ধপ ধপ করে হাতির পালের মতো ছুটে এলো রিমন, রাজু, রনি, কাকন, সচিব। তরিঘরি হাতের আঙ্গুল দেখিয়ে বলে “তোর মামা পটল মিয়া এদিকে আসছে”। জর্জ বড় একটা বেঞ্চে বসে খুব আরাম করে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো। রনীর কথা শেনার মাত্রই চমকে যায়।
ভয়ার্ত গলায় জর্জ বলে : ‘‘পটল মামা এখানে আসছে কেন ?’’
রিমন হিঃ হিঃ করে তার মোটা শরীরটাকে নাচাঁলো। তারপর বাঁিকয়ে বাঁিকয়ে বলতে লাগলো “জর্জ আমি সব পটপট করে বলে দিয়েছি তোর মামাকে।’’
জর্জ ঃ কি বলেছিস ?
রিমন ঃ কেন আমরা যে তোর মামার ছাগলটাকে জবাই করে খেয়েছি। তোরা তো কম খেয়েছিস তাই দৌড়ে পালাতে পেরেছিস কিন্তু আমি অল্প অল্প করে আস্ত আস্ত মাংস গুলো কামড়িয়ে কামগিয়ে খেলে ফেললাম। অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছি। খেতে খেতে নিজেকে খুব ভারী মনে হলো। সেখান থেকে নরতে চরতে না পেরে ঘুমিয়ে পরলাম। টের পেলাম না। অবশ্য রান্নাটাও বেশ মজা হয়েছিলো। আহ্ কি মজা। কে জেনো আমার পেটে উপর খোঁচা দিচ্ছি। ঘুমের ঘেরে ভেবেছি এটা বুঝি ছাগলের শিং এর খোচাঁ। জেগে দেখি তোর পটল মামা হাজির। সাথে “ফকির মোঃ তোতা মিয়া”। তোতামিয়াই কেমন এপাস ওপাশ ফুরৎ ফারুত করছে। তার হাতের লাঠি দিয়ে আমাকে গুতা দিচ্চে। তোতামিয়ার হাতে আরো, ঝাড়–, লাল মরিচ, পানি, ইদুঁরের বাচ্চা, তেলাপোঁকা, বিচ্ছু । এই সব ভয়ানক পোকামাকড় দেখে আমি আতকে উঠেছি। তাই ভয়ে সব পটপট করে বলে দিয়েছি।
রিমনের কথা শেষ হতে না হতেই, জর্জ ভাবসাব নিয়ে রিমনকে বললো, “কথায় আছে না চোরের মন পুলিশ পুলিশ, দিলি সব কিছু ফাঁস করে। এখন আমাদের সবাইকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। মামা খুব আজে-বাজে বকা দেয়। এবার যদি ধরা খাই তাহলে ৫০১ টাকা জরিমানা করবে এবং গায়ে দশটি নেংটি ইদুরের বাচ্চা বেঁধে গ্রাম শুদ্ধ হাটাবে। আর বলবে আমাদের উপর ভুতের আছর পরেছে । ভুত তারানোর কথা বলবে। ব্যপারটা কি ভংয়কর । চল জলদি পালাই ।
রিমন ও রনি আছে শুধু খাওয়ার ধান্ধায় তাই তারা ভয়কে পাত্তা না দিয়ে বলে “শোন তোর পটল মামা আস্ত একটা কৃপন। একটা ছাগল খেয়েছি তাতে কি হয়েছে আরো পাঁচটা ছাগল আছে। তোর মামা এত কৃপন কেন ?”
রাজু একটু হাবা প্রকৃতি তাই হিঃ হিঃ করে হেসে উঠে বলে ঃ ‘‘ জর্জ তোর মামাকে দেখতে দেশী পটলের মতো দেখায়। হিঃ হিঃ করে হেসে আবারও বলে ‘‘তোর মামার এক গুচ্ছু ছাগলের মতো দাঁিড় হয়েছে। ছাগল পালতে পালতেই এগুলো হয়েছে।”
বলতে দেরী হলো না পেছন থেকে কে জেনো রাজু কান ধরে কাত করে ফেললো। ব্যপারটা দেখে তড়িৎগতিতে রনি, জজ, রিমন সেখান থেকে পালিয়ে যায়। রাজু বুঝতে পারছে তার কানটা জোরে টান দিয়ে ছিরে ফেলার চেষ্টা করছে কে ? এদিক-সেদিক পেছন দিক তাকিয়ে যেই সামনের দিক ভালো করে তাকিয়ে দেখে বড় বড় ভয়ানক চোখে তাকিয়ে পটল মামা। লম্বা গেফাটাকে ফুদিয়ে উড়ালো এবং একগুচ্ছ দাড়িঁগুলো চিরনি দিয়ে আছরিয়ে রাজু দিকে গরমমেজাজে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো “ আমার একগুচ্ছ ছাগলের দাঁড়ি হয়েছে তাই না, পাজি- বাদর কোথাকার। তোরে দেখাচ্ছি মজা বলেই আরো জোরে কান ধরে টান দিলো। রাজু কানের ব্যাথায়, ভয়ে ঝরসর হয়ে দাড়াঁলো মামার কানের কাছে জেরে জেরে চিৎকার শুরু করে দিলো। মামা বলে উহ্ মামা উহ্্ মা চিৎকার করিস না বাব। মামা চিৎকার সহ্য করতে না পেরে নড়েচড়ে উঠে সবুজের কানটাও দিলো ছেড়ে। যেই রাজু দৌড়ে পালাবে ওমনি তোতামিয়া ঝাপটিয়ে দরে রাজুকে। বেচারা আবারও মামার হাতে। মাম বলে ‘‘পাজি কোথাকার আজ তোর একদিন কি আমার একদিন । এবার মামা বেশ শক্ত করে সবুজের দু‘হাত চোপে ধরে কপালের উপর একটি কয়েন দিয়ে প্রখর রৌদ্রে একপায়ে একঘন্টা দাড় করিয়ে রাখে। রাজু সেদিনের শাস্তির কথা মনে করে প্রতিজ্ঞা করলো ”যেভাবেই হোক পটল মামার প্রতিশোধ নিতে হবে। ”
দিন যায় রাত যায় ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে পটল মামার কানটা ধরে টানদিয়ে লাল করা যায়। রাজু তার বন্ধুদের মাঝে হাবাগোবা হলে কী হবে। তার জেদ যেভাবেই হোক পটল মামাকে শায়েস্তা করা । সেদিন বিকেলে সব বন্ধদের ডাকলো। রাজুর মনে ভীষন রাগ আর অভিমান জর্জের মামার উপর । সে সব বন্ধুদের দিকে রাগান্নিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো “ জর্জের মামা আমার কান ধরে লম্বা করে ফেলেছে কপালে পয়সা দিয়ে এক ঘন্টা রৌদ্রে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আমি সবাইকে সাফ কথা বলে দিচ্ছি যেভাবেই হোক পটল মামাকে শাস্তি দিতে হবে। রনি, রাজুর কথায় রায় দিয়ে বললো শোন রাজু, “ মামার থুতনির নিচে ছাগলের মতো যে দাঁিরগুলো আছে সেগুলোতে চুইংগাম লাগিয়ে দিলে কেমন হয়। চুইংগাম খুব মারাত্মক আঠা খুলতে পারবে না। একবার আমি চুইংগ্রাম খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কখন যে আমার নাকের সাথে চুইংগাম লেগে এক নাক বন্ধ হয়েছিলো টের পেলাম না। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে পারছি না। তখন দৌড়ে মায়ের কাছে যেয়ে বললাম মা আমা সর্ধি হয়েছে দেখছো না নিশ্বাস নিতে পারছিনা। মা আমার কান্ড কারখানা দেখে হোঃ হোঃ করে হেসে উঠে আমার সামনে আয়না মেলে ধরে দেখালো আমার পুরো নাক চুইংগামের আঠায় , নাক বন্ধ হয়ে আছে। বুঝলি পটলমামার দারিঁতে চুইংগাম লাগাতে হবে।
রিমন একটু খাদক প্রকৃতির সে আবারও হোঃ হোঃ হোসে উঠে বলে ধুত “তোরা কিচ্ছূ বুঝিস না, মামার আরো পাঁচটা ছাগল আছে তার মধ্যে থেকে যে ছাগলটা নাদুস নুদুস সেটাকে ধরে মজা করে রান্না করে খাব। তারপর সেই হাড়গোড় মামার বিছানার নিচে রেখে আসবো। কী মজা হবে।”
রিমন ও রনি কারো কথায় রাজু কর্ণপাত করলো না। সে বার বার একটা কথায় মনে পড়ছে যেভাবেই হোক পটল মামার কান টেনে লাল করতে হবে।
যেই ভাবা সেই চেষ্টা একা একা হাটঁছে তো হাটঁছে তখন প্রায় সন্ধায় সুর্য ডুবুডুবু। হঠাৎ তার চোখ পড়ে যায়। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে একজন লোক বানরের খেলা দেখাচ্ছে। রাজু খুব মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগলো বানরের খেলা। রাজু আরো দেখতে পেলো বনরের বাদরামী কাকে বলে, এক বানর আরেক বানরের কান ধরে টান দিচ্ছে। হঠাৎ করেই রাজুর মাথায় বুদ্ধি বের হলো। বানরকে দিয়েই পটল মামার কান টেনে লাল করতে হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ বনরের মালিক বান্দর আলীর সাথে যুক্তি করলো এবং অনেকগুলো টাকা দিবে বলে লোভ দেখালো রাজু। বান্দর আলী এত এত টাকার কথা শুনে খুশি আর রেশ নাই। যেমন বুদ্ধি তোমন কাজ শুরু হয়ে গেলো।
পরের দিন গভীর রাত্রীতে পটলমামা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলো। রাজু, রনি রিমন ও বান্দর আলী মিয়া সহ সকলেই আস্তে আস্তে চুপি চুপি করে রাজু সোজা পটল মামার জানালার কাছে যায়। যেয়ে দেখে হুু হুু করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে পটল মামা। রাজু বান্দর আলী মিয়াকে টপ আঙ্গল দিয়ে পটল মামাকে দেখিয়ে বলে,
“ঐ যে বদ মামা পটলা, আমার বাম কানটা টেনে লম্বা করে দিয়েছে।”
“ রহমত মিয়া তুমি তারাতারি বানরটাকে আদেশ করো, “ঐ বদ মামা পটলার কান টেনে লাল করে ফেলার জন্য। ও আরো আদেশ কর যতক্ষন না পর্যন্ত কান লাল হবে ততক্ষন পর্যন্ত টানতে বলবে কোন অবস্থাতেই ছাড়তে পারবে না।” যেমন আদেশ তেমন কাজ বানরটাকে বান্দর আলী মিয়া, মুখ অভিনয়ে সব কিছু বুঝিয়ে দিলো। বানর বুঝে নিলো। তারপর জানালা দিয়ে আস্তে আস্তে করে ঘরের ভেতর ঢুকে পরে। তড়িঘরি করে পটলমামার কানের সামনে যেয়ে নিঃশব্দে করে দাড়াঁয়। তখন পটল মামা আরো জোড়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলো। বনর পটলমামার কানটি আস্তে করে ধরে একটু হাসি দিলো। আদ্ভুদ বানরের হাসি। রাজুও বানরের হাসি এই প্রথম দেখলো, রাজুও বানরের হাসি দেখে একটি লাজুকীয় হাসি দিয়ে বানরকে সায় দিলো।
বানর সাথে সাথে খুব জেড়ে পটল মামার কানটা ধরে টানতে লাগলো। পটল মামা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। বাবা গো……….. মা …………. গো………… বাচাঁও আমারে……….. বানর আমারে মাইরা ফালাইলো…….। পটল মামা চিৎকার করছে আর ব্যঙের মতো লাফাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে রাজু, জজ, রিমন, রনি, সবাই হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে। বানর শক্ত করে পটল মামার কান ধরেছে কিছুতেই ছাড়ছে না। কেননা মালিকের নির্দেশ দিয়েছে কান ছাড়া যাবে না, জোড়ে জোড়ে টানতে হবে। কান লাল করতে হবে। বানরতে লাল কি জিনিস সেটা বুঝে না। সে লাগাতার কান টানতেই থাকে। পটল মামা চিৎকারে বাড়ীর সকলে উঠে যায়। পটল মামার বউ আদুরী বেগম তার মোটা দেহ নিয়ে লাফ দিয়ে বানরের লেজ ধরে ফেলে। বানরের লেজ ধরে এমন জোরে জোরে টানতে থাকে এদিকে বানরও শক্ত করে পটলমামার কান ধরেছে সেও কান ছাড়ছে না। আদুরী বেগম দেয় বানরের লেজ ধরে টান, ‘বানর দেয় পটল মামার কান ধরে। ভারী আদ্ভুত কান আর লেজের টানাটানি। এদিকে রাজু খিল খিল করে হাসছে আর বলছে
পটলার কান টানে বান্দরে,
বান্দরের লেজ টানে পটলার বউয়ে।
ভারী আদ্ভুদ এই সুন্দর দৃশ্য
হাসতে হাসতে দাতে খিল লেগে যায়।
এদিকে কান টানা আর লেজ টানা, উভয়ের টানা-টানিতে । মামার কানটা গেলে ছিরে। বানরের লেজটাও রেখাই পাইনি। পুরো হাফ ফুট বানরের লেজ ছিরে আদুরী বেগমের হাতে চলে আসে । আদুরী বেগম ধপ্পাস করে খাট থেকে মাটিতে পরে যায়। পটল মামার বাউ আদুরীর সামনের দু‘টি দাঁত ভেঙ্গে যায়। উহ্ আহ্ করে চিৎকার করতে থাকে। রাজু ও তার বিচ্ছুর দল এর আদ্ভুদ বুদ্ধির কারনে পটল মামা কান হারালো, পটল মামার বউ দাঁত হারালো, আর শেষ মোষ বানর হারালো লেজ। সবাই উহ্ আহ্ করে চিৎকার করতে থাকে। এদিক দিয়ে তো ভয়ংকর দুঃখ বানরের মনে। বানর লেজ হারানোর দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে তারা মালিক বান্দর আলী মিয়ার কাছে চলে যায়। বান্দর আলী মিয়া চারপাশ তাকিয়ে দেখে রাজু, রনি, রিমন, কেউ নেই। সবাই বান্দর আলী মিয়ার টাকা না দিয়ে পালিয়েছে। বান্দর আলী তাদের উপর ভয়ানক রাগান্বিত হলো। রাগে দুঃখে আরো ভয়ানক হয়ে উঠে বান্দর আলী মিয়া। রাগান্নিত হয়ে বানরকে নির্দেশ দিলো। যাও ওরা আমার সাথে প্রতারনা করেছে। যাদের জন্য তোমার লেজ হরিয়েছো তাদের নেতা রাজুকে বের কর। রাজুর লম্বা নকটি কামড় দিয়ে নিয়ে আসো। তাৎক্ষনিক বানরও ক্ষুদ্ধ হয়ে রাজুকে খোজঁ করতে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষন পর রাজুর নাক কামড় দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরো আসলো বানর।
হাসপাতালো ভর্তি রাজু ভয়ংকর ব্যথায় কাতরাচ্ছে। চোখ বেয়ে আঝর ধারা পানি পরছে। তার খামখেয়ালিতে মামা কান হারিয়ে পাগলপার, মামী আদরীবেগম দাতঁ হারিয়েছে। সর্বশেষ বানর হারিয়েছে তার লেজ। রাজু বুজতে পারলো খামখেয়ালী আর মিথ্যা হিংসাত্বক প্রতিশোধ ভয়ানক বিপদ আনতে পারে।