লালমাটির ছেলেটা

লালমাটির ছেলেটা

লাল মাটির পলাশ ফুলের গাঁ বাঁকাদহ । সেই গাঁয়ের শাল মহুয়ার জঙ্গলের ভেতর টিনের চালের আর সিমেন্টের দেওয়ালের প্রাইমারি স্কুল । লাল আগুনরাঙা ফুল ধরা পলাশ গাছটার গা ঘেঁষে থাকা দক্ষিণের ঘরটায় চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস । প্রতিদিনের মতো আজও ইতিহাস ক্লাসে স্যারের চোখ খুব ব্যস্তভাবে কাকে যেনো খুঁজছে। অন্যদিকে

পিছনের সারিতে বসা ময়লা জামা পরা , তেলবিহীন রুক্ষ চুলের একটি ছেলে প্রানপনে নিজেকে স্যারের নজর থেকে আড়াল করতে চাইছে।

” আরে এতো ঘাড় নোয়াসনে ! এবার তো ঘাড়টায় বেঁকে যাবে ! আমার নজর এড়িয়ে বাঁচা কি এতো সোজা ! ওঠ , দাঁড়া বলছি ! বল ভারত কত সালে স্বাধীন হয়েছিল ? ” – স্যার মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন। ”

এত প্রচেষ্টার পরও যখন ছেলেটি মাস্টার মশায়ের চিলের নজর থেকে আত্মরক্ষা করতে পারলো না , তখন মাটির দিকে চোখ নামিয়ে উঠে দাঁড়ালো ছেলেটি।

” নীচের দিকে চোখ কেনো ? বল উত্তরটা ! ওমন বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ! ”
স্যার এবার রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে উঠলো।
ছেলেটির মুখ ভয়ে সাদা হয়ে গেছে। খুব আস্তে আস্তে বললো ,
” মুই উত্তরটা দিতে পারবোক নাই । ”

” তা পারবি কেনো ! সারাদিন মাঠে মোষ নিয়ে ঘুরলে উত্তর পারার তো কথা নয় !আমার সামনে এসে দাঁড়া ! ”
স্যারের গলায় এবার আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ !

ছেলেটি ধীরে ধীরে স্যারের সামনে এসে দাঁড়ায় । স্যার কঠিন গলায় আদেশ করেন ,
” হাত পাত ! ”

স্যারের হাতে থাকা সরু লিকলিকে বাঁশের কঞ্চিটা সপাৎ সপাৎ করে গর্জে ওঠে কচি হাতের ওপর। কঞ্চির আওয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে কেঁপে ওঠে দুটো কচি ঠোঁট। বড়ো বড়ো জলের ফোঁটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে স্কুল ঘরের সিমেন্টের মেঝেতে।

” বেরিয়ে যা আমার ক্লাস থেকে ! ” – চোখ লাল করে কঠোর গলায় আদেশ করেন বাঁকাদহ প্রাইমারি স্কুলের ইতিহাসের মাস্টার মশায়।

ক্লাস থেকে বেরিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে স্কুলের ইটের পাঁচিলের একেবারে শেষে অযত্নে বেড়ে ওঠা বকুল গাছটার তলায় বসে গদাই সরেন। ইতিহাসের বই এর সাল-তারিখ-রাজাদের নাম ওর মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় , একবিন্দুও ওর ঘিলুতে স্থান পায়না। কিন্তু বাকি অন্য সব বিষয় বাংলা , ইংরেজি , অঙ্ক , বিজ্ঞান , ভূগোল ওর খুব ভালো লাগে। ওর তো স্কুলটায় ভালো লাগেনা এই ইতিহাস ক্লাসের জন্য ! স্যার তো ঠিকই বলেছে সারাদিন গরু-মোষ চরাতেই বেশি ভালো লাগে গদাই এর ! বনের ভেতর কতো নাম না জানা রঙ-বেরঙের ফুল ফোটে , ময়না-শালিক-ছাতার কত পাখি উড়ে! আর সবথেকে বেশি ভালো লাগে বনের মেঠো রাস্তার দুইপাশের সবুজের সমাহারকে।

গদাই কিন্তু অনেক ঔষুধি গাছের নাম জানে তুলসী , বাসক , কালমেঘ , নিম , শিউলি আরও কতো কি ! গদাইদের গাঁয়ে কিন্তু গদাই বাদে বড়ো একটা কেউ এসব চেনা গাছের অচেনা ঔষুধি গুণের কথা জানে না। গদাই এমন আরও অনেক গাছের নাম জানে যা দিয়ে আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করা যায়। এই আয়ুর্বেদিক কথাটা গদাই ওর দাদু সাধন সরেন এর কাছে শুনেছে। ওর দাদু বিভিন্ন গাছের শিকড় , পাতা , ফুল , ফল দিয়ে ওষুধ তৈরি করে গাঁয়ের লোকেদের অনেক রোগ সারিয়ে দিতে পারতো। গদাই এর মনে আছে ওদের পাড়ার ফুলমনি কাকীর মেয়ে শিউলির জ্বর আর কাশি সারিয়ে দিয়েছিল দাদু বাসক , তুলসী , মধু আর আদা দিয়ে ওষুধ তৈরি করে। গদাই দাদুর সাথে বনে যেতো গরুর পাল নিয়ে। আগের বছর শ্রাবণ মাসের ভরা বাদলার রাতে দাদু মারা গেলো। বড়ো কেঁদেছিল গদাই । ভীষণ ভালোবাসতো ওকে। দাদুর কথা মনে আসতেই আবার মনটা খারাপ হয়ে যায় গদাই এর।

স্কুল ছুটি হতে চারটে বেজে যায় । গদাই এর খুব খিদে পেয়ে যায় ততক্ষণে। প্রায় ছুটতে ছুটতে বাড়ি আসে গদাই। মাকে চেঁচিয়ে ডাকে , ” মা মুকে তাড়াতাড়ি খেতে দে রে ! ….”

মা রান্নাচালা থেকে বলে , “তাড়াতাড়ি ভাত খেয়েলিয়ে গরুগুলাকে বন থেকে আনগে যা ! ”
গদাই ততক্ষনে খেতে বসে গেছে। ভাতের দলা গিলে বলে , ” কেনে বাবা কুথায় গেছে বটে ? ”
গদাই এর মা কচুর শাক ভাজা আরও খানিকটা গদাই এর পাতে দিয়ে বলে ,
” তোর বাপ তো ছিপ লিয়ে মাছ ধরতে গেছে কাজরিডাঙার ঝিলে। ”

গদাই বনের পথে পা বাড়ায় ধীরে-সুস্থে। গ্রীষ্ম কালের বেলা , এখনো বেশ চড়া রোদ , সন্ধ্যা নামতে বেশ দেরি। গদাই বনের ভেতর গরু-মোষ এর পালের কাছে যায়। এদিক – সেদিক বাঁধা গরুর পালের দড়ি খুলতে গিয়ে দেখে মুগলী গাই এর দুমাসের বাছুরটা নেই। ধারে-পাশে দেখে কোথাও নেই ! গদাই ভাবে বাছুর নিশ্চয় ভেতরের জঙ্গলে গিয়ে ফিরে আসার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। গদাই গরু-মোষ বাড়িতে দিয়ে এসে মাকে বলে বাছুর খুঁজতে বনের ভেতর ঢুকে। বনের এদিকটায় মানুষের যাতায়াত নেই। হাতি তো আছেই , গেলো বার চিতা এসেছে বনে এই খবর এদিকার গাঁয়ে খুব ছড়িয়ে ছিলো। গদাই বনের ভেতর এদিক-সেদিক চারিদিকে খুঁজলো, কোথাও নেই বাছুর। এদিকে আলো কমে আসছে , পশ্চিমের আকাশটায় লাল রঙ ধরছে। কিছুদূর যাওয়ার পর গদাই দেখতে পায় মাটির সুড়ঙ্গ বেশ বড়ো , একটা বড়ো মানুষ ঢুকে যাবে তাতে! গদাই ভাবে ওটাতেই বাছুরটা কোনো ভাবে ঢুকে যায়নি তো? হয়তো ঢুকে গিয়ে আর বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না ! কিন্তু ওতে যদি সাপ থাকে ! গদাই প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা টর্চ বার করে । টর্চটা কিনেছিল কাল বিশুদার দোকানে। সেটা এখোনো ও সাথে করেই রেখেছে , ঘরে রাখলে যদি ভাই ভেঙে দেয় সেই ভয়ে! খুব সাবধানে টর্চটা জ্বালিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকলো গদাই। অনেক বড়ো সুড়ঙ্গটা। গদাই অনেকটা হাঁটার পর দেখতে পেলো ওদের বাছুরটা। কিন্তু একি বাছুরটা দড়ি দিয়ে বাঁধলো কে এইখানে ! কি ভেবে গদাই বাছুরটা খুললো না , ভাবলো আর একটু এগিয়ে দেখা যাক এখানে মানুষ আছে কিনা! কিছুদূর এগিয়েই গদাই দেখে একটা মানুষ বাঁধা রয়েছে দড়িতে। লোকটার মাথা থেকে , হাত থেকে রক্ত বেরিয়ে জামাটা লাল হয়ে গেছে ! গদাই ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। তারপরই মনে পড়ে মায়ের কথাটা ,

” বিপদে পড়লে মানুষের পাশে দাঁড়াইতে হয় রে ব্যাটা ! ”

গদাই এবার এগিয়ে আসে। লোকটাকে আস্তে করে ধাক্কা দেয়। লোকটা ব্যাথায় কঁকিয়ে বলে , “আমাকে বাঁচাও ,ওরা মেরে ফেলবে আমায়!”

গদাই শক্ত-সামর্থ ছেলে। লোকটাকে সাবধানে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসে ওখান থেকে। বাছুরটাও খুলে দেয় গদাই। গদাই সুড়ঙ্গ থেকে একটা ঝোঁপের ধারে এসে লোকটাকে নামায়। হঠাৎ শুকনো পাতায় খসখস শব্দ হয়। দুটো লোক সুড়ঙ্গের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

” কি রে এত রাতে ওই সুড়ঙ্গে আবার ঢুকবি ? ”
অন্য জন বলে , ” মালিক যে বললো ওই লোকটাকে সারারাত পাহারা দিতে হবেক !”
প্রথম জনের গলায় এবার বিরক্তির ভাব প্রকাশ পায় , ” থাম কেনে ! মালিক অনেক কিছু বলবে ……ও লোকটাতো এমনিতেই জখম আছে তার ওপর বাঁধা আছে …..উ পালাতে লারবেক ! আর ইদিকটায় লোক আসেনা চিতার ডরে ….তার থিকে এখন পালাই …..ভোরে এসে তখন যা করার করবো!”

লোকদুটো বনের উল্টো দিকে হেঁটে গেলো।তার কিছুক্ষন পর জঙ্গলের উল্টোদিকের রাস্তা থেকে মটর সাইকেলের শব্দ ভেসে এলো। গদাই চারিদিকে তাকিয়ে লোকটাকে কোলে করে সাবধানে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ভেতরের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো।গদাই বুজতে পারছে সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত অনেক হয়ে গেছে। এদিকটায় জঙ্গলটা গভীর নয়, ফাঁকা ফাঁকা শাল – সেগুনের গাছ । কিন্ত লোকটার তো খুব রক্ত পড়ছে , রক্ত বন্ধ করতে না পারলে তো লোকটা এখানেই মারা যাবে। গদাই এর মনে পড়ে দাদু বলতো বিসল্লকরনি আর গাঁদার পাতার রস লাগালে রক্ত পড়া থেমে যায়। গদাই লোকটাকে বলে , ” তোর তো রক্ত বন্ধ হইছে না রে ! …. তুই একটু ইখানটায় শুয়ে থাকা আমি রক্ত বন্ধ হওয়ার বাবস্থাটা করি !”

গদাই লোকটাকে মাটিতে নামিয়ে আশেপাশের ঝোঁপ থেকে বিসল্লকরনি আর বন গাঁদার পাতা হাতে করে মাড়িয়ে রস লাগিয়ে দিলো লোকটার কাটা জায়গায় তারপর ওই হাত দিয়ে পিষা পাতা গুলো ক্ষত জায়গায় লাগিয়ে নিজের জামা ছিঁড়ে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো। লোকটা ততক্ষনে জল জল করছে। এখানে আসে পাশে জল নেই , গদাই লোকটাকে একটু ধর্য্য ধরতে বলে। এবার গদাই লোকটাকে কোলে নিয়ে আরও তাড়াতাড়ি হাঁটে ওর বাড়ির দিকে। এত বড়ো একটা মানুষকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা সহজ ব্যাপার নয়। গদাই এর হাঁপ ধরে যাচ্ছে , হাতে অসহ্য ব্যাথা হচ্ছে আর পা চলে না গদাই এর। গদাই এর মনে হচ্ছে যেন এখুনি লোকটা ওর হাতের বাঁধন খুলে পড়ে যাবে। গদাই দাঁতে দাঁত চিপে পা বাড়ায় দ্রুত ! মুখে বলে , ” হে মারাং গুরু মুকে শক্তি দে ! …. মুকে পারতেই হবেক …! ”
বাড়ির সামনে এসে দেখে বাবা – মা – ভাইবোন সবাই এগোচ্ছে বনের দিকে। বাবা ছুটে যায় গদাই এর কাছে ,
” বাছুর তো কখন ঢুকে গেছে ….!
তোর আসতে এত দেরি হলো কেনে ? …..”

গদাই লোকটাকে কোল থেকে নামিয়ে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। এতটা রাস্তা একটা প্রাপ্ত বয়স্ক লোককে কোলে তুলে নিয়ে এসে গদাই হাঁফাচ্ছে। একটু দম নিয়ে বললো ,
” ই লোকটা ভেতর জঙ্গলের সুড়ঙ্গে বাঁধা ছিলো ! ….. আমি নিয়ে এলাম ….. ”
আর বলতে পারেনা গদাই। গদাই এর বাবা লোকটাকে দেখে বললো ,

” শ্বাস পড়ছে রে লোকটার ! ….. বেঁচে আছে ! ….. আগে উয়াকে হাসপাতালে লিয়ে যেতে হবেক ! …. তোর কথাটা পরে শুনলেও হবেক কেনে ! ”

গদায়ের মা জল এনে গদাই এর হাতে দিলো। গদাই এক নিঃশ্বাসে গ্লাসের জলটা শেষ করে মাকে বললো , ” মা ই লোকটাকেও জল এনে দে। লোকটা অনেকক্ষণ থেকে জল জল করছিলো। ”

গদায়ের বাবা ভ্যান রিক্সা চালায়। ঘরের বাইরে থেকে ভ্যান রিক্সাটা বের করে লোকটাকে সাবধানে তুলে দেয় রিক্সায়। গদাই রিক্সায় উঠে বসে হাত দিয়ে আগলে রাখে লোকটাকে। হাসপাতালে যখন পৌঁছলো তখন রাত অনেকটা গড়িয়েছে। হাসপাতালের লোকেরা ধরাধরি করে স্ট্রেচারে করে নিয়ে গেলো লোকটাকে। এতোক্ষন রাতের অন্ধকারে লোকটার মুখটা ভালো করে দেখতে পাইনি গদাই বা গদাই এর বাবা। ডাক্তার বাবু দেখে এসে বললেন ,
” এনাকে কোথায় পেলে তোমরা ? ইনি তো এখানকার থানার বড়ো বাবু ! ….. যাইহোক আগে থানায় একটা খবর পাঠাতে হবে ! ”

কিছুক্ষন এর মধ্যেই থানা থেকে পুলিশ এলো। জানা গেলো জঙ্গলে অনেক দিন থেকেই চোরাকারবারিরা লুকিয়ে কাঠ কেটে নিচ্ছে রাতের অন্ধকারে । বড়ো বাবু নিজে গিয়েছিলেন চোরা কারবারিদের ধরবার জন্য। ডাক্তার এসে বললো ,

” বড়ো বাবু এখন ভালো আছে। তবে মাথাতে সেলাই করতে হয়েছে। আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য ওনাকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। তবে গাঁদা আর কি যেনো একটা পাতা দিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করা আছে দেখলাম। …. ওটা সময় মতো করা হয়েছে বলেই সুবিধা হয়েছে অনেক ! ওই ব্যান্ডেজটা কে করেছিল ? ”
গদাই বলে , ” মুই করেছিলাম বটে ! ”
ডাক্তার বাবু ওর দিকে তাকিয়ে বলেভ,

” সাবাশ ! ”
পরের দিন বেশ বেলা করে বড়োবাবুর জ্ঞান আসে। জ্ঞান আসার কিছুক্ষণ পরই ডাক আসে গদাই আর গদাই এর বাবার। গদাই এর বাবার দিকে চেয়ে বড়োবাবু বলেন ,
” তোমার ঋণ কোনোদিন ভুলবো না ! ”
গদাইকে কাছে ডাকেন বড়োবাবু ,

” আজ থেকে তুই আমার ব্যাটা ! আমার নিজের ছেলে এতটা করতো না যেটা তুই আমার জন্য করেছিস । শরীরে তোর ক্ষমতা আছে বিশাল , তেজ আছে তোর মনে । তুই পুলিশ হবি ? ”

গদাই করুন মুখে বলে , ” পুলিশ হতে গেলে কি ইতিহাসের পড়া মুখস্ত করতে হয় ? যদি হয় তাহলে আমি পুলিশ হতে লারবো ! ”

বড়োবাবু গম্ভীর গলায় বলেন , ” পুলিশ হতে গেলে নয় ভালো মানুষ হতে গেলেও ইতিহাস জানতে হয়।দেশকে ভালবাসতে হলে , দেশের জন্য কাজ করতে হলে নিজের দেশের ইতিহাস জানাটা খুব জরুরি। তোর কোন বিষয় সবথেকে ভালো লাগে ? ”

গদাই বড়োবাবুর গলার স্বরে ভয় পেয়ে যায় । খুব আস্তে করে বলে , ” বিজ্ঞান ! ”
বড়োবাবু এবার কোমল গলায় বললেন ,

” ইতিহাস তো অনেক সোজা বিজ্ঞানের থেকে। ইতিহাস তো গল্প বলে , তুই যে দেশে আছিস তার অতীতের গল্প , আমাদের দেশের রাজাদের গল্প , অন্য দেশের গল্প আরও কতো গল্প বলে ! শুধু মন দিয়ে শুনতে হয় ! আচ্ছা তুই নেতাজী , ক্ষুদিরাম এদের নাম শুনিসনি ? জানিস এদের গল্প ? ”
গদাই বলে , ” জানি তো এরা তো বিপ্লবী বটে ! ”

বড়োবাবু বলেন , ” এদেরও একটা করে গল্প আছে গদাই যেটা শুনলে তুই ইতিহাসের মায়ায় পড়ে যাবি ! শোন আমায় সুস্থ হতে দে , তারপর আমি তোকে শোনাবো ইতিহাসের গল্প ! ”

গদাই এখন সপ্তাহে একটা দিন বড়োবাবুর কাছে ইতিহাসের গল্প শোনে ! এখন আর ইতিহাস বিষয়টা ওর বিরক্ত লাগে না ! এখন গদাই জানে ক্ষুদিরাম – নেতাজীর আপোষহীন সংগ্রামের কথা দেশকে ভালোবেসে ! ভারতের অতীত কালের জীবন যাত্রা কেমন ছিল সেটাও জেনেছে গদাই । এখন আর ইতিহাসের সাল – তারিখ ও ভুলে যায় না । বাবর ,আকবর , শাহজাহান , কনিস্ক , চন্দ্রগুপ্ত কতো রাজার গল্প শুনেছে গদাই। এবার তো স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় ইতিহাসে সব থেকে বেশি নাম্বার পেয়েছে গদাই ! স্কুলের ইতিহাসের স্যার তো খুব খুশি। আর সবথেকে খুশি হয়েছেন বড়োবাবু ! আরও একটা ছেলেকে নিজের দেশেকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন তিনি ! ঠিক যেমন করে অনেক বছর আগে ওনার বাবা ওনার সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়টাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন।

——- সমাপ্ত ——-

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত