– খামোখা ঝগড়া করলে। এত রাগ করতে আছে?
– আমি তো ঝগড়া করিনি, বরং একটা ভালো কথা বোঝাতে চেয়েছিলাম।
– ভারি তো বোঝানো হলো, মাঝখান থেকে রাগারাগি করে খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলে
– আমাকে এরকম করতে দেখেছো কখনো?
– তুমি এখন আর সেই ছোটোটি নেই, বড় হচ্ছো, গত মাসে ৯ পুরো করে ১০ এ পা দিয়েছ
– তাতে কি?
– বড় হলে বুঝদার হতে হয়।
– তা তুমি বুঝি খুব বুঝদার?
– বুঝদার বটেই তো, তোমার মত কি খাওয়া ছেড়ে উঠে যাই আমি?
– তা যাওনা, কিন্তু দুপুর বেলা একা একা জানলার ধারে বসে কাপড়ের খুঁটে চোখ মোছো।
– বড়দের এত লক্ষ্য করতে আছে বুঝি?
– কত না বড় এলেন উনি ! ভারি তো বছর দুই … ।
– সবাই বলে মেয়েদের এইটাই অনেক, আর ছেলেদের ১০ বছর কিছুই না।
– কিছুই না ? তবে যে বললে আমাকে বুঝদার হতে হবে?
– লক্ষিটি, আর নয়, বেলা গড়িয়ে দুপুর শেষ হতে চলল, চলো একটু কিছু মুখে দাও
– না। দেবোনা। কেউ ভালোবাসে না এ বাড়িতে। ইস্কুলে ভালো লাগেনা, বাড়িতে ভালো লাগেনা……
– পাগল ছেলে। সবাই ভালোবাসে। সোহাগ না করলে বুঝি কেউ শাসন করে?
– বন্ধুরা কিছু বোঝায় যখন, তখন তো শাসন দরকার হয়না।
– তাই বুঝি? তো তুমি বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করোনা?
– আমার বন্ধু নেই।
– আমি তোমার বন্ধু না?
– (মুখে একটু হাসি) তুমি বন্ধু বটে।
– আমার সঙ্গে তো কথা কাটাকাটি লেগেই থাকে তোমার
– তুমি যে মাঝে মাঝেই শাসন করতে চাও
– সে তো তুমি কথা না শুনলে…।
– আমি কথা শুনি না বুঝি?
– এই যে কখন থেকে বলছি একটু কিছু মুখে দাও। এই টুকু এনেছি তোমার জন্যে……।
– (চকচকে চোখে জামবাটির দিকে তাকিয়ে) লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে এলে? আমার জন্যে?
– না লুকিয়ে উপায় আছে? কেউ দেখলে আমাকেই বকবে? আর কথা নয়, লক্ষি ছেলে হয়ে খেয়ে নাও দেখি, আর তার পরে আমাকে একটা কিছু পড়ে শোনাও, অনেক দিন কিছু শোনাওনা।
– ওরে বাবা, এ তো অনেক, জাম বাটি ভর্তি…… !!
– তা বললে হবে না। সব টুকু খেয়ে নেবে। আমি বাতাস করছি হাত পাখা দিয়ে। আমি জানি তুমি কি খেতে ভালবাসো।
আধ ঘন্টা পর
– কি লিখলে দেখি খাতায়
– দাঁড়াও দাঁড়াও, এই শেষ করে নি
– আমাকে কি এইটাই শোনাবে? নিজে লিখে? বাঃ রে, দেখি কেমন লিখতে পারো।
– হয়েছে শেষ, এই বার শোনো বৌঠান
আমসত্ব দুধে ফেলি
তাহাতে কদলী দলি
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে
হাপুস হুপুস শব্দ
চারিদিক নিস্তব্ধ
পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে”