সিম্বার মনটা আজ খুব ভালো আছে। গতকাল যে হরিণটা ও শিকার করেছিল, হায়নার দল তার খোঁজ পায়নি। তাই আজকের খাওয়াটাও জম্পেশ হল। এমনটা কালেভদ্রে হয়। কোত্থেকে যে গন্ধ পায় এই পরগাছাগুলো! ঠিক হাপিস করে দেয় সিম্বার এত কষ্টের শিকারদের। বিরক্তি প্রকাশ করতেই বোধহয় সে তার সোনালি কেশরওয়ালা মাথাটা একবার ঝাঁকিয়ে নিল।
কিন্তু এক বিষয় নিয়ে বেশিক্ষণ ভাবতে সে শেখেনি। সে তাই ঘাসজমি ছেড়ে মাঠের মধ্যে ছাতার মতো ডালপালা বিছিয়ে থাকা অ্যাকাশিয়া গাছটার ছায়ায় আয়েস করে পা ছড়িয়ে বসল। অন্যদিন এই সময় তার সঙ্গে তার পরিবারের বাকিরাও থাকে। কিন্তু আজ তার তৃপ্ত উদর, ঘননীল আকাশ আর সোনালি রোদ তাকে আলসে আর একান্তচারী করে তুলেছে। তাই সে বাকীদের খোঁজে না গিয়ে লম্বা একটা হাই তুলে চোখ বুজল।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের ছায়া ছোট হতে থাকে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায় সিম্বা। তার ষষ্ঠেন্দ্রিয় তাকে কোন বার্তা পাঠাচ্ছে। সূর্য এখন মধ্যগগনে। এই তীব্র আলোয় তার দৃষ্টি পূর্ণ শক্তিতে কাজ করে না। নাক টানল বার কয়েক। কোন গন্ধ পেল না। অথচ মাথার মধ্যে টিং টং করে বিপদের ঘন্টিটা বেজেই যাচ্ছে। তার শ্রবণেন্দ্রিয় অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। কিসের একটা মৃদু, অতি মৃদু আওয়াজ না? আওয়াজ লক্ষ্য করে ঘুরে দাঁড়াল সিম্বা। হাওয়ার উল্টোদিকে আধখানা চাঁদের মতো একটা ঝোপের লাইন না? ওটা কি আগে ছিল? সে ঠিকঠাক মনে করতে পারল না। কিন্তু আওয়াজটা ওদিক থেকেই আসছে। আলোটা একটু কম হলে সে ঠিক দেখতে পেত ঝোপের মতন জিনিসটা এগোচ্ছে। গোলমুখটা আর একটু ছোট হতেই হাওয়ায় গন্ধটা ভেসে এল। আর তখনই তার শিরদাঁড়ার ভিতর দিয়ে একটা ভয়ের শিহরণ বয়ে গেল।
নিঃসন্দেহে গন্ধটা চিহ্নিত করতে পেরেছে সিম্বা। সে আজ আফ্রিকার জঙ্গলের সবচেয়ে বড় বিপদের মুখোমুখি। ওর চারপাশ ঘিরে ব্যুহ রচনা করেছে ক্ষুধার্ত বুনো কুকুরের দল। সিম্বা জানে এই কুকুরগুলোর দলবদ্ধতা এবং শিকার করার ধৈর্য প্রশ্নাতীত। তাই সে গোলের খোলামুখটা দিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইল। মাথা নীচু করে গর্জন করে উঠল। কুকুরের দল ততক্ষণে নিরাপদ দূরত্বে তাকে ঘিরে একটা বলয় বানিয়ে ফেলেছে। সিম্বা এগোলে সেদিকের বেষ্টনী যেমন পিছিয়ে যায়, তেমনি পিছনের দলটি এগিয়ে আসে। ফলে সিম্বা সবসময়েই বৃত্তের কেন্দ্রেই থেকে যায়। এর মধ্যে একটা দুঃসাহসী কুকুর সামনে এসেছিল। তার ভবলীলা সাঙ্গ করেছে সিম্বা। কুকুরেরা যেন জানত এমনই হবে। তারা শুধু বৃত্তের পরিধিটা বাড়িয়ে কমিয়ে যেতে থাকে। এবার সামনে এগিয়ে আসে আরও একজন। সিম্বা তার ঘাড় কামড়ে ধরার আগেই পিছন থেকে আরও দুটো কুকুরের দাঁত বসে যায় ওর পেটে। যন্ত্রণায় গর্জন করে একপাক ঘুরতেই ওরা নিমেষে ফিরে যায় নিজের ব্যুহে।
আস্তে আস্তে সাহস বাড়ে কুকুরগুলোর। সামনে দুজন আসে তো পিছনে পাঁচজন। পিছন থেকে কামড়ে পালিয়ে যাওয়াটাই ওদের এখনকার রণকৌশল। ইতিমধ্যে সিম্বার হাতে মারাও পড়েছে দু-একটা। কিন্তু ওদের দলটা এত বড় যে এতে ওদের কিছু যায় আসে না। এদিকে অনেকটা সময় কেটে গেছে। সমানে চর্কিপাক খেতে খেতে আর কামড়ের বিষে সিম্বা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কুকুরগুলো এরই প্রতীক্ষায় ছিল। এবার তারা আরও বেশি সংখ্যায় আক্রমণে নামে। এখন ওদের ক্ষিপ্রতা সিম্বার চেয়ে অনেক বেশি। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে সিম্বা এবার ব্যুহ ভেদ করে দৌড়ে পালাতে গেল। কুকুরের দল তার সামনে থেকে সরে গেল কিন্তু পিছন থেকে কয়েকজন কামড়ে ঝুলে রইল।এ এক খাবলা মাংস নিয়ে নামে তো ও আরেকট খাবলা – আর দৌড়োতে পারেনা সিম্বা। পড়ে যায়। তার চারপাশে এখন অনেক কুকুর – আস্তে আস্তে বিকেলের আলোয় মাঝরাতের অন্ধকার নেমে আসে।
— আর এই অন্ধকারের মধ্যে ঢুকে যেতে যেতে আতঙ্কে হাঁকপাক করে বিছানায় উঠে বসে জর্জ। জর্জ হেনড্রিক্স। ঘামে সারা গা ভিজে জবজবে। ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসে জলের গেলসটা খালি করে হাঁপাতে থাকে। কি কুক্ষণেই যে কয়েক বছর আগে এই ডকুমেন্টারিটা দেখেছিল! সেই থেকে কেমন করে যেন সিম্বার সঙ্গে সে নিজেকে একাত্ম করে ফেলেছে। যেন তার জন্যও অপেক্ষা করে আছে এমন এক ভবিষ্যত। অজান্তেই তার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সে। প্রায়ই তার স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে এই ভিডিওটা। আর তার মনে হয় বৃত্তটা ক্রমশঃ ছোট হচ্ছে।
অথচ বাস্তব হলো এই যে, ওর চারপাশে এক রৌদ্রোজ্জ্বল পৃথিবী। ঝকঝকে চাকরি, চকচকে বাড়ি আর ফুটফুটে বৌ আদেলাকে নিয়ে ভারি সুখের সংসার তার। ওহ্, আরেকজনও আছে ওদের এই ছোট্ট দুনিয়ায়। তার নাম জিম। আদেলার প্রাণভোমরা যেন। মাঝে মাঝে এই নিয়ে বৌয়ের সঙ্গে কপট লড়াইয়ে নামে জর্জ – ‘অ্যাই, সত্যি করে বলোতো, কাকে বেশি ভালোবাস তুমি? আমাকে না ওই জিমকে?’ _ খিলখিল করে হাসে আদেলা। সেই হাসি সুখের মুক্তো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঘর ছাড়িয়ে, মন ছাপিয়ে বয়ে যায় নদীর মতো। জিম তাতে ভারি আপ্যায়িত হয়ে মৃদু ডাক ছাড়ে – ‘ভৌ’!
একটা লং উইকএন্ড পেলেই ওরা তিনজনে বেরিয়ে পড়ে ওদের বাসাগাড়িটা (RV) নিয়ে। হেলেনায় থাকার সুবাদে আসেপাশে দ্রষ্টব্যের অভাব নেই। মন্টানা চিরকালই তার অপরূপ সৌন্দর্যে অনন্যা। বিখ্যাত জায়গাগুলো দেখা হয়ে গেল যখন, তখন জর্জ আর আদেলা চলে যেত গ্লেসিয়ার ন্যাশানাল ফরেস্টের নির্জন প্রান্তরে, কোন এক নির্জন লেকের ধারে – যেখানে সব কোলাহল বারণ, শুধুই কথা প্রাণে প্রাণে!বাসাগাড়ি থেকে ডেকচেয়ার বের করে ওরা চুপটি করে বসে চাঁদের আলোয় জলের ঝিলিমিলি দেখত। পায়ের কাছে নিঃশব্দে শুয়ে থাকত জিম। কী করে যেন সেও বুঝে যেত এই সময় কথা বলতে নেই!
সেই বছর আগস্টে জর্জ আর আদেলার একটা লম্বা ছুটি মিলেছিল। লোকালয় থেকে বেশ অনেকটা দূরে জর্জ একটা কটেজের সন্ধান পেয়েছে। ছবিটবি দেখে আদেলারও ভারি পছন্দ হয়ে গেল জায়গাটা। তাই গাড়ির মাথায় নৌকোটা বেঁধে রওনা দিল ওরা তিনজনে। এবারে আর বাসাগাড়িটা নেয়নি। কটেজ আছে যখন, তখন এদিক ওদিক ঘুরতে ছোট গাড়িতেই সুবিধা।
জায়গাটায় নেমে মুগ্ধ হয়ে গেল ওরা। ছবিতে যা দেখেছিল বুক করারা সময়, এ তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। ঘন নীল লেকের তিনদিক ঘিরে সবুজ বন। একদিকে ঘাসজমির ওপরে ছোট্ট কটেজটি। কটেজের বারান্দায় বসলে গাছেদের মাথার ওপর দিয়ে সাদা পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়।
জর্জ আর আদেলা মিলে হাতে হাতে গুছিয়ে ফেলল তাদের সাতদিনের ঘরকন্নার সংসার।তারপর খাওয়া দাওয়া সেরে এসে বসল বারান্দায়। আজ অনেকটা গাড়ি চালিয়ে আসা হয়েছে। তাই এখন বিশ্রাম। আজ শুধু বসে বসে দেখা কেমন করে লেকের জল রাঙা করে, মেঘেদের গায়ে লাল কমলা রঙের হাত বুলিয়ে অতি অনিচ্ছায় সুয্যিঠাকুর ডুবে যায়। এরপরেও ভালো করে আঁধার হল না কিন্তু! দুদিন পরেই পুর্ণিমা – তাই চাঁদের রূপোলী আলোয় চারদিক ভেসে গেল, আর চাঁদটা টুকরো টুকরো হয়ে জলের ঢেউয়ের মাথায় চড়ে নাচতে লাগল।
পরদিন সকালে হাইক,বিকেলে বোটিং, আর সন্ধ্যেবেলায় ওয়াইনের গেলাস হাতে বারান্দায় বসে সামনের নির্জন সৌন্দর্য উপভোগ – বেড়াতে বেরিয়ে এত আনন্দ ওরা কখনো পায়নি। তার পরদিন পুর্ণিমা। রাত্রে আবারও নৌকো ভাসালো আদেলা আর জর্জ। বড্ড ক্লান্ত লাগছে এবার। এখন দরকার একটা তৃপ্তির ঘুম। কিন্তু জিম আজ কেমন যেন ছটফট করছে। কিছুতেই বারান্দায় থাকতে চাইছে না। অথচ কটেজের ভিতরে পোষ্যের প্রবেশের অনুমতি নেই। তাই কোনমতে জিমকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বারান্দায় রেখে ওরা ঘুমোতে গেল। জিমের প্রবল আপত্তিতে আজ আর ওকে বাঁধা গেল না।
আদেলা ঘুমিয়েও পড়ল সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু এত ক্লান্তি সত্ত্বেও জর্জের আজ ঘুম আসতে চাইছে না। জিমের ছটফটানিতে আজ যেন ও সিম্বার উদ্বেগের ছায়া দেখতে পাচ্ছে। দু একবার বাইরে বেরিয়েও দেখল। সব স্বাভাবিক। তবু বন্দুকটা লোড করে রাখল বিছানার পাশে। তারপর একসময় গভীর ঘুমের তলে ডুবে গেল।
ঘটনাটা ঘটল শেষরাতের দিকে। জিমের ঘনঘন ডাকে ঘুম ভেঙে গেল আদেলার। জর্জ পাশে শুয়ে অগাধে ঘুমাচ্ছে। ডাকতে মায়া হল। তাই চটিটা গলিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো একাই। কিন্তু জিম তো বারান্দায় নেই! মাঠের দিকে তাকাতেই বুকটা হিম হয়ে গেল ওর। আট ফুটের ওপর লম্বা চারশো কেজি ওজনের দৈত্যটার বাদামী রং চাঁদের আলোয় কালো দেখালেও, গ্রীজলীটাকে চিনতে একটুও অসুবিধা হচ্ছে না। জিমকে ওর পাশে খরগোসের মতো দেখাচ্ছে। নৌকোটাকে খোলামকুচির মতো আছড়াচ্ছে প্রাণীটা। সব ছেড়ে গ্রীজলীর মনোযোগ যে কেন নৌকোটার উপর পড়েছে, সেটা ভেবে অবাক হতে গিয়ে – হঠাৎ বিদ্দ্যুচ্চমকের মতো খেয়াল হল কাল রাতের ক্লান্তিতে ও এক অমার্জনীয় ভুল করে বসেছে। খাবারের প্যাকেটটা নৌকোতেই ফেলে এসেছিল। আর সেই গন্ধে গন্ধেই…..
কিন্তু জিম তার কর্ত্রীর সম্পত্তি বাঁচাতে মরিয়া। প্রবল চেঁচাচ্ছে গলা ফাটিয়ে। ওকে যদি পায় ভালুকটা – আতঙ্কে আদেলা দ্বিতীয় ভুলটা করে বসল। জিইইইইম বলে চিৎকার করে দৌড়ালো ওকে ফেরত আনতে। আর এই চিৎকারেই বোধহয় ঘুরে দাঁড়াল গ্রীজলীটা। জর্জ বন্দুক নিয়ে বেরোতে বেরোতেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছু ঘটে গেল। আদেলাকে বাধা দেওয়ার অবকাশটুকুও সে পেল না।
দৌড়োচ্ছে আদেলা। একহাতে জিমকে টানতে টানতে দৌড়াচ্ছে ঘরের নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। পারল না। শিকারীর গতি যে ঘন্টায় তিরিশ কিলোমিটার! একটানে আদেলাকে ধরে সে পিছন ফিরল। পাগলের মতো গুলি চালিয়ে যাচ্ছে জর্জ। অসম লড়াইটা শেষ হল একসময়। লুটিয়ে পড়ল গ্রীজলী। তার আগে সে নখের আঁচড়ে গাছের ছাল ছাড়াবার মতো আদেলার শরীর থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে মাংস আর চামড়া। গ্রীজলীর বুকের মধ্যেই চিরঘুমে ঘুমিয়ে পড়েছে ও।
সেই স্বপ্নে দেখা অন্ধকারের হামুখটার মধ্যে ক্রমশঃ ঢুকে যাচ্ছে জর্জ। চাপ চাপ অন্ধকার আর আর কালো রক্তে মেশা সুড়ঙ্গটা থেকে তার আর বেরোবার পথ নেই। কতোটা কষ্ট পেয়ে মরেছিল আদেলা? গা থেকে চামড়া খুলে গেলে ঠিক কতটা যন্ত্রণা হয় একটা মানুষের? শেষ চিৎকারটা তো আদেলা তার নাম ধরেই করেছিল! কিচ্ছু করতে পারল না! অথচ সে তো এখনো দিব্বি পুরো চামড়া গায়ে জড়িয়ে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে! পুলিস এসেছে। চলে গেছে। সে ফিরে এসেছে তাদের – তার বাড়িতে। এখানে এখন যন্ত্রের মতো দিন পেরিয়ে রাত হয়। রাত পেরিয়ে দিন। এভাবেই ছয় মাস পেরোল। পুলিসের ভারপ্রাপ্ত অফিসারটি তার উপর বড় সদয়। তিনি চেষ্টা করেন যাতে তদন্তের সময় জর্জকে বারবার সেই ঘটনার মুখোমুখি হতে না হয়। তারপর একদিন সব মিটে গেল। আজ অফিসারটি এসেছেন তাকে আদেলার পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা দিতে। জর্জ রিপোর্টটা নিয়ে হতাশ হাসি হাসে। ধন্যবাদ দেয় অফিসারকে। বিদায় জানায়। রিপোর্টটা ছুঁড়ে ফেলে ঘরের এক কোণায়। কী হবে দেখে? আদেলা কতো যন্ত্রণা পেয়েছিল তা কী বলা থাকবে ওতে? গেলাসটা আবারও ভরে নেয়। এক ঢোকে শেষ করে। আজকাল আর নেশা হতে চায় না। আরো কড়া কিছু চাই ওর। বেরোতে যাবে, পায়ের কাছে খামটা এসে পড়ল। আবারও ছুঁড়ে ফেলতেই যাচ্ছিল, কী মনে হল, চেয়ারে বসে খামটা খুলল। রিপোর্টটার সঙ্গে একটা ছোট চিঠি। এবার একটু কৌতুহল হল মাতালটার। চিঠি খুলে পড়তে শুরু করল।
প্রিয় জর্জ,
ভেবেছিলাম এই রিপোর্টটা তুমি একটু সুস্থ হলে দেব। কিন্তু দিন দিন তুমি নিজেকে যে হারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছ, তাতে কবে কি করে বসবে, সে ভয়টা রয়েই যাচ্ছে। তার আগে তোমাকে এই রিপোর্টটা দেওয়া আমার কর্তব্য। তোমার স্ত্রী কীভাবে মারা গেছে সেটা তোমার জানার সম্পুর্ণ অধিকার আছে।
তোমার প্রথম গুলিটা গ্রীজলির গায়ের চামড়া ছিঁড়ে আদেলার হার্ট ফুটো করে দেয়। তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয় তার। তারপরে তোমার উপর্যুপরি গুলিতে ভালুকটাও ভবলীলা সাঙ্গ করে।
বুক চেপে বসে পড়ে বেচারি। এক্ষুণি একটা গরম সীসের গুলি ওর বুকের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে! হাতের মধ্যে মুচড়ে ধরে চিঠিটা। গ্রীজলী নয়, ও। ও নিজের হাতে হত্যা করেছে ওর প্রিয়তমাকে। টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায়। ড্রয়ার খুলে বের করে আনে .৩৮ ক্যালিবারের পিস্তলটা। পুলিস বন্দুকটা নিয়ে গেলেও এটা এখনো তার কাছেই আছে। কোথায় লাগাবে? মাথায়? না, না – আদেলা যেভাবে মরেছিল ঠিক সেভাবেই মরতে হবে। ঘোর লাগা চোখে চিঠির শেষাংশে মন দেয়। ডিটেলটা চাই ওর।
…অবশ্য তোমার গুলি না লাগলেও আদেলা মরতই। ভালুকের নখের আঘাতে তার সারা শরীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। একদিক থেকে দেখতে গেলে তুমি তাকে সেই নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছ।
আমি জানিনা এতে তুমি কোন সান্ত্বনা পাবে কিনা। পারো যদি জীবনের দিকে মুখ ফেরাও।
শ্রদ্ধাসহ
ড্যানিয়েল
এতদিন পরে, এই প্রথম হাউ হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ল জর্জ। কোথা থেকে যেন একটা শীতল বাতাস আসছে। আদেলা স্নান করে এলে বাতাসে এই গন্ধটাই ভেসে আসত না? আদেলাকে ও মারে নি। এক নারকীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছে মাত্র। যে যন্ত্রণার কল্পনা তাকে পাগল করেছে এতদিন ধরে, সেই কষ্ট আদেলা আদৌ পায় নি। কিছু বোঝার আগেই সে সব যন্ত্রণার ওপারে চলে গিয়েছিল। অন্ধকার ভেদ করে আসছে আলোর রেখা। সিম্বা পারেনি। কিন্তু সে পারবে। আঁধার পেরিয়ে সে যেতে পারবে আলোর দিকে। জর্জ আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। পিস্তলটা পড়ে থাকে টেবিলের ওপর। বাইরে বেরিয়ে আসে জর্জ । এখন ওর সারা গায়ে মাথায় ঝলমলে রোদের আলো।