আমার কথা
মনে পড়ে সেদিন ছিল এমন ই চৈত্র মাস ,তোমার দুটি বেনির মধ্য দিয়ে, দেখেছিলাম আমার সর্বনাশের শুরু। মনে পড়ে তোমার অনর্গল কথা, মনে পড়ে তোমার কথার বৃষ্টিতে আমাকে ভিজিয়ে দেওয়া । নির্বাক আমি ভিজতাম আশ্লেষে । তখন তুমি এসে জড়িয়ে ধরতে আমায় ,
বলতে কি এত দেখো… এ দেখার কি কোন মানে হয়…
আমি হাসতাম, বলতাম.. দোলের দিন আসছি তোমাকে ভিজিয়ে দেব আমার ভালোবাসার রংয়ে ।পাহাড়ি নদীর মত উচ্ছল তুমি হেসেছিলে বললে অপেক্ষা করব তোমার আসার। আমাকে চিনতে পারবে তো ??? বলেছিলাম কি বলছ, তোমাকে চিনতে পারব না এমন কি হয় ??সেদিন নিজেকে সাজিয়ে তুলেছিলাম বাসন্তী পাঞ্জাবিতে। তুমি বলেছিলে তো । বসে রইলাম আমাদের সেই ইপ্সিত স্থানে। সকলেই জিজ্ঞেস করল , কি হে এখানে কেন ?? আমি শুধু হাসলাম তারা বলল , ও বুঝেছি তোমার পাহাড়িয়া ফুলের অপেক্ষায় রয়েছ… কিন্তু অপেক্ষাই সার আমার পাহাড়িয়া ফুল এলোনা আমাকে ভিজে দিতে আমিও পারলাম না দুজনের রঙে রাঙিয়ে নিতে।।
আজ তোমাকে অনেকদিন পর দেখলাম পাহাড়িয়া ফুল এখন তোমার চুলের বেনি তে পাক ধরেছে এখন তুমি সেই পাহাড়ি ঝর্ণার মত উচ্ছ্বল নও ,এখন তুমি স্রোতস্বিনী নদীর রূপ ত্যাগ করে- ধারণ করেছ, তার তপস্বিনী রূপ । কি অসাধারণ তার দ্যুতি। ঝর্নাতে বাধ পড়েছে ঠিকই কিন্তু তার চলার বিরাম একদম ঘটেনি। আমি কিন্তু তোমাকে দেখে চিনেছি ,কিন্তু তুমি কি করে ভুলে গেলে গো ?একবার মনে হলো, ছুটে যাই তোমার কাছে। জিজ্ঞাসা করি কোথায় ছিল আমার ভুল?? কেন বাঁধতে পারলাম না তোমাকে?? পেয়েছিলে কি আমার থেকেও কোন চওড়া কাঁধ, যে কাঁধে মাথা দিতে পেরে ছিলে তুমি?? একবারের জন্যও আমার দিকে ফিরে তাকালে না। কি দোষ করেছিলাম বল ?আজ তোমার কথা ভেবেই কাটিয়ে দিলাম এতগুলো বছর ।অন্য কারো যোগ্য সঙ্গী হতে পারলাম না।
তোমার কথা
তোমাকে দেখে ঠিক ই চিনেছি । সে আগের মতই আছ। সঙ্গে বাড়তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে, তোমার চোখের ওই রিমলেস চশমা , আর কানের গোড়া র কাছে রুপোলী চুলের রেখা। আমাকে দেখা মাত্র চিনতে পেরেছ যে এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ । হয়তো তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে আমার এইনা চিনতে পারা। কি দরকার বল? আজ এতগুলো বছর হয়ে গিয়েছে, সেই দোলের থেকে। এখন আর চিনতে পেরে কি লাভ? খানিকটা মান-অভিমান, দুঃখ। এতগুলো বছর তো আর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। সেদিন আশ্রমের ছোট ছেলেটার কাছ থেকে শুনলাম ,তুমিও বিয়ে করনি ।এত সুখ ও ছিল আমার কপালে ,যে আমার মত হতভাগীকে এখনো মনে রেখেছো তুমি। আজকে কেন জানিনা মনে পড়ছে ,সেই- সেই দিন কার কথা গুলি। যেদিন তোমার নির্বাক চোখের দৃষ্টি আমাকে ঘিরে থাকতো, ভীষণ ভালো লাগতো জানো। খালি মনে হত ,এই ভালবাসায় সারা জীবন ভিজে থাকবো। আমার কপাল তো !!! জানি এত সুখ সইবে না। তুমি আমাকে সব সময় বিশ্বাসঘাতিনী ভাবছো আমি জানি ।সেদিন নিজেকে তোমার রঙে রাঙিয়ে নিতে, কেন আসতে পারলাম না, তা যদি অকপটে বলতে পারতাম তোমায়। হয়তো তুমি ভাবছো কোন নতুন মন আমাকে রাঙিয়ে দিয়েছে সে দিন। তাই কি হয় গো?? জীবনে প্রিয়তমের হাতের রং তো এক বার ই মাখা যায়। অন্তত আমার ক্ষেত্রে ।
সেদিন তোমার পাহাড়িয়া ফুল তোমার পছন্দের সাজে আসছিল তোমার কাছে, নিজেকে রাঙিয়ে নেবে বলে ।সেই যে তুমি বলেছিলে, বেনি জুড়ে পলাশ ফুল আর বাসন্তী রঙা শাড়ি। সাজতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল, তাই ছিল খুব তাড়াহুড়ো আমাদের ইপ্সিত স্থানে পৌঁছানোর জন্য। আসছিলাম ও বেশ, কিন্তু আসতে পারলাম না তো। যে সাজে সজ্জিত হয়ে ,আমার দেবতার কাছে আসছিলাম; পথের মধ্যে সেই সাজ চূড়ান্ত নষ্ট হয়ে গেল। ধুলো লাগল তার সর্বাঙ্গে। উচ্ছিষ্ট হয়ে গেল সে শয়তানের স্পর্শে ।তাহলে সেই নৈবেদ্য কেমন করে দেবতার অর্চনায় লাগাই বল?? তাইতো সরিয়ে ফেললাম নিজেকে, বন্ধুবান্ধব চেনা পরিচিত সকলের কাছে নিজের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিলাম ।তুমি জানলে আমি চলে গিয়েছি, অন্য কোনো বড় কামনায় বড় অভিষ্টে। সেই বেশ ভাল হত জানো তোমার মনের মধ্যে আঁকা থাকতো আমার বিশ্বাসঘাতক রূপটি। ঘেন্না করতে তুমি আমাকে। ভীষণ!! ভীষণ !!ঘেন্না !! তাই চেয়েছিলাম কিন্তু কেন এভাবে অপেক্ষা করে রইলে আমার জন্য। কেন তোমার শূন্যতার ডালি ভরিয়ে নিলে না অন্য কোন ফুলে। আমাকে যে আরো বড় অপরাধী বানিয়ে দিলে গো তুমি।
আমার তোমার কথা
আজকে আবার এসেছে আরেকটা দোল ঠিক সেই দিনের মত রঙিন আবিরে সকলে রাঙিয়ে দিচ্ছে একে অপরকে কিন্তু আমাদের দোল সে তো হয়ে রইল বিবর্ণ, রংহীন কত কাছে আমরা, অথচ কত দূরে এই দূরত্ব কি পার হওয়া যাবে না না এ থেকে যাবে দুটি মনের মাঝে এক বিশাল সমুদ্র হয়ে যার দুকূলে র কোন হদিস নেই কোন সীমানা নেই…
বধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায়
বিনা কারণে।
নীল আকাশ থেকে একি বাজ হেনেছে হায়
বিনা কারণে।
আমি তো খুঁজি কারণ মন আমায় করে বারণ।
বলে কেন এমন মরণ
বিনা কারণে।