সোবহান সাহেবের মনটা ভীষণ খারাপ,সঙ্গে মেজাজটাও গরম।তার ইচ্ছে করছে বাড়ির কুকুর,বিড়াল,হাঁস,মুরগী এবং সকল মানুষকে একসঙ্গে বলী দিতে।রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে।কাজের বুয়া শাহেলা ভয়ে ভয়ে সোবহান সাহেবের সামনে চায়ের কাপ রাখলো।সোবহান সাহেব নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে সোফায় পা তুলে বসে আছেন।শাহেলার উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি চোখ তুলে গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন শাহেলার দিকে।ভয়ে শাহেলার আত্মা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম।হঠাৎ সোবহান সাহেব গলা খেকিয়ে বললেন,এই ছিল আমার কপালে?আমার অদৃষ্টে এটাই লেখা ছিল?
শাহেলা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো,চাচা আমি কি ভুল কিছু করলাম?
সোবহান সাহেব আবারো গলা খেকিয়ে বললেন,চুপ কর গন্ড মূর্খের দল!!তুই কেন ভুল করবি?ভুলতো আমি করেছি।এই যে বেঁচে থেকে ভুল করেছি আমি।কোথায় এই বয়সে আমি ছেলের বউয়ের হাতের চা পান করবো!তা নয়,চা দিচ্ছিস তুই।আমার এই বয়সে সারা ঘর জুড়ে ছোট ছোট পায়ের দৌড়ানোর আওয়াজ শুনতে পাবার কথা,আমার নাতি নাতনীকে পিঠে নিয়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলার কথা,একটা কচি হাত আমার বালিশের পাশে রাখা চশমাটা উধাও করে নিয়ে যাওয়ার কথা।কিন্তু তা নয়!আমার একমাত্র উচ্চশিক্ষিত আবাল মার্কা ছেলেটা বিয়ে শাদি,চাকরি বাকরি কিছুই না করে সারাদিন ঘরের মধ্যে থেকে কুমিরের মত ঘুমাচ্ছেন!!
তুই বল শাহেলা,এই ছিল আমার ভাগ্যে??
শাহেলা চুপচাপ সোবহান সাহেবের কথা শুনছিল।সোবহান সাহেব ধমকের স্বরে বললেন,
-কিরে তুই চুপ করে আছিস কেন???
-চাচা আমি আবার কি বলমু?আপনি বরং একটা কাজ করতে পারেন।তিথি আপারে এই বাসায় নিয়া আসতে পারেন।তিথি আপা এক্কেবারে সোজা বানাই ফেলবো ইশমাম ভাইরে।
-কথাটা খারাপ বলিসনি তুই।কিন্তু তিথি যদি আসতে না চায়?
-আরে আসবোনা ক্যান?একশোবার আসবো।
-একশোবারের দরকার নাই আমার,
একবার এসে আমার অগোছালো আবাল মার্কা ছেলেটাকে গুছিয়ে দিলেই হবে।
শাহেলা চায়ের কাপটা টেবিল থেকে উঠিয়ে সোবহান সাহেবের হাতে দিয়ে বললো,
-চাচা দেরি না করে তিথি আপারে ফোন করেন।আপনার কথা ফেলতেই পারবোনা তিথি আপা।
-তুই বলছিসতো তিথি আসবে?
-আসবো আসবো।তিথি আপা ইশমাম ভাইরে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু ইশমাম ভাই ক্যান জানি তিথি আপারে সহ্য করতে পারেনা।
-সমস্যাতো এখানেই!!!আমার আবাল ছেলেটা কি ভালোবাসা বুঝে??যদি ভালোবাসা বুঝতো তাহলেতো এতদিনে এক ডজন ছেলে মেয়ের বাবা হতে পারতো।তুই এখন যা।আমি তিথির বাবাকে ফোন করে দেখি কি বলে।
বেলা ১টায় ইশমামের ঘুম ভাঙলো।ফ্রেশ হয়ে নাশতার টেবিলে বসলো।শাহেলা প্লেটে ভাত বেড়ে দিলো ইশমামকে।ভাত দেখে ইশমাম অবাক হয়ে বললো,কি ব্যাপার শাহেলা আপা?তুমি আমাকে এখন ভাত খেতে দিচ্ছ কেন??
শাহেলা ইশমামের চেয়ে তিনগুণ অবাক হয়ে বললো,
-ওমা,এখন ভাত দিমুনাতো কি দিমু ভাইজান?
-কফি দেবে,চা দেবে,ব্রেকফাস্ট দেবে।
-ভাইজান কয়টা বাঁজতেছে তা জানেন?১টার উপরে বাঁজতে আছে।আর এখন আপনি নাশতা চাইতাছেন।
-এত বেশি কথা বলো কেন আপা??যা চেয়েছি তা দাও!
-ওমা!তাহলে ভাত খাইবেন কখন?সন্ধ্যাবেলায়??
ইশমাম চোখ রাঙিয়ে তাকালো শাহেলার দিকে।পরক্ষণে আবার চোখ নামিয়ে নিলো।শাহেলাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করে ইশমাম।শাহেলা কাজের বুয়া হলেও তাকে বড় বোনের মত দেখে ইশমাম।ছোট বেলা থেকেই শাহেলা এই বাসায় কাজ করে।ইশমামের মা মারা যাবার পর শাহেলার কাছেই বড় হয়েছে ইশমাম।
ভাতের প্লেটে হাত দিয়ে বললো,
-ঠিক আছে দাও,ভাতই খাই।আমার কপালে নাশতা নাই।
-সক্কাল সক্কাল উঠলেইতো হয়,কপালে নাশতা পানি সবই থাকতো।
-বকবক থামাওতো এবার!!
ইশমামের ধমক খেয়ে শাহেলা চুপসে গেল।
সোবহান সাহেব তিথির বাবার সঙ্গে কথা বলে নিয়েছেন।তিথির বাবা তিথিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কালই পাঠাবে।কিন্তু তিথি আসতে চাইবে কিনা তা শিউর নয় তিথির বাবা।তিথি ভীষণ রেগে আছে ইশমামের উপর।সোবহান সাহেব খুব করে অনুরোধ করেছেন তিথিকে পাঠানোর জন্য।তিথির বাবা আর সোবহান সাহেবের অনেক ইচ্ছা তিথিকে ইশমামের বউ করবেন।কিন্তু ইশমাম তিথিকে বিয়ে করতে রাজি হয়না এবং কি বিয়ে শব্দটাই ইশমানের কাছে তেঁতো লাগে।তবুও এবার তিথিকে এই বাসায় এনে লাস্ট চেষ্টাটা করেই দেখবেন সোবহান সাহেব।দুইদিন পর তিথি আসলো ইশমামদের বাসায়।তিথিকে দেখে সোবহান সাহেব ভীষণ খুশি হয়ে গেলেন।কাজের বুয়া শাহেলার চেহারা দেখে মনে হলো সোবহান সাহেবের চেয়েও বেশি খুশি সে।তিথিকে দেখেই সে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।লেবুর শরবত,আমের রস,মিষ্টি এনে হাজির করলো তিথির সামনে।সোবহান সাহেব তিথিকে বললো,আমের রস,লেবুর শরবত,দই মিষ্টি যা ইচ্ছা তা খা মা,তবুও তুই আমার ছেলেটাকে সোজা করে দে।
তিথি চোখ বড় বড় করে বললো,আমাকে কি ঘুষ খাওয়াচ্ছ আংকেল??
-না,না,ঘুষ খাওয়াবো কেন?আসলে তোকে দেখে আমি এতটাই আনন্দিত যে কি বলতে কি বলবো বুঝতে পারছিনা।
চট করে শাহেলা বললো,দ্যাখলেন তো চাচা,আমি বলছিনা?তিথি আপা না আইসা থাকতেই পারবোনা!কি আপা ঠিক বলছিনা?
তিথি রাগি চোখে শাহেলার দিকে তাকিয়ে বললো,কথা কম বলো তো!!বাদড়টা কোথায় তা বলো আগে!
-বাদড় কে আপামণি?
-তোমার আদরের ফটিকচাঁদ ইশমাম ভাই!!
-ভাইজানতো ঘুমায়।
-বেলা ১২টা পর্যন্ত কিসের ঘুম???বের করবো আজ ওর ঘুম!
বলেই তিথি বিদ্যুৎগতিতে ইশমামের রুমের দিকে গেল। সোবহান সাহেব মনে মনে অত্যন্ত খুশি।শাহেলাকে বললেন,এবার আমার আবাল মার্কা ছেলেটা জব্দ হবেরে খুব।
-একদম ঠিক বলছেন চাচা,তিথি আপা তাঁরের মত সোজা বানাই ফেলবো ভাইজানরে।
-বকবক থামিয়ে কড়া করে এককাপ চা নিয়ে আয়,পারলে সঙ্গে টাও নিয়ে আসবি।
সোবহান সাহেবের আনন্দ দেখে শাহেলা মনে মনে বললো,বুড়ার রঙ দ্যাখতাছি আজ শরীর বাইয়া পড়তাছে।
তিথি সোজা গিয়ে ইশমামের গা থেকে চাদর টেনে ফেলে দিলো।আচমকা ঘুম ভেঙে তিথিকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ইশমাম।রাগি গলায় বললো,
–
এত সকালে কোথথেকে এলি তুই?
-এত সকাল?ঘড়িতে দেখতো কয়টা বাঁজে!
ইশমাম ঘড়িতে টাইম দেখে বললো,
-মাত্র সাড়ে ১২টা।
-মাত্র??রাতে কি তোমার ফুলসজ্জা ছিল??
-ওই কোথথেকে এসে এমন ফাউল কথাবার্তা বলছিস?বের হো আমার রুম থেকে!
-আমি ফাউল কথা বলছি??এত বড় একটা ছেলে দিনের ১২টা ১টা পর্যন্ত ঘুমাও,আবার বলছ আমি ফাউল কথা বলছি!তোমারতো এই সময় অফিসে থাকার কথা,ভবিষ্যতের কথা ভাবা উচিত,ফ্যামিলি প্ল্যানিং করার কথা,টাকা উপার্জন করার কথা।আর তুমি কি করছ??খেয়ে খেয়ে আংকেলের অন্ন ধ্বংস করছ!
-আমার বাবার টাকায় আমি খাচ্ছি,তাতে তোর কি সমস্যা??আর যেন কি বললি?টাকা উপার্জন করতাম!তোরা মেয়েরাতো টাকাই চিনবি।আর কি চিনবি?টাকা খেয়ে খেয়েই তোদের মৃত্যু হওয়া উচিত!!
-আজেবাজে কথা বললে একদম খুন করে ফেলবো বলে দিলাম!তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।পাঁচ মিনিট সময় দিলাম।
-আমি কি তোর হুকুমের গোলাম?
-বেশি কথা বললে কিন্তু একটা চুলও রাখবোনা তোমার মাথায়।যা বলেছি তা করো।আমি টেবিলে খাবার দিতে বলছি শাহেলা আপাকে।একসঙ্গে আজ লাঞ্চ করবো।কেমন,মাই ডিয়ার ইশমাম?
ইশমামের খুব রাগ হচ্ছে,ইচ্ছে করছে মাথার সব চুল ছিঁড়ে ফেলতে।এই উটকু ঝামেলাটাকে কে আসতে বললো??এতো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমার জীবনটাকে ত্যানাত্যানা করে ফেলবে।নিশ্চয় বাবার কাজ।উহ অসহ্য!!
পাঁচ মিনিটের জায়গায় পুরা ২০মিনিট লেইট করে আসলো ইশমাম।তিথি রেগে আগুন।রাগি চোখে ইশমামের দিকে তাকালো।ইশমাম অবাক হয়ে বললো,এমনিতেই হাঁসের ডিম।তার উপরে জোর করে আবার বড় করে রেখেছিস কেন চোখ গুলোকে??
-তোমাকে আমি পাঁচ মিনিট সময় দিইনি??
-তো কি হয়েছে তাতে??তুই ভাবলি কি করে আমি তোর হুকুম পালন করবো??
-আমার হুকুম একশোবার পালন করবে!!কি ভেবেছ তুমি??খুব চালাক?তোমাকে এবার সকাল বিকাল দৌড়ের উপর রাখবো আমি।তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল।
-আচ্ছা একটা কথা বলতো তিথি,তুই এভাবে আমার পেছনে লেগে থাকিস কেন??
-তোমার পেছনে লাগার শখ হয়নি আমার,বুঝেছ?আংকেল আমাকে আসতে বলেছে।
-ও তাই?আংকেল বলেছে,আর তুই সুযোগ পেয়েই ধেই ধেই করে চলে এলি আমাকে জ্বালাতে।
-আমি তোমাকে জ্বালাই?? বলেই তিথি কেঁদে দিলো।তিথি আওয়াজ করে,হা হুতাশ করে কাঁদেনা।অটোমেটি কভাবে তিথির চোখে পানি চলে আসে।ইশমাম হাসতে হাসতে বললো,
-তোর এই স্বস্তা চোখের পানির কোনো ভেলু নেই,বুঝলি?তার চেয়ে বরং তোকে একটা বুদ্ধি দিই।আমার পেছনে না লেগে থেকে ভুড়ি ভুড়ি টাকাওয়ালা একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেল। ইশমামের কথা শুনে রেগে গিয়ে কি যেন বলতে চাইলো তিথি।কিন্তু কি ভেবে আর বললো না। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বললো,
-এসব বুদ্ধিতে কাজ হবেনা ডিয়ার ইশমাম।চুপচাপ খেয়ে নাও।তারপর তোমার অন্য ব্যবস্থা করবো আমি।লাঞ্চ করে এসে আবারো রুমে ডুকলো ইশমাম।খাটের উপর সটান হয়ে শুয়ে মুখে সিগারেট গুঁজে লাইটার দিয়ে আগুন ধরাতে যাবে,ঠিক এমন সময় মুখ থেকে সিগারেটটা টেনে নিয়ে গেল তিথি।প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গেল ইশমাম।
-সিগারেটটা দে বলছি তিথি।
-না দেবনা।এত স্মোক করো কেন তুমি??দিনে দুইটার বেশি সিগারেট ধরাবানা।
-বললেই হলো?আমি স্মোক করলে তোর কি?
-আমার কি সেটা যদি বুঝতে তাহলে আমাকে ধুরছাঁই করতেনা বাবু।
-বুঝতে হবেনা আমার।তুই আমার রুম থেকে যাহ তো!!
-যাবোনা।খেয়ে এসেই আবার খাটে শুয়ে পড়েছ কেন?ছাদে গিয়ে হাঁটতে পারোনা কিছুক্ষণ?অন্তত আলো বাতাস ধন্য হতো তোমার গায়ে লাগতে পেরে।
-তুই এত বকবক করিস কি করেরে তিথি!তোর গালের চাপায় ব্যাথা করেনা?
-না করেনা।বের হওতো তুমি!আমি তোমার রুমটা পরিষ্কার করবো।
-তাই?আমি কি তোকে আমার রুম পরিষ্কার করার জন্য কাজে রেখেছি?
-একদম বাজে কথা বলবানা,খাটাশ কোথায়কার!!রুমে এত ময়লা কেন,হ্যা?শার্ট প্যান্ট গুলো ভাজ করে রাখতে জানোনা?
তিথির চিৎকার শুনে ইশমাম কানে হাত দিয়ে বাধ্য হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইশমামের রুমটা অপরিষ্কার আর অগোছালো।প্যান্ট,শার্ট,জাঙ্গিয়া একেকটা একেক জায়গায় ছড়ানো ছিটানো।দেখে মনে হয় তিন চার বছরের বাচ্চার কান্ড।রুমের চারদিকে মাকড়শার জাল।এই অবস্থা দেখে তিথি রীতিমত অবাক।ম্যাচিউর একটা ছেলের রুম এতটা অপরিষ্কার কি করে হয়?শাহেলা আপা কি এই রুমে উঁকি মেরেও দেখেনা?? চিৎকার করে শাহেলাকে ডাকলো তিথি।শাহেলা দৌড়ে আসলো।
-কি হইছে আপামনি?
-তুমি এই রুমটা পরিষ্কার করোনা?
-ওমা,কেমনে করমু পরিষ্কার,সারাদিনইতো ভাইজান পরে থাকে এই রুমে।মাঝে মধ্যে ঝাড়ু দিতে আসলেও তার বকা শুনতে হয়।
-তাই বলো,আচ্ছা শাহেলা আপা তোমার ইশমাম ভাইয়ের সঙ্গে কোনো ভূত পেত্নি নেইতো আবার?
-আপামণি আমারো তাই মনে হয়।না হয় একটা মানুষ কেমনে এই জঙ্গলের মত রুমে থাকে??
-ওর ঘাড় থেকে সব ভূত পেত্নি তাড়াবো আমি।তুমি এখন আমাকে সাহায্য করতো।
তিথি ইশমামের রুমটাকে পরিষ্কার করে,কাপড় চোপড়, বিছানা গুছিয়ে ঝকঝকে,তকতকে করে ফেললো।
সন্ধ্যায় ইশমাম এসে একদম অবাক হয়ে গেল।সমস্ত রুমটা যেন ঝকঝক করছে।সত্যিইতো,এ
তদিন অপরিষ্কার ছিল আমার রুমটা।তিথি এসে আজ আমার রুমটা পরিষ্কার না করলে বুঝতেই পারতাম না এতদিন আমি কিসের মধ্যে ছিলাম।মনে মনে এসব ভাবতে লাগলে ইশমাম।বারান্দায় গিয়ে আরো অবাক হয়ে গেল সে।বারান্দায় মুখোমুখি দু’টি চেয়ার রাখা,টেবিলে ফুলের টব।মনটা ভালো হয়ে গেল ইশমামের।কিছুক্ষণ পরে তিথি দুই মগ কফি নিয়ে আসলো।এক মগ ইশমামের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,কি কেমন লাগছে এখন রুমটা?
-ভালোই,
-শুধু ভালো?
-অনেক ভালো।
-কফি কেমন হয়েছে?
-অসাধারণ,
-এভাবে বারান্দায় বসে শেষ কবে কফি খেয়েছিলে?
-মনে নেই।
-তুমি আসলেই আনরোমান্টিক।বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে রাতের আকাশ দেখতে দেখতে কফি খাওয়ার ফিলিংসটাই অন্য রকম। ইশমাম কিছুক্ষণ তিথির দিকে চেয়ে থেকে বললো,
-তুই এত সুন্দর করে কথা বলতে শিখলি কবে?
-সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা সব শিখে নেয়,নিজেকে বদলায়,বুঝলে??বদলাওনি শুধু তুমি।
-আমি আবার কি বদলাবো?
-এই যে কাজ কর্ম কিছুই করোনা,চাকরি করোনা।সারাদিন ঘুমাও আর খাও।এভাবে কি চলবে??আংকেলের ব্যবসায়টা দেখলেইতো পারো।
-চাকরি,ব্যবসায় এসব কিছুই ভালো লাগেনারে আমার।
-বাদাইম্মা ছেলেদের কিছুই ভালো লাগেনা!! তিথির কথা শুনে ইশমাম মৃদু হাসলো। ইশমামের হাসি দেখে তিথির গা জ্বলে যাচ্ছে।
-তুমি হাসছ?এত বেহায়া কেন তুমি??দুই বছর পরতো তিরিশের কোটায় পা দেবে।বিয়ে করবে কবে,শুনি??
-বিয়ে তো আমি কখনই করবোনা। তিথি আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-সত্যি করে একটা কথা বলবে?
-কি কথা?
-তোমার মাঝে কোনো সমস্যা নেইতো??
-মানে?
-তাহলে বিয়ে করতে চাওনা কেন??
-ফাজলামির একটা লিমিট আছে তিথি!!তুই আমার রুম থেকে এক্ষণই বের হয়ে যাহ!
-যাচ্ছি যাচ্ছি।
তিথি মুখ ভেঙচি দিয়ে চলে গেল। ইশমাম মৃদু হাসলো।মনে মনে বললো,এই মেয়েটা এত পাগলি কেন?তারপর সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললো,তিথি ঠিকই বলেছে,রাতের আকাশটা সত্যিই অনেক সুন্দর।
সোবহান সাহেবের ঘরে তিথির ডাক পড়লো।সোবহান সাহেবের মনটা আজও খারাপ।কিছুই ভালো লাগছেনা তার।তিথিকে পাশে বসিয়ে বললেন,ইশমামকে বিয়েতে রাজি করাতে পারবিনা তুই?
তিথি বললো,আমি মাত্র আজই আসলাম আংকেল।আর তোমার ছেলের পেছনে আজ কয় বছর ধরে পরে আছি তুমি বলতো?ওতো ভুলেও রাজি হচ্ছেনা।কি চায় ও বলতো?আমি খুব বাজে,অসুন্দর?
-কে বলেছে তুই অসুন্দর?তুইতো খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।ইশমাম এমনই।ও চায় এভাবেই দিব্বি সুখে জীবন পার করতে।কিন্তু ওতো বুঝেনা ভালোবাসা বলেও একটা জগৎ আছে,যেখানে ওর তোকে প্রয়োজন।আর এই জন্যেই তো তোকে নিয়ে এলাম।দূরে থাকলে কিছুই হবেনা কাজের কাজ।তুই কাছে থেকে ওকে সোজা কর মা।একবার শুধু বিয়েতে রাজি করা ওকে।তাহলেই কেল্লাফতে।
তিথি মুখ গোমরা করে বললো,তোমার ছেলেকে বান্দর নাচানি নাচাবো আমি।
সোবহান সাহেব তিথির কথা শুনে হাসলো।আজ খুব মনে পড়ছে তার স্ত্রীর কথা।সে যদি বেঁচে থাকতো তাহলে ছেলেটা এতটা একঘেয়ো হতোনা।তিথিকে নিশ্চয় সেও ছেলের বউ করতে চাইতো।সোবহান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
যত দিন যাচ্ছে ততই তিথির যন্ত্রণা বেড়ে চলছে।ইশমামের ইচ্ছে করছে ধাক্কা মেরে বের করে দিতে তিথিকে।কিন্তু তা করলে বাবা ভীষণ রেগে যাবে।এদিকে সহ্যের সীমাও পার হয়ে গেছে তার।তিথির জন্য আগের মত ঘুমাতে পারেনা,সিগারেট খেতে পারেনা।নিজের মত চলতে পারেনা ইশমাম।
সকাল হলেই রুমে এসে ইশমামকে জাগিয়ে দেবে,না উঠতে চাইলে পানি ঢেলে দেবে।অসহ্য মেয়ে একটা।মুখ ফসকে কথাটা বেড়িয়ে গেল ইশমামের।কিভাবে এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচা যায় তা বের করতে হবে।হঠাৎ ইশমামের মনে হলো ওতো রুমের দরজাই লাগায়না।ইশ!!এতটা বোকা কেন আমি?ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিলেইতো হয়।সকাল সকাল তিথির অসহ্য প্যারা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।ঠিক এটাই করলো ইশমাম।সকালে ইশমামের রুমে ডুকতে গিয়ে ডুকতে পারলো না তিথি।ভেতর থেকে দরজা লক করে রেখেছে ইশমাম।অনেক ডাকাডাকি করেও ইশমামকে জাগাতে পারলোনা তিথি।মনটা খারাপ হয়ে গেল তার।
চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানিও বেরিয়ে এলো।আর ইশমাম শান্তিমত ঘুমাতে পারছে।তিথিও বুদ্ধি বের করে ফেললো।মনে মনে বললো,ঘুঘু দেখেছ, ফাঁদ দেখনি চান্দু।তোমার দেমাক আমি বের করবো।ইচ্ছেমত মন ভরে ঘুমিয়ে যখন নিজের মর্জি হলো তখন রুম থেকে বেরিয়ে এলো ইশমাম।তিথি মনের মধ্যে সব রাগ অভিমান চেপে রেখে হাসি মুখে ইশমামের সঙ্গে আচরণ করছে।টেবিলে খাবার দিলো,ইশমাম যা যেভাবে চাইছে সেভাবেই দিচ্ছে তিথি।প্রতিদিনের মত রাগারাগি করছেনা।ইশমাম আজকে তিথির আচরণ দেখে খুব অবাক হলো,কিন্তু মুখে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালোনা সে।খাওয়া শেষে তিথি আহ্লাদী গলায় বললো,
-ইশমাম আমার একটা কথা শুনবে?
-কি কথা?
-আমার জন্য ডিসপেন্সারি থেকে একটা ঔষধ এনে দিতে পারবে?
-একটা ঔষধ?!!
-হ্যা,এটা না খেলে আমার খুব প্রবলেম হয়ে যাবে।প্লিজ এনে দাওনা।
-এটাতো তুই যে কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিতে পারিস।
-তুমি গেলে কি হবে?আমার এলার্জির প্রবলেম আছে।ঔষধটা খেতেই হবে।
-সেটাতো আমি আগে থেকেই জানতাম।
-কি জানতে?
-তোর যে এলার্জি আছে,যখন তখন গা চুলকায়,গলা চুলকায়।আর গলা চুলকালেই আমার পেছনে লেগে পড়িস ঝগড়া করার জন্য। তিথি সরু চোখে তাকালো ইশমামের দিকে,তারপর অভিমান করে বললো,
-সবকিছু নিয়ে ফাজলামি চলেনা ইশমাম।এনে দিলে দাও,না এনে দিতে পারলে মানা করে দাও।
গাল ফুলিয়ে চলে গেল তিথি।ইশমাম তিথির অভিমান দেখে এই প্রথম অবাক হলো।মেয়েটা আমার কথায় না রেগে উল্টা অভিমান করে নিজেই চলে গেল?আজ এতটা ঠান্ডা কি করে হলো!যাই বরং ঔষধটা এনে দিই ওকে।বেচারি আবার চুলকানির জ্বালা সহ্য করতে না পারলে আমার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দেবে।নিজের শান্তির জন্য অন্তত বেচারির উপকারটা করি।
ইশমাম তিথির জন্য ঔষধ আনতে চলে গেল।আর তিথি সুযোগটা হাতছাড়া করলোনা।ফোন করে একজন তালা চাবির মেকানিক নিয়ে এলো বাসায়।ব্যাস!ইশমামের রুমে ডোকার জন্য একটা আলাদা চাবি বানিয়ে নিলো।যাতে ভেতর থেকে দরজা লক করলেই তিথি নকল চাবিটা দিয়ে দরজা খুলে ফেলতে পারে।মেকানিক বলে গেছে সন্ধ্যার আগেই চাবি পাঠিয়ে দেবে।
শাহেলা তিথির বুদ্ধির তারিফ না করে পারলোনা।
-আপামণি আপনার তো অনেক বুদ্ধি!
-হুম,তোমার ইশমাম ভাই নিজেকে খুব চালাক ভাবে।কিন্তু ওতো জানেনা আমি ওর বাপের চেয়েও চালাক।
-আপামণি আস্তে বলেন,চাচা শুনলে রেগে যাইবো।
-চাচা ঘুমাচ্ছে,বুঝলে?
-আপামণি এই আনন্দের সময়ে ঝালমুড়ির পার্টি হইলে কেমন হয়?
-ঝালমুড়ি পার্টি!!
-হ্যা আপা,ঝালমুড়ি পার্টি। শাহেলার কথা শুনে হাসতে হাসতে তিথির পেটে ব্যাথা হয়ে গেল।
-চলো,তোমার ঝালমুড়ি পার্টি করি।
শাহেলা একবাটি ঝালমুড়ি বানিয়ে আনলো।তিথি সহ ড্রয়িংরুমে বসে আয়েশ করে ঝালমুড়ি খাচ্ছে।ইশমাম ঔষধ নিয়ে হাজির।তিথির হাতে ঔষধগুলো দিয়ে বললো,সরি,তোকে তখন কষ্ট দেয়ার জন্য।
তিথি মুচকি হেসে বললো,ঝালমুড়ি পার্টি করবে?
ইশমাম কিছুই বুঝলোনা।ও সরি বললো,আর তিথি ঝালমুড়ি পার্টি করতে বললো।এই মেয়ের মাথায় কিঞ্চিৎ সমস্যা আছে নিশ্চিত।কপাল চোখ একজায়গায় করে নিজের রুমে চলে গেল সে।এদিকে তিথি আর শাহেলা হো হো করে হাসতে লাগলো। পরদিন সকালে তিথি খুব সুন্দর করে সাজলো।খয়েরি রঙের জামদানি শাড়ি পরলো।সবসময় তিথি চুল বেঁধে রাখে।কিন্তু আজ লম্বা ঘন কালো চুলগুলো বেঁধে না রেখে ছেড়ে দিলো।চোখে কাজল পরলো।সব মিলিয়ে তিথিকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
ইশমামকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য ইশমামের রুমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখলো আজও ভেতর থেকে দরজা লক করে রেখেছে।তিথি নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ডুকে গেল।ইশমাম কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে।তিথি কয়েকবার ডাকলো।কিন্তু ইশমামের কানে তিথির ডাক পোঁছলোনা।দেখে মনে হচ্ছে ইশমামের চোখে রাজ্যের ঘুম।বিরক্ত হয়ে তিথি ইশমামের গায়ে হাত দিয়ে কয়েকবার ধাক্কা দিলো।ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে বসলো ইশমাম।হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে তিথিকে দেখে চমকে গেল।চোখ কচলে ভালো করে তাকালো তিথির দিকে।হঠাৎ আজ তিথিকে এত সুন্দর লাগছে কেন?ইশমাম খুব অবাক হলো।তিথি এমনিতেই সুন্দরী,কিন্তু খোলা চুল আর শাড়ি পরা তিথিকে ইশমাম আগে কখনো দেখেনি।আজ হঠাৎ করে তিথির অন্যরকম রূপসৌন্দর্য্য দেখে ইশমাম বিমোহিত হয়ে গেল।মনের কোণের ছোট্ট ঘরে শিহরণ জাগলো তার।কিন্তু তিথি ডুকলো কি করে?দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ইশমাম,নাহ,দরজাত ো ভাঙেনি।তাহলে ডুকলো কিভাবে রুমে?আমি কি রাতে দরজা লক করতে ভুলে গিয়েছিলাম?তিথি ইশমামকে বললো,কি ভাবছ বাবু?তোমার রুমে ডুকলাম কি করে তা ভাবছ?
-তাতো ভাবারই কথা।তুই আমার রুমে আসলি কি করে? তিথি হাসতে হাসতে বললো,তুমি চলো ডালে ডালে,আর আমি চলি পাতায় পাতায়।দরজা খুলতে বেশি কষ্ট করতে হয়নি।শুধু একটা নকল চাবি বানাতে হয়েছিল।
ইশমাম খুব রেগে গেল গলা খেকিয়ে বললো,তোর এতবড় সাহস হয় কি করে??আমার রুমে ডোকার জন্য নকল চাবি বানালি!তোর লজ্জা নেই?একটা ছেলের রুমে যখন তখন এসে ডুকে পড়িস!তোকে আমি পাত্তা দিইনা জেনেও কেন আমার পেছনে পড়ে আছিস?তোর জন্য কি এই দুনিয়ায় ছেলের অভাব পড়েছে??? ইশমামের এমন আচরণ দেখে তিথি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।ইশমামের কথাগুলোতে বড় একটা ধাক্কা লাগলো তিথির মনে।প্রচন্ড কষ্ট পেল তিথি।লজ্জায় অভিমানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছেনা তার।বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে চলে গেল ইশমামের রুম থেকে।তিথিকে এভাবে কান্নারত অবস্থায় চলে যেতে দেখে ইশমামের নিজেরই এবার মন খারাপ হয়ে গেল।কেমন যেন নিজের কাছেই নিজে অনুতপ্ত হচ্ছে সে।তার নিজের উপর রাগ হচ্ছে এখন।এভাবে মেয়েটাকে না বকলেও পারতাম।
খুব কষ্ট পেল আমার কথায় মেয়েটা।কি জানি হয়তো এই কষ্টটা থেকে ও এবাড়ি ছেড়ে চলেও যেতে পারে।চলে যাওয়াটা ব্যতিক্রম কিছুনা,আমি সেরকমই খারাপ ব্যবহার করলাম আজ ওর সঙ্গে।ধুর!! কেন যে অযথা এভাবে মাথা গরম করতে গেলাম তখন!!মনে মনে এসব বলছে ইশমাম।যা করার করেতো ফেললোই।এখন ভাবনাগুলো ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মনে করে ছেড়েই দিলো ইশমাম।একটু ঘুমানো উচিত এখন তার।বালিশে মাথা রেখে প্রায় ২০মিনিটের মত চেষ্টা করে গেল,কিন্তু বিধি বাম।ঘুম কিছুতেই আসছেনা তার।বারবার শুধু তিথির চেহারাটা চোখের পাতায় ভাসছে।আজ তিথিকে হঠাৎ যতটা ভালো লাগলো,ততটা ভালো কোনোদিন ইশমামের লাগেনি।তিথির এই সৌন্দর্য আগে কখনো ইশমামের চোখে ধরা পড়েনি।হয়তো ইশমাম তেমন করে কখনো তাকায়নি তিথির দিকে।মনে মনে বললো,শাড়ি পরলে কাউকে এত সুন্দর লাগে কেন?
কি অপূর্ব লাগছিল তিথিকে।সত্যিই মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী।কিন্তু আমিতো ওর মনটাই খারাপ করে দিলাম,কষ্ট দিলাম।হয়তো মেয়েটা শখ করে আজ শাড়ি পরেছিল,আর আমি দিলাম ওর সব আনন্দ মাটি করে।
তিথি রুমের দরজা বন্ধ করে ভেতরে কাঁদছে।ইশমামের কথাগুলো খুব লাগলো আজ।মনের গভীরে ক্ষত তৈরি করে দিলো।ছোটবেলা থেকেই ইশমামকে ভালোবাসে তিথি,আর বিয়ে সম্পর্কটাকে বুঝতে পারার পর থেকেই ইশমামকে স্বামী হিসেবে পেতে চায় সে।কখনো এক মুহূর্তের জন্যেও ইশমামকে মন থেকে অদৃশ্য করেনি,প্রত্যেকটা দিন ইশমামকে ভেবেছে,প্রত্যেকটা দিন ইশমামের প্রতি তিথির ভালোবাসা একটু একটু করে বৃদ্ধি পেয়েছে।কিন্তু ইশমাম কখনই তিথির ভালোবাসাকে গ্রহণ করেনি,হয়তো বুঝেইনি কখনো তিথির ভালোবাসাকে।আজ খুব কষ্ট হচ্ছে এসব ভেবে তিথির।কি করে পারলো ইশমাম আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে?আমিতো সবসময় ওকে নিজের করে চেয়েছি।কখনো পর করতে চাইনি।অথচ আজ ও এভাবে আমাকে পর করে দিলো?অবশ্য ওতো কখনোই আমাকে আপন করেনি,পর আর করবে কি? আমি চলে যাবো।আর কখনো ওকে জ্বালাবোনা,জ্বালাতে আসবোনা।আমি ওর সামনেই আসবোনা কোনোদিন। তিথিকে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে দেখে শাহেলা পাগলের মত দৌড়ে গেল ইশমামের রুমে।
-সর্বনাশ হয়ে যাইতাছে ভাইজান!!
ইশমাম শাহেলার চিৎকার দেখে ভীষণ চমকে গেল।এমনিতে বারবার তিথির সুন্দর চেহারাটা চোখের পর্দায় ভেসে উঠতেই কেমন যেন মাথা আউলা ঝাউলা লাগছে তার।ইচ্ছে করেছে ছুটে গিয়ে তিথিকে ছুঁয়ে দেখতে।এর মাঝে আবার শাহেলার চিৎকার।
-এভাবে ষাঁড়ের মত চিৎকার করছ কেন???কি হয়েছে তোমার??
-তিথি আপামণি চলে যাইতাছে।
-তাই নাকি?
-হ্যা,চোখে পানি,দ্যাইখা মনে হইতাছে খুব কাঁদছে।
-আচ্ছা তুমি যাও,আমি দেখছি।
শাহেলা দৌড়ে আবার চলে গেল।ইশমাম দাঁড়িয়ে আছে।ভাবছে আমার জন্যই এমনটা হলো আজ।আমাকে আটকাতেই হবে তিথিকে। তিথি ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছিল,ঠিক এমন সময় ইশমাম এসে তিথির সামনে দাঁড়ালো।তিথি অবাক হলো।
-তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন?
-তোকে যেতে দেবনা বলে।
তিথি এবার আরো বেশি অবাক হলো। কিন্তু মুখে কিছুই বললোনা।চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।চোখ দেখে মনে হচ্ছে যেন এখনই কেঁদে দেবে। ইশমাম তিথিকে বললো,
-তোর এত রাগ কেন বলতো??এভাবে কেউ চলে যায়?? তুই না আমাকে ভালোবাসিস?? ভালোবাসা শব্দটা শুনে সারা শরীর কেঁপে উঠলো তিথির।
-ভালোবাসা দিয়ে কি হবে??যাকে ভালোবাসি সেতো তা বুঝেনা।আমাকে অবহেলা করে,একটুও ভালোবাসেনা ইশমাম ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বললো,
-ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি তোকে।
তিথি অবাক হয়ে তাকালো ইশমামের দিকে।আজ নতুন ইশমামকে দেখছে সে।যার চোখে মুখে শুধু তিথির জন্য ভালোবাসা।তিথির চোখে পানি এসে গেল।জড়িয়ে ধরলো ইশমামকে।ইশমাম ভালোবাসার পরশ দিয়ে তিথিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
(সমাপ্ত)