আমি নারী কিন্তু আমিও মানুষ

আমি নারী কিন্তু আমিও মানুষ

এই ৩০ মিনিটের মধ্যে রুহির সম্পূর্ণ জীবন বদলে গেলো। খুব বেথা হচ্ছে তার অসহ্যকর যন্ত্রনা আগে এমন কখনও হয়নি। ৩০ মিনিট যাবৎ কান্না করতে করতে এখন সে খুব ক্লান্ত চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে কিন্তু কোনো শব্দ ছাড়া।রবিন সাহেব বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।বল্লো রুহি ফ্রেস হয়ে নে যা।রুহি বল্লো মামা কাজ টা কি তুমি ঠিক করলে? কেনো এতো কষ্ট দিলে আমায় কি করেছিলাম? আমি তো তোমার ভাগনি তাই না। রবিন সাহেব হেসে বল্লো কে বলেছে তুই আমার ভাগনি এসব কথা আমার কাছে খাটবে না।যা গোসল করে নে আর হিম আমাদের মধ্যে যা হয়েছে এসব কাউকে বলবি না এখন থেকে আমার যখন ইচ্ছে হবে তোকে এভাবে আদর করবো বলে রবিন সাহেব রুহির রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

রবিন সাহেব রুহির আপন মামা।রুহির বয়স ১৫ তার মা বেড়াতে পাঠিয়েছে তাকে তার মামা বাড়ি।কিছুদিন আগে রুহি অসুস্থ হয়েছিলো ডাক্তার বলেছেন ওয়েদার চেন্জের একটু দরকার আছে তাই রুহির মা তাকে তার মামা বাড়ি কলকাতায় পাঠিয়েছে।রুহির মামা রবিন সাহেব একজন বিজনেসম্যান তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে কলকাতাতেই থাকে। রুহির মামা রুহির মা কে বলেছিলো কলকাতা পাঠাতে রুহি কে। রুহির ভাল লাগবে।

রুহি বাথরুমে গেলো।শরীরে পানি ঢাললো কিন্তু কিছুতেই কষ্ট কমছে না খুব ব্যাথা হচ্ছে তার। সে বাথরুম থেকে বের হলো খুব কষ্ট হচ্ছে তার সে হাঠতে পারছে না ব্যাথা নিয়ে সারারাত কান্না করতে করতে।পরদিন সকালে রুহির মামি তাকে নাস্তার টেবিলে ডাকতে এলো রুহি বল্লো সে খাবে না।সকালে না খেয়ে রইলো।রুহির মামি রবিন সাহেব কে ফোন দিয়ে বললো যে রুহি কিছু খায়নি রুহির মামা বুঝতে পারলো সে বললো যে ওরে জোর করে খাওয়ায় আপা শুনলে রাগ করবে।রুহির মামি রুহির রুমে খাবার নিয়ে এসে বললো নেও রুহি খেয়ে নেও তোমার মামা রাগ করছে।রুহি অল্প কিছু খাবার তার মামার ভয়ে খেলো।

রাত হয়েছে রুহি রুমের দড়জা বন্ধ করে কান্না করতেছে খুব মনে পরছে তার মায়ের কথা।রাত ২ টা বাজে হঠাৎ রুমের দড়জায় ঠকঠক শব্দ রুহি কিছুক্ষণ পর ভয়ে ভয়ে গেট খুল্লো খুলে দেখে তার মামা রুহির গা ভয়ে শিহরে উঠলো।রবিন সাহেব রুমে ডুকেই দড়জা লাগিয়ে দিলো।রুহি বুঝতে বাকি রইলো না যে গতকালের মত আজও তার সাথে খারাপ কিছু করবে তার মামা! দড়জা বন্ধ করার সাথে সাথে আবার শুরু হলো রুহির উপর তার মামার পশুর আচরণ।রুহি কান্না করছে তার মামার পায়েও পরেছে কিন্তু পশুর দয়া হয়নি।রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে রবিন সাহেব বলে যায় রুহির গালে ধরে যে রুহি মামুনি এ কথা ভুলেও তোমার মামি আর মায়ের কানে দিও না তাহলে এর থেকে বেশি কষ্ট দিবো।রবিন সাহেব বের হয়ে যাওয়ার পর রুহি রুমের দড়জা বন্ধ করে চিৎকার করে কান্না করে। তার মায়ের কাছে যেতে চায় সে, এখানে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

পরদিন সকালেও রুহি নাস্তা করতে বাইরে আসে না।তার মামা অফিস চলে যায়।তখনই রুহির মায়ের ফোন আসে।রুহির মামি রুহিকে এসে বলে রুমি মামুনি তোমার মা ফোন দিছে কথা বলো।রুহি তারাতারি ফোন ধরে এরপর রুহির মা তাকে কেমন আছে জিগেস করার পরই সে কান্না শুরু করে দেয় রুহির মা বলে কি রে মা কাদছিস কেনো রুহি বলে মা আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও থাকব না এখানে খুব কষ্ট হচ্ছে।রুহির মা বলে আরও তো ১৫ দিন থাবকি তারপর তোর মামা তোকে দিয়ে যাবে বাংলাদেশে।রুহি বল্লো মা তুমি আজই নিয়ে যাও আমাকে প্লিজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এখানে থাকলে আমি মরেই যাব।রুহির মা বল্লো আচ্ছা আমি তোর মামার সাথে কথা বলছি তুই কাদিস না মা।এই বলে ফোন রেখে দিলো।

রুহির এমন পরিবর্তন তার মামি মনিষা খুব অবাক হলো যে রুহি যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে আমাকে বের করতেই হবে।মনিষা রুহি কে জিগেস করল কি হয়েছে রুহি বলো আমাকে রুহি তার মামার ভয়ে কিছু বললো না শুধু বললো মামি আমি মায়ের কাছে যাব।একথা বলেই কান্না শুরু করল।মনিষা বললো মামুনি কেঁদো না তোমার মামা আসলে আমি কথা বলবো।এরপর মনিষা বললো রুহি আমি একটু ঘুমাবো তিতিনের জ্বর ২-৩ যাবৎ ওর জন্য রাতে ঘুমাতে পারি না সারারাত মাথায় পানি পট্টি দিতে হয়, সারারাত লাইট জ্বলে তোমার মামা ঘুমাতে পারে না তাই সে গেস্ট রুমে ঘুমায়।এখন তিতিন ঘুমিয়েছে তাই আমিও একটু ঘুমাবো তোমার কিছু লাগলে আমাকে বা বোয়া বইলো এই বলে মনিষা চলে গেলো।রুহি এখন বুঝতে পারলো তার মামি কেনে যানে না এসব।

রবিন সাহেব বাসায় এলো। রাতে খাবারের সময় মনিষা রবিন কে বললো যে আপা ফোন দিয়েছিলো রুহিকে বাংলাদেশে দিয়ে আসতে বলেছে।রবিন সাহেব রুহির দিকে তাকিয়ে বললো মাত্রই তো আমার মামুনি টা এসেছে আরও কিছুদিন থাক।তখনই রুহির মা রবিনের ফোনে ফোন দিলো বললো সে যাতে রুহিকে দিয়ে আসে। রবিন তাকে মিথ্যে বললো যে ৭ দিনের মধ্যে কোনো ভাবেই বাংলাদেশে যাওয়া সম্ভব না বাস সমিতি স্টাইক করেছে।এই বলে ফোন রেখে দিলো। একথা শুনে রুহি কান্না করতে করতে না খেয়ে রুমে চলে গেলো।

আজ তিতিনের জ্বর একটু কম তারপর ও রবিন গেস্ট রুমে ঘুমাতে যাচ্ছে।মনিষা নিষেধ করলো সে বলে যে কাল আমার অনেক ইম্পোরটেন্ট মিটিং আমাকে ঘুমাতে মনিষা আর কোন কথা বলে না। এরপর রবিন রুহির রুমে ঢুকে কিন্তু আজ দড়জা লাগাতে ভুলে যায়।তারপর তার অমানসিকতা শুরু করে দেয় রুহি কান্না করে তারপর ও ছারে না তাকে।৫ মিনিট পর মনিষার মনে পরে আজ রবিন দুধ খায়নি আর রাতে দুধ না খেলে তার ঘুম আসে না।তাই মনিষা এক গ্লাস দুধ নিয়ে গেস্ট রুমে যায় গিয়ে দেখে রবিন নেই। পরে ভাবলো হয়তো বাথরুমে কিন্তু সেখানেও নাই।তারপর সে ছাদে যাইতে লাগলো কারন রবিন মাঝে মাঝে ছাদে গিয়ে ড্রিংকস করে। মনিষা ছাদে যাওয়ার আগে ভাবলো রুহি কে একটু দেখে যাই ঘুমিছে কিনা মেয়েটা ২ দিন যাবৎ কান্না করছে।রুহির দড়জার সামনে যাওয়ার পর রুহির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলো মনিষা তাই তারাতারি নক না করেই ভয় পেয়ে দড়জা খুলে রুমে ঢুকেই লাইট জ্বালিয়ে দিলো।এরপর মনিষা পুরো শকড কি দেখছে সে এসব। মনিষা রবিন কে একটা জোরে চর মারল তারপর রুহি মনিষাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো মনিষা রবিন কে বল্লো তুই অমানুষ তা তো আমি আগে থেকে জানি কিন্তু এতটা নরপিশাচ তা তো জানতাম না।এরপর রুহিকে নিয়ে মনিষা বের হয়ে গেলো।পিছন পিছন রবিন গেলো।

মনিষাকে রবিন বললো দেখো আমি কিছু করিনি সব ঐ মেয়ে করছে।মনিসা বললো তুমি থামো তুমি যে খারাপ তোমার চরিত্র খারাপ তা তো আমি জানতাম কিন্তু এতোটা পশু কি ভাবে হলে তুমি??তোমার জন্য বাসায় কোনো কাজের মেয়েও রাখা যায় না কারন তুমি দুশ্চরিত্র। শেষ পর্যন্ত নিজের ভাগনী কে!!!!যে কিনা তোমার আপন মায়ের পেটের বোনের মেয়ে তোমার মেয়েতূল্য তার সাথে এমন করতে বুক কাপলো না ছি….!!! রবিন তখন চিৎকার করে বললো ও আমার ভাগনি না ও আমার আপার মেয়ে না। মনিষা বললো মানে কি তোমার…????

রবিন বললো রুহি আমার আপন ভাগনি না।মনিষা বললো মাথা ঠিক আছে তোমার??রবিন বললো আমি সত্যি বলছি রুহি আমার আপার মেয়ে না।তোমার বিশ্বাস না হলে আপা কে জিগেস করতে পারো।এর জন্যই তো দুলাভাই রুহিকে দেখতে পারে না। এর বেশি আমার বলার কোনো ইচ্ছে নেই।মনিষা বলে ও যেই হোক না কেনো ও একটা বাচ্চা মেয়ে সম্পর্কে তোমার ভাগনি তুমি কি সব মানবিকতা ভুলে গেছো??এরপর মনিষাকে রবিন একটা চর মেরে বললো তুই এসব কাউকে বলবি না আর রুহি এখানেই থাকবে এখন থেকে যা হবে তোর সামনে হবে।এটা বলে চলে গেলো রবিন।মনিষা মেঝে তে বসে কাঁদতে লাগল যে একটা মানুষ কি করে এতো পাষাণ হতে পারে।
রুহি দড়জার পাশে লুকিয়ে সব শুনছিলো।তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছিলো আমি আমার মায়ের মেয়ে না তো কার মেয়ে আমি??কি আমার পরিচয়??

পরদিন সকালে রবিন অফিস চলে গেলো।তারপর মনিষা রুহির রুমে আসলো এসে রুহি কে বললো মা রুহি তাড়াতাড়ি কাপড় গুছিয়ে নে।রুহি বললো কেনো মামি??মনিষা উত্তর দিলো তোকে তোর মায়ের কাছে বাংলাদেশে নিয়ে যাবো। তোকে আর এখানে এক মুহূর্তের জন্যও এই নরকে রাখবো না।রুহি তার মামিকে জরিয়ে ধরে কান্না করল।তারপর বললো কিন্তু মামি ঐ লোকটা যদি তোমাকে কিছু করে?? কি করবে ও মারবেই তো আর তো কিছু করতে পারবে না। তুই কথা না বলে রেডি হয়ে নে।

মনিষা রুহিকে নিয়ে বাসে উঠার পর রবিনকে ফোন দিলো।ফোন দিয়ে বললো আমি রুহি নিয়ে ওর মায়ের কাছে যাচ্ছি তোমার মত পশুর সাথে ওকে আর থাকতে দিবো না।রবিন রেগে বললো তোর এত বড় সাহস কিভাবে হলো এখনও সময় আছে ফিরে আয়।মনিষা বললো আর ফিরে আসা সম্ভব না।এই বলে ফোন কেটে দিলো।এরপর রুহি কে বললো রুহি একটা জিনিষ চাইবো দিবি??রুহি বললো বলো মামি।মনিষা বললো তোর মামা তোর সাথে যা করেছে আপা কে বলিস না দয়া করে প্লিজ মা আপা সইতে পারবে না। রুহি মাথা নাড়ালো কারন সে মুহূর্তে তার ঠিক কি বলা উচিত সে বুঝে উঠতে পারছিলো না।

রুহি ও মনিষা পরদিন বাংলাদেশে পৌছালো। তারা রুহিদের বাসায় গেলো রুহির মা রুহিকে দেখে অবাক।রুহি তার মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।রুহির মা মনিষাকে জিগেস করল রবিন না কাল ফোনে বললো ১৫ দিনের আগে আসা সম্ভব না তাহলে কি ভাবে এলে তোমরা?? মনিষা বললো ইয়ে মানে আপা রুহি খুব কান্নাকাটি করছিলো তাই নিয়ে এসেছি। রুহির মা বললো ভাল করেছিস।মনিষা ও রুহি ফ্রেশ হতে বলে রুহির মা খাবার গরম করতে গেলো।তখন রুহির বাবা আলহাজ্ব সাহেব বাসায় আসলো।খাবার টেবিলে তিনি রুহিকে দেখে বললো বাহ্ নবাবজাদি দেখি চলে আসছে।কেনো আর ২-৩ মাস থেকে আসতে পারলি না ওখানে।রুহির কথা টা শুনে খুব কষ্ট লাগলো সে না খেয়ে রুমে চলে গেলো।

রাতে রুহির মা রুহির রুমে এসে রুহি ঘুম পারানোর জন্য মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। তখন রুহি জিগেস করল আচ্ছা মা একটা সত্যি কথা বলবা?আমি তোমাকে বিশ্বাস করি জানি মিথ্যা বলবা না তারপরও।হিম বল কি প্রশ্ন। রুহি বললো আমি তোমার আর বাবার মেয়ে না তাই না মা।রুহির মা এ কথা শুনে রুহির মাথা থেকে হাত সরিয়ে বললো কে বলছে তোকে তুই আমার মেয়ে। তারপর আচল দিয়ে চোখ মুছতে লাগলো।তখন রুহি আবার বললো মা সত্যি বলো।রুহির মা বললো আমার রিমনের আগে আমার কোনো বাচ্চা ছিলো না। বাচ্চার খুব শখ ছিলো। তাই তোর বাবা আর আমি বাচ্চা এডোপ্ট নেওয়ার কথা ভাবি।

একদিন আমি অসুস্থ হয়ে যাই হসপিটালে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে জানি এক মহিলা বাচ্চা জন্ম দিয়ে মারা গেছে তার পরিবারে কেউ আছে কি না জানে না কেউ।তখন তোকে দেখে খুব মায়া হয় আমার তাই তোকে এডোপ্ট নেওয়ার কথা ভাবি কিন্তু তোর বাবা রাজি থাকে না।কারন তোর কোনো পরিচয় আমাদের জানা ছিলো না।তারপরও তোর বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি তোকে এডোপ্ট নেই।সে তোকে প্রথমে দেখতেই পারত না যখন তোকে একটু পছন্দ করতে শুরু করে ঠিক তখনই রিমনের জন্ম হয়।তারপর সে অনেকবার আমাকে জোর করে যাতে আমি তোকে এতিমখানায় দিয়ে দেই।কিন্তু আমি তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসিরে মা তাই ঝগড়া করেও তোকে নিজের কাছে রেখেছি।মায়ের এসব কথা শুনার পর রুহির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে সে কাঁদতে কাঁদতে মেঝে পরে যায়।

রুহির কাছে তখন সব পানির মত পরিষ্কার হয়ে যায় কেনো তার বাবা তাকে ভালবাসে না,কেনো তার থেকে রিমনকে বেশি ভালবাসে,কেনো তার পক্ষ নিয়ে কথা বললে তার মা কে তার হয়ে বকা খেতে হয় তার বাবার কাছে।রুহি তার মায়ের কাছে তার আসল বাবা মায়ের কথা জানতে চাইলো তিনি বল্লেন জানা নেই তার হসপিটালের কেউও জানতো না।পরে রুহি আর কোনো কথা না বলেই বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পরল।

আজ রুহির ১০ ম শ্রেনির প্রথম ক্লাস। রুহি স্কুলে গেলো।তাদের ক্লাসে নতুন এক ছেলে এসেছে।ছেলেটা যেমন পড়াশোনায় ভাল ঠিক তেমনি খুব বুদ্ধিমান ও মিশুক প্রকৃতির।ছেলেটার নাম নিশান। রুহি লাস্টে গিয়ে বসে রইলো।ছেলেটার চোখ হঠাৎ রুহির দিকে পরল।দেখলো যেখানে সবাই দুষ্টামি করছে সেখানে রুহি মনমরা হয়ে বসে আছে।নিশান রুহির পাশে গিয়ে বসলো তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করল কিন্তু রুহি কিছুতেই বললো না।কারন তার মনে ভয় চলে আসছিলো হয়তো সব ছেলেরাই খারাপ।সেদিন রুহির নিশানের সাথে কোনো কথা হলো না।

রাতে রুহি রিমন ও তাদের মা বাবা খাবার খাচ্ছিলো।তখন হঠাৎ করে আলহাজ্ব সাহেব রুহির মা কে বলে উঠল এটাকে আর কত দিন এভাবে ঘারের উপর বসিয়ে খাওয়াবে এবার বিদায় করার আয়োজন করো।রুহির মা জিগেস করল কি বলতে চাও তুমি।আলহাজ্ব সাহেব বল্লো আমি চাই রুহির বিয়ে হোক।একথা শুনে রুহির খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো।রুহির মা বললো মাথা ঠিক আছে তোমার এইটুকু বাচ্চা মেয়ের কিভাবে বিয়ে দিবো যে নিজের খেয়ালই ঠিক মত রাখতে পারে না অন্যর খেয়াল কিভাবে রাখবে?আলহাজ্ব সাহেব বলে উঠলো তোমাকে যখন বিয়ে করেছিলাম তুমিও ওর বয়সী ছিলে তুমি পারলে ও কেনো পারবে না।তখন রুহির মা বললো আমাকে যখন বিয়ে করেছিলে আমার বয়স ১৫ না ১৮ ছিলো।আলহাজ্ব সাহেব বলে এতো বুঝে লাভ নেই আমার বলেছি যখন বিয়ে হবে তার মানে হবে এটাই ফাইনাল ওকে বেশিদিন ঘরে রেখে আমি আমার নাক কাটাতে চাই না।এই বলে আলহাজ্ব সাহেব উঠে গেলো।রুহির চোখের পানি টপটপ করে সামনে রাখা খাবার টেবিলের উপর পরতে লাগলো।রুহির মা রুহির মাথায় হাত রেখে বললো চিন্তা করিস না তোর বাবার ইচ্ছা কখনই পূরণ হবে না।

পরদিন রুহির ক্লাস টেস্ট ছিলো সে কিছু পড়েনি একদিন টেনশনে তাই পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখতে পারল না তেমন।৭ দিন পর রেজাল্ট দিলো রুহির রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছে।রেজাল্ট কার্ড সাইন করাতে নিয়ে গেলো তার বাবার কাছে। তার বাবা তাকে ইচ্ছে মতো বকা দিলো।আর বললো যদি নেক্সট পরীক্ষারর রেজাল্ট এমন হয় তবে তার বিয়ে দিয়ে দিবে।রুহি পরদিন স্কুল ছুটির পর বাসায় না গিয়ে কান্না করছিলো মাঠে বসে তখন নিশান যাচ্ছিলো নিশান তাকে জিগেস করল কি হয়েছে সে কিছু তেই বলতে চাইলো না পরে নিশান জোর দিয়ে জিগেস করলে রুহি বলে দিলো তার বাবা তাকে যে কথা গুলো বলেছে।নিশান বললো তুমি বোকাদের মত কান্না কেনো করছো আর টেনশন কেনো নিচ্ছো।তুমি পড়াশোনা শুরু করে দাও খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ো।কোনো কিছু তে সমস্যা হলে আমাকে জানাও আমি হেল্প করব।

রুহি ঐ দিন বাসায় গিয়ে নিশানের কথা মত পড়া শুরু করল কিন্তু কিছুতেই তার কিছু মাথায় ঢুকছে না বারবার তার মামার পশুর মতো আচরণ গুলা মনে পরছিলো তাই সেদিন আর কিছু পড়া হলো না তার। পরদিন স্কুল ছুটির পর নিশান রুহিকে নিয়ে নদীর পাড়ে গেলো ভাবল আজ রুহির পড়াশোনায় সে তাকে হেল্প করবে। নিশান রুহি কে ১ টা অংক ৫ বারের বেশি বুঝিয়েছে কিন্তু রুহি একবারও বুঝেনি কারন সে অন্য মনুষ্ক ছিলো।এরপর রুহিকে নিশান খুব বকা দিলো যে এটা আমার ঘুমানোর টাইম তা রেখে তোমাকে হেল্প করছি আর তুমি কি না কিছু শুনতেই চাচ্ছো না।তুমি মনোযোগী হয়ে আমার কথা শুনার পর না বুঝলে বারাবার বোঝাতাম কিন্তু তুমি তো মনোযোগীই না।এরপর রুহি মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো।নিশান বুঝতে পারল রুহি মানসিক ভাবে কষ্টে আছে।নিশান বই খাতা বন্ধ করে বললো রুহি তুমি কি কোনো কারনে খুব ডিপ্রেশনে আছো??রুহি কিছু বললো না।তারপর নিশান বললো আমি প্রমিস করছি কাউকে কিছু বলবো না তুমি বলো আমাকে আমি তো তোমার ফ্রেন্ড তাই না।অনেক বোঝানোর পর রুহি নিশান কে সব বলতে রাজি হলো।

নিশানকে সে তার মামার কাছে ধর্ষিতো হওয়া থেকে সে যে তার বাবা মায়ের আসল সন্তান না তা পর্যন্ত বলে দিলো।রুহি যখন বলছিলো কথা গুলো নিশানের প্রচন্ড রাগ উঠছিলো রুহির মামা আর বাবার উপর।নিশান রুহির কথা গুলো শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলো না।রুহির কথা শেষ হলে রুহি নিশান কে বললো আমি জানি এখন আর তুমি আমাকে ফ্রেন্ড ভাববে না আমাকে খারাপ ভাববে আমার সাথে আর মিশতে চাইবে না।তখন নিশান বললো দেখো রুহি আমি তোমার ফ্রেন্ড ছিলাম আছি থাকবো।কিন্তু তার আগে তুমি আমাকে বলো তুমি কি তোমার মা কে এ ব্যাপারে সব খুলে বলছো?থানায় তোমার মামার নামে মামলা করছো?ঐ জানোয়ার টার শাস্তি পাওয়া উচিত।রুহি বললো যে সে তার মা কে কিছু জানায়নি।তখন নিশান আরও রেগে গেলো বললো কেনো রুহি ঐ জানোয়ার কে তুমি শাস্তি দিবা না? তুমি তোমার মা কে না বললে আমি বলে দিবো তোমার ন্যায় পাওয়ার অধিকার আছে।তখন রুহি বললো প্লিজ তুমি মা কে কিছু বলো না।তুমি কিন্তু প্রমিস করছো।

সেদিন নদীর পাড় থেকে বাসায় ফিরতে রুহির একটু দেড়ি হয়ে গেলো।রুহি বাসায় ঢুকেই দেখলো তার বাবা সোফায় বসা।সে ভয় পেয়ো গেলো তার বাবা তাকে জিগেস করল মহারাণী আপনার স্কুল কখন ছুটি হয়েছে?রুহি ভয়ে ভয়ে বললো বাবা ২ টায়। ততক্ষনে রুহির মা চলে আসলো।রুহির বাবা বললো ২ টায় শেষ হইছে স্কুল এখন কটা বাজে?রুহি বললো বাবা ৪ টায়।আলহাজ্ব সাহেব রেগে বললো এ দু’ঘন্টা কই ছিলি?রুহি বললো যে, এক ফ্রেন্ড তাকে অংক বুঝাচ্ছিলো।তখন আলহাজ্ব সাহেব আরও রেগে বললো তোকে স্যার দিছি বাসায় পড়ানোর জন্য তারপরও যখন তোর ফ্রেন্ডের হেল্প লাগে তাহলে আমি কাল থেকে তোর স্যার কে আসতে নিষেধ করে দিবো। এরপর তিনি রুহির মা কে বললো, দেখে নিও তোমার এ মেয়ে একদিন আমার নাক কাটাবে একথা বলে চলে গেলো।এরপর রুহিকে তার মা হাত মুখ ধুয়ে খেতে বললো।এরপর রুহি জিগেস করল মা দেড়ি করেছি বলে তুমি বকা দিবা না?রুহির মা তার মাথায় হাত দিয়ে বললো বকা কেনো দিবো আমি জানি আমার রুহি খারাপ কিছু করেনি।

রুহি আজ রাতে পড়তে বসেছে তার মনটা গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ একটু হালকা।কারন সে তাকে সাপোর্ট করার মত একজন মানুষ পেয়েছে আর সে হচ্ছে নিশান।রুহি নিশানের কথা মত পড়া শুরু করল মনোযোগ দিয়ে।তখন রুমে রুহির মা আসলো,এসে বললো রুহি শোন কাল তোর ঐ ফ্রেন্ডকে বলিস আমাদের বাসায় আসতে। রুহি বললো আচ্ছা মা।রুহি পরদিন সকালে স্কুলে গেলো। আজ থেকে রুহি আর নিশান ক্লাস শুরু হওয়ার ১ ঘন্টা আগেই স্কুলে যাওয়া শুরু করলো কারন ছুটিরপর যদি কখনও বাবা জানে যে রুহি দেড়ি করে বাসায় যায় তবে অনেক রাগ করবে।ঐ ১ ঘন্টা টাইমে নিশান রুহিকে পড়া গুলো বুঝিয়ে দিতো।এভাবে কিছু দিন গেলো আস্তে আস্তে নিশান রুহির বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠলো।এখন রুহি একটু একটু হাসতে শিখেছে সে নিশানের সাথে সব কথা শেয়ার করে।কিন্তু তার সাথে তার মামা যা করেছে সে কথা কিছুতেই ভুলতে পারে না। এটা ভুলা কখনই কোনো মেয়ের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু সে কখনও নিশান কে একথা বুঝতে দিতো না।কারন এর আগে অনেকবার নিশান তাকে একথা তার মা কে জানাতে বলেছে এবং মামলা করতে বলেছে কিন্তু রুহি তা করেনি।

পরীক্ষা শেষ হলো। আজকে রুহির রেজাল্ট দিলো রুহি খুব ভাল রেজাল্ট করেছে এবার। সে নিশানকে অনেক ধন্যবাদ জানালো।এরপর রেজাল্ট কার্ড নিয়ে তার বাবাকে দেখালো।আলহাজ্ব সাহেব রুহি কে বললো এর থেকে ভাল করতে হবে কিন্তু রুহির বিশেষ কোনো প্রশংসা করল না রুহির খারাপ লাগলো খুব।কিন্তু রুহির মা রুহির খুব প্রশংসা করল।তিনি বললো তাকে একটা নতুন ড্রেস কিনে দিবে। রুহি পরদিন কোনো এক কারনে স্কুলে যেতে পারলো না।রুহির কাছে নিশানের একটা নোট খাতা ছিলো যা নিশানের খুব দরকার ছিলো সেদিনই। তাই নিশান সেদিন রুহুিদের বাসায় আসল কিন্তু তখন রুহির বাবা বাসায় ছিলো।দড়জা রুহুিরর মা খুললো।নিশান তার নাম বললো আর বললো সে রুহির ফ্রেন্ড।রুহির মা তাকে বসতে বললো।রুহির বাবাকে বললো যে এটা রুহির ফ্রেন্ড।নিশান আলহাজ্ব সাহেব কে সালাম দিলো কিন্তু তিনি ভেতরে চলে গেলো।এরপর রুহি নিশান কে খাতা দিলো।রুহির মা নিশান কে ধন্যবাদ দিলো নিশান চলে যাওয়ার আগে বললো বাবা তুমি আমার মেয়েটার অনেক হেল্প করো তুমি সত্যিই ভাল।নিশান চলে যাওয়ার পর আলহাজ্ব সাহেব রুহুিরর মা কে বললো বাহ ভালোই তো এখন ছেলেরা ও বাসায় আসে আমার আর কোনো মানসম্মান রইলো না।

আস্তে আস্তে ৩ মাস কেটে গেলো।২ দিন যাবৎ রুহির শরীরটা খুব খারাপ সে স্কুলেও যেতে পারেনি।কিছু খেতে পারছে না শুধু বমি করছে।রুহিকে তার মা ডাক্তারেরর কাছে নিয়ে গেলো।যার ভয় ছিলো ঠিক তাই হলো।ডাক্তার জানালো রুহি প্রেগন্যান্ট।রুহুির মা একথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলো না তার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো।

হসপিটাল থেকে বাসায় আসার পর রুহি নিজ রুমে কাঁদতে থাকে। তখন রুহির মা তার রুমে যায় রুহি কে বলে, “বল এত বড় সর্বনাশ তোর কে করেছে বল”রুহি কিছুতেই বলে না পরে রুহির মা তাকে অনেক মারধোর করে তারপরও রুহি কিছু বলে না।রুহির কান্নার শব্দে তার বাবা তার ঘরে চলে আসে এসে দেখে রুহির মা রুহিকে মারছে।আলহাজ্ব সাহেব পুরোপুরিভাবে অবাক কারন এর আগে কখনও মিরা রুহিকে মারেনি।তিনি জিগেস করে মিরা কি হয়েছে কেনো মারছ অসুস্থ মেয়েটা কে এভাবে??তখন রুহির মা বলে নিজের মেয়েকেই জিগেস করো ও কি করেছে?এরপর মিরা আলহাজ্ব সাহেব কে বলে রুহির প্যাগনেন্সির কথা।আলহাজ্ব সাহেব একথা শুনে রাগে পুরাই আগুন।সে বলে আমি জানতাম ও এমন টা করবে তখনই বলছিলাম কার না কার মেয়ে নিজের বাড়ি নিয়ো না আর এখন দেখেছো আমার কত বড় সর্বনাশ হলো।মিরা বললো কে করেছে এমন,কেনো এমন করলো?তখন আলহাজ্ব সাহেব বললো আর কে করবে তোমার মেয়ের বন্ধু নিশান। রুহির মায়েরও তাই মনে হলো কারন রুহির একমাত্র নিশান ছাড়া অন্য কোনো ছেলে ফ্রেন্ড নেই।

পরদিন সকালে নিশানকে মিথ্যা কথা বলে বাসায় ডাকলো রুহির বাবা মা।ফোনটা তারা রুহিকে দিয়ে জোর করে করিয়ে ছিলো।এরপর নিশান বাসায় এলো।রুহির মা তাকে জিগেস করল সে কিছুই বললো না কারন সে রুহি কে প্রমিস করছিলো।এরপর আলহাজ্ব সাহেব রুহির সামনে নিশানকে ইচ্ছে মত মারলো নিশান তারপরও কিছু বললো না রুহি কিছু বললো না শুধু বললো ওকে ছেড়ে দাও আর মেরো না।এক পর্যায় নিশানকে মারতে মারতে নিশানের কপাল কেটে রক্ত পড়তে লাগলো। তখন আর রুহি চুপ থাকলো না সে বলে উঠল চিৎকার করে “মা আমার এ সর্বনাশ তোমার ভাই রবিন করেছে”রুহির মা রুহির হাত ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে পরলো।রুহির বাবা নিশানকে মারা বন্ধ করে রুহির কাছে গিয়ে রুহিকে একটা চর মেরে বললো “তোর মাথা ঠিক আছে,তুি জানিস তুই কি বলছিস রবিন তোর মামা তার নামে কিভাবে এতো বাজে কথা বলিস তাও এই ছেলেকে বাচাতে “তখন নিশানও আর চুপ রইলো না সেও বললো আন্টি আঙ্কেল রুহি সত্যি বলছে এটা ওর মামা করেছে। তখন রুহির বাবা নিশানকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো।রুহি নিজের রুমে গেলো।

রুহি কান্না করছে কিন্তু শব্দ হচ্ছে না।রুহির মা তার ঘরে আসলো এরপর বিছানার একপাশে বসে রুহিকে বললো আমি জানি আমার ভাইয়ের চরিত্র খারাপ কিন্তু তাই বলে নিজের ভাগনির সাথে না না এ আমি বিশ্বাস করি না।তখন রুহি তার মা কে বললো মা আমি সত্যি বলছি এটা তোমার ভাই করেছে বিশ্বাস না হলে মনিষা মামিকে জিগেস করো।মিরা মনিষাকে ফোন দিলে মনিষা বলে আপা এটা আপনার ভাই করেনি।কিন্তু রুহির মা বুঝে যায় রবিনই এই কাজ করেছে।

পরদিন মিরা রুহিকে নিয়ে থানায় যায় মামলা করতে।মামলা করে বাসায় আসে। আলহাজ্ব সাহেব খুব রাগারাগি করে যে কেনো মামলা করলো হেন তেন কিন্তু মিরা তার কোন কথায় কান দেয় না।মিরা রুহিকে সাপোর্ট করছে।বিকেলে রুহিকে নিয়ে তার মা হসপিটালে যায়। গিয়ে ডাক্তারকে বলে রুহির অ্যাবোয়েশন করাতে হবে।ডাক্তার জানায় এতে রুহির প্রবলেম হবে।তারপরও অ্যাবোয়েশন করানো হয় রুহির। রুহি অল্পতে জানে বেচে যায়।রুহির মা ও রুহি বাসায় আসে। রবিন মিরা কে ফোন দিয়ে বলে “আপা তোর মেয়ের সাথে যা হয়েছে আমিই করছি কিন্তু তোর কিছু করার তোর কাছে প্রমান নেই তুই মামলা তুলে নে”।মিরা বলে আমি মামলা তুলে নিতে পারবো না।

১৫ দিন পর পুলিশ কোর্টে মামলা টা না দিয়ে মামলাটা বন্ধ করে দেয়।পুলিশ মিরা কে বলে কোনো প্রমান নেই তাই মামলা বন্ধ করতে হবে।মিরা অনেক রিকুয়েস্ট করে কিন্তু পুলিশ তার একটা কথাও শুনে না।রবিন পুলিশকে ৫,০০০০০ টাকা ঘুষ দেয় যাতে মামলা টা বন্ধ হয়ে যায়।নিরুপায় মা ও মেয়ে বাসায় ফিরে আসে।এরপর আলহাজ্ব সাহেব তাদের বলে তোমরা মা মেয়ে অনেক করেছে আমিও অনেক দেখেছি।এখন যা হবে আমার ইচ্ছায়ই হবে।আগামী ৭ দিনের মধ্যে তোমার এই মেয়েকে আমি আমার বাড়ি থেকে বের করতে চায়।ওর বিয়ে দিয়ে দিবো এমন আগাছা আমার বাড়ি থাকতে পারবে না।এই আমার ফাইনাল ডিসিশন।এই বলে আলহাজ্ব সাহেব চলে যায়।

রুহি নিজের বিয়ের কথা শুনে নিজের স্বপ্নগুলা ভাঙ্গতে দেখতে শুরু করলো।তার মনে হলো তার স্বপ্ন গুলো একটা একটা করে সব ভেঙ্গে যেতে লাগলো।একটু পর মিরা রুমে এলো।রুহি বললো মা তুমি বাবাকে একটু বোঝাও আমি এখন বিয়ে করতে চাই না পড়াশোনা করতে চাই আমার স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে চাই।এরপর রুহি বললো মা তোমারও কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি??তখন মিরা রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আমি তোর বাবাকে বোঝাবো কিন্তু আমি তোকে এখনও পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করতে পারছি না।একথা বলে রুহির মা চলে গেলো।রুহির নিজেকে এই বিশাল দুনিয়ায় অসহায় লাগতে লাগলো। পরদিন আলহাজ্ব সাহেব কে রবিন ফোন দিলো।ফোন দিয়ে বললো :

রবিন:দুলাভাই শোনালাম আপনার ঐ চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন।

আলহাজ্ব সাহেব: (খুব সুন্দর মতো রবিনের সাথে কথা বললো কারন তার মনে হয় এই কাজ নিশান করেছে রবিন করতে পারে না)তাই তিনি রবিন কে বললো হুম রবিন তুমি ঠিক শুনেছো।

রবিন:ছেলে কি পেয়েছেন?

আলহাজ্ব সাহেব:না পাই নি ছেলে কি গাছে ধরে নাকি যে এতো তাড়াতাড়ি পাবো?

রবিন:দুলাভাই আমার কাছে কিন্তু অনেক ভাল একটা ছেলে আছে।যদি আপনি চান আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি। কত কিছুই তো আপা আর আমার আদরের ভাগনি রুহি আমার সাথে করল। কত অপবাদ দিলো তারপরও আমি ওর মামা হই আপন মামা না তো কিন্তু সম্পর্কে ও আমার বোনের মেয়ে তাই আমি ওর ভাল চাই।

আলহাজ্ব সাহেব:হ্যা ভাই আমি জানি তুমি খুব ভালো মানুষ। তুমি ছেলে ঠিক করলে ভালোই হবে আমার কোন সমস্যা নেই তোমার ঠিক করা ছেলের সাথেি রুহির বিয়ে হবে।আর রুহির মা ও রুহির পক্ষ থেকে আমি মাফ চাচ্ছি।

রবিন:দুলাভাই মাফ চেয়ে ছোট করবেন না। ছেলে কলকাতায় আমার সাথে ব্যবসা করে। আমি আজই বলবো যাতে কাল বাংলাদেশে যায় পরশুই যাতে বিয়ে টা হয়ে যায়।আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?

আলহাজ্ব সাহেব:আরেহ না না তুমি যা ভাল মনে করো তাই হবে।

আলহাজ্ব সাহেবের সাথে কথা বলার পর রবিন খুব খুশি।মনিষা জিগেস করলো কি ব্যাপার তুমি এতো খুশি কেনো আর কার বিয়ে?রবিন বললো রুহির বিয়ে আমার বিজনেস পার্টনারের ছেলের সাথে।এই বলে চলে গেলো রবিন।পরদিন রুহি ও রুহির মা জানলো কাল রুহির বিয়ে।রুহি চুপ হয়ে গেছে একদম কোনো কথা বলছে না কান্না কাটিও করছে না।মিরা একটু পরপর চোখ মুছতেছে সে অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই বিয়ে আটকাতে পারেনি।
সেদিন দুপুরে রবিন কার সাথে যেনো কথা বলছিলো।মনিষা দড়জার পাশে দাড়িয়ে সব শুনলো।রবিন ফোনে বললো আরে মিরাজ সাহেব আপনি কোনো টেনশন করবেন না আপনার ছেলে যে খুনের আসামী,তার নামে ধর্ষণ মামলা আছে এগুলো মেয়ের বাড়ির মানুষ জানবে না।আর একবার বিয়ে হয়ে গেলে তখন কিছু করার ও থাবকে না তাদের।এটা শুনে মনিষার চোখ কপালে উঠলো গেলো যে রুহির আগেও সর্বনাশ করেছে তার স্বামী আর এখনও করতে চলেছে।যে করেই হোক রুহিকে তার বাচাতে হবে।একটু পর যখন রবিন বাসার বাইরে গেলো তখন মনিষা মিরাকে অন্য নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বললো:

মিরা:হ্যালো কে?

মনিষা:আমি মনিষা আপা।

মিরা:আমার মেয়ের জীবন তো শেষ আবার কেনো ফোন দিয়েছো।

মনিষা :আপা তুমি ফোন কেটো না।আমার কথা মনো্যোগ দিয়ে শোনো।রুহি যা বলছে তা সত্যি বলছে।রবিনই এ কাজ করেছে। আমিই রুহিকে বলতে মানা করেছিলাম।আর যে ছেলের সাথে রবিন রুহির বিয়ে হচ্ছে ও ভাল না। ও খুনের আসামি, ধর্ষণ মামলা ও আছে ওর নামে।রবিন শুধুমাত্র প্রতিশোধেরর জন্য এমন করছে কারণ তোমরা ওর নামে মামলা করেছিলে তাই ও রুহির জীবন নষ্ট করতে চায়। তুমি বিয়েটা ভাঙ্গো রুহিকে বাচাও।

এই বলে মনিষা ফোন কেটে দিলো।মিরা কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।সে তার রুহি বিশ্বাসস করেনি?তার রুহির জীবন তার ভাই নষ্ট করেছে?সে তার রুহির জন্য কিছুই করতে পারেনি।এরপর মিরা ঠিক করলো এ বিয়ে সে কিছুতেই হতে দিবে না যেভাবেই হোক বিয়ে সে আটকাবে।মিরা রুহির রুমে গিয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। বললো মা আমাকে মাফ করে দে আমি তোর জন্য কিছু করতে পারিনি।কিন্তু এখন আর এ বিয়ে হতে দিবো না।রুহি বললো মা বাবা তো শুনবে না। মিরা বললো তুই পালিয়ে যা।রুহি অবাক হয়ে বিস্ময় দৃষ্টিতে বললো মানে???
রুহির মা রুহিকে পালিয়ে যেতে বললো।রুহি বললো মা আমি তো কোনো জায়গা চিনি না তবে কোথায় যাবো পালিয়ে?রুহির মা রুহিকে বললো নিশানের ফোন নাম্বারটা আমাকে দে। রুহি নিশানের নাম্বার দিলো মিরাকে। মিরা নিশানকে বললো বাবা আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে খুব দরকার। নিশান রাজি হলো।মিরা একটা ব্যাগ বের করে রুহির যত কাপড় চোপড় ছিলো সব গুছিয়ে দিলো।এরপর বাসা থেকে কিছু খাবার পেকেট করে দিলো। এরপর রুহিকে বললো তোর বাবাকে একটা চিঠি লিখ।

রুহি একটা চিঠি লিখলো এরপর তার বাবার ড্রয়ারে রেখে দিলো। মিরা রুহিকে নিয়ে নিশানের কাছে গেলো।নিশানের কাছে মাফ চাইলো।নিশানকে বললো বাবা এই মুহূর্তে তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না।তুমি আমার মেয়েকে এখান থেকে অনেক দুরে একটা সেফ জায়গায় রেখে এসো। আমি সুযোগ পেলে কিছুদিন পর ওর সাথে দেখা করতে আসবো।এরপর নিশান ও রুহিকে নিয়ে মিরা একটা গহনার দোকানে গেলো গিয়ে রুহির বিয়ের জন্য মিরা নিজে যত গহনা বানিয়ে ছিলো সব বিক্রি করে দিলো।২,৫০,০০০ টাকার মতো পেলো।এরপর মিরার কাছে ২০,০০০ টাকা বেশি ছিলো।তা দিয়ে রুহিকে একটা ফোন কিনে দিলো। আর বললো এই ফোন দিয়ে আমার সাথে তুই কন্টাক করবি।আর বাকি টাকা নিশানকে দিলো আর বললো রাস্তায় দরকার পরলে খরচ করতে।এরপর রুহিরকে বোরকা পরিয়ে নিশানের সাথে বাসে বসিয়ে দিয়ে বললো বাবা আমার মেয়েটার খেয়াল রেখো।আর পারলে তুমি কালকের মধ্যে এখানে চলে এসো তা না হলে তোমার বাবা টেনশন করবে।

বাস ছেড়ে দিলো রুহির খুব কষ্ট হচ্ছিলো তার মা কে ছেরে যেতে। রুহি নিশানকে জিগেস করল নিশান তুই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?নিশান বললো আমরা ঢাকায় যাচ্ছি।ওখানে আগে আব্বু জব করতো আমরা ওখানে থাকতাম।আব্বু সরকারি চাকুরীজিবী তাই এখানে এসেছিলাম।শোন,আমরা ঢাকায় যে বাসায় থাকতাম তার পাশে আমার খালাদের বাসা আজকে তোকে সেখানে নিয়ে যাবো আজ না শুধু তোকে ১০ দিনের বেশি ওখানেই থাকতে হবে।রুহি বললো আচ্ছা ঠিক আছে।

রুহির মা রুহি কে দিয়ে এসে একটা ফোন দিলো রুহিকে। নিশান ফোন ধরে বললো ঢাকা যেতে এখনো ৪-৫ ঘন্টা লাগবে আন্টি।এদিকে রুহির বাবা বাসায় এসে বললো রুহি কই ওর বিয়ের গহনা কিনে এনেছি ওকে ডাকো।রুহির মা কান্নার নাটক করে বললো রুহি নেই বাসায়।আলহাজ্ব সাহেব রেগে বললো নেই মানে???কোথায় সে?মিরা বললো আমি সারা বাড়ি খুজেছি কোথাও পায়নি তাকে।এরপর রুহির বাবা পুলিশ কে ফোন দেওয়ার জন্য ড্রয়ার থেকে ডায়রি আনতে গেলেন। তিনি পুলিশকে ফোন দিতে চাইলো নিজের সম্মান বাচাতে রুহির টেনশনে নয়।কারন কাল বরযাত্রী আসবে আর আজ বিয়ে কনে গায়েব।এরপর ড্রয়ার খুলে ডায়রি বের করতে গিয়ে রুহির লিখা চিঠিটা নিচে পরলো।

আলহাজ্ব সাহেব চিঠিটা খুললেন, “বাবা আমার সালাম নিও আমি চলে যাচ্ছি। অনেক দূরে….আমাকে খোজার চেষ্টা করো… জানি চেষ্টা করবে না।কারন আমি তো তোমার নিজের মেয়ে না।আমাকে হাসপাতাল থেকে এনেছো।নিজের মেয়ে না বলে হয়তো কখনও ভালবাসোনি আমাকে। তুমি আর মা আমার জন্য অনেক করেছো তোমাদের মেয়ে না হওয়া স্বত্তেও।আর রবিন মামাই আমার সাথে খারাপ কাজটা করেছিলো আমি জানি তুমি বিশ্বাস করবে না তারপরও বলছি।আমি চাই না আমার জন্য তোমরা আর কষ্ট করো তাই আমি চলে যাচ্ছি।ভাল থেকো পারলে মাফ করে দিয়ো।ইতি তোমার নবাবজাদি “।রুহির চিঠিটা পড়ে আলহাজ্ব সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পরছিলো।তিনি সবাইকে বললো আজ থেকে ওর নাম কেউ এ বাড়িতে নিবে না। এরপর তিনি রুমে গিয়ে দড়জা বন্ধ করে দিলো।হয়তো সেদিন তিনি প্রথম রুহির প্রতি নিজের খারাপ আচরনের জন্য কষ্ট পেয়েছিলো। পরদিন সকালে মিরা রুহিকে ফোন দিলো তারা পৌছিয়েছে কি না জানার জন্য।কিন্তু কিছুতেই কল জাচ্ছিলো না কারন ফোন অফ। মিরা টেনশনে পরে গেলো। কি হলো রুহির??? নিশান রুহি কেনো ফোন ধরছে না??

মিরা রুহির টেনশনে শেষ প্রায়।সে নিজে কে নিজে দোষারূপ করতে শুরু করলো। সে নিশান কে বিশ্বাস করে ভুল করেনি তো? নিশান রুহির সাথে রবিনের মতো কিছু করবে না তো??নানান প্রশ্ন মিরার মাথায় ঘোরপাক খেতে থাকে। হঠাৎ মিরার ফোন টা বেজে উঠে মিরা তাকিয়ে দেখে রুহির ফোন।মিরা তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে।রুহি বলে মা আমার পৌছেছি।মিরা রুহির উপর রাগ করে প্রচন্ড।কেনো সে এতক্ষণ ফোন দেয়নি। রুহি তার মা কে বলে যে ফোন বন্ধ হয়ে গেছিলো।এরপর নিশান রুহির মা কে বলে সে আজ ঢাকা থেকে ফিরবে এখানে রুহির কোনো প্রবলেম হবে না কিছুদিন থাকতে পারবে।

যাদের বাড়ি রুহি থাকবে নিশান তাদের খুব ভাল মতো বুঝিয়ে বললো যাতে রুহির কোনো সমস্যা না হয়। এরপর নিশান বললো রুহি পরীক্ষাটা শেষ হলেই আমি আসবো।তুইতো এবার পরীক্ষা দিতে পারবি না। তাই পরীক্ষা শেষে আমি ঢাকায় এসে একদিনের জন্য তোকে একটা কোচিং এ ভর্তি করে দিবো আমি আগে ঐ কোচিং এ পড়তাম।তুই সেখানে ক্লাব করবি ৫-৬ মাস তারপর এখানে একটা স্কুলে আন্টিকে কোনো ভাবে একদিনের জন্য মেনেজ করে এনে ভর্তি করিয়ে দিবো।এ বলে নিশান চলে গেলো।

নিশান রুহির মায়ের সাথে রুহিদের বাসায় গিয়ে দেখা করলো।সব কিছু বললো রুহির মা নিশানের তার মেয়ের প্রতি এতো ভাল আচরণ দেখে চোখের পানি মুছতে লাগলো।রুহি যে বাড়িতে থাকে সে বাড়ি তে সদস্য সংখ্যা ৫ জন স্বামী-স্ত্রী,তাদের দুই ছেলে-মেয়ে আর একটা কাজের বুয়া।ছেলেটা ক্লাস ৬ এবং মেয়েটা রুহির ক্লাসে পড়ে।তাদের সবার সাথে রুহির খুব ভাল সম্পর্ক হয়ে গেলো।রুহি আস্তে আস্তে সবার সাথে মিশতে শুরু করলো।কিন্তু খারাপ মানুষ তো সব জায়গাতেই থাকে।

১ মাস কেটে গেলো।রুহির সাথে নিশান ও মিরার প্রতিদিনই কথা হতো।একদিন রাতে ১২ টা দিকে সবাই ঘুমাচ্ছিলো।হঠাৎ রুহি তার শরীরে কারো স্পর্শ অনুভব করে।যেমনটা কয়েক মাস আগে করেছিলো। রবিনও তাকে এমন ভাবে স্পর্শ করেছিলো।রুহি খুব ভয় পেয়ে যায়।চিৎকার দিতে যায় আর তখনই ঐ লোকটা তার মুখ আটকে ফেলে। রুহি আর আওয়াজ করতে পারে না।তার মনে হলো তার সাথে আবারও আগের মতো হতে চলেছে।এই লোকটা তাকে রবিনের মতো কষ্ট দিবে।ঠিক তখন তার নিশানের কথা মনে পরে নিশান তাকে শিখিয়েছিলো ছেলেদের দুর্বলতা তলপেটে। কখনও কোনো ছেলে যদি তার সাথে খারাপ কিছু করতে যায় তখন যাতে তলপেটে লাথি মারে জোরে।তাহলে ঐ ছেলে আর কিছু করতে পারবে না।তখন রুহি নিজেকে বাচানোর জন্য শরীরে যত শক্তি ছিলো তা দিয়ে ঐ লোকটা কে তলপেটে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয় আর চিৎকার দেয় রুমে সবাই চলে আসে। লাইট জ্বালিয়ে দেখে রুহি কান্না করছে আর ঐ লোকটা নিচে তলপেটে হাত দিয়ে কাতরাচ্ছে বেথায়।রুহি অবাক আঙ্গেল আপনি এ কাজ টা কিভাবে করতে যাচ্ছিলেন আমার সাথে লজ্জা করলো না আপনার আমার বয়সী আপনার একটা মেয়ে আছে।সেদিন রাতে সব কিছু সবার সামনে ঘটলো কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ না করেই নিজ নিজ রুমে চলে গেলো। রুহি সারারাত কাদলো।

পরদিন সকালে রুহি কে ঐ বাসার সে মহিলা তারানা বললো সে আর এ বাসায় থাকতে পারবে না সে যাতে আজই চলে যায় এ বলে রুহিকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো।রুহি বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। সে কোথায় যাবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না।এরপর রুহি নিশানকে ফোন দিয়ে কান্না করতে করতে বললো নিশান তুই আমার কাছে আয় আমাকে ওনারা বের করে দিছে।নিশান শুনে অবাক রুহি কান্নায় আর কোনো কথা বলতে পারছে না। নিশান বললো রুহি তুই কান্না থামা আমি এখনি আসছি।তুই যেখানে আছিস সেখানই থাক। আমি আসছি।নিশান বাসায় তার মা কে বললো আম্মু ঢাকা যেতে হবে রুহি প্রবলেমে আছে।নিশানের মা রাজি হলো। কারন তাকে আগেই রুহির ব্যাপারে সব বলেছে।

এরপর নিশান তার একটা মেয়ে ফ্রেন্ডকে ফোন দিলো।ঐ মেয়ে টা নিশানের সাথে পড়তো একই স্কুলে।মেয়েটার নাম রিশা।নিশান বললো রিশা আমার এক ফ্রেন্ড রুহি বিপদে পরেছে তুই আজকের দিনটা ওকে তোর হোস্টেলে রাখ প্লিজ।রিশা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতো।এরপর নিশান রুহিকে ফোন দিয়ে বললো রিশা নামে তার এক মেয়ে ফ্রেন্ড আসবে সে যাতে তার সাথে যায়। ২০ মিনিট পর রিশা এলো।রুহি তার সাথে চলে গেলো হোস্টেলে।
রিশা এসে রুহিকে নিয়ে গেলো।এদিকে বিকেল ৪ টায় এসে ঢাকায় পৌছালো নিশান।রিশাকে ফোন দিয়ে বললো সে যাতে রুহিকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে নিশান সেখানে থাকবে।রুহি কে নিয়ে রিশা নিশানের কাছে গেলো রুহি নিশান কে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।এরপর নিশান তাকে পানি খায়িয়ে শান্ত করলো।তারপর রুহি নিশান কে সব বললো।নিশান শুনে পুরোই অবাক নিশান তখন রাগ করে সেখান থেকে বের হয়ে গেলো।নিশান যাওয়ার আগে রিশাকে বলে গেলো রিশা রুহির খেয়াল রাখিস এখানে বস তোরা আমি আসতেছি।রুহি আর রিশা নিশানকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু নিশান কোনো কথা শোনলো না।

নিশান ঐ মহিলাদের বাড়িতে গেলো।এরপর নিশান ঐ মহিলাকে জিগেস করলো আন্টি আপনারা রুহির সাথে কেনো এমন করেছেন?ঐ মহিলা জবাব দিলো দেখো নিশান ঐ মেয়ের চরিত্র খারাপ ছিলো।ওকে নিয়ে কথা বলতেও আমার লজ্জা লাগছে।এই বলে নিশান কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বের করে দিলো।নিশান রুহির কাছে গেলো।রুহি নিশানকে বললো নিশান তুই বিশ্বাস কর আমি খারাপ কিছু করেনি।নিশান বললো রুহি আমি জানি তুই কখনও খারাপ কিছু করিসনি।এখন চল আমার সাথে। রুহি বললো কই যাবো নিশান বললো আগে চল।এরপর নিশান রুহিকে আর রিশাকে নিয়ে থানায় গেলো মামলা করতে কিন্তু পুলিশ তাদের কোনো কথা না শুনে তাদের বের করে দিলো থানা থেকে।

নিশান রিশাকে বললো দোস্ত আজকের রাতটা রুহিকে তোর সাথে রাখতে পারবি?ওর মা কে আমি সব বলেছি আন্টি কাল ঢাকা আসছে।রিশা বললো আরেহ পাগল টেনশন নিস না আমি রুহি কে আমার সাথে রাখবো। রুহি নিশানকে বললো নিশান ঐ টা তো গার্লস হোস্টেল রাতে তুই কই থাবকি?রুহির কথা শোনে নিশান আর রিশা হাসতে শুরু করলো।রিশা বললো তুমি ওর টেনশন কইরো না এখানে ওর অনেক ফ্রেন্ড আছে। ওর কোনো প্রবলেম হবে না।এই বলে রিশা রুহিকে নিয়ে হোস্টেলে চলে গেলো।

পরদিন দুপুরে মিরা ঢাকায় পৌছালো।একমাস পর রুহিকে দেখছে মিরা।তাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।রুহির জন্য তার মা নতুন জামা কাপড় আর নিজের হাতের রান্না করা কিছু খাবার নিয়ে এসেছে।তিনি নিজের হাতে রুহিকে খাওয়ায় দিলো।এরপর নিশান মিরাকে বললো রুহিকে যাতে এখন ৫-৬ মাসের জন্য কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দেয়। পরের বছর স্কুলে ভর্তি করা যাবে।রুহি মা নিশানের কথায় রাজি হলো।রিশাকে নিয়ে রুহি মিরা নিশান একটা কোচিং সেন্টারে গেলো।সেখানে রিশাও পড়ে। রুহিকে ভর্তি করা হলো।কিন্তু মিরা এবার টেনশনে আছে রুহি থাকবে কোথায়?রিশা বললো আন্টি আপনি টেনশন কইরেন না রুহি কে আমার হোস্টেলে ভর্তি করে দেন আমি ২ বছর যাবৎ আছি কোনো সমস্যা হয়নি।

রিশার কথা মতো রুহি ভর্তি করে দিয়ে রুহির মা আর নিশান চলে গেলো।
রুহির কোচিং জীবন শুরু হলো।প্রথম দিন তার ক্লাসে ঢুকে তার অনেক নতুন মুখের সম্মুখীন হতে হলো।কিছুদিন যাওয়ার পর রুহির কোচিং জীবন খুব ভাল লাগতে শুরু করলো।তার অনেক বন্ধু হলো।কিন্তু একটা জিনিষ রুহি ভুলতে পারেনি তা হলো রবিনের অমানবিকতা আর ঐ লোকটার তার প্রতি খারাপ উদ্দেশ্য।তার জীবনের একটা উদ্দেশ্য হয়ে উঠলো এই দুইটা মানুষকে যেভাবেই হোক সে শাস্তি দিবে।রুহির জীবনে আরো ঝড় আসবে তাকে আরোও কষ্টের মোকাবেলা করে ঐ পর্যায় পৌছাতে হবে। রুহির কোচিং ক্লাস শুরু হওয়ার ২-৩ মাস পর নিশান রুহিকে ফোন দিয়ে জানালো সে ঢাকায় চলে আসবে কিছুদিন পর আর সেখানেই কলেজে পড়াশোনা করবে।

নিশান রুহিকে ফোন দিয়ে জানালো সে পার্মানেন্টলি ঢাকায় শিফট হচ্ছে।রুহি নিশানের কথা শুনে প্রচন্ড খুশি হলো।নিশান এলে রুহির তো আর কোনো ভয় থাকবে না।নিশান ঢাকায় এলো।নিশান মেসে থাকতো আর রুহি হোস্টেলে।দেখতে দেখতে কেটে গেলো ২ বছর সব ভালই কাটছিলো।কিন্তু এটা তো রুহির জীবন সব তাই কষ্ট এতে থাকবেই।
রুহি ইন্টার ১ম এবং নিশান ২য় বর্ষে পড়াশোনা করে।রুহির বয়স এখন ১৮ আর নিশানের ১৯।রুহি দেখতে আগের থেকে আরো সুন্দরী হয়ে গেছে। যে কোনো ছেলেই তাকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলবে।নিশানও কিন্তু দেখতে কম সুন্দর হয়নি।তারা দুজন সেম কলেজে পড়ত। রুহি আগের থেকে এখন একটু স্মার্ট হয়েছে।আজ রুহির কলেজ জীবনের প্রথম ক্লাস।ছেলেমেয়ে একসাথে ক্লাস।রুহি গার্লস স্কুলে পড়েছে। তাই ঢাকার ছেলেদের নিয়ে তার তেমন কোনো ধারনা নেই।ক্লাসে সুন্দর মেয়ে থাকলে সবাই তার অ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করে।

নিশান এখন ২য় বর্ষের ছাত্র।তার ক্লাসের সবচেয়ে ফাজিল এবং বড়লোকের ছেলে ইফতি।ইফতির বাবার অনেক টাকা। তাই সে সব সময় টাকার গরম দেখায়।ক্লাস ৮ থেকেই তার অনেক গার্লফ্রেন্ড।মেয়েরা তার প্রতি আকৃষ্ট হয় মূলত তার বাবার টাকা দেখে।আর সে ছেলে হিসেবে ও ডেয়ারিং টাইপের।নিশান কখনও চায়নি রুহি এই কলেজে ভর্তি হোক।কারন সে রুহিকে ইফতির থেকে আগলে রাখতে চেয়েছে।কিন্তু রুহি নিশানের সাথে ঝগড়া করে এই কলেজে ভর্তি হয়েছে।কারন সে চাইতো যাতে সবসময় নিশানের আশেপাশে থাকতে পারে।

টিফিন টাইমে ১ম বর্ষের ছেলেমেয়েদের লাইব্রেরী কার্ড দিচ্ছিলো আর ২য় বর্ষের ছেলেমেয়েদের টিফিন পিরিয়ড চলছিলো।নিশান লাইব্রেরীতে বসে নোট করছিলো আর রুহি কার্ড এর জন্য লাইনে দাড়িয়ে ছিলো।তখন ইফতি বিভিন্ন মেয়েদের সাথে মজা করছিলো।হঠাৎ তার চোখ পরলো রুহির উপর।সে পাশ থেকে তার ফ্রেন্ড রকি কে ঢেকে বললো মেয়েটা কে খোজ লাগা।একটু পর রকি এসে ইফতিকে বললে প্রথম বর্ষের দোস্ত।তখন ইফতি বললো দোস্ত আমার নেক্সট গার্লফ্রেন্ড ও হবে আর ও ৬ মাসের মতো আমার সাথে থাকবে।রকি বললো কি রে পাগল নাকি তুই।তুই তো ১ মাসের বেশি রাখিস না তাহলে এটা কে ৬ মাসের টার্গেট কেনো করলি?ইফতি বললো তুই বুঝবি না।
কলেজ ছুটি হলো। নিশান রুহিকে হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে নিজের মেসে যাবে।নিশান রুহিকে জিগেস করলো কী রে প্রথম ক্লাস কেমন লাগলো? রুহি বললো দারুন।আজ আমার ৩-৪ টা মেয়ে ফ্রেন্ড হয়েছে।নিশান বললো রুহি চল তোকে আইসক্রিম খাওয়াই।রুহিকে নিশান বললো শোন আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে আছে নাম ইফতি।তুই কখনও ওর সাথে কথা বলবি না ওর সামনে ও যাবি না ওকে।রুহি বললো তুই পাগল হইছিস তুই জানিস আমি ছেলেদের ঘৃণা করি।দুনিয়ার সব ছেলে এক শুধু তুই আলাদা।এই বলে নিশানের চুল টান দিলো।নিশান মনে মনে ভাবলো যাক বাচা গেলো।এখন ইফতি রুহিকে না দেখলেই হয়।

পরদিন কলেজে গেলো রুহি নিশান।আজকে রুহির সাথে ইফতি কথা বলবে তাই টিফিন টাইমের জন্য ওয়েট করছে।টিফিনের ঘন্টা পরলো।রুহি ক্লাস থেকে বের হলো।ইফতি রুহির সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলো।২ মিনিট পর নিশান দেখলো রুহি ইফতির সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে। নিশানের তো রাগে চোখ লাল হয়ে গেলো।ইফতি চলে যাওয়ার পর নিশান রুহিকে জিগেস করলো তোকে না মানা করেছি ইফতির সাথে কথা বলতে ওর সামনে না যেতে কেনো বললি?রুহি বললো ও ইফতি আমি জানতাম না আর শোন ও আমার সাথে ভুলে কথা বলেছে।ও ভাবছে আমি ওর ফ্রেন্ড রিতু তাই ভুলে আমাকে দাড়াতে বলেছে।পরে অবশ্য সরি বলেছে।তখনই ক্লাসের ঘন্টা পরলো।রুহি বললো নিশান আমি যাই রে। নিশান রুহি যাওয়ার পর বললো আমি খুব ভাল মতোই জানি ইফতি কখনও মেয়েদের ভুল করে ডাকে না।

রুহি ক্লাসে গেলো।ক্লাসে নতুন কিছু ফ্রেন্ড হলো তার।একটা নোটিশ আসলো।নোটিশ লিখা ছিলো এই পুরো সপ্তাহে কলেজে কোনো ক্লাস হবে না সাংস্কৃিতিক প্রোগ্রাম হবে।রুহিকে তার ফ্রেন্ডরা বললো আমরা পার্টিসিপেট করবো তুই ও কিন্তু করবি রুহি।রুহি বললো দেখ আমি এসব পারি না আগেও করিও নি। ওর ফ্রেন্ড রা বললো আগে করিস নি তো কি হয়েছে এখন করবি।একজন বললো জানিস রুহি আমার বড় আপু এই কলেজে পড়ছে আপু বলছে এসব অনুষ্ঠানে নাকি অনেক মজা হয়।রুহি বললো আচ্ছা ভেবে দেখি।

কলেজ ছুটি হলো। রুহি নিশানকে সব বললো নিশান বললো তুই পার্টিসিপেট কর রুহি।রুহি বললো আমি তো পারি না কিছু। নিশান বললো সমস্যা নেই কলেজ থেকে শিখিয়ে দিবে সব।রুহি বললো আচ্ছা ঠিক আছে।পরদিন রুহি তার নাম দিলো তার ফ্রেন্ডসদের সাথে।তারা একটা মুক্তিযুদ্ধের নাটক করবে আর নাচবে।রুহি যে অনুষ্টানে অংশ গ্রহন করবে এ কথা রকি এসে ইফতি কে জানালো।ইফতি প্রচন্ড খুশি হলো।সে ভাবলো এবার রুহিকে ইমপ্রেস করে ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা যাবে।

রুহি ছুটির পর কলেজে অনুশীলন করছিলো।নিশান বললো রুহি আমার কোচিং এ পরীক্ষা তুই সাবধানে চলে যাবি হোস্টেলে আর শোন গিয়ে আমাকে ফোন দিবি ওকে।রুহি বললো ওকে।সেদিন অনুশীলন করতে করতে লেট হয়ে গেলো।নিশান টেনশনে শেষ। ও কোনো রকম পরীক্ষা দিয়ে রুহির হোস্টেলর সামনে গিয়ে রুহির ফোনে ফোন দিলো কিন্তু ফোন অফ আসছিলো নিশানের টেনশন বেরে গেলো।কই আছে রুহি কে জানে।রিশাকে ফোন দিলো রিশা বললো ও তো হোস্টেলে এখনও আসেনি। আমি তো ভাবছি ও তোর সাথে।নিশান তাড়াতাড়ি ফোন কেটে রিকশা নিয়ে কলেজে যেতে লাগলো।কলেজের সামনে রুহি অনেক যাবৎ দাড়িয়ে আছে কিন্তু রিকশা পাচ্ছিলো না।

১৫ মিনিট যাবৎ কোন রিকশা পাচ্ছে না সে। এদিকে তার প্রচন্ড খোদা লেগেছে।আর রুহির মাথায় ঘুরতেছে যে মা আর নিশানকে ফোন দিতে হবে ওরা টেনশন করছে।হঠাৎ রুহির সামনে ইফতির গাড়ি আসলো।ইফতি গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে বললো তুমি এখনও এখানে দাড়িয়ে আছো।সবাই তো চলে গেছে বাসায়।রুহি বললো আসলে আমি অনুশীলন করছিলাম অনুষ্ঠানের জন্য তাই লেট হইছে।আর এখানে রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি।ইফতি বললো এখন রিকশা পাবে না।তোমার যদি কোনো প্রবলেম না হয় আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসতে পারি।রুহি মনে মনে ভাবল এখন তার বাসায় যাওয়াটা দরকার।তাই সে ইফতির সাথে গাড়িতে উঠলো। ইফতি গাড়ি ছাড়লো আর তখনই নিশান রিকশা থেকে নামলো আর দেখলো রুহি ইফতির গাড়িতে।এটা দেখে রাগে নিশানের মাথা নষ্ট হয়ে গেলো।

রুহিকে ইফতি হোস্টলে নামিয়ে দিলো।রুহি ইফতি কে ধন্যবাদ দিলো।ইফতি বললো যদি কিছু মনে না করো তোমার ফোন নাম্বার টা দিতে পারবে? আসলে অনুষ্ঠানের ব্যপারে কথা বলবো।রুহি মিথ্যা বললো যে সে ফোন চালায় না।ইফতি চলে গেলো বাই বলে।রুহি হোস্টেলে গিয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলে নিশান কে ফোন দিলো।নিশান কে বললো আমি জানি তুই টেনশন করছিস আমাকে মাফ করে দে আসলে অনুশীলন ছিলো।তখন নিশান রুহিকে থামিয়ে দিলো বললো আমি তোকে ইফতির গাড়িতে দেখছি রুহি তোর আর কথা বলতে হবে না।আমি নিজের পরীক্ষা বাদ তোর টেনশনে কলেজে আনতে গেছি তোকে আর তুই আমি তোকে ইফতির সামনে যেতেও মানা করছি আর তুই ওর গাড়িতে এই বলে নিশান ফোন কেটে দিলো। রুহি অনেকবার ফোন দিলো সেদিন নিশান ফোন ধরলো না।রুহি পরদিন কলেজে গিয়ে নিশানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু নিশান কোনো কথা বললো না।নিশানের সাথে রুহিকে ইফতি দেখে ফেললো।নিশান ক্লাসে আসার পর,

ইফতি :নিশানকে বললো রুহির সাথে তোর কি সম্পর্ক? নিশান :বললো তাতে তোর কি দরকার?

ইফতি: বল কি হয় ও তোর?

নিশান :আমার ফ্রেন্ড ও

ইফতি :তুই রুহির থেকে দূরে থাকবি

নিশান: তা তুই বলার কে,আমি ওর সাথেই থাকবো

ইফতি:নিজের বিপদ নিজে ডাকিস না।

এই বলে ইফতি চলে গেলো। নিশানের আর বুঝতে বাকি রইলো না ইফতির নজর রুহির উপর পরেছে। রুহি সেদিন কলেজে নিশানের রাগ ভাঙ্গাতে ব্যর্থ হলো।রুহি নিশানকে কলেজ ছুটির পর অনেকবার সরি বললো।নিশানের রাগ ভাঙ্গলো।রুহিকে নিশান বললো দেখ রুহি বিশ্বাস কর আমি তোর খারাপ চাই না।তুই ইফতির থেকে দূরে থাক ও ভাল ছেলে না।রুহি বললো আচ্ছা ঠিক আছে।এখন বাদ্দে ও সব কথা।চল আজ আমি তোকে আইসক্রিম খাওয়াবো।তারপর নিশান রুহির সাথে আইসক্রিম খেলো। রুহি রাতে পড়তেছিলো।তখন হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো আননোন নাম্বারের।রুহি ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো তারপর

রুহি :জিগেস করলো কে?

ইফতি :সালামের জবাব নিয়ে বললো” ইশ যেমন দেখতে সুন্দর তুমি তার থেকে মিস্টি তোমার ভয়েস”।

রুহি :বললো কে আপনি বলবেন, না আমি ফোন কাটবো?

ইফতি :বললো না না ফোন কেটো না আমি ইফতি।

রুহি :প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললো আপনি নাম্বার কই পেলেন?

ইফতি:রুহি কাল প্রোগ্রাম তাই তোমাকে অল দ্যা বেস্ট জানানোর জন্য ফোন দিয়েছি।আমি তো ফ্রেন্ড হিসিবে ফোন দিতে পারি তাই না।

রুহি:হিম পারেন। কিন্তু নাম্বার টা কোথায় পেলেন আপনি?

ইফতি: ঐ টা পেয়েছি কোনো এক জায়গা থেকে।তো প্রিপারেশন কেমন?

রুহি: এই তো ভাল। আচ্ছা আমি রাখছি ফোন ঘুমাবো বাই।

ইফতি:ওকে বাই টেক কেয়ার।

পরদিন কলেজে প্রোগাম।রুহি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের নাটকটা করলো।খুব সুন্দর করে করলো। সবাই খুব প্রশংসা করলো।এরপর নাচের জন্য রুহি রেডি হচ্ছে আর ৩০ মিনিট পর নাচ শুরু হবে।সবাই রেডি হয়ে চলে গেলো।এরপর রুহি রেডি হচ্ছিলো। সে জামাটা পরতে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই জামার হুক লাগাতে তার জামার হুক টা ছিরে গেছে। আর ৫ মিনিট পর নাচ শুরু হবে রুহি ভয়ে অবস্থা খারাপ।হঠাৎ ইফতি কোথা থেকে জেনো এলো। রুমে ওখানে দড়জার ওপাশ থেকে বললো ভিতরে কেউ আছো? রুহি বললো ইফতি আমি রুহি। ইফতি বললো তুমি এখনো রুমে কি করছো আর ৫ মিনিট পর তোমার নাচ শুরু হবে তো।রুহি বললো তুমি কোনো ম্যাডামকে ডেকে দাও প্লিজ। ইফতি বললো তুমি ভয় পেয়ো না। আমি এখনি ডেকে দিচ্ছি।এরপর রুহির এক ম্যাডাম রুহির রুমে এসে একটা সেফটিপিন দিয়ে জামাটা সুন্দর মতো লাগিয়ে দিলো। রুহি নাচলো।কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না সে প্রথমবার নেচেছে।রুহির নাচের সবাই খুব প্রশংসা করলো।রুহি নাচের পর ইফতিকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য অনেক খুজলো কিন্তু পেলো না।রুহির নিশান খুব প্রশংসা করলো।যে তুই খুব ভাল করেছিস।রুহিকে রাতে হোস্টেলে পৌছে দিয়ে নিশান চলে গেলো নিশানের মেসেতে।
রুহি রাতে ভাবলো ইফতিকে ফোন দিবে ধন্যবাদ জানাতে। রুহি ইফতিকে ফোন দিলো-

রুহি:কেমন আছো?

ইফতি:ভাল, আজ তুমি আমাকে ফোন দিলে বিশ্বাস হচ্ছে না উফ কি লাকি আমি।

রুহি:হেসে বললো হইছে আর ফান করতে হবে না।আজকের জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।তুমি না থাকলে কি যে হতো আমার ভাবতেই পারছি না।

ইফতি:ধন্যবাদ এভাবে নিবো না।

রুহি:তাহলে কি ভাবে নিবে?

ইফতি: আমার সাথে তোমার রেস্টুরেন্টে খেতে হবে।

রুহি: দেখো আমি তোমার মতো অত বড়লোক না বুঝলে তোমাকে ফুসকা খাওয়ানোর সামর্থ্য আছে আমার রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর মত অত টাকা নেই।

ইফতি: আবার হেসে বললো আরেহ খাওয়াবোতো আমি।

রুহি :না তুমি চাইলে আমি তোমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে পারি কিন্তু রেস্টুরেন্টে না।

ইফতি:আচ্ছা ঠিক আছে।

এরকমভাবে ৩০ মিনিটের মতো কথা বলতে লাগলো রুহি ইফতির সাথে।এর মাঝে নিশান প্রায় ২০ বার ফোন দিলো রুহিকে কিন্তু প্রতিবার ফোন বিজি আসছে।রুহি ইফতির সাথে কথা বলে ফোন রাখার সাথে সাথে নিশানের ফোন এলো।নিশান কারর সাথে কথা বলতেছিলি এতোক্ষণ ? রুহি মিথ্যা বললো। বললো যে আমার কলেজের এক মেয়ে ফ্রেন্ড ফোন দিছিলো।নিশান বললো ও আচ্ছা। এরপর বললো তুই কাইছিস রাতে? রুহি বললো না খায়নি রে। নিশান বললো আমি জানি তো তুই খাসনি।তুই কিভাবে জানলি নিশান?আমি তোকে চিনি রুহি।আচ্ছা শোন দাড়োয়ান মামার কাছে বিড়িয়ানি দিছি তুই খেয়ে নিস।রুহি খুশি হয়ে বললো নিশান তুই খুব বেশি ভালো। আই লাভ ইউ দোস্ত।আমি তোকে তখন বললাম ফোনে বিড়িয়ানি খাবো আর তুই কিনে দিয়ে গেলি। এরপর নিশান হাসতে হাসতে বললো হইছে আর কিছু বলতে হবে না খেয়ে ঘুমিয়ে পর কাল কলেজ আছে। ফোন রাখার পর নিশান ভাবলো যে আজ প্রথমবার আমাকে রুহি মিথ্যা বললো কিন্তু কেনো?ও তো কখনও আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে এতোক্ষণ কথা বলে না।আজ কার সাথে বলছিলো?

রুহি পরদিন কলেজ গেলো।নিশানের সাথে রুহির দুজন দাড়িয়ে কথা বলছে। নিশান একটা স্টুডেন্ট পড়ায়।রুহি বললো কী রে বাচ্চাটাকে তো ১ মাস যাবৎ পড়াচ্ছিস টাকা দিছে?আমাকে খাওয়াবি কবে? নিশান বললো আজকে মাত্র একমাস হবে।এখনই কেমনে টাকা চাই তুই বল।রুহি হেসে দিয়ে বললো আচ্ছা ঠিক আছে তোকে ছেড়ে দিলাম।তখন রুহি আর নিশানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো তখন রুহিকে দেখে বললো রুহি কেমন আছো? রুহি বললো ভাল তুমি কেমন আছো? ইফতি বললো এই তো আছি।কাল অনেক ভাল নেচেছো তুমি রুহি বললো ধন্যবাদ। এরপর ইফতি চলে গেলো।নিশান রুহি কে বললো তুই এমন কেনো বলতো আর কত বার বলবো তোকে।রুহি বললো দেখ নিশান তুই ইফতি কে যতটা খারাপ ভাবিস ও কিন্তু ততটা খারাপ না ও ভালোই রে। জানিস ও কাল কি করছে তখন নিশান বললো আমার জানতে হবে না তুই থাক ইফতিকে নিয়ে আমি যাই।নিশান রাগ করে চলে গেলো।

আজ রুহির কোচিং এ পরীক্ষা। পরীক্ষার পর ফ্রেন্ডস দের সাথে হোস্টেলে গেলো।রুহি খুব ক্লান্ত আজ।তাই রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।খাওয়ার টাইম শেষ তখন রুহির ঘুম ভাঙ্গলো।এর মাঝে নিশান রুহিকে ফোন দিছেলো অনেকবার কিন্তু রুহি ঘুমিয়ে ছিলো তাই ধরতে পারেনি।নিশান রুহির ফোন না ধরায় টেনশনে পরে গেলো।এরপর রিশাকে ফোন দিলো।রিশাকে জিগেস করলো রিশা রুহি কি হোস্টেলে আসছে?রিশা হিম ও ঘুমাচ্ছে রে।নিশান বললো ও কি খেয়েছে?রিশা বললো না আমি অনেকবার ডেকেছি কিন্তু ও বলেছে খাবে না।নিশান বললো কিন্তু ও তো খালি পেটে ঘুমাতে পারে না।এই বলে ফোন কেটে দিলো।একটু পর রুহি ঘুম থেকে উঠলো প্রচন্ড খোদা পেয়েছে তার। কিন্তু খাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে।ফোন হাতে নিলো দেখলো নিশানের ১৫+ মিসড কল।রুহি নিশানকে ফোন দিতে লাগলো আর তখন ইফতি ফোন দিলো। তাই নিশানকে ফোন দেওয়া হলো না তার।

ইফতি:কী করছো?

রুহি:ঘুৃমাচ্ছিলাম।

ইফতি:আমার আইসক্রিমের কি হলো কবে খাওয়াবে?

রুহি :হেসে বললো কাল।

ইফতি :কাল!!!সত্যি বলছো তো?উফফ ফাইনালি মিস সুন্দরির সাথে একটু টাইম স্পেন্ড করতে পারবো।

রুহি:হাসতে হাসতে বললো তুমি খুব চাপাবাজি করো পচা ছেলে। এরকমভাবে রুহি আর ইফতির কথা চলতে রইলো।এর মাঝে নিশান রুহি কে ফোন না দিয়ে রিশাকে ফোন দিলো।বললো রিশা শোন রুহি তো ঘুমাচ্ছে তাই ওরে ফোন না দিয়ে তোকে দিলাম।দাড়োয়ান চাচা একটু পর খাবার নিয়ে রুমে যাবে। আমি বিরিয়ানি আর চিকেন ফ্রাই কিনে দিছি তুই ওকে দিয়ে দিস।ও ঘুমাচ্ছে তাই ফোন দেইনি।ও উঠলে ওকে বলিস কেমন।রিশা বললো ও তো অনেক ঘুম থেকে উঠেছে ও তো বারান্দায় ফোনে কথা বলছে।এটা শোনে নিশান খুব কষ্ট পেলো।কিন্তু রিশাকে বুঝতে দিলো না।বললো আচ্ছা ওর কথা হলে ওকে খাবার টা দিস।এই বলে ফোন কেটে দিলো।

এদিকে রুহি ইফতির সাথে কথা বলেই যাচ্ছে।রুহির ফোনে একটা মেসেজ এলো।রুহি দেখলো নিশানের মেসেজ এসেছে।রুহির তখন মনে পরলো নিশানতো তাকে অনেক বার ফোন দিছেলো ইফতির ফোন আসায় সে কল বেক করতে ভুলে গেছে।এরপর ইফতিকে বললো আচ্ছা আজ রাখি। এরপর ইফতির টেক্সট দেখলো “রুহি খেয়ে নিস বিরিয়ানি আর চিকেন ফ্রাই দিয়ে গেছি। আর শোন এত বদলে যাস না কেমন। খেয়ে ঘুমিয়ে পর”।
রুহি নিশানকে অনেক বার ফোন দিলো তার খারাপ লাগছিলো।অনেক সরি মেসেজ ও দিলো।কিন্তু নিশান কোনো রিপ্লে দিলোনা।রুমে আসার পর রিশা রুহিকে বললো” নিশান তোর কি খেয়াল রাখে রে।আমার এমন ফ্রেন্ড থাকলে ওকে বিয়েই করে ফেলতাম কত লাকি তুই “।এরপর রুহিকে খাবার দিয়ে রিশা ঘুমিয়ে পরলো।পরদিন শুক্রবার রুহিকে ইফতি ফোন দিয়ে বললো আজ কিন্তু তার সাথে রুহির বাইরে যাওয়ার কথা।রুহি বললো ওর মনে আছে বিকেল ৪ টা দেখা করবে।নিশান এদিকে ভাবলো কাল রুহির সাথে একটু বেশিই রাগ করেছে সে।সরি বলা উচিত তার রুহিকে।নিশান যে স্টুডেন্ট পড়াতো কাল ওখান থেকে দুই হাজার টাকা পেয়েছে ভাবলো আজ পুরো টা দিয়ে রুহি যা যা খেতে চায় ওকে সব খাওয়াবে।রুহিকে ও ৪:৩০ টায় বাইরে নিয়ে যেতে চাইলো।কারন ৩:০০-৪:০০ টা পর্যন্ত ওর পরীক্ষা আজ।

নিশান ভাবলো রুহি কে সে ফোন দিয়ে বলবে।কিন্তু পরে দেখে তার ফোনে টাকা নেই।তাই রুহিকে টেক্সট দিলো “রুহি ৪:৩০ টায় লেকের ঐ দিকে চলে আসিস আজকে তোকে নিয়ে ঘুরবো।আমার ফোনে টাকা নেই তাই ফোন দিতে পারছি না।” রুহি টেক্সট টা দেখলো না কারন সে রেডি হচ্ছিলো। ইফতি ফোন দিলো ৩:৩০ এ বললো রুহি নিচে আসো আমি গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছি।রুহি নিচে গেলো।তারপর ইফতিকে জিগেস করলো এতো আগে কেনো এলে তোমাকে তো ৪ টার কথা বলেছিলাম।ইফতি বললো চলে এলাম ভাবলাম তুমি খুশি হবে কিন্তু এখন তো দেখছি তুমি রাগ করছো।রুহি বললো আরেহ না কই রাগ করলাম এমনেই বলছি। এরপর ইফতি আর রুহি আইসক্রিম শপে ঢুকলো।ইফতি বললো জায়গাটা খুব সুন্দর। রুহি বললো আমি নিশান রোজ এখানে আসি।ইফতি জিগেস করলো নিশান কি হয় তোমার? রুহি বললো ও আমার ছোট কালের ফ্রেন্ড ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।এদিকে নিশান তাড়াতাড়ি পরীক্ষা শেষ করে কোচিং থেকে বের হয়ে ফোনে টাকা রিচার্জ করে রুহি কে অনেকবার ফোন দিলো।কিন্তু রুহি ধরলো না কারন ওর ফোন সাইলেন্ট ছিলো।নিশান ভাবলো হয়তো রুহি ওখানে গিয়ে আমার জন্য বসে আছে আমার লেট হচ্ছে তাই সে ফোন ধরছে না।এরপর নিশান লেকের পারে বসে রুহির জন্য ওয়েট করতে লাগলো।

এদিকে ৫ টা বেজে গেছে কিন্তু রুহির কোনো খোজ খবর নেই তার যে আজ নিশানের সাথে দেখা করার কথা।ইফতি রুহিকে অনেক বড় দামি একটা টেডিবিয়ার দিলো।রুহি নিতে চায়নি এক প্রকার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে দিছে। রুহি হঠাৎ করে টাইম দেখার জন্য বেগ খুললো দেখলো নিশান অনেকবার ফোন দিয়েছে আর নিশানের মেসেজট টা ও পড়লো এরপর তারাতারি করে বিল দিয়ে ইফতি কে কোনো রকম বায় বলে চলে গেলো।রুহি ৬ টার দিকে লেকের ওখানে গিয়ে পৌছালো দেখলো নিশান এখনো বসে আছে।রুহির খুব খারাপ লাগলো।সে নিশান কে গিয়ে বললো দোস্ত সরি মাফ করে দে প্লিজ।নিশান বললো বাদ দে।এরপর নিশান রুহির হাতে ঐ টেডিবিয়ার টা দেখলো।বললো কে দিছে এটা?রুহি বললো ও কিনেছে ফ্রেন্ডদের সাথে গিয়ে তাই আজ আসতে দেরি হয়েছে।নিশান বুঝে গেলো রুহি মিথ্যা বলছে কারন টেডিবিয়ার টা অনেক দামি ছিলো।নিশান সেদিনও রুহি কে কিছু বললো না চুপচাপ রইলো।তাকে নিয়ে ঘুরলো খাওয়ালো আর কিছু চকলেট কিনে দিয়ে হোস্টেলে রেখে আসলো।

পরদিন রুহি কলেজে গেলো।কলেজে গিয়ে সে ক্লাস করছিলো তখন নোটিশ এলো যে পরশু তাদের পরীক্ষা। রুহির তো টেনশনে অবস্থা খারাপ কারন অনুষ্ঠানের অনুশীলনের জন্য সে কিছুই পড়তে পারেনি।রুহির পুরো মাথা নষ্ট হয়ে আছে। রুহি নিশানকে ব্যাবারটা জানালো।নিশান বললো তুই টেনশন করিস না ২ দিন সময় আছে আমি তোকে একটা নোট দিবো ঐ টা রিভিশন দিয়ে যাস তাহলেই হবে। রুহি বললো আচ্ছা ঠিক আছে।নিশান বেলা ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত রুহির জন্য নোট করলো নিজের খাওয়া দাওয়া পড়াশোনা বন্ধ করে।রুহি এদিকে নিজের মতো পড়তেছে তখন হঠাৎ ফোন আসলো ইফতির। ইফতি রুহিকে জিগেস করলো কি করছো রুহি বললো পরশু কলেজে পরীক্ষা অনেক পড়া বাকি তোমার সাথে পরীক্ষার পর কথা বলি।আমার কিছু পড়া হয়নি। ইফতি হাসি দিয়ে বললো টেনশন নিও না পরীক্ষাতে কিছু না পারলে সমস্যা নেই পরে আন্দোলন করে আবার পরীক্ষা দেওয়া যাবে। রুহি বললো সত্যি? ইফতি বললো হিমম।রাত ৮:৩০ টায় নিশান রুহিকে নোট দিয়ে গেলো। আজ রুহির পরীক্ষা সে এ দু দিন কিছু পড়েনি।প্রশ্ন দেখে তার মাথা নষ্ট।পরীক্ষায়য় ৮০% নিশানের করা নোট থেকে আসছে।পরীক্ষা শেষে ইফতি ও বাকিরা আন্দোলন করছিলো। ১ম ও২য় বর্ষের ছাত্ররা একত্রে। রুহিও ইফতির কথা মতো সেখানে ছিলো।নিশান রুহি কে সেখানে দেখে পুরো অবাক।নিশান রুহিকে ডাকলো।এরপর বললো-

নিশান:তুই এখানে কি করিস?

রুহি:আন্দোলন।

নিশান:কেনো?আমি তোকে যা যা নোট করে দিছি ওখান থেকেই তো আসছে। তাহলে তুই এখানে কেনো।

রুহি:আমি কিছু লিখতি পারিনি।

নিশান:কি বলছিস তোর মাথা ঠিক আছে তো। তুই বার বার ভুল করছিস।ইফতির সাথে মিশতে মানা করছি তুই তার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।

রুহি:দেখ ও খারাপ না।

নিশান:হিম রুহি খারাপ ও না খারাপ আমি তাই আমার কথা শুনিস না তুই।আমার মনে হয় তুই খুব লোভী।ইফতি দামি গিফ্ট দেয়,বড় গাড়িতে ঘুরায় তাই তুই ওর কথা মতই সব করিস।

রুহি :প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললো দেখ নিশান তুই অতিরিক্ত করছিস।ইফতি খারাপ না। ও অনেক ভাল আমার হেল্প করছে সেদিন ও আর আজও করছে।আর তুই আমার ফ্রেন্ড আর ইফতিও কিন্তু এতো এমন করার তো কোনো মানে নাই তাই না।

নিশান: অবাক দৃষ্টিতে ইফতি আর আমি এক তোর কাছে? রুহি কিছু না বলে চলে গেলো। নিশান রুহির চলে যাওয়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো।

নিশান রুহির কথায় প্রচন্ড কষ্ট পেলো।নিশানকে এ অবস্থায় দেখে ইফতির খুব ভালো লাগছিলো।এরপর ইফতি নিশানের সামনে এসে বললো এখন রুহিকে পেতে আমার আর কোনো বাধা রইলো না।নিশান কওছু না বলেই চলে গেলো।রুহি খুব ভালো মত বুঝতে পেরেছিলো সে নিশানকে কতটা কষ্ট দিয়িছে।কিন্তুত তার কিছু করার ছিলো না।রুহি পুরো রাস্তা কান্না করতে করতে গেলো।হোস্টেলে গিয়ে না খেয়ে বসে রইলো। রুহি খুব ভাল মতো জানতো নিশান আজ কিছু খাবে না।রুহি নিশানকে বললো তার সাথে ৬ টার সময় দেখা করতে। কারন ৫ টা পর্যন্ত তাদের দুইজনেরই পড়া থাকে।রুহি নিশানকে ফোন দিতে সাহস পেলো না তাই মেসেজ দিয়ে বললো। রুহি ভাবলো আজ ইফতির সাথে দেখা করে একটা ডিসিশন নিবে সে।তাই ইফতিকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিলো আর তখনই ইফতি ফোন দিলো।রুহি ইফতিকে বললো ইফতি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে আজ বিকেল ৫ টায় দেখা করতে পারবে?ইফতি বললো অবশ্যই তোমার জন্য সব করতে পারবো।তোমার সাথে দেখা করা আজ আমার ও দরকার খুব।কিছু বলার আছে। রুহি বললো আচ্ছা ঠিক আছে ৫ টার দিকে দেখা হচ্ছে আমাদের। ৫ টার দিকে রুহি ইফতির সাথে দেখা করতে গেলো।রুহির হাতে পেকেট করা একটা বক্স ছিলো।ইফতি রুহির সামনে হাটু গেরে দাড়িয়ে বললো –

ইফতি:রুহি আমি তোমাকে ভালবাসি তোমাকে ছাড়া বাচবো না।তারপর রুহি কে লাল গোলাপ দিতে লাগলো।

রুহি :সরি ইফতি আমি পারবো না আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি পারবো না।

ইফতি:কেনো পারবে না বলো।আমার টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি সব আছে তাহলে কেনো পারবে না?তুমি ঐ নিশান কে ভালবাসো তাই না।

রুহি :ইফতি থামো নিশান আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার লাইফে নিশান কি তা আমি কাউকে বোঝাতে পারব না।যখন কেউ ছিলো না তখন নিশান ছিলো আমার পাশে। আর তোমাকে আমি ভালবাসি না।তুমি আমার হেল্প করছিলে তাই ধন্যবাদ যানিয়েছি।আর এই ধন্যবাদ জানানোটাকে তুমি অন্যভাবে নিছো। আমারই ভুল তোমাকে এতো টাইম দেওয়া ঠিক হয়নি।

ইফতি:আমাকে ভালবাসতে কি প্রবলেম তোমার বলো।

রুহি:হেসে বললো তোমাকে কেনো পৃথিবীর কোনো ছেলেকে ভালবাসার অধিকার আমার নেই। এরপর রুহি বললো আমি আর তোমার ফ্রেন্ড হিসেবে থাকতে পারবো না।কারন তোমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে যেয়ে আমি নিশানকে হারাতে পারবো না। এরপর বক্সটা দিয়ে বললো এই নাও তোমার টেডিবিয়ার এটা খুব দামি এটা আমি রাখতে পারবো না তাই ফেরত দিয়ে দিলাম আগেই দিতে চাইছিলাম।এরপর রুহি চলে যেতে লাগলো।

ফতি:রুহির হাত ধরে বললো রুহি প্লিজ একটু বুঝো।

রুহি :তোমার সাহস কি করে হলো আমার হাত ধরার।তুমি আমাকে আর ফোন দিবে না। আর নিশানের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না তাহলে দেখো কি হয়।এই বলে রুহি চলে গেলো।

এদিকে নিশান প্রতিবারের মতো রুহির জন্য ওয়েট করছিলো।রুহি এসে নিশান কে সরি বললো। নিশান বললো ইটস ওকে।লেট করলি যে কোনো প্রবলেম হইছিলো তোর?রুহি বললো নিশান তোর কি লজ্জানেই রে!! তুই এতো ভাল কেনো বলতো। তোকে আমি কত বাজে কথা বলছি কষ্ট দিছি তারপরও জিগেস করছিস আমি ঠিক আছি কি না। নিশান কিছু বললো না রুহির দিকে তাকিয়ে হাসলো।দেখলো রুহি কান্না করছে।নিশান বললো প্লিজ কাদিস না সরি। রুহি হাসি দিয়ে বললো সরি তো আমার বলা উচিত। এরপর নিশান বললো লেট করলি কেনো?রুহি বললো ইফতির সাথে দেখা করে ফ্রেন্ডশিপ শেষ করে আসলাম।ওর জন্য তোর সাথে আমি তোকে হারাতে পারবো না।তারপর নিশান রুহির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রুহি বললো তাকিয়ে থাকিস না চল খাবো খোদা লাগছে। ইফতি রুহিকে বারবার ফোন দিচ্ছে।রুহি তাকে ব্লক করে রাখছে।ইফতির প্রচন্ড রাগ উঠতেছিলো।রুহি একদিনে ইফতির অভ্যাস হয়ে গেছে।তার সাথে কথা না বললে থাকতে পারে না।ইফতির ফ্রেন্ড রকি বললো দোস্ত বাদদে ও ছাড়া অনেক মেয়ে আছে। ইফতি রাগ করে বললো আমার ওকেই চাই বুঝলি তুই। আর যেকোনো ভাবে আমি ওকে পেয়ে ছাড়বো।

রুহি নিশানকে বললো নিশান এ কদিনে আমার পড়াশোনা অনেক পিছিয়ে গেছে। এখন আমার খুব ভাল মত পড়তে হবে।আর যাই হোক আমি আমার লক্ষ্য ভুলতে পারবো না।নিশান বললো টেনশন করিস না এখন খুব ভাল মতো পড়াশোনা কর।সামনে তো ঈদের বন্ধ আসতেছে।রুহি বললো আচ্ছা ঠিক আছে।নিশান রুহিকে হোস্টেলে দিয়ে মেসে চলে গেলো।

নিশান তার ড্রয়ার থেকে তার ডায়েরি টা বের করলো।বের করে লিখলো “পাগলী টা কে তো নিজের থেকে বেশি ভালবাসি কিন্তু আজ আরো বেশি ভাল বেশি ভালবেসে ফেলেছি।রুহি তোকে আমি সবসময় ভালবাসি আর বাসবো। কখনও জোর করে তোকে পাওয়ার চেষ্টা করবো না।”নিশানের এটা পার্সোনাল ডায়েরি। সে যেদিন প্রথম রুহিকে দেখেছিলো সেদিন থেকেই লিখছে। নিশানের ভালবাসা রুহির জন্য খুব বেশি গভীর আর পবিত্র। এর কোনো তুলনা করা যায় না। এদিকে ইফতি রুহি কে ফোন দিচ্ছে নতুন একটা নাম্বার দিয়ে। রুহি ফোন ধরলো

ইফতি: বললো রুহি আমি ইফতি তুমি ফোন কেটো না প্লিজ। তুমি কেনো আমার সাথে কথা বলছো না। আমার কষ্ট হচ্ছে প্লিজ এমন করো না।

রুহি:ইফতি তুমি কেনো ফোন দিছো আমাকে পড়তে দাও।

ইফতি:তুমি প্লিজ একটু বারান্দায় আসো আমি নিচে দাড়িয়ে আছি হোস্টেলের সামনে। কাল থেকে কলেজ বন্ধ আমি তোমাকে দেখতে পারবো না। প্লিজ রুহি।

রুহি: রুহি বললো আমি বারান্দায় আসবো না তুমি চলে যাও এখান থেকে।

ইফতি :তুমি না আসলে আমি চিৎকার করবো এরপর তোমারই প্রবলেম হবে।

রুহি: আমাকে হুমকি দিচ্ছো তুমি।এই বলে রেগে বারান্দায় গেলো রুহি।

ইফতি: রুহি এই রাতের আলোতে তোমাকে আরোও সুন্দর লাগতেছে। আই লাভ ইউ।

রুহি: চুপ করো ইফতি প্লিজ যাও এখান থেকে প্লিজ।

ইফতি: আজ চলে যাচ্ছি কাল আবার আসবো। বাই জান।

রুহি খুব বিরক্তি বোধ করলো।সে কথাটা নিশান কে জানালো না কারন নিশানের ফাইনাল পরীক্ষার আর বেশি দিন বাকি নেই।

রুহি পরদিন কোচিং ক্লাসে গেলো।ছুটির পর সে রিশার সাথে কোচিং এর বাইরে দাড়িয়ে রিকশা খোজ ছিলো।তখন ইফতির গাড়ি এসে থামলো।রুহি দেখে ভয় পেয়ে গেলো।ইফতি বললো রুহি কেমন আছো? রুহি কিছু না বলে চলে যেতে লাগলো।ইফতি বললো রুহি তুমি যাবা না। দেখো আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি অনেক সুখ দিবো।তুমি একবার বলো আমাকে ভালবাসো প্লিজ । রুহি বললো ইফতি আমাকে যেতে দাও প্লিজ।এরপর রুহি রিকশা চরে চলে গেলো।ইফতির রাগ আরো বারলো।

রুহি হোস্টেলে যাওয়ার আগে নতুন একটা সিম কিনলো।ঐ সিম দিয়ে নিশান কে ফোন দিলো।নিশানকে বললো আগের সিম টা নষ্ট হয়ে গেছে তাই এটা কিনছি।নিশান বললো আচ্ছা ঠিক আছে।এখন ফোন চালানো বাদ দিয়ে তুই পড়তে বস যা।

ইফতি রুহি ফোন দিচ্ছে কিন্তু অফ আসছে।তার কাছে পাগলের মতো লাগছিলো কেনো রুহির সাথে সে কথা বলতে পারবে না।এ কদিন কথা বলে রুহির সাথে কথা বলে ইফতি খুব বেশি দুর্বল হয়ে পরছে।সে রুহিকে দেখার জন্য হোস্টেলের সামনে গেলো। খুব চিৎকার করলো কিন্তু রুহি বের হলো না।পরে দাড়োয়ান ইফতিকে ওখান থেকে চলে যেতে বলে।রুহির কোচিং বন্ধ এটা ইফতি জানতো না।সে প্রতিদিন রুহির কোচিং এর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতো কিন্তু রুহিকে পেতো না।রাতের বেলা হোস্টেলের সামনে যেতো ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতো কিন্তু রুহিকে পেতো না।

১৫-২০ দিন এমন চলতে লাগলো।ইফতির অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগলো।ইফতির বেস্ট ফ্রেন্ড রকি তাকে খুব বোঝাতো যে রুহি ছারা দুনিয়াতে অনেক মেয়ে আছে। রুহি কে ভুলে যা।ইফতি রেগে বললো রুহি সবার মতো না।আমি রুহিকে ভালবাসি। ওরে না পেলে মরে যাবো। আমি যেকোনো ভাবেই ওকে চাই।

আজ ইফতি প্রতিদিনের মতো হোস্টেলের বাইরে দাড়িয়ে আছে।আজ রুহির বাইরে বের হতে হবে।সামনে ঈদ তার মা ঢাকা এসেছে তাকে শপিং করাতে।রুহি উপর থেকে দেখলো ইফতি এখনও নিচে দাড়ানো।পরে সে বোরকা পরে বের হলো।ইফতির সামনে দিয়ে গেলো কিন্তু ইফতি বোঝতে পারলো এটা রুহি।রুহি রিকশা নিলো ইফতি তাকে ফলো করতে লাগলো। ইফতি রুহিকে ফলো করতে করতে শপিং মলের সামনে গেলো। রুহি রিকশা থেকে নামার পর পিছন থেকে ইফতি ডাকলো।রুহি শোনো একটা বার শোন প্লিজ।রুহি ভয় পেয়ে তারাতারি হাটতে লাগলো।পিছন থেকে ইফতি এসে রুহির হাত ধরলো।

ইফতি:রুহি এতো বড় শাস্তি দিয়ো না প্লিজ। ৫ টা মিনিট তো কথা বলো আমার সাথে।তখন নিশান চলে এলো। নিশান রুহি হাত জোর করে ধরতে দেখে প্রচন্ড রেগে গেলো।

নিশান :বললো প্রবলেম কি তোর ইফতি কি শুরু করছিস তুই?

ইফতি: নিশান আমি রুহি কে ভালবাসি তুই আমার আর রুহির মাঝে আসবি না।

নিশান: তোকে আমার চেনা আছে তুই কাউকে ভালবাসতে পারিস না।
এরপর রুহি ইফতি কে বললো দয়া করে আমার পিছু নিয়ো না প্লিজ।তারপর নিশানকে বললো চল নিশান মা ওয়েট করছে।এই বলে ভিতরে চলে গেলো।

ইফতি সেদিন বাসায় এসে তার ঘরের জিনিস পত্র ভাংচুর করলো।তার মা নেই। বাবা অফিসের কাজে বাইরে থাকে।কাজের লোকেরা অনেক শান্ত করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।এরপর একজন ফোন দিয়ে রকি কে বাসায় আনালো।রকি ইফতির রুমে ঢুকে পুরো শকড কি অবস্থা এসব।পুরো রুমে রুহির ছবি লাগানো।রুহি অনুষ্ঠানের নাচের আর অভিনয়ের ছবি।রকি দেখলো ইফতি বসে কান্না করছে।রকি এর আগে ইফতিকে কখনও কান্না করতে দেখেনি।এই প্রথম দেখছে।রকি ইফতির কাধে হাত দেওয়ার পর ইফতি বললো রুহিকে এনে দে দোস্ত আমার কিছু চাই না আমি ওকে ভালবাসি প্লিজ দোস্ত।রকি পুরো অবাক কি বলছে ছেলেটা মাথা ঠিক আছে তো।ইফতির মতো ছেলে কোনো মেয়ে কে ভালবাসতে পারে এটা কখনও সম্ভব না।রকি বোঝতে পারলো ইফতি সত্যি রুহিকে ভালবাসে আর রুহি তার পাগলামিতে পরিনত হইছে।

এদিকে রাতে নিশান ডায়রি লিখতে বসলো। ডায়রির পাতায় লিখলো।”রুহি তোকে আমি অনেক ভালবাসি আর বাসবো সব সময়।অনেক আগেই হয়তো তোকে প্রপোজ করতে পারতাম আমি কিন্তু করিনি।আর এখনও করবো না।আমি চাই না আমার জন্য তোর লক্ষ্য নষ্ট হোক।তোর লক্ষ্য তুই বড় হয়ে রবিন আর ঐ আঙ্গের মত পশুদের শাস্তি দিবি আমি চাই তুই দে।তোর চোখের পানির মুল্য অনেক বেশিরে ঐ পশুদের জন্য কাঁদতে হইছে তোকে।যতদিন পর্যন্ত না আমি নিজের পায়ে দাড়াই ততদিন তোকে এসব জানাবো না কিছু।কিন্তু আমার না ভয় হয়। তোর সামনে গেলে না দুর্বল হয়ে পরি আমি এখন তোকে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে আমার। আমি একটা জিনিষ পণ করেছি সারাজীবন তোর পাশে ছায়া হয়ে থাকবো তুই চাইলেও না চাইলেও”।

রুহি হোস্টেলে বসে ইফতির টেনশনে শেষ।কি করছে ছেলেটা পাগল হলো না তো।এমন কেনো করছে ও।কি হলো হঠাৎ করে ওর।এদিকে দড়জায় হঠাৎ করে নক করলো একজন। রুহি দড়জা খুলে দেখলো দাড়োয়ান চাচা।এরপর রুহি জিগেস করলো কি হইছে চাচা? দারোয়ান বললো তোমার জন্য একটা পেকেট দিয়ে গেলো একটা ছেলে। এখনও মনে হয় নিচে দাড়িয়ে অনেক মানা করছি তাও দাড়িয়ে আছে। রুহি বললো চাচা ও জাতে আর কখনও না দাড়াতে পারে।

রুহি পেকটা খুললো। দেখলো একটা চিঠি আর কিছু ছবি।”রুহি সেদিন এর ছবিগুলো।তোমাকে কি সুন্দর লাগছে দেখো।আমি আমার রুমের প্রতিটা কর্নারে এই ছবি গুলো লাগিয়ে রেখেছি যাতে তুমি সবসময় আমার সামনে থাকো।আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।আর তোমাকে আমার চাই মানে চাই।আমি তোমার জন্য ওয়েট করছি তুমি একটা বার বারান্দায় আসো”।রুহির মাথা গরম হয়ে গেলো চিঠিটা পরে।সে বারান্দায় গেলো দেখলো ইফতি তখনও দাড়ানো।রুহিকে দেখে চিৎকার করে বললো আই লাভ ইউ রুহি। রুহি রুমে চলে গেলো।এরপর দারোয়ান ইফতিকে জোর করে বের করে দিলো। রুহির রুমে গিয়ে অসহ্য লাগছিলো কান্না করতে লাগলো ।সে নিশান কে জানিয়ে টেনশন দিতে চাচ্ছিলো না কারন সামনে নিশানের ফাইনাল পরীক্ষা। তাই সে ডিসাইড করলো ইফতির সাথে দেখা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিবে। রুহি ডিসিশন নিলো যে সে আজ ইফতির সাথে দেখা করবে।রুহি রাত ১১ টার দিকে অনেক ভেবে কল দিলো ইফতিকে।ইফতি আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করে বললো রুহি আমি জানতাম তুমি ফোন দিবা।রুহি পুরো অবাক ইফতি কিভাবে জানলো?

রুহি : ইফতি কাল তোমার সাথে আমি দেখা করতে চাই কিছু বলার আছে তোমাকে।

ইফতি: আমি জানি তুমি কি বলবে।কিন্তু রুহি কাল আমি যেখানে বলবো সেখানে আসবে ওকে।

রুহি:আমি দূরে কোথাও যেতে পারবো না।

ইফতি :দুরে না কাছেই জায়গার নাম মেসেজে বলে দিচ্ছি।

রুহি:বাই

ইফতি:আরেকটু কথা বলি প্লিজ রুহি।তুমি কেনো বুঝো না তোমাকে কতটা ভালবাসি।

রুহি:বাই।

এরপর রুহি ফোন কেটে দিলো।আর ভাবতে লাগলো কাল তার কথায় ইফতি কেমন রিয়েক্ট করবে?নিশান জানলে নিশান কেমন রিয়েক্ট করবে? যাই হোক কাল আমি ফাইনাল ডিসিশন নিবো।এভাবে আর চলতে পারে না।রিশা এসে রুহির পাশে বসলো বসে বললো রুহি এভাবে আর কয়দিন। ইফতি তোর প্রেমে তো পুরো পাগল হয়ে গেছে।ও যেকোনো কিছু করতে পারে।রুহি বললো টেনশন করিস না কালকের পর ইফতি কোনো প্রবলেম করবে না। আর শোন তুই নিশানকে কিছু বলবি না।ওর পরীক্ষা সামনে। রিশা বললো আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু নিশান পরে জানলে তো কষ্ট পাবে। রুহি বললো আমি বুঝিয়ে বলবো। নিশান সকালে রুহিকে ফোন দিলো।বললো রুহি বিকেলে একটু দেখা করিস তো।রুহি বললো আজ পারবো না রে কাল করি। নিশান বললো আচ্ছা ঠিক আছে।রুহির ফোনে ইফতির মেসেজ আসলো।রুহি ইফতির কথা মত সেখানে গেলো।দেখলো ইফতি ওয়েট করছে।রুহি সামনে আসার পর ইফতি বললো,

ইফতি :আমি জানতাম তুমি আসবে।

রুহি : ইফতি আমার তোমাকে কিছু বলার আছে।

ইফতি: আমি জানি তুমি কি বলবে।

রুহি :কী?

ইফতি: তুমিও আমাকে ভালবাসো তাই না রুহি।বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমার মতো তোমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না রুহি।

রুহি :ইফতি তুমি থামো। শুধু উপরের রূপ টা দেখেই ভালবাসতে চেয়েও না। আমার সম্পর্কে কিছু জানো তুমি?আমি কোথা থেকে আসছি।কি পরিচয় আমার? আমার অতীত কি? কিছু জানো না তুমি।জানলে আমার মুখও দেখতে চাইতে না ভালবাসা তো দূরে থাক।

ইফতি: আমি তোমাকে শুধু তোমার রূপ দেখে ভালবাসি নি। তোমাকে আমার ভাল লাগে তুমি সবার থেকে আলাদা।আমার এর আগে অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো কিন্তু তোমার মতো না কেউ ছিলো না। তুমি আলাদা। আর তুমি কে কোথা থেকে আসছো এসব আমি জানতে চাই না।

রুহি:তোমাকে শুনতেই হবে।তুমি জানো আমার বাবা মায়ের পরিচয় আমি জানি না। এই মেয়েকে তো আর তুমি ভালবাসবে না তাই।(রুহি ভাবলো এবার হয়তো ইফতি থেমে যাবে)

ইফতি: আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকেই চাই। তোমার বাবা মায়ের পরিচয় দিয়ে কি করবো।

রুহি: আরো একটা কথা আছে যা তোমার জানা দরকার।

ইফতি: আমি আর কিছু জানতে চাই না।

রুহি: (এবার তার কোনো উপায় নেই ইফতিকে সত্যটা না জানিয়ে)তুমি জানো আমার রেপ হইছে।তাও একবার না কয়েকবার নিজের মামার কাছে।

ইফতি: কী???????

রুহি: যা বলছি সত্যি আমি আমার মামার দ্বারা ধর্ষিত হইছি।আমার তো অ্যবোয়েশন ও করানো হইছে।বাবার পরিচয় ছারা একটা মেয়ে কে তুমি তোমার বউ বানাতে পারো কিন্তু ধর্ষিত মেয়ে কে নয়।আমি জানি এই কথা টা শোনার পর থেকে আমার প্রতি তোমার আর কোনো ভালবাসা নেই। থাকারও কথা না।আমার মনে হয় তুমি আজকের পর থেকে আর পাগলামি করবে না।কথা টা মাথায় রাইখো। আমি তোমাকে সত্যি টা জানাতে চায়নি কিন্তু আমার কাছে কোন উপায় ছিলো না।ভাল থেকো ইফতি।আর এভাবে পাগলের মতো ভাল অন্য কোনো মেয়েকে বাইসো আমার মতো ধর্ষিতো কাউকে না রুহি চলে গেলো ইফতি শুধু দাড়িয়ে থেকো দেখলো।রুহি পিছনে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা পুরো পাথরের মত হয়ে গেছে।শক্ত হয়ে দারিয়ে আছে।রুহি হোস্টেলে ফিরে খুব কাদলো।কারন আজ আবার সেই পুরোনো কথা গুলো অন্যভাবে মনে করতে হইছে তাকে।রুহি ভাবলো এখন হয়তো আর ইফতি তাকে জ্বালাবে না। তার পিছু ছারবে।কারন এ কথা গুলো জেনে কোনো ছেলেই মেনে নিতে চাইবে না।

পরদিন বিকেলে রুহি বের হলো হোস্টেল থেকে। নিশানের সাথে দেখা করতে। রুহি দেখলো আজ সেখানে ইফতি দাড়িয়ে নেই। রুহি অনেক খুশি হলো।এরপর সে শান্তি তে নিশানের সাথে দেখা করতে গেলো।যাওয়ার আগে একটা শপিং সেন্টারে গেলো।তার মা যে তাকে প্রতিমাসে টাকা দিতো ঐ টাকা জমিয়ে নিশানের জন্য ভাল একটা ফোন কিনলো।কারন কিছুদিন আগে রুহির ফোন রুহি নষ্ট করে ফেলছে।পরে নিশান নিজের ফোন রুহিকে দিয়ে দেয় আর নিজে খুব কম দামি একটা ফোন ব্যবহার করতো। নিশান রুহির জন্য হাতে একটা পেকেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে।রুহিকে বললো রুহি এটা নে তোর জন্য। রুহি খুলে দেখলো অনেক সুন্দর একটা ড্রেস কিছুদিন আগে পছন্দ করছিলো সেটা।নিশান কে রুহি ফোনটা গিফট করলো।নিশান রুহি কে বললো এতো দামি ফোন এতো টাকা কই পেলি? রুহি বললো ঐ টা তোর ভাবতে হবে না।তুই এটাই ব্যবহার করবি।নিশান বললো আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু এমন পাগলামি আর করবি না। এদিকে ১৫ দিন কেটে গেলো ইফতির কোনো খোজ খবর নেই।রুহিরও ইফতির জন্য খারাপ লাগছে না কারন এ কদিন ইফতির পাগলামি তে সে অসহ্য হয়ে গেছিলো।রুহি পড়তেছে আর তখন আননোন নাম্বার থেকে একটা ফোন আসলো।রুহি কল রিসিভ করে-

রুহি: কে?

রকি :আমি ইফতির বন্ধু রকি

রুহি: কেনো ফোন দিছো?

রকি: রুহি ইফতির শরীরটা খুব খারাপ তুমি একটাবার ওর সাথে দেখা করো প্লিজ।

রুহি: কি হইছে ওর?

রকি: খুব অসুস্থ প্লিজ আসো।।

রুহি: ওকে কিন্তু কোথায়?

রকি: আমি তোমাকে মেসেজ এ বলছি।

রুহি ভাবলো হাজার হোক মানবিকতার খাতিরেও তার একবার ইফতি কে দেখতে যাওয়া উচিত।পরে ভাবলো এবার আর একা যাবো না কাল সকালে নিশানকে নিয়ে যাবো।নিশান কে রুহি ফোন দিলো কিন্তু নিশান ফোন পিক করলো না কারন সে ঘুমিয়ে ছিলো কাল সারারাত পরেছে।এরপর রুহি নিশানকে মেসেজ দিলো এবং মেসেজ এ সব কথা বললো কেনো যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছে। রুহি ইফতিকে দেখার জন্য ইফতির বাসায় গেলো।রুহিকে ইফতির কেয়ার টেকার জিগেস করলো তার নাম কি? রুহি তার নাম বললো।এরপর তিনি তাকে ইফতির রুমে নিয়ে গেলো। রুমে ঢুকে দেখলো ইফতি রুমে নেই। কিন্তু একটা জিনিষ দেখে সে পুরোই অবাক পুরোটা রুমে তার ছবি লাগানো।এরপর রুমে ইফতি এলো।

ইফতি:এসে বললো রুহি জানো এতোদিন আমি কেনো তোমার সামনে যায়নি?

রুহি: কেনো?

ইফতি: দেখতেছিলাম আমি কি সত্যি তোমাকে ভালবাসি কি না।অনেক ভেবে দেখলাম আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি।তোমার বাবা মায়ের পরিচয় নেই তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তুমি ধর্ষিত হয়েছো তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি তার পরও তোমাকে ভালবাসি আর ভালবাসবো।

রুহি: পুরো অবাক হয়ে বললো ইফতি তোমার মাথা ঠিক আছে?

ইফতি: হিম রুহি।কিন্তু একটা জিনিষ জানো কি আমি কখনও হারতে শিখিনি জীবনে তাই তোমাকেও হারাতে চায়নি। তাই এমন করেছি।আমি তোমাকে সত্যি ভালবাসি।

রুহি: আমি তোমাকে ভালবাসতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার লক্ষ্য একটাই ঐ পশু গুলো কে শাস্তি দেওয়া।আর আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।জানি তাকে কখনও পাবো না তারপরও ভালবাসি। এই বলে রুহি চলে যেতে লাগলো। ইফতি তখন বলে উঠলো রুহি সেদিন ড্রেসিংরুমে তোমার জামা টা আমিই নষ্ট করছিলাম। কারন ঐ টা ছারা আমার কোনো ওয়ে ছিলো না তোমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার।তুমি আমাকে মাফ করো।আর আমি আগামীকাল লন্ডন চলে যাবো এখন থেকে ঐ খানেই থাকবো। এখানে থাকলে বাচতে কষ্ট হবে। আমি সারা জীবন তোমাকে একদফা ভালবেসে যাবো। নিশান ঘুম থেকে উঠে রুহির মেসেজ দেখে খুব রাগ করলো নিজের উপর।এখন যদি ইফতি রুহির কোনো ক্ষতি করে সে নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবে না।সে তারাতারি করে শার্ট পরে বের হয়ে গেলো। রাস্তায় রুহি ফোন দিলো। ফোন দিয়ে কান্না করছে নিশান ভয় পেয়ে গেলো।নিশান বললো রুহি কাদসিস কেনো ঐ জানোয়ার টা আবার কি করছে? রুহি বললো নিশান তুই তারাতারি লেকের পারে আয় প্লিজ।

নিশান রুহির কথা মতো লেকের পারে আসলো।এরপর রুহি নিশানকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলো।নিশান বললো ও কি করছে তোকে বল আমাকে। রুহি সব বললো নিশানকে। নিশান ইফতির পরিবর্তনে পুরোই শকড।রুহি বললো আমার জন্য সবাই কষ্ট পায় তুই মা সবাই আমার বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। মরে যাওয়াটাই ঠিক।নিশান যে কথা টা এতো দিন বলতে চায়নি মনের অজানন্তে সে কথাটাই বলে ফেললো।”রুহি তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাচবো আমি যে তোকে ভালবাসি খুব বেশি সেই প্রথম দেখা থেকেই”।রুহি কিছু না বলে চলে গেলো। রুহি হোস্টলে এসে কাঁদতে লাগলো।রিশা এসে জিগেস করলো কী হইছে রুহি? রুহি বললো কিছু না মায়ের কথা মনে পরছে।এই বলে ওয়াসরুমে চলে গেলো।সে নিশানকে ভালবাসে কিন্তু সে মনে করে সে নিশানের যোগ্য না।নিশান আরোও ভাল মেয়ে ডিজার্ভ করে।

এদিকে নিশান নিজেকে দোষারুপ করে যাচ্ছে।কেনো সে এসব বলতে গেলো রুহিকে। এখন রুহি যদি তার সাথে কথা না বলে,তার সাথে বন্ধুক্ত না রাখে? রুহি যদি ভাবে নিশান তার নিজের সার্থের জন্য এতোদিন তার সাথে ছিলো।নানান প্রশ্ন নিশানের মাথায় ঘোরপাক খায়।সে ভাবে কোন মুখ নিয়ে রুহির সামনে গিয়ে দাড়াবে সে।পরে নিশান রুহিকে সরি বলার জন্য অনেকবার ফোন দেয় কিন্তু রুহি একবারও রিসিভ করে না। ৩ দিন কেটে গেলো।রুহির সাথে নিশানের কোনো যোগা্যোগ নেই।নিশান অনেকবার চেষ্টা করছে কিন্তু রুহি করেনি।আজ রুহি ডিসাইড করলো সে নিশানের সাথে দেখা করবে সব তাকে বলবে।রুহি নিশানকে টেক্সট দিলো সে যাতে লেকের পারে চলে আসে।তার সাথে কথা আছে।মেসেজ দেখে নিশান অনেক বেশি খুশি হলো। নিশান লেকের পারে গেলো যেয়ে দেখে রুহি বসে আছে,

নিশান: আমাকে মাফ করে দে প্লিজ। আমার এটা তোকে বলা ঠিক হয়নি। তুই হয়তো আমাকে সেলফিস ভাবছিস।যে নিজ স্বার্থের জন্য এমন করছি।

রুহি: নিশান আমি ঐ সব কিছু ভাবছি না।তুই খারাপ না তুই সবথেকে ভাল। তোর মতো কেউ না।তুই কখনও নিজ স্বার্থের জন্য আমাকে সাহায্য করিস নি।সত্যি বলতে তোর মতো ছেলে কে জীবনসাথী হিসেবে পাওয়া আর আকাশের চাদ পাওয়া এক কথা।সব মেয়েরাই তোর মতো ছেলেকে মনে প্রানে চায়।আমিও চাই কিন্তু সম্ভব না।

নিশান: কেনো সম্ভব না বল?আন্টিকে আমি মেনেজ করবো। আমার পরিবার কেউ আমি মেনেজ করবো।তাহলে সমস্যা কই?

রুহি : তুই আমার থেকে ভাল কাউকে ডিজার্ভ করিস।আমি তো খারাপ অপবিত্র।

নিশান: আর একটা বার যদি এসব কথা বলিস আর জীবনেও আমার মুখ দেখার ভাগ্য তোর হবে না রুহি। তুই আমার কাছে ফুলের মতো পবিত্র। যার কোনো পাপ নেই।

রুহি: নিশান এতো ভাল কেন বাসিস আমাকে তুই।একটু কম বাসতে পারিস না।(কান্না করতে করতে হাসি দিয়ে)

নিশান: তোর মতো পাগল রে কে ভালবাসে হুহ আমার আর কাজ কাম নাই তো।

রুহি : আরেকবার এই গুলা বললে মেরে ফেলবো একদম।

নিশান: ভালবাসি পাগলিটা অনেক বেশি।

রুহি: ভালবাসি।

রুহি আর নিশান একে অপর কে প্রচন্ড ভালবাসতে লাগলো।এদিকে নিশানের এইচ.এস.সি এক্সামের রেজাল্ট দিসে।সে ফাস্ট ডিভিশন পাইছে।নিশানের থেকে রুহি বেশি খুশি।নিশানকে রুহি বললো এবার তোকে ডাক্তার হতে কেউ আটকাতে পারবে না আল্লাহ ছাড়া।নিশান বললো এতো খুশি না হয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে লক্ষ্য রাখ তোর কাজ কিন্তু একটাই।নিজের পায়ে দাড়িয়ে ঐ শয়তান গুলা কে শাস্তি দেওয়া।রুহি বললো আমার মনে আছে নিশান। প্রত্যেক টা ব্যাক্তি কে আমি শাস্তি দিবো। নিশানও রুহির লাইফটা খুব সুন্দর যাচ্ছে।নিশান নিশান মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট আর রুহি ল নিয়ে পড়ছে।আর কিছুদিন বাকি তাহলেই সে একজন লয়ার হবে।রুহির সব কিছুতে ফাস্ট ক্লাস।

মিরাকে রুহি ফোন দেয়।তার আজকে সার্টিফিকেট দিবে সে আজ থেলে লয়ার হবে।মিরাকে রুহি আসতে বলে ঢাকায় অনুষ্টানে তার পাশে থাকার জন্য দেখার জন্য।তখন আলহাজ্ব সাহেব ফোনের কথা গুলো শুনে ফেলে।কিন্তু সে মিরাকে কিছু বলে না।মিরা ঢাকা আসার জন্য রওনা হয়।আলহাজ্ব সাহেব ও তার পিছু ঢাকায় চলে আসে।
রুহির সাথে দেখা করার জন্য মিরা আসে।মিরাকেকে রুহির সাথে দেখে আলহাজ্ব সাহেব পুরো অবাক।কি দেখছে সে এগুলো! হঠাৎ করে রুহির চোখ পরে আলহাজ্ব সাহেবের দিকে।সে ভাবে হয়তো এমনেতেই দেখছে।কিন্তু একটু পর খেয়াল করে দেখে আসলেই তার বাবা।সে একবার বাবা বলে উঠে।তারপর চলে যেতে লাগে।পিছন থেকে রুহি কে আলহাজ্ব সাহেব ঢেকে বলে বাবার বুকে একটা বার আসবি না মা।রুহি পুরো অবাক কি বলছে মানুষ টা! সে তো আমাকে দেখতেই পারতো না কিন্তু আজ!! এরপর আলহাজ্ব সাহেব রুহির সামনে গিয়ে বললো আমাকে মাফ করে দে মা আমি তোর সাথে সবসময় কুকুরের মতো আচরণ করেছি।কিন্ত যেদিন তোর চিঠিটা পড়েছিলাম সেদিনই বুঝতে পারছি তোকে আমি কতটা কষ্ট দিয়েছি।এরপর রুহি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাদলো।পরে অনুষ্ঠানে বাবা আর মা কে নিয়ে গেলো। সাথে নিশান ও ছিলো।

কিছুদিন পর রুহির ইন্টার্নি শেষ হলো। সে এখন কেস লড়াই করার জন্য প্রস্তুত এদিকে নিশানেরও পড়াশোনা শেষ।জব হওয়া বাকি।রুহির বাবা মা বললো নিশান কে ঢেকে অনেক তো দেড়ি হলো এবার তোমরা বিয়েটা করে ফেলো।নিশান তোমার মা বাবার কোনো আপত্তি নেই তো আলহাজ্ব সাহেব জিগেস করলো।নিশান বললো না আঙ্কেল নেই। তাদের সাথে অনেক আগেই কথা হইছে তারা সব জানে।রুহি এসে বললো আমার আপত্তি আছে।আমি এখন বিয়ে করবো না বাবা। আমার এখনও একটা কাজ বাকি। কি কাজ মা? আলহাজ্ব সাহেব বললো।রুহি বললো রবিন আর ঐ আঙ্কেল টা কে শাস্তি দিতে হবে।আলহাজ্ব সাহেব বললো মা এসব কথা এখন ভুলে যা প্লিজ। যা হওয়ার হয়ে গেছে।এখন তোর জীবন টা অনেক সুন্দর তুই আর নিশান নতুন করে জীবন টা শুরু কর।নিশান বললে আঙ্কেল রুহির সাথে আমি একমত।আমি রুহি এতোদিন কষ্ট করছি ঐ অমানুষ গুলো কে শাস্তি দিতে। আমরা আমাদের লক্ষ্যের খুব কাছে এখন আর কিছু হারাতে চাই না। আলহাজ্ব সাহেব বললো আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা যা ভাল মনে করো তাই হবে।

পরদিন রুহি নিশানের সাথে থানায় গেলো রবিন আর মিরাজ সাহেবের নামে কেস করতে।পুলিশ মামলা লিখলো।৫ দিন পর রবিনের বাসায় ফোন গেলো যে সে যাতে ৭ দিন এর মধ্যে ঢাকায় আসে তার নামে মামলা করা হইছে।এরপর পুলিশ তাকে বললো আপনি পালানোর কোনো চেষ্টা করবেন না কারন কলকাতা পুলিশের সাথে কথা হইছে তারা আপনাকে থানায় রাখবে। ৭ দিন পর বাংলাদেশে চালান করে দিবে। রবিনের পুরো মাথা গরম কি হচ্ছে এসব।এতো দিন পর ঐ মেয়ে কই থেকে আসলো।রবিন তার উকিল কে ফোন দেওয়ার আগেই পুলিশ তার বাসায় এসে ঢুকলো।
রবিন তার উকিল কে থানায় গিয়ে ফোন দিয়ে তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে বললো।পুলিশ তার উকিলকে বললো এখন সম্ভব না কিছু করা।মামলা কোর্টে চলে গেছে। আপনাদের যা করার আদালতে গিয়েই করতে হবে। ৭ দিন পর কলকাতা থানা থেকে রবিনকে ঢাকায় আনা হলো। মিরাজ সাহেবকে ও থানায় আনা হলো।আজ আদালতের প্রথম দিন। রুহি তার নিজের মামলা নিজেই লড়বে। নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে।রুহি সকাল থেকে খুব ভয়ে আছে। রুহি যখন রেডি হচ্ছিলো তখন নিশান খেয়াল করছিলো যে রুহির হাত পা প্রচন্ড রকম ভাবে কাপছে।নিশান রুহি কে বললো এদিক আয়। তারপর রুহি কে খাটে বসালো এরপর বললো,

নিশান:কি হইছে তোর?

রুহি : আমার ভয় লাগছে খুব।

নিশান:কেনো?

রুহি: আজ কত বছর পর আবার ঐ অমানুষ গুলার সামনে যেতে হবে।ভেবেই ভয় লাগছে।

নিশান: রুহি আমার দিকো তাকা। আমরা এতো কষ্ট কেনো করছি বলতো? ওদের শাস্তি দিতে তাই না। তাহলে আজ যখন আমরা এতো কাছে আমাদের লক্ষ্যের তুই ভয় কেনো পাচ্ছিস? কোনো ভয় নেই তোর আমি তো আছি তাই না।

রুহি: নিশান তুই যদি আমার সাথে থাকিস আমি সব বাধা বিপত্তি পার করতে পারবো। এরপর নিশান রুহি মিরা আর আলহাজ্ব সাহেব আদালতে গেলো।জজ সাহেব আসলো।রবিন কে আনা হলো। রবিনকে দেখে রুহির হাত পা কাপতে শুরু করলো।তার আগের সব কথা মনে পরতে থাকলো একটা একটা করে।তাকে জজ তার মামলা বলতে বললো কিন্তু রুহি কিছু বলতে পারছে না। তার মুখ দিয়ে বের হওয়া কথা গুলো ছন্ন ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সে কিছুতেই গুছিয়ে কথা বলতে পারছে না। এদিকে রবিনের উকিল একটার পর একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়েই যাচ্ছে রুহির নামে।রুহি কোনো প্রমান স্বাক্ষী আদালতে আনতে পারলো না জজ সাহেব মামলার পরের তারিখ দিলো। রুহি আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।নিশান এসে বললো রুহি তোর এতো দুর্বল হলে চলবে না।তোর ঐ পাপী কে শাস্তি দিতেই হবে যে ভাবেই হোক।রুহিকে অনেক বোঝানোর পর রুহি থামলো।বাসায় গেলো রুহি তার বাবা মায়ের সাথে।রুহি নিজে কে শক্ত করলো।এরপর মনিষা কে ফোন দিলো।

মনিষা: কে?

রুহি: মামি আমি রুহি।

মনিষা: এতো দিন পর কেমন আছিস মা।

রুহি : ভাল তুমি?

মনিষা: আর ভাল তোর মামার নামে কে জেনো মামলা করছে।আমাকে কিছু বলে নাই

রুহি : আমি করছি মামি।

মনিষা: তুই কেনো মা। সে যা করছে তা অনেক আগে ভুলে যা মা।

রুহি: কি বলছো ভুলে যাবো? কখনও সম্ভব না। কতটা কষ্ট আমি সইছি তা আমি জানি।এতোগুলো বছর লুকিয়ে জীবনযাপন করছি।শুধু একটা কারনেই।রবিনের মতো কুকুর দের শাস্তি দিতে।

মনিষা: ভুল তো মানুষই করে মা তুই ওকে মাফ করে দে মা।

রুহি: ঐ টা তার ভুল ছিলো না ঐ টা ছিলো পাপ।আর পাপ না শুধু মহাপাপ। এই পাপের কোনো ক্ষমা নেই।তুমি সেদিনও সত্যিটা গোপন করেছিলে মামি তাই আমার এতো টা কষ্ট হইছে সেদিন যদি সব বলতে আমি এতো টা কষ্ট করতাম না।তোমারও একটা মেয়ে আছে ওর সাথে যদি কেউ এমন করে সে তোমার যাই হোক না কেনো তুমি চুপ করে বসে থাকতে পারবে? পারবে না। আদালতের পরের তারিখ দিছে ঐ দিন আদালতে এসো তবে রবিনের স্ত্রী হয়ে না একজন নারী হয়ে। এই বলে রুহি ফোন কেটে দিলো। ফোন টা রেখে রুহি বসে রইলো চুপচাপ। তখন নিশান রুমের দড়জায় নক করলো,

নিশান: আসবো?

রুহি: চলে আয় তোর আবার পারমিশন লাগে।

নিশান: খুব টেনশনে আছিস তুই তাই না। তুই ভাবতেছিস আমি কিভাবে ঐ পশুর সামনে দাড়াবো আগের সব তো মনে পরে, চোখের সামনে ভেস উঠে।আমার কাছেতো কোনো স্বাক্ষী প্রমানও নাই তাহলে কিভাবে ঐ পশুটাকে শাস্তি দিবো।এইটা ভাবতেছিস তাই না।

রুহি : নিশান কিভাবে এতো বুঝিস তুই আমাকে বলতো।আমি এতো লাকি কারন আমি তোকে পাইছি।ভালবাসি অনেক বেশি।

নিশান: আমিও ভালবাসি। শোন কাল তুই দুর্বল হবি না। যদি দুর্বল হস তাহলে রবিন ভাববে তুই ওকে ভয় পাস।

রুহি : কিন্তু নিশান আমার কাছে তো কোনো প্রমান নেই তাহলে কিভাবে।

নিশান: তুই একজন উকিল তুই জানিস তোর কিভাবে কি করতে হবে।

পরদিন আদালতের তারিখ ছিলো।আজ রুহি রবিনকে দেখে ভয় পাচ্ছে না কারন তার নিশানের কথা গুলো সব মনে পরতেছিলো।রুহি প্রথমেই তার মামলা টা জজের সামনে রাখলো।এরপর রবিনকে নানা প্রশ্ন করলো কিন্তু রবিনের উকিল মাঝখানে নাক গলাচ্ছিলো। এক পর্যায় রবিনের মুখ দিয়ে সত্যি টা বের হয়ে গেলো।রুহি তাকে অনেক প্রশ্নের মাঝে একটা প্রশ্ন করছিলো।”জনাব রবিন আপনি কি রুহিকে প্রতিরাতে ছাদে নিয়ে গিয়ে শারীরিক অত্যাচার করতেন না আপনার বন্ধুদের সাথে মিলে “উত্তর দিন।তখন রবিন বলে উঠলো” আমি তো প্রতিরাতে রুহির ঘরে গিয়েই তার সাথে এমন করতাম বিশ্বাস না হলে আমার বউকে জিগেস করেন “।পুরো আদালতের মধ্যে হৈচোই পরে গেলো কি বলছে এসব।রবিন নিজেও অবাক কিভাবে সে সব সত্যি স্বীকার করলো। এরপর রুহি শান্তি পেলো একটু।তখন রবিনের উকিল বলে উঠলো এসব তাদের চক্রান্ত তাদের কাছে তো কোনো স্বাক্ষী নেই। তখন রুহিকে পেছন থেকে নিশান বললো তোর মামি এসেছে।তখন রুহি উঠে দাড়িয়ে বললো জজ সাহেব প্রমান আছে আমার কাছে জনাব রবিনের স্ত্রী মনিষা।

রবিন মনিষার নাম শুনে ভয় পেয়ে গেলো।তখন মনিষা এসে বললো সেদিন সে তার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ ছিলো কিন্তু আজ সে চুপ থাকবে না।পরে মনিষা সব সত্যি বললো যে তার স্বামী রুহির সাথে কি কি করছে। জজ সাহেবকে রুহি ঐ পুলিশ অফিসারের কথাও বললো যে ঘুষ খেয়ে কেস বন্ধ করে দিছিলো।তার চাকুরি চলে গেলো।রবিনের ৭ বছরের জেল হলো এবং ১০০০০০ টাকা জরিমানা হলো।মিরাজ সাহেবের ৬ মাসের জেল হলো। আদালতে সবাইকে বললো, “আমি আজকে ন্যায় পাইছি এতো বছর সাধনার পর। শরীরের আগুনটা আজকে নিভেছে খুব শান্তি লাগছে।আমাদের সমাজের কিছু মানুষ আছে যারা নারী পুরুষের মাঝে ভেদাভেদ করে। একটা নারী কে তারা কেবল নারী আর ভোগের পন্য হিসেবে দেখে মানুষ হিসেবে না। তাদের উদ্দেশ্য বলতে চাই আমি নারী কিন্তু আমিও মানুষ।আমাকে মানুষরূপে দেখো তোমরা। এরপর রবিনকে পুলিশ নিয়ে যেতে লাগলো রুহি তখন শরীরের যত শক্তি আছে সব দিয়ে রবিনকে একটা চর মারলো। এরপর আদালতের ভিতরে জোরে কান্না করতে লাগলো আর বলতে লাগলে আমি জিতে গেছি আমি জিতে গেছি।নিশান তখন রুহি কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে সান্ত্বনা দিলো রুহি আমরা জিতে গেছি। ২-৩ মাস পর রুহির সাথে নিশানের বিয়ে হলো খুব ধুমধাম করে। কিন্তু কিছুদিন পর নিশানের বাবা মারা গেলো।তারপরও জীবন থেমে থাকে না চলতে থাকে।

এই কাহিনী টা আমি আমার এক বান্ধবীর কাছে ১০-১৫ দিন আগে শুনছি।এইটা আমার ফ্রেন্ডের খালাতো বোনের জীবন কাহিনী। ও যখন বলছিলো আমার গায়ের লোম খারা হচ্ছিলো।অবশ্য ও অতটা গুছিয়ে বলতে পারেনি যতা টা আমি গুছিয়ে লিখছি। ও বলার আগে আমাকে প্রমিস করাইছিলো যে রুহি নিশান ইফতি ওদের কারো আসল পরিচয় যাতে না বলি। আমি শুধু পারমিশন নিছিলাম যে দোস্ত আমার তো রিয়াল স্টোরি লিখার হেবিট আছে তাই আমি এইটা লিখবো ও আমাকে বলছিলো আচ্ছা লিখিস কিন্তু প্রমিস ব্রেক করিস না।আমি বলছিলাম ওকে।এরপর ওকে বলছিলাম ওদের তিন জনের পিক দেখাতে।বাট ওর কাছে তখন ছিলো না ও বলছে পরে একদিন দেখাবো।আমি বলছি ঠিক আছে।যখন ওর কাছ থেকে রুহির জীবন কাহিনী শুনছিলাম আমার কান্না এসে পরছিলো।অবশ্য নিশানের প্রেমেও পরছিলাম ইফতি কে তো জোস লাগছিলো।

কাহিনী টা ওর থেকে ১৫ মিনিটে শুনছিলাম।এরপর যখন লিখা শুরু করলাম তখন নিজেকে রুহির জায়গায় রাখলাম। তারপর ভাবলাম কি কি হতে পারতো। এরপর লিখা শুরু করে দিলাম নিজের ভাষায় জানি না কতটা লিখতে পারছি কিন্তু আমি আমার বেস্ট ট্রাই করছি।রুহি নিশান ইফতির প্রকৃত নাম বলা সম্ভব না কিন্তু এতোটুকু বলতে পারি রুহি ও নিশান বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে তাদের জমজ মেয়ে আছে দুইটা নিশানের মা ও তাদের সাথে থাকে।আর ইফতি লন্ডনে বিজনেস করে।সে এখনও বিয়ে করেনি।ভাবছিলাম ইফতির সাথে কন্টাক করুম নিজের বিয়ের জন্য হিহিহি কিন্তু আমার বান্ধুবী নিজে ও ইফতির নাম্বার জানে না কারন সে যা শুনছে রুহির মুখ থেকে শুনছে।তার উপর ইফতি আমার অনেক সিনিয়র। এই ছিলো রুহি নিশান আর ইফতির টুকরো খবর।আপুরা গেট রেডি নিশানের বিয়ে হইছে বাচ্চা হইছে তো কি হইছে। ইফতি তো সিঙ্গেল। কোনো না কোনো সময় তো বাংলাদেশে আসবোই।

অবশেষে শেষ হলো “আমি নারী কিন্তু আমিও মানুষ “জানিনা কতটুকু তোমাদের জানাতে পারছি।কিন্তু পুরো ঘটনা টা বাস্তব আর নিজের ভাষায় পুরোটা লিখছি। তাই ভুল ত্রুটি হলে মাফ করে দিয়ো।সব গুলো পর্ব লিখতে পারছি নিজের ভাষায় গুছিয়ে নিজের সামর্থ্যানুযায়ী আর কাহিনীটা কেমন লাগলো জানাবেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত