“বাইচ্ছা লন ২০০ ট্যাকা, দেইখ্যা লন ২০০ ট্যাকা, এক দাম দুইশ ট্যাকা, লইয়া যান দুইশ ট্যাকায়”।
পাতলা একটা ফুলশার্ট আর ওপরে হাফ হাতা সোয়েটার পরে পৌষের শীতল হাওয়ায় কাঁপতে কাঁপতে শিহাব নিজেকে ভর্ৎসনা করছিলো,
এমন হালকা পোষাকে বাইরে বের হবার জন্যে। অবশ্য তার জানার কথা না হঠাৎ করেই শীতটা এমন জাঁকিয়ে বসবে।
আর জানলেও কিছু করার ছিলো না। গরম পোষাকগুলো সব লন্ড্রিতে দেয়া হয়েছে আসন্ন শীতকে মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে।
এমন একটা অবস্থায় মাত্র দুইশ টাকায় ফুটপাথে মোটা কাপড় বিক্রি হতে দেখে খুশি হয়ে উঠলো তার মন।
পকেটে একটা পাঁচশ টাকার নোট নিয়ে বের হয়েছিলো আজকে। ভাগ্যটা বেশ ভালোই বলা যায়।
দুইশ টাকাটা যদিও কাপড়গুলোর বাহ্যিক জৌলুসের তুলনায় অনেক কম মনে হচ্ছে,
তবে কোন কিছু কেনার সময় দামাদামি করার পুরোনো অভ্যাসটা ছাড়তে পারলো না সে।
খয়েরি রঙের বাহারি একটা কোট গভীরভাবে নিরীক্ষণ করতে করতে সে দোকানদারকে বললো,
-দেড়শ টাকায় দেন। পুরান জিনিস। ওয়াশ করা লাগবো।
দোকানদার এমন তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে শিহাবের দিকে তাকালো, যেন সে কত বড় অপরাধ করে ফেলেছে।
বিরক্তি এবং অবজ্ঞা ভরে একটা ম্যাচের কাঠি দিয়ে কান চুলোকোতে চুলকোতে লাগলো সে।
-সেকেন্ড হ্যান্ড আর পুরান দেইখাই তো দুইশ টেকা চাইসি। নাইলে এই জিনিস বড় দোকানগুলা থিকা কিনতে যান দুই হাজার টাকার নিচে পাইবেন না।
আপনে নিলে নেন, নাইলে সরেন। আমার কাস্টমারদের জায়গা দেন।
দামাদামি করতে গিয়ে এমন তীব্র কথার বাণে নাকাল হওয়া নতুন না শিহাবের জন্যে। তবে এসব হজম করতে অভ্যস্ত সে।
কৃত্রিম খুঁতখুঁতে দৃষ্টিতে কোটটা দেখে গায়ে দিয়ে ফিট হবে কি না দেখে। বাহ, চমৎকার ওম! কাপড়টাও খুব আরামদায়ক।
সন্তুষ্টির হাসিটা বিরক্তির আবডালে লুকিয়ে যেন খুব অনিচ্ছায় জামাটি কিনছে এমন ভান করে সে পাঁচশ টাকার নোটটা বাড়িয়ে দেয়।
বাসে উঠতে আরো অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হবে। কিছুক্ষণ হেঁটেই শরীর গরম লাগা শুরু করেছে শিহাবের। রীতিমত ঘামছে সে।
বাস ভাড়া দেয়ার সময় শিহাব বেশ বিপত্তিতে পড়লো।
লম্বা আলখাল্লার মত জিনিসটা পরে থাকায় প্যান্টের ভেতরের সিক্রেট পকেট থেকে টাকা বের করতে যথেষ্ট ধকল পোহাতে হলো।
ভাড়া দেয়ার পর উদ্বৃত্ত খুচরো টাকা গুলো কোটের পকেটে রাখতে গিয়ে সে খেয়াল করলো কোটের আনাচে কানাচে অনেকগুলো পকেট।
আগে বোঝা যায় নি। অনেকটা সুইস নাইফের মতো। বাইরে থেকে বোঝা যায় না এর ভেতরে কতগুলো সরঞ্জাম আছে।
এমনিতে সস্তা দামে কেনা, আরামদায়ক, তার ওপর এতগুলো পকেট! নাহ, এটা কিনে সে খুব জিতেছে। মনটা প্রসন্ন হয়ে ওঠে তার।
বাস থেকে নেমে বাসায় যাওয়ার পথে কনকনে হিমেল হাওয়ায় তার কান এবং হাত শিরশিরিয়ে ওঠে। একটা মাঙ্কি ক্যাপ না কিনলেই না।
হাত দুটোকে শীতের কবল থেকে বাঁচাতে সে কোটের দুইপাশের বড় দুটো পকেটে ঢুকিয়ে দিতে গিয়ে দেখলো ডান পাশের পকেটটা সেলাই করে রাখা।
আর তার ভেতরে মচমচ করছে কোন কিছু। কী থাকতে পারে এতে? নিশ্চয়ই টাকা পয়সা! সে গভীর মনোযোগের সাথে স্পর্শ করতে থাকে পকেটটার বহির্ভাগ।
অন্তত আট-দশটা নোট তো আছেই। প্রতিটা যদি এক হাজার টাকার নোট হয় তাহলে মোট আট-দশ হাজার টাকা! প্রায় তার বেতনের সমান।
আর যদি পাঁচশ টাকার নোটও হয়, তাহলে চার-পাঁচ হাজার টাকা। সেটাই বা কম কী! কিন্তু টাকাই যে থাকবে সেটাই বা দিব্যি দিয়ে কে বলতে পারে?
হয়তো দরকারী এবং ব্যক্তিগত কাগজপত্র। এই সম্ভাবনাটার কথা ভাবতেই তার মেজাজটা বিগড়ে গেলো।
মানুষের কত রকম খেয়াল থাকে! কে জানে, এর মধ্যে কেউ প্রেমপত্র রাখলেই বা আটকাচ্ছে কে?
প্রেমপত্রের কথা মনে হওয়ায় তার খিচড়ে যাওয়া মেজাজটা কিছুটা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। তারও একজন প্রেমিকা আছে। জেবুন্নেসা।
জেবুন্নেসার আবার ভীষণ সৎ থাকার বাতিক। সে তাকে বলে, “শুনো, তুমি ছোট চাকুরি করো, কম বেতন পাও এইটা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না।
আমি তো বুটিকের কাজ শিখতাসি, বিয়া করলে আমরা দুইজন মিলা ব্যবসাটা দাঁড় করামু। তাইলে আমাদের সংসার ভালোই চলবো ইনশাল্লাহ।
তবে যদি তুমি কখনও দুই নাম্বারি করো আমারে লুকায়া, আল্লাহ কিন্তু ঠিকই দেখবো।
আর আমি যদি টের পাই, তোমারে এমন ছ্যাচানি দিমু না, চৌদ্দগুষ্টির নাম ভুইলা যাইবা”।
এই হলো জেবুন্নেসার স্বভাব! ভালোবাসার কথা বলবে অবিরাম, ক্লান্তিহীন। দুজন মিলে একসাথে কঠিন বাস্তবকে মোকাবেলার সাহস দেখাবে,
সবই ঠিক আছে, কিন্তু রেগে গেলে সে মেয়েমানুষের স্বভাববিরোধী আচরণ করে বসে।
হুমকি ধামকি তো দেয়ই, সামনে পেলে চুল ধরে টানে, কনুই দিয়ে গুঁতা দেয়, এমন কী একবার থাপ্পড় দিয়ে ফেলেছিলো প্রায়!
শিহাবের রিফ্লেক্স ভালো বলে চট করে হাতটা ধরে ফেলে নিজের ইজ্জত বাঁচায়!
এখন যদি সে পকেটের সেলাই খুলে দেখে যে সত্যিই এর মধ্যে টাকা আছে, সেটা নিজের করে নেয়াটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু হবে না!
তার তো আর জানার উপায় নেই যে কার টাকা এটা।
আবার বলা যায় না, কোটের সাবেক মালিক যদি পকেটে টাকার সাথে তার বিজনেস কার্ডও রাখে তাহলে তো মহাবিপদ!
জেবুন্নেসার সাথে মিথ্যা বলতে পারবে না সে। এমনিতেই তার স্বভাব বেশি কথা বলা। তার পেটে কোন কথা থাকে না।
জেবুন্নেসা এটা নিয়ে তাকে প্রায়ই টিটকারি দেয়। ধুত্তোর ছাতামাথা! যা খুশি থাকুক পকেটে, সে খুলে দেখতে যাচ্ছে না ওটা।
তবে ওটা বড্ড মচমচ-কড়কড় শব্দ করে, শব্দটা যেন তাকে প্রলুদ্ধ করে।
ডাকে। বলে, “আয় দেখে যা আমার ভেতর কী আছে। ভুলে যা জেবুন্নেসাকে। ভুলে যা খোদার শাস্তি। আরে দুনিয়াটা কয়দিনের বল! ফূর্তি করো সোনা, ফূর্তি!”
মঙ্গলবার শিহাবদের মেসের শুভদিন। এই দিনে মুরগীর মাংস রান্না হয়।
ওদের বুয়া প্রচুর ঝাল দিয়ে এমন এক তরকারি বানায় যেটা মুখে দিতেও বিপত্তি আবার মুখ থেকে বের করাও অসম্ভব।
অদ্ভুত রোমাঞ্চকর এক স্বাদ! সবাই ঝালে আহা উহু করতে করতে দুই-তিন প্লেট ভাত খেয়ে ফেলে।
সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মেনু হলো, কাঁচকি মাছ, শাক-সব্জি, লতা-পাতা… পৃথিবীর যাবতীয় বিস্বাদ খাবার!
পেট ভরে ভাত খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় শিহাব। সে বরাবরই একটু চুপচাপ, লোনার।
তবে জেবুন্নেসার সাথে কথা বলতে গেলে কথার ফুলঝুড়ি ফোটে তার।
সপ্তাহখানেক আগে কথা বলতে বলতে নিলফামারীতে থাকাকালীন সময়ে তার বাবার অফিসের পিয়ন জনাবালি,
তার সংসার, শক্তিমত্তা আর সরলতা প্রসঙ্গে সে টানা পনের মিনিট কথা বলেছিলো। আজকেও তার কথা বলার মুড একেবারে তুঙ্গে!
-বুঝলা জেবু, আইজকা মাত্র দুইশ টাকা দিয়া একটা সেইরকম কোট কিনছি। দারুণ ওম দেয়। আর দ্যাখতেও বিদেশী জামাগুলানের মতো।
আমি একটা ছবি তুইলা তোমারে ফেসবুকে পাঠামুনি। দেখবা আমারে চিনাই যাইতাসে না। ফরেন ব্যাডাগোরে মতো লাগবো।
-আমার ফরেন ব্যাডা দরকার নাই। দেশী ব্যাডাই ভালো।
-আহা, বুঝো না ক্যান! একটা ইশটাইলের ব্যাপার আছে। এই যেমুন মনে করো, তুমি সবসময় সালোয়ার-কামিজ পইড়া থাকো।
এইডা মাঝেমধ্যে চেঞ্জ করবা। তোমারে আমি স্কার্ট আর টপস কিনা দিমু। যদিও দাম ম্যালা, তয় সবসময় টেকা পয়সার কথা ভাবলে কি আর চলে!
গেলো না হয় হাজার দুই-তিন টাকা। কিছু ট্যাকা আইছে হাতে…
শিহাব জানতো সে এভাবেই ধরা খাবে। এত সাবধানতা আর প্রস্তুতি স্বত্তেও তার পেটপাতলা স্বভাব উন্মোচিত হয়েই গেলো!
নাহ, আরো সাবধান। খুব সাবধান। শঙ্কার ব্যাপার হলো, টেনশনের সময় শিহাবের মাথা ভালোমত কাজ করে না।
কী না কী বলে ফেলে, নিজেকে নিয়ে সে বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়ে। জেবুন্নেসার কাছ থেকে সেই প্রত্যাশিত প্রত্যুত্তরই এলো,
-কৈত্থিকা টাকা পাইলা?
-না মানে, ঠিক পাইছি যে তা না, তয় পাইতে প্ প্ পারি মানে আছে আর কী কিছু পকেটে, আবার ম্ ম্ নে কর যে নাও থাকতে পারে।
এইডা আসলে একটা রহস্য…
-কী আবোল তাবোল বকতাছো? আর তুমি তোতলাইতাছো ক্যান? ঠিকমত সব খুইলা কউ আমারে।
এক গ্লাস পানি খায়া আসো। তারপর ঠাণ্ডা হইয়া কউ বৃত্তান্ত।
এই মুহূর্তে আসলেই এক গ্লাস পানি দরকার ছিলো শিহাবের। গলা শুকিয়ে আসছে। কিছুটা ধাতস্ত হয়ে সম্বিত ফিরে পেলো সে।
তারপর দুলকি চালে কথা বলতে লাগলো।
-না, ব্যাপার তেমন কিছু না। আইজকা যে কোটটা কিনছি না, ঐডার একটা পকেটে মনে হয় কিছু টাকা পয়সা বা কাগজপত্র থাকতে পারে।
যদি এক হাজার টাকার নোট হয়, তাইলে মিনিমাম দশ হাজার টাকা তো থাকবোই।
সমস্যা হইলো, পকেটটা সেলাই করা। তাই ঠিক বুঝতাছি না কী করুম।
-তুমি ফোন রাইখ্যা পকেটটা খুলবা। যদি টাকা পয়সা থাকে তাইলে অর্ধেক ফকির মিসকিনদের খাওয়াইবা। আর বাকিটুকু নিজের কাছে রাখবা।
আর খিয়াল কইরা দেখবা কোন ঠিকানা বা কার্ড আছে নাকি সাথে। তাইলে তো সহজেই যার টেকা তারে ফেরত দিতে পারবা।
দরকারী কাগজপত্রও থাকতে পারে। না জানি কার না কার কাগজপত্র, কতই না অসুবিধায় আছে বেচারা। তুমি এখুনি পকেটটা খুলো।
শিহাব জানতো জেবুন্নেসা এমন ফঁপরদালালি করবে। এই বেটি সবসময় বেশি বুঝে!
টাকা পাইলে অর্ধেক দিতে হইবো ফকির মিসকিনদের। হাহ! কইলো আর কী একটা কথা!
নাহ, এবার আর জেবুন্নেসার খেলার পুতুল হয়ে থাকবে না সে।
মেসে সপ্তাহে ছয়দিন লতাপাতা,টাকি,কাঁচকি,পুটিমাছ খেয়ে তার পেটে চড়া পড়ে যাচ্ছে,
আর ঐদিকে বাপের বাড়িতে বসে জেবুন্নেসা ইলিশ মাছ আর মুরগী খেয়ে চলেছে। সে তাকে বিশাল একটা লেকচার দেবে বলে স্থির করে।
কিন্তু তার এ বাসনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় বলতে গিয়ে। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে সে বলে,
-আইচ্ছা। রাখি অহন। ঘুম পাইতাছে।
ফোন রাখার পর তার বেশ অস্থির সময় যায়। টাকা-পয়সা, নাকি দলিল পত্র? টাকা-পয়সা, নাকি প্রেমপত্র?
টাকা-পয়সা, নাকি বাজে কাগজ? টাকা হবার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সঙ্গে যদি ঠিকানা থাকে তাহলেই তো সমস্যা!
আর যাই হোক, অন্যের হক খেয়ে ফুটানি করার মত নরাধম নয় সে। আচ্ছা প্রেমপত্র হবার সম্ভাবনা কতটুকু? নাহ, তা কী করে হয়!
প্রেমপত্র কেন মানুষ পকেটের মধ্যে সেলাই করে রাখবে? অবশ্য বলা যায় না, কতরকম গভীর গোপন ব্যাপার থাকে মানুষের!
হয়তো বা সেই মুহূর্তে ওটাই সবচেয়ে নিরাপদ স্থান ছিলো তা লুকানোর। জরুরী কাগজপত্র থাকার সম্ভাবনাও কম।
কিন্তু থাকবে না, এটাও জোর দিয়ে বলা যায় না। শিহাবের খুব ইচ্ছে করে পকেটটা খুলতে।
মোটামুটি নিশ্চিত যে, সে বেশ কিছু টাকার মালিক হতে যাচ্ছে।
কিন্তু পকেটটা খুলে যদি সে দেখে যে সেখানে কোন টাকা পয়সা নেই, বাজে কাগজ অথবা পেপার কাটিং!
তাহলে তার “অনেকগুলো টাকা পেতে যাচ্ছে”, এই সুখানুভবটা কর্পূরের মত হাওয়ায় উবে যাবে।
শিহাবের ইচ্ছে হয় না তার কল্পনার জগৎটা সংকুচিত করতে। বরং সে বিবর্ধিত করে এটাকে। পকেটের মধ্যে নগদ টাকা নয়, চেক আছে।
গোটা দশেক। প্রতিটাতে দশ হাজার টাকা। “যাহ শালা! শ্যাষম্যাষ লাখপতি হইতে যাইতেছি!”
নিজের এই বোকা বোকা স্বপ্নের কথা ভেবে সে হাসে, আবার মনের গহীন কোণে আরো বোকা অথবা আরো বুদ্ধিমান কেউ বলে ওঠে,
“থাকতেও তো পারে! অসম্ভব কি!”
পরদিন অফিসে বেশ ফুরফুরে মনে কাজ করে শিহাব। গুনগুন করে গান গায়। অযথাই কথা বলে।
দরাজ কণ্ঠে সহকর্মীদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করে। তার কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উৎকর্ষপ্রাপ্ত মনের রহস্য জানতে চায় তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ইদ্রিস।
– কী রে ভাই। আপনার মন এত ফুরফুরা যে! কারণ কী?
-কারণ তেমন কিছু না। একটা সিদ্ধান্ত নিছি। ভাবতাছি চাকরি-বাকরি কইরা বকরি আর কাঁঠালপাতার জীবনযাপন আর কত!
স্বাধীন কাম করুম। ব্যবসা ধরুম।
-কিয়ের ব্যবসা ভাই? আর ক্যাপিটাল কে দিতাছে? জেবুন্নেসা আপা নাকি?
-বুটিকের ব্যবসা করনের ইচ্ছা আছে। জেবুন্নেসা আমারে টাকা দিতে যাইবো কেন?
এই মনে কর জমায়া-জুমায়া, আর ইয়ে ইশে কইরা কিছু টাকা পাইছি… মনে কর লাখখানেক তো হইবোই।
-ইস! আপনের মত যদি আমারও জীবন নিয়া এরকম একটা দায়িত্ব থাকতো তাইলে আমিও টেকা জমাইতে পারতাম।
আমারে দিয়া কিছু হইবো না। আপনিই পারবেন। বেস্ট অফ লাক ভাই।
-আরে পারবা না কে বললো! একটু কষ্ট করা শিখতে হবে আর ভাগ্যেরও দরকার আছে।
দ্বিতীয়টার ব্যাপারে অবশ্য কোন টিপস দিতে পারুম না আমি।
দ্বিতীয় ব্যাপারে টিপস দিতে অপারগ শিহাব কষ্ট আর সাধনা সম্পর্কে বিশাল একটি উদ্দীপনাময় বক্তব্য দেয় ইদ্রিসের উদ্দেশ্যে।
দিনদিন শিহাবের কল্পনা লাগমছাড়া হতে থাকে। এক লাখ টাকার চেককে সে দুইলাখ টাকা পর্যন্ত বর্ধিত করে।
কোটের পকেটটা যেন তার খুব আপন কোন বন্ধু, এমনভাবে সে তার সাথে কথা বলতে থাকে। পকেটটাকে আদর ও স্পর্শ জানায়।
প্রেমিকা, মুরগীর মাংস অথবা চাকুরীতে পদোন্নতির মোহ, কোনটাই তাকে খুব একটা আকৃষ্ট করে না।
“কী রে ব্যাডা! বাইরে আসার জন্যে খুব ছটফটাইতেছস না? বাইর করমু, করমু। আরো কয়েকটা দিন যাউক। তুই দুই লাখ থিকা পাঁচ লাখ হ।
তখন দেখা যাইবো নে। আরে এত অধৈর্য্য হওনের কিছু নাই। মনে কর যে তুই ব্যাঙ্কের ভিতর আছিস। তোরে বসায়া রাইখা ইন্টারেস্ট পাইতাছি।
তুই দুই লাখ থিকা তিন লাখ, না পাঁচ লাখ হইবি এক সময়। খবরদার!
যদি খুইলা দেখি যে তুই আজাইরা বা দরকারী কাগজ, অথবা প্রেমপত্র তাইলে একদম…একদম…পুড়ায়া ফালামু তোরে।
আমার লগে গাদ্দারি করবি না। তোরে অনেক যতনে পাশে রাখছি। ডোন্ট লেট মি ডাউন বেইবে!”
অবশেষে, মাসখানেক পরে যখন পকেটের ভেতরকার সম্পত্তির পরিমাণ দশলাখে উন্নীত হয়,
তখন নানারকম অভাব- এবং নেতিবাচক ঘটনার প্রভাবে শিহাব পকেটটা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
অবশ্য এতদিনে তার কল্পনার ঘুড়িটা সপ্তম আসমান থেকে অনেকটাই নিচে, দৃষ্টিসীমার নাগালে চলে এসেছে।
শিহাব ঠিক করে, যাই থাকুক না কেন পকেটে দশ থেকে দশ লাখ টাকা, ব্যবসার দলিল, প্রেমপত্র, পরিচয়পত্র, সে পকেটটা খুলবে এবং মেনে নেবে।
বাসের প্রচণ্ড ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ঘামতে ঘামতে সে ঠিক করে মেসে গিয়ে গোসল করেই এই অতি জরুরী এবং মহৎ কার্যটার সমাধা করবে!
মেসে ফিরে পকেটটা কাটার জন্যে চাকু নিয়ে এসে শিহাব খেয়াল করে ডানপাশের পকেটটা নিখুঁতভাবে কাটা। পিকপকেট হয়েছে।
এমন নিখুঁত কাজ! সে টেরই পায় নি।
তার পেট ভরে হাসি আসে যখন ভাবে যে পকেটমার ব্যাটা দেখবে এত পরিশ্রম করে সে একদলা বাজে কাগজ পেয়েছে!
আর সেই সাথে চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসে লোডশেডিংয়ে। নিভে যায় সব বাতি। শিহাব স্থানুর মত বসে থাকে।
জানালার বাহিরে অনেক দূরে কারা যেন আলো দিয়ে বাসা সাজিয়ে উৎসব করছে।
আলো। সে অনেক দূরে।