ঠান্ডাটা এবার বেশ জাঁকিয়েই পড়েছে , সাধারণত শীতের শুরুতেই এতটা ঠান্ডা থাকে না ।এবারটা অন্যরকম , দিনের আবহাওয়া যেমন তেমন, রাতের বেলা রীতিমত হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে , আর সাথে হু হু করে বইছে হাওয়া । মারিয়া একটা উলেনে শরীরটা ঢেকে জানালার পাশের আর্মচেয়ার-টায় গিয়ে বসলো ।
জানালার কাঁচে হালকা হিমের ছোঁয়া। একটু পরেই সন্ধ্যে নেমে আসবে । ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজকের রাতটা হ্যালোউইনের রাত । সন্ধ্যে হতে না হতেই বাড়ি গুলোর জানালায় জানালায় জ্বলে উঠবে জ্যাক ও ল্যান্টার্ন । নানা রকম কিম্ভুতকিমাকার ভুতুড়ে অদ্ভুতুড়ে সাজে সেজে ছোট ছোট বাচ্চারা বেরিয়ে পড়বে আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেল বাজিয়ে বলবে “ট্রিক অর ট্রিট” ! প্রতিবার মারিয়া এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকে।
আর থাকে এই পার্ল এভিনিউ পাড়ার বাসিন্দা বাচ্চারা । এ পাড়ার ছোট ছোট বাচ্চা গুলো জানে মারিয়ার বাড়িতে বেল বাজালে মিলবে হরেক কিসিমের ট্রিট ; কি নেই তার মধ্যে হরেক রকমের হাতে বানানো কুকিজ , চকলেটস থেকে শুরু করে খেলনা, আরো কত কি ! ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর খুদে খুদে লোভী লোভী চোখ মুখ গুলো দেখতে মারিয়ার খুব ভালো লাগে , যদিও হ্যালোউইন এর পোশাকে এসময় ওদের একটাকেও চেনা যায় না ! তবু কিছুক্ষণ হলেও ওদের হৈ-হুল্লোড়ে পরিবেশটা বেশ জমজমাট হয়ে থাকে ।
আসলে মারিয়া বিয়ে করেনি , একাই থাকে । মারিয়ার শখ বলতে সারাদিন বই পড়া , গান শোনা আর নিজের হাতে নানা রকম কুকিজ , চকলেটস বানানো । ঠাকুরদার আমলের এই ছোট্ট বাড়িতে নিজের সায়াহ্নবেলার দিন গুলো কাটাতে কাটাতে মারিয়া নিজের ফেলে আসা কৈশোর, যৌবনের দিনের কথা ভাবে । মারিয়ার শৈশব খুব একটা ভাল যায়নি , বাবা সারাদিন কারখানায় কাজ করতেন, মা ঘরে তৈরি ব্রেডস, কুকিজ ইত্যাদি বিক্রি করতেন । অভাব যেন ওদের সংসারের একজন সদস্য হয়েই ছিল । কৈশোরেতে পা দিতে না দিতেই মায়ের মৃত্যু হয় । তখন ওরা এখানে থাকতো না , বাবার কর্মস্থল দূরের শহরে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতো । শহরটা ছিল একটা নদীর পাড়ে । সকাল হলেই বাবা কাজে বেড়িয়ে যেত , আর মা সারাদিনের সংসার , কাজকম্ম সামলাতো । মারিয়া স্কুলে যেত তখন । মা মারা যাবার পর সবকিছু কেমন বদলে যেতে লাগলো । বাবা একটু একটু করে নিজেকে মদের নেশায় ডুবিয়ে দিল । তারপর একদিন ঠাকুরদার চিঠি এলো , বাবা সেদিন এক হাতে বিশাল বড় একটা টিনের তোরঙ্গ আর অন্যহাতে মারিয়ার ছোট্ট হাত খানা ধরে এই বাড়িতে এসে উঠলো । এই বাড়িতে তখন ঠাকুরদা আর ঠাকুরমা ওরা দুজন থাকেন। সেই যে বাবা তাঁদের কাছে মারিয়াকে রেখে শহরে গেল , আর ফিরল না । কারখানা থেকে একদিন বাবার মারা যাওয়ার খবর এলো আর সাথে কিছু কম্পেন্সেশন এর টাকা । স্কুলে ভর্তি হল মারিয়া । স্কুলের পড়া শেষ হতেই নার্সিং স্কুলে ভর্তি হলো । সেবিকা হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো ওর ; অবশ্য তখনও ঠাকুরদা বেঁচে ।
তারপর তো ধীরে ধীরে ঠাকুরদা-ঠাকুরমা দুজনেই চলে গেলেন। আর তরুণী মারিয়া যোগ দিলো সেনাবাহিনীতে নার্স হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র যেতে হয়েছিল মারিয়াকে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । এ বাড়িটা তখন তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকত । মারিয়ে জানতোই না আদৌ সে কোনোদিন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসতে পারবে কিনা । মারিয়ার পুরনো দিনের কথা মনে করলে খুব কষ্ট লাগে তবুও মাঝে মাঝে স্মৃতির সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়া অনেক নিচে ; খুঁড়ে খুঁড়ে যদি পুরনো স্মৃতির নিচে চাপা পড়া নতুন কোন কথা উঠে আসে ! মারিয়া তাই জানালার পাশে বসে বসে স্মৃতি রোমন্থন করে , করেই চলে ।
আনমনে বসে বসে এইসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে সন্ধ্যে গাঢ় হয়ে রাত নেমেছে মারিয়ার খেয়াল নেই । কই আজ তো বেল বাজলো না একবারও ! বাচ্চা গুলো গেল কোথায় ? ঠান্ডাটাও বাড়তে শুরু করেছে বেশ । মারিয়া জানালার পাশ থেকে উঠে ভেতরে ঘরের দিকে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো । বাইরের দরজায় ঠক্ ঠক্ শব্দ । তিনবার করে কেউ যেন দরজায় টোকা দিল । কিন্তু বেল আছে তো , সাধারনত কেউ এলে বেল বাজায় । দরজাটা কি একবার খুলবে ? মারিয়া ভাবল হয়তো হাওয়ার শব্দ ! সামনের গাছটা অনেক বড় হয়েছে ওর কতগুলো ডাল পাতা সমেত এসে মাঝে মাঝেই দরজার গায়ে লাগে । বাইরে হয়তো হাওয়ার গতি বেড়েছে আর তাই গাছের ডালের ঘষা লেগে শব্দ হচ্ছে ! মারিয়া রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে আবারও শুনতে পেল শব্দ টা । এবারে বেশ স্পষ্ট – টক্ টক্ টক্ তিনবার টোকা দেওয়ার আওয়াজ । ©সোনামন ডি.সি
গায়ের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে মারিয়া দরজাটা খুলল । আধো আলো আধো অন্ধকারে ওকি ! ও কে দাঁড়িয়ে আছে দরজায় ? দীর্ঘ শরীরটা একটু হেলিয়ে দেয়ালের গায়ে কাত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে , বাম হাতের ওপর ভাঁজ করে রাখা কোট আর আঙুলে টুপিটা আলতো করে ধরা । খুব চেনা এই ভঙ্গী , ওই অবয়ব ! দরজা খুলতেই ছিটকে বাইরে বেরিয়ে আসা ঘরের ভেতরের আলোয় ওর মুখ দেখা যাচ্ছে — জেমস ? হ্যাঁ জেমস-ই তো ! বিস্ময় উত্তেজনায় হতবাক মারিয়া চিৎকার করে উঠল — “জেমস তুমি এতদিন পরে কোথা থেকে, কিভাবে, আমার ঠিকানা পেলে কোথায় ? কেমন আছো তুমি … ওঃ তোমাকে কত খুঁজেছি জানো সবাই বলতো ….”
মারিয়ার কথা শেষ হবার আগেই জেমস বলে উঠল —”সব কথা কি বাইরে দাঁড়িয়েই হবে ? ভেতরে আসতে বলবে না”?
মারিয়া লজ্জা পেয়ে সরে দাঁড়ায় দরজা থেকে —”দেখেছো আমার কান্ড , তোমাকে ভেতরে আসতেই বলিনি এখনো , ছি ছি ! এসো ভেতরে এসো”।
জেমস ভেতরে ঢুকতেই দরজাটা বন্ধ করে মারিয়া ।
জেমস একটা হ্যাঙারে নিজের কোট আর হ্যাট-টা রেখে আর্মচেয়ারে গিয়ে বসে । তারপর মারিয়ার দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে বলে ওঠে – ” হ্যাঁ কি যেন বলছিলে , সবাই তখন কি বলতো মারিয়া ! এই যে জেমস আসলে ভীরু ,
মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ একটা । নিজেকে বাঁচাতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেছে ! তোমার জেমস একটা মিথ্যেবাদী । তোমাকে কথা দিয়েও কথা না রেখে পালিয়ে গেছে … এই সবই বলতো তো” ?
ব্যথা ভরা দু চোখে জেমস এর দিকে তাকিয়ে প্রবলভাবে মাথা নাড়ে মারিয়া — “বিশ্বাস করো জেমস, আমি ওদের একটা কথাও বিশ্বাস করিনি । আমিতো তোমাকে জানি , তোমাকে বিশ্বাস করি । আমি নিজের চেয়েও সব থেকে বেশি তোমাকে বিশ্বাস করেছি । সে রাতে প্রত্যেকটা তাঁবুতে , ট্রেঞ্চে , বাঙ্কারে খুঁজে খুঁজে দেখেছি তোমাকে , কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি । আর শুধু তুমি নও , তোমাদের গোটা দলটার একজনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি । রহস্যজনকভাবে অত জন সৈনিক সব যেন উধাও ! রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল তোমার নেতৃত্বেই দলটা বিদ্রোহ শুরু করেছিল আর তুমিই নাকি মদত দিয়ে গোটা দলটাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছো । অবশ্য জানো তোমার দলের দু তিন জনের সাথে অনেক পরে দেখা হয়েছে । ততদিনে যুদ্ধ থেমে গেছে , পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক । ওই যে লম্বা , রোগাটে চেহারার ছেলেটা ছিল না ; পিটার না কি যেন ছিল নাম , যে তোমার খুব ন্যাওটা ছিলো – বস্ বস্ করতো কথায় কথায় ; তুমি ওর হাত দিয়ে আমাকে অনেকবার চিঠিও পাঠিয়েছিলে মনে আছে ? সেই পিটারকে একবার দেখলাম জাহাজ ঘাটায় মাল ওঠানো নামানোর কাজ করে ; টীকা দেয়ার কাজে বন্দরের ওদিকে যেতে হয়েছিল একবার । আমি কথা বলার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলাম অথচ আশ্চর্য কি জানো চিনতেই চাইল না , আমার মনে হলো কেমন যেন এড়িয়ে গেল ” ।
— ” এসব পুরোনো দিনের কথা এখন থাক । আমি কিন্তু মিথ্যাবাদী নই মারিয়া। আমি যে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে কাপুরুষের মতন পালিয়ে যাইনি সে কথা তুমি একদিন ঠিক জানতে পারবে । আর বাকি রইল তোমাকে দেওয়া কথা ; তার জন্যই তো এতদিন বাদে ফিরে এলাম । ফিরে এলাম তোমার কাছে , তোমাকে খুব ভালোবাসি যে । এক কাপ কফি খাওয়াবে মারিয়া ? আচ্ছা , তুমি বাড়িতে খবরের কাগজ রাখো না” !
মারিয়ার দু’চোখ ছল ছল করে ওঠে জেমস-এরও চোখের কোনে জল চিকচিক করছে । চোখের জলের গালের উপর গড়িয়ে পড়াটা আটকাতেই তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে মারিয়া— “হ্যাঁ রাখি তো ; তবে গত দু’দিন হলো বোধহয় অসুখ-টসুখ করেছে , কিম্বা অন্য কোনো কারণে খবরের কাগজ দেয়নি ছেলেটা । বোসো তুমি , এখনই কফি বানিয়ে আনছি” ।
রান্নাঘরে কফি তৈরি করতে করতে দূর থেকে জেমসকে দেখে মারিয়া — সেই একই রকম আছে জেমস । বয়স যেন সেই একই জায়গায় থমকে দাঁড়িয়ে আছে , সেই তুলনায় মারিয়ার সারা শরীরে এখন বয়সের থাবা পড়তে শুরু করেছে , চুলে পাক ধরেছে , প্রায় কুঞ্চিত ত্বক । সেখানে জেমস-এর শরীরে এতোটুকু বয়সের ছাপ কোথাও নেই ; ঠিক যেন আজ থেকে প্রায় চোদ্দ বছর আগেকার সেই জেমস । সুন্দর দুটি গভীর নীল চোখ । ওই চোখ দেখেই তো প্রেমে পড়েছিল সে । জেমসের মাথা ভরা সেই কোঁকড়ানো চুল গুলো , খানিক বিশ্রাম এর ফাঁকে ফাঁকে কতবার ওই কোঁকড়ানো চুলে বিলি কাটতে কাটতে হারিয়ে যেত মারিয়ার আঙুলগুলো আর হেসে উঠতো জেমস । যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে একদিন জেমস কথা দিয়েছিল , বলেছিল —” দেখো মারিয়া , এক দিন এই যুদ্ধ থেমে যাবে । খুব শিগগিরই সেদিনটা আসতে চলেছে আর একবার যুদ্ধ থেমে গেলে আমরা ফিরে যাব অনেক দূরে আমাদের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে গিয়েই চার্চে বিয়েটা সেরে ফেলবো কেমন” ! সেই দিনটা আর আসেনি । যুদ্ধ শেষ হবার অনেক আগেই একদিন হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল জেমস । আজ এত বছর পরে জেমসকে দেখে ছবির মতো মনে পড়ে যাচ্ছে অতীতের সব কথা ।
হাতে কফির কাপ নিয়ে ঘরে এসে মারিয়া দেখে ঘরে কোথাও কেউ
নেই ।জেমস নেই । হ্যাঙারে ঝোলানো ওর কোট-হ্যাট কিছুই নেই , শুধু আর্মচেয়ারটা অল্প অল্প দুলছে । বাইরের দরজাটা খোলা ! ঠান্ডা শীতল হাওয়া ঢুকছে হু হু করে । তবে কি জেমস চলে গেল ! কিছু না বলেই চলে গেল কেন ? প্রায় ছুটে বাড়ির বাইরে এল মারিয়া , চারদিক নিঝুম শান্ত , জনমানব নেই কোথাও । পায়ের কাছে এটা কি ?
দরজার পাশে আইভি লতাটা যেখান থেকে উঠেছে ঠিক সেখানেই গত তিন দিনের খবরের কাগজ রাখা । নিচু হয়ে সেগুলো হাতে তুলে নিয়ে ঘরে আসে মারিয়া । কাগজের দিকে চোখ পড়তেই পৃথিবীটা যেন দুলে ওঠে ! এ কিসের খবর দিয়েছে কাগজে ! চশমাটা একটু তুলে ধরে কাগজটা পড়তে শুরু করে মারিয়া— বড় বড় করে হেডলাইন — ” ষড়যন্ত্র গুপ্তহত্যা ” !
কোনো এক কোটিপতির সুইমিং পুল বানানোর জন্য বিশাল বড় বার্চগাছের জঙ্গল কেটে ফেলে ওই অঞ্চলের মাটি খোঁড়া হচ্ছিল আর তখনই মাটির নিচে শোয়ানো সারি সারি কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে । সন্দেহ করা হচ্ছে এই কঙ্কালগুলো সব বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সৈনিকদের যাদের মধ্যে বেশকিছু সৈনিকের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না এ যাবত । তারা কোনো মৃতের তালিকাতেও এতদিন ছিল না তার মানে বিদ্রোহ ঘোষণা করা সৈনিকদেরর গোটা দলটাকেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল আর রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে ওরা শত্রু পক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে সরে পড়েছে । যুদ্ধের সময় এরকম তো কতই ঘটেছে ঘটনা । বিশ্বাসঘাতকতা করেছে , মিথ্যাচার করেছে ওপর মহলের সেনা কর্তারা আর প্রাণ দিয়েছে কিছু নিরীহ সৈনিক । হতভাগ্য দেহ গুলোর সাথে পাওয়া গিয়েছে খুব পুরনো পোশাকের অংশ , ব্যাজ্ যা থেকে অনেক কষ্ট করে উদ্ধার করা হয়েছে কিছু কিছু মানুষের নাম। প্রাণপণে নাম গুলো পড়তে থাকে মারিয়া , চোখের সামনে অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসে – এইতো এইতো জেমস , জেমস রড্রিগজ…
চোখের জলে ভিজে যেতে যেতে মারিয়া অল্প দুলতে থাকা আর্মচেয়ার-টার কাছে এসে দাঁড়ায় ; ধীরে ধীরে বসে পড়ে। এত বছর পরে বিশ্বাসঘাতকতার কবরের মিথ্যে অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়ে জেমস এসেছিল তার মারিয়ার কাছে , মারিয়াকে দেওয়া কথা রাখতে আর এটা প্রমাণ করতে যে জেমস বিশ্বাসঘাতক ছিল না, ভীরু কাপুরুষ ছিল না । সে একজন সত্যিকারের মানুষ ছিল ।
মারিয়ার মনে হলো জেমস কোথাও যায়নি এখানেই আছে । এই আর্মচেয়ারটায় বসে আছে ও । সারা ঘরে এখন বিরাজ করছে অপরিসীম নৈঃশব্দ ! বাইরে থেকে হিম শীতল হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে আসছে কোন সুদূর পাড়ের গান আর ঘর জুড়ে গুঞ্জরিত হচ্ছে মারিয়ার কান্নাভেজা মৃদু স্বর — ” আমার বীর সৈনিক , ভালোবাসি ভালোবাসি তোমাকে জেমস , আজও ভালোবাসি ” । ছোট্ট একটা মোমবাতি জ্বালে মারিয়া জেমসের আত্মার উদ্দেশ্যে । আজ যে হ্যালোউইনের রাত , এই রাতেই তো অন্য জগত থেকে আত্মারা নেমে আসেন প্রিয়জনের খুব কাছাকাছি।