রাজকুমারী,
মনে আছে কি আজকের দিনটির কথা। ১৮ নভেম্বরের শীতের সকালের কথা। এদিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে আমরা সারাজীবনের জন্য এক বন্ধনে আবদ্ধ থাকার শপথ করেছিলাম।
বলেছিলাম, কখনো তোমার হাতটা এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বো না।সারা জীবন তোমায় বুকে আগলে রাখবো।
সেদিন তো তুমিও বলেছিলে, কখনো আমার হাতটা এক মূহুর্তের জন্যও ছাড়বে না।
তবে জানো কি, সময়ের স্রোতে হয় তো মানুষ গুলোও বদলে যায়। চেনা মানুষ গুলোও কেমন যেনো অচেনা হয়ে যায়। ভূলে যায় তাদের দেয়া ওয়াদা গুলো। হয় তো আজ তুমিও ভুলে গেছো।
তুমিও হয় তো অনেক বদলে গেছো।
জানো,তোমার দেখানো স্বপ্ন গুলো এখনো আমার চোখে ভাসে।
ইচ্ছে ছিলো তোমায় নিয়ে একটা ছোট্ট ঘর বানাবো।
যে ঘরের দরজাটা হবে বিশ্বাসের, জানালাটা হবে আদরের, ছাদটা হবে ভালোবাসার। আর পুরো ঘর জুড়ে থাকবে শুধু ভালোবাসা।
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন বুনতাম, তোমায় নিয়ে কোন এক গধুলী বিকেলে নদীর পাড়ে তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে বহুদূর হেটে যাবো।
কোন এক জোছনা রাতে বারান্দায় তোমায় নিয়ে জোছনা দেখবো।
কোন এক শিশির ভেজা সকালে তোমার চোখে স্বপ্ন বুনবো।
দু’জন দু’জনকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো।
তবে কি জানো?স্বপ্ন তো স্বপ্নই। তা যে কখনো বাস্তবে রুপান্তরিত হওয়ার নয়।
তবুও প্রায়ই আমি তোমার দেখানো স্বপ্ন গুলো দেখি। তবে যখন ঘুম ভাঙ্গে, তখন আমার স্বপ্ন গুলোও চলে যায়। ঝড়া বকুলের মতো শুধু যার স্মৃতিটাই পড়ে থাকে।
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।বুকের বাম পাশের সেই চিনচিনে ব্যাথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে।
জানো,এখনো যখন চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। রাত নিঝুম হয়। তখন তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। স্মৃতির পাতা হাতরে বেড়াই। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত।
এখনো প্রতিদিন সকালে মনে হয়। কেউ একজনের ফোন আসবে। মায়া ভরা কন্ঠে বলবে,”শুভ সকাল।”
তবে পরক্ষনেই মনে হয় সেই চিরচেনা নাম্বারটা থেকে আর কখনোই ফোন আসবে না।
কোন এক রাতে কেউ ফোন দিয়ে ফিসফিস করে বলবে না, “ভালোবাসি।”
জানো,এখনো মাঝে মাঝে আমার বিশ্বাস হয় না, আমার সেই রাজকুমারীটা এতোটা বদলে গেছে।
আমার রাজকুমারীটা তো এমন ছিলো না। তবে কেনো এতোটা বদলে গেলো?- নিজেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে বেড়াই।
পরক্ষনেই ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠে, একদিন একটা ঝড় এসেছিলো। সেই ঝড়টা আমার কাছ থেকে আমার রাজকুমারীটাকে কেড়ে নিয়ে গেলো। বদলে গেলো আমার রাজকুমারীটা।
এতোটাই বদলে গেলো যে, আমি তখন আমার আগের রাজকুমারীটা আর এই রাজকুমারীটাকে মিলাতে পারছিলাম না।
জানো,মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমি কি আমার সেই রাজকুমারীটা?
হয় তো আমার ভুলে গিয়েছো। হয় তো আমায় ছাড়া তুমি ভালোই আছো। তবুও দূর থেকে তোমার ভালোই চাইবো।
না হয় স্মৃতির পাতায় ক্ষনিকের জন্য উড়ে আসা একটা রঙিন প্রজাপতি হয়েই রইলে।
যে প্রজাপতিটাকে নিয়ে জীবনের বাকিটা পথ চলতে চেয়েছিলাম।
তবে সে মাঝ পথেই উড়ে গেলো, হারিয়ে গেলো কোন এক দিগন্তে। আর আমি পথিক সে পথের ধারেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
জানি, হয় তো কখনোই এই চিঠি গুলো তোমায় কাছে পৌছবে না। তবুও লিখে যাই।
ভালো থেকো রাজকুমারী। অনেক ভালো থেকো।
ইতি,
………….