বারান্দার এককোণে বাচ্ছা দিয়েছে মেনীটা।চারটে কচি-কচি বাচ্ছা দিনরাত কুঁই কুঁই করছে।মা-মেনীর গায়ের ওপর হামলে পড়ে দুধ খাচ্ছে ছানাগুলো।এই মা-মেনী আর তার ছানাদের জন্যই বারান্দার ওপাশটা পরিষ্কার করা যাচ্ছে না, ধোওয়া যাচ্ছে না।মালতী প্রতিদিন গজ গজ করছে।
”এইরকম করে কি কাজ করা যায় নাকি গো মা!ঘরে রাস্তার কুকুর, বারান্দায় বেড়াল।যত্তসব ঝামেলা।”
অনামিকা দেবী মালতীর তালে-তাল মিলিয়ে বললেন-
” দুদিন বাদে এটা আর বাড়ী থাকবে না মালতী! চিড়িয়াখানা হয়ে যাবে।”
জয়ী মানে জয়তী পাঁচমাসের অন্তঃসত্তা।অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে এইবার মা হতে চলেছে সে। কতজন ডাক্তার তো বলেই দিয়েছিল যে জয়ী নাকি মা হতেই পারবে না।সে সব ডাক্তারের মুখে ছাই দিয়ে এইবার যখন ঠাকুর মুখ তুলে চেয়েছেন তখন সব সব নিয়ম-কানুন গুলো মেনে তো চলতেই হবে জয়ীকে।তাই হয়তো যত রাজ্যের কুসংস্কার এসে তার মনে বাসা বেঁধেছে।অথচ এই জয়তীর শাশুড়ী অনামিকা দেবী আবার ভীষণরকম উদারচেতা -সংস্কারমুক্ত।আগে চাকরি করতেন সরকারী স্কুলে।ডাকসাইটে হেড মিস্ট্রেস ছিলেন।জয়তীর এইসব বাড়াবাড়ি তার না পসন্দ।তিনি চেয়েছিলেন চাকরি করা বৌ আনবেন।তার আদরের দুলাল এই ঘরে বসা মেয়ে জুটিয়ে আনল।সারাক্ষণ আদ্যিকালের বুড়িদের মত ছোঁওয়াছুঁয়ি নিয়মকানন।এই নাকি এখনকার মেয়ে।ছিঃ!গা জ্বলে যায় অনামিকা দত্তের।উনি আবার লেখেন ‘ডাট’ dutt.দত্তটা নাকি কেমন বোকা -বোকা শোনায়।তাই লেখেন’সাহা ডাট’।ডাট ই বটে বড় ডাঁট ওনার।জয়ীর ভাল লাগে না।
আসলে ভাবী সন্তানের মঙ্গলকামনা করতে গিয়েই হয়তো এমন কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে জয়ী।যে যা বলছে তাই-ই করে চলেছে।মাদুলি-তাবিজ-বিভিন্ন মন্দিরে পূজো-এই উপোস, ঐ উপোস।তার সাথে যোগ হয়েছে পশু পাখিদের নিয়ে বাড়াবাড়ি।আসলে পাখি,কুকুর,মাছ,বেড়াল এইসব বড় ভালবাসে জয়ী।অ্যাকোরিয়ামে রঙীন মাছ পুষেছে।এছাড়া টিয়া,বদ্রী,মুনিয়া নানারকমের পাখি নিয়ে মশগুল হয়ে থাকে সে।অনামিকা দেবী কি বলল না বলল তাতে বিশেষ কিছু মনে করেনা।এদিকে বেড়াল ষষ্ঠীর বাহন।তাকে তাড়ানো যাবে না।পায়রা শান্তির দূত। তার বাসা ভাঙা যাবে না।কুকুর তো ওর প্রাণ,নিজে না খেয়েও জয়ী পপিকে রোজ খাওয়ায় আদর করে।পপি রাস্তার কুকুর হলেও বড় ভালবাসে জয়ীকে।বড় মায়ার শরীর জয়তীর।
পৃথ্বীশ আবার জয়ীর এই ঘরোয়া নিয়ম-কানন মানা লক্ষ্মীশ্রী ভাবটা বেশ পছন্দ করে।ছোটো থেকে মায়ের মিলিটারী মেজাজ আর নিয়ম ভাঙ্গা প্রায় নাস্তিক ব্যতিক্রমী চরিত্র দেখতে-দেখতে মনের অন্তঃস্থলে যেন কোথায় বাসা বেঁধেছিল একটা স্নেহময়ী মা-মা আকুতি।যে মা তুলসীতলায় সন্ধ্যা প্রদীপ দেবে,শাঁখের আওয়াজে বাড়ী ভরিয়ে তুলবে।ধুনোর গন্ধ গায়ে মেখে মা গরদের শাড়ী পরে নেমে আসবে ঠাকুরঘর থেকে।হাতে প্রসাদের থালা।মা তার মাথায় ফুল ছুঁইয়ে দিয়ে মুখে প্রসাদ দেবে।মাথায় দেবে একটা আদরের চুমু!হয়তো কিছুই না।তার মায়ের ভাবনা অনুযায়ী খুবই বোকা-বোকা;অথচ আবার অনেক কিছু। এ যেন মা-মা করে কেমন একটা অতল গভীর মন কেমন করা। মনের এই সুপ্ত না পাওয়াগুলো জয়ী তার পূর্ণ করেছে।স্বামী-সংসারের মঙ্গলকামনায় পূজো, উপোস,ব্রতপালন।গরদের শাড়ীতে সালঙ্কারা প্রতিমা মূর্ত্তির মত জয়ীর সৌন্দর্য যেন পৃথ্বীশকে আবিষ্ট করে রেখেছে।জয়ীর লক্ষ্মীশ্রীতে তাদের বাড়ীতে যেন প্রাণ এসেছে।তাই এই পশুপাখি প্রীতিতে পৃথ্বীশ ও কিছুটা ইন্ধন দেয়।জয়ীর ছোট-ছোট ইচ্ছেগুলো বড় আদরের তার কাছে।মাঝে-মাঝে জয়ীর ভেতর বাস করা ছোট্ট অবুঝ মেয়েটাকে সে দেখতে পায়।বড় মায়া-মায়া ভালবাসার ছোঁওয়া পায় পৃথ্বীশ।এই বেশ ভাল আছে।গ্র্যাজুয়েট ঘরোয়া জয়ী পৃথ্বীশের প্রাণ।
অথচ অনামিকা দেবী একমাত্র ছেলেকে প্রাণ দিয়ে মানুষ করেছেন।কঠোর অনুশাসন।স্বদেশে-বিদেশে যেখানেই যাক পৃথ্বীশের কোনো অসুবিধেই হবে না।মোটা মাইনের চাকরি পেয়েছে পৃথ্বীশ। সঙ্গে মান-সম্মান-যশ-খ্যাতি কিছুরই অভাব নেই।একফোঁটা কুসংস্কার স্পর্শ করতে পারেনি ওকে।একেবারে মর্ডান আপ টু ডেট।অথচ সেই পৃথ্বীশ ঘরে বৌ করে আনল এমন ম্যাদা মার্কা মান্ধাতা আমলের মেয়ে।কিছুতেই আর যাকে মানুষ করতে পারলেন না অনামিকা দেবী।এখন আবার প্রেগনেন্ট অবস্থায় বেড়াল-কুকুর-পাখি আর নানারকম বাতিকের শিকার হয়ে পড়েছে জয়ী।
জয়তীর এইসব পূজো- পার্ব্বণের বাতিক নিয়ে রাতদিনই অনামিকা দেবীর নানা অভিযোগ।প্রতি মাসেই কিছু না কিছু লেগে আছে।চৈত্র মাসে শীতলা,জ্যৈষ্ঠ মাসে ষষ্ঠী,আষাঢ় মাসে বিপত্তারিণী,সারা শ্রাবণ জুড়ে সোমবার, নিরামিষ!ছোঁওয়াছুঁয়ি বাপরে! আরও কত কি বাতিক।এই তো কিছুদিন আগে পৃথ্বীশ,অনামিকা আর জয়তী মিলে অনামিকা দেবীর স্কুলের একজন পুরোনো কলিগের ছেলের বিয়েতে যাচ্ছিলেন হঠাৎ জয়তীর দিকে তাকিয়ে আঁতকে ওঠেন অনামিকা সাহা dutt-
”ওকি জয়তী! তুমি হাতে ঐসব লাল-লাল কি বেঁধেছো?স্লিভলেস ব্লাউজের পাশ দিয়ে ওরকম সুতো দেখা গেলে কি বিতিকিচ্ছিরি লাগে কোনো আইডিয়া আছে তোমার?তোমার কি কোনো সেন্স নেই নাকি?স্কুলে চিরকাল মেয়েদের এইসব তাবিজ-মাদুলির জন্য বকাবকি করেছি।আর ঘরকেই মানুষ করতে পারিনি আমি!”
”ওটা বিপত্তারিণীর তাগা মা।সব বিপদ কেটে যাবে।ওরকম বলতে নেই।”
জয়তী মৃদু গলায় বলে।অনামিকা dutt বিরক্তির সুরে বললেন-
”বিপদ কেটে যাবে না মুন্ডু হবে!তুমি আমাকে শেখাবে নাকি?বিপদকে তো তুমি সেধে ডেকে এনেছো ঘরে। বেড়ালের থেকে কি সাঙ্ঘাতিক ইনফেকশন হতে পারে কোনো ধারণা আছে তোমার জয়তী?সারাদিন তুমি বেড়াল-কুকুর নিয়ে কি আরম্ভ করেছো বলতো?কোনো বিপদত্তারিণীই তোমাকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না এই আমি বলে দিলাম।কালই আমি ঐ বেড়াল বাচ্ছাদের তাড়াব।”
”কিন্তু মা বেড়াল যে মা ষষ্ঠীর বাহন!ওদের তাড়িয়ে দিলে সদ্য জন্মানো বাচ্ছাগুলো মা-হারা হবে যে।”
কেঁদে ফেলে জয়তী।বড় নরম মন তার।
পৃথ্বীশ বলে-
”আরে না না বেড়াল থাকবে।তুমি কেঁদোনা সোনা। চুপ কর।”
পরেরদিন দুপুরে বাড়ী শুনশান।পৃথ্বীশ অফিসে।জয়তী ঘুমোচ্ছে।বড় মেনীটাও কোথায় গেছে খাবারের খোঁজে কে জানে!অনামিকা দেবী মালীকে ডাকিয়ে আপদে মেনীর বাচ্ছাগুলোকে দূর করে দিলেন।বললেন-
”এমন জায়গায় ফেলে আসবে যে যাতে আর ফিরতে না পারে।যদি ঠিক মত কাজটা করতে পারো তো ভাল বকশিশ পাবে।”
মালী চলে গেল।চিরকাল স্কুলে এরকম চুপ-চাপ কত কঠিন ডিসিশন নিয়েছেন অনামিকা সাহা dutt তার ইয়ত্তা নেই।কাক-পক্ষী টের পায়নি।এদিকে সন্ধ্যেবেলা বাড়ীতে তুমুল কান্নাকাটি।জয়ীকে ধরে রাখা যাচ্ছে না।অফিস থেকে ফিরে পৃথ্বীশ রেগে টং।
”কোথায় গেল মা মেনীর ছানাগুলো?”
”আমি কি করে জানব?আমার কি কোনো কাজ নেই যে সারাদিন বেড়াল ছানা পাহারা দেব?”
বিরক্তির সুরে অনামিকা দেবী বললেন।পৃথ্বীশ জানে,যেকথা মা বলবে না মনে করবে কারো সাধ্যি নেই তা বলাবে।পৃথ্বীশ অগত্যা জয়ীকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়ে গেল।যাতে ওর মনটা ভাল হয়।কিন্তু জয়ী খুব মুষড়ে পড়ল।কেবলই তার মনে হতে লাগল মা বেড়ালের কাছ থেকে তার বাচ্ছাদের কেড়ে নেওয়া হল।বাচ্ছা হারিয়ে মা বেড়াল পাগলের মত তার বাচ্ছাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে এই দৃশ্য চোখের সামনে দেখতে -দেখতে তার বুক ফেটে যেতে লাগল।আজকাল পপিকেও বাড়ীর ভেতর ঢুকতে দেয় না দারোয়ান।অনামিকা দেবীর বারণ।পপি করুণ চোখে উপরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে।জয়তীর আদর পাওয়ার জন্য পপির চোখ জলে ভিজে যায়।জয়তী ওপর থেকে পপিকে বিস্কুট ছুঁড়ে দেয়।পপি খায় না শুঁকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।জয়তীর বুকের ভেতরটা হু হু করে।কিন্তু মুখে কিছু বলে না।কেননা সত্যিই যদি কুকুর -বেড়াল থেকে কোনো ইনফেকশন হয় তখন অনামিকা দেবী ছাড়বেন না।
জয়তীর মাস ছয়েক এখন।বাচ্ছাটা পেটের ভেতর বেশ নড়াচড়া করছে।একটা ছোট্ট অতিথি আসবে।তার ছোট্ট-ছোট্ট হাত পা।আদুরে গলার শব্দ।তাকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে এক উষ্ণ মমতার স্পর্শ।ভাবতে-ভাবতে জয়তী তন্ময় হয়ে যায়।কতদিনের স্বপ্ন তার সফল হতে চলেছে।আর মাত্র কয়েকটা দিন।নিজের একটা সর্বক্ষণের ছোট্ট-মিষ্টি সঙ্গীর সাথে সময় কাটাবে সে।মনের ভেতর নানারঙের আনন্দ পাখা মেলতে শুরু করেছে ক্রমে।
কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আর এক।হঠাৎ একদিন পেটের ভেতর বাচ্ছার নড়াচড়া টের পায়না জয়তী।ইউ. এস. জি. করা হয়-করা হয় নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা। একটা কমপ্লিকেশন ধরা পড়ে জয়তীর।বাচ্ছার সাথে-সাথে একটা টিউমার বড় হচ্ছে।তার চাপেই বাচ্ছাটা—আগে বোঝা গেলেও— হঠাৎ এতটা ক্রিটিক্যাল হয়ে যাবে ব্যাপারটা ডাক্তারও বোঝেননি।তিনি ভেবেছিলেন বাচ্ছার জন্মের সময় বাদ দিয়ে দেওয়া হবে টিউমারটা।কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাচ্ছা আর মা দুজনেরই প্রাণসংশয়।সুতরাং এখনি অপারেট করা দরকার।এই নিদারুণ খবরটা জয়তী জানলে কি হবে সেটা ভেবেই পৃথ্বীশ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।নিজের মনে অসহ্য যন্ত্রণায় ক্ষত-বিক্ষত পৃথ্বীশ মনকে শক্ত করার চেষ্টা করে।কেননা তার মাথার ওপর বাবা-দাদা কেউই নেই!সে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।অপরেশন হয়ে যায়।জয়তী সুস্থ আছে।আর তার প্রাণসংশয় নেই।কিন্তু টিউমারের সাথে ওভারি বাদ দিতে হয়েছে।আর কোনোদিনও মা হতে পারবে না জয়তী।
হঠাৎ আসা কালবৈশাখী যেমন প্রকৃতিকে নিমেষে ওলট-পালট করে দিয়ে যায়।তেমনি জয়তীর সাজানো জীবনটা যেন কেমন দুমড়ে-মুচড়ে যায়।আর তো বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না।কি নিয়ে বাঁচবে!কার জন্য বাঁচবে।একদিন বেড়ালের কাছ থেকে তার বাচ্ছাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।তার শাস্তিই কি পেল জয়ী?নানান ভাবনায় জয়ী যখন প্রায় অবসাদের শিকার হতে চলেছে।তার খাওয়া নেই ঘুম নেই।পৃথ্বীশেরও কাজে কর্মে মন নেই।সোস্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে পৃথ্বীশ যথাসম্ভব।মানুষের এত প্রশ্নের উত্তর দিতে-দিতে সে ক্লান্ত।অনামিকা দেবী নানারকম দোষারোপ করে চলেছেন জয়ীকে।এমন অবস্থায় পৃথ্বীশ জয়ীকে বলল চল জয়ী আমরা একটা বাচ্ছাকে অ্যাডপ্ট করি।সুন্দর ফুটফুটে তোমার মতন মিষ্টি একটা মেয়েকে নিয়ে আসি।মা হারা একটা বাচ্ছা তোমার মত মা পাবে।অনেকেই তো বাচ্ছা অ্যাডপ্ট করে।এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে!জয়তী রাজী হয়ে গেল।ভেতর-ভেতর সব ব্যবস্থা পাকা।একটা ভাল দিন দেখে নতুন অতিথিকে নিয়ে আসা হবে বাড়ীতে।অনেকদিন বাদে আজ আবার জয়তীর মুখে হাসি দেখছে পৃথ্বীশ।
কিন্তু অনামিকা দেবীর একেবারেই মেজাজ ঠিক নেই।এই অন্যের বাচ্ছাকে নিজের বাচ্ছা বলা ব্যাপারটা তিনি কোনোদিনই মানতে পারেন না।অথচ তিনি এত আধুনিক, উদার,সংস্কার মুক্ত,সবচেয়ে বড় কথা উচ্চশিক্ষিত!ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটাকে নিয়ে পৃথ্বীশ-জয়ী বাড়ী আসে।অনামিকা দেবী নিজের ঘর থেকে বেরোননি।জয়ী তার ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে শাশুড়ীর ঘরে যায়।অনামিকা দেবী বললেন-
”শোনো জয়তী বাচ্ছা এনেছো সে তোমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার আমি কিছু বলব না।কারো ব্যক্তিস্বাধীনতায় আমি হস্তক্ষেপ করি না।কিন্তু আমাকে এর মধ্যে জড়াবে না।তুমি-পৃথ্বীশ তোমাদের মত ওকে নিয়ে থাক।আমি ওর কেউ না।”
কুসংস্কারাচ্ছন্ন গেঁয়ো মেয়েটা বলল-
”মা মায়ের কোনো জাত নেই।স্নেহ-মায়া-মমতার কোনো সীমা নেই।আমি লেখাপড়া বেশী জানি না আপনাদের মত।কিন্তু কুকুর, বেড়াল, পশু, পাখি আর সব বাচ্ছাদেরই আমি ভগবানের দান বলে মনে করি।আমি আমার শরীরে আর সন্তান ধারণ করতে পারব না ঠিকই।কিন্তু মনটা তো বেঁচে আছে মা।সেখানে অনেক ভালবাসা ধরে রাখার মত জায়গা আছে।মাদার টেরেসা, সারদা মা এঁরাও তো বায়োলজিক্যাল মা হতে পারেননি কোনোদিন।কিন্তু তাদের চেয়ে বড় হৃদয় আর কার বলুন তো?তারা যে জগতের মা।সারা জগৎ তাদের মা বলেই চেনে।ভগবান আমার চোখ খুলে দিয়েছে মা।সাময়িক কষ্টের ভেতর দিয়ে আমি বুঝেছি,মায়ের কোনো জাত নেই।মায়ের স্নেহের অগাধ অপার গভীরতা পৃথিবীর সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারে।আমি বাইরের সংস্কার মানি বলে আপনি আমাকে কথা শোনান।কিন্তু আজ দেখলাম মনের সংস্কার আমার দূর হয়ে গেছে।মানুষকে ভালবাসার সুসংস্কার গড়ে উঠেছে আমার ভেতর।এতেই হয়তো শান্তি পাব।”
জয়ী অনামিকার কোলে বাচ্ছাটাকে দিয়ে দেয়।অনামিকা দেবীর মুখে কথা সরছে না। হাঁ করে জয়ীর মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি ভাবছেন সারা জীবন তিনি সকলকে বলেছেন,সকলে চুপ করে শুনেছে তার কথা। আর আজ এই ম্যাদা মার্কা অল্প শিক্ষিত মেয়েটা তাকে জীবনের পাঠ শিখিয়ে দিল।