গ্রাম থেকে দূরে শহরের ব্যস্ত জীবনে ব্যবসায়ীক ব্যস্ততায় মগ্ন!সেখানে ছোট একটা পরিবার আছে কিন্তু জীবনের চেয়েও দামী।মা-বাবা গ্রামেই থাকেন অনেকবার জোড় করেও শহরে স্থায়ী করা যায় নি তাদের!গ্রামের শান্ত-শিষ্ট ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ছেড়ে শহুরে হট্টগোলে তারা থাকতে নারাজ!ছয় বছর আগে বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তেই বিয়ে করা হয়েছিলো।বউকে নিয়ে শহরেই আছি।সাথে আছে আমার ডাবল প্রিন্সেস/জোড়া রাজকন্যা!বিয়ের দুই বছর পর মিলির কোল আলো করে এসেছিলো আমার ফুটফুটে দেখতে একজোড়া রাজকন্যা!এবার চার বছরে পা দিয়েছে!শুধু জমজই নয় এক পোশাক পড়ালে কেউ ওদের দুজনকে আলাদাভাবে চিনতে পারে না।আদর করে নামও প্রায় একই রকম রাখা হয়েছে মধু আর মিতা!পাপাস প্রিন্সেস বলে কথা!ভালো নাম হাফসা বিনতে মধু ও হুমায়রা বিনতে মিতা! শুধু মিতার ঘাড়ে একটা কালো টিপ আছে যা দেখে সহজে চেনা যেতে পারে।সন্ধ্যা সময় যখন ব্যস্ততা কাটিয়ে বাড়ি ফিরি বাবা বলে দুজন দুই কাধে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে!নিজেকে তখন পৃথিবীর সবচাইতে সুখী বলে মনে হয়!
-এই শুনোনা?
 -কি?
 -তোমার এই রাজকন্যারা আবার কি আবদার করে ওদের থেকে শুনো!
 -হুম!বলো প্রিন্সেসরা তোমাদের কি চাই?
 -বাবা আমার জন্য এতোগুলা কিতক্যাত (কিটক্যাট)!
 -আমার জন্য এতোগুলা আকক্লিম(আইসক্রিম)!
 ওকে মধু,ওকে মিতা!তোমরা চাইলে পুরো দোকানটাই নিয়ে আসবো পাপা!
 -না না বাবা!পরে দোকানি বসে কাঁদবে!আমাদের শুধু ওগুলা হলেই হবে!
 -ওলে বাবালে!কত মানব দরদি!পাকা বুড়ি আমার!
 -আমরা বুলি (বুড়ি) হলে দাদিমা কি?
 -আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে তোমরা তো পাপাস প্রিন্সেস!আর এই যে মহারানী,রাজকন্যাদের আবদার তো শুনলাম এবার আপনার কিছু আবদার আছে?
 -হুম!এই মুধুমিতা জুটিটা যেনো সারাজীবনের জন্য পাপাস প্রিন্সেস হয়ে থাকে!এটুকুই আবদার!
 -হুম ওদের তো সারাজীবন আমার রাজকন্যা করে রাখবো!আমার ডাবল প্রিন্সেস!ওরাইতো আমার নয়ন মনি!
 -আর আমি?
 -তুমি হচ্ছো আমার এই মনটা!
 -আর আমার শশুড় আব্বা ও শাশুড়ি মা?
 -উনারা তো আমার এই হার্ট!
 -হুম আমি চাই তুমি এভাবেই সব্বাইকে ভালোবাসো!আর কিচ্ছু না!
 -জানিনা তোমার চাওয়ার মর্যাদা কতটুকু রাখতে পারবো তবে কথা দিলাম আমার জীবন থাকতে একটুও অপূর্নতা রাখবো না!
 -হুম এই জন্যই তোমাকে এতো ভালোবাসি!
 -আমিও সবাইকে ভালোবাসি!
 ***
 -বাবা আমরা ঘুরতে যাবো না?
 -হুম আমি আমার প্রিন্সেসদের নিয়ে সামনের মাসে রাঙ্গামাটি ভ্রমনে যাবো!
 -এখন কেনো যাবো না?
 -প্রতিবছর আমাদের ডিপার্টমেন্টে ক্লথ টপার ফ্যাসন ডিজাইন রিঅ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় সেখানে আমাদের অফিস থেকেও বেস্ট শোস্টপারদের সিলেক্ট করা হয়।আগামী পনেরো দিন পরে আমরাও ওই শো’তে পার্টিসিপেন্ট করবো!বুঝেছো রাজকন্যা?
 -না!আমার ছোত (ছোট) মাতায় (মাথায়) এতোকিছু বুঝতে পারি?
 -ওলে বাবালে!
 -মধু মিতা তোমরা খেতে এসো।
 -চলো চলো তোমাদের মা ডাকছে!
 -আচ্ছা বাবা!
 ***
 -দেখি কার আগে খাওয়া হয় যে প্রিন্সেসের আগে খাওয়া হবে পাপা তাকে গিফট দিবো!
 -কি গিফত (গিফট) বাবা?
 -সারপ্রাইজ!
 -ওকে বাবা!
 -বাবা আমি দিম(ডিম) খাবোনা গলায় আতকে (আটকে) যায় ওয়াক!তুমি আমাকে এই মাছের কাতা (কাটা) খুলে দাও!
 -বাবা আমাকেও!
 -আচ্ছা দিচ্ছি কিন্তু বাবু তোমরা ডিম না খেলে তারাতারি বড় হবে কিভাবে?জানোতো ডিমে অনেক পুষ্টি!
 -পুস্তি (পুষ্টি) কি বাবা?
 -যা তোমাদের জন্য অনেক উপকারি!রোগের সাথে একাই যুদ্ধ করতে পারে!
 -ও!বুঝেছি!তাহলে খাবো।কিন্তু যখন খাবো তখন আমাদের গলায় আতকে (আটকে) গেলে কিন্তু তারাতারি পানি দিবে!
 -যথা আজ্ঞা রাজকন্যারা!
ডিনার শেষে আমরা ঘুমাতে গেলাম!আমার দুটো রাজকন্যাকে দুপাশে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানি গান শুনাচ্ছি!
 -বাবা সবসময় এই গান শুনতে ভালো লাগে না আজ আলেকটা (আরেকটা শুনবো)
 -হুম বাবা আরেকতা (আরেকটা)
 -আচ্ছা ঠিকাছে শুনাচ্ছি রূপকথা শুনবে?
 -হুম!শুনবো শুনবো!
 -এক যে ছিলো রাজা আর এক যে ছিলো রানী,
 ভালোসায় ভরা ছিলো তাদের দিন আর রজনী!
 বিয়ের দুটি বছর পরে দেখো রানীর কোল আলো করে,
 জোড়া রাজ কন্যা এলো ধরায় রাজার খুশি আর না ধরে!
 -দেখি মধু মিতা আম্মুকে শুনতে দিবে না?
 -হুম তুমি এপাশে এসো!
 -তুমি আব্বুর পাশে থাকো আর মিতা আমার পাশে চলে আসো!
 -না আমি যাবোনা,আমিও আব্বুর পাশে থাকবো!
 -আচ্ছা তাহলে তোমরা দুজন তোমাদের আব্বুর দুপাশেই থাকো আমি মধুর পাশে শুয়ে পড়ছি!
 -আচ্ছা!
 -“মাতা-পিতার খুব আদরের জোড়া রাজ কন্যারা,
 ফুল-পাখি সব খুশিতে নাচে রাজা-রানী দিশেহারা!
 ভালোবাসার স্বর্গ নামে রাজা-রানীর ঘরেতে,
 চারজন মিলে প্রতিটা দিন হাসি-খুশিতে যায় যে মেতে!
 রাজপথে বেরোলেই তখন তাকিয়ে থাকতো প্রজারা,
 জোরা রত্ন কোথায় পেলো ভেবে পায়না কূল কিনারা!
 সুখে আছে রাজা-রানী সুখে রাজ কন্যারা,
 ডাবল প্রিন্সেস আজো দেখো ঘুমায় না তাদের বাবা ছাড়া!”
 -বাবা লাজকন্যালা (রাজকন্যারা)গুলো কি আমলা(আমরা)?
 -হ্যা বাবা আমরা কি ওই রাজকন্যা দুতো (দুটো)?
 -মধু আর মিতা ছিলো দুটি রাজ কন্যার নাম,
 তাদের জন্য বাবার স্নেহ থাকবেই তো অবিরাম!
 -বাবা বাবা একতা (একটা) কতা (কথা) বলি?
 -হুম বলো।
 -আমলা (আমরা) তোমাকে অনেক ভালোবাসি!
 -আমিও বাবা।
 -প্রিন্সেসরাও ভালোবাসে তাদের প্রিয় বাবাকে,
 রাজাতো ভীষন খুশি সাথে নিয়ে রানীকে!
 -তাইতো!
 -আচ্ছা এখন ঘুমাও সবাই আবার অন্যদিন শুনাবো।
 -ওকে বাবা!তুমিও ঘুমাও!
 -বাবার একটু কাজ আছে। মা তোমাদের চুলে বিলি কেটে দিবে!
 -কি কাজ বাবা?
 -বলেছিলাম না?বেস্ট ক্লথ ডিজাইনিং এন্ড ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগীতা আছে?
 -হুম!
 -ওটার জন্য আমার মডেলদের সিলেক্ট করতে হবে তো তাই সেটা নিয়েই একটু প্ল্যান মেকিং করবো!
 -আচ্ছা বাবা।এবছর আমরা জিতবো।
 -হুম রাজকন্যারা যখন বলছে তখন জিতবোই!গতবারে টপ টেন হয়েছি ঠিকই কিন্তু এবার আমরা হবো শোস্টপার!
 -ওকে বাবা!
 -আচ্ছা প্রিন্সেসরা তোমরা এবার ঘুমিয়ে পড়ো বাবা কিছুক্ষন পরে আসছি।
 -আচ্ছা বাবা!
[কিছুক্ষন পর]
 বারান্দায় বসে আছি।মনেহয় এতোক্ষনে মধু আর মিতা ঘুমিয়ে পড়েছে।মিলিকে ফোন দিয়ে বারান্দায় আনি!
 -হুম বলো কেনো ডেকেছো?
 -দেখো আজ আমাদের এই বারান্দাটা কি চন্দ্রালোকিত!
 -রাখো তোমার চন্দ্রালোকিতের রোমান্টিকতা!দুই বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে এখনো উনার রোমান্টিকতা যায় না!
 -আহ এমন করছো কেনো?তোমার হয়ে আমার রোমান্টিকতা তো সারা জীবনের জন্য!
 -ধ্যাত!ছাড়তো তোমার আদিক্ষেতা!এখন বলো কি জন্য ডেকেছো?
 -বেস্ট ক্লথ ডিজানিং এন্ড ফ্যাসন অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতার সিলেকশন নিয়ে কথা বলতে!
 -তো কাদের সিলেক্ট করলে?
 -আমাদের গতবারের জেন্টস মডেল রাদিতকে!
 -আর চাইল্ড/কিডস মডেল?
 -কেনো?আমাদের ডাবল প্রিন্সেস!
 -কি বলো?মাথা খারাপ নাকি?ওরা এটুকু মাত্র!তোমার কি মনে হয় ওরা পারবে?
 -পারবে না কেনো?একশবার পারবে!পাপাস প্রিন্সেস বলে কথা!আর এছাড়া ওদের মধ্যে আমি বিশাল ট্যালেন্ট দেখেছি।
 -সত্যিই পারবে?
 -হুম পারবে।তুমি চিন্তা করো না!ওরাই টপার হবে।
 -আচ্ছা ঠিকাছে।সব বুঝে শুনে করবে কিন্তু।
 -ওটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না আমি ঠিক সামলে নিবো।
 -তাহলেই ভালো।
 -হুম চলো ওরা রুমে একা আছে।রুমে যাই আর এমনিতেও অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে হবে।
 -চলো।
পরেরদিন অফিস থেকে ফেরার পর।
 -বাবা এতোগুলা মেকাপ আল (আর) জামা দিয়ে কি হবে?
 -তোমাদের জন্য তোমরাই তো এবারের কিডস মডেলের পার্টিসিপার তো তোমাদের মডেলিং রিয়ার্সেলের জন্য এগুলা আনা হয়েছে!
 -দালুন (দারুন) হবে!
 -তিকাছে (ঠিকাছে)!কি মজা কি মজা!
 -হুম।এই মিলি,শুনে যাও তো একবার।
 -কি হয়েছে?
 -ওদেরকে একটু সাজিয়ে দেখাও তো যাও।র্যাম্পে দুটো রাজকন্যাকে কেমন লাগে দেখতে হবেতো!
 -আচ্ছা যাচ্ছি।
 -যাও।
 -মধু মিতা তোমরা আমার সাথে আসো সাজিয়ে দেই।
 -চলো চলো!
 [কিছুক্ষন পর]
 আমি অপলক চেয়ে আছি!আমার ডাবল প্রিন্সেসকে ওদের মায়ের সাজানি আরো অপরূপা করে তুলেছে!মনে হচ্ছে আমি এখন ওদের মধ্যে সেই রূপকথার কেশবতি,ঘুমন্তপরির রাজকন্যা,পাতালকন্যা,লীলাবতী এদের সবাইকে দেখতে পাচ্ছি আর আমার মিলির মধ্যে দুয়োরানীকে!বাহ কি অপরূপা!
 -বাবা!
 -কেমন হয়েছে?
 -ওয়াও মনে হচ্ছে রূপকথার রাজকুমারীরা আমার ঘরে এসে বসেছে!তাহলে তো মা এখন তোমাদেরকে রূপকথার রাজকুমাররা ধরো ডালিমকুমার,লালকুমার,নীলকুমার এরা এসে তুলে নিয়ে যাবে!
 -না!আমলা (আমরা) যাবো না!
 -হুম।আমরা সারাজীবন পাপাস প্রিন্সেস হয়ে থাকবো।আমাদের চাইনা তালিমকুমার(ডালিমকুমার) লালকুমার,নীলকুমার।আমরা পাপাকেই চাই!
 -আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে।তোমরা পাপাস প্রিন্সেসই হয়ে থাকবে।
 -ওকে বাবা।তুমি সবচাইতে ভালো পাপা!
 -আর এই ছেলে তুই শুধু এগুলা এনেছিস কিতক্যাত(কিটক্যাট) কোতায়(কোথায়)?
 -আমাল (আমার) আকক্লিম (আইসক্রিম)?
 -ওরে বাবারে আমার মায়ের মতো দুটো রাজকন্যার আদেশ অমান্য করতে পারি?ওগুলা সব এনেছি!তোমাদের মায়ের কাছে আছে যাও।
 -ওকে বাবা!
[পনেরো দিন পরে]
 – বেস্ট ক্লথ ডিজাইনিং এন্ড ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় এবার মোট ত্রিশটি আর্গানাইজেশন পার্টিসিপেন্ট করছে।প্রথমে জেন্টস মডেলদের পার্টিসিপেন্ট।
 -এবারে র্যাম্পে আসছে মধুমিতার জেন্টস মডেল রাদিত!
 রাদিতকে এবার টি-সার্ট উইথ জিন্স মডেলে দেয়া হয়েছে।হাতে দামী ব্র্যান্ডের একটা মোবাইল গলায় হেডফোন ঝুলানো।সানগ্লাসটা জিন্সের পকেটে ঝুলানো!সাথে হোয়াইট কালার কেডস!বাম হাতে হোয়াইট লেন্সের রাইট ওয়াচড(ঘড়ি)!সবার মুখে একটাই কথা জেন্টস মডেলে অসাধারন টার্নিং করেছে মধুমিতা ফ্যাসন!
 এবার পালা কাপল ফ্যাশন!
অনেকগুলা কাপল র্যাম্পে আসার পর এবার র্যাম্পে আসছেন মধুমিতার প্রোপাইটর হাসিব ও মিলি!মিলি এবার নীল কালারে হোয়াইট পাইড় যুক্ত একটি শাড়ী,হালকা মেকাপ,হোয়াইট সু এবং হাসিব হোয়াইট টি-সার্ট উইথ লাভ কলার ও হোয়াইট স্টিজের একটি প্যান্ট।হোয়াইট কেডস।
 বিচারকদের বিচক্ষণঃঅসাধারন ছিলো মধুমিতার পারফর্ম!
এবার র্যাম্পে আসছে লেডিস মডেলরাঃ
 -লেডিস ফ্যাসনে টপার আনিন্দ্য বুটিকস!
 চিন্তায় পড়ে গেলাম!আরো দুটি অডিশিন আছে একটি জিতলেই শোস্টপ হতে পারবো নতুবা আনিন্দ্যকেও একটি হারতে হবে যে কারো কাছে!
 এবার র্যাম্পে ফ্যামিলি ফ্যাশনঃ
 বিশ্লেষকদের শর্ত, হাসিব-মিলি যেহুতু একটি অডিশনে এসেছে তো তারা ফ্যামিলি মডেল অডিশনে আর আসবে না!ফ্যামিলি মডেল অডিশনের উইনারও আনিন্দ্য!
 বিচারকদের বিশ্লেষণ!
 -এবার সমানে সমানে আছে মধুমিতা ফ্যাশনস ও আনিন্দ্য বুটিকস!
 -এবার শোস্টপার হতে হয়তো মধুমিতাকে জিততে হবে নয়তো আনিন্দ্য বাদে অন্য কেউ জিততে হবে নতুবা এবারেও শোস্টপ হয়ে যাবে আনিন্দ্য!
 এবার র্যাম্পে আসছে আমাদের সবার প্রিয় ক্ষুদে ফ্যাসনরাজ ও রাজকন্যারা!মানে কিডস ফ্যাশন।
 -র্যাম্পে আসছে আনিন্দ্য বুটিকস এর কিডস মডেল আবির।
 আবিরের পারফর্মেন্সে পুরো অডিশনে তাক লেগে গেছে।অসাধারন পারফর্ম ছিলো!বেস্ট ওয়ান!আমি হতবাক হয়ে গেছি তাহলে কি এবারের প্রতিযোগিতায়ও অ্যাওয়ার্ড আনিন্দ্য জিতে নিবে?
 ভাবতে ভাবতেই এংকারিং এল্যাউন্সমেন্ট এবারে র্যাম্পে আসছে মধুমিতা স্পেশাল কিডস একই সাথে মধু ও মিতা!
 মধুমিতা দুজনেরই ছিল হোয়াইট ড্রেস,হোয়াইট সু হোয়াইট ব্র্যান্ড বেসলেট!আমার মনে হচ্ছে ওদের পারফর্ম ভালোই ছিলো কিন্তু তবুও ভয় হচ্ছে খুব এবারের কি শোস্টপার আমরা হতে পারবো না?
 এবারে বিচারকদের বিশ্লেষণ শুনানি হবে!
-এবারের শোস্টপার একটি ফ্যাসন ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতার তিনটি অডিশনে প্রথম স্থান অধিকারের আমাদের ক্লথ ডিজাইন এন্ড ফ্যাশন ডিপার্টমেন্টে বিরল রেকর্ড গড়া পারফর্মার মধুমিতা ফ্যাশন!মধুমিতার হোয়াইট এঞ্জেল সাজ সুবাদে চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্সে আজকের উইনার মধুমিতা।
 চারিদিকে আলোক বাজি ছুটছে।মধুমিতাও ছুটে এসে পাপাকে জড়িয়ে ধরলো!আনন্দে ভাসছে মধুমিতারা!
 -কনগ্রেচুলেশন রাদিত।তোমার পারফর্ম আমাদের এগিয়ে দিয়েছে।
 -আপনাকেও ধন্যবাদ আমাকে বেস্ট মডেল করার জন্য।
 -স্বাগতম।
 -কিন্তু যে যাই বলুক সবার চোখ ধাঁধানো পারফর্ম ছিলো মধুমিতা জুটিটা!
 -হতেই হবে পাপাস ডাবল প্রিন্সেস বলে কথা!
 -বাবা আমরা এবার লাঙ্গামাটি (রাঙ্গামাটি) যাবো না?
 -হুম যাবোইতো!বিজয় সেলিব্রেশন হবে তো ট্যুরে।রাদিত আগামি পরশুদিন তৈরি থেকো রাঙ্গামাটি ট্যুরে যাবো আমরা সবাই।
 -আচ্ছা ঠিকাছে স্যার।আজ আসি।
 -হুম।
 -বাবা দাদা-দাদুকেও চাই!
 -আচ্ছা ঠিকাছে আসবে।আমি এক্ষুনি তোমার দাদাকে ফোন দিচ্ছি।
পরের দিন।
 -আসসালামু আলাইকুম,বাবা কেমন আছো?
 -ওয়া আলাইকুম আসসালাম।এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো তোরা কেমন আছিস বাবা?
 -এইতো ভালোই।যেখানে তোমাদের আদরের জোড়া মুক্তা আছে সেখানে কেউ খারাপ থাকতে পারে?
 -হুম তাইতো।তো দাদুভাই তোমরা কেমন আছো?
 -আমলা (আমরা) ভালো আছি তোমলা (তোমরা)?
 -আমরাও ভালোই আছি দাদুভাই।
 -মা দেখো আগে তুমি আমার সব আবদার পূরণ করতে আর এখন আমাকে এই ছোট দুটি মায়ের সব আবদার রাখতে হয়।
 -তা তো রাখতেই হবে আমাদের জোড়া মুক্তা বলে কথা!
 -হুম।
 -তো বাবা এবার বল কি জন্য আমাদের এখানে ডাকা?
 -আসলে বাবা,তোমাদের আদরের মধুমিতা বায়না ধরেছে রাঙ্গামাটি ট্যুরে যাবে!তাই ভাবলাম যাবোই যখন সবাই মিলেই যাবো!
 -তা ভালো।ঠিকাছে তাহলে কোনোদিন যাবো?
 -কাল।
 -কালই?
 -হুম।
 -তাহলে চল যাওয়া যাক!
 -হুম বাবা উই এনজয়েড আওয়ার ফ্যামিলি ট্যুর!বাংলাদেশ ভিলেজ ট্যুর প্যাকেজ!
পরের দিন!
-হ্যালো,রাদিত তুমি তৈরি?
 -হুম আমি এখনি আসছি স্যার!
 -এই দিবো না একটা!কোনো স্যার নয়।ভাই!শুধু ভাইয়া।তুমি তো আমার ফ্যামিলি মেম্বার্সের মতোই।আর আপনি না তুমি শুধু তুমি।
 -হুম ভাইয়া তুমি না অসাধারন!তোমার মতো এতো মিশুক লাইফে কাউকেই দেখি নি।
 -হয়েছে নিজের ভাই বলে প্রশংসা করতে হবে না।এভাবেই সবাই মিলে-মিশে থাকলেই হলো!তোমাদের সবাইকে নিয়েই তো আমার ভালোবাসা।যাই হোক তুমি তারাতারি চলে আসো।
 -হুম আসছি।
সবাই মিলে রওনা দিলাম গ্রাম বাংলার অন্যতম সৌন্দর্য্যের প্লেস রাঙ্গামাটি।
 হাইএইস কারটা নিয়ে সবাই একই গাড়ীতে যাচ্ছি।সবাই মিলে অনেক কথাবার্তায় সময় কাটাচ্ছি যাত্রাপথে!
 অনেক জেলার উপর দিয়ে শেষ অব্দি প্রবেশ করলাম রাঙ্গামাটির দেশে!মনে হচ্ছে ছোট-বড় সকল পাহাড়গুলো দাঁড়িয়ে আমাদের স্বাগতম জানাচ্ছে!মনের মধ্যে গান বাজছে গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গামাটির পথ আমার মন ভুলায় রে…
-বাবা দেখো কতো কতো পাহাল (পাহাড়)!
 -হুম বাবা এগুলা বাংলার সৌন্দর্য্য বর্ধিত করেছে!
 -বাবা এখানকার ছোত ছোত (ছোট ছোট) গাছ গুলা আমার খুব ভালো লাগে!
 -হুম বাবা আমাদের সবারই ভালো লাগে…
 -বাবা আমরা লাঙ্গামাটিল (রাঙ্গামাটির) গানটা গাই?সবাই মিলে?
 -হুম বাবা মজা হবে!মজা হবে!
 -আচ্ছা হাসিব দাদুভাইয়েরা যখন বলছে তখন…..
 -আচ্ছা ঠিকাছে গাইছি!
 সবাই মিলে একসাথে গান ধরলাম গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গামাটির পথ আমার মন…
দু’দিন পর!
 -আমি এখানে কেনো?
 -আমরা আপনাদের রাঙ্গামাটির পথে মুমূর্ষ অবস্থায় পেয়েছি!আপনি মনে করে দেখেন তো কি হয়েছিলো?
 গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গামাটির পথ আমার মন… না…
 -মধুমিতা!আমার মধুমিতা কোথায়?
 -আমরা জানিনা।আপনাদের আমরা পাহাড়ি মোড়ে পড়ে থাকতে দেখে এখানে নিয়ে আসছিলাম।
 -হুম আমরা মোড় ঘুরতেই একটা ডিস্ট্রিক ট্রাকের সাথে গাড়ীর সাথে ধাক্কা লাগে তারপর আর কিছু মনে নেই!গাড়ীতে আমরা সাতজন ছিলাম।
 -হুম ট্রাকটা মনে হয় খুব গতিশীল ছিলো না তাই মহান আল্লাহ্র অশেষ রহমতে কয়েকজন রক্ষা পেলেন নতুবা বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতো!আপনি পুরো আটচল্লিশ ঘন্টা পরে আপনি জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন!
 -মানে কি?কয়েকজন মানে?সবাই কোথায়?আমার মধুমিতা কোথায়?
 -আমরা তো কাউকে চিনি না!কিন্তু এই নিন ফটো এই ফটোর তিন জনকে আমরা বাঁচাতে পারি নি!
 -না!মধুমিতা…….মা….!ফিরে এসো তোমরা!আমি যাবো ওদের কোথায় রেখেছেন?
 -আপনার অবস্থা এখন অনেক বেশি সিরিয়াস!আপনার এবস্থা নিয়ে যাওয়া উচিৎ নয়।
 -চুপ!একদম চুপ করেন আপনি কি উচিৎ অনুচিত সেটা আমি জানি!আমার প্রানটাই তো সাথে নেই,ওদের মধ্যেই রয়ে গেছে!কি হবে উচিৎ শিক্ষা নিয়ে!আপনি আমাকে নিয়ে চলুন!
 -আচ্ছা নিচ্ছি নিচ্ছি চলেন।
 -মধুমিতা!মা!প্রিন্সেস তোরা বাবার কাছে আবদার করবি না?চোখ তুলে দেখ রাজকন্যারা তোদের পাপা কিটক্যাট আর আইসক্রিম নিয়ে এসেছে!কিরে চোখ খুল ডাবল প্রিন্সেস বাবার গল্প শুনবি না?দেরি করে ফিরেছি বলে আর বলবি না এই ছেলে এতো দেরি করেছিস কেনো?দেখ তোদের পাপা তোদের ডাকছে!এই মধুমিতা…
এবার দৌড়ে গেলাম মায়ের কাছে মা ও মা ফিরে এসো তোমার ছেলে আবদার করতেছে মা চোখ খুলো!তুমি না আমার সব আবদার পূরন করতে এখন কেনো চোখ মেলে দেখছো না!এই আবদারের পূর্নতা কে দিবে!
 -হয়েছে এবার উঠেন।
 -ওদের মুখ ঢাকছেন কেনো আপনারা দেখছেন না ওরা ঘুমাচ্ছে?এভাবে ঢাকলে ওদের নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধে হবে।মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিন।
-মি. হাসিব বুঝতে চেষ্টা করুন!ওরা আর আপনার আমার মাঝে নেই!এটা মেনে নিতে হবে!
 -না!নেই কেনো?আছে!ওরা আমার প্রাণ!ওরা আছে!ওরা না থাকলে আমি আছি কি করে?বিধাতা এতো নিষ্ঠুর কখনোই হতে পারে না!আমার তিনটে মা’কে একসাথে তার কাছে নিয়ে যেতে পারে না!আমার রাজকন্যারা পাপার কাছেই থাকবে!কিটক্যাট আর আইসক্রিম আবদার করবে!ডাক্তার সাহেব,আমার মিলি,বাবা আর রাদিত কোথায়?
 -আছে উনারা বেডে আছে!
 -মিলি শুনছো ওরা কি বলছে?আমাদের রাজকন্যারা নাকি আর ফিরবে না!বলো তুমি বলো ওরা সবাই মিথ্যা বলছে।তুমিই বলো আমার ডাবল প্রিন্সেসরা বাবাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে?তুমিই বলো ওরা কি করে থাকবে?পাপাকে ছাড়াতো ওরা ঘুমায়ই না!
 -উনি কথা বলবেন না!
 -কথা বলবেন না মানে?
 -মানে উনি ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে নিজের বাকশক্তি হারিয়েছেন!বাকশক্তি কখনো ফিরে পেতেও পারেন আবার নাও পারেন!
 -না!এই মিলি কথা বলো মিলি!এই মিলি দুষ্টু বলবে না আমাকে?আবারো লাজ মাখা কন্ঠে বলবে না যাহ দুষ্টু কোথাকার?মিলি….
 -রাদিত এই রাদিত তোর কি হয়েছে ভাই?দাঁড়াবি না?উই আর উইনার বলে বুকে আসবি না?কিরে ভাই এভাবে কাত হয়ে শুয়ে আছিস কেনো? তোর তো স্ট্রং থাকা চাই!তুই তো জেন্টস শোস্টপার!
 -সরি মি. হাসিব উনার একটি ডানপায়ের একটি হাড় ভেঙ্গে গিয়েছে!
 -এবার আমি স্তম্ভিত।কোনো কথাই বের হচ্ছে না!তাহলে যাকে নিজের ফ্যামিলি মেম্বার্স হিসেবে নিজের ভাই হিসেবে বুকে জড়িয়ে নিয়েছি তবে কি সে আর র্যাম্পে হাঁটবে না!সে কি আর হতে পারবে না জেন্টস সুপার মডেল!
 -তুমি কে বাবা!তোমার কিছু হয়েছে?তুমি এমন করছো কেনো?জানো আমারও একটা ছেলে ছিলো তোমার মতো কিন্তু ও অনেক হাসি-খুশি ছিলো!
-বাবা আমি তোমার ছেলে হাসিব!তুমি আমাকে চিনতে পারছো না?
 -কি বলে!হিহিহিহি!যেই আমি বললাম আমার ছেলে তোমার মতো ওমনিই তুমি আমার ছেলে হয়ে গেলে!এমন পাগল আমি আর কখনো দেখিনি!
-এই ডাক্তার আমার বাবার কি হয়েছে?বাবা আমাকে চিনতে পারছে না কেনো?
 -আসলে মি. হাসিব উনি মেন্টালি শকস পেয়ে স্মৃতি হারিয়েছেন!
 -বাবা!আমি তোমার ছেলে হাসিব।দেখো বাবা আমাকে দেখো!তুমি কি আর হাসিব্বা বলে কান টেনে ধরে বলবে না যে আমার বৌ মায়ের যেনো কোনো অযত্ন না হয়!যে মানুষটা শহুরে হট্টগোলে থাকতো না মাথা যন্ত্রনা করবে বলে আজ সেই মানুষটাই মেন্টালি শকস!
 হে আল্লাহ তুমি এমনটা দেখানোর আগে আমাকে তোমার নিকট তুলে নিলে না কেনো আল্লাহ!কেনো!
 আজ ইচ্ছে করছে চিৎকার করে আজাশ-পাতাল এক করে দিতে!হাসিবের কান্নায় যেনো কাঁদছে সকল জীব জগৎ!
 -দেখুন মি. হাসিব!এটাই নিয়তির পরিনতি!মেনে নিতে হয় সবাইকে!এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না!
 -ভেঙ্গে আমি কি পড়বো!আমার উপর ওই আকাশটাই যে ভেঙ্গে পড়েছে!
প্রায় তিনমাস পর!
 এখন রাদিত মোটামুটি হাটতে পারে তবে ওর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটায় যে সেই চঞ্চলতা খুঁজে পাচ্ছি না!তবে কি ও আর র্যাম্পে সুপার মডেলের জন্য নিজের ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাবে না?নিজেকে জেন্টস শোস্টপার হিসেবে তুলে ধরতে পারবে না!
 বাবাও মোটামুটি এখন সবাইকে চিনতে পারে তবে হঠাৎ করে জোড়া মুক্তা বলে চিৎকার করে উঠে আর কিছু সময় নিজে একা একাই আবোল-তাবোল বলে আবার কিছুটা সুস্থ হয়।
আজ মিলি কথা বলেছে!হঠাৎ মধুমিতা বলে আর্তনাদ করে আবার বাকরুদ্ধ হয়ে যায়!
 আজ আমার ডাবল প্রিন্সেসের কথা খুব মনে পড়ছে!আমি কখনোই ভুলতে পারবো না ওদের কথা!
 আজো গভীর রাতে হঠাৎ মনে হয় কে যেনো বলছে বাবা আমার জন্য কিতক্যাত (কিটক্যাট) চাই!কেউ যেনো বলছে বাবা আমার আকক্লিম (আইসক্রিম) চাই!বাবা গলায় আতকে (গেলে) কিন্তু পানি দিতে দেরি করবে না!বাবা ওই দুটো লাজকন্যা(রাজকন্যা) কি আমলা (আমরা)!
 একটা দূর্ঘটনা আমার সব কেড়ে নিয়েছে!নিঃস্ব,একা করে দিয়েছে এই আমায়!নির্জন হয়ে গেছে চঞ্চল হাসিব!মাঝে মাঝে মনে হয় বুকের ভিতর কে যেনো হাতুড়ি পিটাচ্ছে!জীবনটা যেনো সেখানেই থেমে গিয়েছে আমার!
মনে হচ্ছে আজ এই হাসিবের পুরো পৃথিবী জুড়ে স্যাড ভার্সনে একটাই গান বাজছে!
মধু আর মিতা ছিলো দুটি রাজকন্যার নাম,
 তোদের জন্য বাবার স্নেহ থাকবেই তো অবিরাম!
ভালো থাকিস ডাবল প্রিন্সেস!ভালো থেকো মা!মধুমিতা তোরা অপেক্ষা করো পাপা!দেখবি তোদের বাবাও একদিন পৃথিবীতে কাউকে না জানিয়ে সবার মায়া ত্যাগ করে একদিন টুক করে তোদের কাছে চলে যাবে!আমার সকল মায়া যে তোদের মাঝেই মধুমিতা নামের একটি ফ্রেমে বন্দি হয়ে আছে!ভালো থেকো মা,ভালো থাকিস পাপাস প্রিন্সেস,ভালো থাকিস জোড়া রাজকন্যা,ভালো থাকিস মধুমিতা!তোদের আব্বু একদিন ঠিকই তোদের কাছেই চলে যাবে!আমি আসছি ডাবল প্রিন্সেস পাপা আসছি!বাবার পৃথিবীটা তো তোদেরকে ঘিরেই!আমি আসছি!অঝোর ধারায় আজ অশ্রু গড়াচ্ছে!হয়তো ওই আকাশটাতেও কখনো এতো মেঘ করেনি যতটা মেঘ আজ সেই চঞ্চল হাসিবের মন কালো করে আছে!আজ অন্ধকারে ঘিরে আছে চঞ্চল একটি প্রাণ!ভালো থাকিস পাপাস প্রিন্সেসরা!ভালো থাকিস!
  










