কর্মফল

কর্মফল

মেডিক্যাল ক্যাম্প করে ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম। হঠাৎ পতিতালয়ের সামনে গাড়িটা এসে নষ্ট হয়ে যায়।মনে মনে ভাবছি আর কোন জায়গা ছিলো না এখানে এসেই নষ্ট হতে হয়। পতিতালয়ের সাথেই একটা চায়ের দোকান। দোকানে বসে চা খাচ্ছি, গেট থেকে পতিতা’রা ডাকছে, ” আসেন আজকের রাতটা সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিবো, আরেকজন পাশ থেকে বলছে একদম লেটেস্ট আছে চলবে?, ঠিক, মায়া পরীর মতো”। আমি নির্বাক শ্রোতার মতো চেয়ে আছি, আর ভাবছি পৃথিবীটা সত্যই অদ্ভূত। হঠাৎ ঝুম করে বৃষ্টি নামলো! পতিতা’রা কয়েকজন দোকানে আসছিল তারাঁ চলে যাচ্ছে।

হঠাৎ হাত থেকে চায়ের কাপটা কাঁপতে কাঁপতে পড়ে গেলো। এতবছর পর পতিতালয়ে আনহাকে দেখবো ভাবতে পারিনি।আজ থেকে চার বছর আগে ভার্সিটিতে এমনই এক বৃষ্টিভেজা রোমান্টিক মূহুর্তে কালো পাড়ের নীল শাড়িতে প্রথম দেখি, ঠিক চার বছর পর আজ তেমনি এক বৃষ্টিভেঁজা রাতে পতিতালয়ে দেখবো ভাবতে পারিনি। বুকের ভেতর চিন-চিনে ব্যাথা করছে। এখনও বৃষ্টি পড়ছে, আর পতিতালয়ের জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে আনহা। সে মায়া ভরা দৃষ্টিটা মনে হচ্ছে সেই আগের মতোই আছে। “আচ্ছা রাজ আমাদের বিয়ের পর মেয়ে হলে নাম রাখবো রাইসা”। ভার্সিটির সেই বটগাছটার নিচে আনহার এমন কথা শুনে হেসে দিয়েছিলাম।

চার বছর আগে যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম সে আজ পতিতালয়ে। এখনো পতিতালয়ের জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে আনহা।  রাজ বিয়ের পরও কী আমার জন্য, তোমার এমন ভালোবাসা থাকবে?”আমার হাত ধরে মাঝরাতেও বৃষ্টিতে ভিঁজবে আমি যদি চায়?”। আনহার সে কথাটা মনে পড়তেই চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়লো। “মামা আরেক কাপ দিবো” দোকানদারের কথায় বান্তবে ফিরলাম। মাথাটা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিলাম।হঠাৎ পাশে তাকাতেই একটা শর্ক খেলাম। একটা মেয়ে আমার মাথার উপর ছাতা ধরে আছে।দেখে মনে হচ্ছে পতিতা।নিজের কাছে ঘৃর্ণা লাগছে।বৃষ্টিতে ভিঁজবো তবুও আপসোস নেই। তাই বলে একটা পতিতার ছাতার নিচে? দোকানদারকে বিলটা দিয়ে, ছাতার নিচে থেকে যখনই বের হতে যাবো তখনি মেয়েটা হাতটা ধরে ফেলল।

বৃষ্টিতে ভিঁজে যাচ্ছিলেন তাই ছাতাটা ধরলাম। আচ্ছা সরি আমার অপবিএ হাত দিয়ে আপনাকে স্পর্শ করার জন্য। তবে জানেন কী আমাদেরও মন আছে। সরি ভুল বলে, ফেললাম পতিতাদের মন বলতে কিছু নেই তাদের কাছে টাকায় সব। আর হ্যাঁ বাহিরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে যদি চান আমাদের পতিতালয়ে যেতে পারেন,ভয় পাবেন না! ( মেয়েটা) মেয়েটার কথা শুনে, মেয়েটার মুখের দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে বয়স ১৮ – ২০ হবে। অনেক মায়া আছে মেয়েটার মুখে। কোন সংকোচ না করে, পতিতালয়ে ডুকে গেলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি, একেকজন খুব সুন্দর করে বসে আছে। কিছু বয়স্ক লোকও দেখছি মেয়ের বয়সী মেয়েদের নিয়ে রুমে ডুকছে। নিজের কাছে অপরাধ বোধ হচ্ছে।

হঠাৎ বৃষ্টিতে কাক ভেঁজা হয়ে একটা ছেলে এসে পতিতালয়ের সর্দারনি বলতে লাগল” দিদি,আপনাদের এখানে নাকি একটা নতুন মাল আসছে খুবই সেক্সি।রেট কতো আর পরীটার রেড কতো?” ছেলেটার কথায় ভ্রু- কুঁচকে তাকালাম ছেলেটার দিকে। বয়স ১৫ হয় কিনা সন্দেহ, আর পতিতালয়ে এসে, নতুন পাখির খুঁজ করছে। মেয়েটার নাম হলো “আনহা” নতুন রেড বেশি পড়বে।একদম ডানাকাটা পড়ি। একরাতের জন্য দু’হাজার টাকা লাগবে। ( সর্দারনি) সর্দারনির মুখে আনহা নামটা শুনে বুকটা কেমন করে ছ্যাঁত করে ওঠলো।শরীরের লোস গুলো দাঁড়িয়ে গেল। নিজের অজান্তেই খুব কষ্ট হচ্ছে, ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে আজ দর কষাকষি হচ্ছে ভেবে।

ছেলেটা দু’হাজার টাকার কথা ভেবে, কেমন যেন মাথাটা নিচু করে ফেলল। আচ্ছা দিদি আজ বাজেট কম, এই নেও ১০০০ টাকা আজ মায়ার সাথেই রাতটা কাটাতে হবে। সর্দারনি মায়া বলে ডাক দিতেই দেখি,সেই মেয়েটা। যে মেয়েটা বৃষ্টির সময় মাথায় ছাতা ধরেছিল। “দিদি আমাকে ডেকেছেন( মায়া) মায়া এই তোর কাস্টমার আজ রাতে এর সাথে তোর থাকতে হবে।এখন যা বাবুটাকে আদর যত্ন কর। এদিকে মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে আছে। চোখ থেকে পানি পড়বে পড়বে ভাব। হঠাৎ ছেলেটা মায়াকে নিয়ে রুমে চলে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, রাত ৯ টা বাজে।

এই যে মিঃ বসে থাকলে চলবে, কাউকে কী পছন্দ হয়?লেটেস্ট একটা আসছে নাম আনহা যাবে নাকী?( সর্দারনি) মাথাটা নাঁড়িয়ে ১০০০ টাকা দিয়ে আজকের রাতের জন্য কন্টাক্ট করলাম। আনহার রুমটা দেখিয়ে দিল টাকাটা নিয়ে। আস্তে আস্তে রুমটার দিকে যতই যাচ্ছি ততই বুকের চিনচিনে ব্যাথাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রুমে ডুকেই দেখি, এখনও আনহা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষ তাঁর রুমে এসেছে সে এখনো কিছু টের পায়নি। আমি ভাবছি আনহাকে আমার মুখ দেখানো ঠিক হবে কী? নাহ্ মুখ দেখাবো না তাই, বিছানায় পড়ে থাকা একটা উড়না নিয়ে মুখটা পেঁচিয়ে নিলাম।

হালকা কাশি দিতেই ফিরে তাকালো! কেমন জানি অসহায়রের দৃষ্টি নিয়ে একবার আমার দিকে তাকালো। কাছে এসে বলতে লাগল” কী রকম ভাবে করতে চান বলুন আমি সেভাবে করার চেষ্টা করবো”! আনহার কথাগুলো মনে হচ্ছে কলিজাতে এসে লাগছে। সত্যিই কি পতিতারা এমন হয়। খুব সুন্দর করে সেজেছে। কি হলো কিছু বলছেন না যে, আসছেন যে কাজে সে কাজ করেন এভাবে তাকিয়ে খাকতে হবে না। এই বলে কাপড় খুলতে লাগলো। আমি ইশারায় বোঝালাম আপনি নয় আমি খুলবো।

আনহা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল। আনহার কাছে গিয়ে উড়নাটা সরিয়ে ফেললাম। আনহা চোখ বন্ধ করে আছে। আস্তে আস্তে জামাটা খুলতে গিয়েও খুললাম না। আনহাকে কুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। আনহা চোখ বুজে আছে। আনহা আপনি একটু মায়াবি দৃষ্টি দিয়ে তাকাবেন আমার দিকে। হঠাৎ আনহা আমার কন্ঠ শুনে মিটিমিটি নয়নে তাকালো। মুখে পেঁচানো উড়নাটা খুলে ফেললাম। আনহার বুকের ওপর থেকে সরে দাঁড়িয়ে গেলাম।

আনহার চোখে পানি, আমি বের হয়ে আসছি জানি আমি এখানে আর এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না। রুম থেকে যখনি বের হব তখনি কে যেন পিছন থেকে দু’পা ঝাপটে ধরেছে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি আনহা। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। জানি না এটা কী ভালবাসা না অন্য কিছু? রাজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি। সেই জন্যই আজ আমার ঠাঁয় নিষিদ্ধ পল্লীতে।

ক্ষমা আপনি চাইতেছেন আমার কাছে একটা ক্ষ্যাত মার্কা ছেলের কাছে ক্ষমা করা মহৎ গুণ তাই সেদিনই ক্ষমা করে দিয়েছি। কথাটা বলে বের হয়ে গেলাম।পিছন দিকে তাকানোর অধিকার আমার নেই, জানি আনহা এখন কাঁদবে খুব করে কাঁদবে।তাতে আমার কিছু করার নেই। পরের দিন বাসায় এসে শুয়ে পড়লাম। শুনলাম মা নাকী মেয়ে পছন্দ করেছে। মেয়ে কুরআনের হাফেয কাল দেখতে যাবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত