মাফিয়া

মাফিয়া

-আপনি দয়া করে আমার চোখের সামনে আসবেন না
-মানে,ক্যানো?
-আপনায় দেখলে জাস্ট সহ্য করতে পারিনা।
-কিন্তু আমার ভুলটা কি?
-আপনার ভুল..আপনি অদ্ভুত।
-আচ্ছা আসবোনা।

ভার্সিটি থেকে চলে আসলাম। বালিকার প্রতি রাগ হলেও কিছুই করার প্রয়োজন মনে করিনা। সভাপতির বোন বলে কথা। রাতে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করছি,এমন সময় একটা মেসেজ আসলো “আপনি ফেসবুক আইডি Deactivate করেন।” রিপ্লে জানতে চাইলাম “কে আপু আপনি।” ১০মিনিট পর রিপ্লে আসলো “নিধি।” আমিও গুনে গুনে ১১মিনিট পর রিপ্লে দিলাম “কোন নিধি।”

-নিধি কে চিনেন না[রাগের ইমো দিয়ে]
-আজ্ঞে না।
-তুই আয় কাল ভার্সিটিতে,তোরে তো খাইছি। [এবার বুঝলাম কোন নিধি।]
-জ্বি,এখন চিনতে পেরেছি।কিন্তু আইডি Deactivate করতে হবে ক্যানো!
-আপনার আইডি সামনে আসলে আমার রাগ হয়।এখনি Deactivate দেন।
-ব্লোক দিলেই তো হয়।
-আপনি দিবেন কি না?
-দিতেছি ওয়েট।

অতঃপর Deactivate দিয়ে দিলাম এক ঘুম। যখন উঠলাম তখন প্রায় সকাল সাড়ে আটটা বাজে ধীরে-সুস্থে ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালাম। ভাগ্যক্রমে গেটের সামনেই নিধির সাথে দেখা হয়ে গেলো।

-এইযে মিস্টার রফি।
-[মুখটা ঘুরিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম।]
হুম বলেন।
-আপনাকে আমার সামনে আসতে মানা করেছিনা।
-হুম।
-তবে আসলেন যে?
-ভুল করে সামনে পরে গেছি।

এমন সময় বালিকার বড় ভাই আবির হাজির।সাথে ১০-১৫ জন তো আছেই। আবির ভাই নিধির উদ্দেশ্যে বললো “এখানে কি,যাও ক্লাসে যাও।[ধমক দিয়ে]” নিধি শুনে সোজা হাঁটা দিলো। আমিও নিধির পেছন পেছন মাত্রই দু-পা এগিয়েছি এমন সময় আবির ভাই বলে উঠলো “দাঁড়াও,তুমি কোথায় যাচ্ছো!”

-ক্লাসে যাই ভাই।
-নিধির সাথে কি কথা বলছিলা?
-ভার্সিটিতে আসতে মানা করেছিলো,তাও এসেছি সেই ব্যাপারে।
-কালকেও খেয়াল করে দেখলাম নিধির সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছো আবার আজকেও,ব্যাপার কি!
-না ভাই,কিছুনা।
-আচ্ছা পেছনে মাঠে চলো একটু,তোমার সাথে কিছু কথা বলি।

সাথে ওনার পোষা কুত্তা গুলার উদ্দেশ্যে বললো “ওই তোরাও আয়।” বুঝতে বাকি রইলোনা আজ মাইর আমার বাপো ফিরাইতে পারবেনা ভাইজান হয়তো জানেনা উনি যেই ট্রিক ব্যাবহার করছেন,সেই ট্রিকের নির্মাতা “রফি”। তারপর মাঠে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে আসছি বলে আবির ভাই চলে গেলো। আর পোষা কুত্তা গুলার কানে কানে কি যেন বললো। উনি মাঠ ছাড়তেই একজন এসে কিছু না বলে চর মারলো। কিছু বললাম না,শুধু ফেস গুলা মেমোরিতে এক এক করে সেভ করতে লাগলাম। তারপর অন্য একজন এসে লাঠি দিয়ে বুকে আঘাত করলো। কিন্তু ইট দিয়ে যখন মাথায় আঘাত করলো তখন আর ঠিক থাকতে পারলাম না। দেহটা আলতো করে মাটিতে লুটিয়ে দিলাম। কিন্তু তাতেও তাদের শান্তি ফিরলোনা। অনুভবে বুঝলাম এখনো আমায় আঘাত করে যাচ্ছে। তারপর কিছুক্ষণ বাদে সবাই চলে গেলো। মাঠের উষ্ণ রোদের মাঝে শুধু পরে রইলো আমার দেহটা। রোদের মাঝে ঝোলসে যাচ্ছি তবুও উঠে ছায়ার আশ্রয় নেবার ক্ষমতা নেই। সহ্যের সিমা যখন শেষ তখন জ্ঞান হারাম। জ্ঞান ফিরার পর সর্বপ্রথম যাকে দেখলাম সে “নিধি”। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম….

-আপনি এখানে।
-আমায় মাফ করে দিন প্লিজ,আমি বুঝিনি আমার জন্য আপনার এমনটা হবে[কান্না জড়িত কন্ঠে]
-আপনি কি আমার জন্য কান্না করছেন[হাসি দিয়ে]
-কষ্টের মাঝেও হাসি পাচ্ছে তাইনা।
-আবারো মাইর খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে নাকি।
-মানে!
-আপনি যে হাসপাতালে সেটা আপনার ভাইয়া জানলে এবার মেরেই ফেলবে।

বলেই মাথা ঘুরিয়েই দেখি আব্বু-আম্মু,দাদী,কাকা দাঁড়িয়ে। আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কিছুটা লজ্জাই পেলাম। বোকার মতন কি করবো বুঝতে না পেরে চোখ বুজে শুয়ে পরলাম। সবাই আমার কান্ড দেখে (হিহি) করে হেসে দিলো।

-হইছে,আর মুখ লুকিয়ে লাভ নেই।আমি আব্বু-আম্মুকে সব বলে দিয়েছি।
-কার আব্বু-আম্মুকে[চোখ খুলে]
-আপনার,হিহিহি।
-কি বলছেন?
-আপনার আর আমার মাঝের কথা।
-আমার আপনার মাঝে কি এমন আছে,যা বলেছেন।
-যা আছে তাই বলেছি,প্রেম-ভালবাসা…
-কিইইই[চোখ বড় বড় করে তাকালাম]
-হুম,এখন চুপচাপ থাকেন।কিছুক্ষণ বাদে ডাক্তার আসবে।

সব কিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো। টেনশন একটাই মাথায় আঘাত পেয়ে পাগল হয়ে যাইনিতো! ভাবতে ভাবতে ডাক্তার চলে এলো। এসে,রিপোর্ট গুলো দেখে কিছুক্ষণ কথা বলে বাসায় যাওয়ার পারমিশন দিলো। তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম,আফসুস সাথে নিধিও এলো। এই ম্যাইয়া আমার জান নিয়েই ছাড়বে। সারাদিন জ্বালিয়ে রাতে আসছে বাসায় এগিয়ে দেওয়ার কথা বলতে।

-আমি দিয়ে আসতে পারবোনা।
-না দিলে ভাইয়া কে বলে আবার মাইর খাওয়াবো।
-হাহ্,আপনার ভাইয়ার কি করি দেইখেন।
-কিচ্ছু করতে পারবেননা।
-না পারলে নাই।
-হুম,এখন বাসায় দিয়ে আসেন।
-আমার অবস্থা দেখেছেন!
-মরবেনতো আর না।
-দয়া মায়া নাই নাকি!
-ধুর দয়ার গুষ্টি কিলাই,চলেন তো।

বলেই কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো। এত্ত নিঠুর যে,একটা রিক্সাও নিলোনা। পুরো ৩০মিনিট হেঁটে বালিকাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে নিজের টাকায় রিক্সা ভাড়া করে ফিরে এলাম। রাতে ১০টা বাজে,এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো….
-হ্যালো বস্।
-হুম বলো।
-আবিরকে কি গায়েব করে ফেলবো?
-নাহ্ থাক,আমার সুমুন্দি হয়।তুই ওর সাথে যারা ছিলো ওদের ব্যবস্থা কর।
-জ্বি বস্,আর একটা সুখবর আছে।
-বলে ফেল।
-ড্রাগসের যে ডিলটা করতে বলেছিলেন ওটা success হয়েছে,আপনার অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন।
-আচ্ছা পরশু আর একটা ডিল আছে,ওটার ব্যপারে পরে বলবো।এখন রাখ,ঘুমাবো।

সকাল দশটায় ঘুম ভাঙতেই চা হাতে টিভির সামনে বসলাম। ব্রেকিং নিউজে বাড় বাড় দেখাচ্ছে,এক রাতে ১৫ জন নিহত। তখন পকেট থেকে মোবাইলটা বেড় করে কল দিলাম।

-হ্যালো….
-জ্বি বস্।
-তুই এইটা কি করছিস,ছোট-খাট বিষয়ের জন্য মার্ডার করে দিলি।
-আপনার গায়ে হাত তুলছে বস্,আরিফকেও খেয়ে দিতাম।শুধু আপনার জন্য বেঁচে গেলো।
-আচ্ছা বাদ দে।আমি উকিল কে বলে কেস ম্যানেজ করে নিচ্ছি,রাখি। দুপুরে শুয়ে আছি,এমন সময় নিধি হাজির।
-ওই কেমন আছেন।
-ভালো।

-আমায় জিজ্ঞাসা করেন,”কেমন আছি।”
-কেমন আছেন।
-অনেক ভালো,আচ্ছা একটা কথা বলি!
-হুম বলেন।
-আমায় তুমি করে বলা যায়না!
-হুম যায়।
-আচ্ছা এখন থেকে তুমি করে বলবেন,আমিও আপনায় তুমি করে বলবো।
-আপনার যা ইচ্ছা।
-আবার….
-ওকে ওকে।
-আর একটা কথা বলি!
-হুম বলো।

-তোমায় আমার সামনে আসতে মানা করেছিলাম ক্যানো জানো।[হঠাৎ মুড চেঞ্জ করে নরম শুরে]
-ক্যানো!
-তোমার ওই বোকা বোকা চেহারাটা একটু একটু করে তোমার প্রতি দূর্বল করে দিচ্ছিলো।ভয় হচ্ছিলো,যদি প্রেমে পরে যাই।তাই সামনে আসতে মানা করতাম।
-হাহাহা,এখন করোনা ক্যানো!
-যা হবার হয়ে গেছে।
-মানে!
-তোমার প্রেমে পরেই গেছি।
-সবচেয়ে ভুল করেছো।
-আম্মু বলে আমি কখনো ভুল করিনা।
-এটা যেই-সেই ভুল না,পুরো বরবাদ হয়ে যাওয়ার ভুল।
-হাহ্,দেখা যাবে।

তারপর আরো অনেক কথা বলে,আব্বু-আম্মু সবাই একসাথে লাঞ্চ করে,আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় নিধিকে বাসায় দিয়ে এলাম। পরেরদিন নিজেকে কিছুটা ফিট লাগলো। তাই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পৌছে গেটেই নিধির সাথে দেখা। শুরু করলো ফ্যাচ ফ্যাচ করা। আমি অবুঝের মতন কথায় তাল মিলাতে লাগলাম।

অবশ্য আস্তে আস্তে এটা ডেইলি রুটিনে পরিণত হলো। ভার্সিটিতে পৌছে প্রধাণ কাজ হলো নিধির সাথে দেখা করা,আর তাঁর ওই ফ্যাচ ফ্যাচ গুলো শোনা। এটা সময়ের সাথে অবশ্য একসময় অভ্যাসে পরিণত হলো। এখন আর বোর লাগেনা,বরং ভালোই লাগে। এভাবেই দিন পেরিয়ে রাত,রাত পেরিয়ে দিন চলতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন নিধি জরুরী ভিত্তিতে বিকেলবেলা পার্কে দেখা করতে বললো। ব্যাপারটা জানার জন্য বেড়িয়ে পরলাম। পৌছে দেখি পার্কে নির্জন এক জায়গায় গাছে নিচে ম্যাডাম বসে আছে। আমি গিয়ে কাশি দিতেই আমার দিকে ফিরে তাকালো। তারপর উঠে এগিয়ে এসে কলার ধরে নিচু করে যা করলো,সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

-এটা কি হলো!
-নিজের ভালবাসার মানুষের থেকে ভালবাসা আদায় করে নিলাম।
-এ আবার কোন ভালবাসা!
-ওইতো ভালবাসার অংশ।
-হাহাহা,কিছু চরম সত্য শুনবা।
-কি!
-শুনে হয়তো এই ভালবাসাটা আর থাকবেনা।
-পুরো দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও আমার ভালবাসা তোমার প্রতি সবসময় থাকবে।
-আচ্ছা বাদ দাও,একটা গল্প শুনবা।
-হুম,বলো।

-গরীব ঘরে জন্ম এক ছেলে,নাম “রফি”।জন্মের সাথে সাথে মা মারা যায়।তারপর বাবা আর একটা বিয়ে করে।যখন ছেলেটার ছয় বছর বয়স তখন সৎ মা চরম অত্যাচার শুরু করে।বাধ্য হয়ে রফি বাড়ি ছেড়ে চলে আসে।আশ্রয় মিলে অন্য এক গরীব ঘরে।সাথে নতুন বাবা-মা,কাকা-কাকীও পায়।যখন নতুন পরিবারে ভালবাসা পাওয়ার সময় তখন এক মিছে খুনের দায়ে চার বছরের জন্য জেলে যেতে হয়।কিন্তু ছেলেটা হাল ছাড়েনি।পড়া লিখাই যে জিবনের মূল অস্ত্র।তাই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নতুন বাবা-মায়ের কাছে ফিরে এসে পড়ালেখা চালিয়ে যায়।

ছেলেটার জিবনে এমনো দিন এসেছে যখন তাকে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে।যার প্রধাণ কারণ অর্থ।ভাগ্যের সহায়তায় স্কুল জীবন শেষ করে ছেলেটা অর্থ উপায়ের এক সহজ উপায় পায়,এলাকায় ড্রাগস সাপ্লাই।উপায়হীন হয়ে ছেলেটা অর্থেত লোভে কাজে লেগে পরে।ছেলেটার বাবা-মা ব্যাপারটা একটা সময় জেনে যায়,কিন্তু অর্থের কাছে তারাও যে তুচ্ছ।তাই ছেলেটাকে কিছু বলেনা। ছেলেটার কালো দুনিয়ার এই ব্যবসায় একসময় অনেক সফলতা পায়।তার সফলাতার সাথে তার কাজো বেড়ে যায়।তারপর সে একটা গ্যাং বানায়।তারপর থেকে যত ডিল আছে সে তার গ্যাংএর লোক দিয়েই করায়।
-ওয়াও,ছেলেটা কোথায় এখন?
-তোমার পাশে।

-কিইইই[অবাক হয়ে তাকিয়ে]
-কিছুদিন আগে ১৫টা মার্ডারের কথা মনে আছে!
-সেটার সাথেও তুমি জড়িত?
-ওটা আমার গ্যাংএর লোকেরি কাজ।
-পুলিশ জানলে!
-সেরকম ভাবেই সব সেটেল করা।
-রফি…[নরম শুরে]
-আমায় ভালবাসো।
-সেই প্রথম থেকেই।
-এগুলো ছেড়ে দিবা?
-চেষ্টা করবো।
-না ছাড়তে হবে।

-আচ্ছা,কিন্তু সময় লাগবে
-১মাস।
-চলবে।
-আচ্ছা চলো তবে এখন…
-কোথায়!
-কাজি অফিসে।
-ক্যানো।
-তোমায় বিয়ে করবো,তারপর তোমায় ঠিক করবো।
-এত্ত কনফি…..

বলার আগেই কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো। প্রতিটা খারাপ লোকেরি থাকে, খারাপ একটা অতীত।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত