লাল পরির গল্প

লাল পরির গল্প

পরি রাজ্যে হঠাৎ করে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল, আর তা হলো একজন গরিব পরির ঘরে জন্ম নিল লাল ফুটফুটে এক পরি। এর আগে কখনও পরিদের রঙ লাল দেখতে না পাওয়ার কারণে পরিরাজ্যের সকল পরিরা সেই ছোট্ট লাল পরিটাকে দেখার জন্য ভিড় করতে থাকলো।

লাল পরির মায়ের বয়স ছিল অনেক বেশি। সে বয়সের ভারে তেমন একটা কাজকর্ম করতে পারতো না, তাই তাদের সংসার খুব অভাব অনটনের মধ্যেই চলছিল। কিন’ লাল পরি জন্ম গ্রহণের পর থেকে যেন এর পরিবর্তন ঘটতে থাকলো। প্রতিদিন পরি রাজ্যের বিভিন্ন পরিরা লাল পরিকে দেখতে এসে উপঢৌকন দিয়ে যেত আর তা দিয়ে তাদের অভাবের সংসার খুব ভালোভাবেই চলতো। এভাবে যেতে যেতে লাল পরিরা একদিন অনেক ধন সম্পদের মালিক হয়ে গেলো, এমনকি তারা হয়ে গেলো পরিরাজ্যের কয়েকজন ধনীর মধ্যে একজন।

লালপরির কথা পরিরাজ্যের পরিরা ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যের সকলেই জানতো। দৈত্য রাজ্যের কেউ যেন এই কথা জানতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকেই নিষেধ করা ছিল। তারপরও কি কোনো কথা গোপন থাকে? লাল পরিরা এতো ধন-সম্পদের মালিক হওয়ায় হিংসুটে এক পরি লালপরির কথা জানিয়ে দিলো দৈত্য রাজ্যের খারাপ দৈত্য হিংসুং- কে।

হিংসুং ছিল দৈত্য রাজ্যের একজন পথভ্রষ্ট দৈত্য। সে দৈত্য রাজার ছোট ছেলে। খারাপ কাজকর্মের জন্য রাজা তাকে রাজ্য থেকেই বের করে দিয়েছেন। তাই সে এখন বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে তার অপকর্ম চালায় এবং কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না।

লালপরি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো। এলাকায় তার অনেক নাম ডাক। সবাই তাকে আদর করে পরিরানি বলে ডাকে। সে সবার থেকে আলাদা বলেই সবাই তাকে চোখে চোখেই রাখে। অনেক ধন-সম্পদের মালিক হওয়ায় তার দেখাশোনার জন্য কয়েকজন দাসীও নিযুক্ত করা হয়েছে। লালপরির আচার ব্যবহার এতটাই ভালো যে, দাসীরাও তাকে অনেক আদর যত্ন করতো।

একদিন হঠাৎ করে একজন দাসী কাজে না আসায় লালপরি খুব চিন্তিত হয়ে গেলো। কারণ ওই দাসীটা অন্যান্য দাসীদের চেয়েও পরিরাণীকে খুব বেশি ভালোবাসতো। সেই দাসীটার কোনো অসুখ হলো কিনা তা জানার জন্য সে কাউকে না জানিয়ে ঐ দাসীর বাড়ির খোঁজ করার জন্য বের হয়ে গেল। কিন’ পরিরাণী বাড়ি না চেনার কারণে পথ হারিয়ে অন্য দিকে চলে গেল।

এসব কিন’ খারাপ দৈত্য হিংসুং আড়াল থেকে দেখছিল। কারণ সেই ঐ দাসীকে আটকে রেখেছিল জঙ্গলের মধ্যে। তাছাড়া পরিরাণীকে সে বাড়ি থেকে বাইরে আনতে পারছিল না। অবশেষে হিংসুং বুদ্ধি করে পরিরাণীকে বাইরে আনতে পেরে খুব খুশি হলো এবং তাকে বন্দি করে নিয়ে গেলে দূর পাহাড়ের চূড়ায়।

লালপরিকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা প্রায় মরণাপন্ন অবস’ায় বিছানায় পড়ে আছে। পরিরাণীকে কিভাবে খুঁজে পাওয়া যায় তা নিয়ে পুরো পরিরাজ্যের পরিরা অসি’র। সবাই যার যার মতো করে খুঁজছে কিন’ পরিরাণীকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে হিংসুং লালপরিকে পাহাড়ের চূড়ায় রেখে চলে এসেছে দুষ্টু পরির সাথে যুক্তি করতে। কীভাবে ধন সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে যায় সেই যুক্তিতে তারা যখন মগ্ন ঠিক তখনই অন্যান্য পরিরা পরিরাণীকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে পৌঁছে গেল এবং তাদের কথাবার্তা শুনে ফেলল।

হিংসুং -এর সাথে কেউ পেরে উঠবে না বলে তারা সবাই মিলে হাজির হলো পরি রাজ্যের রাজার কাছে। রাজাকে সব ঘটনা খুলে বলায়, রাজা সেই হিংসুটে পরিটাকে ধরে নিয়ে আনলেন এবং বললেন- সে যদি না বলে পরি রানি কোথায় আছে তাহলে তাকে শূলে চড়ানো হবে। রাজার এই শাস্তির ঘোষণা শুনে হিংসুটে পরিটা সবকিছু স্বীকার করে রাজার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলো। কিন’ তার কোনো কথা রাজার মন গলাতে পারলো না।

পরিরাজ্যের রাজার সাথে দৈত্যরাজ্যের রাজার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তাই পরিরাজ্যের রাজা দৈত্যরাজ্যের রাজাকে বিষয়টা খুলে বললেন এবং তিনি তার ছেলে হিংসুং-কে আটক করে লাল পরিসহ বন্দীকৃত দাসীকেও ফিরিয়ে দিলেন।
লাল পরিকে ফিরে পেয়ে তার মাসহ রাজ্যের সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো এবং পরিরাজ্যের রাজা লাল পরির সুরক্ষার জন্য তাকে রাজপ্রাসাদে রাজকন্যার মর্যাদায় থাকার অনুমতি দিলেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত