নাদিয়া মেয়েটার নাক টা কে যেন ফাটিয়ে দিয়েছে!” খাবার টেবিলে আব্বাকে উদ্দেশ্য করে বলল আম্মা৷ আব্বা অবাক হয়ে বললেন,
-কি বলো! আজকাল মেয়ে সন্ত্রাসী বের হলো নাকি!”
আম্মা আফসোসের স্বরে বললেন,
-কিজানি৷ সন্ধ্যায় গিয়ে দেখে আসবো৷ ”
আম্মার কথায় আব্বা সায় দিল৷
আমি ভাতটুকু শেষ করে রুমে এসে বসি৷
এই মূহুর্তে খুশি হবো!
না নাদিয়ার কষ্টে ব্যাথিত হবো৷ এটা নিয়ে বড্ড দোটানায় আছি৷
একজন রূপবতীর নাক ফেটেছে, আমার দুঃখ পাওয়া দরকার৷
আবার একজন ঘাড়ত্যাড়ার নাক ফেটেছে, আমার খুশি হওয়া উচিত৷
নাদিয়া মেয়েটা আমাদের উপরের তলায় থাকে৷ দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ৷
যদিও বা একটু ঘাড়ত্যাড়া৷ সুন্দরীরা একটু আধটু ঘাড়ত্যাড়া হবে৷
সেটা অবশ্যই স্বাভাবিক৷
কিন্তু এই মেয়ে ভিন্ন টাইপের ঘাড়ত্যাড়া৷
অন্যদের সামনে লক্ষী একটা মেয়ে৷ দেখে মনে হবে, মাছ টাও ভাজতে জানে না৷
উল্টিয়ে খাওয়া দূরে থাক৷
উনার যত ঘাড়ত্যাড়ামী সব আমার সামনে আসলেই৷
আমার দুই বান্ধবীর একজন লুবনা৷ দেখতে শান্তশিষ্ট হলেও প্রেমে ছ্যাকা খাওয়াতে তার বিকল্প কেউ নেই৷
এ যাবৎ বার পাঁচেক ছ্যাকা সে খেয়ে ফেলেছে৷
গত কয়েকদিন আগে সে সর্বশেষ ছ্যাকা খেয়েছে৷
প্রতিবারের ন্যায় এবারো ছ্যাকা খেয়ে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছে৷
যে সে কান্না নয়৷
একদম কাঁধ ভেজানো কান্না৷
লুবনার কান্না দেখে সাধ্যমতো শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে অণু৷
আমারও মনে হল বন্ধু হিসেবে আমারো একটু শান্তনা দেয়া দরকার৷
দেরী না করেই বলে ফেললাম,
-তুই এই ব্যাপারে অনভিজ্ঞ হলে একটা ব্যাপার ছিল৷ পূর্ব অভিজ্ঞতা যেহেতু আছে৷ সেহেতু কাঁদবি কেন?”
লুবনা এতক্ষণ অণুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল৷ আমার শান্তনামূলক বাণী শুনে রাগী রাগী মুখ নিয়ে তাকালো অণু৷
আমি একটু কেঁশে বললাম,
-না মানে আমার মতো ভালো ছেলে ফেলে কেন যে তোরা যার তার সাথে প্রেম করতে যাস বুঝিনা!”
আমার কথা শেষ না হতেই অণু খপ করে আমার শার্টের কলার ধরে বসে৷
ভাগ্য ভালো চারপাশে মানুষ ছিল না তেমন৷
নয়তো ক্যাম্পাসে মুখ দেখানোটাই হুমকির মুখে পরে যেত৷
রাগে গজরাতে গজরাতে অণু বলল,
-প্রেম করেছিস কখনো?
-না৷
-প্রেম দূরে রাখলাম৷ মেয়েদের চোখে চোখ রাখতে পেরেছিলি কখনো?
-তাইলে তোরা কি?”
এবার অণু কলার টা ছেড়ে দিল৷ বসা থেকে উঠে মিনিট দুয়েক পায়চারি করল৷
এতক্ষণ কাঁদতে কাঁদতে ভাসিয়ে দেয়া লুবনা মেয়েটাও অবাক হয়ে অণু কান্ড কারখানা দেখছে৷
পায়চারি করতে করতে হুট করে থেমে যায় অণু৷ লুবনার দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ূ বলল,
-হা করে তাকায় আছিস ক্যান? স্কেল বাইর কর৷ হাবাকে কুপিয়ে দিবো আজকে৷”
অণুর হুংকারে লুবনা একটু চমকে উঠে৷ চুপচাপ মনযোগ দিয়ে স্কেল খুঁজতে লাগল ব্যাগের ভেতর৷
লুবনা আমাকে চোখের ঈশারা দিতেই আমি উঠে পরি৷ উঠে পরি নি অবশ্য৷ পালিয়ে বাঁচা যাকে বলে সেটাই করেছি৷
লুবনা মেয়েটাকে আমার এজন্যই ভালো লাগে৷
নরম মনের একটা মেয়ে৷
এমন একটা মেয়েকে হারামজাদাগুলো কেন ছ্যাকা দেয় আমার মাথায় আসে না৷
রাতের বেলা লুবনাকে ফোন দিয়ে ধন্যবাদ জানালাম৷ অন্যসময় হলে এই টাইমে সে প্রেমিকের সাথে কথা বলতো৷
আজ প্রেমিক নেই৷
ধন্যবাদের সৌজন্যে কিছুক্ষণ শান্তনা দিলাম৷
মেয়েটা খুশিই হয়েছিল অবশ্য৷
পরের দিন দুয়েক ক্যাম্পাসে যাওয়া হয়নি আর৷ অণু মেয়েটার সামনে আমি কিছুতেই পরতে চাই না৷
এই মেয়েটার রাগী চেহারাটা আমার ভালো লাগে৷
অদ্ভূত ব্যাপার, রাগী চেহারা ভালো লাগলেও রাগটা আমার ভালো লাগে না একদম৷
আর আমার ক্ষেত্রে রাগটা তার দ্বিগুণ৷ এর কারণ আমি আজো বের করতে পারিনি৷
৩দিনের মাথায় ক্যাম্পাসে যেতেই অণুর সাথে দেখা৷ হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলল,
-শোন ছেলে৷ সুন্দরীদের রাগ একটু বেশি হবে৷ তাই বলে তাদের ভয় পেতে নেই৷ ভয়ের সাথে সাথে সুন্দরীদের মনও জয় করতে হয়৷”
আমিও দাঁত দুপাটি বের করে দারুণ একটা হাসি দিয়ে বললাম,
-দারুণ বলেছিস৷ তোর থিউরি কাজে লাগিয়ে পটিয়ে ফেলেছি৷
-পটিয়েছিস মানে?
-প্রেম শুরু করেছি!
-কীভাবে সম্ভব?
-এই যে যেভাবে বললি৷
-মেয়ের নাম?
-নাদিয়া৷
-থাকে কই?
-উপরের তলায়৷
-কবে থেকে এসব?
-মাস ছয়েক সুন্দরীর পেছনে লেগেছিলাম৷ ভয়ের সাথে সাথে মনও জয় করে ফেলেছি৷
-কাল পরিচয় করিয়ে দিস৷
-ঠিক আছে৷
সেদিন বিকেলে এই নাদিয়া নামের একাধারে সুন্দরী,ঘাড়ত্যাড়া মেয়েটাকে বলেছিলাম,
-তুমি আমার প্রেমিকা না হৌক৷ অন্তত ভারপ্রাপ্ত হও৷”
আমার প্রস্তাবের জবাবে মেয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলেছিল,
-অতিপরিচিত বলে গালটা লাল করিনি৷”
তারপর মিষ্টি একটা হাসি লাগিয়ে প্রস্থান করেছিল৷”
মাস খানেক আগের অতীত ভাবতে ভাবতে আমার মনটা আনন্দে ভরে উঠে৷
সিলিং ছেড়ে দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়েছিলাম৷
চোখটা লেগে এসেছিল বটে৷
বাবার চিৎকারে ভ্রম ভাঙে৷
নাদিয়াকে দেখতে যেতে হবে৷
আমার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও প্রথমে নাহু নাহু ভাব ধরলাম৷
অপেক্ষায় ছিলাম আব্বা আমাকে জোর করবে৷
তার আগেই আম্মা বলে উঠল,
-এতদিন পিছু পিছু ঘুরে আবার ভালো মানুষি মারাচ্ছিস কেন? যা গিয়ে দেখে আয়৷”
শেষমেষ আব্বার পিছন পিছন নাদিয়াদের বাসায় গেলাম৷ মেয়েটা নাকে বরফ লাগিয়ে বসে আছে৷
সরু নাকটার অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে৷
গুলুমুলু গালগুলো অবস্থা মোটামুটি পোঁড় খাওয়া পরোটার মতো বানিয়ে দিয়ে৷
সিল্কি চুলগুলোতেও নাকি দু’চারেক চুইংগাম লাগিয়ে দিয়েছে৷
আমার আম্মা সবকিছু একটু বাড়িয়েই বলেন সবসময়৷ এই নিয়ে আম্মাকে, আব্বা আর আমি মিলে প্রচুর ক্ষেপাতাম৷
কিন্তু নাদিয়া মেয়েটার অবস্থা দেখে মনে হল, আম্মা এবার একটু কমিয়েই বলেছে৷
সুন্দরী মেয়েটার কি হালটাই না করলো৷
আহারে!
হামলাকারি অবশ্যই পরিকল্পণা করে এসেছে৷
আব্বা মিনিট পাঁচেক নাদিয়ার আব্বার আফসোসের সাথে গলা মেলালেন৷
আমি নাদিয়ার দিকে তাকিয়েই রইলাম৷
চোখে মুখে বেদনা ফুটিয়ে তুলেছি ততক্ষণে৷
-ছ্যাঁচড়ার মতো তাকিয়ে আছেন কেন আপনি?”
আমার তাকানো দেখে বলে বসল নাদিয়া৷
এই মূহূর্তে আমি অপমানিত বোধ করলাম খুব৷
নাদিয়ার ছোট ভাইটা খিকখিক করে হেসে উঠল৷
আমি দাঁড়ালাম না আর৷
আব্বাকে রেখেই চলে আসলাম৷
রুমে ঢুকে ফোনটা হাতে নিতেই মেসেজ টোন বেজে উঠলো৷
অণু মেয়েটা টেক্সট পাঠিয়েছে,
“সরু নাকের মেয়েটার নাকটা বোঁচা করে দিয়েছি৷
গুলুগুলু গালগুলো দিয়ে পরোটা বানানোটা ভালোই চর্চা করেছি৷
হালকা বাতাসে উড়ুউড়ু সিল্কি চুলগুলো চুইংগাম দিয়ে ফ্রিতে ষ্টিকস করে দিয়েছি৷
ভবিষ্যতে তোর যতগুলো প্রেমিকা হবে, সবগুলারে এমন করবো আমি৷
তুই আমার জিনিস! বুঝলি ছেলে৷”
আমি হাসি৷
এই রাগী মেয়েটাও যে আমাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে সেটাও জানি আমি৷
আমার খুব ইচ্ছে হয়,
ভালোবাসা মাখানো পাগলামী গুলোতে সায় দিই৷
পরক্ষণেই আমার ভাবী,
নাহ! এভাবেই চলুক৷
মেসেজের টোনটা আবার বেজে উঠে৷
“কি বলেছি বুঝেছিস?”
আমি উত্তর দিই,
হ্যা বুঝেছি৷ নাদিয়া মেয়েটার ঠোঁটগুলোও সুন্দর কিন্তু!”
প্রতি উত্তর আসলো ঐ পাশ থেকে,
“আচ্ছা৷ পরের বার দু’ঠোঁটে পিন মেরে দিবো৷