শুরু হল নতুন জীবন

শুরু হল নতুন জীবন

ঘড়িতে প্রায় ৯.৩০ । রোজকার মতো আজও সম্পা তৈরী হচ্ছে অফিস যাবার জন্য। বিকেল পাঁচটায় অফিস শেষ হওয়ার পথে অন্য দিনের মতো অরিত্রের সাথে দেখা করবে। অরিত্র আর তার সম্পর্ক প্রায় আট বছরের। দু-জনে দুজনকে খুব ভালোবাসে। অরিত্র আর সম্পা একই অফিসে কাজ করে। অরিত্র মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। অফিস ছুটির পর দুজনে বেরিয়ে পড়তো ঘুরতে । কখনো কফি হাউসে জমে উঠত তাদের আড্ডা। আবার কখনো একটি পাতায় ফুচকা, চাট ভাগ করে খাবার আনন্দে মেতে উঠত। দুজনের এইভাবে ঝগড়া, ভালবাসা আর খুনসুটির আড়ালে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি।

কিন্তু তাদের মাঝে হঠাৎ নেমে এলো ঝড়।এখন কদিন ধরে সম্পার মনে হচ্ছিল অরিত্র যেন আর আগের মত নেই। তার অরিত্র যেন কোথায় হারিয়ে গেছে ‌। তাই সম্পারও আর অফিসে র কাজে মন বসে না‌। সবসময় মনমরা হয়ে থাকে। অরিত্র আর এখন কাজের ফাঁকে দেখা করতে চায় না তার সাথে। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে তাদের আনন্দ । অনলাইন হলে আগের মতো কথা হয় না তাদের । সম্পা কথা বলতে চাইলেও অরিত্র উত্তর দেয় না। একদিন অরিত্র ফোন করে বলল , সে দেখা করতে চায় সম্পার সাথে কফি হাউসে। সম্পা আজ খুব খুশি। তাই অরিত্রর সবচেয়ে পছন্দের নীল শাড়ি পরে দেখা করতে যায়। দুজনের কথা চলাকালীন অরিত্রর ফোনে ফোন আসে । অরিত্র ফোন রিসিভ করে না। সম্পা পরে অরিত্রের এক বন্ধুর কাছে জানতে পারে সবটা। ফোন টি ছিল ডাক্তার বাবুর।

অরিত্রর ব্রেন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তাই অরিত্র সম্পার থেকে দূরে সরে থাকতে চাইছে। অরিত্রর এই অসুস্থতার কথা শুনে সম্পা ভেঙে পড়ে। খাওয়া- দাওয়া বন্ধ করে দেয়। সম্পা যে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসত অরিত্রকে। সে ভাবতে পারে নি তার জীবনে এইরকম বিপদ নেমে আসবে। দিনের পর দিন অরিত্র রোগটি র দিকে ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। একদিন সকালে সম্পার ফোনে আসে অরিত্রর মৃত্যু সংবাদ । সম্পা কান্নায় ভেঙে পড়ে। সে কল্পনা করতে পারে না তার প্রিয় মানুষ টা আর পৃথিবীতে নেই।

সেই মানুষটির হাতে-হাত রেখে কত স্বপ্ন দেখা । ভবিষ্যতে একে ওপরের পাশে থাকবে তার প্রতিশ্রুতি। কত স্বপ্ন, ভালোবাসা, আবেগে ঘিরে থাকা মানুষ টা আর নেই। এখন সে একা। এক নিমেষে সব স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে যায়।
সাদা চাদরে ঢাকা অরিত্রর দেহ, রজনীগন্ধার মালা, সুগন্ধি ধূপের গন্ধ চারিপাশে। যেই মানুষটার এতদিন হাসিমুখ দেখেছে । তাকে চিরজীবনের জন্য বিদায় দিতে হবে ভেবে সম্পার চোখ বেয়ে জল পড়ছিল। তার সমস্ত পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছিল।

এইভাবে দেখতে দেখতে চারবছর কেটে যায়। সম্পা এখনও ভুলতে পারেনি অরিত্রকে। কারন তার জীবনে সবটাই ছিল অরিত্র

বাড়ির লোক অনেক বোঝানোর পরও সে রাজি হয় না বিয়ের জন্য। সম্পার বাড়ি থেকে জোর করে শান্তনুর সাথে বিয়ে দেয়। তার বিয়ে হয়েছে তিন মাস। এখনও সম্পা অরিত্রকে ভুলতে পারেনি। বাড়ির অমতে বিয়ে হয়েছে বলে শান্তনু কে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি সম্পা। বৌ- হিসাবে সম্পা কে স্পর্শ করতে পারা তো দূরে থাক , দুজন ঠিক করে কথা অবধি বলেনি। সে সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকে। কী যেন একটা ভাবে মনমরা হয়ে থাকে। শান্তনু কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না। রাতে ঘুমানোর সময় দুজন খাটের দুই মেরুতে ঘুমায়। শান্তনু জীবনে প্রেম করে নি। বৌ-এর সাথেও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারল না। বিয়ের রাতে সম্পা তাকে বলে, ‘আপনি ঘরে থাকলে আমি ছাদে গিয়ে ঘুমাবো।’

তাই শান্তনু ছাদে গিয়ে ঘুমায়। শান্তনু প্রথম প্রথম ভাবত লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু বিয়ের এতদিন পরেও তার লজ্জা কাটেনি। বিয়ের দিন প্রথম দেখায় শান্তনু তাকে ভালোবেসে ফেলেছে । তিন মাসে সে অনেক কিছু করে বৌ- এর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। কিন্তু সম্পা মনমরা হয়েই থাকে। অনেক খোঁজ নেওয়ার পর সে জানতে পেরেছে অরিত্রের কথা। শান্তনু ভেবেছে, তাই হয়ত সম্পা অরিত্রর স্থানে তাকে বসাতে পারছে না। শান্তনু সব জানে তা আর বলে নি সম্পাকে।

আজ কেন জানি না সম্পার ভালো লাগতে লেগেছে শান্তনু কে। সে মনে মনে ভাবে কেমন বোকা ছেলে । এত অপমান করে, কথা বলে না তারপর ও ছেলের কোনো রাগ নেই। সম্পা তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে। শান্তনু তার অফিস এর কাজ শেষ করছিল এমন সময়‌ সম্পা ফোন করে তাকে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফোন এর স্ক্রীন এর দিকে। ফোন এর ওপার থেকে সম্পা বলল,” বাড়ি আসো দরকার আছে”।

সে ছুটি নিয়ে চলে আসে। দরজা খুলে দিতে সম্পা এসে হাজির। শান্তনু হা করে তাকিয়ে আছে সম্পার দিকে। আজ তার অন্য রূপ । লাল শাড়ি পরা আর মাথার চুল ছাড়া । শান্তনু ভাবছে , একি বৌ না কোনো অপ্সরী এত সুন্দর লাগছে।

শান্তনু মনে যা ভালোবাসা ছিল সম্পার জন্য তার আজ বলে ফেলল। সম্পার চোখ বেয়ে জল পড়ছিল ।এই জলের উৎপত্তি কীসে তা জানা নেই। সম্পা তাকে বলল, ‘তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি ক্ষমা কর আমাকে’।সে বলল-‘ পাগলি বউ আমার ।’ সম্পা বলল- ” তোমাকে অপমান করে ঘৃণা করে নিজে কখন তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।” শান্তনু বলল, “পাগলি বউ আমার আর কাঁদে না”। শান্তনু সম্পার হাত শক্ত করে ধরে বলল, আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকব। কোথা থেকে যেন বেলিফুলের গন্ধ আসছিল, সাথে মৃদু বাতাস, উজ্জ্বল জোৎস্না। প্রকৃতি যেন উদযাপন করছে তাদের প্রেম- পবিত্রতা । হ্যাঁ, তারা সুখের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। আর এই ভাবেই চলে যাক তাদের সামনের দিনগুলো।।
সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত