বাচ্চার সাথে মা ফ্রি

বাচ্চার সাথে মা ফ্রি

কাজ শেষ করে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ পাশের সিটে বসা একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা যে আহামরি সুন্দরী তা না। মেয়েটাকে চেনাচেনা লাগছে। কোথাও যেন দেখেছি। কোথায় দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না। আমি বুঝতে পেরেছি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকায় মেয়েটি কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করছে।
পরের স্টপে বাস থামতেই আমি নেমে পড়ে হাটা দিয়েছি। হঠাৎ পিছন থেকে কারো ডাকে থেমে পড়লাম। তাকিয়ে দেখি সেই চেনাচেনা মেয়েটি আমার দিকে আসছে।

–এই যে মিস্টার বাসের মধ্যে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন কেন হুম??
–আপনাকে আমার কেমন জানি চেনাচেনা লাগছিল তাই।
–তা আমাকে চিনতে পেরেছেন??
–না এখনও আমি ঠিক আপনাকে চিনতে পারেনি।
–আপনারা সব ছেলেরা একরকম বুঝেছেন?? চেনা নাই জানা নাই চেনা চেনা লাগছে?? আপনার মত ছেলেদের খুব ভাল করে চেনা আছে। প্রথমে চেনাচেনা তারপর ফোন নম্বর চাওয়া, সবই বুঝি, বুঝলেন? এসব ধান্দা বাদ দিন।
–আসলে আমি সেরকম ছেলে না।আপনাকে কোথাও যেন দেখেছি..
-যত্তসব, স্টুপিড কোথাকার।
এই বলে মেয়েটি হনহন করে চলে গেল।

নির্জন রাস্তা দিয়ে হেটে চলছি, আর বারবার ওই মেয়ের কথা মনে করছি। একটু আগে যে মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছিল,মেয়েটাকে আমার কেমন জানি চেনাচেনা লাগছিল। তবুও মনে করতে পারছি না।

আমি এখন রাস্তা দিয়ে বাড়ির পথে হাঁটছি আর বারবার মনে করার চেষ্টা করছি মেয়েটি আসলে কে ? আদৌ কি মেয়েকে আমি চিনি নাকি সবটাই আমার অবচেতন মনের ভুল । মন আনমনা হয়ে বারবার খুজছে ঐ মেয়েটা কে। বাড়ির পথে হেটে যাচ্ছি হঠাৎ রাস্তার পাশের বনের ভিতর থেকে কিছু একটার গোঙরানির আওয়াজে থমকে দাড়ালাম। ভয় পেয়ে গেলাম কারণ এই রাস্তাটা বনের ভিতর দিয়ে গেছে, আর বনের পাশ ঘেসেই বয়ে গেছে এলাকার ছোট্ট নদী। কারো কান্না ভেসে আসছে। আওয়াজটার দিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলাম। কয়েক টা গাছপালা পেরিয়ে এগিয়ে গেলাম। যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ। একটা মেয়ে নদীর পাড় পাশে পড়ে আছে। গাঁ দিয়ে রক্ত ঝরছে। আরেকটু ভালভাবে লক্ষ্য করতেই দেখলাম মেয়েটা প্রেগন্যান্ট, প্রসব বেদনায় ছটফট করছে। আরো যা দেখলাম আমার দেহ শিহরিত হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার বুকের অংশ দিয়ে রক্ত ঝরছে অনেক খানি ছিদ্র হয়ে গেছে জায়গাটায় ।

বুঝতে বাকি রইল না এখানে কেউ গুলি করেছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এরকম পরিস্থিতিতে আমি আজও পর্যন্ত পড়েনি। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। আমাকে দেখে মেয়েটার গোঙরানি আরো বেড়ে গেছে হয়ত মেয়েটা কিছু বলতে চাচ্ছে। আমি তার ভাষা বুঝতে চেষ্টা করছি তার ভাষাটা আমি বুঝতে পারছি না। সে আমাদের মত বাংলা ভাষায় কথা বলছে না। এইটা অন্য কোন ভাষা হবে। বাংলা ভাষায় কথা বললে আমি নিশ্চয় বুঝতাম সে কি বলতে চাচ্ছে। তারপর মেয়েটা আমাকে ইশারায় যা বোঝাল তাতে বুঝলাম সে বাচতে চায়। আমি কিছু না ভেবে মেয়েটা কে কোলে তুলে নিয়ে রাস্তায় এনে তুললাম। এই রাস্তা টা অনেকটা নির্জন এখানে গাড়ি খুব কমই চলে। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি কোন গাড়ি পাচ্ছি না। হঠাৎ খেয়াল করলাম রাস্তা দিয়ে বিজিবির গাড়ি আসছে আমি আমার রুমাল দিয়ে মেয়েটার বুক থেকে সমস্ত রক্ত মুছে দিলাম। মেয়েটার বুকের অংশটা চেপে ধরে আছি যাতে রক্ত না বের হতে পারে। যাতে বিজিবির লোকের দেখলে কোন সন্দেহ না করতে পারে। বিজিবি গাড়িটা কে থামানোর চেষ্টা করলাম।

–স্যার প্লিজ একটু সাহায্য করুন। ইনাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করলে খুব উপকার হবে আমার। (আমি)
-ইনি কে হন তোমার?? (বিজিবি স্যার)
আমি জানি এদের কাছে এখন যদি বলি ইনি আমার কে কেউ হন না, তাহলে বিজিবি অনেক ঝামেলা করবে যার কারনে ইনাকে আমি বাচাতে পারব না। আমি তাৎক্ষিণিক ভাবে উত্তর দিলাম আমার স্ত্রী।
বিজিবির লোকেরা আমার স্ত্রীর কন্ডিশন দেখে তাড়াতাড়ি গাড়িতে তুলে একটা হাসপাতালে নামিয়ে দিল। আমি ডাক্তার কে ডাকতে লাগলাম। তাৎক্ষণিক কিছু নার্স এবং এবং একটা ডাক্তার এসে মেয়েটা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ ২ মিনিট পরই ডাক্তার অপারেশন রুম থেকে বের হয়ে এসে আমার কাছে আসলেন।

–ইনার গায়ে তো গুলি লেগেছে। এইটা পুলিশ কেইস। আমাদের এখানে চিকিৎসা হবে না। অনেক ঝামেলা আছে আমাদের আপনি অন্য জায়গায় নিয়ে যান। ইনাকে আগে পুলিশের কাছে ইনফর্ম করতে হবে। (ডাক্তার)
–প্লিজ ডাক্তার এইটা বলবেন না। ইনার কন্ডিশন টা একবার বুঝুন। আপনারা তো ডাক্তার মানুষের জীবন বাচান। একটা মানুষের জীবন কি পুলিশের কাছে ইনফর্ম করার চেয়ে বেশি?? প্লিজ ডাক্তার ইনি যদি আপনার মেয়ে হত, তাহলে পারতেন এইভাবে ফেলে চলে যেতে??

আমি খেয়াল করলাম ডাক্তারের মুখটা শুকিয়ে গেছে।
–আমি তো এরকম কন্ডিশনে কোন রোগীর ট্রিটমেন্ট করেনি। আর ইনার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। আমি আমাদের হাসপাতালের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার কে পাঠাচ্ছি। (ডাক্তার)
–ঠিক আছে, ডাক্তার। তাই করুন।

হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা ডাক্তার খুব দৌড়ে অপারেশন থিয়েটারের দিকে আসছে। ডাক্তার কে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম, ইনিই তো সেই যাকে আমার চেনাচেনা লাগছিল।ইনিই তো সেই বাসের মধ্যের সেই মেয়েটা। তার মানে ইনি ডাক্তার। এবার মনে পড়েছে মেয়েটাকে কেন চেনাচেনা লাগছিল। ৮ মাস আগে আমি যখন মোটরবাইকে এক্সিডেন্ট করেছিলাম। তখন এই মেয়েটায় আমার ট্রিটমেন্ট করেছিল। এতক্ষণ বুঝলাম তখন মেয়েটা কেন চেনাচেনা লাগছিল। তারপর মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে গেল।

২ মিনিট পার না হতেই এই মেয়েটাও দেখি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসল। মেয়েটা আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গেল।
–অপারেশন টেবিলে ওই মহিলা টা কে? উনি আপনার কে হন?? একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেন না কিন্তু। (মেয়েটা)
আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমি নিজের কাছেই নিজেই অসহায় ছিলাম। তারপর ডাক্তার মেয়েটার কাছে সবকিছু খুলে বললাম। তারপর ডাক্তার মেয়েটা আমার কথা শুনে যা বলল তাতে আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই মহিলা নাকি রোহিঙ্গা। সে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় গুলি খেয়েছে। এতক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম এই মহিলার কেন নদীর ধারে পড়ে ছিল,আর তখন আমি কেন তার ভাষা বুঝতে পারছিলাম না।

–আমি ইনাকে চিকিৎসা করতে পারব না আপনি ইনাকে যেখান থেকে পেয়েছেন সেখানে রেখে দিয়ে আসেন, এতে আপনার মঙ্গল। (ডাক্তার মেয়েটা)
আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। ডাক্তার মেয়েটা চলে যাচ্ছে।
–এই যে প্লিজ যাবেন না। উনি হোক রোহিঙ্গা।ইনিই ও তো একজন মানুষ। আর একজন মানুষের জীবন বাছানো আপনাদের কর্তব্য। উনার জীবন টা এখন আমার কাছে অনেক মূল্যবান। আপনি প্লিজ যাবেন না। ডাক্তার মেয়েটা তবুও আমার কথা শুনছে না। আচ্ছা ইনি যদি আপনার বোন হত পারতেন এইভাবে ফেলে রেখে যেত??? (আমি)
— এই দেখেন একদম ব্লাকমেইল করার চেষ্ট করবেন না কিন্তু। (মেয়েটা)
–এদের তো আমাদের মত দেহ মাংশে গড়া, না কি অন্য কিছু দিয়ে গড়া??? এরাও মানুষ আর আমরাও মানুষ। একটা মানুষের জীবনের চেয়ে কি তার জাত সম্প্রদায় বড় হয়ে গেল??? এই কি আমরা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ?? (আমি)

ডাক্তার মেয়েটা এবার ফিরে আমার চোখের দিকে তাকালেন। এদিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে আরো বেশি গোঙানির শব্দ বেড়ে যাচ্ছে। ডাক্তার মেয়েটা আর কিছু না ভেবে দ্রুত অপারেশন টেবিলের দিকে চলে গেল।

অনেকক্ষণ ধরে বাইরে বসে আছি। মনের ভিতর কেমন যেন অজানা ভয় কাজ করছে। টানা ১ ঘণ্টা অপারেশন করার পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসছে ডাক্তার মেয়েটি। মেয়েটির মুখটা কেমন যেন শুকনা দেখাচ্ছে। ডাক্তার মেয়েটি বের হয়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তারপর মাথার দিকে মাথা নাড়িয়ে বাইরে বের হয়ে গেল। মাটিতে ঢপ করে বসে পড়লাম আমি। চোখের কোনে নোনাজল উকি দিচ্ছে। অনেক কষ্টে চোখের নোনাজল থামিয়ে রেখেছি। আস্তে আস্তে অপারেশন থিয়েটারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। কেমন যেন অজানা ভয় কাজ করছে। অপারেশন টেবিল থেকে কাপড় টা সরাতেই চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় নোনাজল পড়তে লাগল। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে মহিলা টা। যে ঘুম আর ভাঙবে না। কত সুন্দর নিষ্পাপ চাহনি! চোখ দিয়ে এক অজানা কারণে এক অচেনা মানুষের জন্য এই ভাবে পানি ঝরছে। কি করব বুঝতে পারছি না। বুকের ভিতর ফেটে যাচ্ছে আমার।

–অনেক চেষ্টা করেছি আমরা, বাচাতে পারলাম না। অনেক দেরি হয়ে গেছিল।ইনার একটা অনেক সুন্দর মেয়ে বাবু হয়েছে। এই নিন বাচ্চাটা ধরুন। (নার্স)
–আমি একবার বাচ্চার দিকে তাকাচ্ছি আর আরেকবার মায়ের দিকে। কি করব আমি ভেবে পাচ্ছি না। কত সুন্দর ফুটফুটে একটা বাচ্চা! আমার এক অজানা কারণে বাচ্চাটার উপর মায়া বসে গেছে। ফেলে রেখে যেতে পারলাম না । বাচ্চাটাকে বুকের ভিতর নিয়ে কাদতে লাগলাম।

অনেকক্ষণ ধরে বাচ্চাটাকে নিয়ে বসে আছি।কি করব ভেবে পাচ্ছি না। মায়ায় পড়ে গেছি বাচ্চাটার।
–এই যে মিস্টার বাচ্চাটাকে এই ভাবে বসে নিয়ে থাকলে হবে?? (ডাক্তার মেয়েটি)
–আমি কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছিনা,।
–বাচ্চাটাকে তো কিছু খাওয়াতে হবে তাইনা?? বাড়িতে কে কে আছে আপনার?
–বাড়িতে আম্মু তো অনেক আগেই মারা গেছে। আপন বলতে শুধু বাবা আছে।
–বিয়ে করেন নি??
— না।
–বাহ! ভাল।
এই বলে মেয়েটি কাগজে কি যেন লিখছে।
–কেউ যদি বাচ্চাটার যত্নের ব্যাপারে সাহায্য করত, তাহলে।
–থাক থাক এত ভানিতা করে বলতে হবে না,সোজা ভাবে বললেই হয়। মেয়েটাকে আমার একটু যত্ন করতে হবে।
এই বলে মেয়েটি আমার হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিল।
— এই লিস্টে যা কিছু আছে সবকিছু কিনে আনুন।
তাড়াতাড়ি যান।

–আপনি না বলার আগেই কেমন যেন সবকিছু বুঝে যান। (আমি)
–থাক থাক হয়েছে, আর ঢপ দিতে হবে না।যা কাজ দিলাম তা কিনে আনুন।
যাওয়ার সময় আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে একটু মৃদ্যু ভাবে হাসি দিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিল।

বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে এনে ডাক্তার মেয়েটির হাতে দিলাম। অনেক রাত হয়ে গেছে। ডাক্তার মেয়েটি কত সুন্দর ভাবে বাচ্চাটাকে নিজের মেয়ের মত করে আদর করছে। ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে রাত ১২ টা বাজে।
ডাক্তার মেয়েটি আমার উপর কিছু দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি বাচ্চাটা কে কোলে তুলে নিলাম। বাচ্চা টা বাইরে এনে চাদের আলোয় রাখলাম। চাদের আলোয় বাচ্চার মুখটা আরো ঝলমল করেছে। ওইদিন বাচ্চাটাকে বুকের ভিতর নিয়ে বাইরে বসেই রাত কাটিয়ে দিলাম।

সকালবেলা পড়লাম মহাবিপদে এদিকে আমার অফিস, অন্যদিকে বাচ্চা। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। ডাক্তার মেয়েটিও এখনও এসে পৌছায় নি। একটা নার্স কে বাচ্চার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে অফিসে চলে আসলাম।
অফিস গিয়েও মন টিকছে না বারবার বাচ্চাটার কথা মনে পড়ছে। বাচ্চাটি কি অবস্থায় আছে কি জানে? অফিস ছুটি হল বিকাল ৫ টায়। ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই ছুটে আসলাম হাসপাতালে। বাচ্চাটার কাছে ছুটে আসতেই দেখলাম ডাক্তার মেয়েটি বাচ্চাটাকে অনেক আদর করে খাওয়াচ্ছে। তারপর নার্সের কাছে শুনলাম, ডাক্তার মেয়েটি আজ সারাদিনই বাচ্চাটাকে আদর করেছে। খাইয়ে দিয়েছি, জামা কাপড় পরিয়ে দিয়েছে। গোসল করিয়ে দিয়েছে।সেদিনই বুঝেছিলাম একটা বাচ্চার জন্য মা কতটা প্রয়োজন, কতটা অনুভূতি দিয়ে একটা মা তার বাচ্চা কে লালন পালন করে। রাতে বাচ্চা টাকে নিয়ে আমি থাকতাম, আর দিনের বেলায় ডাক্তার মেয়েটি। এই ভাবেই ডাক্তার মেয়েটি আর আমি আদর যত্ন করতে লাগলাম। এইভাবে ৭ দিন কেটে গেল। আজ আমার অফিস ছুটি। আমি আর ডাক্তার মেয়েটি সকাল থেকেই বাচ্চা টাকে নিয়ে খেলছি আদর করছি। এত দিনে ডাক্তার মেয়েটির সাথে আমার অনেক খাতির জমে গেছে, এখন ডাক্তার মেয়েটি শুধু বাচ্চাটাকেও না মাঝে মাঝে বাচ্চা কে ছাড়াও আমারও খোজ নেয়।

আমি আর ডাক্তার মেয়েটি বাচ্চাটাকে নিয়ে খেলা করছি কিন্তু আমরা কেউই আমাদের বাচ্চা টাকে ডাকতে পারছি না।তারপর মনে হল আমরা তো আমাদের বাচ্চা টার কোন নামই দেইনি। কি নাম দেওয়া যায় দুজন মিলে ভাবতে লাগলাম।কোনই নামই ভাল হচ্ছে না। হঠাৎ আমি বলে উঠলাম “অপরিচিতা”। হুম অপরিচিতা নামটি আমাদের দুজনের খুব পছন্দ হল।আমার অপরিচিতা নামটি দেওয়ার পিছনে অবশ্যই এর জীবন কাহিনী লুকিয়ে আছে কারণ আমরা এর বাবা-মা কাউকে জানি না। তাই সে আমাদের কাছে অপরিচিতা হিসাবেই থাকুক। তারপর ডাক্তার মেয়েটি বলে উঠল, আজ থেকে আমাদের ফুটফুটে বাচ্চাটির নাম অপরিচিতা।

অনেক রাত হয়ে গেছে বাচ্চা টিকে নিয়ে বাইরে বসে আছি। বাইরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ দেখি ডাক্তার মেয়েটি আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল,
-একটু হেল্প করবেন?? আজ বৃষ্টি হয়েছে। বাইরে গাড়ি পাওয়া যাবে না। আপনার তো মোটরসাইকেল আছে, আমাকে একটু বাড়িতে পৌছে দিবেন।
–হুম পারব চলুন।
অপরিচিতা কে একটা নার্সের উপর দায়িত্ব দিয়ে আমি ডাক্তার মেয়েটি কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। মেয়েটা আমার বাইকের পিছে বসে আছে। অর্ধেক রাস্তা না যেতেই আবার বৃষ্টি শুরু হল। আমি দাঁড়াতে চাচ্ছিলাম কিন্তু কেন জানিনা মেয়েটা আমাকে দাঁড়াতে মানা করছে।
বৃষ্টির বড় বড় ফোটা আমার চোখমুখে এসে পড়ছে। গাড়ি চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তবুও থামতে পারছি না।
বৃষ্টির বেগটা আরো বাড়ছে ।আমি অনুভব করতে পারছি বৃষ্টির ফোটার হাত থেকে বাচতে ডাক্তার মেয়েটি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

এ যেন এক অতৃপ্ত অনুভূতি! মেয়েটির বাড়িতে পৌছে গেলাম বৃষ্টি তখনও থামেনি। ডাক্তার মেয়েটির জোরাজুরিতে তার বাড়ির ভিতর ঢুকতে হল। বৃষ্টির ভিতর সে নাকি আমাকে ছাড়বে না। আমার মাথা ভুজে নাক মুখ দিয়ে হাচি বেরুচ্ছে। ডাক্তার মেয়েটি আমার কাছে এসে তার ওড়না দিয়ে মাথা মুছে দিচ্ছে, আমি নিরব ভাবে দাঁড়িয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রয়েছি।
–এই ভাবে তাকানোর তো কিচ্ছু নেই। হাচি দেখে মনে হচ্ছে জ্বর আসতে পারে তাই মাথাটা মুছে দিলাম। জ্বর আসলে তো আবার আমাকেই ট্রিটমেন্ট করতে হবে তাই আগে থেকেই প্রতিরক্ষার জন্য মাথা টা মুছে দিলাম। আমি মেয়েটির কথা শুনছি আর তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা দরজার কলিং বেল বাজাল। একটা বৃদ্ধা মহিলা দরজা খুলে দিয়েই বকতে লাগল।

— কি এতক্ষণে মহারানীর বাড়ি ফেরার সময় হল হুম? আমি বলেছি না আজকের দিনটা অন্তত একটু আগে বাড়ি ফিরতে। কতক্ষণ থেকে তোমার জন্য বসে আছি জানো?? (বৃদ্ধা মহিলা)
ববকাঝকা করা দেখে বুঝলাম ইনিই ডাক্তার মেয়েটির মা। আমি তাও কনফার্ম হওয়ার জন্য ডাক্তার মেয়েটি কে জিজ্ঞাসা করলাম,
— ইনি কি আপনার মা?
–হুম ইনিই আমার মা। আমার এই পৃথিবী তে এই আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই। (মেয়েটি)
–মা, তোমার সাথে ছেলে কণ্ঠ শুনছি, কে এসেছে? (মেয়েটির মা)
–হুম মা, ওই যে হাসপাতালের একটা ছেলের কথা বলেছিলাম, ইনিই সে ছেলে। (মেয়েটি)
একথা শোনার পর দেখলাম মেয়েটির মা আমার দিকে আধো-আধো হাটায় আমার দিকে আসছে। আমার কাছে এসে আমার মুখের উপর হাত দিয়ে বলছে।

–মা, এই ছেলেটির নাম কী যেন?
আমার নাম শুনতে চাওয়ায় ডাক্তার মেয়েটি দেখলাম মাথা চুলকাচ্ছে। আমি বুঝতে পেরেছি ডাক্তার মেয়েটি এখনও আমার নাম জানে না। জানবেই বা কি করে আমি তো ডাক্তার মেয়েটিকে আমার নাম এখনও বলেনি। আমি তাৎক্ষণিক উত্তর দিলাম,
–জ্বী আন্টি আমার নাম সজীব।
আমার নাম শুনে আমার উনার মা আমার মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
— মল্লিকা মা এনাকে ভিতরে নিয়ে যাও।
–যাচ্ছি মা।
বাহ! এতক্ষণে ডাক্তার মেয়েটির নাম শুনতে পেলাম। মল্লিকা। খুব সুন্দর নাম।
মেয়েটা আমাকে ভিতরে নিয়ে যেতে যেতে যা বলল তা শোনার জন্য তার মা নাকি অন্ধ। চোখে দেখে না। এত সুন্দর একটা মানুষ অন্ধ হতে পারে আমি ভাবতেই পারছি না। উনাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে উনি অন্ধ।

বারান্দায় বসে আছি আমি আর মল্লিকা। হঠাৎ পাশের ঘর থেকে উনার মা মল্লিকা কে ডাকলেন। আমিও সাথে সাথে ভিতরে গেলাম।
–কি মা, ডাকছো কেন..? আর ঘরটা এরকম অন্ধকার করে রেখেছো কেন? (মল্লিকা)
তারপর হঠাৎ ঘরে আলো জ্বলে উঠল। পুরো ঘরটা রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো। মাঝখানের একটা দেওয়ালে বড় করে লেখা আছে “শুভ জন্মদিন,মল্লিকা”।মাঝখানের টেবিলে একটি মোমবাতি জ্বলছে। আমি কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেছি। একটা অন্ধ মা তার মেয়ের জন্মদিনের জন্য কত সুন্দর আয়োজন করেছে! ভাবতেই আমার মনের মধ্য কেমন যেন আনন্দ বয়ে আছে।

মল্লিকার জন্মদিন টা খুব ভালভাবে উদযাপন করলাম। অনেক আনন্দ করেছি। মল্লিকা আমার পুরো মুখে মাখিয়ে দিয়েছিল। মাখিয়ে দিয়ে সে কি হাসি! আমাকে নাকি ভ্যাবলাকান্তের মত লাগছে। বৃষ্টির বেগটা বাইরে কমে গেছে রাত ২ টা ছুঁইছুঁই। আমি আবার হাসপাতালে চলে আসলাম। আম্মু মারা যাওযার পর জীবনে আনন্দ শেষ কবে আনন্দ করেছি ভুলে গেছি। আজকে ডাক্তার মেয়েট মল্লিকার জন্য আবার নতুন ভাবে আনন্দ করতে শিখলাম।

অপরিচিতা ঘুমিয়ে আছে আপন মনে আর জাগালাম না তাকে। বাইরে বসে নিস্তব্ধ খোলা আকাশের দিকে তাকিয়েই রাত পার করে দিলাম। আবার সকালবেলা অফিস। বিকাল থেকেই হাসপাতাল। রুটিন মাফিক জীবন চলছে খারাপ লাগছে না। অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এভাবেই কেটে গেল ৬ মাস। এখন অপরিচিতা আধো-আধো কথা বলতে পারে। আমার সাথে খেলা করে। এদিকে মল্লিকাও আমাকে অনেক কেয়ার করে। মাঝে মাঝে আবার আমাকে বকাঝকাও করে। মন্দ লাগে না।

–রাত ১২ টা পার হয়ে গেছে। মল্লিকা এখনও আজ বাড়িতে যায়নি। অপরিচিতার সাথে খেলা করছে দেখলাম।
বাইরে বসে আছি।কখন যে মল্লিকা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করে নি।
–অপরিচিতা ঘুমিয়েছে?? (আমি)
–হুম মেয়েটি অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে। একটুও ঘুমাতে চায়না, এই এখন একটু ঘুমাইল।
–বাড়ি যাবা না??
–হুম যাব। তবে কেউ যদি বাড়িতে পৌছিয়ে দিত তাহলে অনেকটা খুশি হতাম।
–একটু সোজা করে বললেই হয়। আমার সাথে যাবা। চলো নিয়ে যায়।

বাইরে শুনশান পরিবেশ, বাইক নিয়ে এগুচ্ছি। আজকে আধার টা অনেক টা কালো। দুজন ছুটে চলেছি। হারিয়ে যাচ্ছি প্রকৃতির এই কালো অন্ধকারের মাঝে। মাঝে মাঝে মল্লিকা আমাকে শক্ত করে ঝাপটে ধরছে। আমার দেহের ভিতর শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। এ যেন সুপ্ত অনুভূতি। জানিনা এই অনুভূতির নাম কী। মল্লিকা দের বাড়ি চলে এসেছি। মল্লিকা নামিয়ে দিলাম চলে আসছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে মল্লিকা বলে উঠল,

–কেউ যদি প্রতিদিন এই ভাবে পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব নিত, তাহলে আমি মল্লিকার দিকে তাকিয়ে মৃদ্যুভাবে হেসে বের হয়ে আসলাম। তারপর থেকেই মল্লিকা কে প্রতিদিনই বাড়িতে পৌছে দিই। মাঝে মাঝে মল্লিকার ছোট ছোট অনুরোধ অনেক গুরুত্ব দিতাম। বাড়িতে যাওয়ার পথে প্রতিদিনই মল্লিকা কে নিয়ে একজায়গায় একটা আইসক্রিম এর দোকানের সামনে থামতে হত। মেয়েটার নাকি এখানের আইসক্রিম না খেলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আমি ও আর না করতাম না। দুজনে যাওয়ার পথে প্রতিদিনই ওই জায়গায় বসে আইসক্রিম খেতাম আর প্রকৃতির নীল আকাশের সাথে মিশে যেতাম। মল্লিকার পাগলামি দেখে মাঝে মাঝে আপন মনে হেসে উঠতাম। আস্তে আস্তে আমি মল্লিকার মায়ায় পড়ে যাচ্ছি। বারবার আমার এই মন যেন মল্লিকা কে কাছে পেতে চাচ্ছে। আমি জানি এইটা কখনও সফল হবে না। এই অনুভূতির কোন মূল্য নেই।

১০ মাস পার হয়ে গেছে। একদিন বিকালে অফিস থেকে হাসপাতালে আসতেই একজন নার্স আমার মুখে মিষ্টি পুরে দিল। তারপর খেয়াল করলাম হাসপাতালের প্রতিটা মানুষই মিষ্টি খাচ্ছে। ব্যাপার কী বুঝলাম না। হঠাৎ একটা নার্স আমাকে বলল যে আজকে নাকি আমাদের অপরিচিতা মল্লিকা কে আম্মু বলে ডেকেছে। এই খুশিতে সবাই কে আজ মল্লিকা মিষ্টি খাইয়েছে। আমি দৌড়ে অপরিচিতার কাছে গেলাম। সত্যিই দেখি অপরিচিতা মল্লিকা কে আম্মু আম্মু বলে ডাকছে আর খেলা করছে। আমি কাছে যেতেই মল্লিকা বলল,বলোতো মামনি এইটা কে? (আমাকে দেখিয়ে)

–অপরিচিতা আমাকে বাবাই বাবাই বলে জড়িয়ে ধরল। আমি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। বাবা ডাকটা শোনার মধ্যে এত যে আনন্দ আছে!! বলে বোঝাতে পারব না। আমি অপরিচিতা কে কোলে নিয়ে সবাই কে মিষ্টি খাওয়াতে লাগলাম। পুরো হাসপাতাল টা আজ যেন খুশিতে মাতোয়ারা! এখন অপরিচিতা আমাকে বাবাই বলে ডাকে আর মল্লিকা কে আম্মু বলে ডাকে। অপরিচিতা এখন হাটতে শিখে গেছে। এতদিনে অপরিচিতার কথা আমার বাবা কে সব খুলে বলেছি। বাবা আমার সব কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছে। বাবা অপরিচিতা কে দেখতে চেয়েছে। আমি ডিডিশন নিয়েছি কালকেই অপরিচিতা কে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বাবার কাছে চলে যাব। আমি জানি মল্লিকার একটা জীবন আছে। তার একটা ভবিষ্যৎ আছে। তার জীবনের একটা স্বপ্ন আছে। তার স্বামী হবে সংসার হবে। একদিন আমার অপরিচিতার মত মল্লিকার ও একটা বাচ্চা হবে। আমি সব কিছু জেনে শুনে আমার অপরিচিতার জন্য মল্লিকার এতো বড় ক্ষতি হতে দিতে পারিনা। তাই অফিস থেকে আমার ডিউটি টা আমার এলাকায় নিয়ে নিয়েছি। কি লাভ মিথ্যা মায়া বাড়িয়ে??
অফিস থেকে হাসপাতালে এসেছি। মল্লিকা এখনও অপরিচিতার সাথে খেলা করছে।

–মল্লিকা??
–হুম বলো, কিছু বলবে??
–হুম, আমি অপরিচিতা কে নিয়ে যেতে চাই।
–অপরিচিতা কে নিয়ে যেতে চাও মানে??
–আমি অপরিচিতা কে আমার বাবার আছে নিয়ে যেতে চাই।
–তা আবার কবে অপরিচিতা কে এখানে আনবে?
–আর আনব না। ওখানেই থাকব।
–ওখানে থাকবা মানে?? আমার অপরিচিতা কে কোথাও যেতে দিতে দিব না।

–দেখো মল্লিকা তোমার জীবনেরই একটা স্বপ্ন আছে তোমারও একদিন ঘর সংসার হবে। আমার অপরিচিতার মত তোমারো একদিন বাচ্চা হবে। আমি জেনে শুনে তোমার জীবন টা নষ্ট হতে দিতে পারি না। তুমি অনেক করেছো আমার আর অপরিচিতার জন্য যার ঋন আমার জীবন দিয়ে দিলেও শোধ হবে না। আমি তোমার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ। আমি কাল সকালেই অপরিচিতা কে নিয়ে যাচ্ছি।

আমি খেয়াল করলাম মল্লিকার চোখের কোণে নোনাজল চিকচিক করছে। মল্লিকা আমার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
থাক কাদুক একটু। অল্প নোনাজলে যদি সবার ভাল হয় তবে সেটাই ভাল।আমি জানি মল্লিকা অপরিচিতার ছাড়া থাকতে পারবে না, হয়ত কয়েক দিন মল্লিকা কে অপরিচিতার কথা মনে পড়বে। তারপর অপরিচিতা কে না দেখতে হয়ত একদিন ঠিকই ভুলে যেতে পারবে।

বাইরে বসে আছি। বাইরের মৃদ্যু হাওয়া গায়ে লাগছে। কাল থেকে আবার দায়িত্ব বেড়ে গেল। নতুন করে আবার জীবন শুরু করতে হবে।
অনেকক্ষণ ধরে বসে মল্লিকার কথা ভাবছি মেয়েটা অপরিচিতা কে নিয়ে যাবার অনেক কষ্ট পেয়েছে সেই থেকে আর অপরিচিতার কাছে আসেনি। হঠাৎ দেখি মল্লিকা আসছে আমার দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। চোখদুটি অনেক ফোলা ফোলা লাগছে মল্লিকার, হয়ত খুব কেঁদেছে।

মল্লিকা অপরিচিতা কে ধরে আদর করছে আর কাদছে। আমি ব্যাপারটি খেয়াল করছি তবুও এড়িয়ে যাচ্ছি। কাদললে নাকি মন ভাল হয়। তাহলে কাদুক একটু। বাইরের মৃদ্যু হাওয়া টা ঝিরঝির করে গায়ে এসে লাগছে। গাঁ টা এলিয়ে দিলাম। হঠাৎ কেউ আমার শার্টের কলার ধরে টেনে তুলছে। তাকিয়ে দেখি মল্লিকা।মেয়েটির চোখ জ্বল টলমল করছে।

–কি ভেবেছো নিজেকে হ্যা?? মহামানব?? এত স্বার্থপর কবে হলে তুমি? শুধু নিজের কথায় ভাবছো, আমার কথা ভাবলে না। অপরিচিতা কি শুধুই তোমার, আমার না?? অপরিচিতা তোমাকে বাবাই বলে ডাকে আমাকে আম্মু বলে ডাকে না?? মহামানব হয়ে গেছ তাইনা?? আমার সুখ -দুঃখ, স্বামী- সংসার নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না। অপরিচিতায় আমার মেয়ে আর আমার সামনে যে স্বার্থপর টা দাঁড়িয়ে আছে ইনিই আমার স্বামী। খুব স্বার্থপর তুমি খুব খুব। এই বলে মল্লিকা আমার বুকে কিল-ঘুসি মারতে লাগল। মল্লিকা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আর কখনও তুমি আর অপরিচিতা আমার ছেড়ে গিয়েছো তো কলার ধরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে রেখে দিব। এই বলে আবার মল্লিকা আমাকে মারতে লাগল। থাকতে পারব না সজীব তোমায় ছাড়া। অনেক ভালবাসি।
মল্লিকা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। বাহ! মন্দ লাগছে না। এ যেন এক অতৃপ্ত অনুভূতি যেটা আমার মন বারবার খুজেছে। আজ যেন তা পূর্নতা পেল। মেয়েটাকে আমিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। কিছু কথা বলতে হয় না অনুভবেই বুঝে নিতে হয়। মল্লিকা এখনও আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর মল্লিকার কোলে রয়েছে আমাদের অপরিচিতা।

ফোনটা বেজেই চলছে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখি বাবা ফোন করেছে।
–কি রে কাল কে অপরিচিতা কে নিয়ে আসছিস তো?? (বাবা)
–হুম বাবা আনছি।বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি। মানে বাচ্চার সাথে মা ফ্রি।
–হুম তাতো হবেই। মা ছাড়া বাচ্চা হয় নাকি। এই বলে বাবা উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। আমি অপরিচিতার দিকে তাকিয়ে দেখি অপরিচিতাও হাসছে। তারপর দেখি মা মেয়ে দুজনে হাসছে। ব্যাপার কী? ওদের হাসি দেখে আমিও হাসতে শুরু করে দিলাম।

আজ অপরিচিতার গায়ে কোথাও লেখা নেই যে সে রোহিঙ্গা। সে এখন অপরিচিতা। সে তো আমাদের অপরিচিতা। আমি আর মল্লিকা অপরিচিতা কে কোলে তুলে নিয়ে বলতে লাগলাম “এ তো আমাদেরই অপরিচিতা। ” আমাদের দুজনেরই অপরিচিতা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত