“অসম্ভব, আমি কিছুতেই এ বিয়ে করবো না। তোমাকে অনেক আগেই বলেছিলাম যে আমি বিয়ে করতে চাই না, তাও তুমি একটার পর একটা ঘটক লাগিয়ে ছেলের বাড়ির লোকজন টেনে আনছো। ওরা গান্ডেপিন্ডে সাজানো প্লেট সাবাড় করে পরে খবর দেবো বলে কেটে পড়ছে,আর ঘটক বলছে হে হে হে আমি কি করবো বলেন, আমি তো সম্বন্ধ এনে ছিলাম!” একদমে কথা গুলো বলে হাঁফাতে থাকে লুনা।
–শোন না, মা ,আমার কথা টা শোন, আমি কি চিরদিন তোকে আগলে রাখতে পারবো? নাকি আমি চিরদিন বেঁচে থাকবো বল, যখন আমি থাকবো না তখন এতো বড় বাড়ি, এতো বড় দুনিয়ায় কি করে একা একা থাকবি?
–মা, শোনো এসব কথা বলে আর কোনো লাভ হবে না, এই তোমায় বলে রাখলাম, যাদের কেউ নেই তারাও বড় হয়, বেঁচে থাকে। আর না আমি ছোটো, না আমার কিছু নেই যে কারো সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবো না।
সুমিতা দেবী কিছু বলার আগে লুনা বললো তুমি কেন বুঝতে চাইছো না মা, বার বার সেজেগুজে কিছু লোকের সামনে বসে থেকে, তাদের এন্টারটেনমেন্ট করতে আর চাইনা, আমি খুব ক্লান্ত মা সত্যি বলছি আর ভালো লাগেনা আমার এসব। আমার খুব লজ্জা করে মা, বিশ্বাস করো তুমি!
সুমিতা দেবী বললেন- ওরা তো তোকে পছন্দ করেছে, মানে পাত্র নিজেই তোকে পছন্দ করেছে তাই ও বাবা মায়ের সাথে আজ দেখা করতে আসতে চেয়েছে, কি করে না বলে দেবো বল তো!
লুনা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়ের বিয়ের আশায় তার মুখটা জ্বল জ্বল করছে।
সে শুধু বললো- ঠিক আছে মা, এই শেষ বারের জন্য আমি নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তৈরী থাকবো।
নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
ঠাকুর মেয়েটার একটা গতি করো, মনে মনে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণাম করলেন সুমিতা দেবী।
নির্ধারিত সময়ে পাত্রপক্ষ এলো। মায়ের কথা ফেলতে না পেরে হালকা মেকআপে নিজেকে সাজিয়েছে লুনা।
অসীমের (পাত্র) চেহেরা দেখে মনে হল শান্ত শিষ্ট। তার চোখে একটা বুদ্ধিমত্তার ছাপ। সবার কথা বলা শেষ হলে সুমিতা দেবী তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন – তোমার কিছু বলার বা জানার থাকলে লুনার সাথে আলাদা করে কথা বলতে পারো!
অসীম বললো- নাহ্ আলাদা করে কিছুই জানার নেই আমার। ওনার ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি ওতেই হবে।
লুনা বললো – আমার যে আপনার সাথে কিছু পার্সোনাল কথা আছে, আপনি যদি চান তো চলুন আমরা বাগানে যাই।
অসীমের বাবা বললেন – যাও দেখো কি বলতে চায় লুনা, দুজনে বাগানে এলো।
কোনো ভূমিকা না করে লুনা বললো- আপনার আগে আমাকে আরো তেরো জন দেখতে এসে রিজেক্ট করেছে, তা আপনি নাকি জানিয়েছেন আমার ফটো দেখে আপনার পছন্দ হয়েছে তবে আপনাকে জানিয়ে রাখি আমার এই ফটো টা তিন বছর আগে তোলা। তার আগে আরো কয়েকবার ফটো তোলা হয়েছিল, সেগুলো এখন আর নেই, আমি ছিঁড়ে ফেলেছি।
চলুন ঐ বেদীটার কাছে গিয়ে বসি। আসুন বলে সেদিকে এগিয়ে গেলো লুনা।
অসীমের মুখে দিকে তাকিয়ে বললো – কি হলো কি দেখছেন?
–নাহ্ বলুন কি বলবেন আমি শুনছি !
–বলছি এই যে আমি শাড়ী পরে সেজেগুজে আছি, সেটা করতে হয় বলেই করেছি তবে আমি শাড়ী ভালো পরতে পারিনা, মা সাহায্য করেছে আজও। পড়াশোনায় কোনোদিন খুব ভালো ছিলাম না, উতরে গেছি কোনোরকমে, আর মায়ের কথা রাখতেই শুধু ডিগ্রী বাড়িয়েছি। মায়ের ধারণা ডিগ্রী থাকলে বিয়ের বাজারে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকা যায়। তবে আমি কোনোদিনো চাকরি করবো না, একমাত্র মেয়ে বলে আয়েশ করে কাটিয়েছি এই তিরিশ বছর।
মাকে জিগ্যেস করলে মা এখোনো আমার সাতাশ বছর বয়স বলে। কালো, বেঁটে, নাদুসনুদুস , মেয়েটার মধ্যে কি দেখলেন যে বিয়ে করতে রাজি হলেন সেটা জানার জন্য এখানে নিয়ে এলাম,আর যদি ভাবেন আমার সম্পত্তি অনেক, সেটার জন্য যদি বিয়ে করতে চান তবে বলে রাখি এই বাড়ি আমার ঠাকুর্দার, তার ইচ্ছা ছিল একটা অনাথ আশ্রম করার ,ওটা আমি করবো তাই ওটার আশা নেই। এরপর বলুন আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে চান?
অসীম বললো- হ্যাঁ চাই তো, তাই তো মন দিয়ে আপনার সব কথা শুনলাম। এবার আপনি আমার কথা শুনুন,আমি বিশ্বাস করি মানুষের আসল সৌন্দর্য মানুষের মনে। আপনি স্পষ্টভাষী সেটা এখন জানলাম। আর আপনার সম্পত্তির ওপর আমার কোনো লোভ নেই কারণ আপনার মতো রাজপ্রাসাদ আমাদের নেই, তবে মাথা গোঁজার আস্তানা আমার আছে। আমি চাই বিয়ে করে আমি বউ নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকবো। আরো বলি যে আমিও কোনো কন্দর্প নই যে আমার কাঞ্চন বর্ণের ,সুদর্শনা মেয়ে দরকার। আপনি সব আপনার যা খারাপ তা বললেন, ভালোটা আমি বলছি শুনুন চুপ করে।
আমি লম্বা, আপনাকে কথা বলতে হলে আমার সাথে সবসময় মাথা উঁচু করে কথা বলবেন, আমি সেটাই চাই। গলায় প্রতিবাদ আছে যা বাঁচার জন্য দরকার। চোখে আগুন আছে, যা অনেকের দম্ভকে জ্বালিয়ে দিতে পারবে। আর যা কম বা বেশী আছে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারবো। অবাক হয়ে চেয়ে রইলো লুনা তার দিকে।
অসীম বললো- চলুন ঘরে যাওয়া যাক ,সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিয়ের জন্য কিছু প্রস্তুতি করতে হবে তো!
সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অসীমের পিছু পিছু ঘরের দিকে পা বাড়ালো ।
(সমাপ্ত)