রাত তিনটা। ঘুম ঘুম চোখে ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। শ্রাবন ওর বন্ধু শুভকে নিয়ে আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে বিয়ে করার জন্য। আমি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে কালো আকাশের দিকে তাকালাম। কি দেখে এই পাগলের প্রেমে পড়েছিলাম কিছুতেই মনে পড়ছেনা। নিচ থেকেই শ্রাবণ আবার মেসেজ করলো, “নিচে আসবে নাকি আমি উপরে চলে যাব?” ঝট করে শ্রাবনের দিকে তাকালাম। নিজের গলায় ছুরি লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর পাশে বসা শুভ কিছুতো করছেই না, উল্টো ও গলায় ছুড়িটা বাকা ধরে ছিল। সেটা সোজা করে দিচ্ছে।
দৌড়াতে দৌড়াতে নিচে নামছি আর মনে মনে বলছি, ভাগ মিলি ভাগ। শ্রাবন দেখতে স্বাভাবিক মানুষের মতো হলেও ওর কাজকর্ম মোটেও স্বাভাবিক না। একটু পাগলাটে টাইপের। এখন যদি জেদের বশে নিজের গলা কেটে বসে তাহলে আমি একটুও অবাক হবনা। ঘটনা হচ্ছে, শ্রাবন মাঝে মাঝে স্বপ্নে এক বৃদ্ধ লোককে দেখতে পায়। স্বপ্নে বৃদ্ধ লোকটা শ্রাবনকে বলেছে, কালকের মধ্যেই আমার বিয়ে হয়ে যাবে। যার সাথে বিয়ে হবে তার মাথাটা হবে ন্যাড়া! কি অদ্ভুত! রাত দুইটায় আমাকে কল দিয়ে সংক্ষেপে ওর স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে বলল, যেকোন সুন্দর একটা শাড়ি পরে রেডি থাকো, বেরোতে হবে আমি আসছি।”- আমি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম৷ ভাবলাম, হয় ওর ঘুম আসছেনা বলে আমার সাথে ঢং করছে। নাহয় আমি স্বপ্ন দেখছি। তারপর এখন রাত তিনটায় আমি ছাদে। ছুড়িটা নিজের হাতে নিয়ে বললাম,
–সিনেমা করো আমার সাথে?
–আরেকটু দেরি করলেই সিনেমার স্যাড এন্ডিং হয়ে যেত।
–তোমার বংশের কয় নাম্বার পাগল তুমি?
–হিসেব করে বলতে হবে। এখন চলো।
–ধুর বাবা হাত ছাড়োতো! সমস্যা কি তোমার?
–সমস্যা কি সেটা তো ফোনে বলেছি। আমার বদলে অন্য একটা লোকের সাথে তোমার বিয়ে হয়ে যাবে। একজন প্রকৃত প্রেমিক হয়ে আমি সেটা মেনে নিতে পারিনা।
–আমি বলি শোন। তুমি মোটেও কোন প্রকৃত প্রেমিক নও, তুমি হচ্ছো বেকার প্রেমিক। বেকার প্রেমিকের মাথায় সব সময় প্রেমিকা হারানোর ভয় থাকে। যার ফলাফল, আজ এই স্বপ্ন দেখেছো।
–তুমি বোজতে পারছোনা। তোমাকে তো আমি আগেও বলেছি যে, আমি স্বপ্নে যা’ই দেখি সেটা সত্যি হয়ে যায়। সব অবশ্য না। তবে আমার কাছে যেটা মনে শুধু সেটাই সত্যি হয়।
–তোমার মাথা হয়। কার পাল্লায় পড়লাম খোদা!
–তুমি এই মূহুর্তে আমাকে বিয়ে করবে কি-না বল?
–আমি পারবোনা এমন লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করতে। আমার অনেক শখ, ধুমধাম করে বিয়ে করবো।
–আরে ধুমধাম করেই করবো। এখন জাস্ট নিজেদের সিকিউরিটির জন্য বিয়েটা করা।
–বললাম তো পারবোনা।
— বুঝছি। আমাকে বিয়ে করতে হবেনা।
তুমি ঐ ন্যাড়া মাথার লোকটাকেই বিয়ে করো। আমার ছুড়িটা কই? দাও।” আমাদের কথোপকথনে আমার থেকে বেশি বিরক্ত শুভকে মনে হলো। সে কপাল চুলকাতে চুলকাতে বিরক্ত কন্ঠে বলল,
–আরে বিয়ে করতে না পারলে ছুড়িটা ওকে দিয়ে দাও। মরে গিয়ে উদ্ধার হোক। অনেক দিন ভালো মন্দ কিছু খাইনা।” আমি হতবাক হয়ে বললাম,
–এগুলো কেমন কথাবার্তা শুভ ভাই?
–এগুলো হচ্ছে বাস্তব কথাবার্তা। ওদের বংশে কেউ মারা গেলে গরু দিয়ে শিরনি করে। এইতো সেদিন! শুভর কথা গুলো অতিমাত্রায় জঘন্য লাগছে। থামিয়ে বললাম,
–কাল বাসায় আসবেন। আপনাকে গরুর মাংস দিয়ে আখনি করে খাওয়াব। এখন দয়া করে মুখ বন্ধ করেন।” তারপর শ্রাবনের দিকে তাকালাম। শান্তচোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লক্ষন মোটেও ভালো না। মনে হচ্ছে যা বলছে তা করেই ছাড়বে।
সকাল সাতটা। আমি, শ্রাবন আর শুভ বসে আছি কাজী অফিসে। এত সকাল কোন অফিসই খুলেনা। কিন্তু এটা খুলেছে। কারন স্বয়ং কাজী সাহেব শ্রাবনের বন্ধু। বন্ধুর জন্য একদিন সকাল সকাল অফিস খুলতেই পারে। একটা জিনিষ আমি খেয়াল করেছি। যেখানেই যাইনা কেনো, সেখানেই ওর বন্ধু পাওয়া যায়। সেদিন রিক্সা থেকে পড়ে আমার হাত বিশ্রিভাবে কেটে গিয়েছিল। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেই দেখা গেল ডাক্তার শ্রাবনের বন্ধু। একবার রেস্টুরেন্টে খেতে গেছি। সেখানে যে বয়টা খাবারের অর্ডার নিতে এলো সেও তার বন্ধু! আমি নিশ্চিত এখন যদি বিয়ে করে সে আমাকে কোন বস্তিতে নিয়ে তুলে তবে সেখানের কোন রিক্সাওয়ালা ওর বন্ধু হিসেবে উপস্থিত থাকবে। যদিও এখন বিয়ে করে বাবার বাসায় চলে যাব। কাজী সাহেব আমার দিকে সন্দেহজনক ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শ্রাবনকে বললেন,
–জোর করে ধরে আনিস নাই তো? শ্রাবন চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল,
–তোর তাই মনে হচ্ছে?
–তাহলে পাত্রীর মুখের এই অবস্থা কেন?
–পাত্রী রাত তিনটা থেকে ঘুমায়নি তাই এরকম দেখাচ্ছে। তুই বিয়ে পড়া।
–বিয়ে পড়াবো ভাল কথা। আগে আমার ফিস দে৷ বন্ধু বলে অফিস এত সকাল খুলেছি। তাই বলে বাকিতে বিয়ে পড়াবো না।
–আরে আগে বিয়ে পড়া। টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। দিয়ে দেব।
—উহু। তোকে আমি হাড়ে হাড়ে, মাংসে মাংসে চিনি। বিয়ে পড়ে আলহামদুলিল্লাহ বলেই দৌড় দিবি। এর আগের বারও এমন করেছিস। ওদের কথাবার্তা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। চোখে পানি আসি আসি করছে। কান্না চেপে কোনরকমে বললাম,
–এর আগেও এমন করেছে মানে? এটা ওর কত নম্বর বিয়ে? শ্রাবন আমার কাদো কাদো মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। ও হাসির জন্য কিছুবলতে পারছেনা। সাথে ওর ফাজিল দোস্ত শুভও হাসছে।কাজী সাহেব বোধহয় আমার দুঃখ বুঝলেন। কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
–বোন তোমার নাম কি? আমি চোখ মুছতে মুছতে বললাম, মিলি।
–শোন মিলি। সেদিন শ্রাবন ওর এক বন্ধু আর তার প্রেমিকাকে নিয়ে এসেছিল। তোমাদের মতোই ওরা পালিয়ে বিয়ে করেছে। শ্রাবন শুধু ওদের সাহায্য করেছে।”আমি শ্রাবনের দিকে তাকালাম। কিছুক্ষনের জন্য নিজেকে বেকার প্রেমিকা মনে হয়েছিল। আর এখন মনে হচ্ছে এই মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার আগেই বিয়ে করে নেওয়া উচিত। সকাল নয়টা। হেটে হেটে বাসায় ফিরছি।প্রায় বাসার কাছেই চলে এসেছি। সাথে হাটছে আমার লেটেস্ট স্বামী শ্রাবন আহমেদ।এই ছেলেটা সারাজীবন আমার কাছে লেটেস্টই থাকবে। কখনো আপডেটের প্রয়োজনহবে বলে মনে হয়না। রাত থেকেই মোবাইল অফ ছিলো। অন করতেই বাবার ফোন।
–হ্যালো বাবা।
–সকাল থেকে তোর খোজ নেই। কোথায় তুই?
–মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলাম বাবা,আসছি।
–মর্নিং ওয়াক আবার কবে থেকে শুরু করলি।
–এইতো আজ থেকে।
–তা একা একা হাটছিস নাকি?
–না বাবা। নীলু আছে আমার সাথে।
–তাই বুঝি। নীলুকে একটু দে তো।
আমি খট করে ফোনটা কেটে দিলাম। বেশি স্মার্টনেস দেখাতে গেলে এমনই হয়। মাঝরাস্তায় এখন নীলুকে পাবো কোথায়! বাবা আবার বললেন, “কি হল নীলুকে দে!” ফোন কেটে দেওয়ার পরও বাবার আওয়াজ কোথা থেকে আসছে সেটা ভাবতে ভাবতেই সামনের দিকে তাকালাম। এবং জীবনে এই প্রথমবার বাবাকে দেখে পেছন ঘুরে লম্বা দৌড় দিতে ইচ্ছে করলো। বাবাকে দেখার পরও শ্রাবণ গাধার মতো আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। প্রচন্ড শক খেয়েছে বেচারা। হাত ছাড়তে হবে সেই হুশটুকুও নেই এখন ওর। রাগে ফুলতে ফুলতে অবশেষে বাবা ওর কলার ধরে জিজ্ঞেস করলেন, “হু আর ইউ? আমার মেয়ের সাথে কি করছিস?”শ্রাবন শুধু উশখুশ করছে। কিছু বলতে পারছেনা। নিজেকে ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বলল,
–মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছিলাম আংকেল। হঠাৎ মিলির সাথে দেখা। ও আমাকে চেনে। জিজ্ঞেস করেন।” বাবা আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললেন, “একে তুই চিনিস?” আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। বাবা আবার বললেন,
–ছেলেটার সাথে তোর কি সম্পর্ক? হঠাৎ আমার কি হয়ে গেল জানিনা। দুম করে সত্যি কথা বলে দিলাম,
–আমি ওকে বিয়ে করেছি বাবা। সম্পর্কে আমরা এখন স্বামী স্ত্রী। বাবা কিছুক্ষনের জন্য বোবা হয়ে দাঁড়িয়েরইলেন। তারপর ওর কলার ছেড়ে দিয়ে ছোট চাচাকে ফোন দিলেন। সকাল দশটা থেকেই নিজের রুমে বন্দি আছি। এখন বাজে রাত এগারোটা। শ্রাবনের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। তবে সে এ বাড়িতেই আছে সেটা জানি। বাবা ওর সাথে কি করছেন বোঝতে পারছিনা। এর মধ্যে আম্মা দুইবার এসে খাবার দিয়ে গেছেন। আমি দু’বারই পেট ভরে খেয়েছি। আম্মা ফোপাতে ফোপাতে বললেন,
–ঘটনা ঘটানোর আগে একবারও নিজের মায়ের কথা মনে পড়লো না? নিজের ছোট একটা বোনআছে সেটা মনে পড়েনি?
–বিয়ে করবো আমি। তোমাদের কথা কেন মনে করবো?
–একদম আমার সাথে ঢং করবিনা।
–আচ্ছা করবোনা।
–এমন জঘন্য বেকার একটা ছেলেকে তুই কি দেখে বিয়ে করলি?
–তুমি ওকে দেখেছো?
–এমন ছেলের মুখদর্শন করাও পাপ। অন্যের মেয়েকে ভুলিয়েভালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। ছিহ!
–একটা কথা বলবো?
–কোন কথা বলবিনা।
–সকাল থেকে নিশ্চয়ই ও কিছু খায়নি। পারলে ওর খাওয়ার ব্যাবস্থা করো। ফ্রিজে শিং মাছ আছে না? নতুন আলু দিয়ে শিং মাছের তরকারী করো। ওর ভীষন প্রিয়।” আম্মা আমাকে ধমক দিতে গিয়ে আটকে গেলেন। হঠাৎ করেই উনার চোখ ছলছল করে উঠলো। চোখ মুছতে মুছতে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। আমি দুই মিনিট চিন্তা করার পর আম্মার এই রিএকশানের কারন বোঝতে পারলাম। বড় ভাইয়ার পছন্দের খাবার ছিল ওটা! গত দুইবছর আগে যে ছেলেটা তার এই মাকে রেখে স্বার্থপরের মতো চিরদিনের জন্য পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ঠিক বারোটায় হন্তদন্ত হয়ে নিলু ঢুকলো আমার ঘরে। আমি বসে বসে মোবাইলে নাটক দেখছিলাম। নীলু চোখ বড় বড় করে বলল,
–ঘরের সুপারহিট নাটক ছেড়ে তুমি কার নাটক দেখছো?
–নিশা আর তিশোর।
–এরা কারা?
–সরি নিশো আর তিশার। শ্রাবনের কি অবস্থা? নীলু আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল,
–আম্মার কি হয়েছে বলতো? কিছুক্ষন আগেও শ্রাবন ভাইয়ের নাম পর্যন্ত শুনলে রেগে যেত। এখন একেবারে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াচ্ছে! আমাকে ফিসফিস করে বলছে, “একদম আমার খোকনের মতো দেখতে তাইনা রে? মানুষে মানুষে এত মিল হয়!”—আচ্ছা আপা তুমি বলতো, ভাইয়ার সাথে শ্রাবন ভাইয়ের কোন এংগেলে মিল আছে?
–কোন এংগেলেই নেই।
–হুম। তবে তোমার আর চিন্তা নেই। আম্মা যখন গলে গেছে তখন বাবাও লাইনে চলে আসবে। আমার বেলায় যে কি হবে আল্লাহই জানে! আমি কপাল কুচকে নীলুর দিকে তাকালাম। মুখ ফসকে গোপন কথা বের হয়ে যাওয়ার ভয়ে নীলু জিহ্বায় কামড় দিয়ে ফেলল। রাত তিনটা। আমাকে আমার বন্দী কামরা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্তির খবর নিয়ে এসেছে নীলু। আমি নীলুকে বললাম,
–শ্রাবন কি চলে গেছে?
–না। আম্মা যেতে দিচ্ছেনা। সকাল বেলা ভাইয়ার পছন্দের নাস্তা করে খাওয়াবে। তারপর বিদায় দিবে।
–বাবা এতসব আহ্লাদী সহ্য করছেন কিভাবে?
–কে বলল সহ্য করছেন? সহ্য করতে না পেরে বাবা গৃহত্যাগ করেছেন। আপাতত নানুর বাসায়গিয়ে উঠেছেন।
–বাবার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে রে!
–আমার মোটেও খারাপ লাগছেনা। বাবা খুবই নিষ্ঠুর একজন মানুষ। শ্রাবন ভাইয়ের সাথে উনি কি করেছেন জানো?
–কি করেছেন?
বাবা কি করেছেন সেটা আর জানা হলোনা। নীলু নীলু বলে আম্মা বাড়ি মাথায় তুলেছেন। তাড়াহুড়ো করে সে রান্নাঘরে চলে গেল। মুক্তি পেয়েই আমি ভাইয়ার রুমে চলে গেলাম। শ্রাবন সেখানে কাথামুড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে আছে। ওর এমনভাবে শুয়ে থাকার লক্ষন ভাল ঠেকছেনা। প্রচন্ড ভয় থেকে জ্বর চলে আসতে পারে। আমি কোমল স্বরে ওকে ডাক দিলাম,
–শ্রাবন! শ্রাবণ কাথার নিচ থেকেই উত্তর দিলো,
–হুম?
–তোমার কি জ্বর এসেছে?
–না।
–আচ্ছা বাবা তোমার সাথে কি করেছেন বলোতো?
–বলছি, তার আগে তুমি একটা কথা বলতো।
–কি কথা?
–খুব রেগে গেলে তোমার বাবা কি করেন সে বিষয়ে কোন ধারনা আছে?
–আছে। খুব বকাঝকা করেন। মাঝে মাঝে বংশ তুলেও গালি দেন। অবশ্য এই ক্ষেত্রে নিজের মেয়েদের কিছু বলেন না।
–খুবই ভুল ধারনা। উনি আরো অনেক কিছুই করেন। শ্রাবন আর কিছু না বলে মুখ বের করলো। আমি অবাক হয়ে ওর মাথার দিকে তাকিয়ে আছি। একটা চুলও নেই। লাইটের আলোয় চকচক করছে ওর মাথা। আমি ঢোক গিলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খুব রেগে গেলে বাবা অন্যের মাথা ন্যাড়া করে দেন, এটা আমার ধারনারও বাইরে ছিল। কিন্তু শ্রাবনের চেহারা দেখে মনে হলো ন্যাড়া হওয়ার জন্য বিন্দুমাত্র আফসোস নেই ওর। বরং আরো আনন্দিত দেখাচ্ছে। সম্ভবত ওর স্বপ্নে দেখা ভবিষ্যতবাণী সত্যি হয়ে গেছে এজন্যে সে গর্বিত। শ্রাবন হাসতে হাসতে বলল,
–একটু আগে ঘুমে আমার চোখটা লেগে এসেছিল। কি স্বপ্ন দেখেছি শুনবে? শ্রাবন আমার জবাবের অপেক্ষা না করে হাসতে হাসতে বলল,
–দেখলাম কিছুদিনের মধ্যে নীলুর বিয়ে হয়ে যাবে। যে ছেলের সাথে ওর বিয়ে হবে তার “দুই গাল” ফুলে লাল হয়ে থাকবে। কিন্তু বেচারার গালটা কিভাবে ফুলবে সেটাই বুঝতে পারছিনা!