অঝোপাড়া গাঁয় জন্মগ্রহণ করে নিঝুম।ছোটকাল থেকেই গল্পের প্রতি অতি-আর্কষণ ছিলো মেয়েটির,,,,
বয়স যখন ১০বছর তখন থেকে বিভিন্ন বইয়ের গল্প পড়া শুরু করে,,,
গল্প না পড়লে যেনো তার ঘুমই হয় না,,,,ঘুমানোর আগে গল্প পড়া,ঘুম থেকে ওঠে গল্প,,,
এই গল্প পড়া নিয়ে ওর আব্বু আম্মুর কাছ থেকে অনেক বকা শুনেছে তার পরেও থেমে নেই তার গল্প পড়া,,,,
বয়স যখন ১৭ তখন তার বড় ভাই নিঝুম কে বাহির থেকে মোবাইল দেয়,,,
মোবাইলে ফেইসবুকে গল্প পড়া শুরু করে,,,,
বিভিন্ন পেইজে,গ্রুপের নিয়মিত পাঠক হয়ে ওঠে,,,
সিয়াম নামের এক লেখকের গল্পগুলো খুব ভালো লাগে তার,,,
বলতে গেলে সিয়ামের গল্পের অন্ধ ভক্ত হয়ে গেছে,,,,
বিভিন্ন গল্প পড়া থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিঝুম ও গল্প লেখা শুরু করে,,,
গল্পগুলো কেমন করে বিভিন্ন পেইজে পোষ্ট করবে তার গল্প মানুষের সামনে কেমনে প্রকাশ করবে এই সে ভাবতে থাকে,,,
তার মনে পড়ে তার প্রিয় লেখক সিয়ামের কথা,,,
নিঝুমঃলেখক সাহেব আমি আপনার গল্পের একজন নিয়মিত পাঠক,,,
সিয়ামঃধন্যবাদ,আপনাদের জন্যই আমার গল্প লেখা,,,
নিঝুমঃআমার একটা উপকার করতে হবে লেখক সাহেব,,,
সিয়ামঃকি উপকার বলেন,,,
নিঝুমঃআমিও আপনার মতো গল্প লেখা শুরু করছি,কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি না,,,,
সিয়ামঃআপনার গল্প গুলো আমাকে পাঠিয়ে দিন,আমি বিভিন্ন পেইজে পোষ্ট করে দিচ্ছি,,,
তারপর সে সিয়ামের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলে এবং তার মাধ্যমে নিঝুমের গল্প বিভিন্ন পেইজে পোষ্ট হতে থাকে,,,
এদিকে সিয়ামও হয়ে ওঠে জনপ্রিয় লেখক,,,তার লেখা বইও প্রকাশ হয়েছে,,,
তার গল্পের বই নিয়মিত পাঠক হয়ে ওঠে নিঝুম,,,
আবারও সিয়ামের গল্পের প্রেমে পড়ে যায় নিঝুম,,,
নিঝুমের সাথে এখন সিয়ামের নিয়মিত কথা হয় তবে বাস্তবে না,,,ফেইসবুকেই কথা হয় দুজনের,,,
অনেক দিন পরে নিঝুমদের গ্রামে সাহিত্য মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা চলে,,,
সাহিত্য মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে আসার কথা থাকে,,,সাহিত্যিক একে.এম.আজাদ সিয়াম,,
নিঝুম গল্প প্রেমিক থাকায় সে সাহিত্য মেলায় চলে গেলো,,,
অনেক প্রতীক্ষার পর মঞ্চে আসলেন সবার আর্কষণীয় ব্যক্তি,প্রিয় লেখক,তরুনদের জনপ্রিয় লেখকঃএকে.এম.আজাদ সিয়াম,,,
নিঝুম তো আজাদ সিয়াম কে দেখেতো অবাক,,,এই সেই তার প্রিয় লেখকঃসিয়াম,,,,
নিঝুম অনেক কষ্ট করেও সিয়ামের সাথে দেখা করতে পারলো না কারন অনেক লোকের সমাগম ছিলো,,,,
নিঝুম সিয়ামের সাথে দেখা করার আশা প্রায়ই ছেড়েই দেয়,,,
অনুষ্ঠান শেষ হতে সন্ধ্যা হলো এবং প্রচুর ঝড় বৃষ্ট আরম্ভ হলো,,,
যার ফলে সিয়াম আর ঢাকায় ফিরতে পারলো না,,,
অনুষ্ঠান স্থলের কাছাকাছি একটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হলো সিয়ামের,,,
এদিকে নিঝুম অনুষ্ঠান শেষে বাড়িতে চলে আসলো,,,এসে সে অবাক,,তার বাড়িতেই তার প্রিয় লেখক সিয়াম বসে আছে,,,
সে আর লজ্জায় তার সামনে যেতে পারলো না,,,,
রাত ১১টায় নিঝুম সিয়ামের সামনে গেলো,,,
নিঝুমঃঅবশেষে আপনাকে দেখতে পেলাম তার মধ্যে আমাদের বাড়িতে,,,,
সিয়ামঃআপনি আমাকে চিনেন নাকি???
নিঝুমঃআরে লেখক সাহেব আমি সেই নিঝুম,,আপনার গল্পের অন্ধ ভক্ত,,,
সিয়ামঃআরে,,এখন চিনতে পারলাম,,,
আপনি এখানে কেনো???
নিঝুমঃআমাদের বাড়ি এইটা,,,
সিয়ামঃওহহহহ,অবশেষে ঝড়-বৃষ্টি আমাকে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে আসলো,,,
নিঝুমঃভালোই তো হলো,,আপনার সাথে অবশেষে দেখা তো হয়ে গেলো,,,
সিয়ামঃহুমমম,,আপনার লেখা কেমন চলছে???
নিঝুমঃএইতো মোটামোটি,,,
অনেক কথা হলো রাতে তাদের দুজনের মধ্যে,,,
সকালে ঢাকা যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে সিয়ামের,,
যাওয়ার সময় নিঝুমের বাবা নিঝুমের লেখা গল্পগুলো সিয়ামের হাতে দিয়ে বল্লো,বাবা,আমার মেয়ে গল্প গুলো লিখছে,,ভালো লাগলে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করে দিও,,,
সিয়াম নিঝুমের বাবাকে কথা দিয়ে গেলো নিঝুমের গল্প গুলো প্রকাশ করবে,,,
সিয়াম নিঝুমের পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে,,,
নিঝুমের গল্পগুলো প্রকাশ করে দেয় সিয়াম,
নিঝুমও জনপ্রিয় লেখিকা হয়ে ওঠে,,,,
কথা বলতে বলতে কখন যে নিজেদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিলো তারা নিজেরাও জানে না,,,,
গভীর প্রেম চলতে থাকে সিয়াম-নিঝুমের মাঝে,,,
নিঝুম নিজের লেখালেখির কারনে এবং প্রেমের টানে চলে যায় সিয়ামের কাছে,,,
সিয়ামও তাকে সাদরে গ্রহন করে নেয় এবং তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়,,,,
এগিয়ে যেতে থাকে নিঝুমের ক্যারিয়ার,দেশের শীর্ষ লেখকদের মাঝে জায়গা করে নেয়,,,
সিয়াম-নিঝুমের বিবাহের দুই বছর অতিক্রম হওয়ার পর তাদের কোলজুড়ে আসে তাদের আদরের পুত্র সন্তান,,,
পরিবারিক কারনে নিঝুম কে লেখালেখি বাদ দিতে বলে সিয়াম,,,
কিন্তু কিছুতেই লেখালেখি বাদ দিবে না নিঝুম,,,,
এরই মধ্যে সিয়ামের চেয়েও নিঝুম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে,,,
নিঝুমের জনপ্রিয়তা কিছুতেই থামাতে না পেরে অন্য রাস্তা বেছে বাদ্য হয় সিয়াম,,,,
একদিন নিঝুম তার পিচ্চি ছেলেটিকে নিয়ে বাংলাবাজারের একটি প্রকাশনার কারখানা থেকে রিকশায় বাসায় ফিরছিলো,,,,
ফিরে আসার সময় রিকশাকে সজোড়ে ধাক্কা দেয় পিছন থেকে আসা প্রাইভেটকার,,,
ঘটনাস্থলেই মারা যায় নিঝুম এবং তার ছেলে,,,,
নিঝুম দেশের একজন জনপ্রিয় লেখক হওয়ায় তার মৃত্যুতে সারাদেশ আলোচিত হয়,,,
নিঝুমের মৃত্যুটা পুলিশের কাছে স্বাভাবিক মৃত্যু মনে হয়নি,,রহস্য লুকায়িত আছে বলে মনে করে পুলিশ,,,,,
তদন্ত শুরুর প্রথম দিকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নিঝুমের স্বামী সিয়ামকে,,,
সেখানেই বেরিয়ে আসে নিঝুম মৃত্যুর রহস্য,,,
নিঝুম কে নিজে গাড়ী চাপা মেরে ফেলেছে বলে স্বীকার করে সিয়াম,,,
পুলিশঃআপনারা তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন,দুজনই ছিলেন দেশের বিখ্যাত লেখক,তাহলে আপনার নিজের স্ত্রী সন্তানকে মারলেন কেনো????
সিয়ামঃনিজের ক্যারিয়ারের জন্য,,,
পুলিশঃনিজের ক্যারিয়ারের জন্য মানে???
সিয়ামঃঅনেক বেশি ভালোবাসতাম নিঝুমেকে,,,
নিঝুমের লেখালেখির বিষয়ে আমিই উৎসাহ দিতাম,,,নিঝুমও অনেক বড় লেখক হয়ে ওঠে এমনকি আমার চেয়েও বড় লেখক হয়ে ওঠে,,,
যেটা আমি সহজেই মেনে নিতে পারছিলাম না,,,
নিজের ক্যারিয়ারের জন্যই আমি নিজের স্ত্রী কে মেরে ফেলি,,,
রিকশাটাকে যে প্রাইভেটকার ধাক্কা দিয়েছিলো সেটা আমার নিজেরই প্রাইভেটকার ছিলো,,,
এগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সিয়াম,,,,
১বছর পর::::
নিজের ভুল হয়তো বুঝতে পারছে এখন সিয়াম,,প্রিয়জন হারানোর ব্যাথাও অনুভব করছে,,,
নিজের স্ত্রী,সন্তান কে হত্যার দায়ে ফাঁশির আদেশ দেয়া হয় সিয়াম কে,,,,
আজকেই ফাঁশি দেয়া হবে সিয়াম কে,,,,
সিয়ামের শেষ ইচ্ছে জানতে চাওয়া হলে সে জানায় শেষ বারের মতো তার স্ত্রী সন্তানের ছবি দেখতে চায়,,,
তার স্ত্রী সন্তানের ছবি দেখে অঝোরে কাদছে,,,
এখন কাদলেও হয়তো আর কোন লাভ হবে না,,,
সিয়ামের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলো,,,,
সিয়াম নিঝুমকে অনেক ভালোবেসে ছিলো কিন্তু সিয়ামের ক্যারিয়ারের কাছে তার ভালোবাসাকে তুচ্ছ মনে হয়েছিলো,,,,
আমরা মানুষ জাতি,আমরা হারানোর পরে হারানো জিনিসটির মূল্য বুঝি তার আগে নয়,,,
সিয়ামও নিঝুমের মূল্য বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু তখন আর নিঝুম তো নেই,,,,
আমরা প্রতিযোগিতা করবো কিন্তু কখনো প্রতিহীংসা করবো না,,,
প্রতিহীংসা মানুষকে বড় করতে পারে না বরং পারলে ছোটই করে,,,,
আজও হয়তো এই প্রতিহীংসার জন্যই চলে গেলো তিনটি প্রাণ,,,,
তবে নিঝুম চলে গেলেও রয়ে গেছে তার পাঠক রয়ে গেছে তার বইগুলো,,,,
হয়তো কমে নি তার পাঠক সংখ্যাও,,,
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।মোবাইল টাইপিং তো কিছুটা মিস্টেক বা বানান ভুল হতে পারে,,ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)