মীরার সাথে আমার কথা হয়েছিল অদ্ভুত ভাবে।ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই মেয়েটাকে আমি পছন্দ করতাম।গোল ফ্রেমের চশমা পড়া মেয়েটার চশমার ভেতর দিয়ে চোখের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করতাম।ক্যাম্পাসে দেখা হলে প্রথমেই ওর ঢাগর ঢাগর চোখের দিকে তাকাতাম।যতক্ষন সম্ভব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম।তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি যেন কোথাও হারিয়ে যেতাম।আমার সব অনুভূতিরা এলোমেলো হয়ে যেত।আশেপাশের বাস্তবতা আমায় ছুঁতেও পারত না।আমার এমন করে তাকিয়ে থাকায় মীরা প্রথম প্রথম অস্বস্থিবোধ করলেও পরে আর করত না।করলেও আমি বুঝতে পারতাম না।সেদিন বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল।আকাশ এত ঘন কালো হয়েছিল যে ক্ষনিকের জন্য মনে হচ্ছিলো বোধহয় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।সময়টা অন্যদের কাছে কেমন ছিল জানি না।আমার কাছে ছিল মাদকতায় ভরপুর,স্বর্গীয়!এর কারন বোধহয় মীরাই।বাহিরে যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছিল অডিটোরিয়ামের এক কোনার দিকের একটা টেবিলে বসে ফোন চাপছিলাম।
মীরা ওর ডিপার্টমেন্টের দুটো ছেলে আর দুটো মেয়ে ফ্রেন্ড নিয়ে আমার সামনের টেবিলটায় এসে বসে।মীরা বসে ঠিক আমার মুখোমুখি হয়ে।আমি অষ্টমাশ্চর্য হয়ে দেখছিলাম ওকে।মেয়েটাকে যেন ইন্দ্রানীর মত লাগছিল।জামার সাদা রং ওর গায়ের সাদা রং কে একটুও লুকাতে পারছিল না।বরং পড়নের জামার সাদা রং এবং ওর গায়ের রং মিলিয়ে চারোদিক আলোকিত হয়ে উঠেছিল।শুভ্রতার প্রতীক বলে মনে হচ্ছিল ওকে।মীরার পাশে বসা মেয়েটি আহ্লাদী ভঙ্গিতে ধাক্কা দেওয়ার মত করে কি যেন বলেছিল ওকে।মীরা মেয়েটির দিকে ভস্মদৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।তারপর একই দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল আমার দিকেও।আমি তখনো চোখ নামিয়ে নেই নি। সেই ভস্মদৃষ্টি কে ওপেক্ষা করেই তাকিয়ে আছি।হঠাৎ ও উঠে এসে কপট রাগ নিয়ে আমার সামনে দাঁড়ায়।কড়া গলায় বলে,
– কি সমস্যা ভাই?এভাবে হ্যাবলার মত সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকেন কেনো?অস্বস্তিবোধ করি বুঝতে পারেন না?
মীরার ফ্রেন্ডরা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই।খানিকটা আশাহতও হই।আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমার তাকিয়ে থাকাতে মেয়েটার সায় রয়েছে।বরং আমি যদি ক্যাম্পাসে একদিন না আসি ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে না থাকি তাহলে ওর অবচেতন মন বোধহয় আমাকে খুঁজে ফিরে। চারোদিকে তাকিয়ে দেখে চেনা চোখ দুটো কোথাও থেকে ওকে দেখছে কিনা।কিন্তুু না।আমার এমন মনে হওয়ার কোনো কারন নেই।এই মনে হওয়াটাই আমাকে কষ্ট দেয়।খুব পছন্দের কেউ যদি সোজা ভাই বলে সম্মোধন করে সেটা নিতান্তই অপমানের মত এসে লাগে।ভাইয়া এবং ভাই শব্দটা শাব্দিক অর্থে একই হলেও প্রিয়জনের মুখ থেকে ভাই ডাক শুনার থেকে ভাইয়া ডাক শুনা ঢেড় ভাল।আমি ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে বলি,
– এমনি তাকিয়ে থাকি। মীরা চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
– এমনি তাকিয়ে থাকি মানে?আপনি এমনি এমনি তাকিয়ে থাকেন না।এমনি এমনি বলতে কোনো কথা নেই।সব কিছুর পেছনেই কারন থাকে।এমনি শব্দটার ব্যাবহার সাধারনত কথা গোপনার্থে বা কথা বলতে অনিচ্ছুক থাকলে করা হয়। আমার রাগ হয়।কথায় সকল প্রকার আড়ষ্ঠতা ঝেড়ে বলি,
– ঠিক ধরেছ।এমনি এমনি আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি না।আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করি আমার ভালোবাসাটা তোমার শরীরের প্রতি না তোমার প্রতি।আমি তোমায় ভালোবাসি না তোমার শরীরকে।অনেক চিন্তা ভাবনার পর আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমার শরীরকে নয় তোমায় ভালোবাসি।কি করে বুঝতে পেরেছি শুনবে?আমি প্রথমে লক্ষ করলাম আমি সবসময় তোমার চোখ এবং তোমার মুখের দিকেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।এমন খুব কমই হয়েছে যে আমি তোমার শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কে আলাদা আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি।একেবারেই যে লক্ষ করি নি তা কিন্তুু না। কোন পুরুষই সাধুপুরুষ না।সেক্ষেএে আমিও নই।তবে আমার মন কখনোই তোমায় নিয়ে অপবিএ কোন কিছু চিন্তায় আনে নি,আনমনেও না।এজন্য আমার ধারনা তোমার জন্য আমার মনে যেটা আছে সেটা শুধু মাএ তোমার শরীরের প্রতি মোহ না তোমার প্রতি ভালোবাসাও। মীরা হতবম্ভ হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হচ্ছিল।আমি যে এমন কোন কথা বলতে পারি ও হয়ত কল্পনাও করতে পারে নি।স্বাভাবিক হতে কিছুক্ষন সময় লেগেছিল ওর।রাগী স্বরে বলেছিল,
– অসভ্য জংলি কোথাকার!
এই বলে ও আমার সামনে থেকে চলে গিয়েছিল।আমিও উঠে চলে আসি সেখান থেকে।পাঁচতলায় ক্লাস ছিল আমার।লিফটের সামনে সোফায় বসে আমি অপেক্ষা করি লিফট নিচে নামার।মানুষের মন আকাশের মতই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রঙিন আকাশটা যেমন যখন তখন কালো মেঘে ঢেকে যেতে পারে।মানুষের মনটাও ঠিক তেমনই।পার্থক্য শুধু একটাই আকাশে মেঘ জমার আগে সংকেত পাওয়া যায় মানুষের মনে মেঘ জমার আগে কোনো সংকেত পাওয়া যায় না।লিফট নিচে আসতেই আমি লিফটে ঢুকে যাই।ক্লাস টাইমের আগেই যাচ্ছিলাম বিধায় লিফটে যাওয়ার মত কেউ ছিল না।
সাধারনত ক্লাস টাইম ছাড়া লিফটে যাওয়ার মত কেউ থাকে না।আকস্মিক ভাবে আমি লিফটে ঢুকার সাথে সাথে মীরাও ঢুকে পরে।লিফটে আমায় আবিষ্কার করে দোটানায় পড়ে যায় আমার সাথে একা লিফটে যাবে কি যাবে না।আমি ভেবেছিলাম ও হয়ত নেমে যাবে।কিন্তুু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল।একটুও নড়ল না।লিফটের দরজা বন্ধ হতেই আমার কি হল জানি না।নিজেকে এতটা উত্তেজিত এর আগে কখনো মনে হয় নি।আমি বুঝতে পারছিলাম আমি খারাপ কিছু করতে চলেছি যা একদম উচিত নয়।আমি বারবার চাচ্ছিলাম নিজেকে সংবরণ করতে।কিন্তুু পারি নি।মীরাকে লিফটের এক পাশে চেপে ধরে!পাঁচতলায় লিফট আসতেই আমি লিফট থেকে নেমে পড়ি।লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েটা আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে ছিল।
সেই চোখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকের মধ্যে ধক করে উঠে।মীরার চোখে মুখে বেদনার ছাঁপ। সেই বেদনা যা তিব্র ভালবাসার মানুষটা ছাড়া কেউ দিতে পারে না।তবে কি মেয়েটা আমার সামনে নিজের অনুভূতিগুলো গোপন করে রেখেছিল?এত গাঢ় অনুভূতি কিভাবে একটা মেয়ে তারই প্রিয় মানুষটার সামনে আড়াল করতে পারে?কেনো নারী জাতির এমন বিচিএতা!আমি আনন্দ মিশ্রিত অপরাধবোধ নিয়ে ছটফট করতে থাকি।যে ক্লাস করতে উপরে আসা হয়েছিল সে ক্লাসে যে কত মনযোগ দিতে পারব তা ভাল করেই টের পাচ্ছিলাম।ক্লাস না করেই আবার অডিটোরিয়ামে চলে যাই।মনে ক্ষীণ আশা যে মীরাকেও সেখানেই পাব।বারবার কেবল মনে হচ্ছিল ও নিজেও ক্লাস করবে না।হলও তাই।আমি যে টেবিলটাতে বসেছিলাম সেখানেই মাথা নিচু করে বসে ছিল মেয়েটা।আমার মনে প্রশান্তির এক হাওয়া বয়ে গিয়েছিল তখন। ধীর পায়ে হেঁটে টেবিলটার সামনে দাঁড়াতেই মীরা চোখ তুলে তাকিয়েছিল।অভিমানী হয়ে উঠে যেতে নিলেই আমি কোমল গলায় বলেছিলাম,
– মীরা প্লিজ।প্লিজ যেও না।একটু বসো।
মীরা নিঃশব্দে আবার বসেছিল।কিন্তুু অভিমানে অন্য দিকে মুখ ফিরে।অবশ্য চোখের জল লুকোনোর এর থেকে ভাল কোনো উপায় সেই মুহুর্তে মীরার কাছে ছিলও না। আমি গলার স্বর নামিয়ে আরো নরম স্বরে বলেছিলাম,
– আমি সরি মীরা।প্লিজ মাফ করে দাও।তখন আমার নিজের উপর কন্ট্রোল ছিল না বিশ্বাস কর।আমি খুব করে চাচ্ছিলাম তোমার সাথে অন্যায় কিছু না করতে।কিন্তুু আমি পারি নি নিজেকে আটকে রাখতে।তুমি জানো না আমি তোমাকে কি পরিমান ভালোবাসি।তোমাকে অসম্মান করব এতটা সাহস আমার নেই মীরা।তুমি তো আমার কাছে শুভ্রতার রাণী।আমার আকাশে শুধু মাএ একটাই রং যা তোমা। মীরা আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়েছিল।আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই বলেছিল,
– আপনি খুব খারাপ একজন মানুষ। খুব খারাপ। এই কথার প্রত্তুত্যরে আশেপাশে তাকিয়ে আমি বলেছিলাম,
– আর কেঁদো না প্লিজ।ক্যাম্পাসের নারীদরদি সিনিয়র ভাইদের চোখে পড়লে মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না আমার।মেরে একদম তক্তা বানিয়ে দিবে। মীরা হেসে উঠেছিল।চোখে জল চিকচিক করছিল অথচ সে হাসছে।অদ্ভুত সুন্দর সে দৃশ্য।হেসে বলেছিল,
– মারুক।তাতে আমার কি?
এই মুহুর্তে আমি মীরাদের বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আজ একটু বেশিই রাত হয়ে গেছে।মীরাকে ফোন করেছি অনেক আগেই।এখনো আসছে না কেনো বুঝতে পারছি না।হঠাৎ মীরাদের বাড়ির গেট দিয়ে সাদা পায়জামা পান্জাবি পড়া একজন বয়স্ক লোক বেড়িয়ে এল। যার চেহারায় উচ্চবংশীয় ব্যাক্তিত্বের ছাঁপ স্পষ্ট।বয়স্ক ভদ্রলোকটাকে আমি চিনি।ইনি মীরার বাবা।আশরাফ চৌধুরী।আমার সামনে এসে ভদ্রলোক উৎসাহের সঙ্গে জিজ্ঞাস করলেন,
– নাম কি তোমার ইয়াংম্যান?
আমি অবাক হই।লোকটার চেহারায় যে গম্ভীর ব্যাক্তিত্বের ছাপ কথায় তার বিন্দু মাএও নেই।চেহারায় যার গম্ভীর ব্যাক্তিত্বের ছাপ তার কথা বার্তাও সেই ধাচেরই হওয়া উচিত।না হলে ঠিক মানায় না।কিন্তুু এই লোকটাকে মানিয়েছে।এবং খুব সুক্ষভাবে মানিয়েছে।আমি বিনয়ী স্বরে বললাম,
– জ্বি আমার নাম রায়হান আহমেদ রূপক। ভদ্রলোকের চোখ মুখ দেখে মনে হল নামটা পছন্দ করেছে। কিছুসময় অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তিনি বললেন,
– তোমাকে তুমি করেই বলছি কিছু মনে কর না।মজিবুর তোমার ব্যাপারে বলেছে আমায়।তুমি নাকি প্রায় প্রায় রাতে আমার বাড়ির সামনে এসে কারো জন্য অপেক্ষা কর।কিছুসময় অপেক্ষা করেই আবার হাঁটা শুরু কর।বেশিদূর পর্যন্ত হাঁটো না।ল্যামপোষ্টের আলোয় তোমায় রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায়।তুমি নাকি এমন ভাবে হাঁটো যে দেখলে মনে হয় কারো হাত ধরে বা কেউ তোমার কাঁধে হেলান দিয়ে আছে আর তুমি তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধীরে ধীরে সঙ্গ দিয়ে পা মিলাচ্ছ। প্রকৃতপক্ষে তোমার পাশে কেউ থাকে না।তুমি সবসময় একা একাই হাঁটো।আজও কি কারো জন্য অপেক্ষা করছ? ভদ্রলোকের দিকে আমি সরু চোখে তাকালাম।এ বাড়িতে রাতের সেপটিতে যে ফ্যালফ্যালা টাইপের লোক দারোয়ানের ডিউটিতে থাকে তারই নাম বোধহয় মজিবুর। মাঝে মাঝেই উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করত, কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে থাকত।আমি ভেবেছিলাম অতিরিক্ত সন্দেহবাতিক টাইপের মানুষ হবে।এখন তো দেখা যাচ্ছে ব্যাটায় ভাল গিট্টু লাগিয়েছে।মীরার কথা তার বাবার থেকে লুকিয়েছে সেটা ঠিক আছে।ব্যাটায় তো আমায় প্রায় বদ্দ উন্মাদ বলে উপস্থাপন করে তুলেছিল ভদ্রলোকের সামনে। আমি গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বললাম,
– আমি মীরার ফ্রেন্ড।আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছি।এতক্ষন মীরার জন্যই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। ভদ্রলোক আমার দিকে অবিশ্বাসী চোখে তাকালেন।তাকানোর ধরন এমন ছিল যেন আমি রসিকতা করছি কিনা বুঝার চেষ্টা করছেন। ওনি চোখ থেকে চশমাটা খুলে সাদা পান্জাবির এক প্রান্ত দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে স্থির গলায় বললেন,
– রূপক!আমি যদি তোমায় আমার বাসায় নিয়ে চা খাওয়ানোর অফার করি তুমি কি রাখবে?
আমি মীরাদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছি।মীরার বাবা আশরাফ চৌধুরী বসেছেন আমার সামনে মুখোমুখি হয়ে।ওনি আমার দিকে এখনও অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে আছেন।আমার অস্বস্তিবোধ হচ্ছে।ভদ্রলোকের চোখের দৃষ্টি বেশ তীক্ষ্ণ।ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলা যে কোন চতুর মানুষের জন্যও কষ্টকর হবে।এক ভদ্রমহিলা চা নিয়ে এলেন।সম্ভবত মীরার মা।মীরার চেহারার সাথে অনেক খানি মিল আছে।চা দিয়ে আমার পাশেই বসলেন তিনি।
আশরাফ চৌধুরী চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন,
– মীরার সাথে তোমার পরিচয় কতদিনের?
এ বাড়িতে ঢুকার সময়ই আমি মনে মনে চিন্তুা করে রেখেছিলাম মীরার বাবা-মা যা প্রশ্নই করুক সব সত্যি কথা বলব।মিথ্যা বলে বিপদে পড়ার থেকে সত্য বলে বিপদে পড়া অনেক ভাল।যা হবার হবে।
– জ্বি, ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই।
– সময়টা বল।
– বছর তিনেকের মত হবে।
– তোমার সাথে ওর রোজ কথা হয়?
– জ্বি, হয়।
– কথা বলার মাধ্যেমটা কি ফোন? আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।বললাম,
– জ্বি, ফোন।
– আজ কথা হয়েছে?
– জ্বি, কিছুক্ষন আগেই হয়েছে। মীরার বাবা এবার আমার দিকে একটু ঝুকে এলেন।উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,
– এখন আবার একটু কথা বলবে প্লিজ?
আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আমার কন্টাক্ট লিষ্টে মীরা নামের কোনো নাম্বার নেই।অথচ একটু আগেই আমি কথা বলেছি।আশরাফ চৌধুরী কিছুটা নিরাশ হলেন বলে মনে হল।মলিন হাসি হাসলেন তিনি।এই নিরাশতা,মলিনতার কারন কি?আমার ফোনে মীরার নাম্বার পাওয়া যায় নি তাই? মীরার বাবা আশরাফ চৌধুরী চাপা গাঢ় নীল রঙের কষ্টের একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।আমি আবারো অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আমার পাশে বসা ভদ্রমহিলা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।মীরাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পিচঢালা রাস্তা ধরে ল্যামপোষ্টের আলোয় কিছুদূর এগোতেই পেছন থেকে “হো” করে কেউ চেঁচিয়ে উঠল।আমি চমকে পিছনে তাকাতেই দেখি মীরা খিলখিলিয়ে হাসছে।ল্যামপোষ্টের আলোয় সে হাসি কি যে মধুর লাগছে।হাসি থামিয়ে মীরা বলল,
– কি ভয় পাইয়ে দিয়েছি না? আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম,
– হুঁ, দিয়েছ।মীরা অধিক উৎসাহ নিয়ে বলল,
– আচ্ছা আজ আমরা কতক্ষন হাঁটব?
– তুমি যতক্ষন চাও। মীরা আমার দিকে গভীর চোখে তাকাল।ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– সব সত্যি জানতে নেই রূপক।এতে কষ্ট বাড়ে।কিছু রহস্যকে রহস্যই থাকতে দিতে হয়।কেনো তুমি সত্যিটা জানতে গেলে? আমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললাম,
– আচ্ছা যাও আমি কিছুই জানি না।জেনেও না জানার ভান আমি খুব ভাল করতে পারি।
মীরা তবুও গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল।তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আবার হেসে উঠল।আমার কাঁধে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে পরম সুখে হাঁটছে মীরা।সাথে পা মিলাচ্ছি আমি।চিন্তুা করছি আকাশ পাতাল সমান।কি এত চিন্তা করছি বুঝতে পারছি না।শুধু বুঝতে পারছি আমি চিন্তা করছি।অনেক চিন্তা করছি।মীরা ক্ষীণ স্বরে ডাকল,
– রূপক! আমি ছোট করে বললাম,
– হুঁ।
– ভয় করছে?
– উহুঁ।
মীরা আমার সামনে এসে দাড়াঁল।আমার কাঁধের দু পাশে ওর দুহাত রেখে কিছুটা আমার দিকে ঝুকে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,
– অনেকদিন আগে ভার্সিটির লিফটে তোমার দৃষ্টিতে তুমি আমার সাথে যে অন্যায়টা করেছিলে সেই অন্যায়টা আবার করবে রুপক? এই কথার প্রত্তুত্যরে আমি কিছু বললাম না।কেবল হাসলাম।”হ্যা” সূচক হাসি!!
(সমাপ্ত)