বিছানার কোণে পড়ে থাকা ওড়না টা স্নেহার নগ্ন শরীরে অনেকটা ঢিল মেরে দিয়েই রুম থেকে বের হয়ে গেল রাফসান। আজ সে মহাখুশি। প্রেমিকা তার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছে।বহুদিন ধরে স্নেহাকে নিয়ে দেখা কামুক স্বপ্ন পূরণ হল আজ। যৌনক্ষুধা মিটিয়ে স্নেহার দিকে আর তাকানোর প্রয়োজন বোধ করল না সে। রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় গেল। পকেট থেকে সিগারেট বের করে টানতে লাগল। স্নেহার অজান্তে তার নগ্ন শরীরের কিছু ছবি তুলেছিল সে। তাড়াতাড়ি সেগুলো গোপন ফোল্ডারে লুকানোর চেষ্টা করছে সে। কিন্তু কখন যে স্নেহা এসে পিছনে দাঁড়িয়েছিল তার খেয়াল নেই। নিজের নগ্ন ছবি দেখে স্নেহা অনেকটা চিৎকার দিয়ে উঠল।
–রাফসান! এসব কি? আমার ছবি তুলেছো কেন?
–কই বাবু! না তো।
–এইযে মাত্র দেখলাম।
–না না। এটা তো একজন বিদেশী পর্ণস্টারের ছবি। তোমার না।
–কই দেখি? বলেই রাফসানের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল স্নেহা। তারপর নিজের ছবি দেখে আবারও জিজ্ঞাস করল রাফসান কে।
–এইটা কে শুনি।
–অহ! তুমিই তো বাবু! আমার লক্ষীসোনাটা।
–ছবি তুলেছো কেন?
–আরে তোমাকে এত সুন্দর লাগছিল ঔ মুহুর্তে ভাবলাম স্মৃতির পাতায় রেখে দেই।
–কাউকে না বলে তার ছবি তোলা অপরাধ জানো না?
–আচ্ছা বাবু! ডিলিট করে দিব। রাগ করে না স্নেহা।
–আমার সামনে ডিলিট করো।
–করব বললাম না? এমন করতেছ কেন?
–ডিলিট করবা কিনা বল?
–আচ্ছা এই দেখো, ডিলিট করে দিলাম।
–আর শোন রাফসান! বিয়ের আগে এটাই আমাদের প্রথম, এটাই আমাদের শেষ মিলন। যেই পাগলামি করে আমাকে এখানে আনতে বাধ্য করেছো এইরকম পাগলামি আর যেনো কখনো না করা হয়। মনে থাকবে?
–হুম থাকবে।
স্নেহা রুমের ভিতর চলে গেল। ব্যাক আপ ফোল্ডারে গিয়ে ঠিক ই একটু আগে ডিলিট করা ছবিগুলো আবার ফোনে সেইভ করল সে। স্নেহা জানলে রাগ করতে পারে সে এই ভেবে সে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর কাছে ইনবক্সে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিল। আর সাথে বলেও দিল কোনক্রমেই যাতে সেগুলো ডিলিট না হয়।
শুধু ছবি তুলেই রাফসানের মন ভরে নি। এবার সে চিন্তা করলো স্নেহার সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তটা সে ভিডিও করে রাখবে। এতে তার দুইটা লাভ হবে। এক, স্নেহাকে কখনো মিস করলে এই ভিডিও দেখে ফিল নিতে পারবে। দুই, কখনো তীব্র যৌনচাহিদা হলে স্নেহাকে ব্ল্যাকমেইল করে রাত কাটাতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ফোনে ভিডিও অন করে জানালার পাশে ফোনটা রেখে ভেতরে গেল সে। সে রাতে হিংস্র জানোয়ারের মতো কয়েকবার ঝাঁপিয়ে পড়লো স্নেহার শরীরের উপর। পরদিন সকালে দুজন দুজনের বাসায় চলে গেল।
এবার একটু পিছনে ফিরে যাই। স্নেহা আর রাফসান একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা। রাফসান এক বছরের সিনিয়র। স্নেহা যেদিন প্রথম ইউনিভার্সিটিতে আসে সেদিন ই প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলে রাফসান। এরপর থেকেই রিলেশনের জন্য স্নেহাকে প্রচুর চাপ দিতে থাকে সে। নিজের ভালোবাসাকে সত্যি প্রমাণিত করতে অনেক পরীক্ষাই দেয় রাফসান। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, ঝাপটা উপেক্ষা করে স্নেহাকে একবার দেখার জন্য তার ডিপার্টমেন্টের আশেপাশে ঘুরঘুর করত সে। পথ আটকিয়ে কথা বলতে চাইতো।
বেহায়ার মতো পিছন পিছন যেত। স্নেহার বান্ধবীদের ডেকে ডেকে ট্রিট দিত আর সবাইকে বলতো স্নেহা যাতে তাকে ভালোবাসে এই ব্যবস্থা করে দিতে। মাস ছয়েক এভাবেই চলে গেল। রাফসান পড়ালেখা করতে পারছিল না। তার মাথায় শুধু স্নেহা আর স্নেহা! পরীক্ষা আসল। রাফসানের রেজাল্ট খারাপ হল। তখন সবাই স্নেহাকে বুঝাতে লাগল আসলেই হয়ত রাফসান ভাই তাকে ভালোবাসে। তারপর একদিন সবার সামনেই একগুচ্ছ গোলাপ হাতে প্রপোজ করে বসল রাফসান। স্নেহা আর না করতে পারেনি। রাজি হয়ে যায় সে।
সম্পর্কের শুরুতে রাফসান যথেষ্ট কেয়ার নিত। স্নেহার জন্য পাগল ছিল। যতই দিন যেতে লাগল, যতই স্নেহা উইক হতে লাগল রাফসান ততই ইগ্নোর করা শুরু করল। ফোন দিলে কথা বলতে চাইতো না।
ব্যস্ত আছি,ঘুমাবো,এসাইনমেন্ট আছে এসব বলে বলে ইগ্নোর করত স্নেহাকে। ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে এই রকমের ব্যবহার কেউ আশা করেনা। স্নেহাও করে নি। সে বুঝতে পারছিল না সমস্যাটা কোথায়! তার নাকি রাফসানের? নাকি ভাগ্যের? সম্পর্কের শুরুতে রাফসান স্নেহাকে পাওয়ার জন্য যে পাগলামি করত এখন তার ছিঁটেফোঁটাও নাই। হাজারো মন খারাপ এসে ভীড় করতে লাগল স্নেহার দরজায়। সেদিন একটু ঝগড়া হয়েছিল রাফসানের সাথে। সবার সামনে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে তাকে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? একটা বিহীত তো অবশ্যই করতে হবে। সবকিছু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন দিল রাফসান কে।
–হ্যালো আছো?
–হ্যা বলো স্নেহা।
–ব্যাস্ত?
–একটু। কি বলবা তাড়াতাড়ি বল।
–অনলাইনে আসতে পারবা?
–১০ মিনিট পর আসতেছি।
অপেক্ষা করতে লাগল স্নেহা। ১০ মিনিট গেল, ৩০ মিনিট গেল, ১ ঘন্টা গেল তাও রাফসানের খবর নেই। আবার ফোন দিল সে।
–কি আসবা না অনলাইনে?
–বললাম তো আসতেছি। এত তাড়াহুড়ো কিসের?
–১ ঘন্টা আগে আসতে বললাম এখনও আসলা না।
–আচ্ছা এখনি আসতেছি। মেসেঞ্জারে নক দিল রাফসান।
–হ্যা বলো কি বলবা?
— কি বলব মানে? আমি ফোন দিতে পারিনা?
–পার তো। কি হইছে বলো?
–তুমি কি আমাকে ইগ্নোর করতেছো?
— না তো।
— তাহলে এভাবে কথা বলতেছ কেন?
–আমি এভাবেই কথা বলি। সমস্যা?
–না সমস্যা না। জরুরী কথা আছে।
— বলো?
–রিলেশন রাখবা কি না?
–চলতেছে না?
–না চলে না। আমার আগের রাফসানকে চাই। এইরকম কেয়ারলেস রাফসান আমার চাইনা।
–সত্যি কথা বলবো?
–হ্যা বল।
–তোমাকে আমার আর ভালো লাগেনা। তুমি দেখতে অনেক সুন্দরী,স্মার্ট কিন্তু মনের দিক দিয়ে পুরাই ক্ষেত।
–মানে?
–আমি তোমার কে?
–বয়ফ্রেন্ড।
–আমার তোমার উপর অধিকার আছে?
–থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে।
–আমার চাওয়া পাওয়া থাকতে পারেনা?
–হ্যা পারে।
–তুমি কখনো দিয়েছ আমায়?
–কি?
–সেদিন এত রোমান্টিক ওয়েদার ছিল, এত মিস করতেছিলাম তোমাকে। একটা হট পিক চাইলাম তোমার। দাও নি। উল্টো গালি দিয়েছ।
–দেখ বিয়ের আগে কিছুই দিতে পারব না আমি।
–বিয়ের পর দিতে পারবা আগে দিলে কি সমস্যা?
–আমি পারব না রাফসান।
–সব বন্ধুরা তাদের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে যায়, কত সুন্দর মুহুর্ত কাটায় আর আমার গফ একটা ক্ষ্যাত লাগবে না তোমার ভালোবাসা। একাই থাকো।
স্নেহাকে ব্লক করে দেয় রাফসান। স্নেহাও আর ফোন দেয় নি। সে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক চায়না। দুদিন পর রাফসান ফোন দেয়। অনেক কান্নাকাটি করে। শুধুমাত্র একবার শারীরিক সম্পর্কে যেতে রাজি হতে বলে। তাহলেই নাকি সে আগের মত ভালোবাসবে। সে মেন্টাল্লি উইক। স্নেহাই নাকি তাকে ভালো করতে পারবে। হাজারবার রিকুয়েস্ট করার পরও স্নেহা রাজি হয়নি। তখন রাফসান ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। স্নেহা রাজি না হলে নিজের ক্ষতি করবে,জীবন রাখবে না এই সেই!!
তারপরও স্নেহা রাজি হয়নি। একদিন সকালে রাফসানের ফোন আসে। সে হাসপাতালে। নেশাজাতীয় কিছু একটা অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করে অসুস্থ হয়ে যায় সে। স্নেহা ছুটে চলে যায় হাসপাতালে। স্নেহা একটিবার রাজি হলেই আর এমন পাগলামি করবে না এটা বলে দেয় রাফসান। স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে আসে। দরজা বন্ধ করে দিয়ে অনেকক্ষন ভাবে সে। আর তখনি জীবনের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সে। শুধুমাত্র একবার রাফসানের বিছানায় যেতে রাজি হল। বিনিময়ে আগের মত ভালোবাসা ভিক্ষা চাইল। রাফসান আবার আগের মত ভালোবাসবে কথা দিল। আর এর ই পরিণতি আজকের এই রাত।
তারপর কিছুদিন ভালো সময় কাটল। রাফসান আগের মত টেক কেয়ার করা শুরু করল। কয়েকদিন পর আবারও রাফসান অন্যায় আবদার করা শুরু করে। কেউ জানবে না, কেউ শুনবে না, কিচ্ছু হবেনা বলে কনভিন্স করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্নেহা আর এই ফাঁদে পা দিতে রাজি হয়নি। আর তখনি শুরু হয় রাফসানের ব্ল্যাকমেইল। স্নেহার সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো এক এক করে স্নেহার ইনবক্সে আসতে শুরু করে। স্নেহা যেন দুচোখে অন্ধকার দেখছিল। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। বারবার ছবিগুলো ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিল রাফসান। তারপরও স্নেহা আর শারীরিক সম্পর্কে যেতে রাজি হয়নি। রাগের মাথায় ছবিগুলো ক্যাম্পাসের পরিচিতদের পাঠায় রাফসান। স্নেহার ক্যাম্পাসে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছিল না সে। বাসায় জেনে গিয়েছিল ব্যাপারটা। কয়েকবার আত্নহত্যা করার চেষ্টা করে সে। তখন তার মা তাকে মেন্টাল্লি সাপোর্ট দিল। তারপরও নিজের কৃতকর্মের জন্য বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিল সে। সকল ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ব্লক করে দিল রাফসানকে। এভাবেই একাকী বন্দী জীবন চলছে তার।
বেশ কিছুদিন পর। স্নেহা রুমে শুয়ে ছিল। মা এসে বললেন কেউ একজন তার সাথে দেখা করতে এসেছে। স্নেহা দেখা করতে গেল। স্নেহা যাওয়া মাত্রই রাফসান তার পায়ের উপর পড়ে গেল। বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। স্নেহা তার দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করল না। কি হয়েছে তাও জানতে চাইল না। বের হয়ে যেতে বলল তাকে। স্নেহার আম্মু রাফসানকে বসতে দিয়ে কি হয়েছে তা জানতে চাইলো। রাফসান কাঁদো কাঁদো গলায় বলে গেলো সেই লোমহর্ষক ঘটনা।
রাফসানের ছোট বোন জেমি। একমাত্র বোন তার। পরিবারের অনেক আদরের মেয়ে। সবার মধ্যমনি। এক ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল তার। বাচ্চা মেয়ে। আবেগের বশে ভুল করে ফেলে। সেই ছেলের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছিল বেশ কয়েকবার। কিছুদিন যাবত অসুস্থ ছিল সে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও যেতে চাইতো না। সেদিন সকালে হঠাৎ বমি করা শুরু করে। বেশ কিছুদিন যাবত অসুস্থ থাকায় মা সেদিন ই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলে সে প্র্যাগনেন্ট। বাসায় এনে তাকে অনেক বকাঝকা করা হল। সেই ছেলেকে বাসায় ডাকা হল। মা ছেলেটার পায়ে ধরে জেমিকে বিয়ে করতে অনুরোধ করে। ছেলে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
গতকাল রাতে সবার আদরের টুকরো ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্নহত্যা করে। রাফসানের কথা বলা শেষ হলে স্নেহার আম্মু তাকে কাছে ডেকে বলে, বাবা, পাপে ছাড়ে না বাপকেও!! এবার ভদ্র ছেলের মতো আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও। আমরা তোমাকে জীবনেও ক্ষমা করতে পারব না। কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেল রাফসান!!!