আজ আমার বিয়ে। আহা ভাবতেই খুশিতে লাফাইতে ইচ্ছা করতেছে! অবশেষে আমিও একজন বিবাহিত। বিয়ে নামক রসোগোল্লা খাওয়ার অনেকদিনের শখ। বউকে বাসর ঘরে রেখে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। বন্ধুদের মাঝে থাকলে কি হবে। মনটা পরে আছে বাসর ঘরে। কখন যে বাসর ঘরে যাবো।শালারা কিছুতেই ছাড়তেছে না। আমার বন্ধু কিশোর বলে,”দোস্তো বিয়া করছো,ভাল করছো,বাসর রাতে কিন্তু বিলাই মারাই লাগবে!!নইলে কিন্তু মামা তোমার জিবন তামা তামা” বলার পরই বেক্কল গুলায় হোহো করে হাসা শুরু করছে।
এরপর জুয়েল বলে,”এ দেহোস না ওর আর তর সইতেছে না!! ওরে আমরা ছাইড়া দেই। যা ব্যাটা বউর আচলের তলায় যা” অবশেষে হারামীগুলায় আমাকে ছাড়লো!! মনডায় চাইতেছে হুসাইন বোল্টের মত ধ্রুত গতিতে বাসর ঘরের দিকে দৌড় দেই। কিন্তু বাড়ির লোকজন কি ভাববে। তাই আস্তে আস্তে বাসর ঘরে ঢুকলাম বিলাই মারার জন্য প্রস্তুত হইয়া। ঢুইকাতো চক্ষু চরক গাছ!! হায় হায়,বিলাই মারতে আসছি বিলাই কই!! বউ তো নাই। গেল কই। রুমের সব জায়গায় খুজলাম। খোজার পর মুখ ভার করে বিছানার উপর বসলাম। দেখি একটা চিঠি বালিশের উপর!! চিঠিটা হাতে নিলাম।পড়ার পর মুখটা আরো কালো হয়ে গেল। বউ পলাইছে!!! চিৎকার দিলাম “মাআআ আমার বউ কই??” মা দৌড়ে আসলো চিৎকার শুনে।
–কিরে কি হইছে??(মা)
— আমার বউ পলাইছে!!(আমি)
— অই বেক্কল কি কস??
— মা আমার বউটা শেষ পর্যন্ত পলাইয়া গেল!! এখন আমার কি হবে!!
— হারামজাদা,পড়ালেখার নাম গন্ধ নাই।
আর উনি ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া বউ পলানোর স্বপ্ন দেখে। এ্যা মা কি বলে!! আমি তাহলে স্বপ্ন দেখতেছিলাম!! ইস!! মায়ের সামনে প্রেস্টিজ পুরা ফালুদা হয়ে গেল। লজ্জায় আমার মাথা নষ্ট। তবে মনে মনে খুশি হলাম,এটা স্বপ্ন ছিল। বাস্তব না। আসলে আমার দোষ না। শোভা সবসময় আমাকে বলে,আমি নাকি ক্যাবলা কান্ত মার্কা স্মার্ট। ববয়ের পরে নাকি আমার বউ পলাইবে। সারাক্ষন শুধু এই কথা বলে তো।তাই এখন ঘুমের মধ্যেও বউ পলানোর স্বপ্ন দেখি। শোভা হচ্ছে আমাদের বাসার মালিকের মেয়ে।অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। আর আমি হচ্ছি আশিক। ঢাকার একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে কেমিস্ট্রি নিয়ে অনার্স করছি। এবার তৃতীয় বর্ষে।
শোভা আর আমি একই ভার্সিটিতে পড়ি। মেয়েটা সবসময় আমাকে শাসন করে। আমিবয়সে আর ক্লাশে ওর থেকে বড়। কিন্তু ওর শাসন দেখলে মনে হয় আমি ওর থেকে অনেক ছোট। এই মেয়েটার জন্য আজ পর্যন্ত প্রেমই করতে পারলাম না!! যে মেয়ের সাথে প্রেম করতে চাই। প্রথমে অগ্রগতি ভালই থাকে। পরবর্তীতে শোভাবাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দেয়।কয়েক মাস আগের কথা!! আমি যাচ্ছিলাম আমার ক্লাশ মেট সীমার সাথে দেখা করতে। সীমা ছিল আমার ক্রাশ। ওরে পটানোর জন্য বহুতদিন ধরে তেল দিতেছি। অবশেষে আজকে আমাকে নিজে থেকেই দেখা করতে ডাকছে। ভাবছি আজকে ওকে প্রপোজ করেই ফেলবো! রেডি হয়ে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ শোভার আগমন।
— কিরে কই যাচ্ছিস?(শোভা)
— প্রেম করতে।(আমি)
— তুই করবি প্রেম?? তোরমত টেলিসামাদ রে কে পছন্ত করবে??
— দেখ প্রেস্টিজে আঘাত করবি না।
— আচ্ছা দাড়া একটু ওয়েট কর।
–ক্যান??
— আরে দাড়াতে বলছি। আমি যাবো আর আসবো। গেল তো গেল দশ মিনিট হয়ে গেল আর আসার নাম নেই। অবশেষে সে আসলো। হাতে একটা বাটিতে করে কি যেন আনছে!!
— নে এটা খেয়ে যা!!(শোভা)
— কি এটা??(আমি)
— একটু হালুয়া খেয়ে যা। শুভ কাজের আগে মিস্টি মুখ করতে হয়। আমি সাত পাঁচ না ভেবে খেতে শুরু করলাম। এর মধ্যে শোভা কোথায় যেন গেল। খাওয়াশেষ হতে হতে শোভা চলে আসলো। হাতে একটা জল ভর্তি বদনি নিয়ে!!
— কিরে গ্লাস না এনে বদনিতে করে পানি আনলি কেন??(আমি)
— হাহা,সোনা!! কিছুক্ষন বাদেই তোমার বদনির দরকার পরবে।
— মানে….. আআআআ মাগো পেটের মধ্যে কচলানো শুধু করছে।
— নে বদনিটা হাতে নে। এবার মনে হচ্ছে ঔষধে কাজ শুরু করছে!!
— মানে!! আআআ
— মানে কিছু না। টয়লেট থেকে ঘুরে আয়। তারপর বলছি।
— হারামী তোরে পরে বুঝামু। আগে কাজটা সাইরা আসি। বলে আর দেড়ি করতে পারলাম না। সোজা হুসাইন বোল্টের মত দৌড়ানি দিলাম। ভবতরে ধ্যানমগ্ন বাবার মত বসে আছি। আর ভাবতেছি কপালে আজ কি আছে কে জানে। কাজ সেরে বের হলাম। আহা পৃথিবীতে এত সুখআর নাই। নিজেকে সুখের রাজ্যের রাজা মনে হচ্ছে। কিন্তু সুখটা বেশিক্ষন স্থায়ি হল না। আবার দৌড়ানি দিতে হল ধ্যানকক্ষে মানে টয়লেটে। হারামজাদির জন্য আজকে অনেকবার টয়লেটে দৌড়াইতে হইছে। অবশেষে যখন বেগ কমলো ফোনটা হাতে নিলাম। সীমাকে ফোন দিলাম।
— হারামজাদা আমারে আর কোনোদিন ফোন দিবি না।কথাও বলবি না।(সীমা)
— ক্যান,আমি কি করলাম??
— কি না করছো??তুই বললেই তো পারতি যে তুই আসতে পারবি না। শেষে কিনা তোর বৌরে দিয়া আমাকে অপমান করাইলি..!!!
— কি কস আমি তো বিয়াই ক টুট টুট টুট লাইনটা কেটে দিলো আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না। কাজটা শোভা করছে। হারামিটার জন্য আমার প্রেমের হাতিখড়ি হবেই না। কিন্তু আমার তো প্রেম করাই লাগবে। নইলে কার না কার গার্লফ্রেন্ড বিয়া করি। আর বাসর রাইতে বউ পলাইবে। নাহ নাহ কোন রিস্ক নেয়া যাবে না। প্রেম করেই বিয়া করতে হবে। প্রেম ছাড়াকোন গতি নাই। কিন্তু শোভার জন্য তো প্রেমই করতে পারবো না। তাহলে ফেসবুকে পারি জমাইতে হবে। আমার ফ্রেন্ড কিশোরও তো ফেসবুকের একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করে। তাহলে আমার ফেসবুকে একটা মেয়ে আছে,”তুষার শুভ্রা” নামের। মেয়েটা তো সারাদিনই আমাকে জ্বালায়। তাহলে ওকেই একসেপ্ট করবো। তবে সাবধানে যাতে শোভা কিছুই জানতে না পারে।
জানলে আমার এবারেও প্রেম করা হবে না। দেখা যাবে এবারও পিছে বাঁশ হাতে বদনি ধরাই দিবে। যাইহোক পুরাই গোপনে চলতে লাগলো আমাদের রিলেশন। নিজেকে সুখী সুখী লাগেতেছে। আমিও কিনা প্রেম করতেছি। কিন্তু মেয়েটা কখনোই আমাকে পিক দেয় নাই। বলে দেখা করলেই একসাথে দেখে নিতে। এটা সারপ্রাইজ হিসেবেই থাক। অনেক চেষ্টা করেও রাজি করাতে না পেরে অবশেষে মেনে নিলাম। কিছুদিন পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে,আমরা দেখা করবো। আহা অবশেষে শুভ্রাকে দেখতে পাবো। মনে যেন খুশি ধরে না। নির্ধারিত দিনে বাসা থেকে সাবধানে বের হচ্ছি,যাতে শোভা না দেখে। দেখলে হয়তো আবার কোন প্যাচে ফালাইয়া এবারেও আমাকে হাতে বদনি ধরাইয়া দিবে। তাই সাবধানে বাসা থেকে বের হয়ে পার্কে গেলাম।
গিয়ে দেখি আমার প্রেমের যম শোভা পার্কে বসে আছে। খাইছে রে। মাইয়া তো দেখি আমার পিছু ছাড়বে না। শেষে কিনা এখানেও চলে আসলো। কিভাবে জানলো যে আমি পার্কে আসবো। নাহ বিশ্বাস নাই।কোনো উল্টা পাল্টা ঘটনা ঘটাইয়া দিতে পারে। তাই শুভ্রাকে একটা মেসেজ দিলাম,” সরি বাবু আজ মিট করতে পারবো না” দিয়েই বাসায় চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পর বাসায় হঠাৎ চেচামেচির আওয়াজ। বাবা আমাকে ডাকলো। গেলাম। গিয়ে দেখি শোভা কাদছে। আর বাবা আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। মাও দেখি একই স্টাইলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কি আজব।আমি কি চিড়িয়াখানার বান্দর নাকি যে এভাবে দেখতেছে।
— কিরে,ও কি বলতেছে??(বাবা)
— কি??(আমি)
— আংকেল ও আমার সাথে অনেক বড় প্রতারনা করেছে। মিথ্যা আঃশাস দিছে। আর এখন আমাকে ঠকিয়েছে।(শোভা)
— হারামজাদা মান ইজ্জত রাখলি না।(বাবা)
— আংকেল এখন যদি আপনি কোন ব্যবস্থা না করেন। আমি কিন্তু সুইসাইড করবো।(শোভা)
— ওই আমি কি করছি,যে তুই কানতেছোস।(আমি)
— চুপ আহাম্মক,এখন কিছু বুঝস না??
যা করার আমি করবো। তুই কোন কথা বলবি না। তারপর ওইদিন সন্ধ্যায় আমার সাথে শোভার বিয়ে দিয়ে দিল। বাসর ঘরে শোভা বসে আছে। আমি বাইরে বন্ধুদের মাঝে বসে আছি। মুখ কালা করে। কিশোর বলতাছে,”মামা শেষে তুমি পুরা মুরগি হইয়া গেলা” জুয়েল বললো,” থাক মামা দুঃখ নিস না। যা বাসর ঘরে যা” ওদের বিদায় দিয়া সোজা ছাদে চলে গেলাম। রাত তখন প্রায় বারোটা। হঠাৎ মেসেন্জারে টোন বেজে উঠলো। দেখলাম”তুষার শুভ্রার মেসেজ। “কিরে বাসর ঘরে আসবি,নাকি পলাইয়া যামু” আমি তো পুরাই হা।তারমানে শোভাই তুষার শুভ্রা!!
তারপর পইরা দৌড়। যদি সত্যি সত্যি বৌ পলাইয়া যায়। গিয়া দেখি বৌ নাই। হায় হায় শেষে কিনা স্বপ্নের মত বৌ পলাইলো!! চিৎকার দিলাম “মাআআআ!!! আমার বৌ পলাইছে!!” চিৎকার শুনে শোভা দৌড়ে আসলো বারান্দা থেকে। বললো,” কি হইছে কি! বাচ্চাদের মত চিল্লাও ক্যান??” শোভাকে দেখে অবশেষে সস্থির নিঃশাস ফেললাম। যাক বউ তাহলে পলায় নাই!!