ভুতের বাড়ি

ভুতের বাড়ি

চৈতি আমার খুব বন্ধু। তার বাবা একটি বাড়ি কিনেছেন ভূতের গলিতে। খুব পুরনো একটি বাড়ি। কম দামে পেয়েছেন বলে তাড়াতাড়ি করে কিনে ফেলেছেন বাড়িটা। কবে উঠবে বাড়িতে সেই আনন্দে চৈতিরা ছটফট করছে। একদিন তারা কেনা বাড়িতে গিয়ে উঠল। বাড়িটির দেয়ালে ও ছাদে অসংখ্য ছিদ্র। চামচিকারা উড়াওড়ি করছে। ঘরভর্তি পোকামাকড়ের বাসা। বাড়ির দেয়াল কাত হয়ে আছে। মনে হয় একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। বাড়ির চারপাশে জঙ্গল। বাড়ির এক কোনে আছে দুটি কদম গাছ আর এক কোনে আছে একটি তেঁতুল গাছ। ভুতুড়ে পরিবেশ। তারপরেও খারাপ লাগছে না চৈতিদের। কারণ বাড়িটা এখন নিজেদের। তাই অনেক আনন্দ।

গভীর রাত। সবাই ঘুমিয়ে আছে। ‘চৈতির বাঁবা বাঁড়ি আঁছেন্নি। অ চৈতির বাঁপ, বাঁড়ি আঁছেন্নি।’ গম্ভীর গলায় কে যেন ডাকছে।

কথাগুলো কয়েকবার কানে এলেও চৈতির বাবা তেমন দাম দেয়নি। চৈতির বাবা তো আরও কেউ থাকতে পারে। কিন্তু মশারী ফাঁক করে যখন বলল, ‘চৈতির বাঁবা ঘুমাইছেন্নাকি, উঁঠেন।’ তখন চৈতির বাবা চোখ মেলে তাকালেন। দেখলেন, মশারীর বাইরে একটি মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ছায়ামানুষ! হাত পা, শরীর, মাথা অষ্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চৈতির বাবা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, কে আপনি, কে!

‘আঁমি বাঁড়িঅলা। এই বাড়ির মালিক আমি। হুঁট করে বাঁড়িতে উইঠা পঁড়লেন দেঁহি, আঁমার সঙ্গে কোন যোঁগাযোগই করলেন না, ব্যাঁপারটা কি, কিছুই ত বুঁঝতে পারতেছি না আঁমি, বলল ছায়ালোকটি।

চৈতির বাবা মোচড় দিয়ে উঠে বসলেন বিছানার এক কোণে। মশারীর একটা অংশ স্ট্যান্ডের উপরে রেখে বললেন, আচ্ছা বসেন ভাই, বসেন। একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বললেন তিনি। ছায়ালোকটা ডান-বাও তাকিয়ে বললেন, ‘সঁংসার তো ভালই পাঁতছেন দেঁখছি। বাঁড়ি কই আঁপনের।’ চৈতির বাবা অবাক হয়ে নরম গলায় বললেন, এত রাতে এসে আপনি বাড়ি-ঘরের খবর নিচ্ছেন, আগামাথা কিছুই ত বুঝতেছি না ভাই। আপনি কে বলুন ত!

‘অঁ ঠিকই কঁইছেন আঁপনি? আঁগামাথা কিঁছুই বুঝতেছেন না? চোঁখ দুটি বন্ধ করেন। আঁগামাথা বুঁঝাই।’ চৈতির বাবা কথাামতো বন্ধ করলেন চোখ। একটু পরেই লোকটি ধীরে ধীরে বলল, এঁবার চোখ খুলুন। চৈতির বাবা চোখ খুলেই ‘ওরে আল্লারে’ বলে খাট থেকে উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন মাটিতে।

চৈতির মা’র ঘুম ভেঙে গেল। আয় হায়! এ কি অবস্থা কী হয়েছে আপনার, এসব বলে কেঁদে কেঁদে চৈতির বাবাকে টেনে তুললেন খাটে।

চৈতির বাবা বললেন, পানি দেও। পানি খেয়ে তিনি ঝিমুতে লাগলেন। ঘুম থেকে উঠে পড়ল চৈতি। সে কান্না শুরু করে দিল। তার ছোট ভাইটি উঠেও দেখাদেখি কাঁদতে লাগল। গভীর রাতে এ বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল। ছায়ালোকটি বলল, ‘চৈঁতির বাঁপ শোন্্, তোঁর মতো আঁমার দুটি বাঁচ্চা আঁছে। নঁইলে খাঁমছি মেঁরে তোঁর শরীর থেঁকে রক্ত বেঁর কঁরে ফেঁলতাম আঁর সেঁই রক্ত দিয়ে ঘরটা রং কঁরতাম। সঁকাল আঁটটার আঁগে বাঁড়ি ছেঁড়ে চলে যাঁবি।’ -বলেই শোঁ করে চলে গেল লোকটি।

ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল সবার। কোন রা-শব্দ নেই। সকাল বেলা। চৈতিরা বাড়িটা ছেড়ে চলে আসছে। সবারই মন খুব খারাপ। এমন সময় গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ল দুটি শিশু। তারা ছুটে এসে চৈতির হাত ধরে বলল, কঁই যাঁও তোঁমরা? যেঁতে দেঁব না তোঁমাদের। চৈতি বলল, তোমাদের সঙ্গে এভাবে আমাদের থাকতে বলছ? এখানে থাকলে আমরা ভয়ে মরে যাব। ভয়ংকর একটা লোক এসে আমাদের চলে যেতে বলেছে। থাকলেই বিপদে পড়ে যাব আমরা। শিশু দুটি বলল, এঁটা আঁমাদের বাঁড়ি। আঁমার বাঁবা খুঁব খাঁরাপ। তোঁমাদের চঁলে যেঁতে বঁলেছে বুঁঝি? কিন্তু আঁমরা তোঁমাদের যেঁতে দেঁব না। তোঁমরা হঁবে আমাদের খেঁলার সাঁথী। বাঁবা যঁদি কিঁছু বঁলে সেঁটা আঁমরা দেঁখব। তোঁমরা অবঁশ্যই থাঁকবে এ বাঁড়িতে। তোঁমরা হঁবে আঁমাদের চঁমৎকার বন্ধু।

চৈতিরা থাকতে লাগল বাড়িটিতে। দিনে দিনে খুব বন্ধু হয়ে গেল ভূতের বাচ্চা দুটি। একসাথে খেলে আর আনন্দ করে। চৈতির অনেক বুদ্ধি আছে। সে ভূতের বাচ্চাদের গল্প আর ছড়া শোনায়। ভূতের বাচ্চা দুটি আনন্দে লাফালাফি করে বলে, আরও বলো, আরও শুনব। চৈতি এদের লেখাপড়া শেখাতে লাগল। এরা মানুষের রূপ ধরে স্কুলে যায় আর পড়ালেখা করে। এভাবে ভূতেদের সঙ্গে চৈতিদের বেজায় খাতির হয়ে গেল। তাই তাদের আর কোনো ভয় নেই। বাড়িতে চোর-ডাকাত আসতে পারে না তাদের ভয়ে। কি মজা!

চৈতি আমাকে কানে কানে বলে, দেখিস সুমা, আমি ভূতকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে ছাড়ব। আমি চোখ বড় করে বলি, ‘এগুলি কী বলিস তুই! ভূত আবার মানুষ হয় ক্যামনে!’

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত