তুমি কি বিয়ের পরও জিন্স পড়বে?
আমার কথায় মানহা কিছু বললো না।একদৃষ্টিতেই তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।হয়তো কি বলবে সেটাই ভাবছে,নয়তো অন্যকিছু।আমি মানহাকে স্বাভাবিক করতে বললাম,
-চলো হাটি।
আমার কথায় মানহা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।তবে পা বাড়ালো না।ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে রইলো।আমি মানহার হাত ধরে বললাম,
-চলো।
মানহার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এই মাস খানেক আগে।বিয়েটাও হয়তো তখনই হয়ে যেতো।কিন্তু আমার সাথে মানহারও কিছুটা অমত ছিল।আসলে এখানে একটা মনের মিল দরকার হয়।ভাল লাগা,খারাপ লাগা থাকে।দুজন দুজনকে চিনতে হয়।আর এই মনের মিল খোজার জন্যেই আমরা সময় চেয়েছিলাম কিছুদিন।
অবশ্য এতে মানহার বাবা আফজাল সাহেবের সম্মতি ছিল না।ওনার মতে বিয়ে হওয়ার পর সব হবে।যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিলেই উনি খুশি।কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে উনি হেরে গিয়ে নিজের রাগটাও খুব সহজেই দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন।
এই সন্ধে বেলা সোডিয়ামের আলোতে মানহার সাথে হাটতে খারাপ লাগছে না।মেয়েটা খুব তাড়াতাড়িই সবকিছু মানিয়ে নিয়েছে।খুব আপন করে,কাছে টেনে।আরও একটু এগুতেই মানহা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
-তোমার কি মনে হয়,জিন্স পড়া মেয়েগুলা ভাল হয় না?
মানহার কথায় আমি একটু চুপ করেই রইলাম।ভেবেছিলাম মেয়েটা এই জিন্সের কথাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে।কিন্তু ও যে এটা নিয়েই ভাবছে এটা আমি ভাবতেও পারিনি।আমি একটু চুপ থেকে বললাম,
-ভেবেছিলাম খারাপ হয় কিন্তু তোমাকে দেখে ধারনাটা পালটে গেছে।তবুও ছেলেদের পোষাক নিয়ে টানাটানি করাটা কি ভাল দেখায়?
-কেন,ছেলেদের পোষাক মেয়েরা পড়তে পারে না?
-পারবে না কেন,এই যে তুমি পড়ে আছো।কিন্তু ভাল দেখায় না।মেয়েদের পোষাক কি ছেলেরা পড়ে?
আমার কথায় মানহা কিছু বললো না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার হাটতে শুরু করলো।আমিও আর কথা বাড়ালাম না।মানহার পাশে হাটতে হাটতে বললাম,
-তুমি যখন জিন্স পড়ে বের হবে তখন আশেপাশের লোকজন কি বলবে জানো?
আমার কথায় মানহা আস্তে করে বললো,
-কি।
-সবাই বলবে,ওই দেখ আহাদের ভাই যাচ্ছে,ভাই।
কথাটা শুনে মানহা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
-সত্যি ই এমনটা বলবে নাকি?
-বলতেই পারে।আবার অন্যকিছুও বলতে পারে।
-অন্যকিছু!
-হ্যা পারেনা,লোকে তো কতকিছুই বলে।আমার আম্মাও অনেক কথাই বলতে পারে।
-উনি কি বলবে?
-ছেলে বিয়ে করিয়ে ঘরে বউ আনিনি,এনেছি আরেকটা ছেলে।
-এইটা বলবে!
-মুখে না বললেও মনে মনে তো বলতেই পারে।
আমার কথায় মানহার মুখটা আরও একটু মলিন হয়ে গেলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে মেয়েটা বললো,
-তারমানে মেয়েদের জিন্স পড়া তোমার পছন্দ না।তুমি চাও মেয়েরা জিন্স না পড়ুক?
-হ্যা সেটাই।কিন্তু আমি যদি আমার নিজের ঘরের বউকে ঠিক করতে না পারি তাহলে অন্য সবাইকে কেমনে বলো জিন্স না পড়তে।তখন তারা বলবে নিজের বউকে ঠিক করতে পারে না আসছে আমাকে জিন্স নিয়ে জ্ঞান দিতে।তুমি কি চাও আমাকে কেও এভাবে অপমান করুক?
আমার কথায় মানহা কি বুঝলো বুঝলাম না।হুট করেই রিক্সা ডেকে উঠে বসলো।আর আমি তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে।হঠাৎ কি হলো!আমার দাঁড়িয়ে থাকা দেখে মানহা বললো,
-উঠে আসো।
আমি কিছু না বলে মানহার পাশে বসতেই রিক্সা এগুতে লাগলো।আমি মানহাকে আস্তে করে বললাম,
-কোথায় যাচ্ছি?
-প্রথমে বাসায় তারপর শপিং এ।
-বাসায় কেন?আর এসময় আবার শপিং?
-বাসায় গিয়ে জিন্স গুলা সব পুড়িয়ে দেবো।
-তারপর শপিং এ গিয়ে আবার নতুন জিন্স কিনবে।এরচেয়ে না পোড়ানোটাই বেটার না।
-উঁহু, জিন্স পুড়িয়ে কেও আবার জিন্স কেনে।আমি ভাবছি জিন্স আর পড়বো না।ওই কি যেন বলে,সেলওয়ার কামিজ,থ্রি পিছ, শাড়ি এইসব পড়বো।
-হঠাৎ এত চেঞ্জ?
আমার কথায় মানহা মুচকি হেসে বললো,
-তোমার জন্যে।তোমার অপছন্দের জিনিস আমি কিভাবে পড়ি।
-তাহলে সাথে একটা বোরখা আর হিজাবও কিনবো।
আমার কথায় মানহা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো।ও কি বোরখা কিনতে চায় না,নাকি পড়তে চায় না এইটা আমার মাথায় ঢুকলো না।মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ থেকে মিষ্টি হেসে বললো,
-বোরখার রঙটা কিন্তু কালো হবে।
মানহার কথায় আমি মুচকি হেসে ওর গাল টেনে বললাম,
-তুমি তো দেখছি পুরোই আমার কার্বন কপি।আমার পছন্দও কালো আর তোমারও। মানহাকে আমি আর কিছু বলতে না দিয়ে রিক্সাওয়ালা চাচাকে বললাম, চাচা জোরে চালান,যত দ্রুত যাব তত তাড়াতাড়ি পাপ গুলা পুড়িয়ে ফেলতে পারবো। আমার কথায় রিক্সাওয়ালা চাচা কিছু না বলে পেছন ঘুরে মুচকি হেসে রিক্সার গতি বাড়িয়ে দিলেন। রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে।গন্তব্য সুখের বাড়ি।