দাদার খাট

দাদার খাট

সারা রাত শ্রাবণীর(আমার গার্লফ্রেন্ড) সাথে কথা বলার পর শেষ রাতের দিকে একটু ঘুমিয়েছি। কিন্তু সকাল সকাল দাদী ডাকতে লাগলো।আমি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দাদীকে বললাম,

— ঐ বুড়ি,, সমস্যা কি তোর?? এত সকাল সকাল ডাকছিস কেন? দাদী মুখ বাকিয়ে বললো,
~এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাস কেন? তোর তো বউ নাই যে সারারাত লুডু খেলেছিস তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারছিস না। আমি দাদীকে বললাম,
— দাদী তোমার বাবা যেন কি করতো?? দাদী চেহারাটা মলিন করে বললো,
~ আমার বাপ অন্যের জমি বর্গা দিতো।। ইসসস বাপজান আমাদের নিয়ে ভোর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি যে পরিশ্রম করতো,, এইবার আমি দাদীকে বললাম,
~ বুড়ি,তোর বাপ ফকির ছিলো তাই তুই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠিস আর আমার বাপ বড়লোক তাই আমি ১২ টা বাজিয়ে ঘুম থেকে উঠবো।

এখন আমার রুম থেকে যা তা না হলে তোর সাথে লুডু খেলা শুরু করবো দাদী আমার কথা শুনে মুখ বাঁকিয়ে ভেংচিদিয়ে চলে গেলো ছোটবেলা থেকে আমি দাদীর কাছেই মানুষ হয়েছি। বাবা মা চাকরি করার কারণে আমায় তেমন সময় দিতে পারতো না। দাদীআমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে।দাদীর সাথে আমার সম্পর্কটা টম আর জেরির মত। সারাক্ষণ আমরা একজন আরেকজনের পিছনে লেগে থাকি। আমার বন্ধু বান্ধবমাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় আমার আর দাদীর ১৮+ কথা বার্তা শুনে। রাতে দাদীর রুমে ঢুকে দেখি দাদী খাটটা পরিষ্কার করছে। এই খাটে দাদা থাকতো। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি দাদী এইখানে না ঘুমিয়ে নিচে ফ্লোরে ঘুমাই। আমি দাদীকে অনেক বলেছি হয় তুমি এই খাটে ঘুমাও না হয় অন্য খাটে। তুমি শুধু শুধু ফ্লোরে ঘুমাও কেন? দাদী কিছু বলতো না শুধুমুচকি মুচকি হাসতো। তাই আজ দাদীকে খুব চেপে ধরলাম তোমাকে আজ বলতেই হবে তুমিখাটে ঘুমাও না কেন? দাদী মুচকি হেসে বললো,

~ তোর দাদা খুব সৌখিন মানুষ ছিলো। তোর দাদা যতদিন বেঁচে ছিলো ততদিন এই খাটে আমার জায়গা হয় নি।
— দাদী দাদা তো বেঁচে নেই তাহলে এখন খাটে ঘুমালে সমস্যা কি? দাদী বললো,

~ তোর দাদা বেঁচে থাকতেই যেহেতু আমার খাটে জায়গা হয় নি তাহলে এখন আর খাটে শুয়ে মায়া বাড়াতে চাই না। দাদীর কথা শুনে মনে হচ্ছিলো দাদীর মনটাখুব খারাপ হয়ে গেছে। তাই দুষ্টামি করেদাদীকে বললাম,

— আচ্ছা বুড়ি, দাদা তো তোমাকে খাটেই জায়গা দিতো না তারপরেও তুমি ৩সন্তানের মা হলে কিভাবে? এজন্যই তো বলিআমার ছোট চাচার চেহারার সাথে আমারছোট দাদা রহিম মিয়ার এত মিল কেন। বুড়ি তুই তলে তলে টেম্পো চালাতি আর দাদাজানতে চাইলে তুই বলতি হরতাল দাদী আমার কথা শুনে রাগে জর্দার কৌটা আমার দিকে ছুড়ে মারলো। আর আমি হাসতে হাসতে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। বেলা ১০ টা এখন পর্যন্ত দাদী আমায় ডাকতে আসলো না। আমার ২৫ বছর জীবনে এই প্রথম দাদী আমায় সকালে ডাকে নি। তারমানে দাদীর কিছু হয়েছে। শুয়ে থেকে আমি এইসব কি চিন্তা করছি। এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে দাদীর রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি দাদী কান্না করছে। আমি দাদীর কাছে গিয়ে বললাম,

— দাদী কি হয়েছে তোমার? তুমি কাঁদছো কেন? আমার কথা শুনে দাদী বললো,
~ কার জন্য আবার, আমার জামাইয়ের জন্য কাঁদি। ঐ বুইড়া জীবিত থাকার সময় আমায় শান্তি দেয় নি আর মরে গিয়েও আমায় শান্তি দিচ্ছে না। আমি অবাক হয়ে দাদীকে বললাম,
— দাদা আবার তোমায় কি করলো? দাদী কাঁদতে কাঁদতে বললো,

~মাঝরাতে হঠাৎ করে আমার ঘুমটা ভেঙে যায়। মনে মনে ভাবলাম এইজীবনে তো কোনদিন তোর দাদার এই খাটে তে ঘুমালাম না। আজ না হয় একটু ঘুমায়। খাটে শুয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না। শেষ রাতের দিকে একটা স্বপ্ন দেখলাম। তোর দাদা এসে আমায় বলছে, মাগি( আগের দিনে গ্রাম বাংলার মানুষ রেগে গিয়ে স্ত্রীকে এই নামে গালি দিতো) তোর এত বড় সাহস তুই আমার খাটে ঘুমিয়েছিস।এই বলে তোর দাদাআমার পিছনে লাথি মারে আর আমি সোজাখাট থেকে গড়িয়ে পড়ি। এখন আমার সারা শরীরে ব্যাথা আমি দাদীর কথা শুনে প্রচন্ড হাসতে লাগলাম আর দাদী বলতে লাগলো,

~আমি এই খাট আর আমার কাছে রাখবো না। তুই যেদিন বিয়ে করবি সেদিন তকে এই খাট আমি উপহার হিসেবে দিয়ে দিবো তার বেশ কয়েকদিন পর আমার আর শ্রাবণীর বিয়ে হলো। দাদীর ইচ্ছেতেই দাদার খাটের উপর আমাদের বাসর রাত হলো। শুনেছি বাসর রাত মানে মধুর রাত কিন্তু আমার বাসর রাত হয়েছিলো নিমপাতার চেয়েও তেতো। খাটের উপর শ্রাবণী বসে ছিলো। আমি রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে খাটের উপর বসা মাত্র খাট ভেঙে নিচে পরে গেছি। অনেক পুরাতন খাট। গুনে খেয়ে সব শেষ করে দিয়েছে। এখন যদি সকালে লোকজন দেখে খাট ভাঙা তাহলে কি না কি ভাববে তাছাড়া দাদী কান্না করে পুরো এলাকার মানুষকে জানাবে।

সারারাত আমি আর শ্রাবণী খাট ঠিক করতে করতে কাটিয়ে দিলাম কিন্তু খাট আর ঠিক হলো না। খাট যখন ঠিক করছিলাম তখন শ্রাবণীর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছিলো। ওর কপালে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখে আমি আবার ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। খুব ইচ্ছে করছিলো ওর কপালে আমার আঙুল ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু এখন যদি ওকে স্পর্শ করি তাহলে ও আমার মাথা ফাটিয়ে ফেলবে। এমনিতেই ও রাগে লাল হয়ে আছে।৩০ মিনিট ধরে দাদী দরজার সামনেদাঁড়িয়ে ডাকছে কিন্তু আমি লজ্জায় দরজা খুলতে পারছি না। খুলবো কি করে খাট তো ভাঙা ঠিক করতে পারি নি।। অবশেষে দরজা খুললাম। দাদী রুমে ঢুকে খাট দেখে যখনি চিৎকার দিবে তখনি দাদীর মুখ চেপে ধরে বললাম,

— দাদী, খাট দাদা ভেঙেছে। স্বপ্নে দাদা এসেছিলো। দাদা এসে দেখে আমি আর তোমার নাত বউ খাটে শুয়ে আছি। তখন আমাদের খাট থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয় আর রাগে নিজের খাট নিজে ভেঙে ফেলে। দাদী আমার কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,

~ বলেছিলাম না এই বুইড়া মরার পরেও আমার পিছন ছাড়ে নি। তুই তো বিশ্বাস করতি না এখন দেখলি তার প্রমাণ দাদী মনে হয় আমার কথা বিশ্বাস করেছে। আমি কোন রকমে লজ্জার হাত থেকে বাচলাম তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসছে…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত