জাল

জাল

– এই ছেলে এতো ভাব নাও কেনো? (সাফা)
– কেন? (আমি)
– আর কোনোদিন দেখি ভাব নিছো..লুলা করে রেখে দিবো।
– যত্তসব।

– কিহহহ…ঐ ছেলে ঐ,,তুই জানিস কলেজের কত ছেলে আমার দিকে তাকাতে,,কথা বলতে পাগল প্রেম করার কথা তো বাদই দিলাম,,আর তুই কিনা আমাকে পাত্তায় দিচ্ছিস না? তোর খবর আছে।
– কোথা থেকে যে সব পাগলি আসে কলেজে কে জানে?
– কিহহহ…
শহীদ মিনারের উপর বসে বসে কানে হেডফোন গুজে বাদাম খাচ্ছি তখনি সাফা এসে কথাটি বললো। কিন্তু ওর আর কোনো প্রকার কথা না শুনেই সেখান থেকে চলে আসলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।
সাফা সুন্দরী,,অনেক ছেলেই পাগল। কিন্তু তার জন্য পাটিতে পা পড়ে না ওর। এই একটা মেয়েদর স্বভাব,, সুন্দরী হলেই হয়,,ভাবের জ্বালায় না তো কোনো ছেলেকে পাত্তা দেয় না তো পাটিতে পা পড়ে।
পরেরদিন ক্যামপাসে বসে বসে মিনারের আবারো গানটা শুনছি গানে হেডফোন গুজে। তখনি সাফার আগমন.
– মি. সিয়াম নাম্বার দেন তো?

– কার নাম্বার?
– কার মানে..তোমার?
– আমার নাম্বার কেনো দেবো?
– ঐ দে বলছি..ছেয়েছি তাই দিবি,,আর কত ছেলে আমার নাম্বার নিতে ব্যস্ত,,আর তুই..দে নাম্বার দে।
– কিন্তু আমার যে সিম নেই।
– হারামিগিরী করস আমার সাথে? কাল দেখলাম কথা বলতে..
– ওহ তখন তো মেমোরি দিয়ে কথা বলছিলাম।
– চুপপ মেমোরি দিয়ে কথা হয় না??
– আরে হয়, হয় এটা iphone10 এতে হয়…যত্তসব…
কথাটি বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম। পাগলি একটা,,আমি বুঝতেই পারছি না ওর মনে আমার প্রতি ভালোবাসা নাকি শুধুই ফান। যাইহোক ক্লাসে যায়।

ক্লাস শেষ করে বের হতেই পিছন থেকে কারো টানে দাড়িয়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখি সাফা ব্যাক ধরে টানছে..
– ঐ কি হচ্ছে কি?
– কথা আছে তোমার সাথে। (সাফা)
– আমার নাই।
জোর করে ক্যামপাসে টেনে আনলো..
– কি কথা?
– সিয়াম আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– হিহিহিহি..
– হাসো কেনো?
– আর কয়জনকে বলেছো?
– তোমাকেই শুধু..

তখনি মনে হল সাফার হাত থেকে বাচার জন্য ভালোবাসার অভিনয় করা যাক। এতে সে আর জ্বালাবে না।
– ওকে তোমার নাম্বার দাও..রাতে কথা হবে। (আমি)
– সত্যিই…(হেসে উঠল)
– হুমম
– ০১৯…
নাম্বার নিয়ে চলে আসলাম। মনে মনে মুচকি হাসলাম আর বললাম, কত সহজেই না ভালোবাসা হয়ে গেল। হিহিহিি..
(রাতের বেলা)
– হেলো..(আমি)
– কে আপনি?
– ভুলে গেলা? সিয়াম আমি?
– ওহহ তুমি..আমার যে বিশ্বাসই হচ্ছে না..তুমি কল দিবা আমার।
– এখন তো দিছি,,?
– হুমম কি করো..
এভাবেই কথা হতে লাগলো আমাদের। সারাদিন ক্যামপাসে ক্লাস ফাকি দিয়ে আড্ড। ঘোরাঘুরি করায় ছিলো আমাদের কাজ।

একদিন কলেজে যেয়ে দেখি সাফা একটা ছেলের সাথে কথা বলছে.. দৌড়ে তাদের কাছে গেলাম
– সাফা কি হচ্ছে এখানে? আর ছেলেটা কে?
– ওহহ এ আমার কাজিন,,
– তো এত কিসের কথা?
– মানে??
– মানে কিছু না,,তুমি শুধুই আমার সাথে কথা বলবা। (আমি)
আর কিছু না বলেই টানতে টানতে সাফাকে নিয়ে চলে আসলাম। তখনি মনে হল, আমি কি সাফাকে ভালোবেসে ফেললাম? কিন্তু কিভাবে? আমাদের রিলেশন তো মাত্র ১০ দিন হয়েছে। এর মধ্যেই আমি সাফাকে ফিল করতে লাগলাম? এটা কিভাবে সম্ভব? আমি তো অভিনয় করতে গেছিলাম। শেষে কিনা ফেসে গেলাম?
– ঐ কি ভাবছো? (সাফা)
– নাহ কিছু না।

– ও কিন্তু আমার কাজিনই হয়। তোমার রিএক্ট দেখে মনে হলো আমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসো।
কথাটি শুনে ওর দিকে তাকালাম। কেমন যেন ফিল হতে লাগলো ওর দিকে তাকিয়ে। কত কাছের মনে হত লাগলো। কেমন একটা ভালোলাগা কাজ করছে ওর সাথে থাকতে।
– কি হয়েছে সিয়াম? কিছু বলছো না কেনো?
– আমাকে সত্যিই ভালোবাসো সাফা? (আমি)
– হুমম খুব..
সেসময় ওর বা হাতটা শক্ত করে ধরলাম। নিজেকে কেমন একটা সুখী মানব মনে হল।।মনে হল আমার আর কিছুই না। সাফা আমাকে ভালোবাসে,,আমিও তাকে ভালোবাসবো খুব বেশি।

এভাবে কেটে যায় আরো ১৫ দিন। আমি সাফাকে অনেক কেয়ার নিতে লাগলাম। যেন মনে হল সে ছাড়া আমার সবদিক শুন্য। কখনই তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। সাফায় সব। অভিনয় করতে যেয়ে সাফাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেললাম আমি।
১৬ দিন পরে..বাড়িতে কাজ থাকাতে আমি একটু লেট করেই কলেজে যায়। দুরর থেকে দেখলাম। সাফাসহ ঐ ছেলেটা এবং বন্ধুরা মিলে গল্প করছে গাছের নিচে বসে।
ভাবলাম সবাইকে চমকে দেবো বলে পিছন থেকে গাছের আড়াল হয়ে কাছে যেতেই শুনলাম..
– দোস্ত আর কতদিন টাইম দিবি?
– বাজির টাকা কিন্তু এখনো বাকি আছে তোদের কাছে। (সাফা)
– হুমমম আগে সিয়ামকে ছেড়ে দে,,তারপর বাকিটা পাবি।
– হুমম দেবো,,আরেকটু খেলে নিই। ভালোই লাগছে সিয়ামকে নিয়ে খেলতে। (সাফা)
– তা পটালি কিভাবে? আমরা তো সিওর ছিলাম যে সিয়াম পটবে না। তাই তো ১০ হাজার টাকা বাজি ধরেছিলাম। কিন্তু এখন সব জলে গেলো।

– হাহাহাহাহাহা… এমন কোনো ছেলে আছে নাকি এই সাফার কাছে পটবে না?
– হুমমম… তাই দেখছি..
– খুব ভাব নিতো..এখন আর নেই না। (সাফা)
– ওয়াও…বাহ বাহ..একটু হাত তালি দাও তোমরা আমাদের সাফার জন্য..মহান কাজে সে সফল হয়েছে (আমি)
আমার কথাটি শুনেই সবাই চমকে দাড়িয়ে গেলো। আমি যে এতক্ষন এখানে ছিলাম তারা জানতো না..
– বাকি টাকাটা কি আমি দেবো?
– মানে আসলে সিয়াম..(সাফা)
– কতটাকা বাবু তুমি পাও.? বলো না গো,,আমি দেয়??
– সিয়াম আসলে আমি তোমাকে..
– ঠাসসসসস ঠাসসসসস…
যত জোর ছিলো হাতে তত জোরে দুইটা চড় দিলাম ওর গালে

– আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসছি সাফা।।বিশ্বাস করো এটাতে কোনো অভিনয় ছিলো না। আমি প্রথম ভেবেছিলাম ফান করবো কিন্তু শেষে আমি পরাজিত এক সৈনিকের মত ভালোবেসে ফেললাম। আর তুমি,,ধুরর তোকে তুমি করে বলছি কেনো?. তুই আমাকে নিয়ে খেললি??
এতদিনে কি তোর মনে আমার প্রতি ভালোবাসা জন্মায়নি? এতটা নিচু তোদের মন? আসলেই কথাটি সত্য,,যে সুন্দর মেয়েদের মনটা কখনই সুন্দর হয় না,,অহংকার এ ভরা থাকে। শ্যামলা বর্নের মেয়েরাই তোদের মত এত অহংকারী হয় না। তারা জানে কিভাবে ভালোবাসা অর্জন করে টিকিয়ে রাখতে হয়। তোরা হলি নারী নামের কাল সাপ..
কথাগুলো বলেই সোজা সেখান থেকে চলে এসেছিলাম। নিজেকে কেমন আজ অসহায় লাগছে। মেয়েরা এতটা খারাপ হতে পারে? ছি..ভাবতেই অবাক লাগছে।

আজ চারদিন হল কলেজে যায় না। কেমন যেনো একা একা মনে হয়। ভালো লাগে না। তবে আম্মুর জোরাজুরিতে আজ কলেজে আসতে হল। ক্যামপাসে ঢুকতেই পিছন থেকে ব্যাক ধরে কারো টান দেয়াতে দাড়িয়ে গেলাম।
তাকিয়ে দেখি সাফা..
– সিয়াম কথা আছে তোমার সাথে।

– সিয়াম প্লীজ শোনো..
– আমি কিছু বলতে চাই…
– ক্লাস আছে গেলাম। আর কারো কথা শোনার সময় আমার নেই
– সিয়াম প্লীজ একটু কথা শোনো..
ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে চলে আসলাম। আমি চাই না আর ওর কথা শুনতে। নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি। শুধু সময় নষ্ট করে কি হবে?
ক্লাস শেষ করে সোজা বাড়িতে আসলাম। রাতে শুয়ে আছি..
তখনি কল আসে. তাকিয়ে দেখি সাফার কল.
– সিয়াম তোমাকে কিছু বলার ছিলো,,।

– হুমম
– কাল কলেজে আসবে প্লীজ..
– ফোন রাখেন..
– সিয়াম শোনো না প্লীজ
আর কিছু না বলেই কেটে দিলাম। রিলাক্স মুডে একটা ঘুম দিলাম।
(পরেরদিন)
কলেজে আসথেই সাফা সহ ওর বান্ধবীরা আমাকে ঘিরে ধরলো..
– কি হচ্ছে কি এসব? আর আপনারা আমার কাছে কেনো?

– ভাইয়া সরি..
– হুমম ওকে,,বাই..
– ভাইয়া সাফা কিছু বলবে
– শোনার ইচ্ছা নাই..
– ভাইয়া প্লীজ..
ওদের রিকুয়েস্ট এর পর রাজি হল,,ক্যামপাসের সেই গাছটার নিচে আমি আর সাফা বসে আছি।
নিরাবতা ভেঙে সাফা বললো..
– সিয়াম কিছু কথা বলি..
– হুমম
– আসলে সিয়াম সরি আমি..
– ওকে

– না আসলে সেসব এর জন্য সরি,,কিন্তু আসল কথা হল আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি জানি ফান করেছি আগে। কিন্তু এখন ফান করছি না। আর তোমার চলে যাওয়ার পর নিজেকে নিয়ে ভেবেছি। তোমার কথা ভেবেছি। তুমি এতদিন কথা না বলে নিজের মাঝে শুন্যতা অনুভব করেছি। আমি এখন তোমাকে অনেক ভালোবাসি সিয়াম। প্লীজ আমাকে একবার সুযোগ দাও..
– হাহাহাহাহাহাহা…আবার কতটাকা বাজি ধরলা বলো বলো,,আমি দিয়ে দিচ্ছি..
– সিয়াম প্লীজ মজা করো না,,আমি তোমার অবহেলায় বুঝেছি ভালোবাসার মানে। নিজেকে আমি বুঝিয়েছি কিন্তু এই মনটা এখন তোমাকেই চাই..।

চুপ করে ওর কথাটি শুনলাম। উঠে বসে ওর কাছে যেয়ে দুই গালে হাত দিয়ে বললাম..
– শোনো..বিশ্বাস একবারই হয়। প্রথমবার বিশ্বাস হারালে পরের বার সেই বিশ্বাস আর পাওয়া যায় না। আর তুমি যে এখনো বাজি ধরোনি তার কি বিশ্বাস আছে?
কথাগুলো বলেই চলে আসলাম সেখান থেকে। আমি আর চাইনা এই মুখোসধারী কালসাপদের বিশ্বাস করতে…
“ছুড়ে ফেলেছি বিশ্বাসের জাল..
নেই কোনো কোলাহল..
আমি তাকতে চাই একা,,নিজের মাঝে বাচতে চাই..
চাই না ঐসব মেয়েদের ছলনা,,গুছিয়ে নিয়েছি নিজের স্বাচ্ছন্দ্যতা চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,,বিশ্বাস নিয়ে খেলো তোমরা,,হয়ত তোমার কাছে কেউ একজন মুল্যহীন কিন্তু তার কাছে তুমিই সব।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত