খালা যখন শাশুড়ি

খালা যখন শাশুড়ি

:-রাজু,তুই রেডি হয়ে নে,তারাতারি,,,,(আম্মু)
:-কেন আম্মু,কোথায় বেরুবে নাকি,,,?(আমি)
:-কিরে এরমধ্যেই ভুলে গেলি নাকি,তোরে না রাতে বললাম আজ আমরা নিপাদের বাসায় যাবো।
:-ও,কিন্তু আমারতো অফিস আছে,আমি যেতে পারবো না,,,(না যাওয়ার বাহানা মাত্র)
:-এইই,তোর তো অফিস বন্ধ।আর অফিস বন্ধ না হলেও তোর আব্বুকে বলবো,তোরে যেন ১ সপ্তাহের জন্য ছুটি দিয়ে দেয়।

:-আসলে আম্মু,আমার অফিস বন্ধ ঠিকই,কিন্তু আমার কিছু গুরুত্বপুর্ণ কাজ আছে।আমি ওই কাজটা সেরে কালকে যাবো।কি বলো,,,?
:-এইই,তুই কিন্তু না যাওয়ার বাহানা দিতেছিস।তোর কোন কাজই নাই,আর থাকলেও আমি তোর কোন বাহানাই শুনতেছি না,,,?
:-না শুনলে আমার কিছু করার নাই,সুতরাং আমি আমি এখন যেতে পারবো না,,,ব্যসস।
:-তুই যাবি না মানে,,?তুই তো যাবি যাবি,তোর বাপও যাইবো।
:-ঠিক আছে,তুমি আব্বুকে নিয়ে যাও।আমি কিন্তু যাচ্ছি না।
:-এই,তুই কি বললি,,?ঠিক আছে,আমি তোর বাবাকে বলছি তুই আমার কথা শুনছিস না।
আমাকে এ কথা বলার পরই,

:-এই,শুনছ।তোমার ছেলে আমার কথা শুনছে না,,,,(আম্মু)
:-তাই নাকি,২ মিনিট দাড়াও,আমি ১মিনিটের মধ্যে আসতাছি…(আব্বু নাস্তার টেবিল থেকে বলল)
তখনই আমি আম্মুকে বললাম,
:-আম্মু,তুমি এটা কি করলে,,,?(আসলে আমি আব্বুকে যথেষ্ট ভয় পাই,আর যখনই আমি আম্মুর কথার অবাধ্য হই,তখনই আম্মু আমার এই সুযোগটা কাজে লাগায়)
:-কেন,,?এতক্ষন তো আমার কথা শুনতেছিস না,,,এখন কি হলো,,,(আম্মু)

তখনই আব্বু হুংকার ছাড়তে ছাড়তে আমার রুমে প্রবেশ করলো,
:-রাজুউ,,,,,(আব্বু)
:-জ্বী,আব্বু,,,

(আব্বুর ডাকের জবাব দিয়ে,নিজেকে মনে মনে বললাম,রাজু তুই ঠেলা সামলা)
:-তুই নাকি তোর আম্মুর কথাই শুনছিস না,,,
:-কককই, আব্বু,,,তুমি জানো না,আমি তোমাদের কত বাধ্য ছেলে,,,
আব্বু আম্মুকে উর্দেশ্য করে বলল,
:-কিগো,ও তো বলছে ও তোমার কথা শুনে,,,তাহলে?(আব্বু)
:-তাহলে ওকে নিপাদের বাড়ি যেতে রেডি হতে বলো,,(আম্মু)
আমার দিকে তাকিয়ে,
:-এই,তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে,,,,ঠিক আছে,(আব্বু)
আমি আর কিছু না বলে মাথা নাড়লাম।
আর নিজে নিজে গুনগুনিয়ে বললাম,”ধ্যাত,ভাবছিলাম ছুটিতে কোথায় একটু শান্তিতে থাকব,তা আর হলো না..”
:-কিরে কিছু বললি,,,,?(আব্বু)
(হায় হায়,আব্বু আবার শুনে ফেললো নাকি?মনে মনে বললাম)আর মুখে বললাম,
:-না আব্বু,আসলে বলছিলাম কি,তোমরাও রেডি হয়ে নাও,,,,
এই কথা বলে,আম্মুর দিকে তাকাতেই,দেখি আম্মু মুচকি মুচকি হাসছে।আর এদিকে আমার গা জ্বলছে।
তখনই আব্বু বলল,
:-আচ্চা,আমরাও রেডি হতেছি,তুই একটু তাড়াতাড়ি কর,,,(আব্বু)

একথা বলে উনারা রুম থেকে বাহির হচ্ছিল,
তখন আব্বু আম্মুকে ফিসফিসিয়ে বলল,
:-দেখেছো,আমার ছেলেটা,আমার কতটা বাদ্য,,,(আব্বু)
:-দেখতে হবে না,ছেলেটা কাদের,,,(আম্মু)
একথা বলতে বলতে উনারা চলে গেল।

আর আমি উনাদের কথা শুনে,যেন উনাদের ভালোবাসাটা অনুভব করলাম।
আসলে প্রত্যেক মা-বাবাই চায় যে তাদের সন্তানগুলো তাদের বাধ্য হোক।
উনাদের কথা ভাবতে ভাবতে আমার রাগটা পুরোই পানি হয়ে গেল।
আবার রেডি হওয়ার কথা ভাবতেই আমার রাগটা পানি থেকে কঠিন পদার্থের রুপ নিল,,,
তবে এবারের রাগটা মা-বাবার উপরে না,এবার রাগ হচ্ছে,নিপার উপর,,,
তাই নিপার গোষ্টি উদ্ধার করতে করতে রেডি হচ্ছি।
ধুরর,কথা বলতে বলতে আপনাদের পরিচয় দিতেই ভুলে গেলাম।
আমি রাজু।মা-বাবার একমাত্র আদরের সন্তান।পড়ালেখা শেষ করে আব্বুর অফিসেই চাকরি করি।
আর যাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য এত কথা হলো,সেটা হলো আমার একমাত্র খালার বাড়ি।
আর নিপা,হ্যা নিপা হলো আমার খালাতো বোন।ওরা দুই ভাইবোন।

আর ওদের বাড়ি যাওয়ার একমাত্র উর্দেশ্য হলো,আগামী দুদিন পর নিপার বিয়ে।আর যার ফলে আমাদের এত তাড়াতাড়ি ওদের বাড়ি যেতে হচ্ছে।
আর ওদের বাড়ি না যাওয়ার জন্য এমন বিহেভ করলাম এইজন্য যে,আমি আসলে কোথাও বেড়াতে পছন্দ করি না।আর সেটা কোন আত্নীয় বা কোন বন্ধুর বাসা হোক।
যাইহোক,আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে আমি রেডি হয়ে গেলাম।
এর কিছুক্ষন পরই আম্মু আর আব্বু বের হলো।
এখন আমরা গাড়িতে।উর্দেশ্য নিপাদের বাড়ি।
অনেক্ষন জার্নির পর আমরা নিপাদের মানে আমার খালার বাড়ির সামনে এসে পৌছালাম।
আমাদের দেখে নিপার ভাই মানে আমার খালাতো ভাই দৌড়ে আসল।ও এসে আব্বু আম্মুর সাথে ভাব বিনিময় করছে।
আর আমি বাড়ির চারিদিকে চোখ ভুলিয়ে নিতেছি।বাড়িটি আমার চিরচেনা।

ছোটবেলায় অনেক এসেছি এই বাড়িতে।বড় হওয়ার পর এই বাড়িতে তেমন আসাই হয় নাই।
এসব ভাবতে ভাবতে আমি ভাবনার সাগরে ডুব দিলাম,
তখন ধরেন আমি ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়তাম।আর নিপা ছিল আমার এক বছরের ছোট।আর ওই ছিলো আমার একমাত্র খেলার সাথি।যাইহোক,
তো একদিন আমি একবার খালার বাড়িতে এসে দেখি নিপা আর আর একটি ছেলে বৌ-পুতুল খেলতেছে।আর আমি এটা দেখেই,দৌড়ে গিয়ে ছেলেটির কানে দিলাম একটা কামর বসিয়ে।
অমনি ছেলেটির চিৎকারে তার মা বাবা দৌড়ে এলো।
ও চিৎকার দেওয়ায়,আমি আবার ওর মা বাবার সামনে দিলাম,তার হাতের মধ্য আরেকটা কামড় বসিয়ে।
তারপর আর কি,,,
হা হা হা,এই কথাটি মনে হলে আমার এখনও হাসি পায়।তখনই,
:-এই তুই কোথায় আবার হারিয়ে গেলি,,,?চল আমরা ভেতরে যাই।(আম্মু)
আম্মুর একথায় আমার ভাবনার ছেদ কাটলো,
:-হুম চল,,(আমি)
অতঃপর আমরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম।
ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই খালা আর খালু আসলো।আর আমরা উনাদের সাথে ভাব বিনিময় শেষে,নাস্তা সারলাম।

এরপর আমি সোফায় বসে রইলাম।আর আব্বু-আম্মুকে খালা একটা রুমে নিয়ে গেলো।
তাই আমি হতভাগা সোফায় বসে মোবাইল টিপায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।তখনই,
:-কিরে,কি করিস,,,,?(নিপা)
:-কি আর করমু বল,,?তোর কারণে আমাকে দুদিন আগে তোদের বাড়িতে আসতে হলো।(আমি)
:-আমি আবার কি করলাম,,,?(নিপা)
:-কি করস নাই,তুইইতো আম্মুকে দুদিন আগে আসতে বলেছিস,,(আমি)
:-আমিতো আন্টিকে আর আংকেলকে আসতে বললাম।তোকেতো আমি আসতে বলি নাই।হুহ,,,(নিপা)
:-এইই,তোর সাথে আমার এখন ঝগড়া করার মুড নাই,তুই দুরে গিয়ে পানি খা,,,,তাড়াতাড়ি ধুরর হ,,,(আমি)
:-এইই,তুই আমাকে আমার বাড়ি থেকে দুরর হতে বলছিস হুহ,,,,?তুই দাড়া,,,,আমি আসতাছি?(নিপা এই বলে চলে যেতে লাগছিল)
আর আমি তাকে রাগানোর জন্য বললাম,
:-আমি দাড়াতে পারবো না।তুই এককাজ কর,আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।হা হা হা,,,(আমি)
:-ধুরর,তোর সাথে আমার আর কথা নাই।
এই বলে নিপা চলে গেল।আর আমি বসে আবার মোবাইল টিপায় মনে যোগ দিলাম।তখনই,

:-ভাইয়া,চলো না,,,,একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি।(নিপার ভাই,অভ্র)
আমি ওর মতলব বুঝতে পারছি।ওর মতলবটা হলো,আমার সাথে ঘুরতে গিয়ে আমার পকেট ফাকা করা।তাই আমি বললাম,
:-অভ্র,ভাইয়া এখন টায়ার্ড,,,আমি এখন বিশ্রাম নিবো।আমরা বিকালের দিকে নাহয় একটু ঘুরে আসব।কি বলো,,,?(আমি)
:-না,তুই এখনই অভ্রর সাথে গ্রামটা ঘুরে আসবি,,,(আব্বু)
ধুরর,আব্বু আবার কোথা থেকে আসলো।
আপনারা তো জানেন,আব্বুর সামনে আমি কেমন সুইয়ের মতো সোজা হয়ে যাই,তাই আমি কোন কথা না বলে,অভ্রকে সাথে করে ঘুরতে বাহির হলাম।আর অবশেষে,আমার পকেটটাও খালি হলো।
আর অভ্র দেখি সব মেয়েদের পছন্দের খাবার,যেমন,আচার,ফুচকা,চিপস আরো কত কি নিল।আমি কিছুই বললাম না।

ছোট মানুষ,এগুলো খেতেই পারে।শতহোক,একমাত্র খালাতো ভাই।
অবশেষে এগুলো নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম।আর আমাদের বাড়িতে দেখেই,নিপা ছুটে এসেই বলল,
:-কিরে অভ্র,এনেছিস,,?(নিপা)
:-হুমম,এই নাও।আসলে আপু ভাইয়া না অনেক ভালো।তোমার কথা বলায়, তোমার জন্য এগুলো কিনেছে।(অভ্র)
এবার নিলা,অভ্রের হাত থেকে ওগুলো নিয়ে,আমায় ভেংচি কেটে চলে গেল।
আর আমি অবাক দৃষ্টিতে অভ্রের কান ধরে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
:-ওরে হারামজাদা,তুই আমাকে বলে এসব নিজের জন্য নিলি,আর এখানে এসে বলতেছিস আমিই নিপার জন্য এগুলো নিয়েছি,,,(আমি)
:-ও,ও,ওহহ,ভাইয়া ছাড়ো না।খুব ব্যথা লাগতেছে।(অভ্র)
আমি ওর কান ছেড়ে দিয়ে বললাম,
:-এমন কেন করেছিস?(আমি)
:-আসলে ভাইয়া,আমি কিছুই করি নাই।যা করছে নিপা আপুয়ে করছে,,(অভ্র)
:-আচ্ছা,বাদ দে,,,এখন ভেতরে যাই।(আমি)
অতঃপর,এভাবেই কেটে গেল একদিন।আগামীকাল নিপার বিয়ে।

আর নিপার বিয়ের কথা ভাবতেই আমার মনে কেমন যেন কিছু হারানোর আশংকা জাগতেছে।
ধুরর,আমার আবার কি হারাবে?
এভাবে বিয়ের সমস্ত আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ের দিনটা হাজির হলো।
আজ নিপাকে দেখে মনে হচ্ছে,ওকে কেমন যেন অস্থির দেখাচ্ছে।তাই আমি ওর কাছে গিয়ে,
:-কিরে,তোকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন?কোন সমস্যা?(আমি)
:-না,আসলে আমার কেমন যেন লাগতেছে।যেন কিছু হারিয়ে ফেলতেছি আমার জীবন থেকে,,(নিপা)
:-আরে পাগলি,বিয়ের সময় প্রত্যক মেয়েরই এমন অবস্থা হয়।যা,তোকে এখন সাজাবে।কিছুই চিন্তা করবি না।আর কিছু লাগলে বলিস।ঠিক আছে,,,(আমি)
:-আচ্চা,,,(নিপা)
:-আচ্চা বললে হবে না,কিছুক্ষনের মধ্য বর চলে আসবে।আমি যাই,,,কিছু হাতের কাজ আছে।(আমি)
এই কথা বলে আমি ওর সামনে থেকে চলে আসলাম।

নিপা সামনে থেকে চলে আসার পর,আমার কেমন যেন লাগছিল,আর ওর সাথে কথা বলতে মনটা কেমন হা হা কার করছিল।
ধুরর, কিছুই ভালো লাগছে না।
যাই আমিও প্রস্তুত হয়ে নিই।
এদিকে বিয়ের সব কাজ নিয়ম মাফিক হচ্ছে।আর নিপাকেও বিয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে।এখন শুধু বর আসার অপেক্ষা।
বেলা প্রায় তিনটা বাজতে চলল।এখন পর্যন্ত বর আসার কোন নামই দেখতেছিনা।
যাই আব্বু আর খালুর সাথে দেখা করে আসি।
একি আব্বু আর খালুর মুখ কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।
আমি তাদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।

আমাকে তাদের কাছ যেতে দেখে তারা নিজেদের মধ্য মনে হয় আমাকে নিয়ে কথা বলছে।আমি যখন ওনাদের সামনে গেলাম,তখনই আব্বু খালুকে বলল,
:-তাহলে আপনি গিয়ে সকলকে কথাটা বলুন।আমি বর নিয়ে আসতেছি।(আব্বু)
:-আচ্চা,(খালু)
আমি ওনাদের কোন কথারই মানে বুঝলাম না।
অবশেষে,,,
বিয়েটা হয়েই গেল।আর আমি বউ নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির হলাম।
আপনারা ভাবছেন,
আমি আবার কখন বিয়ে করলাম আর কাকেই বিয়ে করলাম,,,?
এধরনের নানারকম প্রশ্ন আপনাদের মনে উকি মারতেছে।

তাহলে বলেই ফেলি,
হ্যা,আমার বউ হলো নিপা।যার বিয়া অন্যত্রে হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাসে নিপাকেই আমায় বিয়ে করতে হলো,
তাহলে শুনুন,
আপনারা তখন আব্বুর কথাটা শুনলেন,
তিনি খালুকে বলছিলেন,”আমি বর নিয়ে আসতেছি,আপনি সকলকে কথাটা বলেন”
এর পরে,খালু চলে গেলে,

আব্বু আমার হাতধরে বাড়ির ভিতর নিয়ে গিয়ে একটা রুমে ডুকিয়ে আমায় একটা পান্জাবি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
:-তাড়াতাড়ি করে পান্জাবিটা পড়ে নে,,,(আব্বু)
:-কেন,আব্বু?(আমি)
:-তোরে যেটা বলছি সেটা কর,,তাড়াতাড়ি,,,(ধমকের সুরে আমাকে কথাটা বলল,আব্বু)
আর আমি আব্বুর ভয়ে আর কোন কথা না বলে,পান্জাবিটা পড়ে নিলাম।তখনই,
:-এবার চল,,,(আব্বু)
:-কিন্তু কোথায়?(আমি)
:-এই বিয়েটা তোকেই করতে হবে চল।
:-আব্বু,তুমি এটা কি বলছ,,,?আর তুমি আমারর জীবন নিয়ে এমন করতে পারো না।
:-বাবা,এখন বেশি কথা বলার সময় নাই।তোকে আমি বাসায় গিয়ে সব বলব।
(অনুরোধের সুরে আব্বু আমায় কথাটা বলল)

আমিও আব্বুর মুখের দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা না বলে,বিয়েটা করেনিলাম।
আর আমি এখনও পর্যন্ত জানিনা কি এমন হয়েছে যে বিয়েটা আমাকে করতে হলো।যাই আব্বুর কাছ থেকে জেনে আসি।
আপনারা ও আমার সাথে আসেন।
ধুরর,আপনারা কিভাবে আসবেন,,,
আপনারা বরং আমাদের আলোচনাটা শুনুন।
ঐতো আব্বু আর আম্মু ছাদে দাড়িয়ে কি কথা যেন বলছে।আর আমি ওখানে গিয়ে দাড়ানো মাত্রই আম্মু বলল,

:-রাজু,,বাবা যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে।তুই এখন নিপাকে মেনে নেয়।(আম্মু)
:-আম্মু,তোমরা কি যে বলো না,,,?তোমরা কি কখনো আমার খারাপ চাইছো,,,?আর এটা নিয়ে তোমরা চিন্তা করো না।আমি ঠিক মানিয়ে নিবো।(আমি)
:-আসলে বাবা,তোর উপর আমার অনেক বিস্বাস ও ভরসা আছে।আর মেয়েটাও আমার মতে তোর সাথে মানিয়েছে।আর তুই আমার উপর কোন মনে কষ্ট রাখিস না।(আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলল)
:-আব্বু,তুমি কি যে বলো না,,,,(আমিও একপ্রকার কাদতে কাদতে বললাম)
তখনই আম্মু আমার ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
:-আসলে বাবা,তুই যদি বিয়েটা না করতি,তাহলে তোর খালু ও আমাদের সকলের মান-সম্মান একেবারে ধুলিসাৎ হয়ে যেত।(আম্মু)
:-আম্মু,কি এমন হয়েছে যে,তার জন্য আমাকে বিয়েটা করতে হলো,,,?(আমি)
তাহলে শুন,একথাটা বলেই আব্বু যা বলল,
আব্বু যা বলল,তার মুল অর্থ হলো এটা,
আজ যখন বরের গাড়ি নিপাদের বাড়ি দিকে রওয়ানা দেয়,তখন বর কৌশলে গাড়ি থেকে নেমে যায়।আর নামার পরেই তাকে আর খুজে পায়নি।

পরে বরের পিতা জানতে পারল যে,বর নাকি তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে পালিয়েছে।হা হা হা।
আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি নিপাকে পেয়ে কি অসন্তোষ নাকি?
আসলে তা না,বরং নিপাকে পেয়ে আমার মনটা কেমন উৎপুল্লতা অনুভব করছে।আমি এসব ভাবছি।তখনই,
:-রাজু,তুই আমাদের উপর মনে কষ্ট রাখিস না।যা রুমের দিকে।বৌমা একা বসে আছে।(আম্মু)

আমি আর কোন কথা না বলে,মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে চলে এলাম রুমের সামনে,তখনই,
:-এই যে দুলাভাই,আমার বখসিস দিয়ে দেন তো,,,,(অভ্র মানে আমার শালা)
:-মানে কিসের বখসিস?(আমি)
:-রুমে ডুকলেই দেখবেন,আমি কি জন্য বখসিস চাইলাম।এখন কথা না বলে দিয়ে দেন,,,,,(শালা)
:-এই নে,,,,(আমি তাকে একহাজার টাকা দিয়ে বললাম)
:-এতে হবে না,,,আরো দাও,,,(শালা)
:-আচ্চা,এই নে,,,(আরো পাঁচশ টাকা দিয়ে,আমি)
এই বলে তাকে আরো কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করলাম।
মনে মনে বললাম,”নিক না,শালা মাত্র একটাই তো”
যাইহোক কথা অনেক হলো,

এবার রুমে মানে বাসর ঘরে ডুকলাম।ডুকে দেখি নিপা ইয়া বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।আর বাসর ঘরটা ফুল দিয়ে সাজানো।তার মানে শালাটা এই জন্য বখসিস নিল।যাইহোক,,,
আমি ভাবলাম নিপা কাদতেছে।কিন্তু কাঁদার কোন সাড়াই তো পাচ্ছি না।
ধুরর,আমি দরজা আটকাতেই ভুলে গেছি।
দরজা আটকানোর শব্দে নিপা নড়েছড়ে বসল।
আমি যেই নিপার সামনে গেলাম,
অমনি নিপা এসে আমার পা ধরে সালাম করে আবার খাটে গিয়ে বসল।
আর আমি কিছু না বলে,বারান্দার দিকে গিয়ে ওখানে টুলটায় বসলাম।
আমি বসে ভাবতেছি নিপার কথা।
“নিপা হয়তো স্বাভাবিক নেই।তাই আমি কোন কথা বললাম না।এখন আমার কথা হয়তো তার কাছে বিরক্ত লাগবে।”

এই ভেবে আমি কোন কথা না বলে বারন্দায় চলে এলাম।
কিছুক্ষন এভাবে বসে থাকার পর আমি অনুভব করলাম আমার গা ঘেঁষে কেউ যেন বসতেছে।
হ্যা,নিপাই বসল,আমার পাশে।
আমি তো অভাক,,,,,,

এই মেয়ে আমার সাথে এমন স্বাভাবিক আচরন করতেছে,যেন ওর সাথেই আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
আমাকে আরো অবাক করে নিপা বলল,
:-তুমি কি ভাবছ,আমি এমন স্বাভাবিক আচরণ কেনই বা করছি?আসলে,আজ দুপুরে আমি তোমাকে বললাম না,আমার কেন যেন কিছু হারিয়ে যাওয়ার আশংকা লাগছে?সেটা হলে তুমি।তোমাকে হারানোর আশংকায় আমায় তখন এমন অস্থির দেখাচ্ছিল।(এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল নিপা)
আমি অবাকের পর অবাক হচ্ছি নিপার আচরনে।
মেয়েটা আমাকে তুমি করে সম্বোন্ধ করছে,আর আমি ১ম অবাক হলাম বাসর ঘরে,যখন ও আমাকে সালাম করল।

যাইহোক,ও যেহেতু আমার সাথে এমন আচরন করছে,তাহলে আমিও তার সাথে স্বাভাবিক আচরন করি।
তাই আমি বললাম,
:-নিপা,আমি যখন তোমার বিয়ের কথাটা শুনলাম।তখনই আমি আমার বুকের বামপাশে কেমন যেন চিনচিন ব্যথা করছিল।আর আজ যখন তোমার বিয়ে হয়ে যাবে,তখন এটা শুনতেও আমার কেমন যেন লাগছিল।আবার যখন তোমার সাথে কথা বলছিলাম,তখনই আমার মনে কেমন যেন অস্থিরতা লাগছিল।আসলে,,,,,,,
আমার কথা টেনে নিয়ে নিপা বলল,
:-আসলে এটা ভালোবাসার চমক ছিল।আসলে তোমার আর আমার মনের মাঝে দুজনের অজান্তেই ভালোবাসার জালের তৈরি হয়েছিল।
এখন এটা বলো,তোমার মনে কি ঐ ধরনের কোন আশংকা আছে,,,?আমার কাছে কিন্তু সবই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।(আমার কাধে মাথা রাখতে রাখতে বলল নিপা)

:-আসলে তাইতো,আমার ও সবকিছু স্বাভাবিক লাগছে।যেন এটাই হওয়ার ছিলো।(আমি)
এই কথা বলে আমি নিপার মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে তার ঠোঁটের মধ্য আমার ঠোঁট দিয়ে একটা গভীর চুমো একে দিলাম।
অমনি নিপা আমার বুকে মুখ লুকালো।আর আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।
বাহির থেকে আসা চাঁদের আলোটা নিপার মুখে পড়ে ওর চেহারার সৌন্দর্যটা বৃদ্ধি করছে।আর তার ঠোটের বামপাশে থাকা তিলটাও যেন তার সৌন্দর্যের বাহারটা আরো বাড়িয়ে দিলো।
কখনযে নিপার চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।তার আর খেয়ালই নাই।খেয়ালের ঘোরটা কাটলো নিপার ডাকে।তারপর,

:-এই চলো,এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবে,,,?(নিপা)
:-আমার তো মন চাইতেছে তোমাকে নিয়ে এখানে বসে থেকে সারারাত কাটিয়ে দিতে।(আমি)
:-তাই নাকি,,?
:-হুম।
:-আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।আমার না খুব খুদা লাগছে।চলো।
:-আচ্চা চলো।

খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করলাম।
এখন নিপা শুয়ে আছে আমার বুকে,আর আমি তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি আর ওর চুল থেকে আসা মন মাতানো ঘ্রানটা উপভোগ করতেছি

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত