সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই তন্বীষ্ঠা শুনতে পেলো “ভোম্বল আয় আয়,খেয়ে যা”।
তিনদিন বাপের বাড়ি কাটিয়ে ফিরলো তন্বীষ্ঠা। ওর দুমাস বিয়ে হয়েছে ঘোষাল বাড়ির ছোট ছেলে প্রীতমের সাথে । আর এই দুমাসে সাড়ে আটবার বাপের বাড়ি গেছে তন্বীষ্ঠা। একবার বাড়ি ঢুকতে না ঢুকতেই প্রীতম গিয়ে নিয়ে এসেছিলো এই ভোম্বলের জন্মদিন বলেই – একে ‘সাড়ে’ বলা ছাড়া কি বা বলা যায় !
ভোম্বল একটা অসহ্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে তন্বীষ্ঠার জীবনে । এতো আদিখ্যেতা বাবার জন্মে কোথাও দেখেনি সে । বিয়ের পরের দিন থেকে দেখে আসছে – নতুন বৌকে নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই ঘোষাল গিন্নির , শুধু ভোম্বল কি খাবে , কোথায় যাবে , যত্তসব ন্যাকামি !
রিমোট দিয়ে এ সি বাড়িয়ে ব্যাগ থেকে আমূল দুধের প্যাকেটটা বের করে চোখ বুঁজে মনের সুখে খেতে থাকলো তন্বীষ্ঠা।আহা ! স্বর্গসুখ যেন ! এই তো দুই নেশা – দুধ গুঁড়ো খাওয়া আর সিনেমা দেখা ” বৌমা “—– খেয়েছে !এই সময় ঘোষাল গিন্নি ? “আসছি মা ” মুখের টুকু গিলে বললো তন্বীষ্ঠার। হাতের তালু দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে দরজা খুলে ” কিছু হয়েছে মা ?” পাশে যথারিতি ভোম্বল ।
“বলছি আবার কবে বাড়ি যাচ্ছ ঠিক করলে? ” বাঁকা মুখে প্রশ্ন করলেন নমিতা দেবী তথা ঘোষাল গিন্নি সর্বোপরি তন্বীষ্ঠার শাশুড়ি । এই বাঁকা প্রশ্নগুলোই সহ্য হয় না ওর । মুখ খিঁচিয়ে উত্তর দিতে যাবে হঠাৎ মায়ের মুখটা মনে পড়লো ” ওই বাড়িতে কাওর মুখে মুখে কথা বলিস না মা ;এতে তোর মায়ের দেওয়ার শিক্ষায় কলঙ্ক লাগবে । ” ওই এক মহিলা নীতিজ্ঞানে ভরিয়ে তুললো জীবনটা !
“কি ভাবছো ? ক্যালেন্ডার দেব ?” আবার বাঁকা প্রশ্ন নমিতা দেবীর
“না মা আসলে এখনো কিছু ঠিক করিনি ।আজই তো এলাম , দেখি ! ” তুঁতলিয়ে বললো তন্বীষ্ঠা।
“না তাই বলতে এলাম আমি আর তোমার শশুর ভোম্বল কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো মঙ্গলবার । ওর কদিন ধরে মাথা ব্যথা ,তাই ! তোমার তো আবার পায়ের তলায় সর্ষে , তাই তিনদিন আগেই জানালাম । ”
খাইসে ! কুকুরের আবার মাথা ব্যথা! হায় ভগবান ! আর কি শুনতে হবে কে জানে ? চিন্তাটা ঢক করে গিলে গলায় আদিখ্যেতা এনে জিজ্ঞাসা করলো তন্বীষ্ঠা ” সে কি কবে থেকে মা ?” এমন সময় শুরশুর করে উঠলো পা টা। ওর প্রতি এতো চিন্তাশীল দেখে পায়ের একদম কাছে এসে হাজির ভোম্বল । আর ও “ও মাগো” বলে লাফ দিয়ে সোজা খাটে।
ঘোষাল গিন্নি রেগে গিয়ে বললেন ” ভোম্বল আমার বাঘ না ভাল্লুক যে ওকে দেখে ওরম করলে ? নাটকের শেষ নেই ।” বলতে বলতে বেরিয়ে গেলো মুখের ওপর দরজাটা দিয়ে ধড়াম শব্দ করে । দুদিন কেউ থাকবে না কি যে আনন্দ হচ্ছে! মনে মনে নেচে উঠলো তন্বীষ্ঠা। কি কি করবে ভাবতে লাগলো, অনেক নতুন নতুন রান্না করবে , পুরো বাড়ি সাফ করবে ,মা গো কুকুরের গন্ধে গা টা গুলিয়ে ওঠে ওর । মনে মনে গান ধরলো “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে ” আবার পা টায় কেমন নরম নরম লাগলো “ও মা গো”!বলে আবার খাটে।
তন্বীষ্ঠার আচরণে ভোম্বল ও যেন দুঃখিত এমন চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো তন্বীষ্ঠার দিকে । চোখ গুলো দেখে , বুক টা মোচড় দিলো তন্বীষ্ঠার; কি মায়াভরা ! নেমে এলো খাট থেকে , ভোম্বলও এগিয়ে এসে ওর দিকে মাথা বাড়িয়ে দিলো , এখন কি করা উচিত তাও জানে না তন্বীষ্ঠার। এদের নিয়ে কোনোকালেই কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না ওর; তাও হাত বাড়িয়ে মাথাটা একটু বুলিয়ে দিতেই আরো ঘেঁষে দাড়ালো ।ভয়টাও যেন কমে গেল! ইতিমধ্যেই “ভোম্বল নিচে নাম।” ভোম্বল যেন ধরা পরে গেছে এরম মুখ নিয়ে পালালো ।
পরেরদিন থেকে লক্ষ্য করলো তন্বীষ্ঠা,ভোম্বল আসলেই ওর মাথায় হাত বোলাতে ইচ্ছে করছে ,বুঝতে পারলো না নরম বলে কিনা ! ভোম্বলও সুযোগ পেলেই তন্বীষ্ঠার পায়ে পায়ে ঘুরতে থাকে । নমিতা দেবী একটু রেগে কথা বললেও যেন ভোম্বল “ঘেউ ” করে উঠছে তন্বীষ্ঠা খেয়াল করলো ।
মঙ্গলবার সকাল হতেই বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেলো । একে একে বেরিয়ে গেলো সবাই । নমিতা দেবী , বিমল বাবুর সাথে ভোম্বল ভবানীপুর গেলো, ওখান ট্রিটমেন্ট চলবে ভোম্বলের , তাই দুদিন থাকবে প্রীতমের মাসিবাড়ি। প্রীতম সকাল সকাল বেরিয়ে গেলো ওনাদের ছেড়ে অফিস যাবে বলে । ফাঁকা বাড়িতে একা তন্বীষ্ঠা -একেই মনে হয় বলে স্বাধীনতার সুখ। গুনগুন করে গেয়েই চলেছে ও । ক্লিনিং ডাস্টিং করাটা তন্বীষ্ঠার ছোট্টবেলার স্বভাব , নোংরা একদম দেখতে পারে না , ঝাড়পোছ করতে করতে নজর পড়লো সামনে টেবিলের ওপরের ছবিটাতে , প্রীতমের দাদা আর কোলে ছোট্ট ভোম্বল, কি যে মিষ্টি ছিল দেখতে ভোম্বলকে ! প্রীতমের দাদা- এ এক রহস্য এই বাড়িতে ,বাইরে নাকি চাকরি করে ।আর কোনো কথা শোনা যায়নি ওই নাম নিয়ে, এক আধবার প্রীতম কে জিজ্ঞাসা করতে পাতি এভোয়েড করেছিল ।
পায়ের কাছে ভোম্বলের লোম পড়ে আছে , হাতে তুলে নিলো মুঠোবন্দি করে ,থেমেও গেল দুদণ্ড , খুব কষ্ট হতে থাকে তন্বীষ্ঠার।স্বাধীনতার সুখটা যেন পেয়েও পাচ্ছে না ।থাক! কিচ্ছু পরিষ্কার করার দরকার নেই । এই কুকুর কুকুর গন্ধটাই যেন মন থেকে চাইছে ও। সুচারিতা ঠিক বলতো ওরা খুব মায়াবী হয় ।
সারাদিনে অনেকবার ফোন করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো ,কিন্তু বাঁধোবাঁধো লাগছিলো । রাতে প্রীতম আসতেই তন্বীষ্ঠা বললো খোঁজ নেওয়ার জন্য । ও এমন করে তাকালো যেন সাতের পর আট নম্বর আশ্চর্যটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে । ফোন করে জানালো ” ভোম্বলে হসপিটালে ভর্তি ওর মাথায় নাকি পোঁকা হয়েছে । পরশুদিন ছাড়বে ।” সেই থেকে নেট সার্চ করে বিভিন্ন আর্টিকেল দেখে চলেছে তন্বীষ্ঠা।পরের দিন সকালেই ফোন করলো সুচরিতাকে । ওর অনেক নলেজ, কলেজে পড়ার সময়েই ওদের বাড়িতে দুটো ডোভারম্যান ছিল ।
ঠিক বুঝতে পারছে না তন্বীষ্ঠা যে ভোম্বলের রোগটা ঠিক কতটা গাড়িয়েছে, সুচরিতা বলেছে বটে যে আর্লি স্টেজে রিকভার করা সম্ভব । “হে ভগবান সুস্থ করে দিও আমার ভোম্বলকে ” মাঝে মাঝেই ডেকে চলেছে কাজের ফাঁকে ।
পরের দিন বিকেলে ভোম্বল এলো শশুর শাশুড়ির সাথে , সবাই যেন খুব চুপচাপ । ভোম্বল ও নেতিয়ে পড়ে রয়েছে , কাছে যেতেও গলা বাড়াচ্ছে না ,হঠাৎ নিজে থেকেই জিজ্ঞাসা করে ফেললো তন্বীষ্ঠা ” মা কি বললো ডাক্তার ?” তার উৎসাহটা ঠিক কোন লেভেলের সেটা মাপতে মাপতে উত্তর দিলেন নমিতা দেবী ” ডাক্তার টাইম দিয়ে দিয়েছে “। বুকটা হু হু করে উঠলো , মৃত্যু বড় খারাপ জিনিস! যে মরে সে তো বেঁচে যায় কিন্তু বাকিদের মেরে দিয়ে যায় । নিজের দাদুর বেলায় দেখেছিলো ও ।
আজ সারারাত ছটফট করেছে তন্বীষ্ঠা। অন্য অনেক ডাক্তার তো আছে তাদের সাথে কনসাল্ট করলে কেমন হয় ? মাথায় আসতেই হোয়াটসআপে সুচরিতা কে লিখলো
তন্বী : তোর কাছে ভালো কুকুরের ডাক্তার আছে ?
সু: ঐ কুকুরের ডাক্তার মানে? বল ভেটেনারি
তন্বী : ওকে ওকে! আছে কেউ?
সু : হুম ডাঃ এ কে গাইন
তন্বী: ভালো?
সু : নেটে সার্চ করে নে।
তন্বী : তুই যখন বলছিস নিশ্চই ভালো। নম্বর টা দে
সু : ডাঃ এ কে গাইন: ৯৮……00
তন্বী : দরকার পড়লে যেতে পারবি আমার সাথে ?
সু : ওদের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারি ।
তন্বী : 👍 থ্যাংক ইউ রে । ঘুমা এবার ।কাল ফোন করবো
সু: 😌
ফোনটা রেখেই পাশ ফিরতেই প্রীতমের অসহ্য নাক ডাকার আওয়াজ , কোনো কিছুতেই কিছু এসে যায়না এই ছেলেটার, কোনো চিন্তা নেই ভোম্বল কে নিয়ে, যত্তসব!
পরের দিন সকালে উঠেই আগে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিলো ড: গাইনের, শনিবার বেলা ১১টা , এই আরেক চিন্তা শুরু হলো কিভাবে বেরোবে শাশুড়ি কে এঁড়িয়ে।একবার বলে দেখলে হয় ভাবতেই নমিতা দেবীর গলা “ভোম্বল কোথায় গেলি?”বাপ্ রে এই আওয়াজে জিজ্ঞাসা করার আগেই হার্টফেল হয়ে যাবে তন্বীষ্ঠার । প্রীতমকে বললে কেমন হয় ? উম : হু” ! মাতৃভক্ত ছেলের কাছে কোনো হেল্পতো পাবেই না উল্টে কেঁচে যাবে । যা করার নিজেকেই করতে হবে! ভাবতে থাকলো ও – বারাকপুর থেকে দমদম ,ওলা বুক করে গেলে দেড় ঘন্টায় পৌঁছে যাবে । ন টায় বেরোতে হলে তো সবার সামনে …অসম্ভব ! অন্য কিছু ভাবতে হবে ।
পরের দিন ভোরে সাত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে নিচে নেমে ভোম্বলকে সকালের খাবারটা খাইয়েই নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সবাই ওঠার আগে । ক্যাব মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে ছিল । দমদমে এসে যখন পৌছালো ততক্ষনে সুচরিতা পৌঁছে গেছে । এই ব্যাপারে মেয়েটা বড্ড সিরিয়াস ।একটা পার্কে বসেই আগে ফ্লাইট মোড করে দিলো ফোনটা । সুচরিতার সাথেও ভোম্বলের খুব ভাব হয়ে গেলো। হাসিতে মজাতে ঘন্টা দুই কেটে গেলো । ডট এগারোটাতেই ডাক পড়লো ভোম্বলের । ঢোকার সাথে সাথে ডাক্তার গাইন আগের রিপোর্ট আর প্রেক্রিপশন দেখতে চাইলেন। এই প্রথম নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে হলোষতন্বীষ্ঠার ।কাল নমিতা দেবী যখন বিকেলে ভোম্বল কে নিয়ে বেরিয়েছিল তখনি শশুরের সাহায্য নিয়ে সব কটা ছবি তুলে নিয়েছিল ও। ওই লোকটা চুপচাপ থাকলেও মনে মনে ওকে সাপোর্ট করে এটা বোঝা যায় । সব দেখে ডাক্তার একটা ইনজেকশন দিতে হবে বলে ভোম্বল কে রেডি করতে বললেন তার এটেন্ডেন্টকে । আমাদের আধ ঘন্টা বাইরে বসতে বলে উনি ভেতরে ঢুকে গেলেন ভোম্বল কে নিয়ে। পশুরা যে কি সেন্সেবল হয় আগে জানতো না তন্বীষ্ঠার ,বিনা প্রতিবাদে চলে গেলো যাওয়ার আগে একবার করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে গেলো তন্বীষ্ঠার দিকে ।
হঠাৎ সুচরিতার মোবাইলে তন্বীষ্ঠার মায়ের নম্বর , ” ধরিস না ” বেশ উদ্বেগের সাথে বললো তন্বীষ্ঠা ।
আঁধ ঘন্টা বাদে ডাক্তার ডেকে পাঠালেন , ততক্ষনে ভোম্বল একদম নেতিয়ে পড়ে আছে ।ভয়ে কান্না পেয়ে গেলো তন্বীষ্ঠার , যত না শাশুড়ির ভয় তার থেকে ওকে হারিয়ে ফেলার ভয় । ডাক্তার যদিও বললেন চিন্তার কিছু নেই । পরপর তিনদিন এসে এই ইঞ্জেকশনটা নিতে হবে সাথে ওষুধ ।
ক্যাবে ওঠার আগেই ডাক্তারের এটেন্ডেন্ট ভোম্বলকে কিছু খাইয়ে একটা ওষুধ দিয়েছিলো । ভোম্বলের খুব একটা খিদে পায়নি এটা নিশ্চিত কিন্তু তন্বীষ্ঠার পেটে ইঁদুররা দৌড়ে হাপিয়ে বসে পড়েছে ততক্ষনে ।থাক বাবা তাও যদি ভোম্বলটা সুস্থ হয় !
ক্যাবে উঠে একরাশ চিন্তা মাথায় ভিড় করতে থাকলো ওর। যাই হোক মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে বাড়ি গিয়ে ।গাড়ি থেকে নামতেই ভোম্বলের দৌড় যেকোনো ম্যারাথন প্রতিযোগিকে হারিয়ে দিতে পারে । কুঁইকুঁই করতে করতে ঘোষাল গিন্নির একদম পায়ে ।তন্বীষ্ঠারও ওকে দেখে মনের জোড় বেড়ে গেলো ।ঢুকতেই
প্রীতম: “কোথায় গেছিলে ?” মায়ের বাবুর গলায় এতো জোর ভাবা যায় !
“ডাক্তার দেখাতে ” – বললো তন্বীষ্ঠা ।
প্রীতম: ” কে বলেছিলো ? ” এবার গলায় আরো জোর । হলে থাকলে ফাটিয়ে হাততালি পড়তো ।
” কেউ বলেনি, নিজে থেকে ।” – উত্তর দিল তন্বীষ্ঠা মাথা নিচু করে ।
“কে অধিকার দিয়েছে তোমায় ?” – গলাটা তো মেয়ের গলা ! ওমা শাশুমা যে !
“আহা ! বাবু তো বলছে তুমি ঘরে যাওনা !” – বিমল বাবু নিজের বৌকে এক রকম হাত ধরে টানতে টানতেই ঘরে নিয়ে গেলেন ।
এই জন্য লোকটাকে এতো ভালো লাগে তন্বীষ্ঠার।ও ঘরে যাবে বলে এগোতে যাচ্ছে আবার
প্রীতম: ” কেন গেছিলে ? কি দরকার ছিল পাকামি করার ?”
” কি করবো? তোমার মতো চোখ বন্ধ করে তো থাকতে পারিনা ! ” শান্ত গলায় উত্তর দিলো তন্বীষ্ঠা ।
” ড: গাইন ।নেটে সার্চ করে দেখতে পারো, উনি ট্রিটমেন্ট শুরু করে দিয়েছে , পরপর তিনদিন যেতে হবে !” ভেঙে ভেঙে কথাকটা বললো তন্বীষ্ঠা।
প্রীতম: ” না , আর যাবে না । ” ডায়ালগে হাততালি দিতে ইচ্ছে করছিল তন্বীষ্ঠার।
” অবশ্যই যাবো।” – চেঁচিয়ে বললো ও।
প্রীতম: ” মায়ের যদি কিছু হয়ে যেত আজ, তার দায় কে নিতো ? তুমি ?শোনো একটা কথা কান খুলে, ভোম্বল কিন্তু শুধু একটা পেট নয় ওর সাথে অনেক সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে আছে । আমার দাদা কিন্তু চাকরি সূত্রে বাইরে থাকে তা নয় ,ও আজ চার বছর ধরে নিখোঁজ , দাদাই ভোম্বল কে প্রথম নিয়ে এসেছিলো এই বাড়িতে, ওরা এক আত্মা এক প্রাণ ছিল । আমার মা ওকে নিয়ে দাদার স্মৃতি ভুলে থাকে ।”
কথা গুলো শুনে কেমন মনমরা হয়ে গেলো তন্বীষ্ঠা ।কিছুটা হয়তো বুঝতে পেরে
প্রীতম : “যাও হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও , আর কালকে যাবার ভূত নামও মাথা থেকে ।”
কান্না পেয়ে যাচ্ছিলো তন্বীষ্ঠার , দৌড়ে ওপরে চলে গেলো ।
সন্ধে সাতটা- শুয়ে রয়েছে নিজের ঘরে তন্বীষ্ঠা। উঠতে পারছে না বিছানা থেকে এতো দুর্বল লাগছে । কেঁদেই চলেছে। হটাৎ ঘরের লাইটটা জ্বলে উঠলো – প্রীতম আর পিছনে ভোম্বল , লাফ দিয়ে খাটে উঠে গায়ের কাছে এসে বসলো ।
“উঠে পর খাইয়ে দি “-থালা হাতে নামিতা দেবী।এ কি দেখছে চোখের সামনে ! এটা কি স্যাড সিন্ ? না কি হরর ?
না করার ক্ষমতাটাও নেই ওর; উঠে বসে বললো – “দাও আমাকে খেয়ে নিচ্ছি “।
নমিতা দেবী : ” চুপ করে বসে থাক আমি খাওয়াচ্ছি ”
কুঁইকুঁই করে উঠলো ভোম্বল; যেন বললো “ঠিক হয়েছে ভালো জব্দ ”
অমনি প্রীতম বলে উঠলো ” জানো আজ অনেক দিন পর ভোম্বল পুরো ভাত টা খেয়েছে , বমিও করেনি ।”
তন্বীষ্ঠার মাথায় হাত বোলাতে থাকলো ভোম্বলের । মাথায় চিন্তা কাল কি করবে ট্রিটমেন্ট টা কি মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যাবে ?
নমিতা দেবী : “বাবু কাল সকালে গাড়ি বলেছিলি “?
তন্বীষ্ঠার দিকে তাকিয়ে বললেন – ” কটার মধ্যে যেতে হবে ?”
শুনে আনন্দে মনটা নেচে উঠলো তন্বীষ্ঠার , নিজের অজান্তেই জড়িয়ে ধরলো নমিতা দেবীকে তথা ঘোষাল গিন্নিকে,সর্বোপরি নিজের শাশুড়ি মাকে । এই আনন্দের সিনে ভোম্বলই বা কি করে না থেকে পারে ! ও তন্বীষ্ঠার কোলে এসে মুখটা গুঁজে দিল ।