স্যার ভাইয়া

স্যার ভাইয়া

নিশি প্লিজ, বার বার এক কথা বলবা না। আমি একজন স্টুডেন্ট মানুষ। আমি এখন চাকরি কই পাবো?? চাকরি কি আমার বাবার সম্পত্তি যে চাইলাম আর পেয়ে গেলাম??(অনিক)

প্রেম করার আগে এইটা মনে ছিলো না?? এখন কেনো এগুলো বলছেন?? এই চিন্তাটা আপনার আগে করা উচিত ছিলো। বাসা থেকে বাবা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, আমি এখন কি করবো??(নিশি) আমি কি জানি!(অনিক) তুমি কি জানো মানে?? তারমানে তুমি আমায় ভালোই বাসো নি। সব নাটক ছিলো তাই ত??(নিশি) অতিরিক্ত বোঝা তোমাদের প্রতিটা মেয়েদের একটা বাজে অভ্যাস। এটাকি জানো??(অনিক) মানে?? আমি ছাড়া তুমি আর কয় টা মেয়েকে চিনো?? তারমানে আমি ছাড়াও তোমার আরো গফ আছে। ছিহ ছিহ ছিহ (নিশি) ধুর শা (অনিক)বলেই অনিক উঠে চলে এলো নিশির উপরে থাকা সমস্ত রাগ  স্টুডেন্ট লিটুর উপরে ঢেলে দিলো অনিক।

পরপর ৩ টা বেতের বারি দেউয়ার সময় লিটু যখন পুরো কেঁপে উঠতেছিলো তখন অনিক এটাও বোঝার চেষ্টা করিনি লিটু কতটা কষ্ট পেতে পারে। চোখ থেকে চশমা টা খুলে জোরে জোরে শ্বাস নেউয়ার পরে যখন কিছুটা রাগ কমে গেলো, ঠিক তখনি , চোখে চশমা টা তাড়াতাড়ি লাগিয়ে লিটুর দিকে তাকিয়ে দেখে লিটুর চোখ থেকে পানি পড়ছে।

অনিকের মন টা খারাপ হয়ে গেলো। বুঝতে পারলো অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে ও। একটা সাধারণ কারনে এমন টা করা উচিত হয়নি ওর। অনিক কি করবে এখন বুঝতে পারছে না। মাত্র একটা অংকে ভুল করছে লিটু তার জন্য এইভাবে মাইর দেয়া, উফফফ, সত্যিই ব্যাপার টা খারাপ হয়েছে। প্রতিদিন ত ৫ টা অংক দিলে ৪ টাই ভুল করে তবুও অনিক লিটুকে কিচ্ছু বলে না। হাসিমুখে বার বার একই অংক করে দেয়, কিন্তু আজ নিশির জন্য ও এতটা বড় ভুল করলো যাই হোক ওইদিন অনিক আর লিটুকে পড়ায় নি। শরীর খারাপ লাগছে বলে চলে এসেছে মেসে। মেসে এসেই ভাবতে থাকে, আমার এই টিউশনি টাও গেলো। এত কষ্ট করে টিউশনি টা জোগার করে দিলো আবির, আর আমি কিনা এইভাবে টিউশনি টা হারাবো??

টিউশনি হারানোর ভয় টা হচ্ছে কারণ, লিটু আন্টি আর আংকেলের একমাত্র মেয়ে। নামটা দেখে কিন্তু মনে হচ্ছে এটা কোন ছেলের নাম, তাই না?? আসলে পুরো ভুল। মেয়েটা এতটা কিউট যে ওর বাবা মা ওকে লিটল টুনটুনির শর্ট নাম লিটু বলে ডাকে। টুনটুনি পাখির মতো চঞ্চল প্রকৃতির জন্য টুনটুনি রাখা হয়েছে। এবার ক্লাস ৩ এ পড়ছে লিটু। যেমন দুষ্ট তেমন চিটিংবাজ, তেমন সুন্দরী। এতটা কিউট যে আমি প্রতিদিন গিয়ে ওর গাল টা টেনে আগে আদর করি। ও আমায় বলে,

স্যার, আমার গাল টা আর টানবেন নাতো…(লিটু) কেনো কেনো??(অনিক) কারণ বড় আপু বলছে, গাল টানা নাকি ভালো না, চামড়া মোটা হয়ে যায়…(লিটু) আমি গালভরে হেসে, তোমার আপুকি পাগল??(অনিক) স্যার, আপনি ভুল করছেন, কথাটা টা হবে পাগলী। কারণ মেয়েরা পাগল হয় না। পাগলী হয়।(লিটু) ওকে, ওকে ম্যাম। ক্ষেমা করেন আমায়…(অনিক) লিটু হেসে দেয়….

কোন কিছুই ভাল্লাগছে না। যেই মেয়েটাকে আজ অবধি ওর বাবা মা ই বকা অবধি দেয় নি আর আমি কিনা?? ছিহ, এটা আমি কিভাবে পারলাম?? আবির পেছন থেকে কাধে হাত রেখে, কিরে কি হয়েছে??(আবির) অনিক পিছনে না তাকিয়ে, এবারের টিউশনি টাও গেলো রে (অনিক) কি বলিস?? (আবির) হুম…(অনিক) আবার কি করেছিস??(আবির) অনিক আবির কে সব খুলে বলে কি করেছিস তুই জানিস?? লিটুর গায়ে হাত তুলেছিস??(আবির) অনিক মাথা নিচু করে নেয় ২ দিন পরে, রাত্রে নিশি ফোন দিয়ে সরি বাবু…সো সরি..(ন্যাকা করে বললো)

বিরক্ত লাগছিলো ওর সরি বলা টা। ওর জন্যই আমি আমার লিটুর গায়ে হাত তুলেছি। আমার নিজেরি নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে আজ ২ দিন ধরে স্যার ভাইয়া ডাকটাও শুনেনি অনিক। লিটু অনিক কে স্যার ভাইয়া বলে ডাকতে বেশি পছন্দ করতো। কারণ টা এটাই ছিলো যে, ওর এক কাজিনের নাম নাকি ছিলো অনিক। ওকে অনেক ভালোবাসতো, লিটুদের বাসায় আসতেই সারাক্ষণ শুধু লিটুর সাথেই কাটাতো। ছেলেটা নাকি অনিকের মতোই ইউনিভার্সিটি তে পড়তো কিন্তু হঠাৎ কোন এক এক্সিডেন্টে, ছেলেটা মারা যায়। লিটু এতটা আঘাত পেয়েছিলো যে ছেলেটা মারা যাওয়ার ৩ মাস অবধি কারর সাথে কোন কথা বলেনি। যেদিন প্রথম অনিক লিটুদের বাড়িতে আসে আর ওর নাম অনিক বলে তখন লিটু অনিক কে ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরেছিলো অনিক ওইদিনেই ভাইয়া ডাকার ব্যাপার টা লিটুর মায়ের থেকে শুনেছিলো, তাই ওইদিন থেকেই লিটু অনিক কে স্যার ভাইয়া বলে ডাকতো…

কি হলো??(ফোনের ওপাশ থেকে নিশি) অনিক হুসে ফিরতেই বুঝতে পারলো, ওর চোখের কোনে জল জমেছে কিছুনা বলেই অনিক ফোন টা রেখে দেয় আজ ৬ মাস যাবত পাগলী টাকে পড়াইতেছে অনিক। এতটা টান তৈরি হয়ে গিছে যে কলিজাটাতে কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সব। কি করবে কি করবে ভাবছে অনিক। মনে হচ্ছে এখনি লিটুর কাছে ছুটে যায়…আজ ২ দিন হলো অনিকের রবি সিম অফ করে রেখেছে। না জানি লিটুর মা ফোন করে কি বলে জন্য সিম অফ + পড়াতেও যায়নি।

৩য় দিন রাতে, ফোনেতে লিটুর ছবি দেখছে আর হাসছে, পাশের বেড থেকে আবির অনিকের এমন আচরণ দেখে, পাগল হলি??(আবির) অনিক হেসেই চলেছে…আবির অনিকের কাছে এসে লিটুর দুষ্টিমি করা পিক গুলো দেখে ও নিজেই হেসে দেয় কিন্তু একটা ছবির কাছে এসেই অনিকের মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে যায় ছবিটাতে অনিক এর ডান গালে তে লিটু কিস করছিলো আর ওই সময়েই আন্টি পিক টা ক্লিক করেছিলো….

অনিকের চোখ টা ভিজে উঠে আবির বুঝতে পারে কিন্তু ওর কিছু করার নেই অনিক চোখ মুছে নেয়, তারপর ভাবতে থাকে, লিটুর হাত টা কি ফুলে গিছে?? কেমন আছে ও?? কি করছে এখন??এগুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যায় সকালে দরজার ঠকঠকানিতে ঘুমে ঢুলুঢুলু অনিক দরজাটা খুলতেই অনিকের ঘুমন্ত চোখ টা বড় বড় হয়ে যায় সামনে আন্টি মানে লিটুর মা দাঁড়িয়ে আছে অনিক কি বলবে বুঝতে পারছে না আ (অনিক) অনিক কিছু বলার আগেই আন্টির পিছন থেকে লিটু এসে অনিক কে জড়িয়ে ধরে অনিক ভয়ে নাকি খুশিতে স্তম্বের মতো চুপ হয়ে গিছে, ও বুঝতে পারছে না এতদিন পরে লিটুকে দেখতে পেয়ে, পাগলী টাকে জড়িয়ে ধরে আপুটা আমার, লেগেছে না খুব হুম??(অনিকের চোখে পানি)

লিটু না’সূচক মাথা নাড়ালো অনিক পাগলী বলে, লিটুর গাল টেনে দিলো লিটু হেসে দিলো আন্টি অনিকের কাছে এসে, বাবা, ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। ওর নিজের ভাই থাকলেও হইতো এতটা ভালোবাসতো না। ওইদিন থেকে আজ অবধি শুধু একটা কথাই বলেছে চলেছে, আমি স্যার ভাইয়ার কাছে যাবো তোমার ত ফোন বন্ধ তাই অনেক কষ্টেই বাসার ঠিকানা টা নিয়ে এখানে আসা….

অনিক লিটুর মায়ের কাছে ক্ষমা চায় আন্টি মুচকি হেসে দেয় মেসের চৌকিটার উপরে আজ ছোটখাটো এক আসর জমেছে, আর আসরের প্রধান অতিথির আসনে বসেছেন লিটু খান সবাইকে তিনি অর্ডার দিচ্ছেন এটা করো ত ওটা করো অনিক কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে লিটুর হাসিমাখা সময় টুকুকে ক্যামেরা বন্ধি করছে, হঠাৎ লিটু সব কিছু ফেলে দৌড়ে লিটুর কাছে এসে, স্যার ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরে অনিক লিটুকে কোলে তুলে, কপালে তে চুমু দিয়ে, পাগলী আপু বলে হেসে দেয়…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত