ডাক্তাররা নির্দয় হয়

ডাক্তাররা নির্দয় হয়

“প্রিতম ভাইয়া নাচবো তোমার সাথে?” পৃশিতার কথায় চট করে ইশিতার দিকে তাকিয়ে নিল প্রীতম। পৃশিতার কথায় বেশ বিরক্ত মনে হল ইশিতাকে। আবার পৃশিতার দিকে তাকিয়ে প্রীতম বলল “আমি তো নাচি না। গিটার বাজাই। আর ডাক্তারী করি।” “উঁহু! নাচবো তো!” ঈশিতা এবার বেশ বিরক্ত হল। বোনকে বলতে লাগল “পৃশু খুব পেকেছিস না। বাসায় চল। তোর পাকামো বের করছি।” পৃশিতা কে বললাম “পৃশু তোমাদের বাসায় ফ্যান চলেতো সব ঘরে?” “কেন ভাইয়া এই কথা কেন বলছো?” “না মানে যা গরম পরেছে আর তোমার আপার মাথা যা গরম! ফ্যান না চললে তো সমস্যা। গরমে না পৃথিবী গরম হয়ে যায়! দেখবে উত্তর মেরুর সব বরফ গলে গেছে এই গরমের ঠ্যালায়।”

“পৃশিতা খিল খিল করে হেসে উঠল। বলল “ঠিক বলেছ ভাইয়া। সারাক্ষন গরম থাকে! আমার জান ঝালাপালা করে দেয়।” “পৃশু একটা কাজ করা যেতে পারে।”“কি ভাইয়া?” “এখনতো গ্যাস সংকট চলছে। গরম মাথার উপর যদি রান্না বসিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কেমন হবে?” “খুব ভাল হবে ভাইয়া!” ঈশিতা আস্তে আস্তে গরম হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম। আমাদের সাথে আর না বসে উঠে চলে গেল। গিয়ে বসল ছাদের ওই পাশটায়। ঈশিতা যেখানে গিয়ে বসল এখান থেকে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। আগে তো পৃশুর পাশে বসে ছিল। ওকে দেখতে হলে মাথা ঘুরাতে হচ্ছিল। এখন আর মাথা ঘুরাতে হচ্ছে না। ওকে এখান থেকে ভাল ভাবেই দেখা যাচ্ছে। ঈশিতা সব সময় খুব গম্ভীর থাকে। কদিন আগে আমার সাথে টুকটাক কথা বলতো। কথা বলত মানে কথা জানতে চাইলে উত্তর দিতো। ইদানিং তাও দেয় না।

আমি পৃশুকে জিজ্ঞেস করলাম “তোমার অপুর কি হয়েছে?” “আপুর?” হঠাৎ পৃশুর মুখটা কেমন জানি কালো হয়ে গেল। “কই কিছু হয় নি।” পৃশু যেভাবে বলল আমার মনে হল সত্যি সত্যি কিছু না কিছু হয়েছে। “ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলবো।” “বল।” “প্রোমিজ কর আপুকে বলবে না।” “আচ্ছা বলবো না।” “আপু না তোমার গিটার বাজানো অনেক পছন্দ করে। তুমি যখন রাতের বেলা বারান্দায় বসে গিটার বাজাও আপু খুব মন দিয়ে শোনে।” কথাটা শুনে কেন জানি খুব অবাক হলাম। খুব ভাল লাগল। পৃশু বলল “আপুর কাছে যাই? আপু অনেকক্ষণ একা বসে আছে।” বললাম “চল আমিও যাই।” পৃশুকে নিয়েই ঈশিতার কাছে গেলাম। ও গম্ভীর মুখে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। “আচ্ছা পিশু তোমার আপু কি দাঁত ব্রাস করে না?” “করে তো ভাইয়া।”

“কেন বলছো?” “না আমি তো কখনও তাকে হাসতে দেখলাম না। ভাবলাম হয়তো দাঁতে কোন সমস্যা। “না ভাইয়া আপুর দাত অনেক সুন্দর। হাসিও অনেক সুন্দর।” “পৃশু চুপ থাক। তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস। আর আপনি?” ঈশিতা আমার দিকে তাকাল। “আমার পেছনে কেন লেগেছেন।” “আরে আমি কখন লাগলাম আপনার পিছনে। আমি তো কেবল আপনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি।” “কেন? কেন চেষ্টা করছেন?” “আপনি বোঝেন না কেন চেষ্টা করছি?” ঈশিতা তীব্র চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। মনে হলো চোখের দৃষ্টিটা নমনীয় হয়ে এল। ঈশিতা তার চোখ নামিয়ে নিল। এই মেয়ে গুলে এমন কেন হয়? কখন যে কি করে বোঝা বড় মুশকিল! পৃশু বলল “জানো ভাইয়া আপার শরীরটা না ভাল না। এই জন্য আপু সবার সাথে এমন করছে। তাছাড়া আপুটা এমন করে না।”“পৃশু তোকে না বললাম চুপ থাকতে। এতো কথা কিসের?”“কি হয়েছে?”

-“আমি বলতে পারবো না। আমাকে বকবে।” এবার আমি ঈশিতাকে বললাম “কি হয়েছে?” “কিছু হয় নি।” “প্লিজ বলেন।”  “বললাম না কিছু হয় নি। আপনি কেন বার বার এমনটা করছেন? দেখুন প্রিতম সাহেব আপনি যা চাচ্ছেন আর হবে না।” “হবে না মানে কি?” ঈশিতা আমার কথার জবাব না দিয়ে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে। শেষ বিকেলের এই আলোতে ঈশিতাকে কেমন জানি বড় বিষন্ন মনে হল। রাতে পড়া শুনা করছিলাম হঠাৎ একটা এসএমএস আসলো মোবাইলে। পৃশু পাঠিযেছে। মেসেজে পৃশু লিখেছে “ভাইয়া, আপু ছাদে গেছে।” “এতো রাতে ঈশিতা ছাদে কি করছে?” আমিও ছাদে উঠে এলাম চুপিচুপি। দেখলাম ঈশিতা বিকেল বেলা যেখানটাতে বসে ছিল এখনও সেইখানে বসে আছে। ওর পাশে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষন চুপচাপই রইলাম দুজনে। হঠাৎ ঈশিতা বলল “কিছু বলছেন না যে!” “কি বলবো! তোমার পাশে বসে থাকতেই ভাল লাগছে।”

ঈশিতা আমার দিকে ফিরে তাকাল। আমি ভেবেছিলাম আপনি থেকে তুমি বলাতে হয়তো ঈশিতা একটু রাগ করবে। কিন্তু দেখলাম কিছু বলল না। আরো কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ও বলল “পৃশু আপনাকে এসএমএম পাঠিয়েছে তাই না?” “কই না তো। আমি এমনিই ছাদে এসেছি।” হঠাৎ ঈশিতা হেসে উঠল। বলল “কেন মিথ্যা কথা বলছেন?” “না ও পাঠায় নি।” ঈশিতা হাসতে হাসতে বলল “আপনি ঠিকই বলেছেন ও পাঠায় নি। এসএমএস টা আমি পাঠিয়েছি।”“কি?” আমি খানিকটা অবাক হলাম। “সত্যি?”“হুম।” “কেন জানি আপনার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছিল।”“আচ্ছা” কথাটা শুনে কেন জানি খুব ভাল লাগল। “কাল রাতে আপনি গিটার বাজাচ্ছিলেন। শুনছিলাম।”“তাই?” “হুম। আপনি খুব সুন্দর বাজান।” বলেই ঈশিতা চুপ করে গেল। তারপর হঠাৎ বলল “আপনারা ডাক্তাররা খুব নির্দয় হন, তাই না?” “কিসের মধ্যে কি? অবাক না হয়ে পারলাম না। বললাম “এই কথা কেন বলছেন? “আপনারা কিভাবে একটা প্রাণকে মেরে ফেলেন! কাটাকুটি করেন। খেলা করেন।”

“ছি! এমন কথা কেন বলছ? ডাক্তাররা কখনই এমন হয় না। তারা সবসময় চেষ্টা করে মানুষকে বাঁচানোর জন্য। সর্বাত্তক চেষ্টা।” “তাই….না?” ঈশিতার কন্ঠ কেমন যেন লাগল! “আমি যাই!” “মাত্রই তো এলে।”“যাই। শরীরটা ভাল লাগছে না।” “ঈশিতা তুমি কিন্তু বললে না তোমার কি হয়েছে?” ঈশিতা হাসল। বলল “আপনি না ডাক্তার। রোগীর রোগ ধরতে পারলেন না?” ঈশিতা আর দাড়াল না। আমি ঠিক বুঝলাম না ও হঠাৎ এমন অদ্ভুত আচরন কেন করল। নিজেই আমাকে আসতে বলল। আবার কিছু না বলে চলে গেল। এতো হেয়ালীর কোন মানে হয়। মাঝে মনে হয় ওর পেছনে আর ঘুরে লাভ নাই। নতুন কোন প্রজেক্ট হাতে নেই। কিন্তু বেশ খানিকটা পছন্দ করি। আর পারিবারিক ভাবেও কথা বার্তা চলছে। তাই অন্য দিকে আর যেতে ইচ্ছা করে না।”

এভাবেই চলছিল। দুতিন দিন পর দুপুর বেলা। হাতে তেমন কোনো কাজ ছিল না। বিছানায় শুয়েই কাটাচ্ছিলাম সময়টা। হঠাৎ পৃশু ছুটতে ছুটতে আমার ঘরে এল। ওকে এভাবে হাপাতে দেখে বললাম “কি হয়েছে পৃশু এভাবে হাপাচ্ছ কেন?” “ভাইয়া জলদি চল। আপা না মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। প্লিজ চল।” প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে দৌড়ালাম পৃশুদের ফ্লাটের দিকে। গিয়ে দেখি ঈশিতা মেঝেতে কেমন ভাবে পড়ে আছে। ঈশিতার বাবা মা দুজনই চাকরি করে। তাই এসময় কেউ থাকে না বাসায়। দুজন মিলে বিছানায় তুললাম ওকে। হাতের পালস দেখলাম। চোখ দেখলাম। সব কিছুই দেখলাম। আমার মনে কেন জানি সন্দেহ হল। পানি ছিটিয়ে ওর জ্ঞান ফেরালাম। বললাম “ঠিক আছেন আপনি?” “হুম।” ঈশিতা আমার দিকে তাকাল না। কেমন জানি একটা লুকানো ভাব দেখলাম। যেন আমার দিকে তাকালে আমি কিছু একটা বুঝে ফেলবো। “কি হয়েছিল?” “হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠল।” “কদিন থেকেই এমন হচ্ছে?” ঈশিতা কিছু বলল না। পৃশু বলল “হ্যা ভাইয়া কদিন থেকেই এমন হচ্ছে। আর আজ সকাল থেকে বেশ কয়েক বার বমিও হয়েছে।”

আমি ঈশিতার চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখ দুটো কেমন জানি অস্থির মনে হল। বারবার এদিক ওদিক নড়াচড়া করতে দেখলাম। আমি পৃশুকে বললাম “একটু পানি গরম করে নিয়ে আসো তো আপু।”“আচ্ছা।” পৃশু চলে গেলে আমি ঈশিতার হাত ধরলাম। ও ঠিক তখনই আমার চোখের দিকে তাকাল। যাও একটু সন্দেহ ছিল ওর চোখের দিকে তাকিয়ে তাও দুর হয়ে গেল। আমি কিছুক্ষণ কোন কথাই বলতে পারলাম না। এতো খারাপ লাগছিল নিজের কাছে। যে মেয়েটাকে এতো দিন ধরে পছন্দ করে আসছিলাম সে কোন দিন আমার ছিলই না। বললাম “কবে থেকে সিওর হলে?” আর লুকিয়ে লাভ নেই জেনে বলল “এই মাস খানেক।” “এই জন্য সেদিন কথাটা বলেছিলে! ডাক্তাররা কেন এতো নির্দয় হয়?” ঈশিতা কোন কথা বলল না। “ঈশিতা আমরা কখনও কোন প্রানকে মেরে ফেলতে চাই না। কখনই না। আর এই অনাগত প্রানটাকে কে মেরে ফেলছে? তুমি নাকি ডাক্তাররা?” আমি হাসলাম। আবার বললাম “তা এবোশন করার ব্যাপার কেন আসছে?” “আসিফ এখন বাবা হতে প্রস্তুত না।” “আসিফ?”  তাহলে ভদ্রলোকের নাম আসিফ। আদোও সে ভদ্রলোক কি না। “বলেছিলে তাকে?”

“হুম।” আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। একটু পর বললাম “কোথায় করাবে ঠিক করেছ?” “আসিফ ঠিক করেছে।“ “ও। আচ্ছা তাহলে আমি যাই?” যাওয়ার আগে শুধু ওকে বললাম “পারবে নিজের সন্তানকে এভাবে মেরে ফেলতে?” ও কিছু বলল না। কেবল দৃষ্টিটা সেদিনের মতো নমনীয় করে ফেললো। আমি আর দাড়াতে পারলাম না। সোজা বেরিয়ে এলাম। পরদিন খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেলো। অবশ্য রাতে একটুও ঘুম হয় নি। কেবল ঈশিতার কথাই মনে হচ্ছিল বারবার। ভাবছিলাম ওর ভবিষ্যতের কথা। কী করবে এখন মেয়েটা? কোথায় যাবে? সমাজে মুখইবা দেখাবে কী করে? বাবা মা কি ওকে মেনে নেবে? কিচ্ছু মাথায় আসছিল না। যখন ঘুম ভাঙলো তখন ভোর হয় হয়। বিছানা ছেড়ে ওঠে দাড়ালাম। হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা করলাম বাবা-মা কেউই বাড়ি নেই। বিশেষ প্রয়োজনে গ্রামে গেছেন। ফিরতে দু-একদিন লাগতে পারে। তাই আমিও বেরিয়ে পড়লাম।

এমনিতেও আজ হাতে কোনো কাজ নেই। যখন ফিরে এলাম তখন বাড়ির বাইরে পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেস দাঁড়িয়ে আছে। এত সকালে পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স বাড়ির সামনে দেখে বেশ অবাক হলাম। সেই সাথে শঙ্কিত। নিজের ঘরে না গিয়ে চলে গেলাম ইশিতাদের ফ্ল্যাটে। দেখলাম সামনে একটা লাশ পড়ে আছে। সাদা কাফনে ঢাকা। লাশটাকে ঘিরে বসে আছে আঙ্কেল, আন্টি আর পৃশু। বুঝতে বাকি রইল না। লাশটা ঈশিতার। এক মূহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল পৃথিবীটা ঘুরছে। তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলাম আমি শুয়ে আছি নিজের রুমে। মা বারবার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। বাবাও বেশ চিন্তিত। পৃশু, আঙ্কেল, আন্টি ওদের কাউকেই দেখলাম না। ওদের খোঁজ করতেই জানতে পারলাম পুরো ঘটনা। ঈশিতা আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার কারণ এখনো জানা যায়নি। আমি কিছু বললাম না। কেবল দুচোখ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। দু-একদিনে যখন বিছানা ছাড়লাম ঈশিতা তখন শুয়ে আছে কবরে। হয়তো ওর লাশটা পচতে শুরু করছে। সেইসাথে ওর অনাগত ভবিষ্যতটাও। আমি আর ভাবতে পারছিলাম না। চলে গেলাম ছাদে। যেখানটাতে ঈশিতা বসে থাকত।

আজও হয়ত বসত যদি না হঠাৎ চোখে পড়ল একটা ইট। তার নিচে চাপা দেয়া কাগজ। ঈশিতার চিঠি। পড়তে লাগলাম “প্রিতম, জানি তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো। হয়তো আমার মৃত্যুর পরেও বাসবে। তাই লিখছি। আমার জন্য নিজের জীবনকে শেষ করে দিও না তুমি। ভেবে নিও আমি প্রতারক ছিলাম। তোমার সাথে ছলনা করেছি। শুধু তোমার সাথে নয়। আমার নিজের সাথেও আমি প্রতারণা করেছি। খুব ইচ্ছা ছিল আমার একটা সংসার হবে। আসিফকে ঘিরে আমি স্বপ্ন দেখতাম। ভাবতাম, আমার একটা বেবি থাকবে। বেবিটাকে আমি বুকে আগলে রাখবো। মাঝেমধ্যে আসিফকে নিয়ে নন্দনে যাবো। নন্দন আসিফের খুব প্রিয় জায়গা। প্রায়ই ওখানে যেতাম আমরা। ভালোবাসার কথা বলতাম। ভবিষ্যতের কথা বলতাম। যেদিন ওকে বলেছিলাম আমি মা হতে চলেছি। ও সাফ বলে দিয়েছিল। ও এখন বাবা হতে প্রস্তুত নয়। তাই আমিও অ্যাবোরশন করাতে রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। তোমার কথায় টনক নড়েছে। মাতৃত্ব জেগে ওঠেছিল আমার। আসিফকে বললাম অ্যাবোরশন করবো না।

ও রাজি হলো না। এদিকে বিয়ের আগে সন্তান জন্ম দিলে সমাজকে কী জবাব দেবো? যখন সবাই আমার বাচ্চাকে জারজ সন্তান বলবে উত্তরে কী বলবো আমি? মা-বাবাই বা সমাজে মুখ কীভাবে দেখাবে? সবকিছু ভেবে এই পথ বেছে নিলাম আমি। পারলে ক্ষমা করে দিও। ইতি তোমার অপরাধী ঈশিতা” আর সহ্য করতে পারলাম না। হৃদয়ে ঝড় বয়ে যেতে লাগলো। মনে মনে সংকল্প করলাম। এখনো হাতে অনেক সময়। তাড়াতাড়ি চলে গেলাম ঈশিতাদের বাসায়। ঈশিতার বাবা-মা কেউই বাসায় নেই। পৃশু ঘুমুচ্ছে। তাই ওকে আর ডাকলাম না। সোজা ঈশিতার রুমে চলে গেলাম। খুঁজতে লাগলাম আসিফের ছবি। যেহেতু ভালোবাসে সেহেতু থাকার কথা। অনেক বেগ পেতে হলো। শেষমেষ পেলাম তবে অনেক গোপন জায়গায়। ইশিতার রুমের ওখানে একটা পেরেক ছিল। ওটাতে বাড়ি দিলেই একটা গুপ্ত ক্যাবিনেট খুলে যেতো। এবং সেখানেই আসিফের ছবি পেলাম।

ছবিটা নিয়ে সোজা চলে গেলাম চেম্বারে। সার্জিক্যাল নাইফটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম। আর বেরিয়ে এলাম। গন্তব্য নন্দন। খুঁজতে লাগলাম আসিফকে। প্রায় ঘণ্টাখানেক খোঁজার পর পেলাম। পেছন থেকে নাইফটা ওর গলায় বসিয়ে দিলাম। গলগল করে রক্ত বেরোতে লাগলো ওর গলা থেকে। ও চিৎকার করারও সময় পেলো না। তার আগেই শেষ। আমি হাসলাম আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম “ঈশিতা তুমি ঠিকই বলেছিল, ডাক্তাররা খুবই নির্দয় হয়। ওরা প্রাণ কেড়ে নেয়। জীবন নিয়ে খেলা করে। দেখো ঈশিতা দেখো। আমি একটা প্রাণ কেড়ে নিয়েছি।” আর কিছু বলতে পারলাম না। তার আগেই হাতে হাতকড়া পড়ল। সেখান থেকে আদালতে। তারপর মানসিক চিকিৎসালয়ে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত