গতস্য শোচনা নাস্তি

গতস্য শোচনা নাস্তি

এখন প্রতিদিন যাকে দেখলেই সমীরণবাবুর সব থেকে বেশি গা জ্বালা করে তিনি হলেন তাঁর স্ত্রী, মৃন্ময়ী | ওহ, কি কুক্ষনেই যে ওকে বিয়ে করেছিলেন ! অথচ, সেই ফুলশয্যের দিন ওই মেয়েরই মেকআপ করা মুখখানি দেখে বলেছিলেন, “তোমার মতো সুন্দরী কখনো দেখিনি !”

মৃন্ময়ী বিয়ের পর বছখানেক একটু কম কথা বলতো, গলার স্বর নামিয়ে কথা বলতো | তারপর থেকেই সেই যে স্বমূর্তি ধরেছে তা এই বারো বছর বাদেও একটু কমার নয় ! সকাল থেকে তার চিৎকারে বাড়িতে কাকচিল বসতে পায় না ! মাঝে মাঝে মনে হয় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান, কিন্তু ছোট্ট মেয়েটার মুখ চেয়ে পারেন না!

– কই গো শুনছো বাজার থেকে শিগগির আলু এনে দাও | নাহলে অফিসের ভাত পাবে না বলে দিচ্ছি !

কি হুকুমের ছিরি ! সমীরণবাবু মুখখানা বেজার করে ব্যাগ হাতে বাজারে চললেন ! সকাল থেকে না এক কাপ চা, না কিচ্ছু ! শুধু হুকুম আর হুকুম ! যেন লাটসাহেব ! দেবে তো স্রেফ আলুসেদ্ধ ভাত, বড় জোর একটু ডাল আর একটা ডিমসেদ্ধ – তাও কপাল খুব ভালো হলে একটা ডিম্ ভাজা ! তাতেই এতো !

নিজের মাকে দেখেছেন সকালে উঠে বাবাকে গলায় কাপড় দিয়ে প্রণাম করে পা ধুইয়ে দিয়ে সেই জল খেত ! বাড়িতে আচার, বড়ি, কাসুন্দি, পায়েস হলে প্রথমেই বাবাকে দিতো ! আহা, কাকে বলে পতিসেবা ! শিখতে হয়, শিখতে হয় !

মনে মনে গজগজ করতে করতে বাজার গেলেন| একজন নধর লাউ বেচছিল| দেখে আর লোভ সামলাতে পারলেন না! কিনে ফেললেন একটা| বাড়ি আসতেই মৃন্ময়ীর সেই সপ্তমে কণ্ঠ!

– লাউ আনলে তো চিঙড়িমাছ আনোনি কেন ? নাহলে মাছের তেলও তো আন্তে পারতে ! লাউটা কি দিয়ে রান্না হবে শুনি?

উঃ, একটু যদি ভাল করে কথা কইতে জানতো ! সমীরণবাবু একটা প্লাস্টিকের বোতল থেকে ঢক ঢক করে জল খেয়ে ঢুকে পড়লেন বাথরুমে। এখানেই যা একটু শান্তি! কলের জলের ফোর্সে গিন্নীর কর্কশ আওয়াজ এখানে পৌঁছতে পারবে না!

– কি সমীরণদা, এত ঘামছেন কেন?
– আর ভাই, মেট্রোতে যা ভীড়! হাড়গোড় গুলো বোধহয় খুলে গেল!
– যা বলেছেন! এই অফিস টাইমে মেট্রো রেলে চড়াই দায়! আবার একটু দেরী হলেই লাল কালি! তিনদিন হলেই মাইনে কাটা!
– ঠিক বলেছ। বস তো আর আমাদের এই কষ্ট বুঝবে না! বাড়ির লোকই বুঝতে চায় না!

সমীরণবাবু ফোঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন!

অভয় মনে মনে হাসে। সে জানে সমীরণদা গিন্নীকে বেশ ভয় পায়! মাঝেসাঝে ফোনে কথা বলতে দেখেছে। সমীরণদার বউ যখন ফোনে কথা বলে, সমীরণদা চুপচাপ শুনে যান। এই নিয়ে অফিসে হাসাহাসি কিছু কম হয় না। রোজ দুপুরে একবার ফোন আসে। আর তখনই অমলেন্দুদা আড় চোখে তাকিয়ে বলে, “ওই এল!”

– কি গো খেয়েছো ?

– হুঁ |

– খাবারটা ঠিক ছিল ?

– হুঁ |

– আজ ফেরার সময়ে বাঁধাকপি, টমেটো, আলু, কাঁচা লংকা আর মুদির দোকান থেকে চা আর চিনি নিয়ে আসবে, বুঝেছো ?

– হুঁ |

এই রকমের গুটিকয় বাঁধাধরা কথা আর ওই “হুঁ” জাতীয় সম্মতিসূচক শব্দ দিয়ে ফোন শেষ হয় |

সমীরণবাবুর হয়েছে এক জ্বালা – সেই সকালে কখন বাড়ি থেকে বেড়িয়েছেন, আর এখন রাত সাড়ে আটটা বেজে গেলো তবু বাড়ি ঢুকতে পারলেন না ! গিন্নির হুকুম আজ বাজার থেকে বাঁধাকপি, টমেটো, আলু, কাঁচা লংকা আর মুদির দোকান থেকে চা আর চিনি নিয়ে তবে বাড়ি ফিরতে হবে | রাস্তার ধারেই বাজার বসে সেখান থেকে সবজি নিয়ে প্রায় মিনিট তিনেক হেঁটে মুদির দোকানে পৌঁছলেন | গিয়ে দেখলেন বেশ ভিড়, সবাই মাসকাবাড়ি জিনিস কিনছে | বেশ খানিক্ষন দাঁড়াতে হবে | এদিকে না নিয়ে চলে আসবেন – তারও উপায় নেই ! গিন্নি তাহলে তুলকালাম বাধাবে !

কাজেই অনেক্ষন অপেক্ষা করার পরে দোকানদার সমীরণবাবুর দিকে তাকিয়ে বললো, “কি নেবেন দাদা ?”

– একশো গ্রাম চা আর এক কেজি চিনি |

চটজলদি জিনিস দিয়ে দোকানদার বললো, “চুরাশি টাকা দিন |”

– এখন লিখে রাখো | কয়েকদিন বাদে সব একসাথে দিয়ে দেব |

বাড়ি ফিরতেই চার বছরের মেয়ে বলল,”জানো বাবা, আজ না ছোট মাসি এসেছিল। আমাদের একদিন নেমন্তন্ন করে গেছে!” সমীরণবাবুর কপাল কুঁচকে গেল। সুমী হচ্ছে তাঁর ছোট শ্যালিকা | সে সচরাচর আসে না | বড়োলোকের বৌ কি না, তাই ! হটাৎ তার আগমন হলো কেন ? আবার নেমতন্ন, সেটাই বা কিসের ?

খাবার টেবিলে মৃন্ময়ী নিজেই তুলল প্রসঙ্গটা।

– আজ সুমী এসেছিলো | ওর ননদের বিয়ের নেমন্তন্ন করে গেছে।

সমীরণ বাবু চুপ করে আছেন দেখে মৃন্ময়ী বললেন, “কি হ’ল, শুনতে পাচ্ছ না?”

সমীরণ বাবুর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “পাচ্ছি।”

– মাঘ মাসের ১৭ তারিখে বিয়ে | কি করবে ভাবছো ?

– যেতে তো হবেই |

– আমি যাওয়ার কথা বলছি না, কি দেবে বলে ভাবছো ?

– তুমিই বলো |

– নিজেদের লোক ! কমদামি কিছু দিলে তো হবে না | সোনার জিনিস দিতে হবে !

সমীরণবাবু একবার শুধু মুখ তুলে দেখলেন, তারপরে আবার মাথা নিচু করে খেতে শুরু করলেন |

রাত্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কত কি ভাবছিলেন | মনে পড়ছিলো, সেই দিনটার কথা ! তখন তিনি সদ্য চাকরি পাওয়া যুবক | কলেজের এক প্রাক্তন বন্ধুর অনুরোধে তার দিদির বিয়েতে বর্ধমানে গিয়েছিলেন | সেখানেই ওই বিয়ে বাড়িতে মৃন্ময়ীকে প্রথম দেখেন তিনি | উজ্জ্বলবর্ণা সুশ্রী মেয়েটা একটা লাল বেনারসি শাড়ি পরে সকলকে গোলাপফুল দিচ্ছিলো | সমীরণকে দেখে একটা গোলাপফুল বাড়িয়ে দিতে গিয়ে “উঃ” করে উঠলো ! সমীরণ দেখলেন মেয়েটির আঙ্গুল থেকে রক্ত বেরিয়ে এসেছে ! গোলাপে কাঁটা ছিল ! সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে রুমাল বের করে আঙুলে জড়িয়ে দিলেন | মেয়েটির সেই করুন অথচ সকৃতজ্ঞ চাহনি তাঁকে তরুণ বয়সে মুগ্ধ করে দিয়েছিলো !

মুখে কিচ্ছু না বলে মেয়েটি দ্রুতপদে চলে গিয়েছিলো বাড়ির ভিতরে | বোধহয় অচেনা কোনো পুরুষের অযাচিত উপকারে সে লজ্জা পেয়েছিলো ! বিয়েবাড়িতে সারাক্ষন নজর কেড়ে নিচ্ছিলো ওই মেয়েটি, সবার মধ্যে আলাদা একটা উচ্ছলতা নিয়ে সে ঘুরছিলো | কিন্তু ধন্ধে পড়েছিলেন তার শাড়িটা নিয়ে, এই দেখলেন লাল বেনারসীতে তো কিছুক্ষন পরেই দেখলেন সেটা সবুজ রঙের ! বার বার শাড়ি পাল্টাচ্ছে কি মেয়েটা ?

পরে সেই বন্ধুর কাছে খোঁজ খবর করে জানলেন ওই মেয়েটি তার পাড়াতুতো একজন কাকুর মেয়ে | ওরা যমজ বোন, একজনের নাম মনু, আর একজন অনু | তাই দুরকমের শাড়িতে দুজনকে দেখা যাচ্ছিলো ! বন্ধুকে অনুরোধ করলেন লাল শাড়ি পড়া মেয়েটির জন্য তার বাবা-মা-র কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিবেদন করতে | বন্ধু সেই অনুরোধ রাখতে মেয়েটির বাবার কাছে গেলো |

মনু-অনুর বাবা নিবারণবাবু সকালবেলায় মুড়ির বাটি হাতে দাওয়ায় বসেছিলেন | বসন্তের বাতাসে বেশ আরাম লাগছে ! কোথা থেকে একটা কোকিল কুহু কুহু করে একটানা ডেকেই চলেছে | এমন সময়ে বাঁশের আগর সরিয়ে একটি ছেলে ভিতরে ঢুকলো |

– আরে, তপন যে, এস বাবা এস !

– কাকু, কেমন আছেন ? এদিকে একটু এসেছিলাম তাই ভাবলাম আপনাদের একটু খোঁজখবর নিয়ে যাই !

– ভালো করেছো বাবা ! আর এই বুড়ো বয়সে, ভালোই আছি ! যেমন ভগবান রেখেছে…….! তা বাবা, তুমি কেমন আছো ? কাজকর্ম সব ভালো চলছে তো ? দাদা-বৌদি ভালো আছেন ?

– হ্যাঁ কাকু ! আমরাও সবাই ভালোই আছি |

– বোসো বাবা, বোসো, মুড়ি খাবে ?

– নাহঃ, এই তো বাড়ি থেকে খেয়ে এলাম |

একথা-সেকথার পর তপন আসল কথাটি পারলো |

– বলছিলাম, অনু আর মনুর বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন নাকি ?

– হ্যাঁ, সে তো ভাবতেই হচ্ছে ! অনুর তো সামনের মাসেই বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে ! পাত্র বিদেশে চাকরি করে ! বিয়ের পরেই ওকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাবে | এখন মনুটারও বিয়ের ঠিক হয়ে গেলেই হয় ! তুমি তো জানো, ওরা যমজ বোন তো ? আমার ইচ্ছা ছিল, একজন ভালো পাত্র পেলে দুজনের একসাথেই বিয়ে দিয়ে দেব !

– আমার একজন বন্ধু আছে, মোটামুটি ভালোই মাইনের চাকরি করে | কলকাতায় নিজেদের বাড়ি | আর ছেলে এতো ভালো যে বলার নয় !

– তা বাবা, চেষ্টা করে দেখো না ! আমাদের পাল্টি ঘর তো ?

– হ্যাঁ কাকু, একদম আপনাদের স্বগোত্রীয় !

– তাহলে বাবা দেখ না চেষ্টা করে !

বন্ধুর কাছ থেকে সবই শুনেছিলেন – মেয়ের বাবা রিটার্ড স্কুল মাস্টারমশাই | বেশি দিতে কিছু পারবেন না | তবে ভরি আষ্টেক সোনার গয়না দেবেন, সঙ্গে কয়েক হাজার টাকা, আর খাট-বিছানা, আলমারি, সোনার আংটি এবং ঘড়ি দেবেন বলেছেন | সমীরণের বাবা শুনে বললেন, “কিচ্ছু দিতে হবে না, শুধু শাঁখা-সিঁদুর দিয়ে মেয়ে পাঠালেই হবে !” কিন্তু বিয়ের আগে মৃন্ময়ীর সাথে সমীরণ কথা বলার সুযোগই পান নি | একেবারে ছাদনাতলায় দুজনের দেখা |

একই লগ্নে দুই যমজ বোনের, মৃন্ময়ী আর আনন্দময়ীর বিয়ে হয়ে গেলো | বাকি রইলো সুমিতা অর্থাৎ সুমি, সে তখন কলেজে ফার্স্ট ইয়ার পড়ছে |

বিয়ের আগে কত কি শুনেছিলেন, গ্রামের মেয়েরা ভীষণ সরল সাদা হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি ! হুঁ হুঁ বাবা, তারা যদি মৃন্ময়ীকে একবার দেখতো তো ধারণা পাল্টে যেত একেবারে ! বিবাহিত জীবনে কার্যত স্বামীকে পকেটে (যদি থাকতো) ভরে রেখেছে মৃন্ময়ী | যা একদা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি !

একবার উঁকি মেরে ঘরের বাইরেটা দেখার চেষ্টা করলেন, মৃন্ময়ী এখনো রান্নাঘরে বাসনপত্র গোছাচ্ছে | এই সুযোগে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট খেলে এলে হতো ! মেয়েও ঘুমোচ্ছে ! এইবেলা বিছানা থেকে পা টিপে টিপে উঠে সবে বারান্দায় গেছেন কি যান নি, ওপাশ থেকে হাঁক এলো, “কোথায় গেলে গো ? মেয়েটাকে মশা কামড়াচ্ছে দেখতে পাও নি ? শিগ্গীর মশারিটা টাঙিয়ে দাও !” ব্যাস, হয়ে গেলো সিগারেট খাওয়া ! পকেটে সিগারেট আর দেশলাইটাকে চালান করে আবার ব্যাজার মুখে মশারি টাঙাতে শুরু করলেন !

ও দিকে মৃন্ময়ী সমানে গজ গজ করে যাচ্ছে, “যেটা না দেখবো, সেটাই হবে না !”

বিয়ের আর তিনদিন বাকি ! এখনো কোনো গিফট কেনা হয়ে উঠে নি ! মৃন্ময়ী দু’বেলা তাড়া দিচ্ছে ! সমীরণ ভয়ানক সমস্যায় পড়ে গেছেন ! একবার ভাবছেন, অফিস থেকে কিছু অ্যাডভান্স নিয়ে নেবেন না হয় | আবার ভাবছেন, মৃন্ময়ীকে রাজি করিয়ে যদি একটা ভালো শাড়ি দিতে পারেন, তাহলে না হয় খরচটা অনেক কম হবে !

ইচ্ছে ছিল একটা সোনার আংটি কিংবা দুল দেবেন কিন্তু বাজেটে ঠিক পোষাচ্ছে না ! কিন্তু মৃন্ময়ী তো শুনবে না ! সোনার জিনিস দিতেই হবে, জেদ ধরে বসে আছে সে !

একবার পাড়ার একটি দোকানে গিয়ে একটা সোনার দুল দেখেও এসেছেন কিন্তু ছয় হাজারের নিচে হচ্ছে না | তাই ওদের বলেছেন মাসে হাজার টাকা করে ছয় মাসে শোধ দেবেন | দোকানদার একটু অরাজি হলো | বললো, “এখন তিন হাজার দিয়ে নিয়ে যান ! বাকিটা পরে তিন মাসে দিয়ে দেবেন !”

বিয়ের পর মৃন্ময়ী মাঝেমধ্যে ওর বোন আনন্দময়ীকে গ্রিটিংস কার্ড পাঠাতো, ফোন করতো | এখন সেটা অনেক কমে এসেছে | আনন্দময়ীরা বিয়ের দুবছর পরে একবার এদেশে এসেছিলো | তখন মৃন্ময়ী একাই তাদের সাথে দেখা করতে বাপেরবাড়ি গিয়েছিলো | অফিসে ইম্পরট্যান্ট কাজ থাকায় সমীরণ ছুটি পান নি |

আবার বছর তিনেক বাদে তারা কলকাতায় এসেছে, বর্ধমানের বাড়িতেও গেছে এবং সেখান থেকে সরাসরি বেহালায় সুমির বাড়িতেও আসবে | বিয়ে বাড়িতে আবার তিনবোনের একসাথে দেখা হবে |

সেই কারণেই মৃন্ময়ীর দামি গিফট কেনার জন্য এত তাড়া ! নাহলে বোনের কাছে ছোট হয়ে যাবে না ? কিন্তু আনন্দময়ীর স্বামী অনেক টাকা রোজগার করে ! তাদের সাথে সমীরণ পারবে কেন ? সেটাই মৃন্ময়ী বুঝতে চাইছে না!

অবশেষে অফিস থেকে অ্যাডভান্স নিয়ে সোনার দুলটাই কেনা হলো | নির্দিষ্ট দিনে সমীরণ মেয়ে আর বৌকে নিয়ে চললেন শ্যালিকার বাড়ি | নিজের গাড়ি নেই, তা না থাক | একটা ক্যাব ভাড়া করে নিয়েছেন | সকাল দশটার মধ্যে পৌঁছেও গেলেন সেখানে | সুমি আর আনন্দময়ী তো মৃন্ময়ী, জামাইবাবু আর তাঁদের মেয়েকে দেখে হৈ হৈ করে উঠলো ! বিয়ে বাড়ি আনন্দে ভরপুর ! তিনবোন তো সেজেগুজে, গল্পগুজব করে, আর হাঁক-ডাক করে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুললো ! সমীরণবাবু এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন আনন্দময়ীর স্বামী একপাশে চুপ করে বসে আছে | সেদিকেই এগিয়ে গিয়ে বললেন, “আমি সমীরণ ! মৃন্ময়ীর স্বামী !”

ছেলেটি সটান উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “আমি জানি দাদা ! আমার বৌয়ের মোবাইলে আপনাদের অনেক ছবি দেখেছি!”

সমীরণ কথা বলে দেখলেন, চন্দন ছেলেটি নিরহংকার ! বিদেশে চাকরি করে বলে কোনো ঘ্যাম নেই ! কথাবার্তাতেও কোনো জড়তা বা কুন্ঠা নেই | দুই জামাইয়ের গল্প জমে গেলো অচিরেই | সুমির স্বামী অনির্বান এসেও ওদের সাথে যোগ দিলো | জামাইদেরও একটা গ্রুপ হয়ে গেলো | আনন্দময়ীর ও চন্দনের একটি ছোট্ট পুঁচকে ছেলে আছে ! চন্দন তাকে সামলাতেই ব্যস্ত | সমীরণও মাঝে মধ্যে উঠে গিয়ে মেয়েকে দেখে আসছিলেন |

দুপুরবেলায় খাওয়াদাওয়ার পরে দেখা গেলো একটা হলঘরে অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের গল্পগুজব জমে উঠেছে | বয়স্করা অন্যঘরে | কনে আর একটা ঘরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে | হাসি-ঠাট্টায় জমে উঠেছে আসর ! কথায় কথায় আনন্দময়ী হৈ হৈ করে বলতে লাগলো, “বিয়ের আগে জামাইবাবু একবার আমার হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছিলো !”

সবাই উৎসুক হয়ে নানারকমের প্রশ্ন করতে লাগলো, “কেন ? কেন ? কি হয়েছিল ?”

– সেই অর্চনাদির বিয়ের দিন গোলাপফুল দিতে গিয়ে আমার হাতে কাঁটা ফুটে গিয়েছিলো ! জামাইবাবু নিজের রুমাল দিয়ে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলো ! তখন কি জানতাম দিদির সাথে এনারই বিয়ে হবে ?

সমীরণ হতভম্ব হয়ে গেলেন ! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না ! “তবে তপন যে বললো, যার হাতে গোলাপের কাঁটা ফুটেছিলো সে মনু ?”

আনন্দময়ী হাসতে হাসতে বললো, “তপনদা কি আমাদের মধ্যে কে মনু আর কে অনু বুঝতে পারছিলো ?”

– হায় জামাইবাবু ! ব্যাথা পেলাম আমি ! আর আপনি দিদির গলায় মালা দিলেন ?

এই বলে আনন্দময়ী হেসে গড়িয়ে পড়লো !

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো ! আনন্দময়ীর বর চন্দন বলে উঠলো, “গতস্য শোচনা নাস্তি !”

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত