শ্বশুরবাড়ি

শ্বশুরবাড়ি

মেয়েটার গায়ে ধাক্কা লাগতেই আমার দিকে তাকালো।

– আছে আছে (আমি)
– কি আছে (মেয়েটি)
– ওই যে বলবেন তো বাসায় মা বোন নেই ! তাই বললাম। শুধু মা বোন না বউ ও আছে।
– আমি মেয়েটার আরেকটু কাছে গা ঘেষে বসলাম।
– নাক কুঁচকে মেয়েটা জানালার ধারে সরে গেলো।
– আমি আরেকটু চেপে বসতেই… বাঁজখাই গলায় বলে উঠলো….
– আশ্চর্য মানুষ তো আপনি। ভদ্রতা জানেন নানাকি !! গা ঘেষে বসছেন কেনো ??
– আমি একটু দমে গেলাম। পানির বোতল আছে ?
– ব্যাগ থেকে বের করে দিলো। পানি নিয়ে বাসে উঠতে পারেন না !!
– পানি খেয়ে বোতলটা ফিরিয়ে দিলাম।

কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছি। একটু দুষ্টুমি করার শখ জাগলো। ঘুমের ভান করে মেয়েটার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলাম। চুল থেকে একটা সুঘ্রাণ আসছে, ইচ্ছে করছে চুলগুলো আলতো করে হাত বুলিয়ে দেই। কিন্তু চলন্ত বাস থেকে অকারণে নামার ইচ্ছা নেই। তার উপর ঠাটা রোদ।

– মাথাটা সরান।
– ওওপস স্যরি।

মেয়েটা এমনিতেই সুন্দর তার উপর শুভ্র, সাদা রংয়ের ড্রেস পড়েছে। সাদা রংটা আমায় কিছুটা দুর্বল করে দেয়। সুন্দরী মেয়েদের সাদা রংয়ের মাঝে দেখলে মনে হয় তারা অন্য জগতের বাসিন্দা। তার উপর ঠোঁটের নিচে তিল তিল থাকায় মেয়েটাকে….

– ভাড়া ভাড়া ( কন্ডাক্টর )
– শালার কন্ডাক্টর আসার আর টাইম পেলি না ( মনেমনে)
– ভাড়া কত ? ( মেয়েটা )
– আরে আরে কি করছেন !! আমি দিচ্ছি আপনারভাড়া।
– কেনো আপনি কেনো দিবেন !! নাকি আমার কাছে টাকা নেই !!
– না আপনি আমাকে পানি দিয়ে উপকার করলেন তাই কৃতজ্ঞতাবশত এই উপকারটুকু আমি করতেই পারি।দুজনের ভাড়াটা আমিই দিলাম। কন্ডাক্টর হালায় যেমন করে আমার দিকে চাইয়া আছে মনে হয় মস্ত বড় ভুল করেছি।

– এই এই ভাইয়া শুনুন ?
– জি আপা ( কন্ডাক্টর )
– অন্য কোনো সিট ফাঁকা নেই ?? আমার এখানে বসতে সমস্যা হচ্ছে।
– না আপা কোথাও সিট ফাঁকা নেই। আরো 20 কিমি পর দুইটা সিট ফাঁকা হবে।
– মেয়েটা হতাশ হয়ে জানালার বাইরে তাকালো।
– চিন্তা করবেন না। আমারো এই সিটে সমস্যা করছে। ওই দুইটা সিট ফাঁকা হলে আমরা দুজনেই ওখানে বসে পড়বো।
– আমার বয়েই গেছে আপনার সাথে বসতে। আর হ্যা আপনার বিরক্ত করার জন্যই আমি চলে যেতে চাচ্ছি।
– ওহ নাহ অনেকক্ষণ হলো। পেট ফেঁপে উঠেছে। না বমির জন্য না, মেয়েটার সাথে কথা না বলার জন্য। কিছু একটা বলা দরকার। মেয়েটা পানি খাচ্ছে।

– আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।
– কিছু বলবেন !!
– একটা প্রশ্ন ছিলো। করতে পারি ?
– কি ?
– আপনাকে কোথায় যেনো দেখেছি। মনে হচ্ছে না। কোথায় বলুন তো।
– একটু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর আমার মাথায় বোতল খালি করে দিলো।
– কন্ডাক্টর এই দৃশ্য দেখে বলে উঠলো আরে আরে এইটা কি করলেন আপা ? বাসের অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

– আমার জামাইয়ের মাথায় আমি পানি ঢেলেছি তাতে আপনার কি !! সকলে এক যোগে অবাক চোখে একবার আমাকে আর একবার চন্দ্রীমার দিকে তাকাচ্ছে। সবাই হয়তো এইটা ভাবছে, এরা স্বামী স্ত্রী হলে এতক্ষণ এভাবে ছিলো কেনো !! চন্দ্রীমা যখন আমাকে ওর জামাই বলে সবাইকে বললো আমার তখন অবশ্য দারুণ লেগেছে।

– কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর চন্দ্রীমা অভিমানী সুরে বললো, কোথায় আমার রাগ ভাঙাবে নয়তো আরো রাগিয়ে দিচ্ছো। সেজন্য রেগে গিয়ে

– স্যরি।
– হুমম।
– বললাম তো স্যরি।
– হুমম।
– স্যরির উত্তর দাও।
– হুমম।
– আমার বা হাতে সজোরে চিমটি কাটলো।
– উফফফ
– কতক্ষণ ধরে বলছি স্যরি আর তুমি হুমম হুমম করছো কেনো ??
– আমি কে আপনার যে স্যরি বলতে হবে ?
– আমার বা হাতটা ও দু হাতে জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বললো আর কতক্ষণ লাগবে পৌঁছুতে ?
– আমি একটু হেসে ওর কপালে আলতো চুমু দিয়ে বললাম, দশ-বারো মিনিট।

অনেকদিন ধরে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হয়নি। চন্দ্রীমার সাথেও অনেকবার এইটা নিয়ে মান অভিমান হয়েছে। তাই ঈদের কয়েকদিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ঈদের একদিন পর শ্বশুরবাড়ি এবার যাবোই। টিকিট ও কেটে ফেলেছিলাম। তবে সকালেই আমার ঘুমকাতুরে মন বিদ্রোহ করে বসায় আমি যেতে চাইলাম না। ব্যস আমার বউটা একা একা চলে আসলো। আমিও একটু পর পিছু পিছু চলে আসলাম। এই হলো কাহিনী। শ্বশুরবাড়ি এসে পড়েছি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত