ভবিতব্য

ভবিতব্য

“বাবু যা তাড়াতাড়ি, তোর বাবা এসেছে, দেখা করে আয়”,হাবিলদার আঙ্কেলর কথা শুনেই মুখ তুললো ডোডো আঁকার খাতা থেকে। আস্তে আস্তে উঠে গেল পিছনের রাস্তায় যেখানে প্রতি রবিবার ওর বাবা এসে গাছের ছায়ায় বসে অপেক্ষা করে ওর জন্য। “আয় ডোডো আমার পাশটায় এসে একটু বস বাবা” বললেন মি. অর্ণব সিনহা।ডোডো দাড়াল এসে বাবার ঠিক পাশটায় , অর্ণব একটু লুকিয়েই ব্যাগ থেকে দুটো চকলেট বের করে ধরলেন সামনে । ডোডো মাথানিচু করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে পা এর নখ দিয়ে মাটি খুঁটে চলেছে , চকলেট এ নজর নেই তার । প্রতি রোববারই আসেন অর্ণব কিন্তু একটা শব্দও বের করতে পারেন না ছেলের মুখ থেকে ।

এইআধঘন্টা ধরে বিভিন্ন কথা দিয়ে ওকে ভোলাবার চেষ্টা করেন কিন্তু সবটাই যেন বৃথা । আজ যেন কথার কোনো খেইও খুঁজে পাচ্ছেন না অর্ণব ।অগত্যা “আমি তাহলে আসি ?” জিজ্ঞেস করলেন , মাথা নেড়ে সায় দিলো ডোডো , চকলেটটা না নিয়েই দৌড়ে ভিতরে চলে গেল ।ক্ষীণ চোখে তাকিয়ে রইলেন ওর যাওয়ার পথটাতে। পিছন থেকে কত বড় লাগছে আজ ডোডোকে ! সব কিছু ঠিকঠাক চললে এবছর ওর নাইন স্ট্যান্ডার্ডে পড়ার কথা ! আর ভেবে কি হবে পায়ে পায়ে এসে দাড়ালেন সি ও এর ঘরে , আউট টাইম লিখতে রেজিস্টারটা টানলেই উনি অবাক চোখে তাকালেন “হয়ে গেলো? পনেরো মিনিটও তো লাগলো না!” “কি করবো বলুন কথাই যে বলতে চায় না ।

“অর্ণবের গলাটা একটু যেন ধরে এলো কথাটা বলার সময় ।”কিন্তু বাবু তো খুব সেনসিটিভ ছেলে , আমাদের এখানে ওকে সবাই খুব ভালোবাসে । আমাদের একজন অফিসার এসে ওকে পড়িয়ে যান । উনি বলছিলেন যে দারুন শার্প নাকি! একটু যদি নজর রাখতেন আজ ওর ভবিষ্যৎ তা নষ্ট হতো না ! আর বলে কি হবে সবই ভবিতব্য !” মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন দমদম সংশোধনাগারে সি.ও।অর্ণবের চোঁখের আদ্রতার ঘনত্ব হয়তো সি ও এর মতো রাশভারী লোককেও টলিয়ে দিলো । হাত দুটো ধরে বললেন “চিন্তা করবেন না ,হয়ে যাওয়া সমস্ত ভুলগুলো সংশোধন করে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য । বাবুও খুব ভালো ছেলে , আর তো বেশিদিন নেই । আপনি নিশ্চিন্তে যান দরকার হলে ফোন করবো ।” মাথা নেড়ে বেরিয়ে এলেন অর্ণব। ঘড়িতে দুটো বেজে কুড়ি , এখান থেকে জোঁকায় যেতে হবে । ওখানকার সময় বিকেল পাঁচটা ,হাতে সময় আছে খানিক। একটা সিগারেটে ধরিয়ে একটা গাছের তলায় বসলেন ।

আজ থেকে বছর দুই আগেও কি সুন্দর ছিল রবিবার গুলো , প্রতি রবিবারেই অর্ণব নেহা আর ডোডো-দারুন সময় কাটতো।হয় লং ড্রাইভার নয় শপিং আর বাইরে ডিনার সেরে ফেরাটাতো মেন্ডেটরি ছিল।আর আজ রোববার সবার সাথেই দেখা হবে কিন্তু কেমন ছাড়া ছাড়া । আজও বুঝে উঠতে পারেননা অর্ণব যে আজকের দিনটা দেখার পিছনে কি নেহার একার হাত উনিকি কোনোভাবেই দায়ী নন !

নেহাকে বিয়ে করে ফেরার দিন – নেহার মা হাত দুটো ধরে বলেছিলেন ” ছোট বেলায় বাবাহারা মেয়ে আমার , আমিও ওর বাবার চাকরি করতে গিয়ে সময় দিতে পারিনি ,একটু দেখো বাবা । বড্ডো একগুঁয়ে আর জেদি একটু মানিয়ে নিও”।

বিয়ের পর বেশ চলছিল সব, নিজের হাতে গড়া বিজনেসও বেশ রমরমা তখন । সেটাতে আরো নজর দিতে গিয়ে নেহাকে দেওয়ার সময়েও ঘাটতি পড়তে শুরু করেছিল । তারপর থাকতো বিজনেস ট্যুর। নিজের স্বার্থের জন্যই ওকে দু তিনটে ক্লাবের মেম্বার করে দিয়েছিলেন।সেই থেকে শুরু হলো ওর চোখ ফোঁটা । ক্লাব ,পার্টি ,পার্লার এসব রোজনামচা ছিল । প্রতিবাদের উত্তর ছিল “তুমি সময় দিলেই আমি আর যাবো না “।

বয়সের অনেকটা পার্থক্য ,সাথে ওর মায়াময় মুখটাই অর্ণবকে নির্বাক করে দিত। সিমলার ট্যুরটার কথা আজও মনে পড়ে – ফেরার একমাসের মাথায় নেহার মুখে বিজয়ের হাসি সাথে ডোডোর আগমন বার্তা । সত্যি যদি গোল্ডেন পিরিয়ড খুঁজতে হয় লাইফ এ তাহলে সেই সময়টা । নিজের অফিস যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন অর্ণব,শুধু মেইল আর টেলিফোনের নির্দেশের ভরসায়। কখনো যেন নেহার একাকীত্ত্ব না লাগতো সেটা দেখাই একমাত্র কাজ ছিল সেইসময় ।অর্ণবের তো তিন কূলে কেউ নেই ,ওর মার পক্ষেও নর্থ বেঙ্গল থেকে চাকরির ছুটি নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না।

ফোনের আওয়াজে চমক ভাঙলো অর্ণবের। ফোনের ঝনঝনানি বাস্তব পটভূমিতে এনে দাঁড় করালো আবার ।ফোন বের করতেই কাস্টমার কেয়ারার নম্বর । এরকম সুন্দর একটা স্মৃতিচারণে বাঁধা পড়তে একরকম বিরক্ত হয়েই কেটে দিলেন ফোনটা। খুব গরম লাগছে। গাড়িটা খুলে গিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসলেন । রিমোট টিপে এ সি টা বাড়িয়ে দিয়ে পাশে রাখা বিসলারির বোতল থেকে ঢকঢক করে খানিকটা জল খেয়ে চোখ বুজলেন হেলান দিয়ে ।

আগে জল কখনো বাইরের থেকে কিনতে দিতো না নেহা , জল আর টিফিন গাড়িতে ঢুকিয়ে দিতো । ডোডো হওয়ার পর থেকে একদম অন্য একটা রূপ ছিল নেহার। নিজের ছোটবেলার পুতুলটাকে মানুষ যেমন আগলে রাখে সেভাবে আগলে রাখতো ডোডোকে । ডোডোর বয়স যখন সাড়ে তিন ,নেহার ইচ্ছে ছিল ওকে ড্যাফোডিল এ ভর্তি করবে। তৎকালীন নামি স্কুল , অনেক হাই ফাই ডোনেশন ।সেটা কোনো ব্যাপার না হলেও কিন্তু অর্ণবের ইচ্ছেটা ছিল একটু অন্যরকম সে চাইতো প্রকৃত শিক্ষাটুকু , মার্জিত ব্যবহারটুকু।

ডিগ্রিটো যতটা কপালে ঠেসে এনেছে হবেই কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত হওয়াটা খুব দরকার তাই মিশনারিজ স্কুল ” ক্রাইস্ট চাইল্ড ” এ ভর্তির সিদ্ধান্ত । ক্লাস ফাইভ অবধি নেহাই দেখাশুনোর দায়িত্বে ছিল, অর্নবও নিশ্চিন্ত, কারণ মা এর শিক্ষার থেকে বড় কিছু হয় না।সিক্সে উঠে থেকে স্কুলে টাইমিংও বেড়ে যায় ডোডোর , সাথে অর্ণবের বিজনেস , আবার একাকিত্ব গ্রাস করতে থাকে নেহাকে । ওর অনুরোধেই ক্লাবের ল্যাপ্স হয়ে যাওয়া কার্ডগুলিও রিনিউ করতে হয়েছিলো। আবার ওর উশৃঙ্গলতার জীবনকে প্রশ্রয় দেওয়া!কিছু বলার ও ছিল না কারণ ততদিনে ডোডোর নমিতা দি এসে হাজির তার দেখাশুনোর জন্য ।

এক শনিবার অর্ণব অফিস না গিয়ে বাড়িতেই ল্যাপটপ বের করে কাজ করছিল আর নেহা বসে ছিল ড্রেসিং টেবিলের সামনে, রেডি হচ্ছিলো মিসেস রেড্ডির কিটি পার্টির জন্য।

তার মধ্যেই ডোডো দৌড়ে এসে ওর মা কে বললো “দেখো মাম্মাম পেনটা , আমি রোহিতের ব্যাগ থেকে এনেছি , ও বলছিলো এটা নাকি ম্যাজিক পেন , লিখলে দারুন সেন্ট বেড়োয় ।” নেহার বেরোবার তাড়া, বা: কি সুন্দর বলে উপেক্ষা করেছিল সাথেও অর্নবও ছিল ল্যাপটপ বন্দি । ওনারা কেউ বুঝতেই পারলেন না সেই দিনটাই ছিল শুধরে নেওয়ার দিন । এরপর মাস ছয়েক পরের ঘটনা , অফিস থেকে ঢুকতেই অর্ণবের কানে এলো নমিতা খুব চিৎকার করছে সমান তালে ডোডোও । যথারিতি নেহা বাড়ি নেই ।জিজ্ঞাসা করতে বললো “ডোডোর ব্যাগে একটা গেমস সিডি পাওয়া গেছে , ওর কোন বন্ধুর বাবা তার জন্মদিনে দিয়েছিলো সে আবার ডোডোকে দেখাবে বলে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলো । ডোডো ওর ব্যাগ থেকে তুলে নিয়ে নিয়েছে ।” অর্ণব জিজ্ঞাসা করতে ডোডো বলেছিলো ” বেশ করেছি , আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের জিনিস আমি আনতেই পারি ।” সেটা শুনে নমিতা এতটাই রেগেছিল যে ওর গায়ে হাত তুলতে গেছিলো তখনই পেছন থেকে নেহার চিৎকার , ঘটনাচক্রে ওই সময়টাই ও ঠিক করেছিল ফিরে আসার জন্যে ।

নমিতার সাথে অর্ণবকেও তুলোধনা করে ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো ।নমিতা কাঁদতে কাঁদতে বললো “দাদাবাবু ডোডোকে নিজের ছেলের মতোই দেখতে গিয়ে অধিকার জন্মে গেছিলো । ও দিনের পর দিন এর ওর জিনিস নিয়ে আসত ব্যাগে করে , আমি না করতাম ।আজ একটা বাচ্চার জন্মদিনে পাওয়া শখের জিনিসটাও নিয়ে আসলো বলে আমি রেগে গেলাম । বৌদি কে জানিয়েছিলাম বৌদি বলেছিলো বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে । দাদাবাবু যারা আজ চুরি ডাকাতি করে তাদের সেটা একদিনে হয়নি ছোট থেকেই এভাবে শুরু হয়েছিল, বাড়ির লোক না ঠিক থাকলে বাচ্চারা বিগড়ে গিয়ে এসব হয়। ” কথা থামতে না থামতেই নেহার ফাইনাল রায় “কাল থেকে নমিতার ছুটি আয়া সেন্টার থেকে অন্য আয়া বলে দিয়েছি ” — হায় রে!, বোকা মেয়েটা বুঝলোই না নমিতার এতে কিছু এলো গেলো না আরো তলিয়ে গেলো ডোডো । নিজের কাজ সামলাবেন নাকি ঘর – ভেবে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যেতে থাকলো অর্ণবের।পরের দিন অফিস ট্যুরটা সেরে এসে ডোডোর স্কুলে গিয়ে কথা বলে আসতে হবে প্রিন্সিপালের সাথে ঠিক করলেন। ওদের চোঁখে এতো বাচ্চার মধ্যে একজনের এই সুক্ষ রোগ গুলো ধরা পড়ার কথাও নয় ।

সোজা গিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে সব স্বীকার করতে হবে এতে কিছু লজ্জার নেই কিন্তু ভবিষ্যৎ খারাপ হলে সারাজীবন তার দায় বয়ে বেড়াতে হবে । তিনদিনের মাথায় ফিরে এসে একটু ফ্রেস হয়ে ডোডোর স্কুলে যাওয়ার কথা নেহাকে নিয়ে, তার আগেই স্কুল থেকে ফোন “মি: সিনহা অনেক্ষন ধরে আপনাকে চেষ্টা করছিলাম , প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি স্কুলে আসবেন, মিসেস: সিনহা কেও নিয়ে আসবেন , খুব এমার্জেন্সি ” রীতিমতো উদ্বেগ ছিল গলায়। স্কুলের সামনে আসতেই চোখে পড়লো অ্যাম্বুলেন্স সাথে পুলিশের ভ্যান । নেহা কাঁদতে শুরু করলো ” ডোডো বেঁচে আছেতো গো ?” উপরে প্রিন্সিপাল রুমেই যেতে উনি একটা সিসি টিভি ফ্রুটেজ দেখিয়েছিলেন , তারপর প্রিন্সিপাল যা বললেন রীতিমতো শিউরে ওঠার বিষয় – আরিয়ান ডোডোর ক্লাস মেট ,সে একটা উডেন পেন্সিল বক্স নিয়ে এসেছিলো ।

ডোডো ওটা লুকিয়ে নিতে গিয়ে আরিয়ান দেখে নেওয়ায় ওদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয় ।ডোডো তখন বক্সটা দিয়ে আরিয়ানের মাথায় আঘাত করে আর ও অজ্ঞান হয়ে যায়।” বক্সটা দিয়ে মাড়ার সময় ডোডোর মুখটা যে কত হিংস্র লাগছিলো তা সিসি টিভি ফ্রুটেজে লক্ষ্য করেছেন অর্ণব । অর্ণব একটু উদ্ধত হয়েই জিজ্ঞাসা করে ফেললেন ” ক্লাস টিচার কি করছিলেন?” ” সরি টু সে যে এক পিরিয়ড থেকে অন্য পিরিয়ড শুরুতে ক্লাসরুম ফাঁকা রাখতেই হয় টিচার চেঞ্জ করার জন্য ” যথেষ্ট রাগত গলায় উত্তর দিয়েছিলেন প্রিন্সিপাল।”ডোডো কোথায় ?” ভয়টুকু স্পষ্ট বোঝা গেলো নেহার গলায়। “নিচে যান যাদবপুর থানার ও সি এসেছেন উনি ডোডোর সাথেই আছেন “।এবার ভয়টা যেন অর্ণবকেও কাঁপিয়ে দিলো । নিচে নামতেই ডোডো অসহায়ভাবে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসেছিল সেদিন!

“কি দাদা হরেন শুনতে পাচ্ছেন না ? সরুন সরুন ছোটাহাতি ঢুকবে ।মল্লিকবাবুর বাড়ির ছাদ ঢালাই ” চোঁখ নাচিয়ে কথা বলছে ড্রাইভার গোছের একজন লোক । গাড়ির হর্ণের শব্দ যেন দুবছর আগের ডোডোর কান্না সাথে মিশে গেছিলো ।” বাস্তবের মাটিতে ধুপ করে এসে পড়লেন যেন। তাড়াতাড়ি করে গাড়ি নিয়ে রওনা দিলেন অর্ণব বাবু । স্মৃতিচারণের এইএক সমস্যা- সময় জ্ঞান থাকে না ! এখনই না স্টার্ট করলে জোঁকা পৌঁছাতে লেট হয়ে যাবে ।

সেদিন ডোডোকে রেখে আসতে হয়েছিল পুলিশ কাস্টডিতে । মি: রাউত , আরিয়ানের বাবা বড় বিজনেসম্যান , নিলামের বিজনেস , অনেক লোকের সাথে ওঠাবসা । বাবার নিলাম ঘর থেকেই সংগৃহীত ছিল হয়ত ভারী কাঠের পেন্সিল বক্সটি যার আঘাতে আরিয়ানের সেদিন প্রাণটুকু ছিল মাত্র । বেশ কিছুদিন আগে অবধিও জানা কথা- কোমা স্টেজ কাটিয়ে উঠলেও স্বাভাবিক জীবনে এখনও ফেরা হয়নি আরিয়ানের। ডক্টরের কথায় আঘাতটা মাথার একদম সেনসেটিভ পয়েন্টে লেগেছিল তাই এই পরিণতি।পাঁচ বছর পুলিশ কাস্টডিতে থাকতে হবে ডোডোকে , এই সাজা মেনে নিতে হয়েছিল বাবা হয়ে । দমদমের সংশোধনাগারে ডোডোকে রেখে বাড়িতে ফিরে সেদিন মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি অর্ণব, গায়ে হাত চলে গেছিলো নেহার । সেও প্রতিবাদ না করে শুধু চোখের জল ফেলে গেছিলো । তিনদিন নিজের ঘর থেকে বের করা যায়নি ,যখন বেরোলো – অন্য রূপের অন্য নেহা!

গাড়ি পৌঁছাতেই ,তড়িঘড়ি করে নেমে দেখলেন সামনের বাগানেই ঘুরে বেড়াচ্ছে নেহা। আমায় দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কাছে যেতেই ছুটে এলো আক্রমণের জন্য । পিছন থেকে ওর এটেন্ডেন্ট ছুটে আসতে থাকে ধরবে বলে, ও যেন আরো হিংস্র হয়ে গেলো ,চোখমুখ থেকে যেন আগুন বেরোচ্ছে ” ছেড়ে দাও , ও আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে ।” টানতে টানতে নিয়ে গেলো এটেন্ডেন্ট । ডক্টরের সাথে কথা বলবো বলে অপেক্ষা করার সময় চোঁখ গেলো একটা ব্যানার এ, স্লোগানটা ভারী অদ্ভুত “মানসিক ভারসাম্য রোগীরা শিশুর মতো ; এদের সরলতা ভগবানের সান্নিধ্য এনে দেয় ; এদের সেবা করে আমরা ভগবান দর্শন করলাম , এদের সুস্থতা আমাদের সার্বিকভাবে কাম্য , সৌজন্যে – জোঁকা মেন্টাল হসপিটাল ।” ডাক্তার এসে বললেন ” হতাশ হবেন না এই রোগে আজ ভালো তো কাল খারাপ , পরের সপ্তাহে এসে দেখবেন হয়তো খুব ভালো আছেন । চিন্তা করবেন না । সাবধানে বাড়ি যান । “

পাশের গির্জায় ঘন্টা বাজিয়ে জানান দিলো ছয়টা বাজে । একবার ঢুকলেন অর্ণব সেই গির্জাতে , ফাদার তার বহুদিনের পরিচিত , যবে থেকে নেহা ভর্তি । বিচলিত এই জীবনে ফাদারের সানিধ্যটুকুই যা ভরসা ! অর্ণব ঢুকে মাথা নিচু করে বসেছিলেন , ফাদার এসে মাথায় হাত রাখতে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না অর্ণব। ফাদারের সামনে জানতে চাইলেন “আচ্ছা আমার জীবন কেন এভাবে শেষ হয়ে গেলো?বউ আজ বদ্ধ উন্মাদ ,ছেলেটা থেকেও যেন নেই! কি দোষ ছিল আমার ফাদার? টাকা রোজগার করে উন্নতি খোঁজা ? বউ বাচ্চাকে ভাল রাখতে চাওয়া?এই চাহিদা টুকুকি দোষের ফাদার? আমিই দোষী, সব দোষ আমার ।” হাঁটু মুড়ে বসে দুবছর ধরে জমিয়ে রাখা কান্নায় ভেসে যেতে থাকলেন অর্ণব।ফাদার তাকে বসিয়ে মাথায় হাত রাখলেন তাঁর সান্ত্বনার ভাষা টুকু শুধু অর্ণব নয় বাস্তবেও অনেককেই আলোড়িত করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস!তার সারাংশটুকু তুলে ধরা হল
যখন গাছটিতে দুটি ফুল জন্মায়!

কোনটা মন্দিরের ঝুড়িতে ঢোকে, কোনটি আবার ঝড়ে পড়ে যায়।
সবই বন্দী এই একই নিয়ম জালে।
পুরো বিশ্ব সংসার যে এই নিয়মেই চলে!
তাও কর্মটুকু সঠিক হওয়া চাই।
জীবনের একমাত্র পাথেয় শুধু মায়ের শিক্ষাটাই।
আর ভাগ্য? তার বিচারেই কেউ আজ খুনী অথবা কেউ নাম কিনছে লিখে গোটা কাব্য।
কেউ আসলে কিছুর জন্য দায়ী হয় না, দায় যদি নিতেই হয় সেটা নেবে খালি ভবিতব্য।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত