– excuse me ছাতাটা দিন তো । . অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম কিন্তু হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হল তাই আর সামনে যেতে পারছিনা একটা বড় দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি । আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করি । আমার অফিস বাসা থেকে তেমন একটা দূরে নয় হেটে গেলে এই ১৫-২০ মিনিটের মত লাগবে । কিন্তু আমার আবার হাটতে একদম ভাল লাগেনা তাই প্রতিদিন রিকশা দিয়ে যাতায়াত করি । কিন্তু আজকে এই হঠাৎ বৃষ্টির কারণে একটা রিকশাও রাস্তায় দেখতে পাচ্ছিনা । ভাগ্য ভাল যে মা আজকে ছাতাটা হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন না হলে এতক্ষণে কাকভেজার মত হয়ে যেতাম । কিন্তু হঠাৎ আমাকে উদ্দেশ্য করে কোনো অপরিচিত একটা মেয়ের কন্ঠ শুনলাম । তাই ভাল করে শুনার জন্য আমি বললাম ।
-জি আমাকে বলছেন? (আমি) -হ্যা আপনাকেই বলছি । (অপরিচিতা) -কি বললেন আবার বলেন তো । -কানে কম শুনেন নাকি? বললাম ছাতাটা দিন । -দেখেন আমার কানের কোনো দুষ দিবেন না আমি কানে খুব ভাল শুনতে পাই । তাছাড়া আমার ছাতা আপনাকে দিব কেন? -আবার প্রশ্ন করেন? দেখছেন না কি বৃষ্টি শুরু হয়েছে বাসায় যেতে হবে ছাতাটা দিন । -বৃষ্টি শুরু হইছে তো আমি কি করবো নিজের ছাতা নেই ওইটা দিয়ে যান । -আমার ছাতাটা আমার এক ফ্রেন্ড নিয়া গেছে ভাবছিলাম বৃষ্টি থেমে যাবে কিন্তু বৃষ্টির বেগ আরো বারতেছে । -ভাহ ভাল তো আপনার ছাতা আপনার ফ্রেন্ড নিয়া গেছে এখন আপনি আমার ছাতা নিয়ে যাবেন আর আমি গিয়ে আমার অফিসের বসের কাছ থেকে ছাতা আনবো ভাল না? -বসের কাছ থেকে ছাতা আনতে হবেনা আপনি ভিজে বাসায় যাবেন । -কি???আমার ছাতা থাকতে আমি ভিজে বাসায় যাব?? -হ্যা!! আপনি ছেলে মানুষ আপনার ভিজলে কোনো অসুবিধা হবেনা । কিন্তু আমি মেয়ে মানুষ মেয়েদের রাস্তাঘাটে ভিজলে অনেক অসুবিধা ।
(এই কথা বলেই মেয়েটা আমার কাছ থেকে ছাতাটা নিয়ে নিল আমার কোনো উত্তর শুনার অপেক্ষা করলোনা) .
মেয়ে মানুষ তাই আমি আর কিছু বললামনা । আবার কে কি মনে করবে । আমাদের দেশের সরকার এই মেয়েদেরকে একটু বেশি অধিকার দিয়ে দিয়েছে ওনারা রাস্তা ঘাটে যেকোনো কাউকে যেকোনো ধরনের কেসে ফাসিয়ে দিতে পারে । তাই এদেরকে বিশ্বাস করা খুব মুশকিল । তাই আমার আর কিছুই করার ছিলনা মেয়েটা আমার চোখের সামনে দিয়ে আমার ছাতাটা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল । তাই আমি অপেক্ষা করতে তাকলাম কখন বৃষ্টি থামবে তারপর বাসায় পৌছাবো । কিন্তু আজকে মনে হয় সারা বছরের বৃষ্টি একদিনে হয়ে যাচ্ছে যার কারণে বৃষ্টি থামতে চাচ্ছেনা । তাই বাধ্য হয়েই বৃষ্টিতে ভিজে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । হায়রে কপাল নিজের কাছ থেকে নিজের সম্পদ অন্য একটা মেয়ে কেড়ে নিয়ে গেল আর আমি কিছুই করতে পারলাম না । তাও একটা মেয়ে ছিঃ এখন নিজের কপাল নিজে ছাপড়াতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু বাইরে বলে এটা করলাম না তা না হলে লোকে আবার আমাকে পাগল ভাববে । তারপর বহু কষ্টে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় পৌছালাম । বাসার কলিং বেল টিপতেই ছোটো বোন দরজা খুলে দিল ( ওর নাম হল দিয়া এবার ইন্টার 2nd ইয়ারে পড়ে) সে তো আমাকে দেখে পুরো বাড়ি পারলে মাথায় তুলে নিবে ।
-মা মা দেখে যাও তোমার সোনার টুকরা ছেলে আজ বৃষ্টি বিলাস করে বাসায় ফিরেছেন ।(দিয়া) -ওই চুপ কর আগে ভেতরে ডুকতে দে । (আমি) -হয়েছে হয়েছে আর বাইরে দাড়িয়ে বৃষ্টি বিলাস করতে হবেনা এবার ভেতরে আসুন । (দিয়া) ভেতরে ঢুকতেই মা এসে হাজির । -কিরে বৃষ্টিতে ভিজে একি অবস্থা তর তকে না আমি অফিসে যাবার সময় ছাতা দিলাম ওইটা কোথায় । (মা) (খাইছে রে এখন মাকে কি জবাব দেই) -না মানে মা ভুল করে অফিসে ছাতাটা ফেলে এসেছি তো তাই । আর বাইরে আসতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল তাই আরকি ভিজে বাসায় আসলাম । -ছাতা ভুল করে অফিসে ফেলে এসেছিস বুজলাম তাই বলে কি বৃষ্টিতে ভিজে আসতে হবে রাস্তায় কি গাড়ি নেই । -আসলে মা বৃষ্টি তো খুব বেশি তাই কোনো রিকশা আসতে চাচ্ছিল না । -তাহলে একটু অপেক্ষা করতি বৃষ্টি থেমে গেলে পরে আসতি । -আরে মা এখন এসব বাদ দাও তো এমনিতেই বৃষ্টিতে ভিজে খুব ঠান্ডা লাগছে তার উপর তুমি দাড় করিয়ে রাখছো । -আচ্ছা ঠিক আছে যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে না হলে আবার শরীর খারাপ করবে তর তো আবার ঠান্ডা একদম সহ্য হয়না ।
তারপর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম । রুমে এসে মোবাইলে ফেইসবুকিং করছিলাম হঠাৎ আমার রুমে দিয়ার আগমন । -কিরে তুই হঠাৎ আমার রুমে কেন? -কেন তর রুমে আসা বারণ নাকি না তর রুমে আসতে হলে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখতে হয় । -ওই এত প্যাঁচাল পারছ কেন যেটা বলতে এসেছিস তাড়াতাড়ি বল ফেল । -আচ্ছা ভাইয়া সত্যি করে একটা কথা বলবি । -কি কথা বল? -আচ্ছা ভাইয়া তুই সারা রাস্তা ভিজে আসলি কেন মা তো ছাতা দিয়েছিল । (খাইছেরে মায়ের কাছ থেকে মিথ্যে বলে কোনো মতে রেহাই পেয়েছি কিন্তু দিয়াকে এখন কি বলি ও যে রকমের শয়তানের হাড্ডি) -আগে বললাম না যে ভুল করে ছাতাটা অফিসে রেখে এসেছি তাই ভিজে বাসায় আসতে হল ।
-ভাইয়া তুই কাকে বোকা বানাচ্ছিস মাকে তো তুই মিথ্যে কথা বলে বুজিয়ে ফেলেছিস আমাকে পারবি না । আমি ভাল করেই জানি যে তুই ছাতাটা ভুল করে ফেলে আসিস নি কেননা তুই সেরকম ছেলে নই মা তকে বাজারের জন্য যা আনতে বলতো তুই সেটা কড়ায় গন্ডায় হিসেব করে নিয়ে আসতি একটা সুই ও বাদ পড়তোনা আর তুই কিনা সেখানে ছাতা ভুলে ফেলে এসেছিস আর সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে!!!!বলতো ভাইয়া ছাতা কাকে দিয়ে এসেছিস???(খাইছে আমারে এবার বুজি ধরা খেয়ে যাব) -ঐ তুই এসব বলার জন্য এখানে এসেছিস??? -আগে বল ভাইয়া তুই ছাতা কাকে দিয়ে এসেছিস । না কোনো লাইলাকে ছাতাটা দিয়ে নিজে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় এসেছিস? (না ওকে লাই দিলে আরো মাথায় উঠে যাবে) -ওই তর পড়া নেই যা এখান থেকে । -হয়েছে বাবা যাচ্ছি তবে ভাইয়া এটা মনে রাখিস ছাতার রহস্যটা আমি কিন্তু বের করেই ছাড়বো । -তবে রে । (এই কথা বলে দিয়াকে মারতে গেলাম কিন্তু তার আগেই ও পালালো)
হুম যা ভাবছিলাম তাই হল বৃষ্টিতে ভিজার কারণে রাতে আমার শরীর কাপিয়ে জ্বর এল । যার কারণে পরের দিন আর অফিসে যেতে পারলাম না মা জোড় করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন । আর ডাক্তার শালারা কোনো সুস্থ মানুষও যদি তাদের কাছে যায় তাহলে পারলে ওরা ঐ সুস্থ মানুষেরও ১০১ টা রোগ দেখিয়ে এত্ত বড় একটা প্রেসক্রিপশন হাতে ধরিয়ে দিবে । তার উপর তো আমার জ্বর পুরো ৭১৩ টাকার ঔষধ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে । ধুঃসালা সব কিছু ঐ মেয়েটার জন্য হল মেয়েটাকে যদি আর কোনো দিন হাতের কাছে পাইনা তাহলে ঔষধের জন্য পুরো ৮০০ টাকা নিব । এখানে ৭১৩ টাকা নিব ঔষধের দাম আর বাকি টাকাটা হল ভ্যাট । আমার আর কি করা পুরো একটা অলস দিন পার করলাম সারাদিন বাসায় বসে মটো-পাটলো দেখেছি ।
তবে এটা বলতে হবে যে ঐসব হিন্দি সিরিয়ালের চেয়ে এটা অনেক বেস্ট । . পরদিন জ্বর একটু কমেছে তাই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । একালে চাকরী পাওয়া অনেক হার্ড তার উপর কালকে অফিসে যাইনি না যানি কত কাজ পড়ে আছে । তাই তরিগরি করে একটু তাড়াতাড়ি অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম । যা ভেবেছিলাম তাই পুরো এক গাদা কাজ অফিসে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে তাই পুরোটা দিন কাজ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম । বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়ে একটা কফি শপে গিয়ে বসলাম । এই কফি শপটা আমার খুব প্রিয় তাই এখানে প্রায় আসি কফি খেতে । কেননা কফি শপটার পরিবেশ খুব সুন্দর আর খুব খোলামেলা অন্য সব কফি শপের মত চার দেয়ালে ঘেরা নয় । কফি শপে ডুকে একটা চেয়ারে বসে একটা কফির অর্ডার দিলাম । তারপর কফি খাচ্ছি আর ফেইসবুকিং করছি গত দুদিন ধরে ফেইসবুকে ডুকা হয়নি । ফেইসবুকিং করার এক পর্যায়ে আমার চোখ সামনের একটা চেয়ার দিকে গেল দেখতে পেলাম চেয়ারটাতে একটা মেয়ে বসে আছে । মেয়েটাকে কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে । আরে এইতো সেই অপরিচিতার যার কারণে আমার গত দুদিন খুব লোকসান হয়েছে । এই মেয়েকে আমি ছাড়ছিনা ।
সোজা গিয়ে মেয়েটার সামনে বসে পড়লাম । মেয়েটা আমার এই হঠাৎ উপস্থিতিতে একটু ভয় পেল । . -আরে আপনি কোনো কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলেন । দেখছেন না একটা অপরিচিত মেয়ে বসে আছে উঠুন বলছি । (অপরিচিতা) -আরে আপনি কানা নাকি দেখছেন না আমি চেয়ারে বসে আছি আবার বলছেন উঠুনে । (আমি) -আরে আমি আপনাকে এখান থেকে উঠতে বলেছি । -কেন আমি এখান থেকে উঠবো কেন এটা কি আপনার চেয়ার?? -আমার চেয়ার না হলেও আমি এখানে আগে এসে বসেছি । আপনি যান অন্য কোথাও গিয়ে বসেন । -আপনি আগে বসেছেন বলে কি এটা আপনার হয়ে গেল? আমি সীট খালি পেয়েছি তাই বসেছি যান পারলে আপনি অন্য কোথাও গিয়ে বসেন ।
-আপনি তো আজব লোক একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কিভাবে ভদ্রতার সহীত কথা বলতে হয় যানেন না? -আমি সেটা আপনার চেয়ে খুব ভাল ভাবেই যানি । কিন্তু আপনি যেমন আমিও তেমন । -মানে আমি আবার কি করলাম? -কি করেন নি সেটা বলেন । সেদিন খুব তো জুড় করে আমার ছাতা নিয়ে গেলেন । আর আমাকে পুরো ২০ মিনিট বৃষ্টিতে ভিজালেন । -ওওও আপনি সেই মহান ব্যাক্তি যার খানদানি ছাতা নিয়ে আমি বিপদে পড়ছিলাম । ভাগ্য ভাল যে কোনো মতে বাসায় পৌছাতে পেরেছিলাম । -খানদানি ছাতা মানে আর আপনি কি বিপদে পড়েছেন??বরং আপনি ছাতাটা নিয়ে আমাকে বিপদে ফেলেছিলেন পুরো রাস্তা ভিজে বাসায় গেছি আর ২ রাত ১ দিন ১০৭ ডিগ্রী জ্বরে ভুগেছি । -ওহ তাই নাকি তাহলে ভালই হয়েছে । মাঝে মাঝে জ্বরে না ভুগলে আবার জ্বরকে খুব মিস করবেন ।(এই মেয়ে বলে কি নিজে যদি ২টা দিন জ্বরে ভুগত তাহলে বুজত) -জ্বরকে মিস করবো মানে । -আরে আপনি মিস করা বুজেন না ।
-এই যে শুনোন আমি এত কিছু বুজিনা । আপনি আমার ছাতাটা আর ৮০০ টাকা দিন । -৮০০ টাকা মানে?? আরে আমি আপনার বউ নাকি যে টাকা চাচ্ছেন?? -বউ আপনি!!হাহাহা হাসালেন । আপনার মত পেত্নিকে আমি বিয়ে করতে যাব কোন দুঃখে দেশে মেয়ের অভাব নাকি? আমাদের পাশের বাসার জরিনা আপনার চাইতে অনেক বেস্ট । তাছাড়া মা আমার মেয়ে জন্য দেখছে এই পর্যন্ত ২১ টা মেয়ে দেখে ফেলেছি ভাবছি এ অংকটাকে ৫০ নিয়ে যাব । (কথাটা একটু ভাব নিয়ে বললাম) -কি এত বড় অপমান!!! -আরে রাখেন তো আপনার অপমান আমার টাকা আর ছাতাটা দিন । -কিসের টাকা?? আর ছাতা নেই আপনার খানদানি ছাতা সেদিন বাতাসে ভেংগে গেছে । -কিইইই????? ছাতা ভেংগে গেছে এখন আমি মাকে কি জবাব দিব আমি মাকে বলছি যে ছাতা ভুলে অফিসে ফেলে এসেছি । -আরে আপনি এত কিপ্টে এক ছাতার জন্য কেউ এমনটা করে নাকি? -হয়েছে হয়েছে এখন টাকা দিন । -কিসের টাকা??? -আরে মেম সেদিন যে ভিজে বাসায় গিয়েছিলাম তারপর যে জ্বরে ভুগলাম তখন ডাক্তার দেখাতে হয়নি?? ডাক্তার পুরো ৭১৩ টাকার ঔষধ দিয়েছে এখন আপনি আমাকে ৮০০ টাকা দিবেন তার মধ্যে ৭১৩ টাকা হল আমার ডাক্তারি খরচ আর বাকিটা হল ভ্যাট । -পাগল নাকি আপনি????? (এই কথা বলেই মেয়েটা আমার সামনে থেকে উঠে চলে যেতে লাগলো) -আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন আমার টাকাটা তো দিয়ে যান ।
(এই কথা বলার পর দেখি মেয়েটা আবার আমার দিকে এগিয়ে আসছে । মনে হয় টাকা দেওয়ার জন্য আসছে) -আসলে(আমি) -এই যে শুনোন মি. কিপ্টে আপনাকে বিনা পয়সায় একটা টিপস দেই আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাবনার কোনো ভাল ডাক্তারের সরণাপন্য হন ।(অপরিচিতা) -কেন বলুন তো আপনাদের বংশের কেউ পাগল নাকি?? তাহলে শুনোন পাবনার একজন ভাল ডাক্তারের সাথে আমার ভাল পরিচয় আছে আপনি ওখানে গিয়ে আমার কথা বলবেন দেখবেন আপনাদের কাছ থেকে টাকা কম রাখবে । -ওহ শিট আপনার সাথে আমার কথা বলাই ভুল হয়েছে আপনি আসলে মানুষ না একটা জড় পদার্থ । (মেয়েটা রাগে ফুসফুস করছে মনে হচ্ছে মূহুর্তেই আমাকে সাপের মত ছোবল দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় দিয়ে দিবে । তা যাই করুক কিন্তু যেভাবেই হোক আমার টাকাটা তো আদায় করতে হবে) -আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন আমার টাকাটা তো দিয়ে যান । (মেয়েটা আমার আর কোনো কথা শুনলো না সুজা হাটা দিল । মেয়েটা কফিশপ থেকে বের হওয়ার সময় ওয়েটারের কাছে গিয়ে আমাক দেখিয়ে কি যেন বলে গেল ।
আমিও কিছু না বুজে হাত তুলা দিলাম তারপর মেয়েটা চলে গেল । তা যাই করুক এদিকে আবার আমার টাকাটা আর উদ্দার করা আর হল না ওহ শিট । না যাই এখন বাসায় যাই এমনিতেই ওই মেয়েটার সাথে অনেক্ষন ঝগড়া করলাম এতে আমার অনেক টাইম লস হয়েছে । তাই কফির বিল দেওয়ার জন্য ওয়েটারেকে ডাক দিলাম । বিল দেখেতো আমি অবাক… -আরে ৩০০ টাকা কিসের আমিতো মাত্র এক কাপ কফি খেলাম তাও তো পুরোটা খাইনি এইযে দেখুন অর্ধেকটা এখনো রয়েছে । (আমি) -আসলে স্যার ওই ম্যাডাম বলে গেলেন যে উনার বিল ও আপনি দিবেন । (একথা শুনার পর আমার মাথা গরম হয়ে গেল) -কি?? কে না কে কি বললো আর আমাকে বিল দিতে হবে । তাছাড়া আমি বলেছি যে আমি উনার বিল দিব? -স্যার আপনিই তো ওই সময় হাত উঠিয়ে দেখালেন তাই ভাবলাম বিল আপনিই দিবেন । (ওহ শিট মেয়েটা শুধু আমার খসিয়েই যাচ্ছে কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না) -কি আর করা বাধ্য হয়েই ৩০০ টাকা বিল মিটিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম । বাসায় এসে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
সকাল বেলা ছোট বোনের চিল্লা চিল্লিতে আমার আরামের ঘুমটা হারাম হল । -ওই ভাইয়া উঠতো তাড়াতাড়ি । -ওই এত সকাল সকাল চিল্লাইতাছচ কেন?? -কেন আবার আমাকে কলেজে দিয়ে আয় । -কি এত দিন তো একা যাইতি আজকে আবার কি হল??? -এতদিন একা যেতাম তকে বলল আমি আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে যেতাম কিন্তু আজ ও যাবেনা তাই বলছি আজকে তুই আমাকে কলেজে দিয়ে আসবি । -তাহলে এক কাজ কর যেহেতু তর ফ্রেন্ড আজকে কলেজে যাবে না তাহলে তুই ও আজকে কলেজে যাওয়া বাদ দে তাছাড়া তুই তো প্রতিদিনিই কলেজে যাস একদিন না গেলে কিছুই হবে না । -না আমাকে যেতেই হবে আজকে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে । -তাহলে একাই যা আমি পারবোনা । -কি?? আমি কিন্তু মাকে বলবো যে তুই সারারাত মেয়েদের সাথে কথা বলে সকাল বেলা মরার মত ঘুমাস ।
-কি বললি? -শুনিস নি । -কিন্তু এটা তো মিথ্যা কথা আমার মত একটা ইনসেন্ট ছেলে এটা কখনো করবেনা । তাছাড়া তুই বললেই কি মা বিশ্বাস কিরে ফেলবে? -মাকে বিশ্বাস করানো তেমন কঠিন হবে না কেননা মা এমনিতেই তর জন্য মেয়ে দেখছে তার উপর যদি এই কথা বলি তাহলে তো আর বুঝতেই পারছিস মা কি করবে । -কি আমি তর ভাই না ভাইয়ের সাথে কেউ এরকম করতে পারে?? -তাহলে আমাকে কলেজে দিয়ে আসো । -ওকে যা তুই রেডি হয়ে নে । (কি আর করা বাধ্য হয়েই ওকে কলেজে নিয়ে গেলাম) দিয়াকে নিয়ে যখন কলেজে পৌছালাম তখন ও রিকশা থেকে নামার পর বলল । -ভাইয়া ৩ টার সময় আমার কলেজ ছুটি হয়ে যাবে । -তো আমি কি করবো? -কি করবি মানে আমাকে নিতে আসবিনা? -কি? -আরে আমি বলছি আমার কলেজ ছুটির পর আমাকে বাসায় যেতে হবেনা? -তো বাসায় যাবি সমস্যা কোথায়? -তুই আমাকে এসে নিয়ে যাবি । -আরে কি বলছিস আমি তো অফিসে থাকবো তকে নিয়ে যাব কিভাবে । -ভাইয়া আমি ভাল করেই জানি যে তর অফিস ২:৩০ এ শেষ হয়ে যায় আর তাছাড়া তুই এই রাস্তা দিয়েই তো বাসায় যাস সো যাবার আমায় নিয়ে যাবি ।(একথা ঠিক যে আমার অফিস ২:৩০ এ শেষ হয়ে যায়) -আরে তুই তো একা যেতে পারবি আমার আর কি দরকার । -দেখ ভাইয়া আমি এত কিছু বলতে পারবোনা আর যদি আমায় নিয়ে না যাস তাহলে কিন্তু আমি মা -হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবেনা আমিই তকে নিয়ে যাব । .
একথা বলে আর দাড়ালামনা আমার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । অফিস থেকে বাসায় যাবার সময় দিয়ার কলেজের সামনে এসে দাড়ালাম । কিন্তু দিয়াকে দেখতে পাচ্ছিনা মনে হয় এখনো ক্লাসে রয়েছে তাই আমি একটা টং দোকানে বসলাম । বসে দিয়ার অপেক্ষা করছি । হঠাৎ সেই ৮০০ টাকার মিস. অপরিচিতাকে দেখলাম । আরে এই মেয়ে এখানে কেন যাক ভালই হয়েছে । দেখি আমার টাকা গুলা তুলে নেওয়া যায় কিনা । আমি যখন মেয়েটাকে ডাক দিব ঠিক তখনি মেয়েটা আমাকেও দেখে ফেলে । আর আমাকে দেখে এমন একটা ভাব করে যেন আমি আফ্রিকার জংগলের কোনো না দেখা প্রাণী যাকে সে এই প্রথম দেখছে । মেয়েটা আমাকে দেখে আমার দিকে তেড়ে আসছে । আরে বাবা এই মেয়ের মতলব কি আমাকে খেয়ে ফেলবে নাকি?? কিন্তু আমি তো কিছু করিনি আমি হলাম ইনসেন্ট বয় । মেয়েটা আমার কাছে এসে বলল । -আরে আপনি এখানে কেন??(অপরিচিতা) -কেন এখানে আসলে আপনার কি এটা কি আপনার শুশুর বাড়ি? (আমি) -শুশুড় বাড়ি মানে আপনি কি কানা নাকি দেখতে পাচ্ছেননা এটা একটা মহিলা কলেজ । -সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি । -ওহ বুজেছি আপনি আমাকে ফলো করতে করতে আমার কলেজ পর্যন্ত এসে গেছেন আসলে আপনার মত কিপ্টের কাছ থেকে না সেদিন আমার ছাতাটা নেওয়াই ভুল হয়েছে । -এই যে মিস. অপরিচিতা মুখ সামলে কথা বলুন আমি কিন্তু আপনার মত এত কিপ্টে আর বদ বুদ্ধি নিয়ে বাসা থেকে বের হই না । -কি আমি কিপ্টে?? আর আমি বদ বুদ্ধি নিয়ে বাসা থেকে বের হই ।
কই আমি আবার কখন বদ বুদ্ধি আঁটলাম? -কেন সেদিন যে কফিশপে কফি খেয়ে আমার উপর কফির বিল চাপিয়ে চলে গেলেন । আচ্ছা আপনি একটা কথা বলুন তো আপনার বাবা কি আপনাকে হাত খরচের টাকা দেন না? -এই যে অনেক হয়েছে এবার চুপ করুন আপনি নিজেকে কি ভাবেন? -আমি নিজেকে কিছুই ভাবিনা । -তাহলে এখান থেকে যান । -আমি যাব না পারলে আপনি যান আর হ্যা যাওয়ার আগে টাকাটা দিয়ে যান । -কিসের টাকা? -ঐ যে ডাক্তারি খরচ আর সেদিনের কফির বিল সব মিলিয়ে ১১০০ টাকা । -ওফ আপনি একটা…. -কি কিপ্টে তো নো প্রবলেম আগে টাকাটা দিন তারপর বলেন । . মেয়েটা আর কিছুই বললনা রাগ করে চলে গেল । আমি আর কি করবো ছোট বোনের অপেক্ষায় বসে রইলাম । দীর্ঘ ৩০ মিনিট পর দিয়া ক্লাস শেষ করে আসলো । -কিরে এত দেরি কেন? -দেরি করলাম কোথায় ক্লাস ছিল তাই ক্লাস শেষ করে আসলাম । -সারা বছরের ক্লাস একদিনেই হয়ে গেছে নাকি । -মানে? -মানে কতক্ষণ দরে বসে আছি কিন্তু তর খবর নেই । -আরে ভাইয়া বললাম তো ক্লাস ছিল । -আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে এখন বাসায় চল । .
.
পরদিন অফিসে বসে আছি হঠাৎ দিয়ার ফোন । -হ্যালো ভাইয়া তুই কোথায় রে?(দিয়া) -কোথায় আবার অফিসে । -তুই তাড়াতাড়ি পপুলার হাসপাতালে চলে । (হাসপাতালের কথা শুনে আমার কিছুটা ভয় হল মার কিছু হয়নি তো) -কেন হাসপাতালে কেন? -আরে আমার এক ফ্রেন্ডের বাবা এক্সিডেন্ট করেছেন এখন খুব জরুরী ( রক্ত লাগবে তাছাড়া তর রক্তের গ্রুপও ( । -আচ্ছা ঠিক আছে আমি ২০ মিনিটের মধ্যে আসছি । -ওকে তাড়াতাড়ি আয় । তারপর বসের কাছ থেকে ছুটি নিতে তেমন একটা কষ্ট হলনা ছুটির কথা বলতেই পেয়ে গেলাম । তারপর প্রায় ১৮ মিনিটের মধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম । দেখলাম দিয়া আমার জন্য দাড়িয়া অপেক্ষা করছে ।
-ভাইয়া তুই এসে গেছিস তাড়াতাড়ি চল ।
-হ্যা চল । তারপর যখন রক্ত দেওয়ার জন্য কেবিনে ডুকবো তখনি দেখি সেই মেয়েটা (মিস. অপরিচিতা) কেবিনের বাইরে বসে কান্না করছে । আমি একটু অবাক হলাম যে মেয়েটা কাঁদছে কেন? মেয়েটাও আমাকে একটু অবাক হল । তারপর ওর সাথে কোনো কথা না বলেই কেবিনের ভেতর ডুকে পড়লাম । রক্ত দেওয়ার পর যখন বের হয়ে আসলাম তখন দেখলাম দিয়ার পাশে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে । তবে মাথা নিচু করে কিন্তু মেয়েটার চোখ লাল হয়ে আছে মনে হয় খুব কেঁদেছে । তবে কি ওই মেয়েটাই দিয়ার ফ্রেন্ড আর আমি কি ওই মেয়েটার বাবাকে রক্ত দিয়েছি? হলেও হতে পারে কেননা আমি তো দিয়ার কোনো ফ্রেন্ড কেই ঠিকমত চিনিনা । দেখলাম মেয়েটারর পাশে ওর মা এবং ভাই দাঁড়িয়ে আছে । মেয়েটার ভাই মনে হয় মেয়েটার চেয়ে বড় হবে । তবে উনারা সবাই খুব কান্না করছেন এই মূহুর্তে আমার কি করা উচিত আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা । মেয়েটার মা আমার কাছে এসে বললেন ।
-তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো বাবা ।
-না না আন্টি কি যে বলেন একজন মানুষ হিসেবে এটা আমার কর্তব্য তাছাড়া আমি তো আপনার ছেলের মতনই ।
-দোয়া করি বাবা আল্লাহ যেন তোমার সব বিপদ
– আপদ দূর করেন ।
– জি দোয়া করবেন । আর আপনারা আর কান্নাকাটি করবেন না দেখবেন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে ।
-তাই যেন হয় বাবা ।
-তাহলে আন্টি আমি আজ আসি আমার একটা জরুরী কাজ আছে ।
-ঠিক আছে বাবা যাও ।
তারপর দিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম । পরদিন অফিস শেষে আংকেল কে দেখতে হাসপাতালে গেলাম । যেয়ে দেখি আংকেল আগের চাইতো অনেকটা সুস্থ । আংকেল কে সুস্থ দেখে আমারও খুব ভাল লাগলো । আন্টি আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন ।
-আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি কেমন আছেন ।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম । এইতো বাবা ভাল আছি । তুমি কেমন আছো?
-জি আন্টি আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি আংকেলের কি অবস্থা?
-এইতো বাবা আগের চাইতে অনেকটা ভাল।
-আন্টি এগুলা আংকেলের জন্য ।
-আরে বাবা তুমি আবার এসব আনতে গেলে কেন তুমি এমনিতেই আমাদের জন্য অনেক করেছো ।
-ছিঃ ছিঃ আন্টি এভাবে বলবেন না । আংকেল অসুস্থ তাই আসার সময় এই সামান্য কিছু ফল নিয়ে এলাম । তারপর আংকেলের অসুস্থতার খুজ খবর নিয়ে সেদিনের মত চলে আসলাম । রাতে রুমে বসে আছি হঠাৎ দিয়ার আগমন ।
-কিরে আমার রুমে কি? (আমি)
-আসলে ভাইয়া তুই না অনেক ভাল । (দিয়া)
-কেন এতদিন কি খারাপ ছিলাম? (আমি)
-না তা না আসলে তুই রক্ত দেওয়ায় সেদিনে কথার বাবাকে বাচানো সম্ভব হয়েছে ।
-এই কথা কেরে?
-আরে আমার ফ্রেন্ডের নাম তুই যার বাবাকে রক্ত দিয়েছিলি । (ও তাহলে ওই মিস. অপরিচতার নাম কথা)
-ওহ এই কথা আরে ওইটা তো আমার একটা কর্তব্য ছিল তাছাড়া তুই তর ভাইয়াকে চিনস না?? তর ভাই কিন্তু এত খারাপ না ।
-হুম আসলেই তুই আমার একটা কিউট ভাইয়া । আর হ্যা ভাইয়া আন্টি কিন্তু তকে উনাদের বাসায় একদিন যেতে বলেছেন ।
-কিন্তু আমি তো উনাদের বাসা চিনি না ।
-সমস্যা নেই আমি তো আছি আমিই তকে নিয়ে যাব ।
-আচ্ছা ঠিক আছে সময় করে একদিন যাব ।
-মনে থাকে যেন ।
তারপর দিয়া আমার রুম থেকে চলে গেল । . এরপর মাঝে কয়েক সপ্তাহ চলে গেল আমি আর আন্টিদের বাসায় যাইনি তবে দিয়ার কাছ থেল প্রায়ই আংকেলের অসুস্থতার খবর নিতাম । একদিন অফিসে বসে আছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো । মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি অপরিচিত নাম্বার । ফোনটা রিসিব করে দেখলাম একটা মেয়ে।
-হ্যালো । (আমি)
-জি কেমন আছেন? (মেয়েটা)
-হুম ভাল আছি । কিন্তু আপনি কে আপনাকে তো আমি চিনলাম না ।
-কিন্তু আমি আপনাকে চিনি । -ওহ তাই নাকি ।
-হুম আর আপনিও আমাকে দেখলে চিনবেন ।
-ওহ তাই ।
-আচ্ছা আপনি একবার আসতে পারবেন?
-কেন?
-কেন আবার আপনার সাথে একবার দেখা করবো ।
-কিন্তু আমি যে আপনাকে চিনি না তাহলে দেখা করবো কিভাবে?
-আরে বললামই তো আমাকে দেখলে আপনি চিনবেন ।
-আচ্ছা ঠিক আছে কোথায় আসতে হবে বলুন ।
-কলেজের পাশের কফিশপ টায় আজ বিকাল ৪ টার সময় আসবেন ।
-ওকে ঠিক আছে ।
-আসবেন তো নাকি ভুলে যাবেন ।
-আরে না না সময় মত আমি পৌছে যাব ।
-আচ্ছা ঠিক আছে এখন রাখি বাই ।
-ওকে বাই ।
তারপর অফিস থেকে ফিরে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বিকাল ৪:০৩ কফিশপে পৌছে গেলাম । কফিশপে ডুকে মেয়েটাকে ফোন দিলাম দেখলাম কফিশপের ঠিক কর্নারে বসে থাকা একটা মেয়ে ফোন রিসিব করেছে ।
-হ্যালো আপনি এসে গেছেন । (মেয়েটা)
-হ্যা এসে গেছি আর আপনাকেও দেখতে পেয়েছি ।
আপনি বসুন আমি আসছি । তারপর মেয়েটার সামনে গিয়ে বসলাম। আরে এই তো সেই মেয়েটা (মিস. অপরিচিতা) mকথা দিয়ার ফ্রেন্ড । তবে মেয়েটাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে । আসলে মেয়েটার সাথে আমার যতবার দেখা হয়েছে ততবারই ঝগড়া করেছি তাই মেয়েটাকে ওভাবে দেখা হয়নি । তার উপর মেয়েটা আজ খুব সেজেগুজে এসেছে যেখোনো কেউ প্রথম দেখাতে ত্রাশ খাবে ।
-আরে আপনি? (আমি)
-জি আমিই আপনাকে ফোন করেছিলাম ।(কথা)
-ওহ তাই নাকি ।
-আসলে আপনার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ ।
-কেন আপনি আবার আমার কাছে কৃতজ্ঞ কেন?
-আপনি রক্ত না দিলে সেদিন বাবাকে বাঁচানো যেতনা ।
-আরে না না কি যে বলেন না । আল্লাহ তায়ালাই আংকেলকে বাচিয়েছেন আমি শুধু মাত্র মাধ্যম ।
– তা যাই হোক আর আপনি আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন ।
-আরে আরে আপনি ক্ষমা চাচ্ছেন কেন?
-আসলে আমি আপনার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি সেজন্য আমি খুব লজ্জিত ।
-আরে না না ঠিক আছে আসলে আমিও আপনার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি পারলে আপনিই আমাকে ক্ষমা করে দিন ।
-আর যাই হোক কি খাবেন বলুন?
-এটা তো কফিশপ এখানে একমাত্র কফি ছাড়া তো আর অন্য কিছু পাবেন না । চলেন কফিই খাই ।
-ঠিক আছে ।
তারপর কফির অর্ডার দিয়ে মেয়েটার সাথে আড্ডায় মজে গেলাম । কিন্তু মেয়েটা খুব মিশুক টাইপের তবে কথা একটু বেশিই বলে । হয়তবা এর কারণে ওর মা বাবা ওর নাম কথা রেখেছেন । তবে মেয়েটা সব সময় হাসিমুখে কথা বলে আর হাসলে ওর গালে টোল পড়ে যেটা ওর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । মেয়েটার সাথে অনেক কথা হল আর সময়টাও কিভাবে কেটে গেল টেরই পাইনি । তারপর যখন কফির বিল দিতে গেলাম তখন কথা কফির বিল দিতা চাইলো ।
-আরে আরে আজকে আমি বিল দিব । (কথা)
-কেন সেদিনের কফির বিলের বদলে আজকে দিচ্ছেন নাকি? (আমি)
-আসলে তা না এমনিতেই দিতে চাইলাম ।
-এমনিতেই যখন দিতে চাইলেন তাহলে আজকে আমি দেই অন্যদিন না হয় আপনি দিবেন ।
তারপর বিল মিটিয়ে কফিশপ থেকে বের হয়ে কথা কে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে আসলাম । সেদিন রাতেও কথার সাথে ফোনে অনেক্ষন কথা বলেছি তবে সেটা খুব সাবধানে যদি দিয়া জানতে পারে তাহলে আমার খবর আছে । এরপর থেকে প্রায় কথার সাথে আমার ফোনে কথা হত আর মাঝে মাঝে আবার ওর সাথে দেখা করতেও যেতাম । ধীরে ধীরে কথা আমার মনের গভীরে জায়গা করে নিচ্ছে । হয়তবা এটাই প্রেমের প্রথম অনুভূতি । মাঝে মাঝে মনে হয় কথাও আমাকে ভালবাসে হয়তবা বলতে পারছেনা । এভাবেই চলছিল আমার আর মিস. অপরিচিতা মানে কথার দিনগুলি । একদিন অফিসে বসে আছি হঠাৎ কথার ফোন ।
-হ্যালো কথা । (আমি)
-আপনি কোথায়? (কথা)
– কোথায় আবার অফিসে ।
-আপনি আজকে একবার আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?
-হুম পারবো ।
-তাহলে বিকাল ৪ টায় ঐ কফিশপটায় চলে আসবেন ।
-ওকে ঠিক আছে চলে আসবো ।
-আচ্ছা রাখি তাহলে ।
-ওকে বাই। বিকাল ৪ টা কফিশপে কথার সামনে বসে আছি কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছিনা ।
-কি হল কথা কখন থেকে বসে আছি কেন ডেকেছো কিছুই তো বলছো না । (আমি)
-কেন আমার সাথে বসে থাকতে ভাল লাগছেনা নাকি? (কথা)
-না ঠিক তা না ।
-তাহলে কি ?
-আচ্ছা ঠিক আছে দেখি তুমি কতক্ষণ বসিয়ে রাখতে পারো ।
-আসলে ঠিক কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা ।
-কিভাবে আবার প্রথম থেকে শুরু করবা তারপর বলতে বলতে শেষ করবা ।
-আপনি শুধু ফান করেন একটু সিরিয়াস হতে পারেন না?
-আরে আমি কোথায় ফান করলাম । আচ্ছা ঠিক আছে এবার আমি সিরিয়াস বল কি বলবা ।
-আসলে আমি একজন কে খুব ভালবাসি কিন্তু বলতে পারছিনা কিভাবে বলবো সেটা বুঝতে পারছিনা ।
(কথাটা শুনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম । কথা যখন বলল যে ও একজনকে ভালবাসে তখন খুব কষ্ট লেগেছিল তবুও অনেক কষ্টে কষ্টটাকে লুকিয়ে বললাম )
-ওহ তাই নাকি তাহলে বলে ফেল ।
-কিভাবে বলবো?? আপনি দেখেছেন যে কখনো কোনো মেয়ে আগে ভালবাসার কথা বলেছে?
-বলেনি তুমি বলবা তুমিই হবা প্রথম মেয়ে যে কিনা মেয়ে হয়েও আগে একটা ছেলেকে প্রপোজ করেছে ।
-কিন্তু কিভাবে বলবো ।
-আচ্ছা তোমার কি মনে হয় ছেলেটা কি তোমাকেও ভালবাসে?
-হুম আমারও তো মনে হয় যে বোকা হাদারামটা আমাকেও ভালবাসে ।
-তাহলে এক কাজ কর সোজা গিয়ে ওর সামনে দাড়াবে আর দুগালে চড় লাগাবে দেখবে এমনিতেই তোমাকে প্রপোজ করবে তাহলে আর তোমাকে আগে প্রপোজ করতে হবেনা । (কথাটা একটু রাগে বললাম শালা আমার ভালবাসাকে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিয়েছিস দেখ মজা মেয়েদের হাতের জুড় কত)
-সত্যি কাজ হবে তো?
-হুম হবে। তাহলে কথা আজ আমি যাই কিছুই ভাল লাগছেনা।
-কেন কি হয়েছে আরেকটু বসেন না ।
-না কথা আর বসবো না ।
এই কথা বলেই উঠে চলে আসলাম । তারপর প্রায় দুদিন কেটে গেল এই দুই দিন কথার সাথে আমি আর তেমন যোগাযোগ করিনি । কথা অনেক বার ফোন দিয়েছিল কিন্তু ফোন ধরিনি । একদিন বাসায় শুয়ে আছি মনটা ভাল নেই তাই অফিসেও যাইনি । হঠাৎ আমার রুমে কারো উপস্থিতি লক্ষ্য করলাম । চোখ মেলে দেখি কথা তরিগরি করে উঠে বসলাম ।
-আরে কথা তুমি আমাদের বাসায় তাও আবার আমার রুমে কি করে?(আমি)
-আরে এত ভয় পাবেন না আমি আপনাকে খেয়ে ফেলবোনা আর আমি দিয়ার সাথে এসেছি । (কথা)
-ওহ তাই বল ।
– আচ্ছা আপনি এই দুই দিন আমার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করছেন না আমি ফোন দিলে ধরছেন না কেন?
-না মানে একটু বিজি ছিলাম ।
-বিজি ছিলেন নাকি ইচ্ছে করা ধরেন নি ।
-না মানে
-হয়েছে আর মানে মানে করতে হবে আজকে তো ফ্রি আছেন আজকে বিকেলে ৪ টায় একবার পার্কে আসবেন আপনার সাথে কথা আছে ।
-আচ্ছা ঠিক আছে আসবো ।
-মনে থাকে যেন ।
এই কথা বলেই কথা আমার রুম থেকে চলে গেল। বিকেল বেলা পার্কে বসে কথার জন্য অপেক্ষাকরছি । প্রায় ১০ মিনিট পর কথার আগমন । লক্ষ্য করে দেখলাম কথাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে হলুদ একটা ড্রেস পড়ে এসেছে । যার কারণে ঠিক হলুদ পরীর মত লাগছে । কিন্তু চোখটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে আছে মনে হচ্ছে অনেক কাল ধরে চুপপিসারে মাঝ রাতে কারো জন্য কেদে যাচ্ছে । কিন্তু ও কাদবে কেন কাদবো তো আমি ও তো ছুটিয়ে প্রেম করছে । কথা আমার কাছে আসতেই আমি দাড়ালাম দাড়াতেই ।
-ঠাশ
-আরে চড় মারলা কেন?(আমি)
-ঠাশ
-আরে আরে তুমি আমাকে মারছো কেন আমি কি করেছি?(আমি)
-আমি আপনাকে দুটো কারণে মারছি প্রথমত আমাকে এই দুইদিন কাদানোর জন্য আর দ্বিতীয়ত আমাকে এখন আপনি প্রপোজ করবেন । তাছাড়া আপনিই তো বলেছেন যাকে ভালবাসি তার গালে চড় লাগাতে তাহলে আমাকে প্রপোজ করবে । (কথা)
-মানে?
-মানে আমি আপনার মত একটা বোকা হাদারামকে ভালবেসে ফেলেছি ।
-সত্যি!!!!!
-কেন বিশ্বাস হচ্ছেনা ।
-আরে বিশ্বাস হবেনা কেন তুমি তো আর মিথ্যে কথা বলবা না । আচ্ছা তোমার কাছে লুংগি ড্যান্স গানটা আছে নাকি?
-কি??
– আরে খুশিতে আমার এখন লুংগি ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমার কাছে লুংগি ড্যান্স গানটা নেই ।
-আসলে আপনি একটা
-বোকা,হাদারাম,কিপ্টে যা কিছু বল আমার কোনো সমস্যা নেই কেননা মিস অপরিচিতার যে এবার আমার প্রেমে পড়ে গেছে। আর এই মিস. অপরিচিতা জন্য আমি সব কিছু হতে রাজি আছি ।
-রাজি পড়ে হবেন আগে প্রপোজ করেন।
-ভাবছি তোমাকে প্রপোজ না করে কালকে মাকে দিয়ে ডাইরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো ।
-সত্যি!!!!(কথাটা শুনার পর মেয়েটার মুখে যে হাসি ফুটে উঠেছে সে হাসিটা অমলিন রাখার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি) -হুম সত্যি । তারপর কথার হাতে হাত রেখে একটা নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম । এবার বাসায় গিয়ে মাকে বলতে হবে যে মা “তোমার আর মেয়ে দেখতে হবেনা এবার যে আমার মেয়ে পছন্দ হয়ে গেছে এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ার ব্যবস্থা কর”