ক্লাস এইটে পড়তাম। লাইফটা ভাল মতই যাচ্ছিল ।
 কিন্তু ফ্যাকড়া বাঁধালো পাশের বাসার নতুন মেয়েটা । দিনরাত খালি পড়াশোনা করে । আর এই পড়ালেখা দেখে আম্মা আমার উপরে চোটপাট করে ।
 – দেখ দেখ মেয়েটা কত পড়তেসে !
 আর তুই সারাদিন খালি গেম গেম আর আড্ডা । মেয়েটাকে দেখে কিছু শিখ ।
 – জি আম্মা , আমি শিখছি ।
 – এখনই পড়তে বস ।
 এই হল সমস্যা । আম্মা ৯৯% ওকে । শুধু মেয়েটাকে পড়তে দেখলেই আম্মা আমার উপর তেড়ে আসে ।
 পরের দিন স্কুলে আমার বন্ধু হাসানকে ঐ মেয়েটার কথা বললাম। হাসান বলল,
 – মামা তুমিতো ফাইসা গেসো!
 – কি করব সেটা বল ।
 – মাইয়ার বাসায় যা । একটা ধমক দিয়ে চলে আয় । যেই কথা সেই কাজ । এখন ওর বাসায় কিভাবে যাব সেটাই ভাবছি ।
 কিন্তু আমার কিছু করা লাগলো না ।
 একদিন আম্মা বলল,
 – চল রিয়াদের বাসায় নিয়ে যাব তোকে ।
 – রিয়া কে ?
 – আরে পাশের বাসার মেয়েটা ।
 সামনে তোর টার্ম পরীক্ষা । মেয়ে কি ভাবে পড়ে সেটা তোর দেখা লাগবে তো ।
 আমি কিছু বললাম না ।
 বিকালে খেলা বাদ দিয়ে আমি আর
 আম্মু ওর বাসায় গেলাম ।
 কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর রিয়া আসল।
 – স্লামালিকুম আন্টি । ভাল আছেন?
 এহ আইসে! মনে হচ্ছে আমরা পাত্রী দেখতে এসছি।
 অবশ্য দূর থেকে মাইয়া দেখতে যত
 সুন্দরী, কাছ থেকেও তার চেয়ে বেশি
 সুন্দরী !
 – ওয়ালাইকুমসালাম । কেমন আছ মামণি?
 – ভাল আন্টি । আপনি কেমন আছেন?
 – এইতো ভাল আছি ।
 তোমাকে তো সারাদিন পড়তেই দেখি ।
 এখন তোমার সময় নষ্ট করছি নাতো?
 – না না আন্টি অসুবিধা নেই ।
 – এইটা আমার ছেলে ডালিম ।
 জানো ও একটুও পড়ে না । তাই তোমার
 কাছে নিয়ে এলাম ।
 এইবার রিয়ার আম্মা বলল,
 – যাও মা ডালিমকে তোমার রুমে নিয়ে যাও ।
 এরপর আমি রিয়ার পিছু পিছু রিয়ার
 রুমে গেলাম । কিছুক্ষণ চুপচাপ । তারপর
 আমি নিজেই শুরু করলাম ।
 – এই মেয়ে তুমি এত পড় কেন?
 একথা শুনে মেয়ে আমার দিকে চোখ
 বড় বড় করে তাকালো । আমি বললাম,
 – শোন পড়বা ঠিক আছে । জানালা
 লাগিয়ে পর্দা নামিয়ে পড়বা! ঐ যে
 দেখ জানালা দিয়ে আমাদের
 বারান্দা দেখা যায় ।
 – দেখা গেলে সমস্যা কি?
 – ইস তুমি বুঝ না কেন?
 আম্মা তোমার পড়াশোনা দেখলে
 আমার উপর চোটপাট করে ।
 – হিহি ঠিকই আছে । এখন পড়াশোনা
 না করলে কখন?
 – হুম সেটাই । তোমার নাম কি যেন?
 – রিয়া ।
 – আমি তোমাকে ব্যাকটেরিয়া বলে ডাকব !
 – কিইই? কেন কেন?
 – সেটা আমার ইচ্ছা । I like ব্যাকটেরিয়া !
 – ছি ! এইটা কোন নাম হল?
 না না তুমি এই নামে ডাকবা না আমাকে ।
 – উহু ডাকব ! ব্যাকটেরিয়া ব্যাকটেরিয়া ।
 – চুপ গাধা । আমি কিন্তু আম্মুকে বলে
 দিব ।
 এভাবে ঝগড়া দিয়েই আমাদের
 শত্রুত্বের শুরু । মানে দুজন দুজনকে
 দেখলে বিরক্ত হতাম ।
 একদিন রিকশা করে স্কুলে যাচ্ছি ।
 রিয়া ওর বাসার গেটের কাছে
 দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছে ।
 আমি রিকশা থামিয়ে বললাম,
 – কি গো ব্যাকটেরিয়া রিকশা পাচ্ছ না?
 – এই দেখ রাস্তাঘাটে আমাকে এই নামে ডাকবা না ।
 – আচ্ছা এখন উঠ । স্কুলে দেরি হয়েনযাচ্ছে ।
 পরে আবার স্কুলে মার খেতে হবে ।
 রিয়া রিকশায় উঠে বসল । আমার
 আসল উদ্দেশ্য ছিল ভাড়া বাঁচানো । হেহে!!
 রিকশায় দুজন । একটু পর পাশে তাকিয়ে
 দেখি হাসান সাইকেল নিয়ে
 আমাদের পাশে এসে আস্তে আস্তে
 সাইকেল চালাচ্ছে । এই যা মাইরালাইসে ।
 এখন কি করব? আমি মুখ ঢাকার চেষ্টা
 করলাম । কিন্তু লাভ হল না ।
 হাসান বলল,
 – হাসানকে দেখে করিসনে ভয়,
 আড়ালে কিন্তু আমি হাসতেসি ।
 কিরে মামু , নতুন বান্ধবী পেয়ে গেছিস দেখছি ।
 – ঐ ঐ বেশি কথা বলবি না । চুপ থাকবি ।
 – আচ্ছা ঠিক আছে । এই মেয়েটাই
 রিয়া নাকি? পাশ থেকে এবার রিয়া বলল,
 – তুমি আমার নাম জানো কিভাবে?
 – ডালিমের কাছে ।
 – এই বজ্জাতটা তোমার ফ্রেন্ড?
 তোমার ফ্রেন্ড এত দুষ্টু ক্যান? এই
 গাধাটা খালি আমাকে
 ব্যাকটেরিয়া বলে খেপায়।
 – ঐ ডালিম, তুই ভাবিকে খেপাস ক্যান?
 থুক্কু রিয়াকে খেপাস ক্যান?
 তুমি চিন্তা করো না রিয়া । আমি
 ওকে দেখে নিব ।
 কথা বলতে বলতে আমার স্কুলের
 কাছে চলে এসছি । আমি রিকশা
 থেকে নেমে রিয়াকে বললাম,
 – বাকিটুকু যেতে পারবা নাকি পৌঁছিয়ে দিতে হবে?
 – আমি কি কচি শিশু নাকি?
 কথা আর বাড়ালাম না ।
 রিক্সাওয়ালাকে ভাব নিয়ে বললাম,
 – মামা একশ টাকা ভাংতি হবে?
 – না ।
 – ওহ । রিয়া, তুমি টাকাটা দিয়ে দিও। আমার কাছে ভাংতি নেই ।
 রিয়াকে বিদায় দিয়ে আমি আর
 হাসান রাস্তা পার হচ্ছিলাম । হাসান
 বলল,
 – মামা মাইয়া তো ফাটাফাটি ।
 তুই ওর লগে প্রেম না করলে আমি করবো
 বুঝলি?
 – আচ্ছা করিস ।
 – আর ভাড়াতো বাঁচিয়ে দিসো ।
 তোমার কাছে ভাংতি নাই? পার
 পাবা না মামা । আজকে খাওয়াবি ।
 ধ্যাত ভাড়াটা বাঁচাতে পারলাম না
 । বন্ধুরা এত হারামি হয় কেমতে?
 এরপর বেশি কিছুদিন কেটে গেল ।
 আমরা ক্লাস নাইনে উঠে গেলাম ।
 হাসানের কারণে হোক আর
 যে কারণেই হোক, রিয়ার সাথে
 আমাদের
 ফ্রেন্ডশীপটা ভালই জমেছে । তুমি
 থেকে তুই তে নেমে আসি । তবে আমাদের
 মোবাইল ছিল না । তাই আমার আম্মার
 মোবাইল ইউজ করি । রিয়াও ওর আম্মার
 মোবাইল ব্যবহার করে ।
 রাত একটার পর শুরু হত আড্ডা ।
 মাঝে মাঝে আমি, হাসান, রিয়া
 একসাথে কনভার্শেসনে আড্ডা
 দিতাম।
 একদিন প্রায় ধরা খেয়ে গেছিলাম ।
 রাত দেড়টা । রিয়ার সাথে কথা
 বলছি । হঠাত্ দেখি আব্বা কল দিসে ।
 আব্বা আম্মাতো পাশের
 রুমে ঘুমায় । বুঝতে বাকি রইলো না
 তারা আমাকে পরীক্ষা নিতেসে ।
 – ঐ ব্যাকটেরিয়া ফোন রাখ ।
 পরে কথা হবে । কল কেটে দিয়ে
 তড়িঘড়ি করে বারান্দায় গেলাম ।
 তারপর হাসানকে কল
 দিলাম । হাসান ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
 – হ্যালো ।
 – আর বলিস না দোস্ত এত পড়া আর
 ভাল লাগে না । আজকে দুটা গদ্য শেষ
 করলাম । তোর কি অবস্থা দোস্ত ?
 – মানে কি ? এত রাতে কি উল্টাপাল্টা বকিস?
 – চিন্তা করিস না । আমরা পরীক্ষা ফাটিয়ে দিব । মন দিয়ে পড় ।
 আম্মা আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
 – কিরে কার সাথে কথা বলিস? দেখি ফোন দে ।
 আম্মা ফোন নিয়ে দেখলেন হাসান।
 – ও হাসানের সাথে । আচ্ছা বল ।
 এই বলে আম্মা চলে গেল । যাক এ যাত্রা বেঁচে গেলাম ।
 দেখতে দেখতে এসএসসি পার করে
 দিলাম । স্কুল লাইফটা বেশ কেটেছে ।
 রিয়ার বান্ধবী আর
 আমরা বন্ধুরা জমপেশ আড্ডা দিতাম ।
 তবে রিয়াকে খেপানো ছাড়িনি ।
 ব্যাকটেরিয়া বলে খেপাতেই থাকি
 ।
 কিন্তু আনন্দের সময়গুলো বেশিদিন
 থাকে না । রিয়ার আব্বা ট্রান্সফার
 হয়ে গেল ।
 ফ্যামিলি সহ সবাই চলে যাবে ।
 যাওয়ার আগের দিন রিয়া বলল,
 – ঐ গাধা চলে যাচ্ছি । তোর
 খেপানো থেকে বেঁচে যাব ।
 – হুম যা । অন্তত বারান্দা দিয়ে তোর
 পড়াশোনা আর দেখতে হবে না ।
 – হাহা ।
 কলেজ লাইফে উঠে নতুন মোবাইল
 কিনলাম । প্রথমবারের মত রিয়াকে
 মিস করতে শুরু করলাম । ওর আম্মার
 নাম্বারে ফোন দিয়ে পেলাম না ।
 মনে হয় সিম চেন্জ করসে । হাসান
 একদিন কল করে বলল,
 – দোস্ত তাড়াতাড়ি ফেসবুক আইডি
 খোল । রিয়ার ফেসবুক আছে ।
 – সত্যি?
 – হ্যা ।
 তারপর একটা ফেসবুক আইডি খুললাম ।
 নিজের নাম দিয়ে নয় । ‘#ঘুমন্ত__বীর’ নাম
 দিয়ে ।
 হাসানকে বললাম আমার সাথে রিয়ার
 পরিচয়
 করিয়ে দিতে । একটু মজা নি ।
 হাসান পরিচয় করিয়ে দিল ক্লোজ বন্ধু
 হিসেবে ।
 অতঃপর শুরু হল ঘুমন্ত বীর আর ব্যাকটেরিয়ার
 চ্যাট ।
 – হাই রিয়া, আমি হাসানের ফ্রেন্ড ।
 – হুম বুঝলাম । নাম কি?
 – ঘুমন্ত বীর
 – হিহি । ঘুমন্ত বীর মানুষের নাম হয়?
 – হুম হয় ।
 তারপর কলেজ লাইফ ওর সাথে চ্যাট
 করে কাটিয়ে দিলাম । কথা প্রসঙ্গে
 বুঝতে পেরেছি রিয়াও ডালিম কে মিস
 করে । আর বুঝতে বাকি রইলো না আমি
 রিয়াকে ভালবেসে ফেলেছি ।
 এডমিশন রেজাল্টের পর হাসান দিল
 সারপ্রাইজ ।
 – দোস্ত একটা ব্রেকিং নিউজ আছে ।
 – কি?
 – রিয়া আর তুই একই ভার্সিটিতে চান্স
 পেয়েছিস।
 – কি কস? আমি রিয়ার সাথে শীঘ্রই
 দেখা করব ।
 ফেসবুকে রিয়াকে নক করেই প্রথমেই
 বললাম,
 – তোমার সাথে দেখা করতে চাই ।
 তোমাকে প্রপোজ করব ।
 – এসব কি বলছ? তুমি জাস্ট আমার বন্ধু ।
 আর আমি আরেকজনকে ভালবাসি ।
 সাথে সাথে বুকটা ছ্যাত করে উঠল।
 কাপা কাপা হাতে লিখলাম,
 – কাকে?
 – ডালিম কে । আমার স্কুল লাইফের বন্ধু
 আর আমার প্রতিবেশি । তোমাকে ওর
 কথা বলেছিলাম ।
 এইবার আমি শকড । মাইয়া বলে কি!
 – কিন্তু সে তো হারিয়ে গেছে ।
 – তাতে কি ! একতরফা ভালবাসব ।
 – আগে বলবা না? তাহলে এতদিন
 তোমার সাথে চ্যাট করছি কেন! নাও
 ব্লক খাও ।
 ব্লক দিয়ে হাসানকে কল দিলাম ।
 – দোস্ত রিয়াকে নিয়ে ক্যাম্পাসে
 আয় ।
 আমি এখুনি আসছি ।
 ঝিরিঝিরি বৃষ্টি । ছাতা নিয়ে বের
 হয়ে গেলাম ।
 রিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি ।
 – ব্যাকটেরিয়া, ভাল আছিস? রিয়া
 চমকে পিছনে তাকালো । মনে হল ভুত
 দেখছে ।
 – আরে ডালিম? তুই এখানে?
 – অবাক হচ্ছিস? হাসান কই?
 – কি জানি! আমাকে ডেকে ওর
 পাত্তা নাই । আর বৃষ্টিটাও হুট করে শুরু
 হল । ছাতাও আনি নি ।
 – আয় আমার ছাতার নিচে আয় ।
 রিয়া আর আমি ছাতার নিচে হাঁটছি ।
 হাঁটতে হাঁটতে হঠাত্ করে আমি
 বললাম,
 – হাতটা ধরি?
 – মানে?
 – মানে ভালবাসি তোকে ।
 – দেখ ডালিম আমরা শুধুই ফ্রেন্ড ।
 – অন্য কাউকে ভালবাসিস?
 – জানিনা ।
 – শোন, তুই কিন্তু আমার
 ব্লকলিস্টে আছিস ! হাতটা এখন
 না ধরতে দিলে ব্লক লিস্টেই থাকবি ।
 – কি? ঘুমন্ত বীর তোর আইডি?
 এইবার কয়েকটা কিলঘুষি দিয়ে
 ব্যাকটেরিয়া আমাকে জড়িয়ে
 কাঁদতে লাগল। আমিও
 ছাতাটা ফেলে দিয়ে ওকে জড়িয়ে
 ধরলাম।
 ব্যাকটেরিয়া ঘুমন্ত বীর দুজন হাত ধরে
 হাঁটছে ।
 বৃষ্টিটা আরো ঝেপে আসে ওদের
 দুজনকে ঘিরে…..
  








