অচেনা ভালবাসার খোঁজে

অচেনা ভালবাসার খোঁজে

ইরা খুব আনন্দের সাথে ব্যাগ গোছাচ্ছে।আজ রাতে মনে হয় খুশিতে তার ঘুমই হবে না।মনে মনে বললো -আর কিছু চাই না আল্লাহ্‌, তুমি শুধু আমার এই চাকরিটা কনফার্ম করিয়ে দাও।এর মাঝে মায়ের ডাক পড়লো পাশের ঘর থেকে,
– ‘ কি রে, খেতে আসছিস না? খাবার দিয়েছি তো।’
– ‘ আসছি মা, আর পাঁচ মিনিট। ‘

ছোটবেলা থেকেই ইরার ঢাকায় লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছে ছিল।কিন্ত তা সম্ভব হয়নি।একসময় লেখাপড়া শেষ হলো।এরপর অনলাইনে অনেক অফিসে ট্রাই করলো ইরা।তবে, কোথাও থেকেই কোন সাড়া পাওয়া গেল না।মন থেকে প্রায় ওসব ভাবনা মুছেই গিয়েছিল।হঠাৎ এতদিন পর,এক অফিস থেকে ইরাকে ফোন করে জানালো ইন্টারভিউের জন্যে আসতে।তবে ইতিমধ্যে ইরার অত্যধিক খুশি দেখে মনে হচ্ছে, চাকরিটা তার হয়ে গেছে।রাতে খাওয়া-দাওয়া করে ইরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।কাল সকাল ন’টায় তার ট্রেন।

ঢাকা শহরে ইরাদের আত্মীয় বলতে তেমন কেউ নেই।শুধু এক দূর-সম্পর্কের মামা আছে।আপাতত গিয়ে তাদের বাড়িতে উঠবে ইরা।ইরার বাবা প্রথমে তাকে ঢাকায় জাবার অনুমতি দিতে চায় নি।তবে মেয়ের এতটা উচ্ছ্বাস দেখে আর, বারন করেনি।তবে ইরার এই উচ্ছ্বাসের পেছনে অবশ্য আরো একটা কারণ আছে, যা কি না সবার অজানা এখনো।ইরাদের পাশের কলোনিতে নিলয় নামে এক বন্ধু ছিল তার।নাহ্,তেমন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বললে অবশ্য কিছুটা ভুল হবে।হয়ত ইরা মন থেকে তাকে খুব কাছের ভেবে নিয়েছিল।নিলয়ের বাবার চাকরিতে বদলি হবার কারণে ওরা ঢাকায় চলে যায়।তারপর, আর কোনদিন দেখা বা যোগাযোগ হয়নি নিলয়ের সাথে ইরার।এখন চাকরিটা হলে নিলয়কে খুঁজবে ইরা।ব্যাপার কিছুটা অসম্ভব এবং সিনেমেটিক পর্যায়ের।সেকথা ভেবেই তা কাউকে বলেনি ইরা।মন তো অনেক কিছুই পেতে চায়।আশা করতে দোষ কি তাহলে!!

মামার বাসায় ইরা লাগেজগুলো রেখেই অফিসের উদ্দেশ্যে বের হল।ইন্টারভিউ দিতে ইরা ঢুকলেও, ভেতরে গিয়ে কারো মুখের দিকে তাকালো না।কিছুটা নার্ভাস লাগছে তার।তিনজন বসা টেবিলে,তারা ইরাকে যদিও তেমন কঠিন কিছু প্রশ্ন করলো না।হঠাৎ একজন বললো,

-‘ নিলয়,দেখি আপনার হাতের ফাইলটা। ‘

ইরা এবার তাকালো।বাম কর্ণারে যে বসা, তার নামই নিলয়।অফ! এর নাম নিলয় কেন?

-‘ হুম, স্মল টাউন গার্ল।লেখাপড়া কিছুই তো ঢাকায় নয়।এখন ঢাকায় কি একা না ফ্যামিলির সাথে? ‘

– ‘ না, পুরোপুরি না।আমার এক রিলেটিভের বাসায়।’

-‘ঢাকায় এ্যাডজাস্ট করতে পারবেন তো?

-‘জি স্যার, পারবো।’

-‘আমরা আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করবো। আপনি এখন আসুন। ‘

ইরা বের হবার সময় নিলয়ের দিকে একবার তাকালো।যদিও নিলয় তা লক্ষ্য করলো না।

বাড়ি ফিরে ইরা ফোনের অপেক্ষা করতে লাগলো।কিন্ত অফিস থেকে কোন ফোন এল না।ইরা চিন্তায় পড়ে গেল।চাকরিটা বোধহয় আর হলো না।তাহলে, সেই ছেলেটি কি তার বন্ধু নিলয় কিনা তা জানবে কি করে ইরা।চাকরিটা হলে, জানার একটা সুযোগ ছিল।অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে কি তাহলে?নিলয়কে দেখলে তখন জিজ্ঞেস কিরবে।এবার রাগ হলো নিজের ওপর।কি সব পাগোলের মত কথা ভাবছে সে।

দুদিন পর ফোন এল অফিস থেকে, অবশেষে চাকরির সুখবরটা ইরা পেল।

অফিসে প্রথম দিনটা ইরার বেশ ভালই কাটলো।কেবল নিলয়ের কোন দেখা পেল না , ইরা।কোন বিশেষ কারণে আজ সে ছুটি নিয়েছে।তবে,নিলয়ের এক ঘনিষ্ঠ কলিগের সাথে ইরার অনেক কথা হলো সেদিন।ইরা টুকটাক যা জানতো নিলয় সম্বন্ধে, তা সবই এই নিলয়ের সাথে মিলে গেল।

পরদিন ইরা কাজের এক ফাঁকে নিলয়ের কেবিনে নক করলো,

-‘ আপনি মনে হয় আমাকে চিনতে পারেন নি।অবশ্য চিনবার কথাও না। অনেক আগে দেখছেন।তাই নতুন করে পরিচিত হতে এলাম।’

-‘ মিস ইরা, আমার স্মৃতি-শক্তি এত খারাপ না যে দু-চার দিন আগে আপনাকে দেখে ; আজ চিনতে পারবো না। ‘

ইরা নিলয়কে কি ভাবে চেনে তা বললো।

– ‘ আজব! এগুলো তো আমি এখানকার অনেকেই বলেছি যে,আমরা আগে কোথায় থাকতাম।নেক্স টাইম আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে হলে, ভাল কোন টপিক্স দিয়ে ট্রাই করবেন। আপনি এখন আসুন,প্লিজ।’

নিলয়ের চোখে প্রচন্ড বিরক্তি।

ইরার খুব লাগছে নিজের ওপর।কেন বোকার মত আঁগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেল সে!!

এটা তার নিলয় না,সে ভুলই করেছে।এই নিলয় হয়ত তাদের আশেপাশে কোথাও থাকতো ছোটবেলায়।এক নামের তো অনেক মানুষ থাকতেই পারে।

পরদিন সকালে ইরা নীল শাড়িটা আলমারি থেকে বের করলো।ক’দিন ধরে শাড়ি পড়তে খুব ইচ্ছে করছে কেন জানি।বের হবার আগে নীল চুড়িগুলো দু-হাতে পড়লো।অফ!! অফিসের জন্য সাজ কি আজ একটু বেশী হয়ে গেল??

আয়নায় নিজের মুখটা দেখে একটু হাসলো। হোলে হোক না, আজ তার মন চেয়েছে।রাস্তায় বের হতে না হতেই বর্ষার ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ইরার মনটাকে যেন ছুঁয়ে দিল।সেই সাথে ইরার শাড়ির আঁচলেও একটু আদর মেখে দিল।

ইরা অফিসের গেটের ভেতর গিয়েই দেখে নিলয় লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ইরা আর সামনে এগিয়ে গেল না।তবে নিলয় পেছনে তাকালো এবার।

– ‘ মিস ইরা, ওখানে কেন? এদিকে আসুন।আমি কালকের ব্যবহারের জন্য খুব দঃখিত।আসলে আমার মনটা ভাল ছিল না।আজ আমি আপনাকে লাঞ্চ করাবো।না বললে কিন্ত ভাববো আপনি এখনো রেগে আছেন।’

-‘আমি বাসা থেকে লাঞ্চ নিয়ে এসেছি।’

-‘ ও, তাহলে আমার কেবিনে একসাথে লাঞ্চ করি আমরা? ‘

-‘ঠিক আছে। ‘

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত