সুরূপা আর অবন্তী। দুই সখীর গল্প এইখানে মুদ্রিত হল।
আকাশ জানে আমাদের কথা। বাতাস জানে। না না, আমাদের গল্পগুলো জানে অন্তর্জাল।
আকাশ আর বাতাসের মতই অন্তর্জালকেও ত চোখে দেখা যায়না। সে ঈশ্বরের মত । ভগবানের মত রূপ ধরে, বহুরূপে সম্মুখে তোমার। তাকে দেখা যায়না, তার করুণা শুধু ঝরে ঝরে পড়ে। ফেনা, ফেনা। সার্ফিং। সে শুধু ক্রীড়া, লীলা, বিভূতি দেখায় ।
সে বিভূতি যে কত রকমের! কী করে বলি? কার কাছে কী রূপ ধরে আসে সে তাই বা কে বলতে পারে! কখনো সন্তান, কখনো প্রেমিক, কখনো কাঙালিপনা কখনো ষড়ৈশ্বর্য।
আমি সুরূপা দত্ত। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিএ না-পাওয়া কেরানি। জীবনে দুঃখ ভুলতে ফেসবুক জয়েন করেছি। ফেসবুক না থাকলে করপোরেশনের জলে স্নান করে করে উঠে যাওয়ার পরেও মাথায় যে কটি চুল এখনো অবশিষ্ট আছে সব ছিঁড়ে ফেলতাম।
ফেসবুক আমাকে ভুলিয়েছে আমার মায়ের প্যারালিসিস। আমার বাথরুমের অন্ধকার ঝুলভরা, স্যাঁতলাপড়া কোণ, যেখানে রোজ দুবার ঘড় ঘড় ঘড়াত, ফ্ল্যাশ করে মায়ের মল, আমি জীবনের প্রতি ঘৃণা টের পাই।
সে আরো যে কত কিছু ভোলাল। এই যে পাশেই মাঠে আজ নিয়ে তিনদিন হল বেসুরো হিন্দি গান, দিনে সাতবার কালীকীর্তন, দুবার জনগণমন সহ কালচার হচ্ছে। কী একটা যেন মেলা। মাইকের শব্দ কান ফাটানো। চাঁদা নিয়ে গেছে সেই কবে। খাওয়া দাওয়া হচ্ছে সে টাকায়। তার ভাগ পাইনি, শুধু পচা বিরিয়ানির গন্ধে নাড়িভুড়ি উলটে আসছে, পাশেই ভ্যাটে ফেলেছে খালি খালি সব বিরিয়ানির বাক্স। তবে আওয়াজ আসে। নাটক নাচ গান যা কিছু হয় সবের ভাগ পাই আমরা। এ সব ভুলতে আছে ফেসবুক।
সারারাত মায়ের ব্যথার চিৎকার, কথা না বলতে পারার দুর্বহ রাগের গোঙানি…
মায়ের আয়ার সংগে কাজের মেয়েটার, কাজের মেয়েটার সঙ্গে পাশের বাড়ির কাজের ছেলের তুমুল ঝগড়া। সেসবও ভুলে যাই ফেসবুকের কাছে এলে। অন্তর্জাল আমাকে বুক দিয়ে সামলায়। ক্ষতে চন্দন প্রলেপ দেয়।
আবার নতুন ক্ষতও তৈরি করে। পুরনো ক্ষতর দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।
আমি কি ছাই জানতাম আমার যে রবীন্দ্রসংগীত এত ভাল লাগে, এ ভাললাগা ত শুধু আমার নয়। আরো অনেকের। রবিবাবুর জীবন, ইতিহাস, তার ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ, তা নিয়ে কত গল্প হয়েছে আমাদের গ্রুপে। এসবকে শেয়ারিং বলি আমরা। এই যে ভাল লাগা, এ যেন কেমন, নতুন পারা। অন্যদের সঙ্গে ভাল লাগা ভাগ করে নিতে থাকলাম, আমার পাঁচশো বন্ধুর সঙ্গে। তাদের মধ্যে জনা পঞ্চাশকে বড় জোর আমি চোখে দেখেছি। বাকিরা ত সব অচেনা। তাদের সঙ্গে আজকাল উঠিবসি, ভার্চুয়ালি। আড্ডা দিই।
পাঁচশো থেকে সাতশো। তা থেকে হাজার। আমরা আর কেউ কাউকে চিনি না। সবাই সবাইকে চিনি তবু। হালকা তুলোর মত ভেসে থাকি। ইশ, চমৎকার, দারুণ, আরিব্বাস। বলি। শুনি। পরস্পরকে মনের মালিশ দিই। বাহ, আহ, উলস, তারিয়ে তারিয়ে এইসব আদানপ্রদান করি। এত আনন্দ কোথায় ছিল এতদিন কে জানে রে বাবা!
আমার পুরনো, ইশকুলের কলেজের বন্ধু যারা তাদের একে একে খুঁজে পেয়েছি। শেষ দেখা সেই কত্তোদিন আগে। তারপর দীর্ঘ বিচ্ছেদ। বছর পনেরো কুড়ি পর আবার সবাই এসেছে গুটিগুটি।
মেয়ে বন্ধুরা সবাই যে যার মত। চাকরি নিয়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আর সেই সব ছেলেরা, যাদের দিকে একদা লুকিয়ে তাকাতাম। কত স্মার্ট ছিল। এখন সব মাঝবয়সী। সংসারী, চাকুরিজীবী। সব স্মার্টনেস ওদের এখন ফেসবুকের স্ট্যাটাসে। স্ট্যাটাস থেকে বুঝতে পারি, কারুর বুদ্ধিতে মর্চে পড়েনি আজো। চেহারা একটু টশকে গেছে হয়ত বা। ভুঁড়ি হয়েছে বিকাশের। নীলিমের টাক পড়েছে । পনেরো কুড়ি বছরের তফাতে বৈজয়ন্ত রাগীরাগী হয়ে গেছে । আগে কত হাসত। এখন খালি অভিমানী স্ট্যাটাস দেয়।
আমার এর মধ্যে বিয়ে হয়েছে, বিয়ে ভেঙেও গেছে। প্রথমে রবীন্দ্রসংগীতের গ্রুপে অনেক গান পোস্ট করলাম, গান নিয়ে কথা বললাম, তারপর ধীরে ধীরে দেশপ্রেমের গ্রুপে, পরিবেশ সচেতনদের গ্রুপে, বিয়ে ভাঙাদের গ্রুপে মেম্বার হলাম। ছেলে পটানোর গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে অ্যান্টি ধর্ষক গ্রুপে মেম্বার হলাম। মেম্বার হলাম মেয়েদের দুঃখ বলাবলির গ্রুপে। বললাম আমার স্বামী লোকটা কত খারাপ ছিল। বিয়ে ভাঙার দশ বছর পরে সে কান্না কাঁদলাম আর বন্ধুরা পিঠে হাত বোলাল, সঙ্গে রইল, মনের তাপ কমিয়ে দিল। সাহসী মেয়ে বলল আমায়।
এই পাঁচ-ছ বছরে কত কথা বললাম, বললাম নিজের পটলপোস্ত রান্নার গল্প থেকে মেলায় হার-দুল কেনার গল্প।
ইনবক্সে কত ছেলে সিঙ্গল জেনে প্রেম নিবেদন করল। ছেলে নয়, লোক, কেউ বয়সে আমার দেড় গুণ। কেউ বা হাঁটুর বয়সী। তবু নিলাম, প্রেম নিলাম, ভার্চুয়াল তো। হাসি হাসি ইমোটিকন, হার্ট দপদপানো ইমোটিকন।
আর কত যে ঝগড়া হল। ঝগড়া করলাম। সেইসব ঝগড়ায় ক্ষত হল মনে, তেতো হল মন। রাগ করলাম, ফেসবুক ছেড়ে যাব ভাবলাম। ভাগ্যিস রাগ করে ফেসবুক ছেড়ে দেওয়া যায়। এ সংসার তো ছেড়ে দেওয়া যায়না।
এই তো আবার পাশের মাঠে মিলে সুর মেরা তুমহারা হচ্ছে। সেই ছোট্টবেলার গান। একটু পরেই আবার গজল হবে। তারপর কামনা উদ্দীপক কোন মেয়েরগলার গান। সঙ্গে মেটাল বাজনা। ওই মাঠ থেকে পালাতে পারিনা। বাড়িটাকে আলাদিনের মত তুলে নিয়ে গিয়ে কোন নিরিবিলি গোলাপ বাগানের পাশে ফেলতে পারিনা। তবে, হ্যাঁ, একটা জিনিস পারি। এওসব ভুলতে পারি। ফেসবুক দিয়ে পালিয়ে ওপাশে যেতে পারি। আন্তর্জালের ওপারে।
সাধে কী বলি আন্তর্জাল ভগবান!
আমার এক আমেরিকান বন্ধু হয়েছে। আমেরিকান না ঠিক, আমেরিকায় থাকা বাঙালি মেয়ে। অবন্তী। আমার আর অবন্তীর বয়স কাছাকাছি। আমার আর অবন্তীর রবীন্দ্রসংগীতের পছন্দ খুব মেলে। ফেভারিট শাড়ির রঙগুলোও আমাদের দুজনের কাছাকাছি। একরকমের। দুজনেই সকালে কাপের পর কাপ চা খাই।
তবে ইনবক্সে ও যখন সকালের চায়ের কথা বলে আমি বলি সন্ধের চায়ের কথা। আমরা ত পৃথিবীর দুই প্রান্তে থাকি। একটি দিনের দু প্রান্তের বাসিন্দা আমরা । দুরকম চাকরি করি। অবন্তী পড়ায়। ইউনিভার্সিটিতে। আমার চেয়ে দশগুণ বড়লোক। সর্ব অর্থেই। রোজ ও যা ছবি পোস্ট করে তা থেকেই বোঝা যায়। যেমন চমৎকার ছবির মত বাড়িতে থাকে ডেনভারে। যেমন সব ফুলগাছ ওর, তাতে যেমন সব বড় বড় গোলাপ ফোটে। ওর মা বা দাদা বৌদির ছবি দেয় তাও দারুণ। দেখলেই হিংসে হয়। সবাই কেমন সবসময় হাসছে। অবশ্য যে বাবা মায়ের ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে বছরে একবার, তাও আবার শীতকালে দেখা হয়, তাদের ত মুখে হাসি থাকবেই। আমার মা আমাকে চব্বিশ ঘন্টা দেখে, আমি মাকে দেখি। মা আমায় শাপশাপান্ত করে। আমি খিটখিট করি। আমি অসুখী। ডিএ না-পাওয়া কেরানি। আমি বাসের ভিড় ঠেলে অফিস যাই। বাজার করে ফিরি। রান্নার লোক বেশি তেল-ঘি দিয়ে রান্না করলে আমার মাথা গরম হয়। জীবনের দুঃখ ভুলতে আমি ফেসবুক করি।
অবন্তীর দাদার মেয়ের ছবি দেয় অবন্তী। কত ভাল রেজাল্ট করেছে। অবন্তী নিজের ছেলের ছবিও দেয়। কত ঝকঝকে। আমেরিকায় থাকে। বরের ছবি দেয়না।
নিজের একলা বেতের চেয়ারের ছবি দেয়। সঙ্গে দু তিনটে বাংলা গল্পের বই, এক কাপ কফির ছবি। দেখলেই মনে হয় ছুট্টে গিয়ে ওর পাশে বসে বসে বই পড়ি। কফি খাই।
ইনবক্সে আমাদের ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব ক্রমশ দুধ থেকে ক্ষীর হয়। সুখে দুঃখে, ভাগ বাঁটোয়ারা করতে করতে, আমাদের ঘন দুধে বারবার জ্বাল পড়ে। আমি তো সর্বসমক্ষেই বলেছি আমার বিয়ে ভেঙে গেছে। সেদিন অবন্তী একান্তে, আমাকে নিজের বিয়ে ভাঙার গল্প করে।
ও, আচ্ছা! তাই ও নিজের বরের ছবি দেয়না। ও তাই, ও ও তবে একটু অসুখী। একটু বেশি করে আমারই মতন।
আমি কলকাতার আকাশটাকে আরো নীল দেখি আজ। দেখি চিলের চক্কর কাটা। উত্তর কলকাতার আকাশে যেন হালকাফুলকা মেঘেরা ভেসে ভেসে যাচ্ছে। আমার জীবনটাকে সহনীয় মনে হয়।
রোজ কথা হয়না অবন্তীর সঙ্গে। মাঝে মাঝে হুট করে ইনবক্সে উঁকি দেয়। আমার বিকেলে । ভোরের কফির মাগ হাতে নিয়ে, আমাকে ছুঁয়ে যায়। টুকি! বলে যায়।
সেদিন বলল, ও হো, তোমাকে ত বলাই হয়নি। আমার শরীর ভাল নেই।
কী হয়েছে?
ভার্চুয়াল যেন মেঘ। মেঘের ওপার থেকে মানুষের দুঃখের কথাও তো সত্যি হালকা মনে হয়। মায়ের যে প্যারালিসিস। আমার মায়ের। সে প্যারালিসিস ও হয়ত অবাস্তব মনে হত, যদি ভার্চুয়ালের বিভূতি মেখে আসত!
আমার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়েছে।
কী বলে অবন্তী! আমার হাত অবশ হয়ে যায়। টানা পনের মিনিট আমি উত্তর দিইনা ওর মেসেজের । ভাবি ভুল মেসেজ পড়ছি। ভাবি কী লিখতে কী লিখেছে। তারপর মনে হয় উত্তর দেব না। দেখেছি যে ও বুঝতে পারবে না।
এ মেসেজের কী উত্তর দেব আমি?
হালকা হয়ে অসুখটা উড়ে যাক, ভেবে, চুপ থাকি। ভাবি মেসেজ ডিলিট করে দিলে কেমন হয়? তাহলে ত সত্যটাও ডিলিট হয়ে যাবে।
ছেলেমানুষি করছি।
উত্তরে কী লিখব, হালকা হয়ে যাবে যা লিখব সব । আমরা তো অনেক ইমোটিকন ব্যবহার করি কথা বলতে। ছোট বড় হাসিমুখ। বড় চোখ। হো হো হাসি। কান্নাও আছে। সেও তো, আসলে মজার কান্না।
তা, সেসবে কম পড়ে যায়। ইমোটিকন ত হাসি মজার জন্য তৈরি। এমন ভয়ানক কথা ধারণ করার জন্য তো তৈরি না।
ভেবে টেবে, লিখি ওকে। এ কী শোনালে অবন্তী। তোমার? ক্যান্সার? ঠিক বলছ?
ও অবলীলায় নিজের অসুখের ডিটেলস দেয়। সেও যেন আমেরিকার সবকিছুর মত নির্লিপ্ত। উদাসীন। নিশ্ছিদ্র টেকনোলজির বলয়ে থাকলে বোধ করি মানুষ এমন নির্বেদী, আবেগহীন হয়। প্রসিডিওর হচ্ছে বলে ও। ডাক্তার কী বলেছে। ফুসফুসে জমা জল ট্যাপ করার জন্য ওকে অপারেশন করে একটা পাইপ লাগিয়ে দিয়েছে ডাক্তার। ওকে তাই এখন কেটলির মত দেখতে লাগছে।
ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। ও বলে, ওর টার্মিনাল কেস, তাই সামান্য পেনশন দিয়ে ওর কলেজ অন্য কর্মীকে বহাল করেছে। ওর পড়ানোর চাকরিতে ছুটি হয়ে গেছে। ও বলে, ও এখন ক্যানসার পেশেন্টদের একটা হেল্প গ্রুপে যায় রোজ। সেখানে ওরা গান গায়, নাটক করে, ছবি আঁকে। যারা ক্যানসার পেশেন্ট, হাসপাতাল ডাক্তার যাদের ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে, তারা চাকরিহীন, তারা সবাই ওই সেন্টারে যায়, সময় কাটায়, পরস্পরকে সাহস যোগায়।
অবন্তীর কথা শুনি আর হাত পা হিম হয়ে আসে আমার। প্যারালিসিস মায়ের চিৎকার আর শাপশাপান্ত সহনীয় লাগে। প্রাণের স্পর্শ বলে মনে হয়। আমি অবন্তীকে ভার্চুয়ালি ছুঁই, আর আমার নিজের রক্তকে নিজে যেন চলতে ফিরতে দেখি।
দিনে দিনে মৃত্যুর ছোঁয়ালাগা অবন্তী নিজের অনেক হাসিমুখের ছবি দেয়। নিজের আঁকা ছবি, নিজদের গ্রুপের দারুণ সব কাজকর্মের ছবি দেয়। অসুখের কথা বলে যেন জলভাত। নিজেই ইমোটিকন ব্যবহার করে। হাসিমুখের। নিজের স্ট্যাটাসে লেখেঃ “ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়, হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায় ।…” বুক চেরা ব্যথা। রবীন্দ্রনাথের গানের কলি। এত মানে ধরে সে গানের কলিতে।
মৃত্যু দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত এক দল মানুষ, এক ছাতের তলায় মিলেমিশে কাজ করে চলেছে। সেই কাজের থেকে সামান্য হাওয়া এসে আমার গায়ে লাগে।
আজকাল, আকাশজোড়া গোলাপি মেঘের মত আন্তর্জালটুকুর মধ্যে একটা ছাই রঙ ছোট্ট ঝড়ের পূর্বাভাস …
যেন ডাকঘরের অমল। রাজার চিঠি পেয়ে যাওয়া অমল। যেন মৃত্যু এসে ওর দরজায় কড়া নেড়ে দিয়ে গেছে।
বলছিলাম না, ফেসবুক , আন্তর্জাল, আমাদের ক্ষতও দেয়। এও তো এক ক্ষত।
মধ্যে, এক মাসের জন্য অবন্তীর কোন পোস্ট আর দেখতে পাইনি। অবন্তী চুপ হয়ে গেছে। আমার বুক দুরদুর করে। আমার বুক ছ্যাঁৎছ্যাঁৎ করে।
ইনবক্সে আমি ওকে টোকা দিই। আছ কেমন? আছ কেমন? লিখি দু চার বার। ও উত্তর দেয়না।
তারপর এক দিন। আমার মধ্যরাতে। পিং করে ওঠে ফোন। আমি লাফিয়ে উঠি। যেন জানতাম ও আমাকে পিং করবে এখুনি।
অবন্তী লিখছেঃ ভাল আছি। আমাদের ক্যান্সার সেন্টারের প্রজেক্ট চলছিল। আমরা সবাই মিলে বাড়ির পুরনো টেবিল চেয়ার যতখুশি যেমন খুশি রঙ করলাম। রঙের বাটি উপুড় করে কেউ এঁকেছি রামধনু, কেউ পাখি, কেউ সূর্য, আমি আলপনা দিয়েছি আমার স্টাডি ডেস্কের ওপরে তেলরং দিয়ে। এই দেখ ছবি।
আলপনা টেবিলের ছবি দেখি চোখ বিস্ফারিত করে। ধড়ে প্রাণ এসেছে অবন্তীর ভাল থাকার কথায়। শরীরের কথা জিগ্যেস করলাম। ও বলল, ভাল আছি। ডাক্তাররা অবাক। বলেছে আপনার তো চলে যাবার কথা ছিল গত বছর সেপ্টেম্বরেই।
এই তো ডিসেম্বর এসে গেল। সুরূপা, আমি যে জীবনে এক বছর দু মাস এক্সট্রা বেঁচে নিলাম এ তো তোমাদের ভালবাসার গুণে।
মাঝরাতে এই ভার্চুয়াল বন্ধুর মেসেজ পড়ে আমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে আনন্দের জল। যার কোন ইমোটিকন এখনও হয়না।