– ঠাসসসস
– ঠাসসসসসস
– তুই আমারে মারলি কেন?
– আগে বল তুই আমারে মারলি কেন?
– না বলব না, তুই বুঝে নে!
– কি বুঝে নে বুঝে নে বলতেছিস?
– ঠাসসসসস
অতিরিক্ত রাগে সাথী থাপ্পড় মারে। থাপ্পড় খেয়ে তাওহীদের চোখের কোণে পানি চলে আসে। তারপর সে ও রাগে অনেক জুরে থাপ্পড় মারে।
– ঠাসসসসসস
চড় খেয়ে সাথীর গাল লাল হয়ে যায়। শুধু লাল এই হয়ে যায়নি; পাঁচ আঙ্গুলের দাগ ও বসে যায় । তারপর সাথী রাগে-অভিমানে খাটে শুয়ে থেকে কাঁদতে থাকে আর তাওহীদ বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে থেকে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই হল তাওহীদ আর এই হল সাথী। তারা দুজনেই এখন স্বামী-স্ত্রী।তাদেরকে তাদের চাচা-চাচী ও মামা-মামী এই পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছিল। কারণ তাদের দুজনের মাঝে কারো বাবা-মা ছিল না। তাই তাদেরকে এই কাজটা করতে হয়েছিল।
তাদের বিয়ে হয়েছে, ছয় মাস হয়েছে।কিন্তু তাদের মাঝে প্রায় দিনেই কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি হতো; সেটা কারণে বা অকারণে। এই ছয় মাসের মাঝে হিসাব করলে দেখা যাবে হাতে গুণা কয়েকদিন ঝগড়া-ঝাটি বা মান অভিমান হয়নি।কিন্তু ঝগড়া-ঝাটি বা মান অভিমান করলে কি হবে? ১০ থেকে ২০ মিনিট ও যেতো না, একজন আর একজনকে ছাড়া থাকতে পারতো না।এবং একজন আর একজনের মান অভিমান ভাংগানোর জন্য ওঠে পড়ে লাগতো । আবার তাদের মাঝে ঝগড়া-ঝাটি হলেই একে অপরকে তুই তুকারি করে কথা বলত; আর বেশী রেগে গেলে দুজনেই দুজনের গায়ে হাত ও তুলতো। তখন একজন আর একজনের উপর রাগ-অভিমান করে থাকতো। আর যার বেশী দোষ থাকত সেই প্রথমে রাগ বা অভিমান ভাংগাতো।
সাথীর এই চড়ের অভ্যাসটা ছোট থেকেই ছিল, তাকে কেউ কোনো সময় উল্টা-পাল্টা বললেই ঠাস করে বসিয়ে দিতো। এই যে একটা অভ্যাস হয়েছিল, সেটা থেকেই যায়। আর এই প্রভাবটা বিয়ের পরেও রয়ে যায়। তাওহীদ উল্টা-পাল্টা বললে বা কিছু করলে তার গালেও ঠাস করে বসিয়ে দেয়। আর তাওহীদ ও পাল্টা জবাব দিয়ে দেয়। কারণ ছোট থেকেই তার এই অভ্যাস টা ছিল, তাকে কেউ বললে বা তাকে কিছু করলে সেও তাই করতো।রাগ-অভিমান, ঝগড়া-ঝাটি, মারা-মারি আদর ভালবাসা ইত্যাদি এর মধ্য দিয়ে তাদের দিন গুলি চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু ঝগড়া-ঝাটি বা মান অভিমান করলে কি হবে? তাদের এই পবিত্র বন্ধনের মাঝে ফাটল ধরেনি। তারা যতই রাগ-অভিমান করেছে, ততই তারা কাছে এসেছে ও তাদের ভালবাসাটাও আরও বেড়েছে । বিয়ের পর থেকে সাথী একটা অভ্যাস তৈরি করে । সেটা হল- প্রতিদিনেই সে ঘুম থেকে ওঠে তাওহীদের কাছে কিছু না কিছু আবদার করতো। আর তাওহীদ বাসায় ফিরার পথে তা নিয়ে আসতো। সাথী এক এক দিন এক এক রকমের আবদার করতো। আর তাওহীদ তা পূরণ করতে চেষ্টা করতো। প্রতিদিনের মতো আজও সকালে এক অন্যরকম আবদার করতে চেয়েছিল, কিন্তু তাওহীদ তার কোনো কথা শুনেনি ও নিজে কিছু বলেও নি ।
সকালের সম্পূর্ণ সময়টা তাকে এড়িয়ে চলেছে । আর সেজন্যই তাওহীদ বাসায় ফিরতেই তার গালে থাপ্পড় বসিয়েছে।
তারপর তাওহীদ নিজেকে অপরাধী মনে করে রুমে যায়।রুমে যাওয়ার পর দেখে সাথী ঘুমিয়ে পরেছে । সাথীর মুখটার দিকে তাকাতেই তাওহীদের হৃদয়টা কেঁদে ওঠে।কারণ চোখ থেকে যে পানি ঝরেছে, সেটা শুকিয়ে যাওয়ার পরেও বুঝা যাচ্ছে। আর হাতের পাঁচ আঙ্গুলের দাগটাও ভেসে আছে।সে সাথীর খুব কাছে যায়। তারপর সাথীর গালে ও চুলে হাত বুলাতে থাকে আর কাঁদতে থাকে। হাতের স্পর্শ পেয়ে সাথীর ঘুমটা ভেংগে যায়। তারপর তাকিয়ে দেখে, তাওহীদ কাঁদছে আর তাকে আদর করছে। তাওহীদের চোখে পানি দেখে তার হৃদয়টা ও কেঁদে ওঠে।আর রাগ-অভিমান যা ছিল সব ভুলে যায়। তারপর তাওহীদ বলতে থাকে
– আমি তো তোমার ভাল স্বামী না, তোমার কথা শুনিনা, তোমাকে কিছু বলতেও দেই না। তোমাকে আদর করিনা, ভালবাসি না, শুধু তোমাকে মারি আর গালি দেয়। তাওহীদের কথা শুনে, সাথীর চোখের কোণে পানি এসে পরে। তারপর সে বলে
– না আপনি না, আমি আপনার ভাল স্ত্রী হতে পারিনি।আপনাকে বুঝতে পারি না, শুধু কথায় কথায় মারি। শুধু শুধু ভুল বুঝি আরও কত কি।
– না না তুমি না আমি । আমাকে ক্ষমা করে দাও! আর কখনো তোমার কথা অমান্য করব না, তোমাকে মারব না, গালি দিব না, শাষণ করব না। কেন তুমি মারবে না? শাষণ করবে না? অবশ্যই মারবে দোষ থাকলেই মারবে! বাবা-মা তো নেই তুমিই শাষণ করবে। আর আদর করলে করবে না করলে নাই, শুধু একটা কথা আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা! তাহলে আমি বাঁচতে পারব না। তাওহীদের কথা শুনে সাথীর চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।তাকে কি বলবে! কি বলে শান্তনা দিবে? কোনো কথা মুখে আসছে না।দোষ তো তাওহীদের না, দোষ তো তার। তবুও সে নিজের কাঁদে দোষটা চাপিয়ে দিয়েছে।
– না না আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেন! আমি অনেক ভুল করেছি আর ভুল করতে চাই না। আর আপনি কোনো ভুল করেননি; সব ভুল আমার। আমি আপনার কথা অমান্য করলে আপনি শাষণ করবেন, মারবেন, গালি দিবেন আর একটু ভালবাসবেন! কথা দেন! হ্যাঁ ভুল করলে শাষণ করব। ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেন কেন? কখনো ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলবেন না। শুধু কি আপনার বাবা-মা এই নেই? আমার ও তো বাবা-মা নেই। আপনার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে? আপনি চলে গেলে আমাকে কে দেখবে? কে ভালবাসবে ? আর কখনো এসব কথা বলবেন না, কখনো না। তারপর তাওহীদ হাত দিয়ে সাথীর কপালটা কাছে এনে ভালবাসার পরশ এঁকে দেয়।আর সাথী! তাকে জড়িয়ে ধরে থাকে।তারপর তাওহীদ বলে
– সাথী!
– হুম
– চল নিচে যায়!
– কেন?
– এত কথা বল কেন? যেটা বলছি সেটা কর
– ঠিক আছে চলেন।
তারপর দুইহাতে সাথীর চোখ বন্ধ করে নিচে নিয়ে আসে। আজ সকালে সাথী তার জন্মদিন এর কথা বলতে চেয়েছিল, কিন্তু তাওহীদ তার কোনো কথা শুনেনি এবং নিজেও একটা কথা বলেনি। আর সে জন্যই সাথী রাগ করেছিল।নিচে আসার পর, তাকে কেকের কাছে দাঁড় করায়। তারপর সম্পর্ণ রুমটা মোমবাতি দিয়ে জ্বালানো হলে সাথীকে চোখ খুলতে বলে । সাথী চোখ খুলে দেখে, তার সামনে কেক আর মোমবাতি রাখা ও সম্পূর্ণ রুমটা মোমবাতি দিয়ে আলোকিত করা। তখন সবাই হ্যাপি বার্থ ডে বলে চিৎকার করে ওঠে। সাথীর আনন্দে চোখ দিয়ে জল এসে পড়ে। তাওহীদের এই সারপ্রাইজটাতে সাথী অনেক খুশি হয়। তাকে না বলে কেন এসব করল তার জন্য তাওহীদের দিকে অভিমানী চোখে তাকায় বিনিময়ে তাওহীদ একটা মুচকি হাসি দেয়।
তারা মান অভিমান করার সময়টাতে তাওহীদ ও সাথীর বন্ধু বান্ধুবীরা জন্মদিনের এই আয়োজন টা করে তাওহীদের কথামত।তারপর সাথী তাওহীদকে কেক খাইয়ে দেয়। আর তাওহীদ সাথীকে কেক খাইয়ে দেয়। সবাই এক সাথে আনন্দ ফূর্তি করার পর তাদের বন্ধু-বান্ধবরা চলে যায়। তখন তাওহীদ সাথীকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে যেতে থাকে। আর সাথী তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার দিকে চেয়ে থাকে।ছাদে যাওয়ার পর সাথী তাওহীদের কাঁদে মাথা রাখে। তারপর দুজনে মিলে চাঁদ দেখতে থাকে।এভাবেই রাগ-অভিমান শেষ করে কাছে এসে আবার নতুন জীবন শুরু করে