কলি অষ্টমঙ্গলায় বাপের বাড়ি গিয়ে একদিন থেকে আজই সবে ফিরেছে শ্বশুরবাড়িতে……বা এখন থেকে বলা যায় কলি নিজের বাড়িতে ফিরেছে। কলির বরের ছুটিও কদিন পরেই শেষ হয়ে যাবে, সে যে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, ছুটি-ছাটা তার তেমন নেই, বিয়ে করবার জন্য অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কোনমতে এই দু-সপ্তাহের ছুটি সে জোগাড় করতে পেরেছে। এরমধ্যেই সব আনুসঙ্গিক অনুষ্ঠানসূচীই অতি সংক্ষিপ্ত সংস্করণেই সারতে হবে। এমনিতেই কলির ডাক্তার বর শান্ত, ধীরস্থির, ভাবুক প্রকৃতির, কম কথার মানুষ, তারমধ্যে আবার নিজেও খুব আস্তে নীচু স্বরে কথা বলে। তাই হয়তো এখনও কলির সাথে ওর বর সৌম্য…..মানে ডাক্তার সৌম্যকান্তি মিত্রের আলাপ-পরিচয়টা সেভাবে হয়ে উঠতে পারে নি।
বাপের বাড়ি থেকে ফিরতেই শাশুড়িমার নির্দেশে কলি বাক্স গোছাতে বসেছে, আর তার ফাঁকেই তার মনটা একদৌড়ে কদিন পিছনপানে পাড়ি জমালো।
কোলকাতা থেকে অনেক দূরের ছোট জেলা শহরের মেয়ে সে, তার সেই শহর আসলে শহর কম গ্রাম বেশী। সেই রকম জায়গার ছাপোষা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সরল সাদামাটা মেয়ে কলি একেবারে দক্ষিণ কোলকাতার অভিজাত পাড়ার ঝাঁ চকচকে বাড়িতে বৌ হয়ে এসেছে। আর পদে পদে চালচলনে আদবকায়দায হোঁচট খাচ্ছে কলি, অবশ্য তা খাবারই কথা। কলির গত কয়েকদিন ধরে ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহকে স্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে এখনও। কলি খেয়াল করে নি কখন তার পেছনে এসে বর সৌম্য দাঁড়িয়েছে, আর সে মানুষটিও কিচ্ছুটি বলে নি, হঠাৎই কলির চোখ পড়লো সে মানুষটির দিকে। মৃদু হেসে সৌম্য একটা বেশ বড় প্যাকেট কলির হাতে দিয়ে বাক্সে রাখতে বললো চোখের ইশারায়। কলির খুব হাসি পেয়ে গেলো, অতিকষ্টে হাসি চেপে কলি সৌম্যর প্যাকেটটা বাক্সের মধ্যে চালান করে দিয়ে চেন টেনে আটকে বাক্স বন্ধ করে লক করে দিলো।
এবাড়িতে আসার পর থেকে কলি একটু ভ্যাবাচ্যাকা, এবাড়িতে জলখাবার হয় না…. ব্রেকফাস্ট হয়, দুপুরের খাবার না…. লাঞ্চ, রাতের খাবার না…… ডিনার, ঘুম ভেঙ্গেই বিছানায় বসে বাসীমুখে চা….. তার নাম বেডটি, রান্নাঘর না……কিচেন, আরও কতো কিছু, কলি যে এসবের মানেই জানে না তেমন কিন্তু নয়, অনভ্যাসে বারবার সব গুলিয়ে ফেলছে আর পাছে ভুলভাল কিছু বলে ফেলে সকলের হাসির খোরাক হয় তাই কলিও স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে মুখে কুলুপ এঁটে আছে।
শাশুড়িমা ছেলে-বৌমাকে শ্রীধাম পুরী পাঠাচ্ছেন পুরুষোত্তমকে দর্শন করে আসার জন্য। তাই দিন দুয়েকের জন্য কলি আর সৌম্য পুরী যাচ্ছে, একে ঠিক মধুচন্দ্রিমা বলা যাবে না। কাল ভোরে হাওড়া থেকে ধৌলি এক্সপ্রেসে ভুবনেশ্বর গিয়ে সৌম্য নতুন বৌ নিয়ে ওখানে রামকৃষ্ণ মিশনে মহারাজকে প্রণাম করে প্রসাদ নিয়ে বিকেলে গাড়ীতে পুরী পৌঁছবার কথা। পুরীতে জগন্নাথদেব দর্শণ সেরে দুটো দিন কোনরকমে কাটিয়ে আবার ভুবনেশ্বর হয়েই সন্ধ্যার ফ্লাইটে কোলকাতা ফেরার কথা। তার পরদিন সকালেই সৌম্য ফিরে যাবে তার ডিউটিতে হাসপাতালে বীরভূমের এক মহকুমা শহরে, তার ছুটি শেষে। আর কলি আপাতত কোলকাতায়
শ্বশুরবাড়িতেই থাকবে।
কাল খুব ভোরে কলিদের বেরোতে হবে, সকাল ছটায় হাওড়া থেকে ট্রেন, তাই আজ ডিনার তুলনায় একটু আগে হচ্ছে। সবাই এসে গেছে ডাইনিং হলে, দাদাভাই-দিদিভাই, দিদিসোনা-জাম্বু, পুপুন-তোতোন, বাবা-মা, কলি সবাই…..শুধু সৌম্য আসে নি। সৌম্যর খোঁজ পড়লে কলি মুখ ফসকে বলে ফেললো, “বড়ঘরে বসে বই পড়ছে।” এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে, কলি অপ্রস্তুত, ভুল করে বলে ফেলেছে, কারণ ওর বাপের বাড়িতে একটাই শোবার ঘর এবং সে ঘরটিকে ওরা বড়ঘর বলেই অভ্যস্ত……কিন্তু এবাড়িতে তো শোবার ঘর নয়….. বেডরুম বলে সবাই। শাশুড়িমা আর দিদিসোনা সামলে দিলো পরিস্থিতিটা। কখন যে সৌম্য এসে ধীরে ধীরে নিজের জায়গায় বসে পড়েছে কেউ খেয়াল করে নি, তার স্বভাবসঙ্গত ভঙ্গিতে মৃদু অথচ দৃপ্ত কন্ঠস্বর শোনা গেলো, “আস্তে আস্তে সবই অভ্যাস হয়ে যাবে।” আর যায় কোথায়? দাদাভাই-দিদিভাই, দিদিসোনা-জাম্বু সবাই মিলে সমস্বরে, “আরে বাহ্, আহা হা এই তো ডাক্তারবাবুর বেশ বুলি ফুটেছে!” কলি তো লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না, এমনকি বাবা-মাও ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে বললেন সবাইকে তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পড়তে। সৌম্য-কলি নাহয় বেড়াতে যাবে, বাকীদের তো আর ছুটি নয়, সবাইকেই সকালে নিজের নিজের কাজে বেরোতে হবে, যদিও দিদিসোনা-জাম্বু কলিরা ফেরার কদিন পরেই আমেরিকায় নিজেদের কাজের জায়গায় ফিরবে। কলি সবার সাথে, সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
ভোর তিনটেয় অ্যালার্মের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে এত হুড়োহুড়ি তাড়াতাড়িতে সময়টা পার হয়েছে যে ট্রেন যখন ছাড়লো তখন কলির মাথা ঘুরছে, কেমন যেন গলাটলা শুকিয়ে হাঁফ ধরে আসছে। কলি শক্ত কাঠ হয়ে মাথাটা পিছনে হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে, যেন কত দূর থেকে মৃদুস্বরে ভেসে এলো, “ঘাড়ে লেগে যাবে তো!” ডাক্তারবাবু কলির মাথাটা আলতো করে ধরে কাত করে নিজের কাঁধে রেখে নিজের বাঁগালটা কলির মাথায় ঠেকিয়ে বাঁ হাতটা দিয়ে কলির বামবাহুটা কোমল স্পর্শ করে বসলো। শেষ নভেম্বরের আয়েশী সকাল কুয়াশা ছেঁড়া মিঠে রোদ সর্বাঙ্গে মেখে আদুরে ভঙ্গিতে ট্রেনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে ছুটতে এসি কামরার কাঁচের জানালায় দুষ্টু চোখ রেখে চুরি করে দেখছে এক নবদম্পতিকে। ট্রেনের দুলুনি আর সৌম্যর আন্তরিক স্পর্শ কলিকে আবিষ্ট করে ফেলেছে, সদ্য বাইশ উত্তীর্ণা নবোঢ়া তরুণী মধ্য আঠাশের বলিষ্ঠ সুপুরুষের উষ্ণ কোমল প্রথম স্পর্শে মোমের মতো গলে গলে পড়ছে, কলির সমস্ত অন্তঃকরণ সৌম্যকান্তির স্বত্তায় বিলীয়মান দাম্পত্য মাধুর্যে। কলির অনুভবে প্রবিষ্ট হচ্ছে শান্ত নম্র স্নিগ্ধ রুচিবান সুশীল সৌম্যর তরঙ্গায়িত উপস্থিতি……… অনাঘ্রাতা আম্রমঞ্জরীর মতো সুনির্মল অকালবসন্ত সমাগম।
হু হু করে ছুটছে ধৌলি এক্সপ্রেস, হু হু করে ছুটছে ঘড়ির কাঁটা, পার হয়ে যাচ্ছে একের পর এক স্টেশন, কলি আর সৌম্য দুজনেই কথা হারিয়েছে, ক্ষুধা হারিয়েছে, তৃষ্ণা হারিয়েছে, ক্লান্তি ও নিদ্রাও হারিয়েছে। নির্বাক দুটি মূর্তি, আর তাদের হৃদয়দুটি পরস্পরের সাথে নিরুচ্চার আলাপচারিতায় নিমগ্ন। কফি বিক্রেতা ছেলেটির বারংবার অনুরোধে দুজনে দুকাপ কফি খেলো, বাড়ি থেকে মায়ের গুছিয়ে দেওয়া স্ন্যাকস দিয়ে, ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘরে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের গন্তব্য ভুবনেশ্বরে ট্রেন পৌঁছবে।
এপর্যন্ত সবকিছু ঠিক রুটিনমাফিকই চলছে, বিকেল চারটে নাগাদ ওরা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বেরোনোর সময় প্রণাম করবার পর মহারাজ সৌম্যকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, নরেন্দ্রপুরে পড়ার সময় থেকেই সৌম্য মহারাজের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র, এতবছর ধরে সৌম্য মহারাজের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে, আর মহারাজ কলিকে আশীর্বাদ করে ওর হাতে “কথামৃত ও মায়ের বাণী” বইদুখানি তুলে দিলেন। মহারাজকে ওরা আবার আসবে কথা দিয়ে রওনা হোলো।
মসৃণ হাইওয়ে ধরে গাড়ী ছুটছে, বাইরে বিকেল ঘনিয়ে উঠছে, আলো ম্লান হয়ে আসছে, এই কনে দেখা আলোর রক্তাভায় কলির মুখের ঐশ্বরিক দীপ্তিতে সৌম্যর চোখের কোণের মুগ্ধ দৃষ্টি নিবদ্ধ। সন্ধ্যা নামছে, দূরে দূরে আলো জ্বলে উঠছে, গাছ গাছালির ছায়াঘন অন্ধকারের বুক চিরে গাড়ীটা কলি আর সৌম্যকে নিয়ে আলো ঝলমল পুরী শহরে ঢুকে পড়লো। বাঁয়ে গর্জনরত সমুদ্র, ডাইনে সার সার হোটেল, স্বর্গদ্বারে সাজানো গোছানো ছিমছাম এক হোটেলে কলিরা উঠেছে। হোটেলের ঘরের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র, অন্ধকারের সাথে মিশে রয়েছে সাগরের বিপুল জলরাশি, ঢেউয়ের মাথায় জ্বলজ্বল করছে ফসফরাস, যেন কোটি কোটি জোনাকি সাগর ঢেউকে আলো জ্বেলে পথ দেখিয়ে বালুতটে পৌঁছে দিচ্ছে অক্লান্ত। কলি জানালায় দাঁড়িয়ে যেন অতীত বর্তমান সব ভুলে, সৌম্য পাশে এসে আস্তে আস্তে বললো, “চলো নীচে গিয়ে সীবীচে একটু বসি।”
কলি আর সৌম্য সাগরবেলায় বসে আছে, অনেক সময় পার হয়েছে, ভীড় পাতলা হয়েছে, ওরা দুজনে বসে আছে, হালকা হিম হিম পরশ, সৌম্যর হাতে ধরা কলির হাত, দুজনের মধ্যে শুধু স্পর্শ বিনিময়ে চলছে এক মহাকাব্য কথা নিরুচ্চারিত। আর সামনে সমুদ্র ঢেউ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে শুনিয়ে চলেছে উদাত্ত কণ্ঠে হাজার কবিতা, কলি আর সৌম্য বিস্ময়াবিষ্ট মুগ্ধ, এ এক অভূতপূর্ব পরম প্রাপ্তি দুজন দুজনের নিবিড় সান্নিধ্যে।
দুজনে হোটেলের একতলার ডাইনিং হল থেকে একেবারে রাতের খাওয়া সেরে ওপরে নিজেদের ঘরে এলো। কলি ব্যাগপত্র খুলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বার করলো আর সৌম্যর হাতে সেই প্যাকেটটা ধরিয়ে দিলো। সৌম্য প্যাকেটটা বেডসাইড টেবিলে রেখে বাথরুমে ঢুকলো আর কলি তাদের ঘর লাগোয়া বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে প্রথমে শ্বশুরবাড়িতে মাকে ফোন করলো তারপর জলপাইগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে নিজের বাবাকে, উনিই কলির মা বলো আর বাবা বলো, দুবছর বয়সে মাতৃহারা হবার পর থেকে বিয়ের আগের মূহূর্ত পর্যন্ত বাবাই কলির সর্বস্ব ছিলো। খুব দূর সম্পর্কীয় কারুর ঘটকালিতে কলি সৌম্যর চারহাত এক হয়েছে, আর শাশুড়ির মধ্যে মাকে খুঁজেছে, তাই শাশুড়িকে মামণি নয় মা ডাকতে ইচ্ছে হয়েছে। কলি শুধু নামে নয় রূপেও কলি, তার স্নিগ্ধ সরলতার মিশ্রণে কলি অপরূপা! সৌম্য বাথরুম থেকে বেরিয়েছে, পাজামা-পাঞ্জাবীতে সৌম্য আরও সৌম্য। কলি আড়চোখে সৌম্যর দিকে তাকিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়াতেই সৌম্য সেই প্যাকেটটা কলির হাতে ধরিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো, “এটা তোমার।” কলি প্রতি পলে অবাক হচ্ছে, এখন আর হাসি পাচ্ছে না, অদ্ভুত ভালোলাগায় কলি ভেসে যাচ্ছে, পূর্ণ হয়ে উঠছে।
কলি বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে সৌম্য বারান্দায় বেতের চেয়ারে, সৌম্যর ফোনে আমজাদ আলী খাঁ বাজছে, দরবারী কানাড়া, কলি চিনেছে, ধীরপায়ে এসে কলি ঠিক সৌম্যর পাশটিতে দাঁড়ালো সৌম্যর কাঁধ ছুঁয়ে, কলির হাতটা ছুঁয়ে সৌম্য তাকালো কলির দিকে, সৌম্যর আনা হালকা আসমানী নীল সিল্কের রাত পোশাকে কলি যেন স্বর্গের অপ্সরা, অপলক সৌম্য, কলিকে পাশের চেয়ারে বসালো সৌম্য, দরবারী কানাড়া মীর বিস্তার করছে, আর সেই অলৌকিক সুরের মূর্ছনায় এক অনন্য মায়ালোকে প্রবেশ করছে কলি আর সৌম্য, সৌম্য আর কলি, অনাবিষ্কৃত অপার রহস্যময়তার সন্ধানী অনভিজ্ঞ দুই মানব-মানবী।
চোখে আলো পড়ে ঘুম ভাঙ্গলো কলির, ধাতস্থ হতে ক্ষণিক সময় নিলো, তারপর রাতের কথা মনে পড়তেই সৌম্যর দিকে চোখ গেলো, সৌম্য উপুড় হয়ে এখনও ঘুমোচ্ছে, একটা হাতে আলগা করে কলিকে জড়িয়ে। কলি সৌম্যর অবিন্যস্ত চুলগুলো ঘেঁটে দিয়ে ওর হাতটা খুব সন্তর্পনে সরিয়ে মুচকি হেসে বারান্দায় এসে দুহাত জোড় করে সূর্যদেব আর সমুদ্রকে প্রণাম জানিয়ে প্রার্থণা করলো, নারী জীবনের সমস্ত সুখ যেন ও পায় আর ওর সৌম্যকে যেন ও খুব সুখী করতে পারে।
কলি বরাবরই সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ে, কলি একেবারে স্নান সেরে জগন্নাথদেব দর্শণে যাবার জন্য তৈরী হয়ে নিলো, এবার ও সৌম্যর মাথায় হাত ছোঁয়াতেই সৌম্য চোখ মেলে পূর্ণদৃষ্টিতে কলির দিকে তাকিয়ে হাসলো। মৃদুভাষী সৌম্য উঠে পড়লো, হাসিমুখে স্বভাবসিদ্ধ ধীরতায় বললো, “বাহ্, খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।” কলির সমস্ত চেতনা জুড়ে সাতসুর ঝংকার তুলেছে, প্রতি অণু পরমাণুতে বাজছে সরগম, কলি অনুরণিত, কলি সৌম্যতে ঋদ্ধ-ব্যপ্ত-শুদ্ধ।
সৌম্যও মিনিট পনেরোর মধ্যে তৈরী হয়ে নিলো, আর দুজনে বেরিয়ে পড়লো পুরুষোত্তম মন্দিরের উদ্দেশ্যে। দেবদর্শণ হোলো, পূজার্চনা হোলো, মন্দির প্রদক্ষিণ হোলো, তারপর সামান্য দান-দক্ষিণা সেরে হোটেলে ফিরলো। বেশ বেলা হয়েছে, কলি আর সৌম্য পেট ভরে কচুরি মিষ্টি খেয়ে নিয়েছে মন্দির থেকে ফেরার পথে। সৌম্য কলির কানে ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, “আজ আমি আমার বৌকে নিয়ে সমুদ্রে স্নান করবো।” কলি তো লজ্জায় লাল।
সালোয়ার কামিজের ওড়নাটা কোমরে বেঁধে কলি সৌম্যর হাত ধরে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বসে দাঁড়িয়ে সমুদ্রস্নান করেছে প্রাণ ভরে। দুপুরে জমিয়ে ভাত খেলো দুজনে নানা রকমারী সামুদ্রিক মাছের পদ দিয়ে, তারপর টুকিটাকি নিজেদের স্কুল-কলেজ পছন্দ-অপছন্দের গল্প করতে করতে দুজনেই ঘুমিয়ে কাদা। সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙ্গতে দুজনে কফি খেয়ে আবার সমুদ্র সৈকতে, কলি সকলের জন্য ছোটখাটো গিফট কিনলো, সৌম্যর তো সবেতেই মাথা দুলিয়ে সম্মতি। দুজনে আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বালির উপর খানিকক্ষণ বসে থেকে হোটেলে ফিরলো, সৌম্য পরেরদিনের জন্য গাড়ি বুক করে নিলো, ধৌলাগিরি, উদয়গিরি, খন্ডগিরি, নন্দন কানন আর কোণার্ক মন্দির ঘুরে ওরা বিকেলের মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছবে। রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে কলি আর সৌম্য গান শুনলো অনেকক্ষণ বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে, পুরনো দিনের বাংলা হিন্দি রোমান্টিক গান, কলি অনুধাবন করছে সৌম্যকে যতটা গুরুগম্ভীর মনে হয়েছিলো প্রথমে ততটা নয়, সৌম্য সত্যিই ভীষণ বন্ধুত্বপূর্ণ, সহমর্মী, অনুভবী। কলির মনে হোলো নিতান্ত ভাগ্যবলেই ও বাবার পরে এমন কাউকে জীবনে আপনজন হিসেবে পেলো যার ওপরে সম্পূর্ণ নির্ভর করা যায়। কলি স্বামী সৌম্যর প্রেমে পড়ছে ধীরে ধীরে একটু একটু করে সুখের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে, আনন্দ সাগরে ভাসতে ভাসতে, কল্পনার রঙীন ফানুসে উড়তে উড়তে, এতো খুশিও জীবনে পাওনা ছিলো ভাবতে ভাবতে।
কখন যে স্বপ্নমাখা মায়াবী অবর্ণনীয় রাতটা শেষ হয়েছে দুজনেরই বিস্মৃতির অতলে। ঘুম ভাঙ্গলো হোটেলের রিসেপশন থেকে আসা ফোনে, বোধহয় গাড়ী এসে গেছে। কলি ধড়মড় করে উঠবে কি? ওতো বাঁধা তখনও সৌম্যর বলিষ্ঠ বাহুপাশে। কলি সৌম্যকে জাগিয়ে দিলো নিজের খোলা চুল দিয়ে নাকে মুখে সুড়সুড়ি দিয়ে, আর সৌম্য কলিকে বুকে টেনে স্নেহসোহাগে ভরিয়ে কানে কানে বললো, “কাল সকালে আমাকে চলে যেতে হবে যে!” কলি চুপটি করে সৌম্যর বুকে লেপ্টে আঙুল দিয়ে সৌম্যর পিঠে আঁকিবুঁকি কেটে চললো। অনেক বলা নাবলা কথার অথৈ সাগরে দুজনে দুজনকে খুঁজে চলেছে আপন আপন মনমন্দিরে। সম্বিত ফিরলো রিসেপশনের ফোনের কর্কশ ধাতব আওয়াজে। সৌম্য ফোন ধরে বলে দিলো, গাড়ীর ড্রাইভারকে ব্রেকফাস্ট দিতে এবং ওদের দুজনের চা-ব্রেকফাস্ট ও বিল রুমসার্ভিসে পাঠাতে। ঝড়ের বেগে দুজনে তৈরী হয়ে নিলো, কলি বুদ্ধি করে আগের দিনই বেশীর ভাগ গোছগাছ সেরে রেখেছিলো।
অল্পবয়সী ড্রাইভার ছেলেটি খুব যত্ন করে ওদের সব দ্রষ্টব্য জায়গায় ঘুরিয়ে দেখিয়ে আর ওদের দুজনের অনেক ছবি তুলে দিয়ে ওদেরকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিলো। বিদায় নেবার সময় ছেলেটি নিজের ফোন নম্বর দিয়ে অনুরোধ জানালো আবার পুরী এলে ওর গাড়ীতেই যেন ওরা ঘোরে, কারণ ততক্ষণে কলি ড্রাইভার ছেলেটির দিদি হয়ে গেছে যে। এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি চেক পেরিয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে লাগেজ ড্রপ করে ওরা কিছু স্ন্যাকস কফি খেয়ে নিতে নিতেই সাতটা প্রায় বেজে গেলো, সাড়ে সাতটায় টেকঅফ, ওরা উঠে পড়লো প্লেনে বোর্ডিংপাস দেখিয়ে, কলি শক্ত করে খামচে সৌম্যর হাতটা ধরে রইলো সারাটা সময় ধরে, চোখ বুজে, ঠোঁট টিপে, ল্যান্ডিং করা পর্যন্ত সৌম্যর বরাভয় কলির ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারে নি। টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে ঢুকে তবে কলি সৌম্যর হাত আলগা করলো। সৌম্য মুচকি হেসে কলির হাতে আলতো চাপে বুঝিয়ে দিলো কলিকে অনেক অব্যক্ত ভাবনা।
এয়ারপোর্টে দিদিসোনা আর জাম্বু এসেছে কলিদের নিতে, লাগেজ ক্লিয়ারিংয়ে বেশ অনেকটা সময় লাগায় ওদের বাড়িতে পৌঁছতেই সাড়ে এগারোটা পার, ফেরার পথে গাড়ীতে দিদিসোনা আর জাম্বুর লাগাতার একতরফা রসিকতার উত্তরে কলি সৌম্য কেবল মুখ নীচু করে লাজুক হেসে রাঙা হয়ে উঠেছে। সারাদিন ঘোরাঘুরি আর জার্নির ধকলে কলি আর সৌম্য ভীষণ ক্লান্ত, সামান্য কিছু খেয়ে ওরা শোবার তোড়জোড় করছে, আর কলির বুকের ভেতরটা কেমন যেন মুচড়ে উঠছে, চোখের কোলে মুক্তো বিন্দুর মতো দুফোঁটা জল টলটল করছে, সৌম্যর চোখ এড়ায় নি, পেছন থেকে কলিকে দুহাতে জড়িয়ে সৌম্য বললো, “রোজ ফোন করবো, সকালে, বেডরুমে থেকো তখন।” এবার কলি সৌম্যর বুকে মুখ গুঁজে কেঁদেই ফেললো, নতুন জায়গায় নতুন ঘরবাড়িতে নতুন লোকজনদের মাঝে একা, ভয় আর মনখারাপ মিলে মিশে কলি অশ্রুমতী। সৌম্যর আশ্বাস, “ছুটি পেলেই আসবো তো।” কলির…… হয়তো বা সৌম্যরও মনে হচ্ছে এরাতটা যেন শেষ না হয়।
সকালে খুব ভোরে মা ডেকে দিলো কলি সৌম্যকে। সৌম্যর সকালে আটটা নাগাদ বেরোবার কথা, কলি সব গুছিয়ে দিয়েছে সৌম্যর জিনিসপত্র, সৌম্যও তৈরী, কলিকে হোয়াটসঅ্যাপ করা শিখিয়ে দিয়েছে সৌম্য, হাসপাতালে কাজের চাপে যদি কখনও ফোন করতে না পারে তবে মেসেজ করে দেবে আর সকালে ঠিক ফোন করবে রোজ। কলির কপালে বিদায়চুম্বন এঁকে সৌম্য নীচে নেমে গেল, পিছনে পিছনে কলি। সৌম্য বাবা-মা, দাদাভাই-দিদিভাই, দিদিসোনা-জাম্বু সবাইকে প্রণাম করলো, পুপুন তোতোনের পিঠ চাপড়ে সৌম্য গিয়ে গাড়ীতে উঠলো। কলি একছুটে দোতলায় নিজের বেডরুমের জানালায়, ওখান থেকে গেটটা সোজাসুজি দেখা যায়, বাগান পেরিয়ে গেট থেকে বেরিয়ে বাঁয়ে ঘুরে মেনরোড ধরার সময় সৌম্য গাড়ীর জানালা দিয়ে হাত নাড়লো, আর দোতলার জানালা থেকে শাঁখা পলা সোনার গয়না পরা একটি হাত বিদায় জানালো সৌম্যকে।
সারাদিন কলি মায়ের পায়ে পায়ে ঘোরে, দুপুরে বাড়ীতে শুধু ওরা দুজনেই তো থাকে। দিদিসোনারা আমেরিকা ফিরে গেছে, বাড়ীটা একদম ফাঁকা, বাবা দাদাভাই দিদিভাই অফিসে, পুপুন তোতোন স্কুলে। কলি আজকাল খুব কম কথা বলে, সৌম্যর ছোঁয়াচ লেগেছে। দুপুরে মা যখন বিশ্রাম নেয় তখন কলি ওর বেডরুমে, গান শোনে, ম্যাগাজিন-গল্পের বই পড়ে, নিজের ঘরের জিনিসপত্র এধার ওধার নাড়াচাড়া করে ঘর গুছোয় আর সৌম্যর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে কত কিছু যে লেখে, ওটাই যেন ওদের মুখোমুখি বসে গল্প করা।
বিয়ের পর থেকে সৌম্য খুব চেষ্টাচরিত্র করে মাসে অন্তত একবার কোলকাতায় বাড়িতে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করে। জুনিয়র ডাক্তারদের ছুটি মিলতেই চায় না। এভাবেই দেখতে দেখতে বছর ঘুরতে চললো। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সৌম্য এমডি পড়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে, বাবা-মা খুব খুশি, আর কলি তো আনন্দে কথা হারিয়েছে, ফোন করে জলপাইগুড়িতে বাবাকে জানিয়েছে সুখবরটা।
কোলকাতার নামী সরকারি হাসপাতালে সৌম্য এমডি করছে, সাথে ঐ হাসপাতালেই ডিউটি সরকারি নিয়মানুযায়ী। আগের থেকে অনেকটা বেশী সময় আজকাল বাড়িতেও থাকতে পারে প্রয়োজনে, খুব খুশি সবাই। মসৃণ ছন্দে কলির জীবন কাটছে, পৃথিবীর সব সুখ ঈশ্বর যেন অকৃপণ হাতে উপুড় করে ঢেলে দিয়েছেন কলির আঁচলে। সৌম্যর এমডি শেষ হতে আর মাত্র মাস কয়েক, আর কলি মা হতে চলেছে, সৌম্যর সন্তানের জননী। স্বামী গরবে গরবিনী কলি এমনিতেই তো বড্ড স্বামী সোহাগী, তায় সন্তান সম্ভাবনা, সৌম্য কলিকে হাতের পাতায় করে রেখেছে। বাড়ীতে সর্বক্ষণ হাসিখুশির জোয়ার খেলে যাচ্ছে। কলির বাবা একদিন জলপাইগুড়ি থেকে এসে সাধ্য মতো উপহার সামগ্রী দিয়ে মেয়ে জামাইকে আশীর্বাদ করে গেছেন কলির হবু সন্তানের মঙ্গল কামনায়।
কলির প্রসবের আর খুব বেশি দেরী নেই, কলিকে আজকাল নীচে নামতে দেয় না সৌম্য। সারাদিন ওপরের বারান্দায় আর নিজের বেডরুমেই কলি কাটিয়ে দেয়। সৌম্য কাল রাতে হাসপাতাল থেকে ফিরতে পারে নি এমার্জেন্সির চাপে, আজ সকাল থেকেই কলির শরীরটা কেমন অস্থির অস্থির করছে। সৌম্যকে অনেকবার ফোন করে জানাতে চেয়েছে কলি, খুব কষ্ট হচ্ছে ওর, কিন্তু সৌম্যর ফোন সুইচড অফ, বারবার একই রেকর্ডেড কথা ভেসে আসছে। কলি আর পারছে না, চেঁচিয়ে মাকে ডাকলো, কোনো সাড়া নেই, কেউ আসে নি এখনও কলির কাছে, কলি বেডরুমেই শুয়ে আছে, ওঠার শক্তি নেই, ডাকার জন্য গলায় জোর নেই, কলির সারা শরীর থরথর করে কেঁপে কেঁপে উঠছে কোনো অজানা আশংকায়। আর একবার ফোনটা তুলে সৌম্যকে ফোন করে বলতে চাইলো ওর খুব শরীর খারাপ লাগছে, কিন্তু পারলো না, ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো, কলি চেতনা হারালো।
এরপর অনেকদিন পার হয়ে গেছে বোধহয়, কলির ঠিক মনে নেই, কলি আর হিসেব রাখতে পারে না, কলির মাথার ভেতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে, মনের ভেতরটা তালগোল পাকিয়ে গেছে, বুকের ভেতরটাকে কেউ যেন দুমড়ে মুচড়ে নিঙরে নিয়েছে নির্মমভাবে। কলি কাঁদতেও ভুলে গেছে, আর কলির হাসি তো ব্ল্যাকবোর্ডের ওপর থেকে চকের লেখা মোছার মতো করেই বিধাতা একেবারে মুছে দিয়েছেন। কলি কোনো কিছুই আর ভাবতেও পারে না, ঠিকমতো বুঝতেও পারে না কিছু। সারাদিন কলি এখন বেডরুমেই থাকে, কখনও শোয়, কখনও বসে, মাঝেমাঝে জানালায় দাঁড়ায়, কিন্তু নীচে নামে না, সৌম্য রাগ করবে নীচে নামলে, সৌম্য বারণ করেছে যে নীচে নামতে।
কলির কানে এলো নীচে কেউ যেন খুব জোরে চিৎকার করে কাঁদছে, কী ব্যাপার? সৌম্য ওপরে এলে জিজ্ঞাসা করবে কি হয়েছে? সৌম্য বলেছে সন্তান সম্ভবা থাকলে কোনো চাপ নিতে নেই, কিন্তু এখানে এখন তো কলির চাপ হচ্ছে, কলি ধীরে ধীরে নীচে নামলো, কলির বুকে চাপ ধরে কেমন কষ্ট হচ্ছে, কলির পা কাঁপছে, এত ধূপের ধোঁয়ায় কলির দমবন্ধ হয়ে আসছে, একী সৌম্যর ছবিতে মালা কেন? কলি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।
কলি ওর বেডরুমে, মা কলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, দিদিভাই কলির হাতে পায়ের পাতায় ম্যাসেজ করছে। কলির মনে আস্তে আস্তে ছেঁড়া ছেঁড়া কিছু দৃশ্যের স্লাইডশো চলছে, সেদিন রাতে এমার্জেন্সির ডিউটির চাপে সৌম্য ফিরতে পারে নি, সকালে কলির শরীর খারাপ লাগছিলো তাই কলি সৌম্যকে অনেকবার ফোন করেছিলো কিন্তু সৌম্যর ফোন সুইচড অফ ছিলো।
তারপর মাকে চেঁচিয়ে ডেকেছিলো, কিন্তু মা আসে নি…… দিদিভাই এসে কলিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো মা-বাবাকে নিয়ে দাদাভাই সৌম্যর হাসপাতালে গেছে, রাতের এমার্জেন্সি পেশেন্টকে সৌম্যরা অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারে নি, ভোররাতে এক্সপায়ার করার পর পেশেন্ট পার্টি ডাক্তারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইচ্ছা- কৃত চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে, ওদের তিন জনকে এলোপাথারি মারতে মারতে একেবারে অচৈতন্য রক্তাক্ত করে ফেলে, সৌম্যর অবস্থা আশঙ্কাজনক, আইসিসিইউতে রেখেছে সৌম্যকে, অবস্থা ক্রমশঃ খারাপের দিকে…….এর পর কলি অচেতন হয়ে যায়। এখন ধীরে ধীরে কলির চেতনায় সৌম্যর স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে, কলির পৃথিবীটা হঠাৎ এমন বেরঙীন হয়ে গেলো, কী অপরাধ কলির? এতবড় শাস্তি কলি পেলো কী কারণে? কলি সৌম্যর সন্তান জন্মের আগেই কার দোষে পিতৃহারা হোলো? কার কাছে অভিযোগ জানাবে কলি? কেউ কি এই ক্ষতিপূরণ করতে পারবে? পারবে কি সৌম্যর অভাব পূরণ করতে? কলি কি করে মানবে সৌম্য আর কখনও ফিরবে না? আর কখনও বলবে না, “বাহ্, কী সুন্দর রঙীন বেডরুম দেখো তো আমাদের!”