অফিসের মিটিং চলছিলো এমন সময় বাবার ফোনকল। রিসিভ করা মাত্রই বললেন- ‘বিকেলের ট্রেনে বাড়িতে চলে আসো’। জিজ্ঞেস করলাম- ‘কেনো, কী হয়েছে?’ বাবা একটু রাগত স্বরে বললেন- ‘আমি আসতে বলেছি, ব্যস। রাতে একসাথে খাবো।’ আমি আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলাম। মিটিং চলছিলো তখনও, কিন্তু মিটিং এ কোনো মনোযোগ নেই, ভাবতেছিলাম- কী হয়েছে, কেনো জরুরি তলব ইত্যাদি। মিটিং শেষ করে বাড়ির একে ওকে ফোন করা শুরু করলাম কিন্তু কোনো উত্তর মিললো না। আম্মা বললেন, ‘আমি তো জানিই না, তুমি তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করো।’ কিন্তু ছোট বেলায় থেকেই বাবাকে যে ভয়টা পাই, সেটার কারনে আর বাবাকে ফোন করার সাহস হলো না।
অফিস থেকে ছুটি নিয়ে খালি হাত পায়ে দুপুরের একটু পরেই রেলস্টেশনের দিকে উবার নিয়ে রওনা হইলাম। বাড়িতে পৌঁঁছাতে পৌঁছাতে রাত আটটা বেজে গেলো। বাবা রান্নাঘরে সামনেই চেয়ারে বসে আছেন, আম্মা রান্নাবান্না করে খাবার গোছাচ্ছেন। দুজনেই খুব স্বাভাবিক। ঘটনা কিছুই টের পেলাম না। বাবাকে সালাম দিয়ে, আম্মাকে সালাম দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বসলাম। এর মধ্যে মা এসে বললেন- ‘তোমার ওয়ারড্রোপে লুঙ্গি আছে, গেঞ্জি আছে, পরে আসো, তোমার আব্বা টেবিলে বসে আছে’।
ডাইনিং টেবিলে বসা মাত্রই বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কালো হয়ে গেছো কেনো’? আমি গালে কপালে হাত দিয়ে বললাম- ‘কই না তো, ঠিকই তো আছি’। আব্বা বললেন, ‘চোখের নিচে কালিও পড়ছে দেখি, মুখটুক ভাল করে ধোও না, নাকি’! আমি বললাম, ‘না সবই তো ঠিক আছে। অনেকদিন পরে দেখলেন তো তাই মনে হয় এমন’। আব্বা বললেন, ‘আচ্ছা। খেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে যেও। রাত বেশি করবে না। সকালে বের হতে হবে’। আমি কাচুমাচু করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে আর কোথায় যাবো’? এর মধ্যে আম্মা প্লেটে ভাত দিয়ে দিয়েছেন। আব্বা ভাত মুখে নিতে নিতে বললেন, ‘সেটা সকালেই বলবো, এখন খাও’। আমি আর প্রশ্ন না করে খাওয়া শুরু করলাম। আব্বা বললেন, ‘খালি হাতে আসলে যে, কাপড়টাপড় আর আনোনি’? আমি বললাম, ‘অফিস থেকেই চলে আসছি তো, বাসায় গেলে আর ট্রেন ধরতে পারতাম না’। বাবা আর কিছু বললেন না।
খাওয়া শেষে নিজের রুমে আসতেই মা আসলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আম্মা বলেন তো, কী হয়েছে, আব্বা এতো জরুরিভাবে ডাকলো কেনো?’ আম্মা বললেন, ‘আমি তো কিছুই জানি না, জিজ্ঞেসা করেছিলাম তোমার আব্বাকে, সে কিছু বলে নাই’। এরপর এটা ওটা নিয়ে কথা হলো আম্মার সাথে। একসময় আম্মা বললেন, ‘এখন ঘুমাও, সকালে নাকি উঠতে হবে’।
বাবা কখনই আমাকে ঘুম থেকে ডাকেন না কিন্তু আজ ভোর বেলাতেই রুমে এসে নক দিলেন, উঠেছি কীনা জিজ্ঞেস করলেন। আড়মোরা ভেঙ্গে বললাম, ‘জ্বি আব্বা’। আব্বা বললেন, ‘উঠে পড়ো, বাইরে যেতে হবে’। উঠে ফ্রেশ হয়ে আব্বার সাথে বের হলাম। সদর মার্কেটের এক দোকানদেরকে ডেকে তুললেন ফোন করে। নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি কিনে দিলেন। কেনো দিলেন তাও বুঝলাম না।
তবে সকাল ১০টার দিকে বুঝতে বাকি রইলো না। চাচাতো ভাই বললো- ‘বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়া লাগবে’। আমি বললাম, ‘কার বিয়ের জন্য মেয়ে’? ভাই বললো- ‘কেনো- তোমার’। আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম, বললাম- ‘মানে কী? আমি তো বলেইছি -বিয়ে করবো না’। ভাই বললো, ‘চাচাকে বলো তাইলে’। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বাবার রুদ্ররুপ কল্পনা করলাম। আমি ভাইকে বললাম, ‘তুমি আব্বাকে বলো, এসব কিছুর মধ্যে আমি নেই’। ভাই বললো- ‘তোমার কি মনে হয়- সে সাহস আমার বা বংশের কারো আছে যে তার সিদ্ধান্তের বাইরে একটা কথা বলার’। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এরপর বাড়িতে আসলাম। আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এসব কী হচ্ছে?’ আম্মা বললেন, ‘আমিই কেবল জানলাম, কিন্তু তোমার আব্বাকে কে মানা করবে? উনি কী কারো কথা রাখেন? উনি যা করেন সব নিজের সিদ্ধান্তেই’। আম্মার এ কথা শুনে নিজের রুমে গিয়ে বসলাম। হালকা শীত তবুও চরম গরম লাগছিলো, মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে। একবার চিন্তা করলাম, কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে যাই। কিন্তু পরে কী যুদ্ধটা লাগবে সেটা ভেবেই আর সাহস হলো না। এর মধ্যে আব্বার কন্ঠ শুনলাম। ‘ অয়ন কী ঘরে?’ আমি বললাম- ‘জ্বী আব্বা।’ ‘ দ্রুত রেডি হয়ে নাও, গাড়ি চলে আসছে’। আব্বা বলেই আম্মাকে ডাকতে ডাকতে উনার ঘরের দিকে গেলেন।
সকালে কেনা পাঞ্জাবি পরে বাড়ির বাইরে এসে দেখি রেন্ট এ কারে দেয়া আমাদের গাড়িটা গেইটের সামনে। ড্রাইভার সুমন সালাম দিয়ে বললেন, ‘অয়ন ভাই ভালো আছেন? আজকে নাকি আপনার সুখবর?’ মনে হলো ওর মাথা ইট মেরে দেই। কিন্তু চুপ করে বললাম, ‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’ সুমন দাঁত বের করে জানালো, ‘সব তো চাচা জানে। গতকাল জিজ্ঞেস করছিলাম, উনি বললেন- যদি আমেরিকা যাই, তোর কোনো সমস্যা?’ আমি আর কথা বাড়াই নাই। আমি বুঝলাম আব্বা অতি গোপণীতা রক্ষা করে চলেছেন। এর মধ্যে বড় চাচা, মামা, আর চাচাতো ভাই তিনজন আসলেন। আব্বাও চলে আসলেন। তিনি আজ টাই পড়েছেন, এ জন্মেও আমি তাঁকে টাই পরতে দেখিনি। একটু অবাক হলাম। উনি বললেন, ‘অয়ন তুমি মাঝে বসো।’ আমি উঠে বসলাম। আব্বা সামনে বসলেন, চাচা তার পরে, আমি আর চাচাতো ভাইরা একসাথে। গাড়ি চলা শুরু করলো।
গাড়িতে উঠলেই আমার ঘুম পায়, এর মধ্যে আবার চিন্তায় রাতে ঘুম হয়নি। গাড়ি থামতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার। আব্বা বললেন, ‘ঘুমিয়ে তো চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছো। সুমন, পানি আছে না গাড়িতে? অয়নকে দে তো, মুখটা একটু ধুয়ে নিক।’ মুখটা ধুয়েই দাঁড়িয়ে রইলাম। আব্বা বললেন, ‘একটু হাটতে হবে’। বলেই আব্বা হাটা শুরু করলেন, চাচা উনার সাথে। বাকি সবাই আমার সাথেই। প্রায় ২০০ গজ হেটে একটা তিনতলা বাসার সামনে দাঁড়ালাম, এর মধ্যে বাসার গেইটের সামনে চার-পাঁচজন অপেক্ষা করছিলেন। আমাদের দেখা মাত্রই উনারা এগিয়ে আসলেন। বাসার ভেতরে ঢুকতেই আব্বা চাচাতো ভাইকে বললেন, ‘গাড়িটা পার্ক করে সুমনকে ভেতরে আসতে বল। ও তো একটা ছাগল, না ডাকলে সে গাড়িতেই বসে থাকবে, এখনই ডাক দে’। আব্বার কথা শুনে চাচাতো ভাই অনেকটা দৌড়ে গেলেন।
যে রুমটাতে আমরা বসলাম, সেখানে আগে থেকেই কয়েকজন মুরুব্বি শ্রেণির লোক বসেই ছিলেন। সালাম কালাম দিয়ে বসলাম। কিন্তু আমাকে যে চেয়ারটায় বসতে দেয়া হলো, সেটা অলমোস্ট মাঝ বরাবর। নিজেকে কুরবানির গরুর মতো হচ্ছে। চাচাতো ভাইকে বললাম, ‘মেয়ে দেখতে আসছি নাকি আমাকে দেখাতে আব্বা নিয়ে আসছে? ভাই কিছু না বলে একটূ সরে গেলো। বুঝলাম, বিপদে কেউ পাশে থাকে না। তবে আব্বা আর বাকি সবার কথাবার্তায় এটা নিশ্চিত হলাম, এরা একে অপরের সাথে আগে থেকেই পরিচিত। এর মধ্যে এক ভদ্র মহিলা আসলেন ঘরে। সবাইকে সালাম দিয়ে বসলেন। আব্বা-চাচার সাথে কুশলাদি শেষ করেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘অয়ন না, এটা?’ আমি তাকিয়ে রইলাম, নিজের গায়ে চিমটি কাটলাম, মনে মনে বললাম, না অয়ন, অয়নের লাশ। আমি বলার আগেই আব্বা বললেন, ‘হ্যাঁ, ও গতকালই বাড়িতে আসছে। সে তো মহাব্যস্ত, ঈদ ছাড়া বাড়িতেই আসে না’। ভদ্র মহিলা আমার দিকে এগিয়ে আসলেন, আমি চেয়ার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, খুব বেশি জায়গা নেই। পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমি দাঁড়াবো এই মুহুর্তে উনি আমার কাঁধে হাত রাখলেন। ‘তোমাকে সেই ছোট্টবেলা দেখেছি, তোমাকে কত কোলেও নিয়েছি। সেই তুমি এখন কত বড় হয়েছো-মাশা-আল্লাহ’। উনি বলেই যাচ্ছেন কিন্তু আমি উনার কথা ধরে ছোটবেলায় চলে যাচ্ছি কল্পনায়। কত ছোট বেলায় দেখেছেন উনি? কোলে যেহেতু নিয়েছেন, তার মানে ন্যাংটুকাল! ছিঃ ছিঃ লজ্জা পাচ্ছি মনে মনে। আব্বা আমার ইজ্জত ফালুদা না করলেও পারতেন- মনে মনে বলতে লাগলাম।
এরমধ্যে শরবত হ্যানত্যান আসা শুরু করলো। চাচাতো ভাই দুইটা ইচ্ছে মতো খেয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমার গলা দিয়ে কিছুই নামছে না। ভাইকে উদ্দেশ্যে করে বললাম, ‘খা, জন্মের খাওয়া খা, একদিন আমিও…। ‘ ভাই মিনকা শয়তানের মতো হাসি দিয়ে বললো, ‘তোমার আর চান্স নাই। সো ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করো’। আমি মন খারাপ করে শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে একটু একটু চুমুক দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। এর মধ্যে বাকি খাবার দাবারও এসে গেলো। খাওয়া শুরু হলো। কিন্তু আমি একটু রাইস নিয়েই আর তুলতে পারছিলাম না। খাওয়াও শেষ হলো। সব মিলিয়ে ২৫-৩০ পদের রেসিপি এসেছিলো। আর কেউ খাক বা না খাক, আমার ভাই দুইটা দুজনেই জন্মের খাওয়া খেলো। ওদের কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না আমার জন্য! বেঈমানগুলো।
এর মধ্যে একজন উঠে বললেন, ‘তো ভাই মেয়েকে নিয়ে আসি নাকি?’ উনি মনে হয় মেয়ের বাবা। এতোক্ষণের কথাবার্তায় সেটায় মনে হচ্ছে। আব্বা বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ নিয়ে আসেন। তারাতারি আবার ফিরতে হবে’। সেইজন মুখে হাসির ফোয়ারা ফুটিয়ে ভেতরে গেলেন। আর আমি? সত্যিকার অর্থে ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি পড়তে শুরু করলাম। এ এলাকায় বিদ্যুত টিদ্যুত যায় না? দেশ এতো বিদ্যুতে ভালো হলো কবে? ঝড় আসলেও মন্দ হতো না, একদম টর্ণেডো টাইপের। কিন্তু অভাগা যেদিকে যায় সেদিকে সাগরও নাকি শুকিয়ে যায়। বিদ্যুতও যায় না, ঝড়ও আসে না। বুকে হাত দিয়ে বুঝলাম, কোক স্টুডিও’র ফার্নেন্দোর ড্রাম বেজে যাচ্ছে। অচেনা অজানা একটা মেয়ের সামনে ক্যাবলা হয়ে বসে থাকা! উফফ! এর চেয়ে তো ভার্সিটি লাইফের পরীক্ষাই ভালো ছিলো। তাকে আমরা দেখতে আসছি নাকি আমাকে তাদের দেখাতে এসেছি, কে লজ্জা পাবে আমি না সে? ভেবেই যাচ্ছি। শেষমেষ ভাবলাম, আমি যেরকম ক্যাবলা হয়ে আছি, মেয়েও তো তাই। মুচকি হাসি পেলো। এই ক্যাবলা সিচুয়েশনে আমি একলা নই। হা হা হা হা হা।
অতঃপর দড়জার পর্দা নড়াচড়া দেখে নিশ্চিত হলাম,এখনই সে প্রবেশ করবে? এই মাইক্রো সময়েও চিন্তা করে যাচ্ছি, সে কি শাড়ি পরে আসবে নাকি সালোয়ার কামিজ, নাকি বিয়েতে যেরকম স্কার্ট না কি যেনো মেয়েরা পরে সেসব? সে কি চশমা পরে আমার মতো? মাথায় কী ঘোমটা থাকবে নাকি থাকবে না? ঘোমটা থাকলে কতখানি থাকবে? সে কি হিল পরবে নাকি ফ্ল্যাট কোন জুতা? সে কি কড়া মেকাপ দিয়ে আসবে নাকি নরমাল? তার হাতে কি পান কিংবা মিষ্টি ওয়ালা ট্রে থাকবে? সে সালাম দিলে আমিও কি উত্তর নেবো? এসব ভাবতে ভাবতেই আমি দড়জার ফ্লোর বরাবর আড়চোখে তাখিয়ে আছি। চোখের দিকে তাকানো যাবে না, বুকের হার্টবিট এর অবস্থা এমনিতেই খারাপ, চোখে চোখে পড়লে নিশ্চিত বিট মিস করবে। কেলেংকারি হয়ে যাবে! হাজার হলেও পুরুষ মানুষ! প্রথমেই দুই কিশোরি কন্যা আসলো, বোঝাই গেলো এরা সেই কন্যা নয়। আমি ফ্লোর বরাবর তাকিয়েই আছি।
হালকা হিলযুক্ত জুতো, পায়ের নখে মেহেদি দেয়া একটা পা দেখতে পেলাম। বোঝাই যাচ্ছে্ মেহেদি আজকেই দেয়া। বুঝতে আর বাকি রইলো না সে শাড়ি পরেছে। আমি শুধু সালাম শুনলাম, মেয়ে কন্ঠে কেউ দিলো। আমি যে বরাবর বসে আছি, ঠিক বিপরীত দিকেই সে এসে বসলো। চশমা না পরে যদি একটা সানগ্লাস পরে আসতাম তবে ভালো হতো। ইচ্ছেমতো এদিক ওদিক তাকানো যেতো, কেউ দেখতে পেতো না। সানগ্লাসকে খুব মিস করতে শুরু করলাম। একবার আব্বার দিকে একটু তাকালাম, দেখলাম আব্বা আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আর আমি মেয়ের পায়ের দিকে তাকিয়ে। দাদী বলেছিলেন, যে মেয়ের পায়ের নখ সুন্দর, সে নাকি সুন্দরি হয়! পায়ের নখ সুন্দর আছে মনে হচ্ছে। কিন্তু মেয়ে কোন দিকে তাকিয়ে আছে? একটু যে মুখের দিকে তাকাবো সে সাহস আর হচ্ছে না। মনে মনে ‘ইয়া আলী’ বলে এক ঝলক দেখার চেষ্টা করলাম, ঘোমটা আছে। এই আধুনিক সময়ে তার ঘোমটা দেয়ার কি আছে বুঝলাম না! নাকি সেও আমার মতো লজ্জা পাচ্ছে। পাইলে পাক, বেশি করে পাক। সে লজ্জা পাচ্ছে ভেবে মনের ভেতর পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। ভাই পাশ থেকে ফিশফিশ করে বলল-একটু দেখো। আমি মনে মনে বললাম, চোখে কী এক্সরে মেশিন বসাইছি? ঘোমটার ভেতর দিয়ে কেমনে দেখবো? ছাগল একটা।
এরমধ্যে আব্বা চাচা এটা ওটা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছিলেন মেয়েকে। উনিও উত্তর দিচ্ছেন। এমনই একটা সময়ে আব্বা বললেন, ‘তা বেয়াই সাহেব, মেয়ের ঘোমটা একটু নামাতে বলেন, দেখি। কত আগে দেখেছি’। এটা শুনেই বুঝলাম, কতবড় ষড়যন্ত্র হয়েছে আমার সাথে! সবাই চেনে! মীরজাফরের বংশধর কিসিমের। আমিই চিনি না। মেয়ের ঘোমটা তোলার জন্য সেই ভদ্রমহিলা এগিয়ে আসলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই তো সময়। ঘোমটা নামানোর সময় মেয়ের মনোযোগ থাকবে ঘোমটার দিকে, অন্য দিকে না। সুতরাং এটাই মোক্ষম সময় একটূ দেখার। চশমাটা একেবারে চোখের সাথে লাগিয়ে দিলাম।
ঘোমটা নামছে একটু একটু করে। সেটা সেকেন্ডের গতিতেই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি মহাকালে আছি; প্রতিটি মাইক্রো সেকেন্ডকেই আমি দেখতে পাচ্ছি। ঘোমটা নামতে নামতে খেয়াল করলাম, সে কপাল বরাবর ছোট্ট একটা কালো রঙের টিপ পরেছে, বাম সিঁথি। হাতেও মেহেদি, হাতে স্বর্ণের চুড়ি তবে এখন তো সব ইমিটেশন পরে, তবে রেশমি চুড়িও আছে দেখা যাচ্ছে। দারুণ তো।
ঘোমটা নামিয়ে সামনে মাথা তুলতেই বিদ্যুৎ চমকানোর মতো আমি উঠে দাঁড়ালাম, মেয়েও উঠে দাঁড়ালো। দু জনের দুরত্ব দুই ফিটেরও কম।কিন্তু একে অন্যের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে!