জ্যাৎস্না রাতের গল্প

জ্যাৎস্না রাতের গল্প

রাত আনুমানিক ৯টা বাজে। পূর্ণিমা রাত। আমি দাঁড়িয়ে আছি শহরের একটা পার্কের মোটামুটি জনশূণ্য একটা রাস্তার পাশে। পরনে হলুদ পাঞ্জাবী, খালি পা। না, আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। আমি হিমু নই। আমার পাঞ্জাবীর পকেট আছে তবে এই মুহুর্তে পকেটে একটি টাকাও নেই। টানা ২ দফা ছিনতাইকারীর মুখোমুখি হয়ে এখন আমার এই অবস্হা। এসেছিলাম ভালোবাসার মানুষটির সাথে দেখা করতে। প্রথম দফায় সেই আমার সর্বস্ব ছিনতাই করে ভেগেছে। অবশিষ্ট যা ছিল তা ২য় দফায় আসল ছিনতাইকারী লুটে নিয়ে গেছে। আসল আর নকল কী, দুজনেই ছিনতাইকারী।

ঘটনাটার শুরু প্রায় এক মাস আগে। সানজিদা আফজাল মিশি নামের একটা মেয়ের সাথে ফেসবুকে আমার পরিচিতি হয়। মোটামুটি লেখালেখির সুবাধেই পরিচিতি বলা যেতে পারে। প্রথমে বেশ কিছুদিন আমাদের ফেসবুকে চ্যাটিং হয়। আমাদের বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। এরপর আমাদের মোবাইল ফোনে কথা হয় দীর্ঘদিন। মেয়েটার কন্ঠ অসম্ভব মিষ্টি। যেকোনো পুরুষ এই কন্ঠের প্রেমে পড়তে বাধ্য। আমিও পড়লাম। মেয়েটা মাঝেমধ্যে আমাকে নিজের কন্ঠে গান রেকর্ড করে পাঠাতো। তার গান শুনতে শুনতেই রোজ নিদ্রায় যেতাম। আমার ফেসবুক প্রোফাইলে আমার কিছু ছবি দেওয়া আছে। সেই সুবাধে মেয়েটার কাছে আমার চেহারা পরিচিত। কিন্তু মেয়েটার প্রোফাইলে তার কোনো ছবি দেওয়া নেই। প্রোফাইল ছবিতে একটা বিড়ালের ছবি দেওয়া। কভার ছবিতে আরেকটা বিড়ালের ছবি। মেয়েটা যে বিড়াল পছন্দ করে এটা আমি জানি। তার একটা পোষা বিড়াল আছে নাম দসু। অদ্ভুত নাম। আমার নাম উল্টো করে লিখলে হয় দসুমা। মা টা বাদ দিয়ে নাম দিয়েছে দসু।

যাই হোক এইভাবে বেশ ভালোই দিন কাঁটছিল আমাদের। আজ খুব ভোরেই মেয়েটা হঠাৎ আমাকে কল দিলো। কল ধরতেই ওপাশ থেকে:

-হ্যালো, মাসুদ।
-হুম, মিশি।
-তোমাকে না কতবার বলছি আমাকে মিশি বলবা না! আমার ডাক নাম মাইশি। ন’ট মিশি।
-আচ্ছা যাও মিশি। এতো সকাল সকাল কল দিলা কেন?
-আবার মিশি! আচ্ছা বাদ দেই। তোমার কী কোনো হলুদ পাঞ্জাবী আছে?
-না। কেন?
-তাহলে আজকেই একটা হলুদ পাঞ্জাবী কিনবা আর ৮টার মধ্যে আমার লেখা ঠিকানায় চলে আসবা।
-এখন বাজে ৭টা। ৮টার মধ্যে কীভাবে আসব?
-গাধা! রাত ৮টা।
-কেন আসবো?
-আমার মাথা !
-ওকে। তার মানে অবেশেষে আমাদের দেখা হচ্ছে।
-আমি পড়ে আসব একটা নীল শাড়ী।
-আচ্ছা।
-আর শুনো . . . . .

মেয়েটার সাথে কথা বলার পরেই বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। ভালোবাসার মানুষটির সাথে প্রথম দেখা। ভেতরে ভেতরে বেশ উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। দুপুরে একটা হলুদ পাঞ্জাবী কিনলাম। মেয়েটার জন্য একটা ঘড়িও কিনলাম। শুনেছিলাম প্রথম দেখায় গিফট দেওয়াটা নাকি অনেক গুরুত্বপুর্ণ। এটা একটা মেয়ে সারাজীবন মনে রাখে।

রাত ৮টার দিকেই মিশির দেওয়া ঠিকানায় পৌছে গেলাম। শহরের একটা পার্কে। পৌঁছে মিশিকে কয়েকবার কলও দিলাম। কল ধরল না সে। অবশ্য পূর্ণিমার কড়া জ্যাৎস্নার নিচে দাঁড়িয়ে কারো জন্যে অপেক্ষা করাটা মোটেও বিরক্তির নয়। মেয়েটার প্রতি ভালোবাসা আরও তীব্র হচ্ছিল। পার্কের আশেপাশে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা জুগলদের পাশাপাশি হাতে হাত রেখে হাঁটতে দেখে আপন মনেই এক অদ্ভুত শিহরণ জাগছিল।

কথায় আছে ভালোবাসা অনুভব করা যায়। আমার থেকে কিছুটা দূরেই একজন অপ্সরী দাঁড়িয়ে ছিল। টানাটানা চোখ। কী অদ্ভুত তার চাহনী। এইরকম মায়াবী মুখ এর আগে আমি কখনই দেখিনি। চাঁদের সবটা আলো এসে পড়েছে মেয়েটার মুখটায়। আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার উপস্হিতী অনুভব করতে পারছিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম এটাই মিশি। তবে কিছুটা থমকে গেলাম এটা দেখে যে মেয়েটার পরনে হালকা সবুজ রঙের একটা শাড়ী। তারতো নীল শাড়ী পরে আসার কথা ছিল। তাহলে সবুজ শাড়ী পরল কেন? মেয়েটা নীল শাড়ীর পরিবর্তে সবুজ শাড়ী কেন পড়ে এসেছে এটা মনে মনে ধারণা করতেই নিজের মনেই হেসে উঠলাম। ভাবলাম মেয়েটা ইচ্ছা করেই নীলের পরিবর্তে সবুজ শাড়ী পরে এসেছে আমাকে বিভ্রান্ত করতে।

মেয়েটা হয়তো আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিল যে, প্রথমে পার্কে এসে আমাকে সামনাসামনি ভালোমতো দেখবে। যদি আমাকে বেশি ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগে। মানে আমার চেহারা তার অপছন্দ হয়। তাহলে আর আমার সাথে দেখা করবে না। আমি যদি তার হাত ধরেও বলি, কেমন আছো মিশি? সে আমাকে না চেনার অভিনয় করে বলবে, কে আপনি! আমিতো আপনাকে চিনি না। স্টুপিড। আর যদি পছন্দ হয় তাহলে কাছে এসে মিষ্টি কন্ঠে বলবে, কেমন আছো মাসুদ? আর বলোনা। নীল শাড়ীটা ইস্ত্রী করতে গিয়ে শাড়িটা পুড়িয়ে ফেলেছি। তাই এই সবুজ শাড়ী। নিজের যুক্তি শুনে নিজেই বেশ মজা পেলাম। ভাবলাম মেয়েটা আমার কাছে আসার আগে আমিই মেয়েটার কাছে গিয়ে তাকে চমকে দেই। মেয়েটাতো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আমি দ্রুত মেয়েটার সামনে ছুটে গিয়ে দাঁড়ালাম। তার চোখে চোখ রাখলাম। এতো মায়াবী চোখ আমি এর আগে কখনই দেখিনি। সুন্দর করে মেয়েটাকে বললাম, কী ব্যাপার! এতক্ষণ দেরী করলে কেন? কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আর নীল শাড়ী না পরে সবুজ শাড়ী পড়েছ কেন? মেয়েটা অর্থাৎ মিশি কিছুটা হকচকিয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলতে লাগল, হুঁ। জ্যাম ছিল। আর ইস্ত্রী করতে গিয়ে নীল শাড়িটা পুড়ে গেছে তাই এই শাড়িটা পড়ে এসেছি। আমি তার কথা শুনে মুচকি হাসলাম। আমি ভেবেছিলাম মিশি আমাকে দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে যাবে। এখন দেখি দুইখানাও হলো না। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে কোনো কারণে অস্বস্তিবোধ করছে। আমি আবার তাকে বললাম, অস্বস্তিবোধ করছ নাকি? তোমার খারাপ লাগলে বলো আমি চলে যাই। এবার মিশি মুচকি হাসলো। আমি এতো মিষ্টি হাসি এর আগে কোনোদিন দেখিনি। মিশিকে এখন স্বাভাবিক লাগছে। মিশি এবার হাসতে হাসতে আমাকে বলল, আচ্ছা আগে তোমার ইন্টারভিউ নেই। দেখি তুমি আমার সম্পর্কে কী কী জানো। আমাদের সম্পর্কের কতটুকু তোমার মনে আছে!

আমি বুঝতে পারলাম মিশি আমাকে বাজিয়ে নিচ্ছে। তার সম্পর্কে আমি কী কী জানি তা জানতে চাচ্ছে। সে জানতে চাচ্ছে আমি তাকে কতোটা বুঝি! এছাড়াও সে নিশ্চিত হতে চাচ্ছে আমিই মাসুদ কিনা। অবশ্য এটা যৌক্তিক। কারণ আমার প্রফাইলের ছবি বেশ পুরোনো। চেহারার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে।

আমার আর মিশির এতোদিনের সব কথাগুলো মিশিকেই বলছিলাম। তার প্রতি আমার এক ফোটা অভিমান থেকে শুরু করে এক আকাশ ভালোবাসার সব কথাই তাকে একটানা বলে গেলাম। সে যাতে বুঝতে পারে তার কিছুই আমার জন্য ফেলনা না। তার অভিমান থেকে শুরু করে ভালোবাসা সবই আমি যত্ন সহকারে রেখে দেই। মিশি মুগ্ধ হয়ে আমার কথা শুনছে। আমি আরও উৎসাহ নিয়ে আমাদের সম্পর্কের নাড়ি নক্ষত্র তাকে বলছিলাম। সে যা জানে এবং না জানে সব। সে আরো মুগ্ধ হচ্ছিল। এইরকম মুগ্ধ মুখ আমি এর আগে কখনই দেখিনি।

আমার সব কথা শুনা শেষে মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠল। বুঝতে পারলাম সে মুগ্ধ হয়েছে। মিশি আমাকে বলল, চল, ঐ ঝোপের দিকটায় যাই। আমি আমতা আমতা করে উত্তর দিলাম, ঐদিকে কেন? সে লজ্জাভর্তি মুখে বলল, ঐখান থেকে সুন্দর করে বসে চাঁদের আলো দেখব। জায়গাটা ভালো। আমরা দুজন হেঁটে হেঁটে ঝোপের দিকে যাচ্ছিলাম। পকেট থেকে তার জন্য আনা ঘড়িটা বের করে হাঁটতে হাঁটতেই তাকে পরিয়ে দিলাম। সে খুশি হলো। আমরা পাশাপাশি হাঁটছিলাম। আমার হাত আর তার হাত অনেক কাছে। ইচ্ছা করছিল তার হাত ধরে হাঁটি। কিন্তু সাহস হলো না ঝোপের কাছে আসতেই মিশিই আমার হাতের আঙুলের ভেতর তার হাতের আঙুলগুলো ঢুকিয়ে একটা বন্ধন তৈরি করল। আমরা হাঁটছি। হাতে হাত রেখে হাঁটছি। ঝোপের পেছনে যেতেই হঠাৎ মিশি আমার হাতটা এতো জোরে চেপে ধরল যে অল্পের জন্য হাতের রেডিও আর আলনা হাড় ভাঙেনি। আমি ব্যথায়, অমাগো বলে চিৎকার দিলাম।

সে কৌশলে আমার একটা হাত ঘুরিয়ে আমার পিঠের সাথে চেপে ধরল। আমি কিছু বোঝার আগেই ঝোপের ভেতর থেকে আরও ২টা লোক বেরিয়ে এলো। একজন আমার আরেকটা হাত ঘুরিয়ে পিঠের সাথে চেপে ধরল। আরেকটা লোক আমার মুখ চেপে ধরল। মুহুর্তেই মেয়েটার সুন্দর চাহনি, মিষ্টি হাসি শুন্যে মিলিয়ে গেল। রাগিরাগি মুখ করে আমাকে বলল, শালা! সাথে আর কী কী আছে। বাহির কর। বকর বকর করতে করতে আমার কানটা পচাঁইয়া ফেলছিস। আইছে আমার নাগর। প্রেমের আলাপ পাড়তে। আমি পুরাই হকচকিয়ে গেলাম মেয়েটার কথা শুনে। আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছিল। আমি মুখটা ছাড়িয়ে মেয়েটাকে বললাম, মিশি! এসব কী বলছ! এর মানে কী? সে আরো রেগে বলল, রাখ তোর মিশি! ফেসবুকে প্রেমের ফল বুঝ এখন। ওহ তোর হাততো বাধা। তুই জিনিস বাহির করবি কেমনে! দাড়া আমিই কষ্ট কইরা নেই।

এই বলেই সে আমায় নিস্ব করে দিল। মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, আমার হাতের ঘড়ি সব নিয়ে গেল। আমি আমতা আমতা করে বললাম, দেখ মিশি, আমার কাছে সাভার যাওয়ার গাড়ি ভাড়া নেই। এতোদুর যাবো কী করে? আমাকে অন্তত গাড়ি ভাড়াটা দাও। তার দয়া হলো। আমাকে পঞ্চাশ টাকা দিল। এরপরেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঝোপে ফেলে দিল। ঝোপ থেকে উঠতে উঠতে তারা পগারপাড়। ঝোপের ভিতর আমার জুতো জোড়া আটকে গেল। কিছুতেই উদ্ধার করতে পারলাম না। কথায় আছে কোটি টাকার লটারী জিতার পরও ২৫লাখ টাকা ট্যাক্স কেটে রাখে। আর বিপদ আসে বোনাসের সাথে। খালিপায়ে কিছুদুর এগোতেই ছুরি হাতে আরেক ছিনতাইকারী ভদ্রলোক এসে আমার শেষ সম্বল ৫০টা টাকা নিয়ে কেটে পড়েছে।

এই হলো গিয়ে আমার ঘটনা। এরপর থেকে খালিপায়ে শুন্য পকেটে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ফেসবুকে প্রেম করার ফল ভুগছি। মেয়ে মানেই ছলনাময়ী। আমার ভালোবাসার মূল্য তাদের কাছে নেই।

পূর্ণিমার রাতে হলুদ পাঞ্জাবী, খালি পা আর শুন্য পকেটে দাঁড়িয়ে আছি অনেক্ষণ ধরে। নিজেকে হিমু হিমু লাগছে। হিমু প্রেমি কোনো মেয়ে আমাকে এই অবস্হায় দেখে হয়তো প্রেমে পড়ে যেত।

দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ লক্ষ করলাম রাস্তার ওপাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিক যেন স্বর্গের অপ্সরী। এতো সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। চাঁদের সবটা আলো যেন এসে পড়ছে মেয়েটার মুখে। মেয়েটার পরনে একটা নীল শাড়ী। মেয়েটা মুগ্ধ বা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে। মেয়েটা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। কী মায়াবী তার মুখ। সে তার চোখ আমার চোখে রাখল।

এতো সুন্দর চোখ আমি এর আগে কখনই দেখিনি। মেয়েটা বিস্মিত দৃষ্টিতে আমাকে লক্ষ করছে। এরপর মেয়েটা যা বলল, তা শুনে আমি বেশ হকচকিয়ে গেলাম। মেয়েটা আমার দিকে কিছুটা বিরক্তিময় কন্ঠে বলল, এই যে মিস্টার! তোমাকে হলুদ পাঞ্জাবী পরে আসতে বলেছিলাম। হিমু সেজে আসতে বলিনি। খালি পা, এলেমেলো চুল। বিষয়টা কী? আমি হতভম্ভ হয়ে গেলাম মেয়েটার কথা শুনে। তার কথার মানে কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে এতো সুন্দর করে বিরক্ত হতেও আমি এর আগে কাউকেই দেখিনি। আমি কিছুটা চমকে বললাম, আপনি কে? মেয়েটা বেশ রেগে বলল, মজা নিচ্ছ? আমি মাইশি। জ্যামের জন্য একটু দেরি হয়েছে। তোমাকে কতবার কল করলাম। মোবাইল বন্ধ কেন? এই কথা শোনার পর আমার মাথা পুরোই আউলা হয়ে গেল।

মেয়েটার মোবাইলে দেখলাম আমার নাম্বার সেভ করা। তার মানে এই মেয়েটাই মিশি। তাহলে একটু আগে যে মেয়েটা আমাকে নিয়ে ঝোপে গেল সে কে? সে আমার সম্পর্কে জানল কিভাবে? আমি রাস্তাতেই বসে পড়লাম। মিশি কিছুই বুঝছে না। সে বড়বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কথায় আছে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। এবার নিজের বোকামির কথা ভেবে নিজেরই হাসি পাচ্ছে। আসলে ঐ সবুজ শাড়ী পরা মেয়েটাতো আমার সম্পর্কে কিছুই জানতো না। আমিইতো নিজের অতিরিক্ত কনফিডেন্টের কারণে মেয়েটার কাছে গিয়ে নিজের আর মিশির সব কথা বলে দিয়েছি। মেয়েটা হয়তো প্রফেশনাল ছিনতাইকারী। মানুষকে ফাঁদে ফেলতে পার্কে এতোটা সেজে ঘুড়ে বেড়ায়। মেয়েটা হয়তো আজও অন্য কাউকে ফাঁদে ফেলত। কিন্তু আমি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারলাম। নিজেই গিয়ে তার ফাঁদে পা দিয়ে নিজের সর্বস্ব হারালাম।

নিজের বোকামির কথা ভেবে নিজেই হাসতে লাগলাম। একে বলে পাগলা হাসি বা পাগলের মতো হাসি। আমার এই অদ্ভুত আচরণ দেখে চক্রবৃদ্ধি হারে মিশির চোখের বিস্ময় বাড়ছে। বিস্মিত অবস্থায় তাকে বেশ সুন্দর লাগছে। তার বিস্ময় কিছুটা কমাতে আমি তাকে আমার বোকামির পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। এবার তার হাসি আর দেখে কে। খিলখিল করে হেসেই চলেছে। হাসিরত অবস্হায় তাকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। তার সৌন্দর্য্যও চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। আমি হাসি থামালাম। কিন্তু মিশি কিছুতেই তার হাসি থামাতে পারছে না। সে হেসেই চলেছে। দীর্ঘক্ষণ হাসির কোনো প্রতিযোগিতা হলে সেই নিঃস্বন্দেহে প্রথম হবে। অনেক কষ্টে সে হাসি থামালো আর বলল, ভালোই হয়েছে। আমাদের প্রথম দেখার গল্প লোকজনদের বলে বেড়ানো যাবে। হিহিহি। এবার উঠো হিমু হয়েই আমার সাথে হাঁটো। এটা বলে আবার সে হাসতে লাগল। কী সুন্দর তার হাসি!

জ্যাৎস্না রাত। আমি আর মিশি পাশাপাশি হাঁটছি। আমরা জ্যেঁৎস্না স্নান করছি। আমি সাহস করে তার হাতের আঙুলের সাথে আমার হাতের আঙুল মিশিয়ে একটা বন্ধন তৈরি করলাম। আমরা এখন হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হাঁটছি ঝোপের বীপরীত দিকের রাস্তা ধরে। চাঁদের সবটা আলো এসে পড়ছে মিশির মুখে। লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে গেছে। কী মায়াবতী লাগছে তাকে! আচ্ছা আমি যে মেয়েকে দেখি তাকেই কী মায়াবতী লাগে, নাকি পৃথিবীর সব মেয়েরাই মায়াবতী!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত