অনেকটা সময় ধরে নাদিয়া বৃষ্টিতে ভিজছে।বাড়িতে ফেরার সাথে সাথে আজ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।ক’দিন ধরেই তার মনটাও যেন অপেক্ষায় ছিল, এই বৃষ্টিটার জন্য।তাই, আর কি দেরী করা যায়!
মা টের পাবার আগেই এক দৌড়ে ছাদে চলে গেল নাদিয়া।এর আগেও বহু বার লুকিয়ে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজেছে সে।তবে আজকের রাতটার অনুভূতি একটু আলাদা। তবে, সে কারণ সে বুঝতে পারছে না এখনো।বহু বছরের ক্লান্ত মনটা যেন প্রশান্ত হলো আজ।
-“আরে নাদিয়া! জ্বর বাঁধিয়ে ফেলবে তো তুমি! এখন বাড়ি যাও, ভাই।”
নাদিয়ে পেছন ফিরে তাকালো।
-” হুম বুঝেছি, আমাকে তাড়িয়ে আপনি ভাবির সাথে বৃষ্টিটা উপভোগ করতে চাইছেন।”
-“না ভাই, আমাদের কি আর সেই সময় আছে। তোমার ভাবির কটা কাপড় ছিল ছাদে, ওগুলোই নিতে এসেছিলাম। ”
রাসেল নাদিয়াদের ওপর তলায় থাকে।রাসেলের স্ত্রী মিথিলার সাথে নাদিয়ার খুব ভাল বন্ধুত্ব।তবে রাসেলের সাথে তার তেমন একটা দেখা হয় না।
কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে গেল।নাদিয়া বাড়িতে ঢুকে দেখলো,তার বাবা গভীর মনোযোগের সাথে খবর দেখছেন।এই খবরটা শেষ হলে, আবার চ্যানেল পাল্টে অন্য খবর দেখবেন মতিন সাহেব।এভাবেই তার আগামী কয়েকঘন্টা চলতে থাকবে।নাদিয়া হাতমুখ ধুয়েই খাবার টেবিলে বসে পড়লো।আজ দুপুরে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি।তাই খুব খিদে পেয়েছে তার।খাওয়া শেষে পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখে নিলো মা একটা বই পড়ছে।
এবার নাদিয়া তার নিজের রুমে এলো।টেবিলে রাখা গল্পের বইগুলোর দিকে চোখ পড়লো তার।ধূলো জমেছে বইগুলোতে।একটা সময় এই গল্পের বই পড়ার নেশায় মেতে থাকতো সে।অথচ শেষ কোন বইটা পড়েছিল আজ তাও মনে পড়ছে না! একসময় বন্ধুদের আড্ডায় বসার ঘরটা বিকেলে জমজমাট ছিলো।আর এখন! কোন বিশেষ দিন ছাড়া কারো সাথে ফোনে কথাও হয় না তার।এভাবে কোথায় যেন জীবনের সব সুরগুলো হারিয়ে যাচ্ছে ! হারিয়ে গেছে নাকি সে নিজেই হারিয়ে যেতে দিয়েছে!
মাঝে মাঝে রাতে চিলেকোঠার ঘরটায় নাদিয়া রাতের বেলায় ঘুমোতে যেত।বিশেষ করে বৃষ্টির রাতগুলোতে।টিনের চালে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি গুনগুন শুনার জন্যে কান পেতে থাকতো তার মনটা।তা যদিও অনেক বছর আগের কথা।হঠাৎ, আজ এমনটা একাকি সময় কাটাতে ইচ্ছে করেছে তার।দরজার কাছে যেতেই, নাদিয়ার বাবা এগিয়ে এলো
-‘ কি রে, কোথায় যাচ্ছিস এই রাতে হুট করে? ‘
– ‘ আজ একটু চিলেকোঠার ঘরটায় যাই বাবা,খুব ইচ্ছে করছে? ‘
-‘ যাবি,আচ্ছা।কিন্ত ওটা তো পরিষ্কার করে নিতে হবে।জরির মাকে সঙ্গে নিয়ে যা।’
-‘ কিন্ত মা….? ‘
-‘ সে আপাতত ব্যস্ত আছে।তাড়াতাড়ি যা তোরা, বাকিটা আমি দেখছি। ‘
রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নাদিয়া একাকি পায়চারি করছিলো।নাদিয়ার বাবা কিছুক্ষণ পর মেয়েকে দেখতে এলেন।
-‘ একা থাকতে পারবি তো? ‘
-‘ বাবা এমনটা আজ প্রথম দেখছো! ‘
– ‘না, অনেকদিন পর তো। তাই ভাবলাম…’
-‘মা কি করছে? ‘
– ‘ ঘুমিয়ে পড়ছে। আর শোন, তুই বেশি রাত জাগিস না। ‘
-‘আচ্ছা। ‘
খুব সকালে নাদিয়ার ঘুম ভাঙ্গলো।মেঘে ঢাকা পুরো আকাশটা।চারপাশটা যেন শান্ত নিরুত্তাপ।এমন সুন্দর একটা দিনে কি ঘরে বসে থাকা যায়! নাদিয়া ঠিক করলো, আজ সারাটাদিন ঘুরে বেড়াবে এদিক-সেদিক।অবশ্য কাউকে চাইলে সাথে নেওয়া যেতে পারে।থাক না, সকাল সকাল কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।তাছাড়া, একা কোথাও গেলে প্রকৃতির সাথে নীবিড়ভাবে কিছু সময় উপভোগ করা যায়।কেউ সাথে থাকলে সে সুযোগ কোথায়!
বাড়িতে ঘুকেই নাদিয়া দেখে পলি ফুপু একরাশ বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
-‘ কোথায় ছিলি? ‘
-‘ কখন এসেছো ফুপু? ‘
-‘এটা কি আমার প্রশ্নের উত্তর, নাদিয়া!দাদা মেয়েকে চিলেকোঠায় ঘুমাতে দিচ্ছো, বাহ্! এমন মেয়েকে কে বিয়ে করবে শুনি? ‘
-‘ আজব তো! চিলেকোঠায় ঘুমাতে যাবার সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক! ‘
-‘ তোরা কি একটু থামবি এবার। ‘
নাদিয়ার মা পরিস্হিতি সামলাতে এগিয়ে এলো।
-‘ স্যরি মা, এতদিন আমি সম্পর্কের মান রাখতে গিয়ে চুপ থেকেছি।আর পারবো না।ফুপু আমার বিয়ে হলে তো তোমারই ভাবনা দ্বিগুণ হবে, তখন বলবে কবে বাচ্চা নেব।তারপর আবার কি নিয়ে প্রশ্ন করবে, তৈরি থেকো কিন্ত।’
-‘দাদা আমি আসি।’
মতিন সাহেব নাদিয়ার মাথায় হাত রাখলেন।
-‘ মারে, মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে গেল না ?! ‘
-‘কিসের? ‘
-‘ তোর রাগের, আর কি! এখন যা হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে আয়, নাস্তা করবি।’
নাদিয়া নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লো।যদিও মনটা ঠিক নেই এখন।তবে অনেকদিন পর রিক্সায় ঘুরতে ভাল লাগছিলো।দুপুরে একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের পর বেরিয়ে, বাড়ি ফেবার কথা ভাবতে না ভাবতেই রাস্তার একটু সামনে নজর পড়লো তার।এগুতেই দেখে একজন লোক অচেতন ভাবে রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে, কোন গাড়ি বা বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে এমনটা হয়েছে।নাদিয়ার মতো আশেপাশে আরও লোকজন আছে ফুটপাতে।কিন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, কেউ একটিবারের জন্যে এই লোকটির দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না! নাদিয়া ভাবলো, অযথা কোন নতুন ঝামেলায় জড়াবার প্রয়োজন নেই।তাই বাড়ি ফেরার জন্যে সে রিক্সা নিয়ে নিলো।কিছুদূর যেতে না যেতেই, সে রিক্সাওয়ালাকে আবার ফেরত যেতে বললো।কারণ, সে নিজেও জানে এভাবে লোকটাকে ফেলে গেলে রাতে তার একফোটাও ঘুম হবে না।নাদিয়া লোকটার ওয়ালেট বা সেলফোন কিছুই খুঁজে পেল না।লোকটাকে হাসপাতালে ভর্তি করে সে বাড়ি ফিরলো।ডাক্তার জানালেন, রোগীর তেমন কিছু হয়নি।কাল বা পরশু রোগী বাড়ি যেতে পারবেন।
পরদিন নাদিয়া আবার হাসপাতালে গেল।নাদিয়ার এই প্রথম লোকটির সাথে কথা হলো।
-‘এখন, কেমন আছেন আপনি? ‘
-‘এইতো, আগের চেয়ে ভালো। ‘
-‘আপনার বাড়ির কারো নাম্বার বলুন।আপনার সেলফোন খুঁজে পাই নি। তাই আমি কাউকে ইনফর্মও করতে পারি নি। ‘
নাভিদ নাদিয়া প্রশ্নের তেমন কোন উত্তর দিলো না।
-‘ সমস্যা নেই, আমি পারবো ম্যানেজ করতে।আপনার নাম্বারটা দিন, আমি বাসায় পৌঁছে আপনাকে হাসপাতালের বিলটা পাঠিয়ে দেব তাহলে। ‘
-‘ না তার দরকার নেই। আমি আসি, ভাল থাকবেন।’
নাভিদ আর কিছু বলার আগেই নাদিয়া চলে গেল।
নাদিয়া তার বাড়ির সামনে পৌছাতেই, নাভিদ পেছন থেকে ডাকলো,
-‘ এই যে ম্যাডাম, আমার রিক্সাটারও ভাড়া দিন।আমার ওয়ালেট তো ছিনতাইকারীর কাছে। ‘
-‘ কি ব্যাপার! আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন? ‘
-‘আমি না, রিক্সাওয়ালা মূলত আপনাকে ফলো করছিলো। ‘
নাদিয়ার চোখ রাঙ্গানো দেখে নাভিদের হাসি পেল।যদিও সে নিজেকে কিছুটা সংযত করে নিলো,
-‘ আচ্ছা স্যরি,ক্ষুদা পেয়েছে কিছু খাওয়া হয় নি।আর,বাড়ি ফিরবার মতো টাকা আমার কাছে নেই।’
নাদিয়া কিছু টাকা দিলো নাভিদকে।
-‘ আমি বাইরের কোন খাবার খেতে পারি না। ‘
এবার রীতিমতো বিরক্ত লাগছে নাদিয়ার।ছেলেটা তার পিছু ছাড়ছেনা কিছুতেই!
উপায় না দেখে,নাভিদকে বসার ঘরে নিয়ে এলো নাদিয়া।এরপর মাকে ডাক দিয়ে বললো,
-‘ওনাকে কিছু খাইয়ে বিদায় করো মা, প্লিজ।আর পারছি না।’
নাভিদ নিজের পরিচয় দিতে গেল নাদিয়ার মাকে ; তবে নাদিয়া তাকে থামিয়ে দিলো,
-‘ আর বলতে হবে না।একটু চুপ থাকেন দয়া করে।আপনার কথা কাল রাতে আমি মাকে বলেছি। ‘
এরপর সে নিজের রুমে চলে গেল।
– ‘বাবা,কিছু মনে করো না।ওর কথার ধরন এমনই কিন্ত, মনটা খুব নরম।’
-‘ সেটা আমি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছি।আমি আসলে কিছু কথা বলতে আপনার কাছে এসেছি।’
-‘ বলো, কি কথা? ‘
নাদিয়ার সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী ব্যক্তিত্ব কি করে নাভিদের হৃদয়হরণ করেছে ; সেকথা সে নাদিয়া মাকে জানায় এবং সে সরাসরি নাদিয়ার মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব জানায়।আর,নিজের ব্যাপারে সব কিছুও তাকে জানায়।এরপর কথায় কথায় নাভিদ জানতে পারে, দু-বছর আগে নাদিয়ার অনেক ধুমধাম করে ইনগেজমেন্ট হয়েছিল।তবে, বরপক্ষের সাথে পরিবর্তীতে বোঝাপড়ায় মিল না হবার ফলে তা ভেঙ্গে যায়।এরপর থেকে নাদিয়া কেমন যেন নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছে।আর,এই ঘটনার পর নাদিয়াকে তারা বিয়ের ব্যাপারে আর কিছু বলেন নি।তাছাড়া নাদিয়া নিজেও এখন বিয়ে নিয়ে ভাবছে না।নাভিদ বুঝিয়ে বলে, সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। কাল সে নাদিয়াকে সব বোঝাবে এই আশ্বাস দিয়ে নাদিয়ার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেয় নাভিদ।
এদিকে নাদিয়া নাভিদের প্রস্তাবে বেশ ক্ষেপে যায়।
-‘আপনি আমাকে একদিন দেখেই বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। আপনি কি পাগোল! কতটুকু জানেন আমার সম্পর্কে? আর, আমি তো আপনাকে ভাল করে চিনিও না। ‘
-‘ দেখুন নাদিয়া, আপনি একটু শান্ত হন।’
নাভিদ তারপর বুঝিয়ে বলে যে, সে এক্ষুনি বিয়ে করতে চাচ্ছে না।নাদিয়াকে আরো ভালো করে সে চিনতে চায়, বুঝতে চায়।এরপরে নাদিয়ার সম্মতি থাকলেই তারা বিয়ের দিকে এগোবে।সবকিছু শোনার পর নাদিয়া কিছুটা শান্ত হয়।তবে মনে মনে জেদ চেপে রইলো।তাছাড়া , সে বুঝে গেছে একদিনেই নাভিদের সাথে কোন জোর করা যাবে না।ধীরে ধীরে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
এরপর নাদিয়া আর নাভিদের প্রায়ই দেখা হতে লাগলো।নাভিদের সাথে নাদিয়াও একসাথে কাটানো সময়গুলো বেশ উপভোগ করছিলো।তবে নাভিদের জন্য তার মনের গহীনে কোন স্পন্দন সে খুঁজে পাচ্ছিলো না।কেবল অমিলগুলোই নজরে পড়ছিলো।এদিকে নাভিদের ভাবনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।তার ভাষায়, দুজনের মাঝে একটু অমিলের ছোঁয়া না হলে জীবনের ছন্দটাই যেন হারিয়ে যায়।সত্যি কি তাই!
এরপর কোন এক বিকেলে নাদিয়া নাভিদের সাথে দেখা করতে চাইলো।
-‘ দেখো নাভিদ, এভাবে তো আর হয় না। ‘
-‘ না হলে তো আরো ভাল।চলো বিয়ে করে ফেলি। ‘
-‘ আমি কি ঠাট্টা করছি! তোমার সাথে আমার আর হচ্ছে না।আর জোর করে কিছু পাওয়া যায় না নাভিদ। ‘
-‘তোমার মনে হয়, যে আমি জোর করছি! বুঝলাম না,কিভাবে নাদিয়া! ঠিক আছে, তোমার সাথে সব যোগাযোগের পথ আমি নিজেই বন্ধ করবো আজ। আমার অনুভূতিগুলো যদি সত্যি হয়ে থাকে তোমার জন্য, তবে তুমি নিজেই আমাকে খুঁজে নেবে।’
নাভিদের এই ক্রুদ্ধ আচরণ নাদিয়ার মনে স্বস্তি জোগালো।কারণ সে নিশ্চিত যে,নাভিদ আর তাকে জ্বালাতন করবে না।
বেশ কিছুদিন পরের কথা।মতিন সাহেব নিজের কাজ থেকে অবসর নিয়ে, নাদিয়াকে সব বুঝিয়ে দিয়েছেন।অফিসের সমস্ত দায়ভার এখন নাদিয়ার।দু-বছর আগে মাকে হারাবার পর নাদিয়া ভীষণ একা হয়ে গিয়েছিলো।যদিও এখন নিজেকে বেশ ভালভাবেই সামলে নিয়েছে।তবে, সংসার জীবনের কথা ভাবতে সে আগ্রহী নয়।কেন সে উত্তর তার জানা নেই!
নাভিদের সাথে আর কখনো তার দেখা হয়নি।নাদিয়ার বান্ধবী রিনির বেশ ভাল লাগতো নাভিদকে।নাভিদ চলে যাবার পর রিনি নাদিয়াকে বহুবার বলেছে, তার সাথে যোগাযোগের কথা।তবে নাদিয়া এই ব্যাপারে আর এগোতে চাচ্ছিলো না।
এদিকে মতিন সাহেব মেয়েকে বিয়ের কথা বুঝিয়ে বলেন।এরপর মেয়ের সম্মতি থাকায় তিনি, সজীবের কথাটা নাদিয়াকে বলেন।সজীব মতিন সাহেবের বন্ধুর ছেলে, পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।ঠিক হলো, কাল সজীব আর নাদিয়া একে অপরের সাথে দেখা করবে।পরদিন নাদিয়া সময়মতো সজীবের সাথে দেখা করার জন্যে বেরিয়ে পড়লো।কিন্ত সেখানে সজীবের পরিবর্তে নাভিদকে দেখে সে চমকে গেল।
-‘কি ব্যাপার, তুমি কেন! ‘
-‘জি, আমারই তো থাকবার কথা। ‘
-‘ নাভিদ, তুমি কি আমার পিছু ছাড়বে না! ‘
-‘ কি বলছেন, আমার নাম সজীব! ‘
নাদিয়া কিছু বুঝতে পারছে না।কি বলছে নাভিদ এইসব! আর সজীব কোথায় তাহলে? নাদিয়া সজীবকে নানা ধরনের প্রশ্ন করার পর অবশেষে বুঝতে পারলো,সে নাভিদ নয়।বাড়ি ফিরে প্রথমেই নাদিয়া তার বাবাকে জানালো যে,সজীব পুরোপুরি দেখতে নাভিদের মতন।মতিন সাহেব মেয়ের এমন উদ্ভট কথা শোনার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না।কারণ, তিনি জানেন সজীব দেখতে নাভিদের মতো নয়।
মতিন সাহেব মেয়েকে নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলেন।নাদিয়ার এই অদ্ভুত কান্ডের কথা শুনে রিনি আর চুপ থাকতে পারলো না,
-‘নাভিদের সাথে যোগাযোগ কর, নাদিয়া। এখনো কি বুঝতে পারছিস যে,তোর নাভিদকে ছাড়া চলবে না। গাধী কোথাকার!’
নাদিয়া বুঝতে পারলো – সে এতদিন মনের মাঝে শুধু নাভিদের সাথেই ছিল।নাভিদকে খুঁজতে নাদিয়ার সাথে রিনিও অনেক চেষ্টা করেছিলো। তবে, নাভিদকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না! এভাবেই কেটে গেল অনেকগুলো বছর।
অনেকদিন পর আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করেছে নাদিয়া।তার এক কলিগের মেয়ের বিয়ে আজ।যদিও প্রথমে যাবার ইচ্ছে ছিল না তার।কিন্ত পুনম আপা এতবার ফোন করেছে সকাল থেকে, তাই আজ না গেলেই নয়।
নাদিয়া ওখানে পৌঁছে পরিচিত তেমন কাউকে দেখতে পেল না।মনে হয় অন্যদের তুলনায় সে একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।তাই একাকী কিছুসময় বসে রইলো।মাঝে পুনম আপা কিছুক্ষণ তাকে সঙ্গ দিলো।হঠাৎ নাভিদ নাদিয়ার পাশে এসে বসলো।নাদিয়ার কলিগই হলো নাভিদের চাচাতো বোন।
-‘ আমাকে আর খুঁজলে না তুমি? ‘
নাদিয়া তার হৃদয়ের জমে থাকা মেঘগুলোকে আর সংবরণ করতে পারছিলো না।
-‘প্লিজ নাদিয়া কাঁদো না।আরে!! এই দেখো তোমার কাজল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! ‘
নাদিয়া একটু হাসলো এবার।
-‘দেখছো না, তোমাকে খুঁজতে খুঁজতেই আজ কালো চুলোগুলো সাদা হয়েছে। ‘
-‘এই দেখো না, আমারো একই অবস্হা। ‘
দুজনেই একসাথেই হেসে উঠলো।
-‘তোমাকে এবার আর কোথাও হারাতে দেব না আমি।’
নাদিয়া শক্ত করে নাভিদের হাতটা ধরলো।
হয়ত নাভিদ বা নাদিয়ার বয়সটা থেমে নেই সময়ের সাথে।তবু জীবনের এই শেষ বিকেলে আজও জমে আছে অনেক কথা।আর সেই জমে থাকা কিছু অক্ষেরর পূর্ণ মিলনের নাম হলো – ভালবাসা।