আবার বসন্ত এসেছে

আবার বসন্ত এসেছে

– কৌস্তুভ তুমি খাবে না?
কৌস্তভকে ল্যাপটপে কাজ করতে দেখে বলল সৃজা, কৌস্তুভ কাজ করতে করতেই বলল
– হুম, তুমি খাবার টা বারো আমি আসছি। কাল সকালে অফিসে একটা মিটিং আছে। কাজ প্রচুর।
– তা বলে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কাজ করবে?এ তোমার কেমন দাবী বলো তো কৌস্তুভ,
– কৌস্তুভ বলল আসছি….

কৌস্তুভ সৃজার সাথে ডাইনিং টেবিলে র সামনে গিয়ে বসলো। সৃজা খাবার পরিবেশন করলো। কৌস্তুভ তৃপ্তি ভরে খেয়ে বলল, “সত্যি সৃজা তোমার হাতে র রান্নায় জাদু আছে”। যা রান্না করো তাই অমৃত লাগে। সৃজা কৌস্তবের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে খুশি হলো। কৌস্তুভের আজ খাবার পর কাজ করতে একদম ভালো লাগল না। এমনিতেই,একটা শীতের আমেজ চারিদিকে। তারপর অনেক রাত ও হয়েছে। তাই কৌস্তুভ ঘুমিয়ে পড়লো। সৃজা রান্নাঘরের অনান্য কাজ সেরে , আলো নিভিয়ে কৌস্তভের পাশে শুয়ে পড়লো। আজ দুপুরে অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছে সৃজা তাই তার আর ঘুম আসছিল না। তাই সে মোবাইল টা চালু করে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে গল্প পড়তে থাকল। গল্প পড়তে পড়তে, হঠাৎ তার চোখ পড়লো একটা নোটিফিকেশনে । অনেক পুরনো ফটো। প্রায় আট বছর আগের। দোলের আবিরমাখা একটি ছবি।ছবিটি দেখার সাথে সাথেই তার অতীতের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেল।

সৃজার বাবা ছিল পেশায় অটোচালক, অনেক কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা শিখিয়েছিল। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ভালো নাম্বার নিয়ে। তারপর, জয়েন্টে ভালো পাশ করে ভর্তি হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে । তার মা বাবা খুব খুশি ছিল সেদিন। কয়েকদিন পর তার বাবা কঠিন রোগে মারা যায়। মা আর সৃজা একা থাকত। খুব কষ্টে দিন চলছিল তাদের। বাবা মারা যাওয়ার পর মা কাজ করতে থাকে ব্লাউজের দোকানে। সৃজা মনে মনে ভাবত ইঞ্জিনিয়ার হলে মনে হয় সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে‌ মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবে। “কিন্তু আশায় মরে চাষা “, সৃজার অবস্থা অনেকটা এইরকম ছিল। চার বছর পর বিটেক হলো তার। ক্যাম্পাসিং এর অভাবে ভালো চাকরি জুটলো না তার।ওরা সৃজাকে
এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট দেয়নি। তাই সে নাম লেখালো ফ্রেশনারদের দলে। ফলে তাকে ঘিরে ধরলো বেকারত্ব।কোনো কাজ পাচ্ছিল না সৃজা।মায়ের সাহায্য করতে পারছিল না সে। খুব কষ্ট হতো সৃজার।সৃজা খালি পাগলের মতো কাঁদত। অনেকবার আত্মহত্যা করতে গেছিল , কিন্তু ফিরে এসেছে মায়ের কথা ভেবে। তার মা খালি সাহস যোগাতো। প্রতিবার সৃজা আশাবাদী হতো। সে ভাবত একদিন ঠিক অবস্থা পাল্টাবে , ঠিক মায়ের পাশে দাঁড়াবো।

শেষে অনেক অপেক্ষার পর ইন্টারভিউ এর ডাক এলো তার। একটা নামী কম্পানিতে মোটা টাকার মাইনের কাজ পেল সৃজা। ভেবেছিল এইবার তাদের অবস্থা পাল্টাবে। অফিসে কাজ করার সময় , কৌস্তুভের সাথে বন্ধুত্ব হয় সৃজার। বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক পরিনত হয় তাদের। তাদের দিন ভালোই কাটছিল ‌। সেইদিন কার কথা আজও মনে পড়ে তার। অফিসে দোলের জন্য আবির খেলা হয়েছিল। খুব আনন্দে বাড়ি ফিরছিল, বাড়ি ফেরার সময় দোল উপলক্ষ্যে মায়ের জন্য নিজের পছন্দের শাড়ি কিনেছিল, বাজারে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ কিনেছিল। ভেবেছিল , কাল ছুটি তাই মায়ের হাতে র চিংড়ি মাছের মালাইকারি খাবে। বাড়ি ফিরতে রাত হয়েছিল। তাই রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল।সামনে ছোটো গলির মুখে , নির্জন রাস্তায় একা একা হেঁটে যাচ্ছিল সে। মনে মনে একটু ভয়‌ হচ্ছিল তার। চার জন লোক তার পিছু নেয়। কিছুক্ষণ পর সৃজা বুঝতে পারে লোকগুলো র দৃষ্টি ভালো না। সে বুঝতে পারল কিছু শরীর লোভী নরপিশাচ তার পিছু নিয়েছে। সে পায়ের গতি বাড়িয়ে দেয় কিন্তু শেষ অব্দি নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না সৃজা। পিছন থেকে ওরা সৃজার ওড়না টেনে ধরলো, অনেক চেষ্টা র পর তাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারল না সৃজা।তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল সৃজার শরীরের ওপর।তারা জোর করে সৃজাকে বিবস্ত্র করলো। যন্ত্রনায় চেঁচাতে গেলে তারা মুখ টিপে ধরলাম সৃজার। “বসন্তের লাল আবিরের মতো রক্তাক্ত হলো সৃজার দেহ”। তার পা দিয়ে রক্ত গড়াতে থাকল অনবরত‌। অসহ্য বার্তা গ্ৰাস করল তার দেহ। আস্তে আস্তে সৃজা জ্ঞান হারালো।

সকালে জ্ঞান ফিরলে , দেখে তার মা পাশে বসে অনবরত কেঁদে চলেছে। সৃজা হাসপাতালে র বেডে শুয়ে। সৃজাও কান্নায় ভেঙে পড়লো। সুস্থ হওয়া পর সৃজা আর তার মাকে একঘরে করে দেয়। কেউ কথা বলতো না তাদের সাথে। রাস্তায় বেরোলে সবাই পরিহাস করতো তাকে দেখে। সৃজা বুঝতে পারতো না তার কী দোষ। এই প্রশ্ন করতে করতে নিজের সাথেই দ্বন্দ লেগে যেত প্রতিবার।

সৃজার মা মারা যায়। একেবারে অনাথ হয়ে যায় সে।মা ছিল তার একমাত্র সঙ্গী । এখন মাও আর তার পাশে নেই। একদিন কৌস্তুভ কে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল সৃজা। কৌস্তুভ তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল,”চিন্তা করিস না আমি আছি তোর পাশে,কেউ না থাকলেও সবসময় থাকব”। সেদিনের পর থেকে আজ ও আছে কৌস্তুভ তার পাশে। সেই রাতেই কৌস্তুভ বাড়ির সবার অমতে সৃজাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর তারা অনএ চলে আসে তারা। ” কৌস্তুভ সৃজার ধূসর জীবন আবার নতুন করে বসন্তের রঙে‌ রাঙিয়ে দেয়”।

হঠাৎ পাখির কিচিরমিচির শব্দে অতীত থেকে বেরিয়ে এলো সৃজা। কখন যে এতকিছু ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি সৃজা। তার পাশে শুয়ে থাকা কৌস্তুভের মাথায় আদরের হাত বুলিয়ে ধন্যবাদ জানালো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত