আজ আপুকে দেখতে আসবে।শুনেই আমার মনটা ভরে উঠলো। কদিন পর আপু চলে যাবে পুরো ঘরে আমার রাজত্ব।
আপু চলে গেলেই আমি বাঁচি।সারাদিন এই কাজ সেই কাজ দিয়ে আমাকে প্যারা দেয়।আর চুন থেকে পান কিছু হওয়ার আগেই মা কে বিচার দিয়ে দেয়। তাই তার চলে যাওয়াতে আমি খুব খুশি।
সন্ধ্যার দিকে বর পক্ষ আসবে শুনেছি।আপু এখনো জানে না।দুপুরে কলেজ থেকে ফিরলে মা জানাবেন বলছেন।বেচারি আপু তাকে দেখতে আসবে আর সে ই জানে না।
দুপুরে আপু বাসায় ফিরে দেখলো ঘর ভর্তি আত্নীয় স্বজন। ফুফু, মামা,নানী-নানা সবাই এসেছেন।ব্যাগ রেখে রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করতেই মা কনে দেখতে আসার কথা বললেন।আমি তখন রান্না ঘরেই ছিলাম।আপুর চেহারা তখন পঁচা আলুর মতো হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু আপু কিছু না বলে রান্নাঘর থেকে চলে আসেন।
মাগরিবের আজান দিয়েছে।নামাজ থেকে মাত্র বাসায় ফিরলাম।বাসায় ফিরে দেখি আপুর বান্ধবী রা এবং মা মিলে আপুকে সাজাচ্ছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গুটিশুটি মেরে চুপ চাপ বসে আছে।কালো রঙের একটি শাড়ি পড়েছে আপু।আপুর দিকে তাকাতেই বোঝা যাচ্ছিলো যে শাড়ি পড়তে তার একদম ভালো লাগছে না। সে এমনিতেই চিকন একজন মানুষ,শাড়ি ভালো ভাবে সামলাতে পারে না।সমস্ত সাজগোজ শেষে দরজার সাথে হেলান দিয়ে থাকা আমার দিকে তাকালো আপু।চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,কেমন লাগছে।
যদিও খুব সুন্দর লাগছে তবুও আমি বললাম একদম বাজে।
সাতটা বেজে পনেরো মিনিটে বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো।সবাই ড্রয়িং রুম থেকে ছুটে অন্য রুমে চলে এলো। আমি গিয়ে দরজা খুলে লম্বা একটা সালাম দিলাম।পঞ্চাশ ঊর্ধ্বে একজন লোক আমার দিকে তাকিয়ে সালামের প্রতি উত্তর দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।সম্ভবত তিনি বরের বাবা।তারপর দুজন মহিলা ঢুকলেন।এবং সর্ব শেষে কোর্ট পড়া একজন জেন্টেল ম্যান ঢুকলেন।যেহেতু আর কোন পুরুষ নেই তাহলে ইনিই আমাদের জামাই সাহেব।উনাকে জেন্টেল ম্যান বললাম কারণ, কিছু মানুষের চেহারায় একটা ভদ্র ভাব থাকে, পোশাক ও মার্জিত।
ড্রয়িং রুমে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে আমি মামাকে যেতে বললাম।মামা আলাপ শুরু করলেন তাদের সাথে।আমি রান্না ঘরে গিয়ে একে একে খাবারের আইটেম গুলো আনতে শুরু করলাম।মা আজকে অনেক নাস্তা বানিয়েছে ।আমি একে একে সব গুলো নাস্তা নিয়ে তাদের সামনে রেখে চলে এলাম।
আপুর রুম থেকে চেয়ার আনতে গিয়ে দরজা খোলার সাথে সাথেই বিছানায় বসে থাকা আপু ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।বেশ কিছুক্ষণ শীতল দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
আমি টিভিতে একটি প্রোগ্রাম দেখে মানুষের চোখ পড়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তবে আজ প্রথম বারের মতো আমার কাছে মনে হলো আমি চোখ পড়তে পেরেছি।
হ্যাঁ, আপুর চোখ কথা বলছিলো।মুখে না বলা কিছু কথা লুকিয়ে ছিলো আপুর চোখে।আমার সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠছিলো সেগুলো।আমি স্বাভাবিক হয়ে চেয়ার দিয়ে এসে আপুর পাশে বসলাম।
আপু গাল ফুলিয়ে বসে আছে।চোখে মুখে টেনশনের ছাপ রেখা।
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বললাম,
“কি হয়েছে আপু কোন সমস্যা!”
আপু নিচু করে রাখা মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো।কিছু না বলেই আমায় জড়িয়ে ধরলো।জড়িয়ে ধরেই মৃদু স্বরে কান্না শুরু করলো।আমি আমার কাধের মধ্যে আপুর লবণাক্ত চোখের পানি অনুভব করছিলাম।
আমি যতদূর জানি আপুর কারো সাথে সম্পর্ক নেই,তাহলে আপু কাঁদছে কেনো?
প্রথম বার কনে দেখেবে বলে ভয় হচ্ছে?
কেউ কি কিছু বলেছে তাকে?আপুর কি কারো সাথে সম্পর্ক আছে?
আমি আপুকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মা চলে এলো।মাকে দেখে সাথে সাথেই অত্যন্ত পটু ভাবে আপু চোখের জল আড়াম করে ফেললো।
মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তুই এখানে বসে আছিস আর আমি তোকে পুরো ঘরে খুঁজছি?”
আমি উঠে চলে এলাম।মা ও আমার সাথে চলে এলেন।আসার আগে আপুর দিকে একবার তাকালেন তবে কিছু বললেন না।আমার ও আর আপুর চোখের সেই অব্যক্ত কথা গুলো জানা হলো না।
মা ও নানি ধরে ধরে আপুকে নিয়ে যাচ্ছেন বরের কাছে।এমন ভাবে তারা আপুকে ধরে রেখেছে যেনো আপু হাটতে পারে না।আমি অন্যান্য জায়গায় ও এটা দেখেছি, এমন ভাবে কনে কে ধরে আনা হয় যেনো কনের পা নেই বা চলার ক্ষমতা নেই।
আমি ভেবে রেখেছিলাম আপুর বিয়ের সময় এমন দৃশ্য ভিডিও করে রাখবো,তারপর আপুকে এই নিয়ে খুব জ্বালাবো তবে এখন ভাল্লাগছে না।
বার বার আপুর চোখের কথা গুলো জানতে ইচ্ছে করছে।কেমন যেনো অস্থিরতা কাজ করছে আমার ভেতর।
আমি ও গিয়ে সোফায় বসলাম।আপু সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকলো।এখন আপু মাথা নিচু করে বসে আছে।বরের মা আপুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
–কি নাম তোমার মা?
আপু মাথা নিচু করেই উত্তর দিলো,
“সাবরিনা রহমান”
তারপর কনের মা আরো কিছু প্রশ্ন করলেন আপুকে। একে একে আপু সব গুলো প্রশ্নের উত্তর দিলো।তারপর অন্য মহিলা,যিনি শুনেছি বরের খালা তিনি এসে আপুর চুল দেখতে লাগলেন।তারপর আপুকে দাঁড় করালেন, এবং খুঁটিয়ে খাঁটিয়ে দেখলেন।
তাদের বোধহয় আপুকে পছন্দ হইছে,যাওয়ার আগে তারা বিশ হাজার টাকা আপুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলো।তাদের উঠে যাওয়ার সাথে সাথেই আপু রুমে এসে দরজা আটকে দিলো।সবাই ভাবলো আপু বোধহয় লজ্জা পেয়ে লুকাচ্ছে তবে আমি সেই না জানা কারণ টা নিয়ে ভাবতে লাগলাম।
রাতে আপু আর কিছুই খেলো না।রুমের দরজা ও খুললো না। সকালে ফজরের নামাজের পর আপুর রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি শব্দ শুনতে পেলাম।কান্নার শব্দ।বালিশের সাথে মুখ চেপে কান্না করার শব্দ।আমি দরজায় আস্তে করে ঠোকা দিলাম,
“আপু আমি দরজা খুলো!এই আপু”
আপু দরজা খুললো।তার চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে এবং চোখ দুটো ও লাল।দেখে মনে হচ্ছে আপু সারারাত ঘুমায় নি।আমি রুমের দরজা আটকে দিয়ে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
“আপু আমি জানি তুমি কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা করছো?”
আপু কিছু জানে না এমন একটা ভাব নিয়ে,
–কই না তো!আমি আবার কি আড়াল করবো?
আমি আপুর দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বললাম,
“দেখো আপু আমি তোমার ভাই।যদিও আমাদের মধ্যে খুনসুটি টা একটু বেশি তবুও একটু হলেও আমি তোমাকে বুঝি।তোমার সম্পর্কে জানি। তুমি এভাবে স্থির হয়ে বসে থাকা এবং কান্না করার মতো মেয়ে না।তুমি চঞ্চল প্রকৃতির, হাসি খুশি তামাশা য় মত্ত থাকো তুমি সব সময়”
আপু আমার নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।সে বোধহয় দ্বিধায় পড়ে গেছে আমাকে বলবে কি না!
বিধাতা বড় অদ্ভুত ভাবে গড়ে দিয়েছেন ভাই বোনের সম্পর্কে কে। খুব অদ্ভুত এবং অজানা অপ্রকাশ্য টান আছে ভাই বোনের মধ্যে।মুখে না বললেও কিংবা হাজারো বিবাদ থাকলেও ভাই বোন একে অপরের অনুভূতি বুঝতে পারে।
আমার আর আপুর মধ্যে কখনোই ভালো ভাবে বনতো না।সব সময় হাতাহাতির মধ্যে থাকতাম আমি।তবে আজ কেমন অস্থির লাগছে,কেমন যেনো একটা ভয় কাজ করছে।
আপু আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো।
গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“ভাই আমি এখন বিয়ে করতে চাই না”
সাথে সাথেই আমি এক নিশ্বাসে বললাম,
“কেনো আপু!তোমার কি কারো সাথে সম্পর্ক আছে?তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?বরকে কি পছন্দ হয় নি?কেউ কি কিছু বলেছে?”
–নাহ্ ভাই আমার কারো সাথে সম্পর্ক নেই।কাউকে ভালো ও বাসি না।বরকে ও পছন্দ না হওয়ার কোন কারণ নেই,পছন্দ হইছে।কেউ কিছুই বলে নি তবে!
তবে বলে থেমে গেলো আপু।একদম চুপ হয়ে গেলো। মনে হলো যেনো তার মাথার উপর কালো মেঘ এসে বাসা বাধলো।সেটা যে কোন সময় তাকে শেষ করে দিবে।সে কিছুই বলতে পারছে না।মাথা থেকে দু ফুটো ঘাম কপাল কে স্পর্শ করে নাকের পাশ দিয়ে স্রোতের মতো পড়লো।এক ফুটো ঘাম এসে আমার হাতের মধ্যে পড়লো।আপু কিছু বলতে শুরু করবে তার আগেই “ক্রিং ক্রিং ক্রিং”। আপুর ফোন বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই আপুর চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো।আপু সাথে সাথেই ফোন কেটে দিয়ে ব্যাটারি খুলে সিম চেপে ভেঙে দিলো।
কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই সব কিছু ঘটে গেলো।
কি দেখলো আপু ফোনে যে এমনটা করলো সে?
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে আপুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।আপুর শরীর টা হালকা কাঁপছে।টেবিলের উপর ঢেকে রাখা পানির গ্লাস এনে আমি আপুর দিকে তুলে ধরলাম।আপু এক চুমুকেই অর্ধেক পানি ঢুক ঢুক শব্দ করে শেষ করলো।
আমার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।মনের সকল কষ্ট জমা করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।আপু কোন কিছু নিয়ে নিশ্চিত বিশাল ঝামেলায় আছে।এই মুহুর্তে আমার আপুকে সব কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে।তবে আপুকে দেখে মনে হচ্ছে না আপু এখন কিছু বলার পরিস্থিতি তে আছেন।
আমি আপুকে বিছানায় শুয়ে থাকার কথা বলতেই বাধ্য মেয়ের মতো আপু বালিশে মাথা ঠেকালেন। আমি উঠে চলে যেতে চেয়েও গেলাম না।অজানা শক্তি আমাকে আপুর পাশে থেকে থাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বলছিলো।আমি আপুর বালিশের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম।ঠিক যেমন টা আপু আমাকে ছোট বেলায় দিতো।
দেখতে দেখতেই ঘুমের মধ্যে ডুবে গেলো আপু।আমি এক লম্বা নিশ্বাস ছাড়লাম নিজেকে কিছুটা হালকা মনে হচ্ছে।আমি ও আপুর পাশে মাথা ঠেকিয়ে খানিক শুয়ে পড়লাম।
বেলা এগারোটার দিকে আপুর ঘুম ভাঙলো।তবে এখনো আপুর চোখের নিচের দাগ টা স্পষ্ট। মা ও পরিবারের সবাই বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত তাই কেউ আর আপুকে ডাকে নি।
ভাই বোন দুজন ডাইনিং রুমের দিকে যেতেই নানা রকমের থাল দেখতে পেলাম।বরের পক্ষ সকালে পাঠিয়েছে হয়তো।
ফ্রেশ হয়ে চেয়ারে বসার পর মামী এসে দুজনকে চা এবং হালকা নাস্তা দিয়ে গেলেন।এখন পর্যন্ত আমি মাকে দেখিনি।
চা টা তড়িঘড়ি করে খেয়েই আমি মাকে খুঁজতে শুরু করলাম।
মা নাকি একটু বাহিরে গেছে।আমি মাকে ফোন দিয়ে জানালাম যে আমি আর আপু একটু বাহিরে যাচ্ছি কিছু কেনা কাটা করার জন্য। তাড়াতাড়ি আসিস বলে মা আমাদের অনুমতি দিয়ে দিলেন।
অনুমতি পেয়ে আমি আপুর রুমে ঢুকেই আপুকে বললাম রেডি হয়ে নিতে আমরা বাহিরে যাবো।আপু কিছু না বলে ড্রেস চেঞ্জ করে আমার সাথে বেরিয়ে পড়লো।
রিক্সায় বসে বেখেয়ালি হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আপু।তার চোখে মুখে জগতের ভয়।যেনো হঠ্যাৎ কেউ ই তার উপর আক্রমণ করবে।
আমি আপুকে নিয়ে নদীর ধারে গেলাম।ছোট বেলায় বাবা আমাদের দুজনকেই সপ্তাহে একদিন দু দিন এখানে নিয়ে আসতে।এই জায়গায় অন্য রকম এক প্রশান্তি পাওয়া যায়।নিজেকে খুব হালকা মনে হয়।
আমি বসে বসে নুড়ি পাথর গুলো নদীর পানিতে ছুড়তে থাকলাম।আপু এক ধারে নদীর স্রোতের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বললাম,”আপু তুমি কি হয়েছে সেটা বলো!প্লিজ এভাবে চুপ করে থেকো না আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।তুমি সমস্যাটা বলো?”
আপু মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো।তারপর একবার নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার কলেজের আশফাক স্যার। আমাকে পছন্দ করে।বিয়ে করতে চায় আমাকে,আপন করে পেতে চায়!”
এরকম কিছু একটা শোনার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না।তবে আমি নিজেকে সামলে নিলাম।আমি বললাম,”উনি কি দেখতে খারাপ,সব কিছু ভালো হলে উনাকেই বিয়ে করে ফেলো!”
হাহাহা করে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠলো আপু।তারপর বললো,”ভালো খারাপ মানুষের চেহারায় লেখা থাকে না,আমরা চেহারাতেই সব কিছু জাস্টিফাই করে, চেহারার ভাব দেখেই ধরে নেই মানুষের চরিত্র।সুদর্শন বিবাহিত পুরুষের অন্য মেয়েকে পছন্দ লাগাটাই হলো সব চেয়ে খারাপ”
এই বলে আপু অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আমি বিষয়টি বুঝতে পারলাম।কিন্তু তবুও আমার কাছে কিঞ্চিৎ খটকা লাগলো।আপু যেনো কিছু একটা আড়াল করছে।তার কথার মধ্যে চরম ঘৃণার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।আমি আপুকে বললাম,
“আপু তুমি কিন্তু এখনো পুরো বিষয়টি আমাকে বলছো না!”
আপু চওড়া কন্ঠে বলে উঠলো,”কি বলবো তোকে,আমার সাথে জোরাজোরি করার কথা বলবো তোকে!আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কথা বলবো তোকে”
আমি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।একজন শিক্ষক যে কিনা দেশ গড়ার শক্তি নিজের হাতে সে ই এরকম খারাপ এবং নিচু কাজ করতে পারে।আপুর সাথে এমন ঘটনা ঘটে গেলো আর আপু জানালো ও না।আর বিবাহিত লোকটা কি করে এতো জঘন্য হতে পারে।
আমি তখনই উঠে দাঁড়িয়ে শক্ত করে আপুর হাত টা ধরলাম।ফোন দিয়ে মামা এবং নানা সহ আরো কিছু লোককে স্যার এর বাসায় আসতে বললাম।এবং আমরা নিজেরাও সেদিকে রওনা দিলাম।আপু কিছু না বলে চুপ করে আছে।
স্যার এর বাসায় পৌঁছে কলিং বেল চাপতেই মধ্যে বয়স্ক এক মহিলা দরজা খুলে দিলেন।তখন মামা-নানা ও এসে পৌঁছেছেন।বাসায় ঢুকে দেখলাম ঐ বদ লোকটা সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে।আপুর দিকে তাকিয়েই তার চোখ চড়কগাছ হয়ে গেলো।
আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো গিয়ে লোকটাকে আচ্ছা মতো কেলানি দিই, কিন্তু নিজেকে দামিয়ে রাখলাম।
আপু স্যার এর তাকে রেজাল্ট এর ভয় দেখিয়ে গ্যাঁড়াকলে ফেলা সহ সব কিছু স্যার এর স্ত্রীর কাছে বললো।
তখন বেচারির চেহারাও মলিন হয়ে গিয়েছিলো।কোন স্ত্রীর ই না নিজের স্বামীর সম্পর্কে এমন কথা শুনতে ভালো লাগবে।আসলে কিছু লোকের খারাপ কাজের জন্য অনেক লোকে কেই দায়ভার নিতে হয়।
স্যার এর স্ত্রীর করজোড়ে আপুর কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং স্যার কোন ঝামেলা করবেন না বলে আশ্বাস দিলেন।আপু হাসি মুখে বেরিয়ে আসলো স্যার এর বাসা থেকে।
আজ আপুর গায়ে হলুদ। দু হাতে হলুদ লাগিয়ে মাখিয়ে দিলাম আপুর চোখে মুখে।আপু আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তার চোখ দুটি ছলছল করছিলো।হয়তো সে আমার এরুপ কর্মকাণ্ডে খুব বেশি অবক।
সব প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেলো।লাল শাড়ি পড়ে মাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে বিদায়ের কান্না কাঁদতে কাঁদতে আপু গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।সাথে দুলাভাই ও যাচ্ছেন।আমি ও পিছু পিছু যাচ্ছি।
গাড়ির কাছে গিয়েই আপু থেমে গিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর “ভাই আমার” বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
ভালো থাকিস ভাই,নিজের খেয়াল নিস।আপু চলে যাচ্ছি।যদি কিছু ভুল করে থাকি তাহলে মাফ করে দিস বোনকে।
আমি ও আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না