করছে দেখ, স্কুলে যাবার সময় হয়েছে তো ।
— তোমার ছেলে তুমি থামাও, আর না হয় মাকে ডাক । বাবা হয়ে ছেলের হাতে মার খেতে পারব না ।
— ছেলেটা বড় পাজি আমার সাথে প্রমিজ করেছিল দুষ্টুমি করবে না কিন্তু এখন দেখ কি অবস্থা ।

হ্যা সেদিন বাসের ছেলেটি অসহায় মেয়েটি কে তাদের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু সমাজ বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়নি আর তাই তো সমাজ কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মেয়েটি কে বিয়ে করেছিল, যদিও মাকে মেনেজ করতে অনেক কষ্ট হয়েছিলো কিন্তু কে বলবে অদিত্য এখন তার কলিজার টুকরো সারাদিনে সঙ্গী, যাকে ছাড়া মা এক মূহুর্ত থাকতে পারে না ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত