ব্যাপার টা কি বলতো – কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ আমাদের বাসায় হাজির! আন্টি আমাকে আসতে বলেছেন। আম্মু তোকে আসতে বলছে কিন্তু আমাকে তো কিছুই জানালো না! আর তুই তো আমাকে বললি না! কি প্ল্যান তোর আর আম্মু’র বলতো শুনি! আমি নিজে জানলেই না তোকে জানাতাম আমাকে একটু আগে কল দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি তোদের বাসায় আসতে।
তোকে এখন দরজাটা কে খুলে দিল? আন্টি খুলে দিয়ে বলছে – বসতে – খুব জরুরী কথা আছে নাকি। আচ্ছা তুই বস – আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছি। দিশা কিচেনে এসে তার আম্মুকে দেখলো কত কী ট্রে তে সাজাচ্ছেন – দিশা ভেবেইপাচ্ছে না নিলয় আর সে কলেজ লাইফ থেকে খুব ভালো বন্ধু ; সেই সুবাদে দিশার বাসায়নিলয় প্রায়ই আসে কিন্তু এই প্রথম আম্মু দিশাকেনা জানিয়ে বাসায় কেন আসতে বললো! আম্মু নিলয়কে কেন আসতে বলছো? আমাকে কেন বললে না? একটুপর নিলয়ের আব্বু আম্মুও আসবে ;তারপর বুঝতে পারবি! মানে কি আম্মু – তুমি উনাদের দাওয়াত দিয়েছো তো এটাতে লুকোচুরির কি আছে?
এর মাঝেই কলিংবেল বাজতে লাগলো দিশা’র আম্মু কিচেন থেকে বের হয়ে দরজা খুললেন ; নিলয় সোফা থেকে অবাক বিস্ময়েউঠে দাঁড়িয়ে বললো আব্বু আম্মু তোমরা এখানে? নিলয়ের আব্বু আম্মু হাসছেন – তাদের সাথে দিশা’র আম্মুও হাসছেন আর নিলয়ের ছোটমামাও উনাদের সাথে এসেছেন – উনিও হাসছেন। এর মাঝে দিশা এসে উনাদের সালাম দিয়ে অবাক হয়ে তাদের হাসি দেখছেন। নিলয় আর দিশা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। দিশা’র ছোটমামা বললো – আচ্ছা এইবার বলেই ফেলি – আমরা তোদের বিয়ের তারিখ ফিক্সড করার জন্য সবাই একসাথে হয়েছি। দিশা আর নিলয় দু’জনেই একসাথে বললো – কার বিয়ের তারিখ? ছোটমামা বলেন তোদের দু’জনের পড়াশোনা শেষ এখন তো বিয়ে করতেই হবে।
দিশা বললো কিন্তু আমরা কবে বললাম আমরা একজন অন্যজনকে বিয়ে করবো? নিলয় ও বললো আব্বু আম্মু এভাবে এখানে আসার আগে তোমরা আমার সাথে একবার কথা বললেও পারতে! ছোটমামা বলে আমরা সবই বুঝি এখন এইরকম নাটক বাদ দাও। দিশা বলে মামা পুরা নাটক তোমরা করছো আমাদের বিয়ে ঠিক করছো কিন্তু আমাদেরমতামত নেবার কথা একবারেও চিন্তা করলেনা! তোদের আর কোনও বন্ধু নাই ; সারাক্ষণ তোদের দুইজনের বকবকানি চলতে থাকে ; এগুলোর মানে কি আমরা বুঝি না! দিশা বলে মামা তোমরা একটু বেশীই বুঝে ফেলছো তোমরা যা ভাবছো সেরকম কোন কিছুই নেই আমাদের মাঝে ; আমরা খুব ভালো বন্ধু আর কিচ্ছু না। নিলয় বলে একদম ঠিম বলছে দিশা। নিলয়ের আব্বু দিশার আম্মুকে হাসতে হাসতে বলে ওরা পোলাপাইন চলেন আপা আমরাই ঠিক করে ফেলি বিয়ের তারিখটা।
পোলাপাইন যখন বিয়ের কি দরকার এটা ভেবেই রাগে দিশা ওঠে তার রুমে চলে যায়। নিলয়ও রাগে আমি গেলাম বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। নিলয় দিশাকে কল দেয় কী আজব তোর বাসায় এতো কিছু ঘটছে আর তুই কিচ্ছু জানিস না কেম্নে? তোর আব্বু আম্মু জানে আর তুই জানিস না এই নাটক তুই আমার সাথে করবি না একদম।উফফ আমার মাথা কাজ করছে না ; রাগ করে বের হয়ে এসেছি তুই গিয়ে শুনে আয় তারাযদি সত্যিই বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলে তাহলে ঝামেলা আরো বাড়বে। আমি যা বলার বলে দিয়েছ এরপর তারা বিয়ে তোর সাথে বিয়ে ঠিক করলে আমিবাড়ি ছেড়ে পালাবো। এটা ভালো বলেছিস আমি আর তুই একসাথে পালাবো।
একদম ঠিক, আমাদের জোর করে বিয়ে দেবার শখ মিটাবো – আচ্ছা রাতে কল দিস তারপর আমরা কবে কখন কিভাবে পালাবো সব সেট করবো। ওকে এখন বাই। বাই বলে নিলয়ের হঠাৎ এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। নিলয় কিছুতেই বুঝতে পারেনা পালিয়ে যেতে পারবে দিশাকে নিয়ে এজন্যই কি এত ভালো লাগছে! দিশা’রও মনটা খুব ভালো হয়ে যায় নিলয় সাথে আছে তাই পালানো ব্যাপারটা কেমন পিকনিক একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে।
দিশা’র মামা কিছুক্ষণ পর এসে বলে আগামী শুক্রবারের পরের শুক্রবার তোদের বিয়ের তারিখ করা হয়েছে ; রাগ করিস না মা তোরা যা সহজভাবে দেখিস না আমাদের অভিজ্ঞ চোখ তা সহজেই দেখতে পায়। দিশা কিছুই বলে না উল্টো মজা পায় মামার কথাতে আর ভাবে তোমাদের অভিজ্ঞ চোখ ধোঁকা দেবার সব প্ল্যান আজ রাতেই করে ফেলবো। রাতে কল দিয়ে নিলয়ের সাথে বিয়ের ঠিক আগমুহুর্তের বাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লা চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় ; ওইখানে নিলয়ের একবন্ধুর দাদার বাসা আছে; নিলয় একবার তার ওই বন্ধুর সাথে ঘুরেও আসছে কুমিল্লা থেকে তাই সেই পরিবেশটাও নিলয়ের পরিচিত। দুই পরিবারের সবাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে খুব ব্যাস্ত তাদের এইসব কর্মকান্ড দেখে দিশা আর নিলয় খুব মজা পায় আর সবাই ভাবে তারা একদম ঠিক কাজটিই করেছে দুইটার বিয়ে ঠিক করে।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসে ; সন্ধ্যায় নিলয় বর সেজে সবার সাথে দিশার বাড়িতে আসে ; কথা হয় দিশা পার্লার থেকে বাসায় আসলেই নিলয় ওয়াশরুমে যাবার বাহানা করে দিশার সাথে দেখা করে পিছনের দরজা দিয়ে তারা পালিয়ে যাবে। সেই কথামতো আগে থেকেই বলে রাখা নিলয়ের দুই বন্ধু নিলয়কে দিশার রুমে নিয়ে আসে ওয়াশরুমের বাহানায়! নিলয় দিশাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বলে বউ সাজে তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে রে দিশা! দিশা নিলয়কে বলে শেরওয়ানি পরলে বিয়ের বরগুলোকে আমার কাছে দেখতে কেমন জানি বেকুব বেকুব লাগে কিন্তু তোকে তো দারুণ স্মার্ট লাগছে! নিলয় দিশার খুব কাছে এসে বলে এভাবে পালিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?
– আমিও তাই ভাবছি – কত আত্নীয় স্বজন ; সবার সামনে এভাবে আম্মু মামাকে তো অপমান করার কোনো মানে হয়?
– এখন কি করবি বল দিশা?
– আমি কি বলবো! বলবি তো তুই গাধা! কলেজ ভার্সিটি শেষ কিন্তু তুই গাধা গাধাই রয়ে গেলি!
– তুই তো কখনো বলার সুযোগ দিলি না!
– বলার সুযোগ আদায় করে নিতে হয় গাধা!
– হাতটা দিবি একটু ধরবো!
– এত কাল যখন ধরিস নি আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর কবুলটা বলতে দে তারপর তুই কবুল বলে ধরিস, সারাজীবনের জন্যই ধরিস।
একথা বলতেই দিশার রুমের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিলো নিলয়ের বন্ধুরা আর বলছিলো তোরা কি আছিস! দরজা খুলে নিলয় তার বন্ধুদের বলে দোস্ত কাজী সাহেব এতো দেরী করছেন কেন বলতো!