প্রণয় বিরহে নজরুল

প্রণয় বিরহে নজরুল

এত ঢিলে জামা কেউ পরে এখন?
– তুই তো আর ঐ কেউদের দলে না।ঢিলে জামায় শরীর বোঝা যায়না,এটা বুঝি মেনে নিতে কষ্ট হয় খুব?নিন্তি উত্তর দেয়না। ওস্তাদজীকে বলবি সন্ধ্যের আগেই যেন ছেড়ে দেয়। হাসনা এটুকু বলেই বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে হেঁশেল ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

নিন্তি ওড়না খানা গায়ে ফেলেই দপদপ আওয়াজে পা ফেলে বেরিয়ে আসে৷ বাইরে বেরিয়েই ওড়না খানা ভালোভাবে পেঁচিয়ে নেয়।পূব পাড়ার মসজিদ থেকে আসরের আযান ভেসে আসছে মধুর সুরে, নিন্তি মাথায় ওড়না তুলে নিয়ে দ্রুত কদমে হাঁটা শুরু করে।

এত দেরি করে এলে যে? সবাই এসেছে সেই কখন! রাঙা বুড়ি কারণে অকারণে কথা বলে বলেই সবাই তাকে উত্তর না দিয়ে বুঝিয়ে দেয় সৌজনত্যা নামক শব্দখানা তার জন্য নয়। সে দিক দিয়ে নিন্তি উলটো পথে হাঁটার মানুষ। নিন্তি দম নিয়ে বলল,গোবরে পাড়া পরেছিল গো দাদি৷ ধুতে যেতে হল আলিম দাদাদের পুকুরঘাটে। কতটা পথ যে দৌঁড়ে এসেছি! রাঙা বুড়িকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নজরুল স্বর্গে ঢুকে পরে নিন্তি৷

মনোহর ওস্তাদ নজরুল গীতে পণ্ডিত তুল্য মানুষ। দেশ-বিদেশে তার বেশ খ্যাতিও আছে বটে। বয়স বাড়তেই তার বিশাল বাড়িখানার নাম রেখে দিয়েছেন “নজরুল স্বর্গ”। এ নামের সার্থকতা রাখতে রোজ বিকেলে নানা জায়গা হতে ছুটে আসা শিষ্যদের নজরুল গিতে দীক্ষা দেন তিনি৷ বিশাল বড় একখানা ঘরের মাদুরে গোল হয়ে বসেন শিষ্যদের নিয়ে৷

তালিম ঘরে নেশাতুর কণ্ঠে কেউ একজন গেয়ে চলেছে – “আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায় আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি আমারে পিয়াসী বাসনায় নিন্তির বুঝে নিতে দেরি হয়না এটা পলাশের গলা, আচ্ছা পলাশ কি সত্যিই টের পেয়েছে আমার চরণ ধ্বনি? পলাশ কি টের পেয়েছে আমি তালিম ঘরের বাইরে? নিজের করা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিন্তি মাথা ঝুঁকে তালিম ঘরে ঢুকে পড়ে।নিন্তির উপস্থিতি টের পেয়ে দম উজাড় করে পলাশ গাইতে থাকে – “আমারে মনেরো তৃষিত আকাশে কাঁদে সে চাতক আকুলো তিয়াসে কভু সে চাতক শুধা চোর আসে নিশিথে স্বপনে জোছনায়।।”

পলাশকে থামিয়ে দিয়ে মনোহর যন্ত্রের মত বলে,” নিন্তি মা, কাল থেকে দেরি হলে কান ধরিয়ে পুকুরঘাটে দাঁড় করিয়ে রাখব” নিন্তির গাল দুটো লজ্জায় রক্তিম আভা এনে দেয়। পলাশ তৃষ্ণার্ত প্রেমিকের মত মুগ্ধ নয়নে নিন্তির লজ্জাটে গাল,ঝুলতে থাকা ঝুমকো দুখানা চোখ দিয়ে খুব যত্নে ছুঁয়ে দেয়৷ নিন্তি মাথা ঝুঁকে থেকেও বেশ টের পাচ্ছে পলাশ তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে চাহনিতে আছে মুগ্ধতা আর বিস্ময়৷

মনোহর শান্ত গলায় বলে, “নিন্তি মা তুমি ‘মোর ঘুম ঘোরে…’ শুরু কর দেখি ” নিন্তি হারমোনিয়ামে হাত দেবার আগেই মনোহরের মা রাঙা বুড়ি ভাঙা গলায় বলল,” মনু বাবা, তোর সঙ্গে দেখা করতে এয়েছে কজন বিদেশি ” মনোহর জিহ্বায় কামড় বসিয়ে বলল, একদম মনে ছিল না গো মা। মনোহর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,তোরা পুকুরঘাটের দিকে গিয়ে বস দেখি। আমি উনাদের সাথে একটু কথা সেরে আসি। এই বলেই বারান্দার দিকে পা বাড়ায় মনোহর।
পুকুরঘাটের সিঁড়ির ওপরে দুজন তিনজনের একেকটা দল গলা ছেঁড়ে সুর বেধেছে।ব্যতিক্রম নিন্তি, তপর্ষী আর পলাশ। গাল গল্পে মেতেছে ওরা তিনজন। পলাশ নিন্তির চোখের দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলল, “মানুষের চোখ কোন ঋতু বোঝে না তাই নারে তপর্ষী?” তপর্ষী পলাশের কথা না বুঝতে পারার ভাণ করে বলে,”এ কথা কেন বলছো পলাশ দা?”। পলাশ শাণ দৃষ্টিতে নিন্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, এইযে নিন্তির চোখের শ্বেতাংশ এখন শরৎের আকাশের মত বড্ড ফকফকা!অথচ শরৎ বহুদূরে।

ইচ্ছে করে খেচর হয়ে সারাক্ষণ উড়ে বেড়ায়৷ নিন্তি দ্রুত চোখ নিচু করে বলে,”তপর্ষী দি,তোমার দাদাকে বলে দাও সে যেন এমন কথা না বলে আর৷ লোকে শুনলে কি ভাববে বলো দেখি” তপর্ষী ঠোঁট টিপে হেসে বলে, কেউ শুনছে নারে নিন্তি।আর এত ভয় পেলে চলে বল? নিন্তি উত্তর দেয় না।

নিন্তি আর পলাশ পদ্মার দু রঙা জলের মত৷ দুজন কত কাছাকাছি তবুও ঘোলা জল সাদা জলের সাথে মেশে না৷ নিন্তি মনেমনে খুব করে চায় পলাশ আজন্ম তাকে চোখ দিয়েই এমনি করে ছুঁয়ে দিক, কথার অর্ঘ্যে এমনি করে তাকে পূজো দিক৷ অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাঝেমধ্যে সে পলাশকে থামিয়ে দেয়। পরক্ষণেই খুব করে চায় পলাশ যেন থেমে না যায়। এ এক অদ্ভুত সমীকরণ। এ সমীকরণের পেছনের গল্পখানা বড্ড পীড়া দেয় নিন্তিকে৷

নিন্তির মনে পড়ে যায় সেদিনের সেই ভুলের কথা। বড়বোন অরুর সাথে বশিরের প্রণয় কথন সে যদি তার বাবার কাছে ফাঁস না করে দিত তবে আজ বশিরকে তার বাবার হাতে মরতে হত না, তার বোন অরু তিলেতিলে এভাবে নিজেকে শেষ করে দিত না,তার বাবা আসলামের জেলে যেতে হত না৷ সবাই সান্ত্বনা দেয় এই বলে,তোর কোন দোষ নেই রে নিন্তি৷ তুই তখন ছোট ছিলি, আর কপালে যা ছিল তাই হয়েছে৷ নিন্তির মন এই দায়সারা সান্ত্বনা মেনে নেয় না৷ এমন পাগলা ঝড়ের পর তার মা হাসনাও কেমন যেন হয়ে গেছে।নিজের হাতে গঞ্জের গদি সামলানো,খেতখামার দেখাশোনা, সংসার দেখা আর ভালোবাসার বিরাট শূন্যতায় হাসনা হুট করেই বদলে গেছে৷ নিন্তি বড্ড সাবধানী। জেল খাটা বাবার মেয়ে,তিক্ত পিছুটান, দায়বদ্ধতা থেকে নিজেকে বরাবরই গুটিয়ে নিয়েছিল আবেগীয় টানাপোড়েন থেকে৷ ইদানীং নিজের সাথে পেরে উঠছেনা বলেই পলাশকে এতটা প্রশ্রয় দিয়ে ফেলছে নিন্তি৷ সে খুব করে চায় পলাশ তার পাশে থাকুক তবে কোন সম্পর্কের বাধনে বেধে নয়৷

পৌষের মেলা থেকের ফেরার সময় যেদিন পলাশ নিন্তির হাতখানা খপ করে ধরে বলেছিল, “একটুখানি ভালোবাসলে কি হয়?” নিন্তি এক ঝটকায় হাতখানা ছুটিয়ে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলেছিল, “জানিনা”। পলাশ ক্লান্ত গলায় বলেছিল, “আব্বাকে পাঠাবো তোমাদের বাড়ি?” নিন্তি দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করেছিল উত্তর না দিয়েই। পলাশ পেছন পেছন দৌঁড়ে গিয়ে যখন হাঁপাতে হাঁপাতে বলেছিল, “ভালোবাসো নইলে বিয়ে করো, একটা কিছু তো কর” নিন্তি মাটির দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “বাবার সাজার মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাকি,আগে বাবা ফিরুক”৷ পলাশ সেদিন আর নিন্তির পথ আটকায়নি।

রাঙা বুড়ি গলা বাড়িয়ে বলল-এই শোনমনু (মনোহর) তোদের কাল আসতে বলেছে। যে যার বাড়ির দিক হাঁটা দে দেখি৷ নিন্তি বাড়ির যাবার জন্য উঠে দাঁড়ায় সঙ্গে পলাশও। পলাশ খানিকটা নিন্তির দিকে এগিয়ে বলে, ” আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো তোমার মুখখানা এ চোখে বড্ড নিষ্পাপ দেখায়৷ ব্রাহ্ম মুহূর্তে ব্রাহ্মণ যেমন গঙ্গার নিষ্পাপ জল দু হাতের আঁজলায় তুলে নেয় তেমনি করে একদিন তোমার নিষ্পাপ মুখখানার প্রতি বিন্দু মায়া আমার দু হাতের আঁজলায় ছুঁয়ে দিতে দিবে? ” নিন্তি খানিকক্ষণ পলাশের দুচোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে খোঁজে।কিছু একটার দেখা পেয়েই পলাতক যোদ্ধার মত নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে হনহনিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় নিন্তি৷

সব পুরুষ নারীর সৌন্দর্য চোখ দিয়ে ছোঁয় না, যে পুরুষ নারীকে চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেয় সে বড্ড সাংঘাতিক হয়৷ হাতে ছোঁয়া পুরুষ একটা সময় পর অরুচিতে ভোগে আর চোখে ছোঁয়া পুরুষের অভিধানে অরুচি নামক কোন শব্দ নেই বলেই নারী চোখে ছোঁয়া পুরুষের পায়ের কাছে তাবৎ সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতে একচিমটি কার্পণ্য করেনা৷ নিন্তির আজ খুব ইচ্ছে করছে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলতে, পলাশ তুমি আমায় একটুখানি ছুঁয়ে দাও ব্রাহ্মণের গঙ্গার জলের মত৷ নিন্তির পিছুটান যেন বাস পাতা সুইঁ, যে সুইঁ নিন্তির সমস্ত আকুতিগুলো পিছুটানের সুতোয় সেলাই করে দিয়েছে।
মুখ সেলাইয়ের যন্ত্র আছে কিন্তু চোখ? সে তো আর সেলাই করা যায়না। নিন্তির চোখের পানিগুলো চিবুক চুঁইয়ে গড়িয়ে পড়ে ধুলোয় রাস্তায় হারিয়ে যায়৷মাগরিবের আযান হচ্ছে, খুব করুণ সুরে আযান দিচ্ছে মসজিদের মুয়াজ্জিন।

দেখতে দেখতে বসন্ত গ্রীষ্মের কাছে চলে এলো তবুও নিন্তি পলাশ কাছে এলোনা। নিন্তির পা ফেলে এগোনো আর পলাশের দেউলিয়া হওয়া প্রেমবোধ আষাঢ়ের ক্লান্ত কচ্ছপের মতই চলতে থাকল। নজরুল স্বর্গে সবাই গোল হয়ে বসেছে, একজনের পর একজন করে গলায় নজরুল বেধে চলেছে৷ নিন্তি ফিসফিসিয়ে বলল,”তপর্ষী দি, পলাশ আসছে না যে কদিন ধরে?” তপর্ষী গলা নিচু করে বলল, ওর মা সদর হাসপাতালে ভর্তি রে বন্টি। নিন্তি প্রত্যুত্তরে বলল,”ও”৷ মনোহর হারমোনিয়াম ধরে বলল, নিন্তি মা এবার তোমার পালা৷ ধর দেখি একখান। নিন্তি প্রস্তুতই ছিল, নিন্তি মাথা নিচু করে গাইল- “নয়ন যে মোর বারণ মানে না। বারণ মানে না মন কাঁদন মানে না।। নিশিদিন তব আশে আছি চেয়ে পথ পাশে দু’কূল বেয়ে সলিল আসে কাজল মানে না।। সবার মাঝে থেকেও একা আমি তাই তো তোমার চাই গো দেখা, মরম যে গো তোমায় ছাড়া কারেও জানে না।।”

সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও তপর্ষীর চোখ এড়ায়নি, সে ঠিকই নিন্তির কাজল ভেজা চোখের জল ধরে ফেলেছে৷ নিন্তি তালিম শেষে যখন বলল,দিদি আজ যাই গো তখন তপর্ষী নিন্তির হাতখানা ধরে বলল, “পলাশের কাছে এ চোখের জলের দাম চাইব রে নিন্তি?” নিন্তি তপর্ষীর হাতখানা শক্ত করে ধরে বলল, এমন কাজ করতে যেওনা দিদি,আল্লাহর কসম দিলাম কিন্তু।তপর্ষী বিড়বিড় করে বলে,তাই হবে৷

চারদিন সদর হাসপাতালে থাকার পর বাড়ি ফিরল পলাশ। সদর হাসপাতালের ডাক্তাররা বারবার বলে দিয়েছে পলাশ যেন তার মাকে কোন কাজ করতে না দেয়।হেঁশেল, ধানের কাজ সহ যে কোন ধরনের কাজ করা সম্পূর্ণ নিষেধ যতদিন না ডাক্তাররা আবার কাজ করতে বলে। পলাশের আব্বা আবু মিয়া খুব বিনয়ী মানুষ। মধ্যবিত্তদের ভেতর উঁচু সারির মানুষ সে৷ আল্লাহওয়ালা মানুষ হওয়ায় সবাই সম্মান দিয়ে কথা বলে।পলাশ তার আব্বার কথার এদিকসেদিক হয়নি কখনো। হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আবু মিয়া পলাশকে ডেকে বলল,তোমার মায়ের সেবা যত্নের জন্য, আমাদের ঘর দেখার জন্য হলেও তোমার বিয়েটা এই মাসে দিয়ে দিব ভাবছি। তোমার কোন পছন্দ থাকলে জানিও।
তপর্ষী পলাশের মাকে দেখতে এসেছে৷

খানিকক্ষণ পলাশের মায়ের সঙ্গে গল্পসল্প করে পলাশের ঘরে গিয়ে বসল। পলাশের মুখখানা আজ বড্ড রুক্ষ।পলাশ কাঁপা গলায় বলল, “দিদি,আব্বা বলেছে আমার কোন পছন্দ থাকলে জানিয়ে দিতে৷ এই মাসেই আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। নিন্তির কথা জানিয়ে দিব?” তপর্ষী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “একটা তেতো সত্য হল নিন্তিদের খানদানি অবস্থা,নিন্তি কোনদিন হেঁশেলে যায়নি।তোদের সাথে ওদের অনেক ফারাক, তোর মায়ের জন্য বউয়ের চেয়ে একজন মেয়ে জরুরি। নিন্তি দেখতে বেশ,তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম নিন্তি পরে সব শিখে যাবে তবে তার জন্য নিন্তির পরিবারের তো সম্বন্ধটা মেনে নিতে হবে তাই না?”পলাশ অসহায়ের মত বলল, তুমি এতটা নিশ্চিত কিভাবে হলে যে তারা মেনেই নিবে না। তপর্ষী বলল, কত সম্বন্ধ গেলো ওদের বাড়ি কই একটারও তো ফয়সালা হয়নি। কেন হয়নি জানিস? কারণ নিন্তি আর নিন্তির মা বলে দিয়েছে,ওর বাবা জেল থেকে ছাড়া পেলেই ওরা এসব নিয়ে ভাববে। তার আগে না৷ তারপরেও তোর যদি মনে হয় কিছু একটা হতে পারে তবে কাল নিন্তির সাথে কথা বল।পলাশ যেন আশা খুঁজে পায়।

মনের কোথাও কেউ যেন আজ চিৎকার করে বলছে, “নিন্তি তোর হবে রে, নিন্তি তোর হবে” তপর্ষী দি, এই জামরুল তলায় কেন নিয়ে এলে? দেরি হলে ওস্তাদজী বকবে খুব। পলাশের হঠাৎ উপস্থিতি নিন্তি তপর্ষীকে আর প্রশ্ন করেনা৷ পলাশ দ্রুত গলায় বলে, নিন্তি তোমার বাড়িতে লোক পাঠাবো বিয়ের জন্য? আব্বা চাচ্ছেন আমি এই মাসেই যেন বিয়ে করি৷ নিন্তি একমুহূর্ত পলাশের দিকে তাকিয়ে বলল,”না,আমিও আগেও বলেছি আবার এখনো বলছি আমি এখন বিয়ে করতে পারবোনা।তোমার আব্বা আম্মার পছন্দে বিয়ে করে নাও, আমায় ক্ষমা কর তুমি”। নিন্তি চলে যেতে যাবে এমন সময় পথ আটকে পলাশ পাগলের মত বলে, তোমার আব্বার কাছে যেয়ে যদি আমি সবটা খুলে বলি তবে?নিন্তি শান্ত চোখে পলাশের দিকে তাকিয়ে বলল “দেখো পলাশ, আশাপাশের কারো সঙ্গেই আমার মা সম্বন্ধ করতে চাননা। সকাল-বিকাল জেল খাটা আসামির মেয়ে বলে তেতো কথা শুনতে হবে আর তাছাড়া আমার আব্বা তোমাদের সম্বন্ধ মেনেও নিবেনা, খামাখা তোমার আব্বাকে ছোট হতে হবে আর সেটা আমি চাইনা। আর আমার কথা যদি জিজ্ঞেস কর তবে বলব আমার আব্বা ফিরে আসলে সে যা করতে বলবে আমি তাই ই করব ” নিন্তি দৌঁড়ানোর ভঙ্গিতে হেঁটে চলে যায়।

শেষ কটা দিন পলাশ অনেক ভেবেছে। বুকের কোণে জমাট বাধা টুকরো মায়াগুলো সংসারের হিসেবে নিকেশের কাছে বড্ড তুচ্ছ। মায়াকে আগলে রেখে সংসারে পা ফেললেই পা মচকে যায়, সংসার মায়ার চাইতে তার প্রয়োজনটাই বেশি বোঝে৷ একুশ তারিখ পলাশের বিয়ে৷ ওস্তাদজী সহ বেশ কজনকে দাওয়াত দিতে এসেছে সে। নিয়ম করে আজও সবাই গোল হয়ে বসেছে। নিন্তি উঁচু রাগে গাইছে – “চাঁদের মত নীরবে এসো প্রিয় নিশীথ রাতে। ঘুম হয়ে পরশ দিও হে প্রিয়, নয়ন-পাতে।। তব তরে বাহির-দুয়ার মম খুলিবে না এ-জনমে প্রিয়তম, মনের দুয়ার খুলি’ গোপনে এসো বিজরিত রহিও স্মৃতির সাথে।। কুসুম-সুরভি হ’য়ে এসো নিশি পবনে, রাতের পাপিয়া হয়ে পিয়া পিয়া ডাকিও বন-ভবনে।

আঁখি জল হয়ে আঁখিতে আসিও বেণুকার সুর হয়ে শ্রবণে ভাসিও, বিরহ হ’য়ে এসো হে চির-বিরহী আমার অন্তর-বেদনাতে”পলাশ আজও চেয়ে রয়েছে নিন্তির নিষ্পাপ অবয়বের দিকে, সেই চেনা দুখানা ঝুমকো আর নিষ্পাপ মুখখানা৷ পলাশের ঘোর কাটে মনোহরের ডাকে।মনোহর গালভরা হাসি নিয়ে বলে, পলাশ তবে ধর দেখি একখানা নজরুল৷ পলাশ গেয়ে চলেছে – নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল ফুল নেব না অশ্রু নেব ভেবে হই আকুল।। ফুল যদি নিই তোমার হাতে জল রবে গো নয়ন পাতে অশ্রু নিলে ফুটবে না আর প্রেমের মুকুল।। মালা যখন গাঁথ তখন পাওয়ার সাধ যে জাগে মোর বিরহে কাঁদ যখন আরও ভালো লাগে। পেয়ে তোমায় যদি হারাই দূরে দূরে থাকি গো তাই ফুল ফোটায়ে যায় গো চলে চঞ্চল বুলবুল।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত