তোর সাহস কি করে হলো বিয়ে করার?? আমার সাথে এতদিন চুটিয়ে প্রেম করে এখন বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে এসেছিস কোন সাহস?? তুই জানিস না আমি কি চিজ??৷ তোকে আজকে যখন বাগে পেয়েছি আর ছাড়তেছি না, এদিকে আয়, ঐ দাঁড়া কোথায় পালাতে চাচ্ছিস, বলেই আমার কলার ধরে ইচ্ছে মত কিল-ঘুষি মারতে আরম্ভ করেছে৷ আর আমি সইতে না পেরে বলেই যাচ্ছি, ওমাগো, ও বাবাগো ছেড়ে দে আমায় আমি আর বিয়ে করবো না, প্রমিজ করছি আর বিয়ে করবো না, ছেড়ে দে মা৷ আর তখনি আমার পশ্চাৎদেশে মারলো এক কিক৷ আর আমি ধপাস করে পরে গেলাম রাস্তার পাশের জমিতে৷
আমি উঠতে গিয়ে দেখি ফ্লোরে পরে আছি৷ আর তখন বুঝলাম এটা একটা স্বপ্ন ছিলো৷ শুধু স্বপ্ন নয় ভয়ংকর স্বপ্ন৷ ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতে যাবো তখনি দেখি আমার মাথাটা একদম আমার সদ্ব্য বিবাহিতা বউয়ের পায়ের কাছে৷ বউ আমার দিকে গটগট করে তাকিয়ে আছে৷ তখন নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বউকে বললাম,
ঃ কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে কি দেখতেছো?? তোমার কি মনে হয় আমি বিছানা থেকে স্বপ্ন দেখে পরে গেছি?? যদি সত্যি এটা ভেবে থাকো তাহলে ভুল ভাবতেছো৷ আসলে আমার হাতঘড়িটা বিছানার নিচে পরে গেছে তাই ফ্লোরে শুয়ে আরাম করে খুঁজতেছি৷ তুমি যাও খাবার রেডি করো আজকে তারাতারি অফিসে যেতে হবে৷
কথা গুলো শুনে বউ খাটের দিকে একটু নজর দিয়ে মুচকি হেঁসে চলে গেলো৷
বউয়ের এই নরম মেজাজ, মুচকি হাসিটা যে কোনো ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার জন্য যথেষ্ট৷ যদিও এখন অন্য কোনো ছেলেকে ফাঁদে ফেলার কোনো সম্ভবনা নাই৷ কেনোনা এখন ফাঁদটা আমার নামে দলিল করা৷ এই ফাঁদে বার বার আটকে যাওয়ার জন্যে শুধু আমিই নিয়োজিত৷ ওহ হ্যা আমাকে তো চিনেনই আর আমার বউয়ের নাম হচ্ছে “সুমাইয়া”৷ তবে শর্টকার্ট “সুমু” বলে ডাকি৷ সে যাই হোক এখন একটু উঠে দাঁড়ালাম, উফ্ বড্ড লেগেছে কোমরটাতে৷ সময়টা দেখার জন্য ঘড়িটা খুঁজতে গিয়ে দেখি ঘড়িটা আমার বালিশের পাশেই রাখা৷ আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আমার গোমর ফাঁস হয়ে গেছে৷ আর তখনের বউয়ের সেই হাসিটা তাহলে মোটেও প্রেমের হাসি ছিলো না৷ এটা ছিলো পৈচাশিক হাসি যা অব্যাক্ত কথাগুলোর প্রতীক হিসেবে অতুলনীয়৷
ফ্রেশ হয়ে বউকে ডাক দিলাম,
ঃ সুমু একটু এদিকে এসো তো??
ঃ আসছি ওয়েট৷
ঃ জলদি আসো কথা আছে৷
ঃ জ্বী বলেন কি বলবেন?
ঃ কি করছো গো??
ঃ এই যে ঢং দেখাতে হবে না৷ জানেন না কি করেছি? আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে লাভ নেই৷ আপনি যে বিছানা থেকে ধপাস করে পরে গিয়েছেন সেটা আমি লাইভ দেখেছি৷ আর হ্যা কি সব আজগুবি কথা বলতেছিলেন তখন, আমার ভুল হয়ে গেছে আর বিয়ে করবো না, ছেড়ে দাও৷ কি এগুলা হুমম৷
ঃ স্বপ্নে আমি কি না কি বলেছি সেটা আমি জানি নাকি? ৷ ( কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে আজকের সেই ভয়ংকর স্বপ্নের কথা৷ কিন্তু এখন যদি বউকে বলি যে আমার ছ্যাকাখোর প্রেমিকাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি তাহলে নিশ্চিত আমি বিধবা হয়ে যাবো৷)
ঃ খেতে আসো খাবার রেডি৷
খাবার খেতে গিয়ে দেখি আব্বা আম্মা ছোটবোনটা খাচ্ছে৷ আমাকে দেখে সবাই মিটমিট করে হাসতে শুরু করছে৷ বুঝলামনা কেনো হাসছে?৷ আমিও চুপচাপ খেতে বসে পড়লাম৷ সুমু খাবার বেড়ে দিচ্ছে৷ খাবার মুখে দিতে যাবো আর তখনই সবাই হো হো হো করে হাসতে আড়ম্ব করল৷
ঃ কি ব্যাপার সবার মনে এত্ত রঙ কিসের?? এত্ত হাসা হচ্ছে কেনো?? আজকে কি “বিশ্ব হাসিখুশি” দিবস নাকি??
ছোটো বোনটা এবার বলতে শুরু করলো,
ঃ ভাইয়া তোর লজ্জা সরম কিছুই নেই নাকি৷ তুই কি এখনো বাচ্চা ছেলে? এরকম হাতির মত ওহ সরি তুই যা চিকুন, তাহলে বলতে হবে জিরাফের মত বডিটা নিয়ে কি করে তুই বিছানা থেকে পরে যাস বলতো? বলেই হো হো করে হাসতে আড়ম্ব করলো৷ এবার আমি একটু রাগি লুক নিয়ে বউয়ের দিকে তাকাতেই বউ বোকার মত মুখে ভয়ের ছাপ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো৷ বাবা মা মুচকি মুচকি হাসছে৷ জানিনা আমার বাবারও কোন খুশিতে, ঠ্যালাতে, ভাল্লাগছে জন্য বলা শুরু করলো,
ঃ জানো বউমা ও যখন ছোট ছিলো সপ্তাহে দুই তিনদিন বিছানা থেকে এরকম ভাবেই ধপাস হয়ে পরে থাকতো৷ বিছানায় খুঁজে পেতাম না৷ আজকে তো তুমি ফ্লোরে পেয়েছো আমি তো টর্চ জ্বালিয়ে খাটের নিচ থেকে পা ধরে টেনে বের করে নিয়ে আসতাম৷ আস্তে আস্তে যখন বড় হলো তখন তো বেডরুম আলাদা হয়ে গেলো তারপর আর এ দৃশ্য দেখা হয়নি৷ আজকে তোমার জন্য দেখতে পেলাম মা৷ বলো তুমি কি চাও?? আমার হাদারামের এরকম একটা দৃশ্য দেখানোর জন্য একটা ছোট খাটো পার্টি হয়ে যাক৷
বাবার কথা গুলো শুনে মেজাজ তো পুরোই হট হতে লাগলো৷ নতুন বউয়ের সামনে এভাবে প্রেসটিজ পামচার করার কি দরকার ছিলো?? লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে নির্লজ্জের মত রুমে চলে গেলাম৷ একটু পর সুমু আসলো কিন্তু মুখে কেমন যেনো ভয়ের ছাপ৷ ওকে হাসি খুশি ছাড়া একদম ভালো লাগোনা, বউটা যতই মুচকি হাসে, আমার ক্রাশময় হৃদয়টা ততই ক্রাশ খেতে থাকে৷ বউকে বললাম,
ঃ সুমু এ ঘটনা প্রচার হলো কিভাবে??
ঃ সরি! আমি বুঝতে পারিনি যে বাবাও সুযোগে সদ্ব ব্যবহার করবেন৷ আমি ছুটকিকে শুধু বললাম যে ম্যাজিক
দেখতে হলে এসো, ও আসলো ওকে তোমার এই হাল দেখালাম আর বাকিটা ও নিজেই করেছে৷ এমনকি মোবাইলেও ভিডিও করে রেখেছে পরে নাকি তোমায় না ইয়ে মানে আপনায় ব্লাকমেইল করবে৷
ঃ ভালোবাসো????
ঃ কি বুঝলাম না৷ (অবাক হয়ে তাকিয়ে)
ঃবললাম যে ভালোবাসো আমায়??
ঃ হুমম৷
ঃ অনলি হুমম??
ঃ হুমম না মানে, বাসি৷
ঃ কতটুকু??
কথাটা শুনতেই সুমুর চোখ কেমন যেনো টলমলে হয়ে গেলো৷ মনে হচ্ছে ওর ভিতরে যত মায়াবী ভাব ছিলো সবগুলো ওর মুখে ভেসে উঠেছে৷ টলমল চোখ, মায়াভরা সে চোখের ভাষা, নিঃশ্পাপ একটা মুখ, ঠোঁট দুটো কাঁপাকাপা করে বললো,
ঃ জানিনা আমি আপনাকে কতটুকু ভালোবাসি, কিন্তু এতটুকু বলতে পারি যদি কখনো শুন্যতা অনুভব করি, তাহলে আপনি তার পুর্নতা৷ আর যদি কখনো অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় তখন আপনি থাকলেই আর কিচ্ছু চাইনা৷
কাঁপাকাপা স্বরে সুমু কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো৷ সেদিন প্রথম দেখলাম একটি অব্যাক্ত ভালোবাসার কথা গুলো যখন প্রকাশ পায় তখন দৃশ্যটা কেমন মধুর হয়৷ সুমুকে বললাম,
ঃ আমায় যে ভালোবাসো তার প্রুভ দিতে হবে৷
ঃ বলেন কিভাবে দিতে হবে??
ঃ “আপনি” করে ডাকা চলবে না৷
ঃ চেষ্টা করবো৷
ঃ কাছে আসো তো একটু৷
ঃ কেনো??
ঃ শাস্তি দিবো৷
ঃ সরি বলেছি তো আর এরকম করবো না৷
ঃ কাছে আসতে বলেছি আসো৷
ঃ মারবেন নাকি???
ঃ কাছে আসতে বলছিনা?? (একটু রাগি স্বরে)
ঃ হুম এসেছি৷
ঃ আরো কাছে আসো এবং চোখ দুটো বন্ধ করো৷
ঃ হুম কিন্তু চোখ বন্ধ করতে হবে কেনো???
ঃ এজন্যই করবা যেনো শাস্তিতে ভয় না পাও৷
ঃ ওরে বাবা কি শাস্তি দিবেন??
ঃ চুপচাপ থাকো,
বলেই বা হাত দিয়ে কোমরে ধরে হিচকে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম৷ আর ও চোখ খুলে বলতে লাগলো,
ঃ এ মা এগুলো কি করছেন?? কেউ দেখে ফেলবে তো?? ছাডুন আমায়৷
ঃ কে দেখে দেখুক, বিনা পার্মিশনে সদ্ব্যবিবাহীত দম্পত্তির রুমে আসলে এরকম দৃশ্য অপরিচিত নয়৷
ঃ না না আপনি ছাড়ুনননন,
বলতে যাবে আর অমনি কোমল, নরম নেশা নেশা দুটো ঠোঁটের স্পর্শে চুপ করে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বেচারির৷ আর এভাবেই একজনের তালাবদ্ধ ভালোবাসার রং ছড়িয়ে পরলো আর এক নতুন দম্পত্তি পেলো ভালোবাসার স্বাদ৷ ফিরে পেলো নতুন এক ভুবন যেখানে রাজ করবে দুটো হৃদয়৷ যে ভালোবাসা ফুরায় না কখনো, আর যে ভালোবাসার তরে দুটো জীবন তাদের পুরো আয়ু শেষ করে দেয়৷